একজোড়া আগুন পাখি পর্ব-০৯

0
18

#একজোড়া_আগুন_পাখি
®অরনীতা তুশ্মি (#তুশকন্যা)

পর্ব→০৯

—কিরে! এমন ম*রার মতো পড়ে আছিস কেনো। তোরা দুজনে কেনীথের টিম মেম্বার। এমন বিড়ালের মতো পড়ে থাকলে হবে নাকি! ”

কেনীথের দুটি কুকুরের মধ্যে একটি হলো কেনেল মাস্টিফ আর টিবেটান মাস্টিফ জাতের। এ জাতের কুকুর গুলো সাধারণ অনেক বেশি হিং/স্র হয় তবে ঠিকমতো প্রশিক্ষণের ফলে এরা পোশা এবং মিস্টি সুলভ আচরণ করে। এছাড়া মাস্টিফ জাতের কুকুররা মাং/স খেতে বেশি পছন্দ করে। সঙ্গে এদের মূল্যটা অনেক বেশি হয়ে থাকে অনান্য কুকুরদের তুলনায়। তবে টিবেটান মাস্টিফের দাম কেনেলের তুলনা বেশি।

কেনীথের দুটো কু্ুকুরের গায়ের রং-ই কুচকুচে। যে কারণে দেখতেও প্রচন্ড ভয়ং/কর। তবে এরা কেনীথের সান্নিধ্যে এসে হয়তো আরো বেশি হিংস্র আর ভয়ংকর হয়ে উঠতে পেরেছে। কেনীথ এদের দুজনের মাঝে টিবেটানের একটা নামও দিয়েছে তা হলো “ক্লারা” তবে কেনেলকে সে কেনেল বলেই ডাকে।

টিবেটানের নাম ক্লারা দেওয়ার কারণ এটি কেনেলের চেয়ে বেশি হিং/স্র আর ভয়ং/কর এছাড়া ক্লারাকে কেনীথের ব্যাক্তিগত ভাবে একটু বেশিই ভালো লাগে।

কেনীথকে দেখতেই দুটো কুকুর দৌড়ে তার দিকে এগিয়ে এলো এরপর নিজস্ব ভাষায় ইশারা ইঙ্গিতে কেনীথকে ডাকতে লাগলো। কেনীথ ওদের অস্পষ্ট ভাষায় কি বুঝলো তা জানা নেই তবে মুচকি হেসে বললো,

—“ঠিক ধরেছিস! একদম ফ্রেশ মাংসের স্টেক করে নিয়ে এসেছি। তোরা তো খুব ভালো করেই জানিস কেনীথ যা বলে তাই করে।

এখন খেয়ে বল তো কেমন হয়েছে। শুধু তোদের জন্য এতো খাটাখাটুনি করতে হয়েছে আমায়!”

কেনীথের হাতে থাকা পেট প্লেটে(Pet Plate) তার নানা কলাকৌশলের ফল রুহির দেহের নরম মাং/স হালকা স্টেক করা। কেনীথ কুকুর দুটোর সামনে বড় প্লেটের অনেকগুলো মাং/স পিস রাখতেই কুকুর দুটো অনেকটা ঝাপিয়ে পড়লো খাবারের উপর।

মনে হচ্ছে কত দিন না খাওয়া তারা কিন্তু এমন কিছুই না। কেনীথ খুব যত্ন নিয়ে নিয়মিত তাদের খাবার রেঁধে খাওয়ায়। কিন্তু একইসঙ্গে কেনীথ ওদের যেভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছে তারই ফলাফল এখন ঘটছে।

কুকুর গুলো খেতে খেতেই কেনীথ একহাঁটু গেঁড়ে অন্য হাঁটুতে একহাত রেখে অন্য হাত দিয়ে দুটো কুকুরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই ক্লারার দিকে তাকিয়ে হালকা ভ্রু কুঁচকালো। ক্লারারে দেখে তার কিছুট অসুস্থ মনে হচ্ছে। তখনই ক্লারাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

—“কিরে তোর কিছু হয়েছে নাকি! ”

কেনীথের কথা শুনে ক্লারা খাবার থামিয়ে কেনীথের দিকে তাকালো। কেনীথ ওর চোখ দেখে কি যে বুঝলো কে জানে তবে বলতে লাগলো,

—“তোকে ঠিক মনে হচ্ছে না। আজকে আর আমাদের সাথে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। খাবার খেয়ে রেস্ট কর! ”

এরপর কেনীথ উঠে দাঁড়িয়ে নিজের পরবর্তী কাজের উদ্দেশ্যের প্রস্তুতি নিতে লাগলো। এখনও ভোরের আলো ফুটতে অনেক দেরী কিন্তু সে এখন বাইক রাইডিং এর জন্য বের হবে কিন্তু সে একা নয় বরং তার সাথে অনেকসময় কেনেল আর ক্লারাকে নিয়েও বের হয়।

