একজোড়া আগুন পাখি পর্ব-৩৫

0
49

#একজোড়া_আগুন_পাখি
®অরনীতা_তুশ্মি(#তুশকন্যা)

পর্ব→৩৫ (১ম অংশ)

বিস্তৃত সবুজ ঘাসে মোড়ানো উদ্যান। ভোরের কুয়াশায় চারপাশ সম্পূর্ণ রুপে আচ্ছাদিত। সূর্যের হালকা কিরণ এসে বিস্তীর্ণ উদ্যানে এসে আছড়ে পড়েছে। হালকা-মধ্যম শীতল হাওয়া মানব শরীরে শিহরণ জাগিয়ে তুলছে।

অথচ এমন পরিস্থিতিতে এই বিস্তীর্ণ উদ্যানের বুক চিরে, কালো ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছুটে চলেছে এক আত্মবিশ্বাসী যুবতী। তার উপস্থিতি যেন এক দৃঢ় ঘোষণা দিচ্ছে যে, সে এখানে শাসন করতে এসেছে। বাতাস তার চুলের খেলায় বিভোর। পিঠ পর্যন্ত ঘন সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো হয়ে বাতাসের তালে তাল মিলিয়ে উড়ছে। তার গ্রীবা উঁচু করে রাখার ভঙ্গিমাই যেন জানান দিচ্ছে, এই পৃথিবী তারই!এই রাজত্ব তারই! এই সাম্রাজ্য তারই!

পরনে তার আধুনিক হর্স রাইডিং পোশাক। অফ হোয়াট কালারের ব্রিচেস এর সঙ্গে ডার্ক ব্লু কালারের হালকা লেদার জ্যাকেট। সাথে লম্বা কালো বুটের সোনালী হিলের প্রান্তে সূর্যের আলো এক ঝলক ছড়াচ্ছে। চোখে তার এক তীক্ষ্ণ দৃষ্টি৷ যে দৃষ্টি প্রকৃতিকে জানান দিচ্ছে, সে শুধু ঘোড়ার পিঠে চড়েই এই বিশাল সাম্রাজ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছে না বরং সে দিগন্ত চূর্ণ করে নিজেকে সবার ওপরে প্রতিষ্ঠিত করছে।

লাগাম ধরে রাখা তার দৃঢ় হাতের মাংসপেশি স্পষ্ট। সঙ্গে প্রতিটি দৌড়ে তার শরীরের নিখুঁত ভারসাম্য যেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় চারপাশের নিস্তরঙ্গ প্রকৃতিকে। তার ঠোঁটের কোণে লুকিয়ে থাকা এক রুক্ষ হাসি যেন বলে, “আমি ঠিক সেটাই চাই, যা আমার চাই!”

ঘোড়ার পায়ের তীব্র শব্দ উদ্যানের নিস্তব্ধতাকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিচ্ছে। তার অদম্য উচ্ছ্বাসে প্রতিটি ছুটে চলায় চারপাশে সৃষ্টি হচ্ছে এক শক্তি আর ক্ষমতার অদৃশ্য বলয়। এই মেয়েটি শুধু ছুটছে না; সে তার নিজস্ব র”ক্তে বোনা এক গল্প লিখছে, যেখানে প্রতিটি পদক্ষেপে জ্বলছে তার ব্যক্তিত্বের অ”গ্নি।

মেয়েটি যেন নিজেকে প্রতিটি মুহূর্তে রচনা করছে। তার উপস্থিতি এমন, যেন পৃথিবী তার নিয়ন্ত্রণে। ঘোড়ার পিঠে বসে, একদিকে তার দৃঢ় মনোবল এবং অন্যদিকে তার দুর্দান্ত আত্মবিশ্বাস! যে দৃশ্য সে তৈরি করে, তা যেন শুধু বাস্তবতা নয় বরং এক জ্বলন্ত গল্প।

মেয়েটি প্রবল উচ্ছ্বাসের স্রোতে ঘোড়ার পিঠে চড়ে ছুটছিল। তার প্রতিটি শ্বাসে যেন ঝড়ছিলো আগুনের উত্তাপ । বাতাস তার চুলের মধ্যে ঝড় তুলেছে আর তার চোখে সেই এক অ*গ্নিমূল্য দৃষ্টি। তবে হঠাৎ দূরে এক পরিচিত ব্যক্তির আগমন তার তীক্ষ্ণ নজরে পড়তেই সে থমকায়।তার ঠোঁটের রুক্ষ হাসিটা বিস্তৃত হয়। বিস্তৃত হাসির ফলে ফর্সা দু’গালে ছোট বড় দুটো টোল ভেসে উঠে।

মেয়েটি লাগাম টেনে ধরে রাখা নিজের কালো গ্লাভস পড়া হাতের বন্ধনটাকে দৃঢ় করে, এক ঝটকায় ঘোড়াটি ঘুরিয়ে সে ওই ব্যক্তির দিকে এগোতে লাগলো। ওদিকে তার পরিচিত ব্যক্তিটিও এতোক্ষণে এগিয়ে এসে নিদিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে পড়েছে৷ অত্যধিক সুশ্রী রূপের এক তরুনী।

পরনে কালচে লাল রঙের রাজকীয় লং গাউন।তার উপর কালচে রংএর বড়সড় মখমলে কাপড়ের আলখাল্লায় নিজেকে আবৃত করে রেখেছে। আলখাল্লার বড়সড় টুপিটার দরূন মুখের এক চতুর্থাংশ ঢেকে গিয়েছে। তবে এসব ছাড়িয়ে উঁকি দিতে থাকা খানিকটা গাঢ় লাল রংএর চুলগুলো দৃশ্যমান। সবমিলিয়ে সে অত্যাধিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ রাজকন্যা সরূপ।

এদিকে ঘোড়াটিকে থামিয়েই দৃঢ় ভাবে মেয়েটি উঁচু থেকেই এক লাফে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল। তার শরীরের প্রতিটি আন্দোলন যেন এক আ*গুনের শিখা, যেটি নিমিষেই চারপাশে ছড়িয়ে যাচ্ছে।

মাটি ছোঁ*য়ার সঙ্গে সঙ্গে সে সোজা হয়ে দাঁড়াল। তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি হতে অ*গ্নিস্ফু*লিঙ্গের মতো তেজ ছড়িয়ে পড়ছে। অথচ ঠোঁটে তার বিস্তৃত হাসি।

মেয়েটি আর দেরী করলো না। সে আলখাল্লায় আবৃত মেয়েটির দিকে এগোতে লাগলো। টাইট ফিটিং রাজকীয় পোশাকে তার রাজকীয় ভাবসাব। সবুজ ঘাসের উপর তার ফেলা প্রতিটি পায়ের তালই যেন সমান। হাঁটতে হাঁটতেই দুহাত উঁচিয়ে নিজের খোলা চুলগুলো আলগা খোঁপা করে নিলো। নিমিষেই তার সামনের ছোট চুলগুলো ব্যতীত বাকি সকল চুল তার খোঁপার মাঝে আটকা পড়লো।

তার প্রতিটি পদক্ষেপে তার শরীরে যেন আগুনের উ*ত্তাপ ঝরছিল। তার চলাফেরায় ছিল এক অদৃশ্য শক্তির প্রকাশ। সে যেন এক অগ্নিপাখি, যাদের পথ কখনো থামানো যায় না। তাদের আগুন কখনো নিভে না। তার হাসি, তার চলন, তার চোখ—সব কিছুতেই অ*গ্নি তেজে ধ্বং*সাত্মক আবহ স্পষ্ট।

মেয়েটি আলখাল্লায় আবৃত সেই সুন্দর তরুনীর কাছে গিয়ে মুচকি হেসে বললো,

“কি খবর, কিছু হয়েছে!”

মেয়েটির কথার বিপরীতে অন্যজন তার মলিন চেহেরার ঠোঁটে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো,

“নাহ, কিছু না। তোমার রাইডিং করা শেষ!”

