একজোড়া আগুন পাখি পর্ব-২৭

0
46

#একজোড়া_আগুন_পাখি
#পর্বঃ২৭
#তুশকন্যা
[প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমনাদের জন্য]

বরাবরের মতো এতো বড় বাড়িতে সময় দেখার জন্য কোনো ঘড়ির অস্তিত্ব না থাকায় আনায়া জানে না এখন ঠিক রাত কয়টা বাজে। তবে এই মূহুর্তে সবকিছু ছেড়ে তাকে তার বাবার কাছে পৌঁছাতে হবে। কেনীথ যাওয়ার আগে দরজাটা তো খুলে রেখে গিয়েছিলো কিন্তু তারেকের কাছে পৌঁছানোর রাস্তাটা সে বন্ধ করে দিয়ে গিয়েছে।

কেনীথ চলে যেতেই আনায়া জামাকাপড় চেঞ্জ করে ত্বরিত নিচে চলে এসেছে। অনেক সাহস নিয়ে পানিতে ডুব দিয়ে সেই সুরঙ্গ পথে যাওয়ার সিন্ধান্ত নিলেও তার আর কোনো সুযোগ হলো না। পানির ধারে কাছে যাওয়ার আগেই মৃদু কারেন্টের ঝটকায় আনায়া দূরে সরে এলো। যাতে বোঝা গেলো কেনীথ পূর্ণ বন্দবস্ত করে গিয়েছে। চারপাশে ইলেকট্রিক শক্ এর ব্যবস্থা করেছে, যেন পানিতে কেউ নামতে না পারে। তবে এই শক্ এ সহজেই কেউ ম*রবে না কিন্তু পানিতে অনেকক্ষণ থাকলে বাঁচার সম্ভাবনাও থাকবে না। আনায়ার বোঝা হয়ে গিয়েছে যে এখানে আর তার কিছু করার নেই। অন্য উপায় খুঁজতে হবে।

আনায়া তন্নতন্ন করে বাড়ির চারপাশে সবকিছু খুঁজতে লাগলো। কোথাও কোনো রাস্তা মেলে কিনা। কিন্তু ঘন্টা খানেক পার হলেও সে কোনো কিছুর সন্ধান পেলো না। আনায়া একটা সময় পর আকস্মিকভাবে কান্না করতে লাগলো। এখন যেন সে একদম অসহায়ের মতো হয়ে গিয়েছে। শুধু মাথার মধ্যে নিজের বাবার সেই লো*মহর্ষক দৃশ্য গুলোও ঘুরপাক খাচ্চে। না জানে এখন সে কোন অবস্থায় রয়েছে। কেনীথ সত্যিই তাকে…আনায়ার ভাববার মতো আর কিছু নেই। নিজেকে যতই স্ট্রং রাখতে চায় না কেনো এখন যেন তার মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। সবকিছু এখন অদ্ভুত লাগছে।

আনায়া কেঁদে কেটে ঘুরেফিরে পুনরায় কেনীথের রুমে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে আরো কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত করার পর আনায়া আবারও উঠে দাঁড়ালো। আবারও সেই একই ভাবে খোঁজাখুঁজি করতে লাগলো। রুমের প্রত্যেকটা কোণায় কোণায় নজরদারি চালালো। সবকিছু শেষেও কোনো কিছু মিললো না। হঠাৎ রুমে থাকা সেই বড় চোখের ওয়াল পেইন্টিং এর দিকে নজর পড়লো। জিনিসটা সে আগেও দেখেছে তবে এবার কেনো যেন এই চোখজোড়া তাকে টানছে। আনায়া ত্বরিত চোখজোড়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো এবং চোখের সেই কালো মণির দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো। তার এই চোখ জোড়া চেনা চেনা লাগছে। হুট করে মনে হলো এগুলো তো তারই চোখ! কিন্তু… আনায়া অনেক বেশি অবাক হলো আবার নিজের চিন্তাভাবনাকে তেমন গুরুত্বও দিলো। চোখ তো অনেক রকমেরই হতে পারে। আর এটা যাস্ট একটা পেইনিং আর এখানে তার চোখ কোথা থেকে আসবে!

আর সবচেয়ে বড় কথা সে কেনো এইসময় এসব নিয়ে ভাবতে বসেছে। সে যে কাজে এসেছে এখন সে কাজ করার সময়। আনায়া ত্বরিত পেইন্টিংটাকে হাতিয়ে হাতিয়ে দেখতে লাগলো। খুব দ্রুত করছিলো বিধায় আচমকা একটা চোখের মণিতে হাত লাগার ফলে তার কিছুটা খটকা লাগলো। একটা চোখের কালো মণিটা যেন বাম্প করলো। আনায়া ত্বরিত একহাতে সেই বড় চোখের কালো মণিতে জোড়ে প্রেশার দিতেই আচমকা পাশের দেওয়ালে থাকা একটি বড়সড় পেইন্টিং অটোমেটিক ভাবে সড়ে গিয়ে একটা পথ বের করলো।

আনায়া অনেকটা বিস্মিতও হলো তবে কিছুটা নিজেকে শান্ত করলো এই ভেবে যে একটা উপায় পাওয়া গিয়েছে। তবে সেই অন্ধকার লম্বা সরু পথের দিকে আনায়া এগোতে নিয়েও নিলো না। কেমন যেন এই জায়গাটাও তার অদ্ভুত লাগলো। একটা কেমন যেন মৃদু আওয়াজের শব্দ কানে বাজছে।
আনায়া এতোকিছু না ভেবে আশপাশে তাকিয়ে একটা ধাতুর শো-পিস এনে পথের মাঝে ছুঁড়ে মারলো। আর মূহুর্তেই কিছু সরু সরু লেজার আলো জ্বলে উঠে তার শো-পিছের উপর নিক্ষিপ্ত হয়ে সেটাকে ধ্বং*স করতে চাইলো। এটা দেখে আনায়া বিস্মিত হলেও চিন্তায় পড়ে গেলো এবার কি করা যায়। শেষ বারের মতো উপায় হিসেবে তার লকেটটাকে ব্যবহার করতে চাইলো। আদোও এতে কোনো কাজ হয় কিনা। যথারীতি খোঁজা খুঁজির পর দরজা একটা ছোট ঢাকা অংশের নিচে আনায়া এবারও সেইম একটা স্টার শেইপের লক সিস্টেম পেয়ে গেলো। শেষবারের মতো এবারও দোয়া করতে করতে সেইম পদ্ধতিতে লকেট ছোঁয়াতেই লাল রং-এর লেজার লাইট গুলো পরিবর্তন হয়ে সব সবুজ হয়ে গেলো।