আজও তার এমনটাই ইচ্ছে থাকলেও ক্লারাকে আর নিয়ে যাওয়া হয়তো সম্ভব হবে না।আর কেনীথ ওর এই অবস্থায় নিয়েও যেতে চাইছে না।

এরপর কুকুর দুটোর খাওয়া শেষ হতে হতে কেনীথ একদম ক্রুজার বাইক অ্যাটায়ার স্টাইলে সেজেগুজে বের হয় এলো। পরনে তার ব্লাক কালারের ক্রুজার বুট, হাতে ক্রুজার গ্লাভস, মোটো-ক্রস প্যান্ট সাথে কালো আর সামান্য লাল কালারের মিশ্রনে তৈরি ক্রুজার জ্যাকেট আর হাতে লাল-কালো ফুল কভারেজ হেলমেট।

কেনীথ এসে ক্লারাকে শুইয়ে দিয়ে মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিলো এরপর কেনেলের শেকলটা খুলে দিয়ে কেনেলকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলো বাইক রাইডিং এর উদ্দেশ্যে।

কেনীথ বাইক রাইডিং কিংবা ক্রুজিং করতে রাতের বেলা কিংবা অন্ধকারটাকেই বেশি পছন্দ করে। এছাড়া তার সব কাজকর্ম রাতের বেলাতেই হয়ে থাকে। অফিস ব্যাতীত দিনের আলোয় তার ছায়া মেলাটাও দুষ্কর।
যে আঁধারে শয়তানের বসবাস, সেই আঁধারেই শুধু মেলে তার আভাস।

———

মৃদু বৃষ্টিতে ভেজা ঘুরঘটে অন্ধকার রাত!নির্জন এলাকার, হালকা বৃষ্টিতে ভিজে থাকা নির্জন পাঁকা রাস্তা। কেনীথের বাড়িটা বর্তমানে বিশাল পাঁকা রাস্তা পেরিয়ে জঙ্গলের ভেতরে অবস্থিত।

আশেপাশের লোকজনের এই এরিয়ায় লোকজনের যাতায়াত খুবই কম আর রাতের বেলায় এরিয়ার আশেপাশে কেউ আসার সাহসও করবে না। জায়গাটিকে নিয়ে প্রায় বেশ কিছু বছর ধরে মানুষজনদের মাঝে একপ্রকার ভয় ভীতি ছড়িয়ে গিয়েছে।

এসব তখন থেকেই হচ্ছে যখন থেকে কেনীথ ওই বাড়িটাতে নিজের আস্তানা গড়ে তুলতে শুরু করছে। বিষয়টি এমন নয় যে কেউ কখনো কোনো অশ/রীর আত্মা কিংবা কেনীথের কোনো কুক/র্ম দেখে ফেলেছে আর তাদের মাঝে এক ভয়ভীতি বিশাল পরিধি আজ বিরাজ করছে। তারা এসব কোনো কিছুই নিজ চোখে কিংবা এসব ঘটনার সাক্ষী হয়নি অথচ তাদের কুসংস্কারের যেন কোনো কমতি নেই। এসব অবশ্য সব কেনীথেরই তীক্ষ্ণ মস্তিষ্কের খেলার একটি ক্ষুদ্র অংশ।

যেহেতু জায়গাটা অনেক নির্জন আশেপাশে বিশাল বড় বড় গাছপালা আর জঙ্গলের মেলা। তবুও সেখানে এতো বিশাল এক পাঁকা রাস্তা থাকতেও কেনীথ নিজ সুবিধার্থে তার লোক লাগিয়ে মানুষের মাঝে ক্ষুদ্র পরিসরে শুধু একটা ভয়ভীতির আভাস ছড়িয়েছিলো আর সেটারকে কেন্দ্র করে তার সাথেই সাধারণ মানুষেরা নানান গল্প আর আপন মনের যুক্তি সাজিয়ে বিষয়টিকে বাস্তবতায় রুপ দিয়েছে সঙ্গে তাদের কুসংস্কারগুলোকে করেছে প্রশস্ত।

এসব কেনীথের ভালো করেই জানা ছিলো তাই তার ছোট্ট গুটির চালেই তার রাস্তা পরিষ্কার। তবে এই কাজের জন্য তাকে তেমন কিছুই করতে হয়নি। যা করার সব কেনীথের সেই বিশস্ত লোক যাকে কেনীথ নিজের বাম হাত মনে করে তাকে একটা নির্দেশ দিতেই তার সব কাজ হয়ে গিয়েছে।