মেয়েটি হেসে পাশে ফিরে তাকিয়ে দেখলো একবার। আশেপাশে তারা দুজন বাদে আরো কিছু গার্ড হয়েছে। আর একজন তার ঘোড়াটাকে নিদিষ্ট স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটিও মুচকি হেসে বললো,

“হ্যাঁ,শেষ। আজ এতোটুকুই থাক। তুমি করবে নাকি? তোমাকে কত বলি, মাঝেমধ্যে তো আমার সঙ্গী হতেই পারো।”

—“তা হওয়া যায়। কিন্তু… সত্যি বলতে এসব আমার তেমন ভালো লাগে না। তুমি অনেক সুন্দর করে সব ম্যানেজ করতে পারো। আর তোমার ঘোড়া ব্লেজ-ও অনেক সাহসী আর অনেক ভালো। কিন্তু আমার এতো বড় বড় ঘোড়া গুলোর কাছে যেতেই ভয় লাগে।এসব আমার জন্য নয়।”

তরুনীর ভীতু চেহেরায় ভীতু কথা শুনে যুবতী মেয়ে পুনোরায় মুচকি হাসলো।

“হুম, ব্লেজ সত্যিই অনেক সাহসী আর ভালো। তবে তোমার সাদা রাঙ্গা লিও-ও কম কিছু নয়। ওকে কিন্তু আমার বেশ ভালো লাগে।”

মেয়েটি খানিকটা উপহাস করে বললো,

“ও তো আমার মতোই দুর্বল। আমরা দুজন চুপচাপ গল্প আলাপের জন্যই ঠিক আছি। এছাড়া আমাদের দিয়ে কিছু হবেও না।

আর তোমরা দুজন তো হলে আ*গুন। সাহসী অগ্নি মেয়ে অ্যানার, সাহসী ব্লেজ। ব্লেজ অর্থ তো অগ্নি শিখা, তাই না!”

অ্যানা মুচকি হাসলো। আ*গুনের বি*ক্ষিপ্ত শি*খার ন্যায় জ্বলজ্বলে শান্ত চেহারার প্রাপ্তবয়স্ক নারীটির সম্পূর্ণ নাম অ্যানা তাইসিয়া। অন্যদিকে বিস্তৃত গোলাপ বাগানে নির্জনে বেড়ে ওটা সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফুলের ন্যায় গড়ে ওটা তরুণী হলো আলেসিয়া ম্যারিন রোজ। রোজ হলো এক বিস্তৃত গোলাপ বাগানের গাঢ় লাল রাঙ্গা আকর্ষণয়ী ফুল যা একান্তই আলাদা, একান্তই একাকী। চারপাশে হাজারো গোলাপ ফুটে থাকলেও তার অস্তিত্বে এমন এক আকর্ষণ বহমান রয়েছে, যা যে কারো দৃষ্টি আটকে রাখে। তার লাল চুল যেন সেই গাঢ় লাল ফুলের গভীর পাপড়ির মতো, সূর্যের আলোয় ঝলমল করলেও তার গভীরে কোথাও এক নিরব বিষণ্ণতার ছায়া লুকিয়ে থাকে।

রোজের উপস্থিতি হলো সেই ঠিক সেই ফুল, যা তার নিজস্ব সৌন্দর্য ও গোপন বেদনা দিয়ে বাগানের সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। বাগানের অন্য ফুলেরা হয়তো বাতাসে নিজেদের মৃদু গন্ধ বিলায়, কিন্তু রোজ যেন নিজের একাকিত্ব দিয়েই বাগানকে পূর্ণতা দেয়। অথচ সেও এক জ্বলন্ত শিখা, যা নীরবে আলো জ্বালায় এবং অন্ধকারকে ছায়া দেয়।

তার লাল রঙ, তার একাকিত্ব, এবং তার নীরব উপস্থিতি যেন সমগ্র মহাবিশ্বের প্রকৃতিকে জানান দেয়; সে কোনো সাধারণ ফুল নয়। সে হলো সেই বিশেষ গোলাপ, যার প্রতিটি পাপড়ি এক অসমাপ্ত গল্পের প্রতিচ্ছবি। চারপাশে হাজারো ফুল থাকলেও রোজের অস্তিত্ব আলাদা, যেন তার একাকিত্বই তাকে অনন্য করে তুলেছে। রোজ যেন প্রকৃতির এক নিঃশব্দ আর্তনাদ, যার সৌন্দর্য কেবল দৃষ্টিতে নয়, তার গভীরতাকে ছুঁতে পারলে যে কারো হৃদয়ে গভীর দাগ কাটার এক অদৃশ্য-অমূল্য ক্ষমতার অধিকারী।

রোজ পুনোরায় সোজাসাপটা ভাবে জিজ্ঞেস করলো অ্যানাকে৷

“তবে তুমি কি এখন যাবে না! আরো কোনো দরকার…”

অ্যানা খানিকটা ইতস্ততভাবে বললো,

“আ…রোজ… ”
অ্যানা কথা সমাপ্ত করার আগেই রোজ বললো,

“আজও?”

অ্যানা ইতস্ততভাবে ঠোঁট চেপে কিঞ্চিৎ হেসে বললো,

“হুম!”

রোজ খানিকটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

“ঠিক আছে, আমি যাচ্ছি তবে।”

অ্যানা ঘাড় কাত করে বললো,

“চিন্তা করো না, আমি কাজ শেষ করেই চলে আসছি।”

রোজও চুপচাপ সেখান থেকে উল্টো ঘুরে হাঁটা শুরু করলো প্রাসাদ সরূপ বিশাল বাড়িটির দিকে।মনের মাঝে বরাবরের মতো আজও বিষন্নতা ঘিরে ধরেছে তাকে। আজও হয়তো সূর্যের আলোয় এই রাশিয়া সম্পূর্ণ রুপে উজ্জীবিত হওয়ার আগেই আরো কয়েকটা প্রাণ চলে যাবে।

এসব নতুন নয়। তার জন্মই হয়তো এসব দেখার জন্য হয়েছিলো। মাঝেমধ্যে আফসোস হয়। সে কেনো আর সবার মতো নয়। তার আশেপাশের সবার কাছে মানুষ মা/রা, কা/টা ছিঁ/ড়া করা এসব কত সহজ বিষয়। অথচ বাগানের একটা প্রজাপতি কোনো কারণে মা/রা গেলে তার কত কষ্ট হয়। কষ্টে বুক ভার হয়ে আসে। কি অদ্ভুত! তার কি আদৌও এই পা*পের সম্রাজ্যে জন্মানোর কথা ছিলো! শেষে যাকে অল্প বয়সে ভালো বাসলো, সে তো আরো এক ম*হাপা*পী। হাহ…তবুও সবকিছু জানার পরও নির্ল*জ্জের মতো সেই পা*পীকে এখনো ভুলতে পারছে না। তার পুরো জীবনটা এতোটাই তুচ্ছ্য কেনো তা রোজের জানা নেই। আগে জীবন নিয়ে আফসোস হতো আর এখন তাচ্ছিল্যের উপহাস করেই বাঁচে সে।

রোজের চলে যাওয়া পুরোটাই অ্যানা নিজ চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো। ও পা*পের সাম্রাজ্যে সাজানো রাজকীয় প্যালেসে প্রবেশ করতেই অ্যানা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। এরই মাঝে তার কাছে একজন ব্যক্তি এগিয়ে এলো। এই প্রাসাদেরই ব্যাক্তিগত প্রয়োজনীয় ব্যক্তি সে। লোকটি তার কাছে আসতেই অ্যানার ঠোঁটে রুক্ষ বাঁকা হাসি ফুটে ওঠলো। ও জানে এখন তাকে কি করতে হবে।

অ্যানা লোকটির সাথে সাথে উদ্যান পেরিয়ে পেছনের দিকে এক বিশেষ জায়গায় যেতে লাগলো। অ্যানা আগে আগে দৃঢ় পায়ে হেঁটে চলেছে ওদিকে রাশিয়ান বলিষ্ঠ দেহের পুরুষটি তার পেছন পেছন হেঁটে চলেছে।

অ্যানার ভাবগাম্ভীর্যটাই ভিন্ন রকম। সবসময় তার ছোট-বড় সকল পদক্ষেপ এক অগ্নি তেজ দৃশ্যমান থাকে। যথারীতি এখনও তার হাঁটাচলা, অঙ্গভঙ্গিতে রাজকীয় ব্যক্তিত্বের সাথে তে*জস্ক্রিয় মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে।

তারা দুজন মিলে ফাঁকা উদ্যানের নির্জন জায়গায় গিয়ে প্রবেশ করলো। অ্যানা দেখলো সামনে এই জায়গায় একই সাথে তাদের দায়িত্বরত কালো পোশাক পড়া দশ থেকে বারো জন লোক দৃঢ়তার সঙ্গে সমান তালে আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে রইছে। প্রত্যেকের হাতে যথেষ্ট অ/স্ত্র রয়েছে।

আর তাদের মাঝে হাঁটু গেঁড়ে তিনজন লোক বসে রইছে। তাদের হাত গুলো পেছনে এক করে রাখা। মাথা খানিকটা ঝুঁকানো, চোখেমুখে জীবন বাঁচানোর জন্য আ*তংক। অ্যানা মনের গভীর থেকেই হাসলো। মানুষের বেঁচে থাকার কত শখ। কি আছে জীবনে!কিচ্ছু না! তবুও সবাই বাঁচতে চায়, জীবন ত্যাগে সবারই ভয়। আজব দুনিয়ার আজব সব ব্যাপার স্যাপার।