আনায়া এর অর্থ বোঝা মাত্রই সেই রাস্তা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো। অন্ধকার পথের চেয়ে তার বাবাকে নিয়ে সব ভ*য় আ*তংক বিরাজ করছিলো। না জানে কেনীথ তার বাবাকে কি করে ফেলেছে। এসব ভাবতে ভাবতেই আনায়া সর্বশেষে রাস্তায় শেষ প্রান্তে গিয়ে পৌঁছালো। অতঃপর পুনরায় সেই কেনীথের পৈশা*চিক কর্মশালায় প্রবেশ করলো। কিন্তু এবার সেই জায়গাটার কোন প্রান্তে রয়েছে আনায়া ঠিক বুঝতে পারছে না। আশেপাশে কি সব অদ্ভুত যন্ত্রপাতি রাখা। একটা পাশে বিশাল বড় কাঁচের রুমে নানান সব এসিডের মতো জিনিস গুলো কাঁচ সহ বিভিন্ন পাত্রে সাজিয়ে রাখা। আনায়া এসব রেখে দিয়ে তার বাবার সন্ধান করতে লাগলো। আদোও সে বেঁচে রইছে কিনা তাও আনায়ার জানা নেই। চোখে পানি জ্বলজ্বল করছে কিন্তু সে এখানে অসহায়ের মতো সব কাজকর্ম করে যাচ্ছে। তার সাথে কি থেকে কি হয়ে যাচ্ছে তা আনায়ার বোধগম্য নয়।

এরই মাঝে হঠাৎ দূরে হতে বড় টেবিলের উপর কিছু একটা করতে থাকা কেনীথ তার নজরে এলো। গ্লাভ এপ্রোন পড়া উল্টো ঘুরে কি যেন সব করে যাচ্ছে। আনায়া ধীরে ধীরে সেদিকে এগিয়ে গেলো। এরপর কিছুটা ভয়, আ*তংক,সং*শয় মিশ্রিত কন্ঠে বলতে লাগলো,

—“আমার বাবা কোথায়?”

আনায়ার কথা শুনে কেনীথ ত্বরিত কোনো উত্তর দিলো না। তবে তার হাত দুটো থেমে গেলো। যার অর্থ সে তার কাজকর্ম থামিয়ে দিয়েছে। কেনীথ কিছু বলছে না দেখে আনায়া ঢোক গিললো তবে কাঁপা কাঁপা সুরে আরো কিছু বলার আগেই তাকে এমন কিছুর সম্মুখীন হতে হলো যে সে তা দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি। আচমকা কেনীথ তার দিকে ফিরে তাকালো তবে তার হাতে সেই তারেকেরে মাথাটা সহ।সঙ্গে কেনীথের টেবিলের পেছনে তারেকের দেহের নানা কাটা অংশ পড়ে রইছে। তবে এখন লোম*হর্ষক আকৃতির বি*ধ্বস্ত মাথাটি সে আনায়ার উদ্দেশ্যে ইশারা করে বলতে লাগলো,

“হেই ব্লাড! বাপের টানে আবার চলে এসেছিস? তবে এই দেখ এটা কি?”

আনায়ার সম্পূর্ণ স্তব্ধ। তার মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এটা সে কি নিজ চোখে কি দেখছে তাও তার মস্তিষ্কে বোধগম্য হচ্ছে না। আর এদিকে কেনীথ আনায়া বিস্ময় কাটানোর আগেই মুচকি হেসে মাথাটিকে ফুটবলের মতো শূন্য ছুঁড়ে পরবর্তীতে তা পা দিয়ে আঁচড়ে আনায়ার দিকে ছুঁড়ে ফেললো এবং বলতে লাগলো,

“একটা ম্যাচ খেলতে চাস?তবে হয়ে যাক!”

ভারসাম্যহীন হতে থাকা আনায়া নিজের বাবার মাথাটিকে তার পায়ের কাছে আঁচড়ে পড়তে দেখে সামান্য প্রতিক্রিয়া করারও সুযোগ পেলো না। বরং তার আগেই সে সম্পূর্ণভাবে জ্ঞান হারিয়ে তার বাবার মাথার কাছেই নিচে পড়ে গেলো।

____________

“এই নিয়ে তিনবার সেন্সলেস হয়েছিস। এবার চুপচাপ খেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে যাবি।”

কেনীথ আনায়াকে নিয়ে সোজা রুমে চলে এসেছে এবং ওকে সোফায় শুইয়ে দিয়েছে। এরপর ওর মুখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টায় আনায়া মূহুর্তেই স্বজ্ঞানে চলে আসে। এবার আনায়ার অবস্থা আরো বেশি নাজুক। একদিন একসাথে এতোকিছু হয়ে যাচ্ছে যে তার শারীরিক সক্ষমতার চেয়ে মানসিক অক্ষমতা বেশি বেড়ে চলেছে। আনায়া প্রথমের দিকে ঠিকঠাক মতো তাকাতেও পারছিলো তবে শরীরে কিছুটা শক্তি জোগাতেই আনায়া সোফা ধরে কোনোমতে শোয়া থেকে বসে পড়লো।

ঠিক তখনই আনায়ার মাথার কাছে হাঁটু গেঁড়ে বসে থাকা কেনীথ আনায়া পাশে এসে বসলো। এবং টি টেবিল থেকে একবাটি স্যুপের বাটি তুলে আনায়ার সামনে ধরে তাকে খেতে বললো। আনায়া কেনীথের কথা শুনে ওর দিকে অদ্ভুত চাহনিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। আর মূহুর্তেই নিজের শান্তশিষ্ট চেহারায় ক্ষো*ভের উদ্রেক ফুটিয়ে তুলে গরম স্যুপের বাটিটা কেনীথ হাত থেকেই জোরে ধাক্কা মা*রলো। আর এতেই সম্পূর্ণ গরম স্যুপ অল্পের জন্য কেনীথের শরীরে না লেগে তা পায়ের কাছে পড়লো।