দিনের আলো ফুরাবার আগেই মানুষ এই এরিয়ার আশেপাশে ঘেঁষতেও তীব্র ভয় পায় আর মাঝরাতে এই এরিয়ায় নামও হয়তো কেউ ভয়ে মুখে নেয় না। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এখন কেনীথের কাজকর্ম রাতদিন খুব আরামেই কেটে যাচ্ছে। তার কাজে বাঁধা দেওয়া তো দূরের কথা, ধারে কাছেও পৌঁছানোটাও বড় মুশকিল।

আকাশ বেয়ে যখন ধীর গতিতে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছে ঠিক তখনই কেনীথ তার ব্লাক আর সামান্য রেডের কম্বিনেশন কালারর ducati panigale v2 আর কেনেলকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছে। মুখে বড়সড় কালো রংএর ফুল কভারেজ হেলমেট।

এখানে কেনেলকে নিয়ে আসার কারণ হলো প্রায় মাঝ রাতের দিকে কেনীথ কুুকুর দুটোকে স্প্রিন্টিং করানো। একদিকে কেনীথ ইচ্ছেমত নিজের কার অথবা বাইক রাইডিং করতে থাকে অন্যদিকে কুকুর গুলো তীব্র বেগে তার পেছনে দৌড়াতে থাকে। কুকুরদের জন্য একপ্রকার প্রশিক্ষণ বলা চলে এটাকে। তবে কেনীথের এমনটা করার কারণ হলো কুকুরগুলোকে আরো বেশি হিং/স্র হিসেবে গড়ে তোলা।

একদিকে ফুল স্পিডে কেনীথ বাইক রাইডিং করছে অন্যদিকে কেনেল কেনীথের পেছন পেছন যতটা পারছে ততটা দৌড়াচ্ছে। তবে ফুল স্পিডে চলা বাইকের সাথে এসব কুকুর কখনোই তত দ্রুত গতিতে দৌড়াতে পারবে না কারণ এরা অনেক বেশি বড়সড়, শক্তিশালী ও ভারী হয়ে থাকে।

এজন্য কেনীথ এসব কুকুরদের একটা নিদিষ্ট পয়েন্ট ঠিক করে দেয় আর তারা সেই পয়েন্টে পৌঁছেনোর মধ্যেই কেনীথের টার্গেট অনুযায়ী সে পুরো এরিয়া কয়েকবার ঘুরে আসে। এককথায় রাতের বেলায় এভাবে মানুষ রুপী মারা/ত্মক সাইকোপ্যাথের আনন্দ মেলা জেগে ওঠে। যার কাছে একজন মানুষের চেয়েও তার কুকুরের গুরুত্ব শতগুন বেশি।

কেনীথের বাইকের স্পিড যত বাড়তে থাকে তত বৃষ্টি ছিঁটে গুলো যেন আকাশ ঝেড়ে কাঁটার মতো কেনীথের উপর বিঁধতে থাকে। রাস্তার দুপাশে বিশাল বড় বড় গাছপালা। আর ঠিক মাঝ খানটায় ছুটে চলেছে এক মারা/ত্মক সাইকোপ্যাথের ম/রণফাঁদের বিজয়ের আনন্দ খেলা। কেনেল আর কেনীথের প্রথম টার্গেট শেষ করে এবার দুজনেই থামলো। কেনীথ এসে কেনেলের মাথায় হাত ছুঁয়ে দিতেই কেনেল খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। ও বুঝে গিয়েছে কেনীথ ওর উপর সন্তুষ্ট।

একটা সময় পর কেনীথ নিজের হেলমেটটা খুলে গাড়িতে রেখে দুহাত ছড়িয়ে আকাশ বেয়ে তীব্র বেগে ঝড়তে থাকা ঝিরিঝিরি বৃষ্টির দিকে মুখ করে কিছুক্ষণ চোখ বুঁজে রইলো।

মূহুর্তেই তার বড় বড় চুলগুলো আর মুখ ভিজে টইটম্বুর হয়ে গেলো অন্যদিকে কেনেলও বারবার নিজের শরীর ঝাড়া দিয়ে চুপসে চাওয়া শরীর ঠিক করতে ব্যস্থ। কিন্তু কেনীথকে এভাবে ভিজতে দেখে সে আর একবারও শরীর থেকে পানি ঝেড়ে ফেললো না।কেনীথের আনন্দ দেখে হয়তো তারও আনন্দ হচ্ছে। এমনই সময় কেনীথ ওভাবেই দু হাত পেতে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থাতে বললো,

—“দেখ কেনেল!আজ প্রকৃতিও আমাদের উল্লাসে কষ্ট পাচ্ছে। এই অসময়ে আমাদের উপর তার বৃষ্টির সামান্য ফোঁটাকেও সুঁচের মতো নিক্ষেপ করছে। আজ সবাই আমাদের উপর ক্ষে*পে, কিন্তু আমরা! আমরা তো এমনই,আমরা তো আর সো কল্ড ফা**কিং আদর্শ প্রানী নই,তাই না! ”