অ্যানা এসব না ভেবে তাদের দিকে এগিয়ে গেলো। লোকগুলোকে এখানে গভীর রাতে ধরে নিয়ে আসা হয়েছে। অবশ্য তাদের উপর এখন পর্যন্ত কোনো ট/র্চার করা হয়নি। অ্যানার এসব ভালো লাগে না। এতোটুকু দয়ামায়া সে তার শিকারদের উপর করে। তার মতে, বেচেরা গুলো একটু পর তার হাতেই শেষ হবে। তবে মৃ*ত্যুর আগে আগলা কষ্ট দেওয়ার কি প্রয়োজন। এসব অতিরিক্ত আর বিরক্তিকর লাগে তার কাছে।

এজন্য যথারীতি অ্যানার নিয়ম অনুযায়ী লোকগুলো আনার পর ভালো রকমের সেবাযত্ন করা হয়েছে। কিন্তু তবুও লোকগুলোর মধ্যে কেউ নিশ্চিন্ত হতে পারেনি। কারণ তারা জানে, হিং*স্র বাঘিনীর চেয়ে ঠান্ডা মাথার নীরব হায়না বেশি ভয়ং*কর। আর তাদের এখানে আনারও অবশ্য যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তারা কিনা এই রুশ মাফিয়াদের বিপক্ষে যেতে চেয়েছিলো? এরপরও তাদের বাঁচার সম্ভবনা নেই বললেই চলে। এই আশা করাটাই যেন দুঃস্বপ্ন।

অ্যানা লোকগুলোর কাছে কিছুটা এগিয়ে যেতেই লোকগুলো তার কাছে ছুটে এসে পা জড়িয়ে ধরতে চাইলো। অ্যানা দ্রুত পিছিয়ে গেলো। অন্যদিকে কিছু কালো পোশাকে আবৃত লোক এসে ওদের শক্ত করে ধরে ফেললো। দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক আর একজন মধ্যেবয়স্ক পুরুষ। অ্যানার এসব বিষয় ভালো লাগে না। একদিন সবাইকে ম*রতে হবে, তবে আজ এতো বাঁচার জন্য ছটফট করার কি রয়েছে। ও ভেতরে ভেতরে কিছুটা বিরক্ত হলেও চোখেমুখে তীক্ষ্ণ হাসি ফুটিয়ে তুললো।

অ্যানা নির্বিকার ভঙ্গিমায় নিজের হাত থেকে কালো গ্লাভস দুটো খুলতে শুরু করলো। এটা দেখে পাশ থেকে একজন ব্যক্তি এসে তার দুহাত শূন্যে তুলে ধরলো। অ্যানা পাশে ফিরে সেই ব্যক্তিটির দিকে তাকালো না। বরং মাটিতে পড়ে থাকা তিনজনের দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হাসতে হাসতেই নিজের গ্লাভস দুটো তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটির দিকে খানিকটা উপর থেকেই হাতের মাঝে ফেললো। তার বর্তমান ভাবভঙ্গি প্রচন্ড উদাসীন। যেন এসব তার রোজকার ব্যাপার।তবুও এসব করতে যেন তার ভালোই লাগে। অভ্যাস হয়ে গিয়েছে যে।

অ্যানার গ্লাভস হাতে নিয়ে সেই বডিগার্ড সরে যেতেই অন্য আরেকজন এসে অ্যানার হাতের কাছে একটা পিস্তল এনে দিলো। অ্যানা সেটা সুন্দর করে হাতে তুলে এদিক ওদিক করে উল্টেপাল্টে দেখতে লাগলো। অতঃপর নির্বিকারে সে তিনজের দিকে এগিয়ে গেলো।

সেই তিনজন বডিগার্ড গুলোর বন্ধন থেকে ছুটতে চাইছে। কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারনে রুশ ভাষাতেই অনবরত অ্যানার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে চলেছে। কিন্তু সেসবে অ্যানার কিচ্ছু আসে যায় না। উল্টো বিরক্ত লাগে তার এসব। এমন তো নয় যে সে এদের বাঁচার সুযোগ দেয় না। সে তো সবাইকে প্রথমে সতর্কতা বার্তা পাঠায়। এরপরও যারা অ্যানার সতর্কতাকে মান্য করে না, অ্যানা তো তাদেরকেই ধরে এনে শেষ করে দেয়। এখন যে যত বড়ই তার শ/ত্রু হোক, ফাস্ট অর লাস্ট অপরচুনিটি তো সে বরাবরই সবাইকে দিয়ে আসছে। তবুও মানুষ তার কথা মান্য না করে মৃ*ত্যুর রাস্তা খুঁজে নেয়। এখন এটা কি তার দোষ? মোটােও না!

অ্যানা সুন্দর মতো পিস্তলটাকে লোড করার প্রস্তুতি শুরু করলো। ম্যাগাজিনে গুলি পূর্ণ রয়েছে তা অ্যানার জানা৷ এখন আপাতত বাম হাতে পিস্তলটাকে ধরে ডান হাতে পিস্তলের স্টাইডটাকে টানলো।

এরপর সেই তিনজনের কাছে গিয়ে রুশ ভাষাতে স্বাভাবিক কন্ঠেই বলতে লাগলো,

“প্লিজ এভাবে কান্নাকাটি করবেন না! আমার প্রচন্ড বিরক্ত লাগে এসব।আর এতো হাউমাউ করার কি রয়েছে। আমি কি আপনাদের মে”রে ফেলেছি নাকি! তবে, প্লিজ এসব চিৎ*কার, চেঁচা*মেচি, হাত-পা ধরে কান্নাকাটি… করে আমার সুন্দর ফুরফুরে মেজাজটা অন্তত বিগড়ে দিবেন না। নয়তো আপনাদের পরিণতি আরো বেশি খারাপ হবে।”

অ্যানার নির্বিকারভাবে বলা হাস্যরস মাখানো কথাগুলোর শেষটা খানিক গাম্ভীর্যের সাথে সমাপ্ত হলো। আর এদিকে সে তিনজনও নিমিষেই চুপ করে গেলো। এই অ্যানার সম্পর্কে খানিকটা হলেও ধারনা রয়েছে তাদের। মূলত গোপনে তারা যতটুকু জানতে পেরেছে।

এ.টি. তথা অ্যানা তাইসিয়া শুধু রুশ মাফিয়া লুসিয়ার টিমের একজন বিশেষ সদস্যই নয় বরং সাথে একজন ইন্টারন্যাশনাল রকস্টার। তুলনামূলক ভাবে গানের সাথে যুক্ত সে গত ছয় বছর ধরে। তবে তার পরিচিতি সকলের মাঝে ছড়িয়ে মাত্র দুই- আড়াই বছর হলো। খুব অল্প সময়ের মাঝেই ভালো পরিচিতি আর সফলতা কুড়িয়েছে। তার দর্শকদের কাছে সে এক খুব পছন্দের ব্যক্তি। কিন্তু তার এই সুন্দর পরিচিতর পেছনেও যে এক মাফিয়া সদস্য হওয়ার মতোও ভয়ং*কর পরিচয় রয়েছে তা সবার কাছেই অজানা।

অ্যানার রকস্টার ইন্ডাস্ট্রিতে একটা বৈশিষ্ট্য কিংবা স্টাইল রয়েছে। তার ফ্যান ফলোয়ারের হিসেব নেই অথচ অ্যানার পুরোপুরি মুখ আজ পর্যন্ত কেউ দেখতে পারেনি। এই পাপের সাম্রাজ্য ব্যতীত সে সকল জায়গাতেই সবসময় কালো মাস্ক- ক্যাপ আর কনসার্টের জন্য বিশেষ ধরনের কালো অথবা কালচে লাল রংএর মাস্কারেড মাস্ক লাগিয়ে রাখে। যেটি শুধু তার চোখ কিংবা মুখের উপরে অংশই না বরং ঠোঁট ব্যতীত মুখের উপরিভাগের দুই তৃতীয়াংশই ঢেকে যায়।

