একজোড়া আগুন পাখি পর্ব-২৮

0
49

#একজোড়া_আগুন_পাখি
#পর্বঃ২৮
#তুশকন্যা

“ফোন ধরতে এতো দেরী হয় কেনো?”

এমন রামধমক শুনে ওপর প্রান্তের লোকটা আমতা আমতা করে বলতে লাগলো,

—“সরি বস কিন্তু আমি দেরী কই…”

—“চুপ কর! আমায় এটা বল যে ওকে এখন কি করবো? বাপের মতো মে*রে ফেলবো? আমার ওকে যা*স্ট অসহ্য লাগছে।”

ওপর প্রান্তে থাকা লোকটি কেনীথের কথায় খানিকটা চমকে উঠলো। তড়িঘড়ি করে বললো,

“বস কাকে মা*রার কথা বলছেন আপনি? ভুলেও এ কাজ করবেন না নয়তো ম্যাম জানতে পারলে আমাকে সহ আপনাকেও…”

কেনীথ লোকটির কথা শেষ হওয়ার আগেই ক্ষে*পে গিয়ে বলতে থাকলো,

“রাখ তোর ম্যামকে। কাজ কি আমার হয়ে করিস নাকি তোর ম্যামের!”

এই বলেই কেনীথ লোকটিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা ফ্লোরে আঁচড়ে ফেললো। আর নিমিষেই ফোনটা ভেঙ্গে কয়েকটা ছোট বড় অংশ এদিক ওদিক ছিঁটকে পড়লো।

তবে কেনীথ এসবে পাত্তা না দিয়ে রাগী চোখে বাথরুমের দিকে তাকালো। এরপর হুট করেই বাথরুমে ঢুকে গিয়ে আশেপাশে না তাকিয়ে ধমকের সুরে বলতে লাগলো,

“এখানে কি ঘুমানোর জন্য রেখে…”

কেনীথ কথা বলতে বলতেই যখন আনায়ার দিকে তার নজর পড়লো তখনই সে নিজের কথা সম্পূর্ণ না করেই থামলো। আনায়া সেই একই ভাবে বি*ধ্বস্ত পুতুলের ন্যায় বাথটাবে পানির মাঝে ডুবে রইছে। প্রথমে যখন কেনীথ ওকে পানিতে বসালো তখন তার শরীরের প্রত্যেক ক্ষত জায়গায় ব্যাথায় বিষিয়ে উঠলেও আনায়ার মাঝে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা মেলেনি। ধীরে ধীরে এমন পাথর রুপে নিজেকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলছে যে চারপাশে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা কিছুই তার ধ্যান জ্ঞানে নেই।

এদিকে আনায়ার এমন অবস্থা দেখে আরো বেশি বিরক্ত হলো। তবে এবার নিজেকে যতটা পারলো শান্ত করে কপালে কিছুক্ষণ বুড়ো আঙ্গুল ঘেষে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এরপর আর বেশি কিছু না ভেবে আনায়াকে সে নিজ হাতেই একদম গোসল করিয়ে পরিষ্কার করে দিলো। আর এবার পুরো সময়টাতে আনায়া যথারীতি সম্পূর্ণ প্রাণহীন মূর্তি স্বরুপ কেনীথের কাছে ধরা দিলো।

এবার যেন কেনীথের একটা স্পর্শও আর তার শরীরে লাগছে না। আর না সে এবার কেনীথকে কোনো বাঁধা দিচ্ছে। মাঝেমধ্যে চোখজোড়া দূর্বলতার জন্য বুঝে ফেলছে তো কখনো খুলছে। শুধু এইটুকুতেই হয়তো কেউ বুঝতে পারবে আনায়া বেঁচে রইছে। নয়তো কেনীথ তার সাথে কি করছে না করছে তাতে তার কোনো হেলদোল নেই।

এদিকে এবার কেনীথ খানিকটা সযত্নেই আনায়াকে গোসল করিয়ে দিলো। যদিও প্রথমে এমনটা ভাবেনি। আনায়াকে আবারও কষ্ট দেওয়ারও হয়তো মনে সাধ জেগেছিলো কিন্তু এবার নিজের এই ইচ্ছেয় আর সায় দেয়নি।

আনায়ার গোসল করানোর শেষে কেনীথ নিজেও গোসল সেরে নিলো। এরপর নিজে নতুন একটা কালো টাউজার পড়ে আনায়াকে নিজ হাতেই কালো রংএর নরম কাপড়ের ঢিলেঢালা জামা পড়িয়ে দিলো। কেনীথ যেগুলো আনায়ার জন্য জামা কিনে নিয়ে এসেছিলো তার মাঝে এটাই একটু বেশি ঢিলেঢালা ছিলো যেটা কেনীথ বেছে নিয়ে এসেছে। আর ভেবেছে কাল আরো কিছু কাপড় আনায়ার জন্য নিয়ে আসবে। আবার ভাবছে সোজা আনায়াকেই বাড়ি থেকে সরিয়ে দেবে।