কেনীথের তাচ্ছিল্যের সুরে বলা কথা গুলো শুনে কেনেল নিজের কন্ঠে জোরে জোরে বারকিং করতে থাকলো আর কেনীথ খুব অদ্ভুত করে শব্দহীন ভাবে হাসতে থাকলো৷

কেনীথের এসব খেলা শেষ হয় ভোরের আলো ফোটার ঠিক আগ মূহুর্তেই। গভীর অন্ধকারে করা কেনীথের সকল কাজকর্মই কুচকুচে কালো আধারেই চাপা পড়ে যায়। সাধারণ মানুষরূপী এই পিশা/চকে কারো নজরেও পড়ে না আর।

_______________

ভার্সিটি ঢুকতেই সাবা সহ তার বাকি বন্ধুদের উল্লাস দেখে কিছুটা চমকে ওঠার উপক্রম আনায়ার। সবার মাঝে যে উল্লাসের ঝড় বইছে। আনায়া তাদের কাছে যেতেই প্রত্যেকে লাফালাফি করে আনায়ার কাছে এসে তাদের এতো খুশি হওয়ার কারণ বলতে লাগলো। তবে এতো কোলাহল করে বলছিলো যে আনায়া স্পষ্ট ভাবে কিছুই শুনতে পারছিলো না। একটা সময় আনায়া সবাইকে থামিয়ে দিয়ে বললো যেন ঘটনাটা একজন একজন করে বলে।

তখনই সর্বপ্রথম সাবা বললো,

—“জানিস কি হয়েছে! ”

আমায়া মুচকি হেসে বললো,

—“তুই বললে তো জানতে পারবো।”

–“ওহ হ্যাঁ!জানিস তো, কাল চিটাগং এ ভিকের কনসার্ট। তো আমি বাবাকে বলে আমাদের জন্য টিকিট কাটিয়েছি। তুই ভাবতে পারছিস, আমরা ভিকের কনসার্ট -এ যাবো। যাস্ট ইমাজিন, কত এনজয় হবে, তাই না!”

আনায়া একবার আশেপাশে নিজের বন্ধু বান্ধবীদের দিকে তাকিয়ে দেখলো তাদের সবারই সাবার মতো অবস্থা। কিন্তু তাদের খুশিতে আত্মহারা হওয়ার কারণটা শুনে আনায়ার তেমন কোনো অনুভূতি সৃষ্টি হলো না।এমনিতেই ভিকে নিয়ে মানুষের অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি তার ঠিক পছন্দ ছিলো না আর পরবর্তী ভিকের চালচলন সম্পর্কে জানার পর তার আরো পছন্দ হয় না। কিন্তু ভিকের পি.এ. হওয়ার কারণে সে নিজের পছন্দ অপছন্দ গুলোকে তেমন পাত্তা না দিয়ে কাজের প্রতি ফোকাস থাকারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আনায়া মূলত এমনই, সে কখনো নিজের অনুভূতির সাথে প্রয়োজনীয়তাকে মেলাতে যায় না। তার মতে তার যেটা প্রয়োজন সেটা মূলত তার পরিবারেরই প্রয়োজন। আর সে তার পরিবারের জন্য যতটা স্যাক্রিফাইস করার সে করতে রাজি।

আনায়াকে খুশি হতে না দেখে সবার বিষয়টি তেমন ভালো লাগলো না। যতই হোক, পুরো একটা ফ্রেন্ড সার্কেলের মাঝে আনায়া বাদে সবাই ভিকের ফ্যান। আনায়া তাদের পছন্দ নিয়ে তর্ক না করলেও আনায়া ভিকেকে পছন্দ করে না দেখে তার ফ্রেন্ডদেরও ভালো লাগে না।সাবা কিছুটা ভ্রু কুঁচকে বললো,

—“কি রে! তুই খুশি হোসনি! ”

আনায়া কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। সে তো ভিকের পিএ, সে অনুযায়ী ভিকের কনসার্টে তো তাকে যেতেই হবে। এতে আলাদা করে খুশি হওয়ার কিছু না থাকলেও আনায়ার কিছুটা মন খারাপ হচ্ছে কারণ এই প্রথম তার বাবা, বোনকে ছেড়ে তাকে এতো দূরে কোথাও যেতে হবে। তবে আনায়া ঠোঁট ভিজিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,

—“খুশি হয়েছি, হবো না কেনো। তোদের তো এসব ড্রিম থাকে ভিকের কনসার্টে যাওয়া। ”

এবার সাবা সহ বাকিদের আগের মতো উল্লাসটা নিভে গেলো।

—“কি রে, কাহিনি কি বলতো! তোকে দেখে আমার অন্য কিছু মনে হচ্ছে।”