এতে কেনীথের চেহারা খানিকটা গম্ভীর হলো তবে আনায়া যে এমন কিছু করবে তা কেনীথের আন্দাজে ছিলো। এদিকে আনায়ার র*ক্ত গরম চোখ হতে অঝোরে পানি ঝড়ছে। তবে তা কেনীথের প্রতি রাগ আর বিদ্বেষের চেয়ে বহু গুনে কম। আনায়া মাথা তো এখন ঠিকঠাক কাজ করার পর্যায়েও নেই। এরই মাঝে আনায়ার নিজেকে ঠিক রাখার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় মাথা নিচু করে হাঁটুর কাপড়ের অংশ হাতের মুঠোয় খিঁচে নিয়ে কটমট করে বলতে লাগলো,

“কেনো মেরে ফেললি আমার বাবাকে!”

কেনীথ ওর তুই সম্মোধনে বিচলিত না হয়ে বলতে লাগলো,

—“তোর বাবার সাথে যা হয়েছে সেটা তার প্রাপ্য ছিলো। এতে কান্নাকাটি করার মতো কিছু নেই।”

কেনীথের কথা শুনে আনায়া আশ্চর্যের ভঙ্গিতে বলতে লাগলো,

“কান্নাকাটির কিছু নেই? আমার বাবার সাথে যেটা হয়েছে সেটা স্বাভাবিক?”

বলতে বলতেই আনায়ার চোখ হতে জল গড়ালো। তার এই মূহুর্তে কেনীথের সাথে কি করা উচিত তা আনায়ার জানা নেই। কেনীথের প্রত্যেকটা কথা, কাজ আনায়াকে আশ্চর্য হতে বাধ্য করে। এদিকে কেনীথ বসা থেকে সটান ভাবে দাড়িয়ে বলতে থাকে,

“প্রত্যেককেই তাদের জীবনের সকল কর্মের ফল ভোগ করতে। তোর বাপও ঠিক তাই করেছে।”

আনায়া এবার ঠোঁট কামড়ে নিজেকে শান্ত করতে চাইলো তবে এবার আর সম্ভব হলো না। পা দিয়ে কাঁচের টি-টেবিলে উপর জোরে ধাক্কা মারতেই তা উল্টে গিয়ে মূহুর্তেই ভেঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে গেলো। আর আনায়া এসবে বিচলিত না হয়ে সোজাসুজি দাঁড়িয়ে কেনীথের উপর হামলে পড়লো। কেনীথ টিশার্টের কলার শক্ত করে খিঁচে ধরে দাঁত খিঁচে বলতে থাকলো,

“কু*ত্তার বাচ্চা কেনো মারলি আমার বাবাকে? কি ক্ষতি করেছিলো, বলিস না কেনো? বল কেনো মারলি?”

পানি ঝড়তে থাকা আনায়ার র*ক্ত গরম চোখের কথায় এবারও কেনীথের মাঝে কোনো হেলদোল হলো না। সে নির্বিকারে আনায়া চোখের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে মুচকি হাসলো। এরপর খানিকটা জোর প্রয়োগ করেই আনায়াকে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে পাশ থেকে একটা আইপ্যাড আনায়ার হাতে দিয়ে বলতে লাগলো,

“এটা তোর জন্য বানিয়েছে। বলতে পারিস আমার জন্যও। কারণ এটা দেখার সুযোগ আমি তোকে আজকেই দেবো কিন্তু আমি এটা আজীবন দেখবো।”

কেনীথের কথা শুনে আনায়া কিছুটা চুপ করে গেলো। কেনীথ আরো তাকে কি দেখাতে চায়। নিজের বাবার মাথা নিয়ে কেনীথকে ফুটবলের মতো লাত্থাতে দেখেছে। এরচেয়ে জঘন্য লোম*হর্ষক আর কি দেখার বাকি আছে। তবুও আনায়া কেনীথের কাছ থেকে প্যাডটা হাতে নিলো। এবং স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই আনায়া সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে পড়লো। আজ আনায়ার খুব ভালো করেই মনে কেনীথ তাকে শুধু মানসিক ভাবে ধ্বং*স করতেই নিয়ে এসেছে। নয়তো কেনীথের এসব কাজকর্মে এছাড়া অন্যকোনো উদ্দেশ্য প্রকাশ পায় না।

কেনীথ আনায়ার বাবাকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ঠিক কিভাবে মে*রেছে এবং মেরে ফেলার পর তারেকের দেহের অস্তিত্ব মিশিয়ে ফেলতে দেহের প্রতিটা অংশ কিভাবে কেটেছে তার পূর্ণ দৃশ্য কেনীথ ক্যামেরা বন্দী করে আনায়ার হাতে তুলে দিয়েছে।

প্রথমবার আনায়ার সাথে তারেকের দেখা করানোর পর যখন কেনীথ আনায়াকে রেখে পুনোরায় তারেকের কাছে গেলো তখন হয়তো কেনীথ কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানব হয়ে থাকেনি। যতটা কষ্ট দেওয়া যায়, তারেকের মুখ হতে যত বেশি আ*র্তনাদের চিৎকার শোনা যায় তার ব্যবস্থা কেনীথ করেছে। প্রথমের শুধু চারটি আঙ্গুল কাঁটার পর কেনীথের কাজে বিরতির পর কেনীথ পুনোরায় তারেকের হাতের সবগুলো আঙ্গুল সে কেটে ফেলেছে। তবে মাঝে বেশি কষ্ট দেওয়ার জন্য কিছু আঙ্গুলের নখ উপড়ে ফেলেছে নয়তো জোরে জোরে আঘাত করে থেঁতলে দিয়েছে। আর এসব কিছু তারেকের জ্ঞান থাকা অবস্থাতেই করেছে।