এছাড়া সে যেখানেই যায় সব জায়গায়তেই কঠোর সিকিউরিটি তার সঙ্গে সঙ্গে ঘেঁষে থাকে। এসব সিকিউরিটি তার ব্যক্তিগত; তার ইন্ডাস্ট্রি থেকে কাউকেই সে নিজের সিকিউরিটির জন্য রাখে না।
এছাড়া সে নিত্যন্তই এক রহস্যময়ী। একজন ইন্টারন্যাশনাল রকস্টার হওয়ার পরও না বাহিরের কেউ তার কেউ মুখ দর্শন করতে পেরেছে আর না কেউ জানতে পেরেছে তার সঠিক পরিচয়। জায়গা ভেদে সে যতগুলো দেশেই গান গেয়েছে সেখানেই মানুষ তার গলায় বিভিন্ন ভাষার গান শুনেছে। আগে অনেকেই তাকে রাশিয়ান ভাবতো কিন্তু পরবর্তীতে সময়ের সাথে সাথে তাদের ধারণায় ভাঙ্গন ধরে। অনেকেরই দৃঢ় বিশ্বাস সে রাশিয়ান নয় কিন্তু তার সঠিক পরিচয় কি তাও সবার অজানা।

আর এই বিষয়টি নিয়ে গোপনে ঘাটাঘাটি করতে বসেছিলো দেশের বড় মাপের এক জার্নালিস্ট। সে যথারীতি এই বিষয়টি এক রিপোর্টও প্রকাশ করতে চেয়েছিলো। তার ধারনা এই রকস্টার এটিই রুশ মাফিয়াদের কোনো বড়মাপের সদস্য। এই নিয়েই খুঁটিনাটি কিছু প্রমাণও জোগাড় করে ফেলেছিলো।

যেটা কিনা অ্যানাও জেনে গিয়েছিলো। যে কারণে প্রথম বারেই সে এই নিয়ে সেই মধ্যবয়স্ক জার্নালিস্টকে লোকজন পাঠিয়ে এ*লার্ট করে। কিন্তু এতে জার্নালিস্ট ক্ষণিকের জন্য থমকে গেলেও সে পুরোপুরি থামে না। কারণ এই লোকটি কাজ করছিলো অ্যানাদের শত্রু পক্ষ ইতালিয়ান মাফিয়া হয়ে। আর আজ সেই কারণেই তার পরিণতি হয়েছে অ্যানার পায়ের কাছে। আর তার সাথে ইতালিয়ান মাফিয়াদের গুপ্তচর রুপে দুই চ্যালা।

অ্যানা সর্বপ্রথম মাঝে বসে থাকা ব্যাক্তিটির মাথার উপর নিজের পিস্তলটা খেলার ছলে ঘুরাতে লাগলো। অতঃপর তার পাশের জনের মাথার উপর। তাদের তিনজনের হাতই পেছন থেকে অ্যানার লোকজন হাঁটু গেঁড়ে বসে শক্ত করে ধরে রইছে। অ্যানা এবার চারপাশটা তাকিয়ে দেখলো। আরেকটু সময় অতিক্রম হলেই সূর্যের কঢ়া রোদ সেন্ট পিটার্সবার্গের মাটিতে ঢেলে পড়বে। অ্যানাকে অবশ্য এর আগেই নিজের কাজ শেষ করতে হবে। বেশি বেলা করে কাজ করাটা তার ভালো লাগে না।

অ্যানা পুনোরায় ইতালিয়ান মাফিয়াদের গুপ্তচরদের দিকে তাকিয়ে রুক্ষ হেসে তাচ্ছিল্যের সাথে বললো,

“ইটালিয়ানদের চ্যালা তোরা,তাই না!”

ওদের দুজনের কথা শুনে সেই দুজন দৃঢ় চোখে ওদের দিকে তাকালো। অ্যানার মনে হলো হঠাৎ এদের মধ্যে যেন তেজের জোয়ার এসে বইছে। অ্যানা কিঞ্চিৎ হাসলো,

“আরে আরেহ, এতো চিন্তা করিস না! আমরা তোদের মতো চুনোপুঁটি কিংবা ছ্যাচড়া নই।তোদের টর্চার করে, তোদের সিক্রেট ইনফরমেশন নিয়ে কিচ্ছু জানতে চাইবো না আমি। এটা অ্যানার স্টাইলে ঠিক যায় না।
বাংলার খেটে খাওয়া মাইয়া আমি। কিছু প্রয়োজন হলে নিজেই ব্যবস্থা করে নেই।”

অ্যানা শুরুতে ইতালিয়ান ভাষায় কথা বললেও, শেষে গিয়ে আচমকা খাঁটি বাংলার কন্ঠস্বরে নিজের কথার সমাপ্তি করলো। অথচ হঠাৎ তার মুখে এই ভাষার অর্থটা আশেপাশের কেউই বুঝতে পারলো না। অ্যানার মতো আশেপাশের সবাই রুশ, ইংরেজি, ইতালিয়ান সহ আরো কয়েক ধরনের ভাষা জানে কিন্তু তাদের কাছে বাংলাটা ঠিক বোধগম্য হলো না।

অ্যানা আশেপাশে সবার হাভভাব দেখে হাসলো। নিমিষেই আবার চোখমুখ গাম্ভীর্যের সাথে ঢেকে গেলো। অ্যানা আচমকা একজনের কপালে নিজের পিস্তল ঠেকিয়ে ট্রিগারে হাত রাখলো।গম্ভীর্য আর তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,

“ইতালিয়ান ক্যামেরো! আন্ডারওয়ার্ল্ডে ভালোই নাম ডাক তোদের। আশা রাখছি খুব শীঘ্রই তোদের এই নাম-ডাক, বিশাল সাম্রাজ্য ধুলোয় মিশিয়ে দেবো।”

এই বলতে না বলতেই অ্যানা ট্রিগারে চাপলো। মূহুর্তেই পিস্তল থেকে গুলি বেড়িয়ে কপালের ছেদ করে মাথার ভেতরে প্রবেশ করলো। অ্যানার হাতের আঙ্গুলের ডগায় কিঞ্চিৎ র/ক্তের ছিটে এসে লাগলো। আনায়া তাতে পাত্তা দিলো না।এসব তার কাছে স্বাভাবিক।কখনো জার্নালিস্ট, কখনো কিংবা বিজনেস ম্যান, আর কখনো এদের মতো চ্যালাপ্যালা। এমন বহু মানুষের জান নিজ হাতে নিয়ে, অ্যানার দিনের শুরু কিংবা শেষ হয়।

কিন্তু আচমকা তার এই পদক্ষেপে বাকি দুজন মূহুর্তেই কেঁপে উঠলো। এদিকে মাঝের ব্যক্তিটি আলগোছে উল্টো হয়ে মাটিতে পড়ে গিয়েছে। তাদের পেছনে থাকা লোকগুলো এতোক্ষণে সরে গিয়েছে। তবে এবার দুজনের মাঝে সেই মধ্যবয়স্ক জার্নালিস্ট যেন একটু বেশিই ভয় পাচ্ছে।

অ্যানা এবারও আর একটুও সময় নষ্ট না করে পাশের জনের মাথাটাতেও নির্বিকারে শ্যুট করলো। সেও আলগোছে নেতিয়ে মাটিতে পড়লো। এবার পালা মধ্যবয়স্ক জার্নালিস্টের৷ অ্যানা মুচকি হেসে সেই লোকটির সামনা-সামনি দাঁড়ালো। এদিকে লোকটি সুযোগ পেতেই আনায়া পা দুটো জড়িয়ে ধরেছে। তাকে ছাড়াতে বাকিরা ছুটে আসতে চাইলে অ্যানা ইশারায় মানা করলো। সে চুপচাপ নিজের গ্রীবাটা উঁচু করে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসছে। এদিকে সেই জার্নালিস্ট কেঁদেকেটে একাকার।

“মা তোমার পায়ে পড়ি।তুমি আমার মেয়ের মতো। প্লিজ আমায় মেরো না। আমি তো হয়তো তোমার বাবার মতোই, প্লিজ আমায় মে’রো না।”

অ্যানা মুখটা নিচু করে রুক্ষ হেসে বলতে লাগলো,

“আপনি যদি আমার পা দুটো ছাড়তেন। তবে আমি হয়তো বেশি খুশি হবো। আপনি আমার পিতা সমতুল্য বলে কথা!”