রনকের কথা শুনে আনায়ার ওর দিকে তাকালো এরই মাঝে আলো আবার বললো,

—“এই তুই আবার এটা বলবি না তো যে তুই আমাদের সাথে কনসার্টে যেতে পারবি না।তোর ফ্যামিলি প্রবলেম আছে,দেখ এমনটা বললে কিন্তু আমরা মানবো না।”

আনায়া আলোর কথা শুনে বুঝতে পারছে না ও কি বলবে। এদের ম্যানেজ করবে কিভাবে। সে যাবে না বিষয়টি তো এমন নয় কিন্তু এদের তো এটাও বলা যাবে না যে আনায়া ভিকের পি.এ. এটা জানতে পারার পর এই পাগলগুলো ওকে দিয়ে কি থেকে কি করাবে কে জানে। আর ওদিকে ভিকের সাথে বাড়াবাড়ি কিছু করে ফেললে ভিকে আবার তাকেই না কাচ্চা চিবিয়ে খায়। ভিকের পাগল তো তার বাড়িতেও একটা আছে। এই বয়সে এমন প্যারায় কেনো পড়তে হলো কে জানে।

এরই মাঝে পাশ থেকে শিখা আবারও বললো,

—“কি রে! তুই কিছু বলিস না কেন। ”

আনায়া নিজেকে তটস্থ করে বললো,

—“তোরা কখন যাবি, কনসার্ট তো আজ রাতেই তাই না! ”

সাবা বললো,

—“ভার্সিটি শেষ করে বিকেলেই বেড়িয়ে পড়বো। এরপর রাতে ওখানে আমার মামার নিজস্ব রিসোর্ট আছে আর আমরা ওখানেই থাকবো। তুই চাইলে কালকেই চলে আসতে পারিস তবে আমরা আরে দুদিন থাকতে পারি। এখন বল, তুই আমাদের সাথে যাচ্ছিস তো! ”

আনায়া আবারও ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,

—“দেখ তোরা রাগ করিস না! আমার বাবার অবস্থা তো কিছুটা হলেও জানিস। বাড়িতে ছোট বোন আর বাবা রেখে আমার এই মূহুর্তে ওতো দূরে যাওয়া কিছুতেই সম্ভব না। প্লিজ তোরা রাগ করিস না। ”

ওর কথা শুনে আলো কিছু বলতে চাইলে সায়েম বললো,

—“থাক আলো ওকে কিছু বলিস না। আমাদের মতো তো আর ওর পরিস্থিতি নয়। ওর ব্যাপারটাও তো আমাদের ভাবা উচিত। সবসময় তো আবেগ দিয়ে চলে না। আচ্ছা তুই না যাস ঠিক আছে, তবে আর কি…সাবধানে থাকিস। ”

আনায়াও নিজের বন্ধুর কথা শুনে গালে টোল ফেলিয়ে মুচকি হাসলো। তবে মিথ্যা বলায় তার খারাপও লাগছে কিন্তু এছাড়া আর করবেইটা কি।

এরই মাঝে তাজিম সাবাকে বললো,

—“ও যেহেতু যাচ্ছেই না তাহলে তুই ওর টিকিটটা ক্যান্সেল করে দে।”

তখনই সাবা কিছুটা ভাব নিয়ে বললো,

—“আমি এমনিতেও ছয়টা টিকিট বুক করেছিলাম। বাকি একটা পেন্ডিং এ রেখেছিলাম। আমি জানতামই আনায়া প্রতিবারই এমন করে তো এবারও এমনটাই করবে। ”

সাবার বাঁকা কথাগুলো কারো তেমন পছন্দ হলো না। এইমেয়েটা সবসময় কতগুলো এতো বাঁকা ভাবে কেনো বলে কে জানে। কিন্তু আনায়া মুচকি হেসে বললে,

—“এই তো আমার ইন্টেলিজেন্ট বান্ধবী। খুব ভালো করেছিস এমনটা করে। নাহলে শুধু শুধু টিকিটটা নষ্ট হতো।”

আনায়ার কথা শুনে সাবা ভাব নিয়ে বুকে হাত গুঁজে বললো,

—“আই নো দ্যাট!আ’ম এন ইন্টেলিজেন্ট গাই!”

ওর এই কথা শুনে যেন বাকিদের হাসি এলো তবে প্রত্যেকেই নিজেদের হাসি কন্ট্রোল করলেও রনক আর তাজিম বিরক্তি নিয়ে বিরবির করে বললো,

—“গাধী একটা!”