প্রথমে আনায়ার চোখের সামনে থাকায় তারেক তার কষ্টের বহিঃপ্রকাশ যতটা পেরেছে সংযত করলেও পরবর্তীতে তা আর হয়নি। তারেকের সেই গগনবিদারী চিৎকারের লোমহর্ষক শব্দ ধ্বনি এখন আনায়া কানে বেজে চলেছে। তবে এবার আনায়ার মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। সে স্তব্ধ হয়ে সেসব নিজ চোখে দেখে চলছে।
এরই মাঝে আনায়া দেখতে পেলো কেনীথ তারেকের সেই কাটা হাতে আচমকা এসিড ঢেলে দিতেই তারেক পাগলের মতো ছটফট শুরু করলো। সঙ্গে যেভাবে পারছে চিৎকার করছে তবে তার মুক্তি মিলছে না।

এরপর একে একে কেনীথ কান দুটো কেটে ফেলে অতঃপর জ্যান্ত তারেকের জিহ্বা। তারেক মূলত বারবার কিছু একটা বলতে চাইছিলো বিধায় কেনীথ এমনটা করে। নিজের হাতের ছুরি দিয়ে মূহুর্তেই তারেকের জিহ্বা খন্ডিত করলো। তারেক প্রচন্ড যন্ত্রণায় ছটফট করলো তবে তাতেই শুধু কেনীথের শান্তি হলো। যেন কতবছরের অপেক্ষার পর আজ সে এই শান্তি অনুভব করতে পারছে। তবে এবার কেনীথ তারেকের মৃ*ত্যু নিশ্চিত করতে চাইছে।
তাই এবার সে নিজ হাতে তারেকের চোখ উপড়ে ফেলার কায়দা করলো। নিস্তেজ শরীরে নিশ্বাস নিতে থাকা জ্যান্ত তারেকের মাথাটা কেনীথ শক্ত হাতে ধরলো। এরপর অন্যহাতে থাকা সরু ও ধারালো ছুরিটা সরাসরি একটা চোখে গেঁথে ফেললো। এবং চোখ উপড়ে ফেলতে তা উপর নিচ করে মুচড়ে দিতে লাগলো যতক্ষণ না সম্পূর্ণ চোখটা ধ্বংস হয়ে ছিঁড়ে বাহিরে বের হয়ে আসে। কেনীথ সম্পূর্ণ কাজটা খুব সুদক্ষ হাতে করলো। আর এটা করার সময় কেনীথের মস্তিষ্কের একটুও নিজের কাজের প্রতি ঘৃণা হলো না। ঠিক একটা চোখ উপড়ে ফেলতেই ঠিক একই ভাবে কেনীথ দ্বিতীয় চোখটাকেও একই ভাবেই উপড়ে ফেললো।

এদিকে তারেক তো প্রথম চোখ হারিয়েই সেই যন্ত্রণায় ছটফট করে সম্পূর্ণ অবশ হয়ে পড়ছে। তার বর্তমান অবস্থা কোনো স্বাভাবিক মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়। এতোটা লো*মহর্ষক ভ*য়ংকর চেহারা যে কাউকেই কাঁপিয়ে তুলতে বাধ্য। এছাড়া তারেক সহ সে যেখানে বসে তার আশে পাশে এখন র*ক্তের বন্যা রইছে। কিন্তু তারেক এখনো নিশ্বাস নিচ্ছে। সে এখনো সম্পূর্ণ ভাবে ম*রে যায়নি তবে তাকে এটা বোঝারও উপায় নেয় যে বেঁচে আছে কিনা।

আর এটাই নিশ্চিত করতে কেনীথ এবার তারেকের র*ক্তাক্ত মাথার চুল শক্ত করে ধরে ওর নাকে হাত ছুঁইয়ে দেখলো ও নিশ্বাস নিচ্ছে কিনা। যথারীতি তারেক বেঁচে থাকায় সে নিশ্বাস নিচ্ছে তবে তা খুব ক্ষীণ। যে কোনো সময় সে পৃথিবী ছাড়তে বাধ্য। কিন্তু এতে কেনীথ সন্তুষ্ট হলো না। তারেককে ছেড়ে দিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,

—“তাহলে এতো সহজে তুই মরবি না তাই তো?”

এই বলেই কেনীথ তার শেষ পদক্ষেপ নিয়ে নিলো। এবার সরাসরি তারেককে ইলেক্ট্রিক শক্ দেওয়ার জন্য কয়েকটি ইলেক্ট্রোড প্যাড এলোমেলো ভাবে তারেকের মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে লাগিয়ে দিলো। এবং খুব দ্রুতই তারেকের শরীরে কারেন্ট প্রবাহিত করতেই তারেক কিছুক্ষণ ছটফট করতে করতেই মূহুর্তেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে তার লোম*হ*র্ষক কর্মফল ভোগ করলো। যেহেতু তারেকের জীবন মৃত্যুর শেষ প্রান্তে ছিলো বিধায় তারেক আর বেশিক্ষণ কেনীথের পৈ*শাচিকতা সহ্য করতে পারেনি। কারণ সে সামর্থ্য তার ছিলো না।

তবে এরপরই কেনীথ নতুন ভাবে তার নিজের কাজকর্ম শুরু করতে লাগলো। সাধারণ কেনীথ কাউকে মা*রার পর তার দেহের প্রত্যেকটা অংশ খুব সযত্নে কেটে থাকে কিন্তু এবার সে কিছুটা ব্যতীক্রম করবে। তারেকের প্রতি তার ক্ষো*ভটা এতোই বিশাল ছিলো যে সে মূহুর্তেই তারেকের মাথাটা ধারালো কুড়ালের সাহায্যে গাছ কাটার মতো এক কোপে ঘাড় থেকে মাথাটা কেঁটে ফেললো। যার ফলে তারেকের মাথাটা গিয়ে নিমিষেই ছিঁটকে নিচে পড়লো।