কেনীথ আনায়াকে টুলে বসিয়ে নিজে হাঁটু গেঁড়ে বসে আনায়ার জামার সামনের বাটন লাগিয়ে দিতে লাগলো। এমন সময় কেনীথ আনায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো। আনায়ার সামনে যে একটা জলজ্যান্ত মানুষ বসে রইছে তাতে আনায়ার কোনো কোনো হুসই নেই। তার চোখজোড়ার নজর সরাসরি অর্থাৎ কেনীথকে ছাড়িয়ে তার পেছনের দেওয়ালে গিয়ে ঠেকেছে। কিন্তু সে আদোও কোন জগতে রয়েছে তা জানা নেই।

কেনীথ একদম পরিপাটি ভাবে আনায়াকে জামা পড়িয়ে দেওয়ার পর ওর মুখের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে দেখলো। গোলাপি রং-এর ঠোঁটের এখন অত্যন্ত বি*শ্রী অবস্থা। অল্প একটু জায়গায় কোথায় কালচে নীল নয়তো কোথাও একদম কেঁটে খসে পড়ার মতো অবস্থা। কতটা পৈশা*চিক কাজ করছে কেনীথ, তা হয়তো এখনও তার বোধগম্য হচ্ছে না। কালো কাপড়ের মাঝে উন্মুক্ত ফর্সা গলায়তেও কালচে ছোপ ছোপ দাগে এখন পূর্ণ।

কেনীথ আলতোভাবে আনায়ার ঠোঁট ছুঁতে গিয়েও থেমে গেলো। এর পরবর্তীতে খানিকটা কঢ়া কন্ঠে আনায়াকে ডাকলো।

“তারা!…তারা!”

দু-তিনবার ডাকার পরও যখন আনায়ার মাঝে কোনো হেলদোল নেই তখন কেনীথ আর দেরী না করে আনায়াকে পুনোরায় পাজকোলে তুলে নিলো। আনায়ার অবস্থার এতোই অবনতি হয়েছে যে কেনীথ আনায়াকে শুন্যে তুলে নেওয়ার পর সে তার সম্পূর্ণ ভার কেনীথের উপর ছেড়ে দিয়েছে। হাত পা যেন মৃ*ত দেহের মতো শূন্যে ঝুলছে। কেনীথ হতাশ, সে সত্যিই হতাশ কিন্তু সে না নিজেকে ঠিকঠাক দোষারোপ করছে না আনায়াকে। তার নিজের মাথাতেই যেন এখন প্যাচ লেগে গিয়েছে। কিন্তু সে মোটেও এই মূহুর্তে নিজের কোনো কাজের জন্য অনুতপ্ত নয়।

এরই মাঝে কেনীথ আনায়াকে নিয়ে রুমে চলে এলে আনায়াকে বিছানার একপাশে বসিয়ে দিলো। এরপর ভেজা চুলগুলো তোয়ালে দিয়ে মুছে দেওয়ার পর হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে একদম শুকিয়ে দিলো। এরপর কি যেন ভাবতেই মনে হলো যে আনায়া হয়তো সেই সকাল বেলায় খেয়েছিলো এরপর আর তার কোনো খাওয়াদাওয়া হয়নি। যে কারণে কেনীথ আনায়াকে ওখানে বসতে বলে নিজেই কিচেনে চলে গেলো।

এদিকে আনায়া তো সেই আগের মতোই রয়েছে একদম প্রাণহীন মানবের ন্যায়। কেনীথ কি বললো আর না বললো তা হয়তো তার কর্নধারেও পৌঁছাচ্ছে না। পুরো মস্তিষ্কই যেন এখন নিষ্ক্রিয়।

_________

কেনীথ আবারও নতুন করে আনায়ার জন্য গরম গরম স্যুপ বানিয়ে রুমে এলো। কিন্তু রুমে এসেই অনেকটা অবাক হয়ে গেলো। আনায়া বিছানার একপাশে গুটিসুটি হয়ে শুয়ে চোখ বুঝে অনবরত থরথর করে কেঁপে চলেছে। হঠাৎ আনায়ার এহেন অবস্থায় কেনীথ ঘাবড়ে গিয়ে হাতে থাকা ট্রে টা বিছানার পাশে টেবিলের উপর রেখে আনায়াকে চিন্তিত সুরে ডাকলো। তবে একবার ডেকেই কেনীথ থামলো। এতক্ষণে বুঝে গিয়েছে যে আনায়ার কাছ থেকে কোনো জবাব সে এই পরিস্থিতিতে পাবে না। তাই দ্রুত কুঁচকে কাঁপতে থাকা আনায়ার পাশে বসে ওর কপাল আর গালে হাত ছোঁয়াতে আশ্চর্য হলো।