____________________

সন্ধ্যার মাঝেই ভিকের অফিসে পৌঁছাতে বলা হয়েছে আনায়াকে। আনায়াও আর দেরী না করে ফরিদাকে সব কাজ আর ইয়ানাকেও কিছু দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ভিকের অফিসের উদ্দেশ্যে বেড়িয়েছে। আনায়া না ফেরা পর্যন্ত বাড়ির সব দায়িত্ব ফরিদা আর ইনায়ার। যদিও আনায়ার খুব খারাপ লাগছিলো কিন্তু এদিকে ইনায়া মনে মনে আরেক প্লান করে বসে আছে। তার বোন শহর ছাড়লেই তার উদ্দেশ্য সে হাসিল করবে।

আনায়া সবাইকে বিদায় দিয়ে ভিকের অফিসে পৌঁছেই দেখলো স্টুডিওর প্রায় সবাই কনসার্টের জন্য সব গোছগাছ করে অফিস থেকে চিটাগং এর উদ্দেশ্য বেরোচ্ছে। নিচে আসার সময় অনেক গুলো অফিসের গাড়িও দেখতে পেলো।

ভিকের স্টুডিও তার অফিসের ভেতরেই হওয়ায় এখানে সবার কাজের পদগুলোও আলাদা। এসব কনসার্টে স্টুডিওর সবাইকে যেতে হলেও অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আর কিছু প্রয়োজনীয় ব্যাক্তি ব্যাতীত বাকিদের যাওয়ার ওতো প্রয়োজন পড়ে না।

সে অনুযায়ী ভিকের কনসার্টের সোলিস্ট অর্থাৎ প্রধান গায়ক আর লিড গিটারিস্ট যেহেতু সে নিজেই তাই তাকে ব্যাতীত বেসিস্ট, ড্রামার,রিদম গিটারিস্ট, কীবোর্ডিস্ট,পারকুশনিস্ট,স্যাক্সোফোনিস্ট,মাল্টি-ইনস্ট্রুমেন্টালিস্ট সহ আরো অনেকেই কনসার্ট স্পটের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়েছে।

আশেপাশে কোথাও কেনীথকে না দেখে আনায়া ভাবলো সে নিজের কেবিনেই আছে। কেনীথের কেবিনের দিকে এগোতে লাগলো। এরই মাঝে হঠাৎ আয়াশ আর আরেক জনের কথা শুনে থেমে গেলো। ওরা দুজন রুহিকে নিয়ে আলোচনা করছিলো। হঠাৎ করেই জানতে পারলো রুহির নাকি খোঁজ নেই। তারা ভয় পাচ্ছে কারণ ভিকের কনসার্ট আর এই সময়ে রুহি উধাও, এটা জেনে কেনীথ রেগে গিয়ে না আবার রুহিকে জব থেকে বের করে দেয়। আয়াশ রুহির জায়গায় অন্য একজনকে ব্যবস্থা করে ফেলেছে কিন্তু বিষয়টি কেনীথকে জানানো হয়নি। তাই সে আনায়াকে বললো যেন এই বিষয়ে কেনীথকে সে জানিয়ে দেয়। আর পি.এ. হিসেবে এটা তার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।

তবে হঠাৎ রুহির উধাও হওয়ার কথাটা শুনে আনায়ার ঠিক ভালো লাগলো না। কিন্তু আপাতত এসব ভুলে নিজের কাজে লেগে পড়তে হবে। সবাই যেহেতু যাচ্ছে তাহলে কিছুক্ষণের মাঝে হয়তো সে আর কেনীথও যাবে।

এই ভাবনা নিয়ে কেনীথের রুমে প্রবেশ করলো আনায়া। প্রবেশ করতেই সেটাই দেখলো যেমনটা সাধারণত দেখায় যায়। মোবাইলে কি যেন স্ক্রোল করে যাচ্ছে। সেই একই রকমেট টিশার্ট, চুলগুলো গুলো এলোমেলো, রুম তার তার ড্রেসআপ একই সেই কালো আর লালের কম্বিনেশন।

আনায়ার মাঝে মধ্যে অবাক লাগে, একটা লোক এসব কালার পছন্দ করে মানে কি সবসময় সব একই থাকতে হবে। তবে তার সবচেয়ে বেশি মায়া হয় কেনীথের এলোমেলো চুল দেখে। মাঝেমধ্যে তার রেগে গিয়ে ইচ্ছে করে কেনীথের চুল গুলো ধরে ঠিকঠাক করে সাজিয়ে দিতে। এতো সুন্দর চুলের কেউ এই অবস্থা কেউ করে রাখে নাকি!