আর এইটুকু দেখেই সর্বশেষে আনায়া নিজের চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে ফেললো। তবে পুরো সময়টায় এতো লোম*হর্ষক দৃশ্য দেখার সময়ও সে একটুও বিচলিত হয়নি। সম্পূর্ণ স্তব্ধ চোখে নিজের বাবার সাথে হতে থাকা প্রতিটা ঘটনা দেখে গিয়েছে। আর সর্বশেষে এখন নিজের চোখ জোড়া খুলতেই কেনীথের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।

তবে এবার অবশ্য কেনীথ ওর হাসিতে ঘাবড়ে গেলো। যার ফলে তার কপালের খানিকটা অংশবিশেষ কুঁচকে গিয়েছে আনায়ার হাভভাব বুঝতে। আনায়াকে এখন সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত চেহারায় হাসতে থাকা স্বাভাবিক মানুষ মনে হলেও সে মোটেও ঠিক নেই। অদ্ভুত ভাবে কেনীথের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলতে লাগলো,

“অনেক সুন্দর… বাবাকে শেষ করে ফেলেছেন।”

এই বলেই আনায়া পুনরায় অদ্ভুত ভাবে হাসতে লাগলো। আর কেনীথ ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর পুনরায় সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে হেঁসে বলতে লাগলো,

“বুঝেছি… একদিকে এতোটা ডোজ দেওয়াটা ঠিক হয়নি। সমস্যা নেই, তোকে না হয় ভিডিওটা প্রতিদিন দেখতে দেবো। তাছাড়া তোর বাপ না থাকলেও তোর বাপের মাথাটা এখনো সযত্নে রেখে দিয়েছি। ইচ্ছে হলে যখন তখন দেখে আসতে পারিস!”

কেনীথ এইটুকু বলেই ফ্রেশ হতে বাথরুমের দিকে পেছন ফিরে যেতে যেতেই আনায়া কেনীথের দিকে তাকিয়ে শব্দহীন হয়ে হাসতে হাসতে পেছাতে লাগলো। আর একটা সময় বারান্দার কাছে গিয়ে কেনীথের উদ্দেশ্যে জোরে জোরে বলতে লাগলো,

“এবার না হয় আমি আপনার আরেকটা কাজ সহজ করে দেই।…আমার আর তোর মতো পিশাচের সাথে বেঁচে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই।”

এই বলতেই আনায়া অনেকটা দৌড়ে বারান্দায় ছুটে গেলো। আর তা দেখে সঙ্গে তার পেছনে ছুটে গেলো কেনীথ। কারণ কেনীথের এই রুমের বারান্দার নিচে অনেক গুলো বড় বড় পাথর রয়েছে। সহজে কেউ নিচে পড়লে একেবারে যে মরে যাবে তারও নিশ্চয়তা নেই তেমনি বাঁচারও নিশ্চয়তা নেই। উঁচু খাঁচা এবড়োখেবড়ো পাথরের জন্য মাথায় আঘাত লাগাটাই যথেষ্ট হবে জীবন শেষ করতে।

কেনীথ বারান্দায় এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই আনায়া গ্রিলের উপর অনেকটাই উঠে গিয়েছে নিচে ঝাপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে আর ঠিক সেই মূহুর্তেই কেনীথ শক্ত হাতে আনায়ার হাত ধরতে গেলে তা আনায়ার বাঁধার ফলে সম্ভব হয় না। তবে আনায়া যেই না সম্পূর্ণ রুপে নিচে ঝাপ দিতে নিয়েছে ঠিক সেই মূহুর্তেই কেনীথ আনায়ার পিঠের জামার অংশ শক্ত হাতে খিঁচে ধরে ফেললো। কেনীথ জামার অংশটা ছেড়ে দিলেই হয়তো আনায়া ব্যালেন্স হারিয়ে সোজা নিচে পড়ে যাবে। আর বাড়ির ডিজাইন অনুযায়ী এখানে একেক তলা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিই উঁচু।

কেনীথ এবার আর নিজের মাঝে নেই। তার সারা শরীর এখন রাগে গিজগিজ করছে। কখন কি করে ফেলে তারও নিশ্চয়তা নেই। আর একের পর এক আনায়ার কাজকর্মে এখন সে প্রচন্ড বিরক্ত। সে শুধু চাইছে আনায়া যেন কষ্ট পায় আর সম্পূর্ণ তার ইশারায় চলতে থাকা একটা পুতুল হয়ে যায়। কিন্তু আনায়া তা করছে না।

কেনীথ নিজে শুধু একটা শান্তশিষ্ট মাথার সাইকোপ্যাথ নয় বরং সে চায় আনায়ার সাথে সেসকল কিছু হোক যা তার সাথে হয়েছে। মানে ঠিক সেই কষ্ট গুলোই আনায়া পাক যেগুলো কেনীথকে পেতে হয়েছে। এজন্য যত জ*ঘন্যরকম কাজ করা যায় সেটাও কেনীথ নিরদ্বিধায় করছে। সামান্য বিদ্বেষও হচ্ছে না তার এসব কাজে।

কেনীথ আনায়াকে পারলে আছড়ে নিচে ফেললো। আনায়া নিচে পড়ে ব্যাথা পেলেও তা তার বর্তমান জিদের কাছে এসব কিছুই নয়। আনায়া শক্ত চোখ-মুখে নিচ থেকে উঠে দাঁড়ানোর আগেই কেনীথ এবার আনায়ার জামার গলার দুপাশের অংশে শক্ত হাতে চেপে ধরে আনায়াকে সোজা টেনে হিঁচড়ে তুলে বারান্দার দেওয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরলো।

একদিকে কেনীথের শক্ত গরম চোখে হিসহিস করছে অন্যদিকে আনায়াও তা। যেন একে অপরকে দুজনে গিলে খাবে। কেনীথ কিছু বলার আগেই আনায়া হিসহিসিয়ে বলতে লাগলো,

“কি চাস তুই? আমি তোর হাতের পুতুল হয়ে থাকবো। তুই আমাকে পাগল বানিয়ে নিজের হাতে নাচাবি? এটা কোনোদিনও সম্ভব না। আমি তোর এই ইচ্ছে পূরণ হতে দেবো না! তোর মতো শু*রের বাচ্চার সাথে আমার মৃত দেহ থাকতে পারে কিন্তু আমি না।”