অ্যানার নরম কন্ঠস্বরে চারপাশের সবাই খানিকটা অবাক হলো না। অ্যানা তো এখানে আনার পর কাউকে ছেড়ে দেয় না। তবে আজ কি ভিন্ন কিছু হবে। এদিকে সে লোকটিও কিছুটা খুশি মনে অ্যানার পা দুটো ছেড়ে দিয়ে মুখ তুলে তাকালো।

দৃঢ়ভাবে পিস্তল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাপ্ত বয়স্ক নারীর সামনে, হাঁটুগেঁড়ে বসে বাঁচার আকুতি জানিয়ে তাকিয়ে মুখ উঁচিয়ে রইছে মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি। হয়তো মনে মনে আশা বুনতে শুধু করেছে এবারের মতো জান হাতে নিয়ে ফেরার।

—“তুমি সত্যিই আমায় মারবে না!…মা আমি যা করেছি ভুল করেছি। এটা আমার প্রফেশন ছিলো বিধায়… প্রমিজ করছি আর কখনো এসব করবো না আমি। আমি প্রফেশন ছেড়ে দেবো। তুমি সত্যিই মহান, আমার মতো অধমকে নিজের বাবার জায়গায় বসিয়ে আজ প্রাণ ভিক্ষা দিলে আমার।”

—“ওয়ান সেকেন্ড! আমি কখন বললাম যে আমি আপনাকে মা”রবো না। এটা তো অসম্ভব। অ্যানা এখানে আজ পর্যন্ত যাদের যাদের নিজের শিকার বানিয়ে এনেছে, তাদের সে কখনোই ছাড়েনি। ছেড়ে দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না।”

এবার লোকটির চোখমুখ শুঁকিয়ে গেলো। অন্যদিকে অ্যানার কাজকর্ম দেখে চারপাশের বডিগার্ড গুলো মনে মনে তাচ্ছিল্যের সাথে হাসছে।

“মানে?”

অ্যানা লোকটির কথায় মুচকি হেসে বললো,

“তোর মতো মানুষ গুলো হয় মেইন কালপ্রিট। এই যে বললি এসব কাজ তুই নিজের প্রফেশনের ভিত্তিতে করিস… এগুলো সব ভুয়া কথা।

নাহ..!আমি প্রত্যেকটা প্রফেশনকেই সম্মান করি। আর যারা নিজেদের প্রফেশনের প্রতি সর্বদা সৎ থাকে তাদের তো আরো বেশি পছন্দ আমার। কিন্তু তুই তো তোর কাজে সৎ ছিলি না! যদি তুই এতো ভালো মানুষের বাচ্চাই হইতি তবে নিশ্চয় এখন ক্যামোরোদের হয়ে কাজ করতিস না। থাকোস এই দেশে আর কাম করো ওই হা/লার বেডাদের লগে।”

“তুমি ভুল বুঝছো। আমি সত্যি বলছি, ওরা আমায় জোর করেই নিজেদের কাজে…”

—“তুই কি ভেবেছিস, আমি ঘাস খাই। কিচ্ছু জানি না আমি! তা আঙ্কেল, এই কাজ করার বিনিময়ে যে হিউজ এমাউন্ট আপনার ব্যাংকে ট্রান্সফার হয়েছে তা কি এসব চুনোপুঁটি জার্নালিস্টের কাজকর্ম করেই? ইশ কি করলাম জীবন…গান গেয়ে আর মানুষ না মে*রে, আপনার মতো জার্নালিস্ট তো আমারও হওয়া উচিত ছিলো। জীবনটাই বৃথা গেলো।”

অ্যানার এহেন হাস্যরসের কথাবার্তায় লোকটির ঘাবড়ে গেলো। খুব করে মনে হচ্ছে সে জীবনের একদম শেষ মূহুর্ত উপভোগ করতে বসেছে। সে শেষ বারের মতো মুখ খুলে অ্যানাকে কিছু বলতে লাগলো,

“মা… আমি তোমার বাবার মতো। এই ভেবে অন্তত আমার প্রাণ ভিক্ষা… ”

লোকটি নিজের কথা শেষ করতে পারলো না বরং এর আগেই অ্যানা তার মুখের ভেতর পিস্তল ঢুকিয়ে দিলো। লোকটির চোখদুটোও ছানাবড়া হয়ে উঠলো। অথচ অ্যানা নির্বিকারে বললো,

” জীবনের শেষ সময়েও ভুল মানুষের সাথে নিজের তুলনা করে চরম ভুল করলি। আমার বাপটা খুব একটা ভালো মানুষ ছিলো না রে। তোর কপাল ভালো,আমি অ্যানা বলেই আজ তোর পরিণতি আমার বাপের মতো হলো না।”

কথা শেষ করা মাত্রই অ্যানা ট্রিগারে গুনে গুনে একধারে তিনবার চাপলো। নিমিষেই এক ঝটকায় র*ক্তের ছিটেগুলো এসে অ্যানার কব্জি অব্দি জায়গায় পর্যন্ত লেগে গেলো। এদিকে সেই জার্নালিস্টও মাটিতে গড়িয়ে পড়েছে। অ্যানার কাজ শেষ হতে না হতেই ও আশেপাশের লোকগুলোকে ইশারা করলো।

যাতে কয়েকজন লোক এসে লা*শগুলো টেনে হিঁচড়ে সরিয়ে নেওয়ার কাজে লেগে পড়লো। এদিকে অ্যানা পিস্তলটাকে তার বিশেষ এক বডিগার্ডের হাতে দিয়ে খানিকটা কাছেই থাকা বাগানের পানির ছোট ফোয়ারার দিকে এগিয়ে গেলো। হাতে লেগে থাকা র*ক্ত গুলো ধুতে ধুতেই তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি বললো,

“রাত আটটায় ফ্লাইট। সব ব্যবস্থা হয়ে গিয়েছে।”

অ্যানা পাশে ফিরে সেই বলিষ্ঠ দেহের পুরুষটিকে দেখে মুচকি হেসে, পুরনোয় মাথা ঘুরিয়ে নিজের কাজের দিকে মনোযোগ দিলো। আর মনে মনে অস্ফুটভাবে বললো,

“হাহ…অবশেষে বহু বছর পর।”

~চলবে…

#একজোড়া_আগুন_পাখি
®অরনীতা তুশ্মি [#তুশকন্যা ]

পর্ব→৩৫ (২য় অংশ)
[✨প্রাপ্তমনস্ক ও মুক্তমনাদের জন্য✨]

পাভেল কেনীথ দুজনেরই মাথায় অনেকটা করে আঘাত লেগেছে। দুজনের এক্সি*ডেন্ট হওয়ার পর অতিরিক্ত মানুষজন আর মিডিয়ার আগেই পাভেলের ম্যানেজমেন্টে লোকেরা আগেভাগে এই খবর পেয়ে গিয়েছে। যে কারণে অন্তত মিডিয়া চলে আসার আগেই ওরা কেনীথ আর পাভেলকে সরিয়ে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছে।

একরাত-একদিন পুরোটা হসপিটালে কাটিয়ে দেওয়ার পর কেনীথ হসপিটাল থেকে চলে আসার সিন্ধান্ত নিলো। দুজনের মাথাতেই ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। আ*ঘাতটা খুব বেশি গভীর না হওয়ায় দুজনেই এবারও বেঁচে গিয়েছে।

তবে তাদের দুজনেরই জানা এইকাজ কে করছে।

এসব নতুন নয়। গত কয়েকবছরে বহুবার কেনীথকে মে*রে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। কখনো ট্রাক কিংবা বাস এসে ওদের গাড়িতে এট্যাক করেছে নয়তো হুটহাট নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো সে বরাবরই কোনো না কোনো ভাবে বেঁচে গিয়েছে। এটা কেনীথের ভাগ্য কিংবা পাভেলের সতর্কতা কিংবা সঠিক দায়িত্ববোধের ফলাফলও বলা চলে।

এবারও যেমন ড্রাইভিং করার সময় খানিকটা সতর্ক হয়েছিলো বিধায় বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন। এর একটা না একটা তো সমাধান বের করাই উচিত।

কেনীথ নিজের জোরের বলেই পাভেলকে নিয়ে হসপিটাল ছেড়ে বেরিয়ে এলো। এতো তাড়াহুড়ো করারও অবশ্য কারণ হয়েছে। আজ রাতে শহরের বড় এক রিসোর্টে পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। যেখানে স্পেশাল গেস্ট হিসেবে কেনীথও রয়েছে। কেনীথের যদিও তেমন আগ্রহ নেই এই সব নিয়ে তবে তার আগ্রহ ভিন্ন জায়গায়।

পাভেল আর কেনীথ হসপিটাল থেকে তার শহরের এপার্টমেন্টে চলে এলো বিকেলের দিকে। শরীরের খানিকটা ক্লান্তি অনুভব হচ্ছে তবে এসবে তাদের কিছু আসে যায় না। কাজ করা শুরু করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