আচমকা জ্বর যেন আনায়ার সম্পূর্ণ শরীরে ভর করে পুরো গা পু*ড়িয়ে দিচ্ছে। আর বি*ধ্বস্ত মেয়েটা এখন জ্বরে থরথর করে কেঁপে চলেছে। আজ যে ওর দেহে এখনো প্রাণটা রয়েছে, এটাই যেন আকস্মিক বিষয়।

কেনীথ আনায়ার বাহু ধরে টেনে তুলে খানিকটা আধশোয়া করে নিজের দিকে ফিরালো। এইসময় আনায়াকে কেনীথ যতক্ষণ স্পর্শ করেছিলো ততক্ষণে যেন আনায়ার গায়ের উত্তাপে কেনীথ নিজেই অস্থির হয়ে উঠেছে। হঠাৎ এমন জ্বর আকস্মিক কিছু নয়। আজ আনায়ার সাথে যা হয়েছে এবং সর্বশেষে কেনীথ ওর নিস্তেজ দেহের সাথে যতটা পৈশা*চিক কাজ করছে তাতে এমনটা হওয়ারই ছিলো। কিন্তু আনায়ার জ্বর যেন নিমিষেই বেড়েই চলেছে।

—“তারা চোখ খুলে তাকা! তারা… আমার শুনতে পারছিস? তারা…”

কেনীথ এবার খানিকটা চিন্তিত এবং নরম সুরেই কথাগুলো বললো। তবে আনায়াকে দেখে মনে হচ্ছে সে চোখজোড়া খুলতে পারছে না। কেনীথ আরেকটু খেয়াল করে দেখলো, আনায়ার চোখ বন্ধ রইলেও অনবরত সেখান হতে ফোঁটা ফোঁটা পানি ঝরছে। সঙ্গে সম্পূর্ণ দেহের সাথে অনবরত তার বি*ধ্বস্ত ঠোঁট জোড়া কেঁপে চলেছে। এমনকি কেনীথ তাকে ঠিকঠাক ভাবে আধশোয়া করানোর পরও সে ব্যালেন্স ধরে রাখতে না পেরে হেলে যাচ্ছে।

এরই মাঝে কেনীথ দ্রুত মোটা কম্বল এনে আনায়াকে সম্পূর্ণ ভাবে পেচিয়ে ওকে বসিয়ে দিলো। সঙ্গে রুমের এসি টাও বন্ধ করে দিলো। তবুও আনায়ার অবস্থা ধীরে ধীরে আরো বেশি নাজুক হচ্ছে। কেনীথ দু’হাতে আনায়ার গাল ধরে বুড়ো আঙ্গুল টা অসাবধানতার জন্য আনায়ার ঠোঁট লাগতেই আনায়া বন্ধ চোখজোড়া আরো বেশি কুঁচকে নিয়ে কেঁপে উঠলো। আর কেনীথ নিজের ভুল বুঝতেই দ্রুত আনায়াকে আলতোভাবে ধরলো যাতে পুনোরায় কোথায়ও ব্যাথা না লাগে।

এরই মাঝে কেনীথ অনবরত আনায়াকে ডাকাডাকি করে কোনোমতে ওর চোখ খোলাতে পারলো। তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। যে কারণে আনায়া চোখ খোলার সাথেসাথেই আর বেশি দেরী না করে স্যুপের বাটিটা আনায়া হাতে নিয়ে চামচে স্যুপ তুলে আনায়ার মুখের সামনে ধরে বলতে থাকলো,

“তারা বেশি দেরী করবি না। দ্রুত খেয়ে নে সব। নয়তো… প্লিজ আমাকে দিয়ে আর কিছু করানোর চেষ্টা করিস না। লিটরালি তোকে আমার একদম অসহ্য লাগছে।”

কেনীথের এমন তিক্ততার সুরে বলা কথাতেও আনায়ার কোনো হেলদোল নেই। মানসিক কিংবা শারিরিক কোনো পর্যায়ে যে আনায়া স্বাভাবিক নেই তা কেনীথ বুঝতে পেরেও বারবার ভুলে গিয়ে আনায়ার উপর বিরক্ত হচ্ছে। তবে এবারও নিজেকে যথেষ্ট সামলে রাগ কমিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এরপর ছোট ট্রে টাতে স্যুপের বাটিটা নিজের এক উরুতে রেখে আনায়ার একগালে নিজের হাত আলতোভাবে ছুঁইয়ে নরম সুরে অনেকটা অনুনয় করে বলতে লাগলো,

“প্লিজ খেয়ে নে, ঔষধ খেতে হবে তো!”