কেনীথের চোখমুখের ধরণ আচমকা বদলে গেলো। তার রাগ ছিলো আনায়ার ছোট খাটো অনেকগুলো বিষয়ের উপরই কিন্তু এতক্ষণ তা পাত্তা দেয়নি। আনায়া যে এখন ম*রতে চেয়েছে এতেও হয়তো কেনীথ আনায়াকে শাসিয়ে কিছু একটা করতো তবে এবার যেন আনায়া কেনীথের সব রাগকে একত্রিত করে ভয়ংকর কিছু করার পায়তারা করেছে। যে কারণেই কেনীথ রাগ আর তাচ্ছিল্যের সাথে শব্দহীন ভাবে হেসে ফেলো। কিন্তু আনায়া হয়তো কেনীথের বিষয়টি ঠিকঠাক বুঝতে পারলো না। বরং সে কিছু বোঝার আগেই কেনীথ আনায়ার মুখের ঠোঁট চোয়াল এর মাঝামাঝি শক্ত হাতে ঘুষি মারতেই আনায়া ছিটকে পাশে আঁচড়ে পড়লো নিচে।

তবে আনায়া নিজের দুহাতের ভরে নিজেকে সামলে নিলেও তার ঠোঁট আর অতিরিক্ত আঘাতের ফলে মুখের ভেতরে অংশ কেটে যাওয়ায় অনবরত ফোঁটা ফোঁটা র*ক্ত ফ্লোরের উপর পড়তে দেখলো।

আনায়ার ব্যাথা হলো ঠিকই তবে সে একটুও কাঁদলো না। মাথা তুলে নিজের একহাত দিয়ে জোরে ঠোঁটে ঘষা দিয়ে র*ক্ত মুছে পেছনে ফিরে কেনীথের দিকে বিদ্বেষ আর রাগান্বিত চোখে তাকলো। শরীরে শক্তি ফুরিয়ে এসেছে কিন্তু কেনীথকে শেষ করার ভুত যেন চেপে ধরেছে। কেনীথকে শেষ করতে না পারলেও আঘাত করতেও যেন সে পিছুপা হচ্ছে না।

আনায়া নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে কেনীথকে আঘাতের জন্য উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতেই কেনীথ পুনরায় ওর উপর হামলে পড়লো। কেনীথ আদতে কি চাইছে তা সে নিজেও জানে না। তবে এই মূহুর্তে তার আনায়াকেই শেষ করে দিতে ইচ্ছে করছে। তো এবার কেনীথ সোজা আনায়ার গলা চেপে সোজাসুজি দাঁড় করিয়ে বারান্দার দরজার সাথে চেপে ধরলো। আনায়া নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ওর রাগ একটুও কমেনি। অন্যদিকে কেনীথেরও থামার নাম নেই। ও আনায়ার গলায় আরো বেশি শক্তি প্রয়োগ করে চেপে ধরলো আর আনায়াও সহ্য করতে না পেরে যতটা পারলো কেনীথ বাহুতে আছড়াতে লাগলো। তবে এবার তার মনেই হচ্ছে জানটা হয়তো বেরিয়েই যাবে।

কিন্তু এর আগেই কেনীথের হালকা লাল চোখের মণি সহ পুরো চোখ জোড়াই র*ক্ত লাল হয়ে গিয়েছে। এবং সে হিসহিসিয়ে আনায়াকে বলতে লাগলো,

“আমাকে শু*রের বাচ্চা বলিস কোন সাহসে? তোর সাহাস কি করে হয় আমার বাবা মাকে নিয়ে কথা বলার। আগে নিজে জেনে নিতিস, কতটা জা*নোয়ার!কতটা শু*য়ো*র! কতটা পি*শাচ ছিলো তোর বাপ।”

আনায়া সবকিছুই স্পষ্ট শুনতে পেলো কিন্তু ওর জান যায় যায় অবস্থা। কেনীথ উন্মাদনায় এমন ভাবে নিজের ক্ষো*ভ প্রকাশ করছে যে আনায়া এখন শূন্যে উঠে গিয়েছে। ফ্লোর হতে তার পা এখন কয়েক ইঞ্চি উপরে। চোখ জোড়া বেরিয়ে আসার উপক্রম। ঠিক এমন অবস্থাই কেনীথ আনায়াকে ছেড়ে দিলো। আর আনায়া ছাড়া পেতেই সে পাগলের মতো কাশতে কাশতে নিশ্বাস নিতে চাইলো।

তবে দুজনের মাঝে কারো রাগই কমার নাম নেই। আনায়া কোনো ভাবে কথার বলার পর্যায়ে চলে এলেই খানিকটা কাশতে কাশতেই বলতে লাগলো,

“এসব তোর নাটক। আমার বাবাকে মেরে এখন তাকেই খারাপ বলছিস। যত যাই করিস না কেনো, আমি এখান থেকে বের হতে না পারলে যেভাবেই হোক ম*রেই ছাড়বো। তোর সব পৈ*শাচিকতা শুধু আমার জন্যই। আমাকে কষ্ট দিতে তুই সবাইকে শেষ করতে পারিস। তবে আমি নিজেই ম*রে যাবো। তখন দেখি তুই কি করিস। আমিও জানতে চাই তুই আর কাকে কষ্ট দিতে আর কতটা নিচে নামতে পারিস।”

কেনীথ ওর কথায় ওর সামনে এগিয়ে এলো। আনায়া এখনো জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। এরই মাঝে কেনীথ পুনরায় চোখ মুখ শক্ত করে আনায়ার গাল চেপে ধরলো। শক্ত করে চেপে ধরতেই আনায়ার কাটা ঠোঁট থেকে ফিনকি দিয়ে র*ক্ত ঝড়তে লাগলো। আনায়া ব্যাথায় এবার খানিকটা কুঁকড়ে গেলো। তবে কেনীথের কাছ থেকে মুক্তি পেতে ওর ধাক্কাধাক্কি করেও কোনো লাভ হলো না। বরং তার আগেই কেনীথ ওকে নিমিষেই উল্টোকরে ওর হাত দুটো পেছন করে শক্ত হাতে চেপে ধরলো। এবং আনায়া কানের কাছে মুখ এনে হিসহিসিয়ে বলতে লাগলো,