কেনীথ গত কয়েকবছর ধরে তার নিজস্ব রহস্যময় বাড়িটা ছেড়ে এখানেই থাকতে শুরু করেছে। এখন ওই বাড়িতে খুব প্রয়োজন ছাড়া যাওয়া হয় না। এখন অবশ্য ওর পাগলামি গুলোও কমে গিয়েছে। মানুষ নিয়ে তার আজব খেলা গুলোও থেমে গিয়েছে। কেনেল আর ক্লারাও এখন তার সাথেই শহরের এপার্টমেন্টে থাকে। ওদের খাদ্যাভ্যাস থেকে এখন মানুষের মাং”স নামক উপকরণটা বাদ পড়েছে। কেনীথ আর ওদের দিনকাল এখন ভালোই চলে। মাঝখান থেকে পাভেলের উপর একগাদা কাজের চাপ পড়ে গিয়েছে। ওরও অবশ্য ভালোই লাগে এসব করতে। তবে সমস্যা হলো কিছুদিন পর পর কে”নীথের উপর হামলার বিষয়।

ড্রইং রুমে কেনীথ চুপচাপ সোফায় হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইছে। তার দুপাশে ফ্লোরের উপর বসে রইছে কেনেল-ক্লারা। ওরাও কেনীথের মতো চুপচাপ রইছে। এদিকে পাভেল কেনীথের সামনের সোফায় বসে রইছে কেনীথের মুখ থেকে কিছু শোনার উদ্দেশ্যে। না জানি এবার তাকে কি করতে হয়। মাথার সাদা ব্যান্ডেজ খুলতে আরো কয়েকদিন লাগবে। অথচ কেনীথ এতো তাড়াহুড়ো করে। পাভেলও কিছু বলতে পারে না।

এরই মাঝে কেনীথ চোখ খুলে টানটান করে বসলো। পরনে কালো রংএর টাউজার আর হুডি।কেনীথ এবার খানিকটা ঝুঁকে নিজের দুই হাঁটুতে নিজের কুনুই দুটো ঠেকিয়ে হাত দুটো শূন্যে ঝুলিয়ে দিলো। অতঃপর পাভেলের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাতেই পাভেল ঢোক গিললো। আমতাআমতা করে বললো,

“হেই ব্রো!এভাবে তাকাও কেনো। আমার কি দোষ। আমি তো কিছুই করিনি৷”

কেনীথ বিরক্তি নিয়ে বললো,

“শুরুতে কাহিনিটা তো তুই-ই করেছিস। যাই হোক, এখন আর সলিউশনও বের করতে পারছিস না।”

পাভেল খানিকটা ইতস্ততভাবে বললো,

“আমি কি করবো। ঐ ইনা যে এতো পাগলামি করবে তা তো আমিও কল্পনা করতে পারছি না। ও পুরো সাই”কো হয়ে গিয়েছে। ওকে থামানো দরকার।”

—“থামানো তো তখন যাবে যখন ওকে ধরতে পারবো। কিন্তু সেটাই তো…”

এই বলেই কেনীথ পুনোরায় পাভেলের দিকে কড়া নজরে তাকাতেই পাভেল ঢোক গিলে বললো,

“এবার কি করতে হবে?”

কেনীথ নির্বিকার হয়ে পুনোরায় সোফায় গা ছেড়ে দিয়ে বললো,

“আজ রাতের পার্টিটা তো রেড লাইট রিট্রিট রিসোর্টেই হচ্ছে, তাই না?”

—“হুম তো”

—“ব্যবস্থা করে রাখিস!”

পাভেল খানিকটা অবাক হয়ে বললো,

—“মানে?”

কেনীথ একগাল মুচকি হেসে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অতঃপর নিজের বেড রুমের দিকে যেতে যেতে বললো,

—“এবার স্বয়ং ইনাকে লাগবে আমার। আ’ম সেইং ইট এগেইন, আই ওয়ান্ট ইনা।”

কেনীথ এইটুকু জোর গলায় বলে পাভেলের দিকে একচোখ মে’রে গটগট করে নিজের রুমের দিকে এগোতে লাগলো। এদিকে পাভেল থতমত খেয়ে বিস্ময়ের সাথে বলতে থাকলো,

“বস এটা কি করে হয়। ইনা… ওকে আমি কোথায় পাবো…আর তার সাথে তুমি কিভাবে৷ হাউ ইজ দিস পসিবল?

—“এভরিথিং ইজ পসিবল ইফ দিস কেনীথ ওয়ান্টস।”

কেনীথ জোর গলায় পেছনে না ফিরেই কথাটা বলেই নিজের রুমে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিলো। এদিকে পাভেল কি করবে না করবে তা বুঝতে না পেরে তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

___________

হলুদ রঙের কয়েকটা বাল্বের আলোয় বিশাল হলরুমেটা খানিকটা আলোকিত। তবে খুব বেশি আলো চারপাশে নেই। এটি এমন একটা জায়গা যেখানে ভেতর হতে দিন রাত সব সমান। খুব বেশি পার্থক্য দেখা যায় না এখানে। সর্বক্ষণই এখানে অন্ধকারের আবহ বিরাজ করে।

তবে এমন একটা জায়গার সর্বস্বজুরে বেবি কট সাজিয়ে রাখা। বেবি কট কিংবা ছোট নবজাতক বাচ্চাদের থাকার ছোট ছোট এই বিছানা গুলোর সবটাতেই নবজাতকে পূর্ণ। কম করে হলেও চল্লিশের উপর নবজাতক এই হলরুমে রাখা হয়েছে। এছাড়াও এসবরে দেখাশোনার জন্য রাখা হয়েছে বারো থেকে পনেরো জনের মতো নার্স। প্রত্যেকের পরনেই নার্সের মতো সাদা পোশাক। এছাড়া রুমের কোণায় কোণায় কয়েকজন গার্ডও রয়েছে।

কিছু বাচ্চা জেগে রইছে আর কিছু বাচ্চা ঘুমিয়ে। নার্সগুলো খুব যত্ন সহকারে সকল বাচ্চাদের খেয়াল রাখতে ব্যস্থ। দিনরাত এভাবেই তারা কাজ করে চলেছে। তারা জানে এই বাচ্চাগুলো তারা আর কয়েকঘন্টা পর নিজেদের কাছে পাবে না।এর আগেই এদের মধ্যে থেকে চল্লিশটা বাচ্চা চলে তাদের আসল গন্তব্যে। বাধ্য হয়ে হোক কিংবা নিজ ইচ্ছেয়, গত কয়েকবছর ধরে এভাবেই তারা এইসব পা*পের জগতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এছাড়া তারা এটাও জানে যে,তাদের মধ্যে কখনো যদি মনুষ্যত্ব বিকাশের দরূন এই জগৎ ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হয় তবে হয়তো তারা সেই সুযোগও পাবে না। এখানে এসেছিলো তো তারা নিজ থেকেই কিন্তু যেতে পারবে শুধু মাত্র ইনা কিংবা প্রধান কর্তৃপক্ষের নিজ সিন্ধান্তেই।

নার্স গুলো বেশির ভাগ সময়ই অত্যন্ত আ*তংক আর সতর্কতার সঙ্গে নিজেদের কাজ করে। না জানি কখন কোন ভুল হয়ে যায়। আর তারা যাদের হয়ে কাজ করছে তাদের সাথে বেঈমানী কথা তো তারা কল্পনাতেও ভাবতে পারে না। নয়তো তাদেরও পরিণতও হবে লিজার মতো।

লিজার মতো এভাবে জীবন দিয়েছে এমন ঘটনা অনেক ঘটেছে এখানে। নিজেদের সাথে কাজ করা বহু সঙ্গীকেই তারা হারিয়েছে। শুধুমাত্র এই জগৎ থেকে বের হতে চাওয়া কিংবা এখানকার ইনফরমেশন বাহিরে লিকের চেষ্টা করার অপ’রাধে। এই বিষয়ে কড়া নি’ষেধ রয়েছে তাদের উপর। আর যাই হোক, এখানে কাজ করে বেঈ”মানী করার কোনো সু্যোগ নেই। এমন কিছু চিন্তা করা মানেই যেনো নিশ্চিত ভয়ং*কর মৃ*ত্যু।

সকলের ব্যস্তার মধ্যেই আচমকা সরু হিলের খটখট আওয়াজে প্রত্যেকের কলিজা কেঁপে উঠলো। ক্রমশই এই আওয়াজ দৃঢ় হতে লাগলো। তারা ভালো করেই বুঝে গিয়েছে কে আসছে।

এরই মাঝে ইনা বুকে দুই গুঁজে গম্ভীর মুখে ক্যাটওয়াক করতে করতে সেখানে প্রবেশ করলো। তাকে দেখা মাত্রই সকালেই মাথা ঝুলিয়ে কুর্নিশ করলো। এদিকে নির্বিকার ইনার ভাবভঙ্গিমা। অতচ তার এই নির্বিকার ভাবসাবই সবার কলিজার পানি শুঁকিয়ে দেয়। যদিও সকলে খেয়াল করলো আজ ইনার ঠোঁটের কোণায় এক অদ্ভুত হাসি। ওকে কি কিছুটা খুশি মনে হচ্ছে! খুব অল্প সময়েই তারা ইনার মুখে এই হাসির ঝলক দেখতে পেয়েছে।