কেনীথ নরম সুরেই বলুক কিংবা তিক্ত সুরে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে। আনায়ার ধ্যান জ্ঞান যে এখন এই জগতে নেই তা কেনীথকে কে বোঝাবে। কেনীথের কষ্ট হচ্ছে তো এই ভেবে যে সে আনায়ার এমন অবস্থা না হলে হয়তো ওকে আরো বেশি কষ্ট দিয়ে নিজে শান্তি পেতে পারতো। অথচ আনায়ার এহেন অবস্থাতেই কেনীথ অজানা অশান্তিতে ডুবে গিয়েছে।

এবার আর কেনীথ আনায়ার রেসপন্সের আশায় বসে রইলো না। আস্তে করে চামচটা আনায়ার ঠোঁটে ছোঁয়ানোর পরই আনায়া ধীরে ধীরে মুখ খুললো। তবে এতোক্ষণে আনায়ার চোখজোড়া পুরনোয় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আনায়া মুখ খুলেছে দেখেই কেনীথ তড়িঘড়ি করে যতটা পারলো ওকে খাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো।

বেচারার এই বয়সে এভাবে কাউকে খাওয়াতে গিয়ে যে নিজের জান প্রাণ বের করে ফেলবে তা হয়তো কেনীথ কল্পনাতেও ভাবেনি।আনায়া তো যথারীতি একই ভাবে অর্ধচেতন রুপেই রয়ে গিয়েছে কিন্তু আনায়াকে খাওয়াতে গিয়ে কেনীথের সে কি অনুনয়। পারলে কাকুতি-মিনতি করে আনায়ার হাতে পায়ে ধরে খাওয়াতে পারলেই যেন বাঁচে। এসব করতে গিয়ে যে ওর চোখেই পানি চলে আসনি এটাই যেন অনেক।

এদিকে আনায়া সম্পূর্ণ ধ্যানে না থাকলেও বিষয়টি তার জন্যও যথেষ্ট কষ্টদায়ক ছিলো। যদিও কেনীথ স্যুপে কোনো প্রকার ঝাল ছাড়াই বানিয়েছে তবুও প্রতিবার তা মুখে দেওয়ার পর যেন ঠোঁট সহ মুখের ভেতরে ক্ষত পূর্ন অংশ গুলোয় বিষাক্ততায় বিষিয়ে দিয়েছে। যেটা কিনা তার প্রচন্ড জ্বরের মাঝে নতুন তিক্ততার স্বাদ। তবে কেনীথের এতো জোড়াজুড়িতে, সে সামান্য বাঁধা টুকু দেওয়ার মতো পরিস্থিতিতেও ছিলো না।

অবশেষে কেনীথ বহু প্রচেষ্টার পর আনায়াকে সম্পূর্ণটা না হলেও অর্ধেক স্যুপ খাইয়ে দিতে পেরেই স্থির হয়েছে। কেনীথের জীবনের সকল অসাধ্য সাধন এক পাশে আর আজকে এই যুদ্ধ যেন আরেক পাশে স্থান পেয়েছে। খাবার খাওয়ানো শেষে আনায়াকে সযত্নে পানি খাইয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কিছু জ্বর সহ ব্যাথার ঔষধ খাইয়ে দিলো। এরপর আনায়াকে শুইয়ে দিয়ে কম্বল দিয়ে ওকে সম্পূর্ণ রুপে পেঁচিয়ে ঢেকে দিলো।

নিজের এহেন অক্লান্ত পরিশ্রমের পর কেনীথ বিছানায়া থাকা আনায়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,

“এ যেন ম*রার উপর খরা! কিন্তু এটাকে এখন আমি করবো টা কি?”

এটুকু বলেই কেনীথ দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তবে মূহুর্তেই খেয়াল করলো যে আনায়াকে এভাবে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে দেওয়ার পরও সে অনবরত কেঁপে চলেছে। কেনীথ খানিকটা চিন্তিত আর বিরক্তির সুরে মনে মনে ভাবলো,

“এতো কিছুর পরও এর কাঁপা-কাঁপি যায় না!”

তবে পুনোরায় সে ভাবলো যে ওর ঠান্ডা হয়তো একটু বেশিই করছে। জ্বরটা যেহেতু বেশি সেক্ষেত্রে ঠান্ডাটাও হয়তো বেশি। আর কেনীথ তো বোকার মতো জ্বরটাও মাপেনি। এমন আহাম্মকের মতো কাজকর্ম কেনো করছে কে জানে। নিজের কাজকর্মে এখন সে নিজেই বিরক্ত।

কেনীথ এবার দ্রুত থার্মোমিটার খুঁজে এনে আনায়ার পাশে বসলো। এরপর শুয়ে থাকা অবস্থাতেই থার্মোমিটারে জ্বর মাপতেই কেনীথ আশ্চর্য হলো। পুরো ১০৪° ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গিয়েছে। ঔষধ খাইয়েছে কিন্তু তাতে কাজ হতে দেরী হবে। আপাতত উপায় হলো জলপট্টি দিয়ে জ্বর কমানো।