“বাপের মতো খুব ম*রার ইচ্ছে তাই না? চল আজ তোকে শেষ করেই ছাড়বো।”

এই বলেই আনায়া কিছু বুঝে কিংবা করে ওঠার আগেই পেছন হতে কেনীথ আনায়ার কোমর চেপে ধরে সরাসরি ওকে রুমে নিয়ে গেলো। আনায়া ভেবেছিলো কেনীথ হয়তো ওকে মা*রবে কিন্তু এবার কেনীথ যা করতে চাইছে তা সে কল্পনাতেও ভাবেনি। এবার আচমকা আনায়ার মনে ভয় চেপে ধরলো। সে যে কেনীথের সাথে শক্তিতে কখনোই পারবে না তা জানা কথা কিন্তু বুদ্ধি দিয়ে কিছু করতে হলেও তা সময়সাপেক্ষের বিষয়। যাই করতে হবে তা কেনীথের অগোচরেই করতে হবে আর খুব সাবধানে। কিন্তু এতো কিছু করার জন্য আনায়ার কাছে সময় ছিলো না বিধায় আনায়া জীবন শেষের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো কিন্তু সেটাও হলো না। কিন্তু এখন কেনীথ সেটা করতে চাইছে এরপর আনায়ার মানসিক অবস্থা ঠিক কতটা খারাপ হবে তা হয়তো তার ধারনার বাহিরে। পৃথিবীর প্রত্যেকটা মেয়েই এই বিষয়ে সেনসেটিভ। যেখানে কারো সাথে এমন কিছু হওয়ার পর পুরো জীবনটাই বিস্বাদে রুপ নেয়। সেখানে সে কিভাবে…

আনায়াকে কেনীথ রুমে নিয়ে আসতেই সোজা বিছানায় ছুঁড়ে ফেললো। আনায়া নিজেকে সামলে কেনীথের থেকে দূরে সরে যাওয়ার আগেই কেনীথ ওর বাহু শক্ত করে চেপে আঁটকে ফেললো। মূহুর্তেই আনায়া আতং*কিত হয়ে ঢোক গিললো। তবুও কথায় জোর খাটিয়ে বললো,

“খবরদার! ভুলেও এমন কিছু…

আনায়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই কেনীথ আনায়ার গা হতে ওড়না টেনে খুললো। এতেই আনায়ার চোখে সম্পূর্ণ পানিতে ঢেকে গেলো। ওর চোখে মুখে যেমন আ*তংক তেমনি গলায় বেঁধে রইছে কান্নার দলা। আনায়ার কাঁটা ঠোঁট জোড়া কদাচিৎ কেঁপে কেঁপে উঠছে।

এরই মাঝে আনায়া কিছু বলতে চাওয়ার আগেই কেনীথ আনায়ার হাতদুটো উপরে তুলে আনায়ার জর্জেটের ওড়না দিয়ে শক্ত করে বেঁধে ফেললো। আনায়া দ্রুত নিজের পা ছোটাছুটি করে কেনীথকে দূরে সরানোর চেষ্টা করেও কোনো লাভ হলো না। কেনীথ আনায়ার পা আটঁকানোর জন্য সোজা ওর উপরে চড়ে বসলো। কেনীথের চোখ মুখে শুধু রাগ আর তাচ্ছিল্যের হাসি বিদ্যামান। ও আদোও কি আনায়াকে পেতে চাইছে নাকি ওকে কষ্ট দিতে চাই তা তার কাছে অজানা। কেনীথের সবচেয়ে বড় সমস্যা সে আদতে কি চায় এবং কেনো চায় তাই পরিষ্কার নয়। শুধু সে যখন চায় একবার কিছু করবে তো সে তা যে কোনো উপায়ে করেই ছাড়বে। এতে কার কি ক্ষতি হলো তা কেনীথের ভাবার বিষয় নয়।

” প্লিজ, অন্তত আমার সাথে এটা করবে না। আপনি আমাকে বাবার মতোই শেষ করে ফেলুন তবুও অন্তত এটা…”

আনায়ার কান্নাকাটি কিংবা এহেন অনুনয়ে কেনীথের মাঝে কোনো পরিবর্তন নেই।সে আনায়ার হাত দুটো একহাতে উপরের দিকে ধরে রইছে আর এবার অন্য হাতটা আনায়ার কোমড়ের পাশ থেকে সরিয়ে আনায়ার বুকের কাপড়ের কিছু অংশ শক্ত করে ধরে আনায়ার দিকে বি*ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে বললো,

“শেষ করাটা তো পরের বিষয়। আগে না হয় তোকে ছি*ড়েখুঁ*ড়ে খাই!”

এই বলেই কেনীথ একপ্রকার আনায়ার বুকের কাপড়ের অংশ টেনে ছিঁড়ে ফেললো। গলার কিছু অংশে বাটন ডিজাইনের হওয়ার কাপড় ছিঁড়তে বেশি কষ্ট হলো না কেনীথের। তবে জোরে টানার ফলে আনায়ার গলার পেছনে অংশ অনেকটাই ফেঁসে লাল হয়ে গিয়েছি। তবে আনায়ার এসবে ভ্রুক্ষেপহীন। কেননা কেনীথের এহেন কাজেই আনায়া সম্পূর্ণ রুপে চিৎকার করে কেঁদে ফেলেছে আর এখনোও সে অনবরত কাঁদছে।