ঠিক কি কারণে ইনার এই পরিবর্তন ঘটে তা তাদের জানা নেই কিন্তু এই হাসিতে তাদের মোটেও খুশি হওয়া চলবে না। কারণ যখনই তারা ইনার মুখে এই হাসির ঝলক দেখেছে ঠিক তার কিছু মূহুর্ত পরেই ইনা পাগলের মতো ভয়ং”কর তা”ন্ডব চালিয়েছে। যথারীতি প্রত্যেকেই এই ভেবে কিছুটা আতং”কিত। না জানি, আজ কি করে বসে।

এরই মাঝে ইনা সাজিয়ে রাখা সারি সারি বেবি কটগুলোর দিকে এগিয়ে গেলো। আজ হঠাৎ বাচ্চাদের কাছে ইনাকে আসতে দেখে প্রত্যেকেই খানিকটা আশ্চর্য সঙ্গে আতং”কিত। একবার মনে হচ্ছে,ইনা হয়তো একটু বেশিই খুশি। সেক্ষেত্রে এসবকে স্বাভাবিক ভাবা যেতে পারে। কিন্তু ততক্ষণেই মনে হচ্ছে এই আনন্দই না আবার ধ্বং”সে পরিণত হয়।

এদিকে ইনা এসে একটা ফুটফুটে বাচ্চার বেবিকটের কাছে এসে দাঁড়ালো। বাচ্চাটা অসম্ভব সুন্দর। মেয়ে বাচ্চা হয়তো। ইনা সেই প্রথম থেকেই খেয়াল করছিলো বাচ্চাটার হাসি পুরো হলরুমকে মুখরিত করছে। যদিও নবজাতকের হাসি ততটাও আওয়াজ সম্পূর্ণ নয় সঙ্গে আরো অনেক বাচ্চা আশেপাশে জেগে থেকে শুয়ে শুয়ে খেলা করছে, শব্দ করছে। কিন্তু এই বাচ্চাটিকে তার একটু বেশিই আনন্দিত মনে হলো। ইনা মনে মনে ভাবলো, এই বাচ্চাটাও হয়তো আজ তার মতো একটু বেশিই খুশি। বিষয়টি তার কাছে ভালো লাগলো।

ইনা বুকে হাত গুঁজে থাকা অবস্থাতেই চোখে মুখে তীক্ষ্ণ হাসি ফুটিয়ে বেবি কটের ভেতরের দিকে ঝুকে বাচ্চাটাকে এক নজনে দেখলো। এসব বাচ্চার বয়স খুব একটা বেশি নয়। এখানে যেসব বাচ্চা আনা হয় তারা প্রত্যেকেই নবজাতক। এবং এদের এখানে আনার মূল উদ্দেশ্য কিংবা এদের যে মূল গন্তব্যে পাঠানো হয় সেটাও ঠিক নিওনাটাল পিরিয়ডের কিংবা শিশুর জন্মের পর থেকে চার সপ্তাহের মধ্যেই। কারণ এই সময়টাতেই মূলত একজন শিশুকে নবজাতক হিসেবে ধরা হয় এবং এই পুরো সংস্থার কাজটাই হয় মূলত এসকল বাচ্চাদের নিয়ে।

এদিকে ইনাকে দেখে বাচ্চাটা আরো বেশি হাসতে লাগলো। ওর মুখ থেকে যেন হাসিই সরছে না। ইনা ওকে দেখে বিস্তৃত ভাবে মুচকি হাসলো। আজকে সত্যিই সে কিছুটা খুশি। ইনা আচমকা নিজের হাতের বাঁধন খুলে বাচ্চাটাকে নিজের কোলে তুলে নিলো। আর এটা দেখা মাত্রই তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নার্সের গলা শুকিয়ে গিয়েছে। শুধু সে নয় বরং বাকি নার্সগুলোও নিজেদের কাজের পাশাপাশি ইনার কাজকর্ম হাবভাব লক্ষ করছে।ইনা কখন কি করে বসে তা কারোরই আন্দাজে নেই।

এদিকে ইনা দিব্বি বাচ্চাটা নিজের কোলে তুলে আলতো হাতে বাচ্চাটার গাল বুলিয়ে দিচ্ছে। দুজনের মাঝে সে কি আন্তরিকতা। যদিও ইনা একদম চুপচাপ, মুখ হতে একটা কথাও বলছে না। কিন্তু বাচ্চাটার এই অনবদ্য হাসি তার কলু’ষিত সত্তাকে ক্ষণি’কের জন্য ভুলিয়ে দিয়েছে।

ঠিক এরই মাঝে প্রবেশ করলো কালো রংএর বড় কোর্ট পড়া লোকটি।লোকটির আসল নাম অলিভার মেসন। সে মূলত কোনো বাংলাদেশী নয় বরং একজন বিদেশি। যদিও সে বাংলাটা খুব স্পষ্ট আর ভালো ভাবেই জানে কিংবা বলতে পারে। এই পুরো গ্রুপটা মূলত হান্স কোম্পানির হয়ে কাজ করে। আর জার্মানিতেই মূলত এই এস.পি.হান্স নামক কোম্পানির মূল ভিত্তি অবস্থিত। যার ছোট বড় বিভিন্ন শাখাগুলো পুরো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইছে।

নতুন কিংবা সম্প্রতি কালে এই হান্স কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়নি।এটি বহু বছর ধরে জার্মানিতে নিজেদের রাজত্ব চালাচ্ছে। যেটি মূলত বিভিন্ন মেডিসিনের এবং প্রসাধনীর উপর কাজ করে আসছে। তবে লোকচক্ষুর সামনে এই কোম্পানি যতটা স্বাভাবিক ঠিক তার চেয়েও বহু গুনে ভয়ং*কর এর কোম্পানির আড়ালের কাজকর্ম।

সাধারণ মানুষ ব্যতীত তাদের বড় একটি সেক্টর উচ্চ বিলাসী গোষ্ঠীর জন্য অত্যন্ত এক্সপেন্সিভ মেডিসিন ও কসমেটিকস উপর প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। আর হান্স কোম্পানির পুরো পৃথিবীতে প্রভাবশালী হওয়ার পেছনের ঘটনাটাও ঠিক এটাই। তারা বছরের পর বছর এভাবেই লোকচক্ষুর আড়ালে নানান অনৈতিক কাজ করে আজ বিশ্বে প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে।

আর অলিভার মেসনও বহু বছর ধরেই এই হান্সের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা হিসেবেই কাজ করছে। অলিভারকে দেখা মাত্রই ইনা ব্যতীত বাকি সকলেই মাথা ঝুকিয়ে কুর্নিশ করলো। অলিভারের আজ এসব খেয়াল করার পরিস্থিতি নেই। সে ভাবছে ইনাকে নিয়ে। আজও কাজের কাজ কিছু হয়নি। না জানি এটা শোনার পর আজ ও কি করে বসে।

অলিভার চেহেরার রং উড়ে গিয়ে ফেকাসে হয়ে গিয়েছে। ইনা মেয়েটা সাইকো, ও অনেক বড় একটা সাইকো। মারা’ত্মক ধ্বং’সলীলার তা’ন্ডব চালানোর মতো এক সাইকো সে।

তবুও অলিভার ইনার কাছে গিয়ে ওকে ডাকলো৷

–“ইনা! ”

ইনা বাচ্চাটার খেয়ালে মত্ত ছিলো। আশেপাশের কিছু খেয়াল রাখার মতো খেই হারিয়ে ফেলেছিলো। অলিভার ওকে ডাকা মাত্রই ত্বরিত নিজরে ধ্যান থেকে বেড়িয়ে এসে সচেতন হলো। তবে অলিভারের দিকে তাকালো না, বরং বাচ্চাটার সাথে মুচকি হেসে আঙ্গুল দিয়ে খেলা করতেই বললো,

—“হুম!”