কেনীথ তড়িঘড়ি একটা বাটিতে কিছু পানি আর একটা ছোট পরিস্কার কাপড় নিয়ে এলো। এরপর আনায়ার পাশে বসে কাপড়টুকু সুন্দর ভাবে ভাজ করে ভিজিয়ে আনায়ার কপালে রাখলো। এভাবে কিছুক্ষণ সময় পরপর একই ভাবে কাপড় ভিজিয়ে ভিজিয়ে আনায়ার মাথায় জলপট্টি দিতে থাকলো কেনীথ। রাত যথেষ্ট হয়েছে কিন্তু কেনীথের চোখে এখন আর ঘুম নেই। সযত্নে সে নিজের কাজ করেছে। কিছুক্ষণ পর পর জ্বর কমেছে কিনা তা দেখায় আনায়ার গাল আর কপালে হাত রাখছে।

এভাবে একটা সময় পর আনায়ার জ্বর খানেকটা কমে এলে আর আনায়ার কম্পন থেমে যাওয়ার পর কেনীথ স্বস্তির দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এখন অবশ্য তার নিজেরও অনেক বেশি ঘুম পাচ্ছে ।খাটাখাটুনি যথেষ্ট করেছে সঙ্গে রাত এখন গভীর। কেনীথ আনায়ার পাশেই সরাসরি শুয়ে পড়লো খানিকটা কম্বলের উপরেই। এরপর আনায়ার থেকে উল্টো ফিরতে গিয়ে আচমকা আনায়ার দিকে ঘুরে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ কপাল কুঁচকে কিসব যেন ভাবতে ভাবতে আনায়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। এখন এসে কোথায় যেন তার অনুশোচনা হচ্ছে যে সে আনায়ার ঠিক কি বাজে হালটাই না করেছে। তবে সে অনুশোচনা কেনীথ অগ্রাহ্য করে উড়িয়ে দিলো।

তবে এমন বি*ধ্বস্ত ঠোঁটটায় একবার হাত বুলানোর ইচ্ছে জাগলো। যথারীতি কেনীথ খানিকটা ঠোঁট ভিজিয়ে আনায়ার ঠোঁটে আঙ্গুল ছোঁয়াতে হাত বাড়ালো। কেনীথের কাজকর্মে মনে হচ্ছে যেন সে কোনো অসাধ্য সাধন করতে যাচ্ছে। তবে কেনীথের এই অসাধ্য সাধনও আর এই মূহুর্তে হলো না। আচমকা কি ভেবে নিমিষেই আঙ্গুল ছোঁয়াতে গিয়েও হাত সরিয়ে নিজের কাছে আনলো। এবং কাত থেকে সোজা চিত হয়ে সিলিং এর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কিঞ্চিৎ ঢোক গিললো। এসব কি হচ্ছে তার সাথে, কেনীথ নিজেও বুঝতে পারছে। একটু আগেই আনায়ার সর্বত্রে নিজের অস্তিত্ব মিশিয়ে দিয়েছে সে। অথচ এখন আনায়াকে ছুঁতেই এতো সংকোচ! কেনীথ যেন নিজের অস্তিত্ব নিজেই হারিয়ে ফেলছে। সে নিজেই নিজেকে বুঝতে পারছে না।

কিছুক্ষণ একধ্যানে উপরের দিকে তাকিয়ে থাকার পর কেনীথ আনায়ার দিকে ঘাড় কাত করে তাকিয়ে দেখলো। আনায়া গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন এখন। এরই মাঝে কেনীথ আনায়ার দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় কিছুক্ষণ জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার পর আচমকা পিঠের নিচ থেকে কম্বল সরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়লো। অতঃপর আনায়ার একদম নিকটে গিয়ে কেনীথ আনায়ার মতোই গুটিসুটি হয়ে শুয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।

বর্তমানে আনায়ার তীব্র গরম নিশ্বাস কেনীথের চিবুকে গিয়ে পড়ছে। এদিকে কেনীথের নিশ্বাস হঠাৎ বন্ধ হওয়ার উপক্রম। গলাও শুকিয়ে যাচ্ছে সঙ্গে অত্যাধিক উষ্ণতায় অস্থির লাগছে। একদিকে এসি বন্ধ সঙ্গে কম্বলে নিচে অতিরিক্ত উষ্ণ তাপমাত্রার আনায়ার সংস্পর্শে ঘেঁষে রইছে। এছাড়া ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই আচমকা আনায়ার ঠোঁট জোড়ায় কিছু একটা যেন করার সাধ জেগে উঠলো। কিন্তু সেই সাধের কথা চিন্তা করেই কেনীথ পুনরায় ঢোক গিললো।

পরবর্তী আবার কি যেন ভেবে আনায়ার আরেকটু কাছে ঘেঁষলো। এবং যতটা পারলো আলতোভাবে আনায়াকে নিজের বলিষ্ঠ হাতের দরূন পেঁচিয়ে নিজের কাছে টানলো। কেনীথ যেন আরেকটু ঘাবড়ে গিয়েছে। নিজের উন্মুক্ত দেহের দিকে আনায়ার উষ্ণ দেহকে টেনে যেন আরো বেশি বিপাকে পড়ে গিয়েছে। হঠাৎ দম বন্ধ কেনো লাগছে তা কেনীথের জানা নেই।