কিন্তু তার এই সপ্ন বিশাল এক দুঃসপ্নের মতো। এই কাজ করার দুঃসাহস ভাবনা চিন্তা করাও ঘোর অন্যায়। কেনীথের কেবিনে ঢুকতেই আনায়া প্রতিবারই চিন্তা ভাবনার ঘোরে চলে যায়।

এদিকে আনায়া অনেকক্ষণ চলে যাওয়ার পরও যখন কিছু বললো না তখন কেনীথ পায়ের উপর পা তুলে ফোনের উপর স্ক্রোল করতে থাকা অবস্থাতেই বললো,

—“এটা আমার কেবিন, ভাবনা চিন্তা করার কোনো আলাদা চেম্বার না! ”

ভিকের কথা শুনেই আনায়া দাঁত খিঁচে নিজের ধ্যান থেকে ফিরে এলো। তার সাথে প্রতিবার এমনটা কেনো হয় কে জানে। তখনই নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে লাগলো,

—“স্যার,আপনার সাথে একটা বিষয়ে কথা বলার ছিলো! ”

কেনীথ কিছু বললো না।আনায়া কেনীথের নিরবতাকে অনুমতি হিসবে ধরে বললো,

—“স্যার মিস রুহিকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। আজ আপনার কনসার্টের কিছু কাজের দায়িত্ব ওনারও ছিলো যেহেতু উনি মিসিং তাই আর ওইসব দায়িত্ব অন্য একজনকে দেওয়া হয়েছে! ”

ভিকে আনায়ার দিকে না তাকিয়েই নির্বিকারে বললো,

—“ওকে! ”

আনায়া কথা শেষ করে এবার আর চলে না গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকার পর কেনীথ নিজ থেকেই বললো,

—“কিছু বলার থাকলে তাড়াতাড়ি! ”

আনায়া মনে মনে বিরক্ত হলো। একে তো রকস্টার না কি কিন্তু ওসবরে কোনে কাজ কর্মই একে করতে দেখে না। অথচ বিশাল এক অফিস খুলে রেখে সারাদিন তো ভুতের মতো থেকেই খালি মোবাইল চালায়। তাহলে এতো ভাব দেখানোর কি আছে কে জানে। মনে হয় একমিনিট নষ্ট হলে তার দুনিয়া গায়েব হয়ে যাবে। কপাল খারাপ দেখেই হয়তো এর কপালে এসে পড়তে হয়েছে। নাহলে জীবনেও এইসব উদ্ভটদের পাল্লায় স্বইচ্ছায় নিশ্চয় সে আসতো না।

আনায়া নিজের বিরক্তিগুলোকে একপাশে রেখে তটস্থ হয়ে বললো,

—“স্যার! প্রায় সবাই তো চলেই গিয়েছে, তাহলে আমরা কখন যাবো! ”

আনায়ার কথা শুনে মোবাইলের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থাতেই কেনীথ বললো,

—“কনসার্টে?”

আনায়া মনে মনে আরেকটু বিরক্ত হয়ে ভাবলো, এই বেডায় কি জানে না যে তার আজ রাতে কনসার্ট আছে। কই কালকেই তো এই নিজেই তাকে ডেকে এই খবর দিলো তাহলে এখন এমন ঢং করে কেনো!

কিন্তু মুখে আনায়া বললো,

—“জ্বি!”

—“আমরা কনসার্টে আজ যাচ্ছি না, কাল রাতে বের হবো। ”

আনায়া মস্তিষ্কে কেনীথের কথা পৌঁছাতেই চমকে উঠলো। এই বেডায় বলে কি, কনসার্ট তার আজ অথচ সে বলছে কাল যাবে। মাথায় তার ছেড়া নাকি। কিন্তু আনায়া মুখে মুচকি হাসি বিদ্যামান রেখে বললো,

—“এসব কি বলছেন স্যার! আপনার কনসার্ট তো আজকে তাহলে আজকে না গিয়ে কালকে কিভাবে যাবো। ”

—“আমার আজ কনসার্ট করার মুড নেই! ”

আনায়া যেন বিস্মিত হলো। মনে মনে ভাবলো এই লোকের মাথায় নিশ্চিত সমস্যা আছে নাহলে এই লোক তো তার সাথে মশকরা করতে আসবে না নিশ্চয়।

—“স্যার কি বলছেন! আজ আপনার কনসার্ট এটা তো সবাই জানে আর সবাই সে উদ্দেশ্যে দেশের নানা জায়গা থেকে আজ রাতে কনসার্টের উদ্দেশ্যে চিটাগং এ চলে গিয়েছে। ওনারা সবাই আপনার অপেক্ষায় থাকবে আর আপনিই যদি না যান তবে এতোগুলো মানুষের শুধু শুধু ভোগান্তি বাড়বে। ”

—“আটটার মধ্যেই সবাই খবর পেয়ে যাবে। আজ আমি কনসার্টে যাবো না। আর কনসার্ট আজ নয় কাল রাতে হবে। এরপর মনে হয় না আর কারো কোন প্রবলেম থাকার কথা। আর যদিও থাকে তবে আমার কিছু করার নেই। ”

আনায়ার কেনো যেনো অনেক রাগ হলো। তাকে সবাই আইডল ভেবে তার ভক্তরা কি এইজন্যই পাগলামো করে। মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলে এরা কি মজা পায় কে জানে।

—“স্যার আপনি একবার আপনার ফ্যানদের কথা ভেবে দেখুন। তারা কতটা আশা নিয়ে আপনার কনসার্টের জন্য অপেক্ষা করছে। আপনি যদি আজ না যান তবে তাদের ইমোশনে পুরো পানি ঢেলে যাবে। ”

এতোক্ষণ নিজের ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে রইলেও এবার আনায়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

—“সো, হোয়াট?”