কেনীথের প্রতিটা স্পর্শই আনায়ার কাছে ছিলো চরম বি*ষাক্ত।ওর প্রতিটা স্পর্শে আনায়ার প্রতিমুহূর্তে নিজের মৃ*ত্যু কামনা করেছে। অন্যদিকে কেনীথের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। কেনীথ নিজের প্রতিটা স্পর্শে শুধু এক অজানা ক্ষো*ভ, রাগ, আর বি*দ্বেষ মিশিয়েছে। তার উদ্দেশ্যেই যেন ছিলো তারেক তার মায়ের সাথে যা করেছে তা সে আজ তারেকের মেয়ে হওয়ার কারণে আনায়ার সাথে করবে। যে কারণে আনায়ার কান্না, কষ্ট কিংবা আ*র্তনাদের চিৎকার বিন্দুমাত্রও কেনীথের মাঝে দয়ামায়া সৃষ্টি করেনি। কেনীথ আজ আনায়ার মাঝে নিজের সর্বস্ব মিশিয়ে দিয়েছে। যতটা পেরেছে আনায়াকে ছি*ড়েখুঁ*ড়ে কষ্ট দিতে চেয়েছে। আনায়ার সর্বাঙ্গে নিজের বিষা*ক্ততা ছড়িয়েছে। আর সম্পূর্ণভাবে আনায়াকে ভঙ্গুর করে দেওয়ার পরই উন্মাদ কেনীথ শান্ত হয়েছে। কিন্তু ততক্ষণে আনায়ার অবস্থা করূনের চেয়ে করূন।

বিছানার মাঝে বিবস্ত্র মেয়েটার এখন সামান্য কাতরানোর মতোও শক্তি নেই। ঘন্টার পর ঘন্টা কেনীথের পৈ*শাচি*কতায় সে এখন জ্যা*ন্ত লা*শ।কেনীথের ব*র্বরতায় প্রথমে চিৎকার করলেও শক্তি ফুরিয়ে যেতে সে একটা পর্যায়ে সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। তার বর্তমানে পরিস্থিতিতে শুধু মনে হবে কোনো এক অসহায়ের আজ সতিত্ব হরন হয়েছে তাও অতন্ত্য নি*কৃষ্ট ভাবে। যার সমস্ত দেহে জানো*য়ারের মতো ধ্বংসাত্মক চালানো হয়েছে। যাকে সোজা ভাষায় ধ/র্ষ/ ন বললেও ভুল হবে না।

কেনীথ বি*ধ্বস্ত আনায়ার দিকে একবার তাকালো। শরীরের এমন কোনো জায়গায় নেই যেখানে কেনীথ নিজের পৈশাচিক কর্মকাণ্ড করেনি। চেহারা, ঠোঁট, গলা হাত সবজায়গায় ছোপ ছোপ দাগ পড়ে গিয়েছে। যার কিছুটা লাল রইলেও এখন কালচে নীল বর্নের হয়ে যাচ্ছে।

এবার হয়তো কেনীথ নিজেকে কিছুটা হলেও শান্ত করতে পেরেছে। তবে সে নিজের রাগ আর গাম্ভীর্যের ছাপ বজায় রেখে আনায়াকে আদেশ সরূপ বলতে লাগলো,

“আমার চোখের সামনে থেকে সরে যা।”

কিন্তু কেনীথের কথায় আনায়া আদোও শুনতে পেলো কিনা কে জানে। আর শুনলেও তা আনায়ার মস্তিষ্কে পৌঁছেছে কিনা তাও অজানা। নিভু নিভু চোখ দুটো এখন স্তব্ধ রুপে উপরের দিকে তাকিয়ে। বিবস্ত্র এবং সম্পূর্ণ পাথর সরূপ নিথর দেহের এখন আর কোনো নড়চড় নেই। মস্তিষ্কও হয়ে গিয়েছে ধীরে ধীরে নিস্ক্রিয়। একদিনেই ঝড়েরবেগে জীবনে তার সাথে এতো কিছু হলো যে, সে এখন নিজের বেঁচে থাকাকেও মেনে নিতে পারছে না।

এরই মাঝে বিছানার অন্যপাশে বসে বিরক্ত হতে থাকা কেনীথ পুনোরায় পেছনে ফিরে গর্জে বলতে লাগলো,

“তোকে যেতে বলেছি না আমি! যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। আর যতক্ষণ না আমি চাইবো আমার সামনেও…”

কেনীথ কথাটা আর সম্পূর্ণ করলো না। বরং তার আগেই বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো।এবং আনায়ার কাছে গিয়ে ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এতক্ষণে অবশ্য কেনীথ নিজের প্যান্ট পড়ে নিয়েছে।

কেনীথ আর কিছু না ভেবে সোজাসুজি বিবস্ত্র আনায়াকে অকপটে পাজকোলে তুলে নিয়ে বাথরুমের দিকে এগোতে লাগলো। এরপর বাথটাবের পানিতে বসিয়ে দিয়ে আনায়ার উদ্দেশ্যে বলতে স্বাভাবিক কন্ঠে বলতে থাকলো,

“কোনো প্রয়োজন হলে ডাকিস আমায়।”

এবারও কেনীথের কথায় আনায়ার কোনো জবাব নেই। চুপচাপ সামনে স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে বসে রইছে তো রইছেই। কেনীথের দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। এদিকে আনায়ার এহেন হাল দেখে কেনীথের অবস্থা খারাপ। একদিকে হুটহাট এসব করে ফেলছে আবার করার পর নিজের কাজেই নিজেই অতিষ্ঠ হচ্ছে। কই আগে তো এমন হয়নি তবে এই এখন কেনো এসব হচ্ছে। তবে দোষ হিসেবে শেষমেশ সে আনায়াকেই দিলো। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব দোষ মনেমনে আনায়া দিয়ে দ্রুত বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলো।

তবে বাথরুম থেকে বের হতেই কিছুক্ষণ হাটাহাটি করার পর উন্মাদের মতো ফোনটা বের করে কাউকে ফোন লাগলো। ফোনের ওপাশের ব্যাক্তিটির ফোন ধরতে দু সেকেন্ড দেরী হয়েছে কিনা তাতেই কেনীথ ক্ষে*পে গেলো। যে কারণে ওপাশের ব্যাক্তিটি ফোন রিসিভ করে কিছু বলার আগেই কেনীথ ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলতে লাগলো,

“ফোন ধরতে এতো দেরী হয় কেনো?”

এমন রামধমক শুনে ওপর প্রান্তের লোকটা আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,

—“সরি বস কিন্তু আমি দেরী কই…”

—“চুপ কর! আমায় এটা বল যে ওকে এখন কি করবো? বাপের মতো মে*রে ফেলবো? আমার ওকে যা*স্ট অসহ্য লাগছে।”

#চলবে