আচমকা আবার কি ভাবলো কে জানে তবে সে আনায়ার থেকে দূরে সরতে গিয়েও তা না করে, তড়িঘড়ি করে অদ্ভুত কাজ করে ফেললো। আচমকা ঠোঁট ভিজিয়ে অতিদ্রুত আনায়ার ঠোঁটে আলতোভাবে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে ত্বরিত ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে আনায়ার কাছ হতে পুনোরায় সরে আসতে চাইলো। কেনীথের ইচ্ছে অনুযায়ী কাজটা সে আলতোভাবে করতে চাইলেও তড়িঘড়ির ফলে তা খানিকটা জোরেশোরে হওয়া আনায়া ঘুমের ঘোরেই আচমকা আরো বেশি কুঁকড়ে উঠলো। এটা দেখা মাত্রই কেনীথ সরে বা গিয়ে আনায়াকে চিন্তিত মুখে তড়িঘড়ি শক্ত করে আরো নিজের কাছে টানলো।

সম্পূর্ণ আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকার কারণে আনায়ার দেহের তীব্র উষ্ণতাকে যেন কেনীথের উন্মুক্ত গা এবার সম্পূর্ণ ভাবে শুষে নিতে লাগলো। আনায়ার গরম নিশ্বাস এবার কেনীথ গলা আর বুকের কাছে আঁচড়ে পড়ছে। কেনীথের অস্থিরতার পাশাপাশি দমবন্ধ লাগছিলো তবে সে আনায়াকে আর ছাড়তে চাইলো না। বরং আনায়াকে পারলে নিজের বক্ষস্থলে ঢুকানোর প্রচেষ্টায় আরো বেশি কাছে টানলো। সাথে কম্বলটাকেও আনায়ার কান অব্দি টেনে ঢেকে ফেললো। অতঃপর যখন কেনীথ অনুভব করলো আনায়া হয়তো এবার কিছুটা স্বস্তিতে ঘুমাচ্ছে, তখন সে আনায়ার কপালের কাছে চুলের অংশে ছোট্ট চুমু একে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অতঃপর চোখ বুঁজে ঘুমিয়ে পড়লো।

__________________

ভোর রাতে এসে কেনীথ ঘুমের মাঝে অনুভব করলো যে ও একদম ঘেমে অস্থির হয়ে উঠেছে। মূহুর্তেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো ওর। চোখ খুলে নিজেকে আনায়ার কাছে সেই একই ভাবে জড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই দেখতে পেলো। কেনীথ খেয়াল করে দেখলো তার মতো আনায়ারও ঠিক একই অবস্থা। অস্থিরতায় খুব ধীরে সুরে হুস হাস করে যাচ্ছে। আনায়ার এহেন অবস্থায় কেনীথের আর বুঝতে বাকি নেই যে ওর জ্বর ছেড়ে গিয়েছে তাই এমন অস্থির হয়ে উঠেছে। সঙ্গে কেনীথও এতোক্ষণ তার উত্তাপে অস্থির।

কেনীথ আর দেরী না করে খুব দ্রুত গা থেকে সম্পূর্ণ রুপে কম্বল সরিয়ে ফেললো। সঙ্গে খুব দ্রুত এসি অন করে পাওয়ার বাড়িয়ে দিলো। এরপর আনায়ার মাথার নিচে বালিশ ঠিকঠাক করে অতঃপর আনায়াকে ঠিকঠাক ভাবে শুইয়ে দিলো।তারপর আনায়ার পাশে বিছানায় বসে আনায়ার মাথায় কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিয়ে সর্বশেষে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।

এরইমাঝে কেনীথ আনায়ার কাছ থেকে সরে এসে বারান্দায় চলে এলো। বাহিরে অন্ধকার এখনো কাটেনি। কেনীথের উন্মুক্ত গায়ে ভোর রাতের স্নিগ্ধ বাতাস ছড়িয়ে যাচ্ছে। কেনীথ ধীরে ধীরে বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়ালো। এরপর মাথা নুইয়ে চোখ বুঝলো। মাথার মাঝে চলছে তার পাহাড় সমান জটিলতার প্যাচ। হুট করে জীবনটা নিমিষেই যেন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। কেনীথ নানান চিন্তার মাঝে রেলিং ধরে রাখা হাতদুটো শক্ত করলো। নিমিষেই বলিষ্ঠ দেহটা ফুলে ফেঁপে উঠছে।সবকিছু শেষে অনেকটাই রাগ কিংবা ক্ষো*ভের প্রতিচ্ছবি মিলছে কেনীথের মাঝে। হয়তো সে এখন এই ধ্যানে মগ্ন যে তার পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক কি হতে চলেছে।