হুট করে তাকাতেই আনায়া চমকে কেনীথের লাল মণির চোখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নীরবে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ঠোঁট চেপে কিছুটা বৃথা হেসে বললো,

—-“নাথিং! যেটা আপনার ভালো মনে হয়। তাহলে এখন আসি, স্যার। ”

কেনীথ আবারও ফোনের দিকে তাকিয়ে বললো,

—“ওকে!”

আনায়া আর দাঁড়ালো না উল্টো ঘুরে রুম থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে বিড়বিড় করে বললো,

—“এই বেডারে যে বিয়ে করবে, নিশ্চিত সে এমনিতেই ম*রে যাবে। ”

আনায়া কথাটা বিড়বিড় করে বলতে গিয়ে কিছুটা জোরে বলায় কেনীথ সম্পূর্ণটা শুনে ফেলে। আনায়ার দিকে তাকিয়ে পেছন থেকে ওর চলে যাওয়া দেখতে থাকে। এরপর কি যেন ভেবে বাঁকা হেসে বিড়বিড় করে বললো,

—“কিন্তু তুই তো বেঁচে আছিস! ”

________________

বাড়ির ডুপ্লিকেট চাবি সবসময় আনায়ার কাছে থাকায় সে ধীরে সুস্থে বাড়িতে প্রবেশ করলো। রাতও এমনিতেও অনেক। তার জানা মতে বাড়ির সবাই নিশ্চিত এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু বাড়িতে প্রবেশ করতেই তার অন্য কিছু মনে হলো। পুরো বাড়িতে ডিম লাইট জ্বালানো। অনেকটা অন্ধকার অন্ধকারই লাগছে। নিচ তলায় তার সবকিছু ঠিকঠাক মনে হলেও উপর তলা তার মোটেও ঠিক মনে হলো না।

আনায়াদের বাড়ির উপর তলায় অনেকটা রহস্য রয়েছে। এই রহস্যের সৃষ্টি তার বাবাই করেছে কারণ তার বুঝ হওয়ার পর থেকে উপর তলায় সাধারণত কাউকে তিনি যেতে দিতেন না। তখন থেকে আনায়াও আর কাউকে উপরে যেতে দেয় না।
অন্যদিকে তার বোন ইনায়ার এই নিয়ে প্রচুর আগ্রহ। কিন্তু বোনের জন্য তার আগ্রহ সবমসময় চাপা পড়ে যায়। আর আনায়ার মনে হলো তার বোন হয়তো আজ এই সুযোগেরই কাজে লাগিয়েছে। মনে মনে ভাবলো এই মেয়েটা আর সুধরালো না।

দ্রুত ধীর পায়ে অনেকগুলো দিন পর সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় প্রবেশ করলো আনায়া৷বাড়িটা অনেকটা বাংলা বাড়ির মতো বাড়ির ভেতরে দোতলার সিঁড়ি। বিষয়টি এমন নয় যে সে কিংবা তারা দোতলায় কখনো যায় না। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নের জন্য প্রায়ই দোতলায় যাওয়া হয়। কিন্তু দোতলায় একটা রুম আছে যেটা অনেকবছর ধরে বন্ধ আর সে রুমের তালার চাবিও হয়তো তার বাবার কাছে। কিন্তু সমস্যা হলো যখনই তার বাবাকে এই বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করা হয় তখনই সে প্রচন্ড প্যানিক করে এবং ঘাবড়ে যায় সাথে প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। যে বিষয়ে তার বাবা অসুস্থ হয়ে যায় সে বিষয়ে ঘাটাঘাটি করার মেয়ে আনায়া নয়।

আনায়ার খুব ভালো করেই মনে হলো ইনায়া নিশ্চিয় তারা বাবার কাছ থেকে চেয়ে ওই রুমের চাবি বের করেনি। নিশ্চয় ও আগে থেকেই এসবের পরিকল্পনা করেছে। ইনায়া নিজের ফোনের লাইট জ্বালিয়ে দোতলায় যেতেই দেখলো সেই রুমটার ভেতর থেকে মৃদু আলো বের হচ্ছে।

আনায়া দেরী করলো না রুমটার কাছে যেতেই দেখলো রুমের তালা আর দরজা দুটোই খোলা। আনায়া নিমিষেই দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে মৃদু স্বরে রাগান্বিত কন্ঠে বললো,

—“ইরা!!!!”

#চলবে