____________

ভোর রাতে জাগার পর কেনীথ আর ঘুমায়নি। সকাল সকাল কেনীথ আর ক্লারার সাথে দেখা করতে গিয়ে তাদেরকে শান্তিতে ঘুমাতে দেখে কেনীথ তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে সেখান থেকে চলে এসেছে। এরপর আনায়ার জন্য আচমকা কিছু ভিন্ন ধরনের খাবার বানানোর সাধ জাগলো। মূলত যেটা ওর জন্য বেশি স্বাস্থ্যকর হবে। তবে কেনীথ তার নিজের জন্য খুব কম রেসিপিই শিখেছে আর যেগুলোও কিনা আনায়ার পছন্দ নয়। বলতে গেলে আনায়ার কাছে তা অখাদ্য।

এজন্য কেনীথ ইন্টারনেটে খোজাখুজি করে ঝাল ছাড়া কিছু খাবার বানানো। যার মাঝে একটি কেনীথের কাছে সম্পূর্ণ অখাদ্য মনে হলেও বাকি দুটোর টেস্ট যথেষ্ট ভালো হয়েছে। এসব ছোটখাটো কাজ শেষে কেনীথ নিজের ফোন ঠিকঠাক করে অন করতেই দেখলো পুরো ২৪৬ টা ফোন কল এসেছে কেনীথের সেই বাম হাত কিংবা ডান হাত সরূপ একমাত্র বিশস্ত লোকের কাছ হতে। যার মাঝে কিনা ২১৭ টাই মিস কল। কেনীথ এহেন অবস্থা দেখে বিরক্ত হলো তবে তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে শুধু একটা টেক্সট করে ওকে আসতে বললো।

______________

সবে মাত্র সকালের আলোয় চারপাশ আলোকিত হয়েছে। আনায়া এখনো ঘুম থেকে ওঠেনি। এরই মাঝে কেনীথের ফোন অনবরত বেজে চলেছে। কেনীথ ইচ্ছে করেই ফোন ধরছে না। কিছুক্ষণ সময় অতিক্রম হওয়ার পর কেনীথ নির্বিকার হয়ে ফোন ধরতেই ওপর প্রান্তের লোকটি বলতে লাগলো,

“বস! কিছু হয়েছে? আপনি ফোন ধরছিলেন না কেনো? আমি সেই কখন থেকে আপনার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যাথা হয়ে…”

“আমি আসছি”

কেনীথ ড্রইং রুমেই ছিলো আর ও জানতোও যে যাকে সে আসতে বলেছে সে তার কথা শুনে পাগলের মতো ছুটে আসবে। সেজন্য লোকটির কথা শেষ হওয়ার আগেই কেনীথ এতোটুকু বলেই বাড়ি থেকে বেড়িয়ে মেইন গেইটের দিকে গেলো।

অতঃপর বড় প্রাচীরে ঘেরা বিশাল বড় বাড়ির বড় দরজা খুলতেই একজন কালো হুডি আর প্যান্ট পড়া লোককে দেখতে পেলো।সেই লোকটি কিছু বলার আগেই কেনীথ গম্ভীর সুরে বললো,

“ভেতরে আয়!”

লোকটিও আর কিছু বলার সুযোগ না পেয়ে কেনীথের পেছন পেছন চললো। একটা সময় বাড়ির বাগান পেরিয়ে তারা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো আর কেনীথ সকল দরজা পুনোরায় বন্ধ করে দিলো।

ভেতরে প্রবেশ করা মাত্রই লোকটি তড়িঘড়ি করে হুডির ক্যাপটা মাথা থেকে নামিয়ে কেনীথের উদ্দেশ্যে বললো,

“বস! উনি কেমন আছেন? সব ঠিক আছে তো?”

উঁচা লম্বা শারিরীক গঠনের ফর্সা ত্বকের বিদেশিদের মতো দেখতে অতিশয় সুন্দর চেহারা সম্পূর্ণ পাভেল। কেনীথের মতো অতিরিক্ত বলিষ্ঠ দেহের না হলেও ছিমছাম গরনের বলিষ্ঠ দেহের বলা যেতে পারে। এই পাভেলই হলো কেনীথের একমাত্র সেই বিশ্বস্ত লোক যাকে সে তার ডান হাত কিংবা বাম হাত হিসেবে সকল সিক্রেট কাজের সঙ্গী বানিয়েছে। পাভেল একজন রাশিয়ান সাথে বলতে গেলে কেনীথের ছোট বেলার বন্ধু।

কেনীথ যখন ছোট বেলায় রাশিয়াতে থাকতো তখন এই পাভেলকে নিজের সঙ্গী বানিয়ে দিন পার করেছে। আর এই পাভেলকে কেনীথের দাদি লুসিয়া এনে দিয়েছিলো যে কিনা লুসিয়ার এক বিশ্বস্ত কর্মীর ছেলে ছিলো। বয়সে পাভেল অবশ্য কেনীথের অনেকটাই ছোট। যাকে কেনীথ একটা সময় নিজের ছোট ভাইয়ের মতো ভাবলেও পরবর্তী তাকেই নিজের সকল কাজের সিক্রেট সঙ্গী বানিয়ে ফেলেছে।

আর কেনীথের সাথে কাজ করতে আজ পাভেল অনেক ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাতেও একদম দক্ষ। তার ভাষা শুনে কেউ বুঝতে পারবে না যে সে বাঙ্গালী নয়। আর সে কেনীথের প্রয়োজনে বাংলাদেশ এবং রাশিয়া দু জায়গাতেই নিজের বিস্তার ছড়িয়ে রেখেছে।

কেনীথ পাভেলকে এমন উত্তেজিত হতে দেখে বললো,

“তোর ম্যাম কিছু জানে?”

“হাহ…আমিই তো কিছু জানি না। বাবুশকা কি করে জানবে।”

কেনীথ তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,
“আমি তো ভেবেছিলাম তুই পুরো রাশিয়ায় খবর ছড়িয়ে ফেলেছিস। যাই হোক, যাকে নিয়ে এতো চিন্তা সে উপরে আছে।”

কেনীথ এটুকু বলেই সিঁড়ি বেয়ে উপরে যেতে লাগলো। এদিকে পাভেলও তড়িঘড়ি করে যেতে যেতে বলতে লাগলো,

“বস! আপনি কিছু করেননি তো?”

কেনীথ তাচ্ছিল্যের সাথে হাসলো তবে পেছনে ফিরে পাভেলের দিকে তাকালো না। এদিকে পাভেল অস্থির হয়ে উঠলো। কেনীথ না তাকিয়েই পেছনে থাকা পাভেলের অবস্থা অনুমান করলো। যে কারণে একদম রুমের সামনে গিয়ে পাভেলের উদ্দেশ্য বললো,

“নিজের চোখেই দেখে নে!”

_______________

হালকা একটা কাঁথা দিয়ে আনায়ার পেট পর্যন্ত ঢেকে রাখা। আনায়া এখনো ঘুমিয়ে যাচ্ছে। অবশ্য সকালটা তো আর বেশি নয় আর তার সাথে গতকাল যা হয়েছে এরপর আনায়ার নতুন সকাল আদোও কেমন হতে চলেছে তা অজানা।

এদিকে সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে বসে রইছে কেনীথ। আর তার দিকে বিস্ময়ের চোখে তাকিয়ে পাভেল। একবার সামনে থাকা কেনীথকে দেখছে তো একবার খানিকটা দূরে বিছানায় থাকা আনায়াকে।মূলত তার এই অত্যাধিক বিস্ময় আনায়াকে ঘিরেই। এতো বাজে অবস্থা… পাভেল জানে না তার এই মূহুর্তে কেমন রিয়েক্ট করা উচিত। তবুও নিজের বিস্ময় কিছুটা কাটিয়ে কেনীথের উদ্দেশ্য বলতে লাগলো,

“বস এটা কি করেছেন আপনি?”

কেনীথ বিরক্তর চোখে পাভেলের দিকে তাকিয়ে বললো,

“যা দেখছিস তাই! ”

পাভেল কেনীথের এমন সহজ স্বীকারোক্তিতে হকচকিয়ে গেলো। খানিকটা ঠোঁট ভিজিয়ে নিমিষেই বলতে লাগলো,

“দেখার আর কি বাকি রেখেছেন! উনি তো আপনারই বউ তাহলে একটু ধীরেসুস্থেই সব করতেন। বাঁধা দিতো কেউ? তাহলে এভাবে রাক্ষ*সের মতো কেনো…”

—“পাভেল!”

কেনীথের নীরব সুরের কঢ়া কথায় পাভেল ঢোক গিলে থেমে গেলো। কথায় কথায় তার এই অতিরিক্ত বলার স্বভাবটা কেনীথের বড্ড অপ্রিয়। অথচ পাভেল এই স্বভাবকেই এখন পর্যন্ত ঠিক করতে পারেনি। তবে আরো কিছু বলার আগেই কেনীথ কপালে আঙ্গুল ঘেঁষতে ঘেঁষতে বিরক্তির সাথে বললো,

“আজেবাজে না বলে এখন এটা বল যে, একে কি করবো। ওকে আমার যাস্ট অসহ্য লাগছে। সারারাত ওর জন্য ঠিকঠাক ঘুমাতে পারিনি।”

—“কিহ!…সারারাত? বেচারীর কি হালটাই না করেছেন। নিজের বউ অথচ আপনার একটু দয়াও হলো না?”

—“দেবো একটা আছাড়! কিসের বউ বউ লাগিয়ে রেখেছিস? যাকে আমার বউ বলছিস সে তো জানেও না যে আমি কে!”

#চলবে