ইনার এহেন হাভভাবে অলিভার আরেকটু ঘাবড়ে গেলো। আজ ইনাকে তো বেশিই হাসিখুশি মনে হচ্ছে। বুঝতে পারছে না এতে তার কিছুটা নিশ্চিন্ত হওয়া উচিত নাকি আরো বেশি দু’শ্চিন্তা করা উচিত। এই ইনার কোনোকিছুই তো তার ঠিকঠাক বোধগম্য নয়।

এদিকে অলিভারের এহেন ঘাবড়ানো অবস্থা দেখে পাশের নার্সটি চিন্তায় পড়ে গেলো। তার চিন্তা মূলত ইনার কোলে থাকা বাচ্চাটিকে নিয়ে। শেষমশ না আবার এই বাচ্চাটিকেই ইনার পাগলামির বলি হতে হয়৷ যতই হোক, এখানে মানুষরূপী বহু জানো”য়ার রইলেও ইনার মতো ভয়ং*কর জা”নোয়ার সে ব্যতীত আর কেউ নেই। আর তারা তো হলো এদের হাতের পুতুল। কিন্তু বাচ্চাদের সাথে যত্ন-আত্তি মিশিয়ে এতো সময় ধরে পার করার পর বাচ্চাদের উপর নার্সদের এখন ভিন্ন রকম মায়া জমে গিয়েছে। যত যাই হোক, তারা কখনোই ইনাদের মতো পাষাণ মনে চোখের সামনের কোনো বাচ্চার ক্ষ”তি হতে দেখতে পারবে না।

কিন্তু সমস্যা হলো ইনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা নার্স তথা রিভা মেয়েটা কি করে ইনার কাছ থেকে বাচ্চাটিকে সরিয়ে নিবে। এটা ভাবতেই তো তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। তবুও অনেক সাহস করে ইনার উদ্দেশ্যে বললো,

“ম্যাম…ওকে না হয় আমার কাছে…”

রিভা নিজের কথাও শেষ করতে পারেনি। বরং এর আগেই ইনা বাচ্চাটার থেকে মুখ সরিয়ে রিভার দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো,

“দেখছো না,আমারা খেলা করছি!”

ইনার শান্ত তীক্ষ্ণ কন্ঠস্বরে রিভা কিঞ্চিৎ কেঁপে উঠলো৷ আর কিছু বলার সাহস নেই তার। বাঁধ্য হয়েই দু পা পিছিয়ে গেলো রিভা।

এদিকে ইনা এবার অলিভার দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে বললো,

“যা বলার তাড়াতাড়ি বলেন।”

এই বলেই ইনা পুনোরায় বাচ্চাটার দিকে মুখ ফিরিয়ে ওর সাথে খেলতে লাগলো। এবার একহাতে বাচ্চাটিকে নিজের সাথে আগলে রেখেছে আর বাচ্চাটির গ্রীবায় অন্য হাতের দু আঙ্গুল দিয়ে বুলিয়ে দিচ্ছে।

অলিভার কিছু বলছে না দেখে এবার ইনার চোখমুখ শক্ত হলো। নিরেট কন্ঠে নিজেই বললো,

“আবারও বেঁচে গিয়েছে তাই তো?”

অলিভার খানিকটা ইতস্ততভাবে বললো,

“সবকিছুই ঠিক ছিলো তবুও… ম’রেনি।”

ইনা কিছুক্ষণ চুপচাপ রইলো। কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না। ওর এই নিস্তব্ধতা সবাইকে ভয় পাওয়াচ্ছে।এর আগেও যতবার ইনা এই ব্যর্থ হওয়ার খবর শুনেছে ততবার ইনা প্রচন্ড পাগলামি করে তা’ন্ডব চালিয়েছে। সেসব সময় বহু কষ্টে সবাই ওকে সামলে নিয়েছে। এমনি কখনো কখনো ওকে থামাতে সেন্সলেস করার ইনজেকশন পু’শ করতে হয়েছে। কিন্তু এবার ওর এমন প্রতিক্রিয়া কারো বোধগম্য হচ্ছে না। বিশেষ করে অলিভার নিজেই এই বিষয়ে আতং”কিত।

অলিভার আরো কিছু বলবে এর আগেই ইনা বাচ্চাটিকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো। হঠাৎ বাচ্চা টিকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছে তা কেউই বুঝে উঠতে পারলো না। অলিভার তড়িঘড়ি করে পেছন থেকে বললো,

“ইনা কোথায় যাচ্ছো?”

ইনা কোনো জবার দিলো না। বরং সে যেতে যেতে হলরুমের দরজার কাছে চলে গেলো। ঠিক সেই সময়ে অলিভার আবারও ইনার উদ্দেশ্য জোর গলায় বললো,

“ইনা বাচ্চাটাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছো? পাগলামি করো না বলছি। ওকে রেখে যাও।”

এবার ইনা চলে যেতে নিয়েও আর গেলো না। বরং পেছনে ঘুরে অলিভার সহ বাকি সকলকে দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। আর ভাবভঙ্গি একদম স্বাভাবিক। না রা’গ, না ক্ষো’ভ; হাভভাব দেখে আগাম কিছুই বোঝার স্কোপ নেই। এমনই এক অদ্ভুত সাইকো সে।
ইনা অলিভার দিকে শান্ত নজরে তাকালেও তা অলিভারের কাছে তীক্ষ্ণ চাহনি মনে হচ্ছে। অলিভার নিজেও খানিকটা অস্থির হয়ে গিয়েছে। কি করবে না করবে কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না। এদিকে ইনা খানিকসময় বাদে মাথা নিচু করে বাচ্চাটার দিকে তাকালো। ফুটফুটে চেহারা বাচ্চাটার মুখে এখনো হাসি লেগে রইছে। ওর হাসি দেখে ইনার ঠোঁটের কোণাতেও কিঞ্চিৎ হাসি ফুটে উঠলো।

কিন্তু মূহুর্তেই তার চিন্তাভাবনা পরিবর্তন হলো। বাচ্চাটা এখনো হাসছে কিন্তু এই হাসি তার পছন্দ হচ্ছে না। বর্তমানে ইনা মোটেও খুশি নয় তবে বাচ্চাটা কেনো খুশি! সে কি ইনাকে দেখে উপহাস করছে? কিন্তু কেনো? এবারও সে ব্যর্থ, তাই! নিমিষেই ইনার ভাবভঙ্গি পরিবর্তন হয়ে কঠিন হলো। ঠোঁটের কোণায় থাকা কিঞ্চিৎ হাসিটাও মুছে গেলো। ইনা বাচ্চাটার গালে একহাতে চেপে ধরলো। প্রথমে খানিকটা আলতো হাতে ধরলেও মূহুর্তেই সে জোর প্রয়োগ করতেই বাচ্চাটা ব্যাথায় গোঙানির মতো শব্দ করে উঠলো।

এহেন পরিস্থিতি দেখে অলিভার, রিভা সহ বাকি কিছু নার্সও দৌড়ে ওর দিকে ছুটে আসতে নিলো। অলিভার জোরে জোরে বললো,

“ইনা না! ওকে কিছু করো না। তুমি ভুল… ”

তারা ইনার কাছে পৌঁছানোর আগেই ইনা একহাতে বাচ্চার গালটা ধরে উপরের দিকে শূন্যে তুললো। নিমিষেই বাচ্চার গায়ে পেঁচানো সাদা কাপড়টা নিচে খুলে পড়লো। ছোট বাচ্চা হওয়ায় সেভাবে কাঁদতে না পারলেও তার গোঙ্গানির মতো শব্দগুলো নিত্যন্তই করুণ। অথচ ইনার চোখে যেন গভীর শূন্যতা, আর হৃদয়ে একটি অস্পষ্ট উত্তেজনা।

অলিভার ওর কাছে গিয়ে বাচ্চাটাকে নেওয়ার আগেই ইনা বাচ্চাটিকে শূন্য থেকে সোজা ফ্লোরের মধ্যে আছড়ে ফেললো। নিমিষেই বাচ্চাটির নরম দেহটা ফ্লোরে পড়তেই ক্ষত-বিক্ষত হয়ে গেলো।

নিচে পড়ে শিশুটি কেমন করুণ এক আর্তনাদে চিৎকার করে উঠল। সেই চিৎকার যেন বাতাসে মিশে গিয়ে সবার মাঝে স্তব্ধতা তৈরি করল।শিশুটির মৃদু কান্না সকলের কাল বেজে উঠল। কিন্তু সেই কান্না যেন ইনাকে দমাতে পারল না। মেয়েটির ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠেছে।

সবাইকে আরো একবার বিস্মিত করতে সে আরো এক পদক্ষেপ নিলো। হাঁটু গেঁড়ে নিচে বসে বিধ্বস্ত দেহের বাচ্চাটির গলা চেপে ধরে বলতে লাগলো,

“তুইও ম’রবি না, তাই না! কেনো ম’রবি না? ম’রতে হবে, সবাইকে ম’রতে হবে।”

ইনার কথা বলার মাঝেই অলিভার যখন ওর হাত ছাড়িয়ে সরিয়ে নিতে চাইলো ঠিক তখনই যেন ইনা আরো বেশি ক্ষি*প্ত হলো। এক ঝটকায় অলিভারের হাতটা ছুঁড়ে সরিয়ে দিলো। আর মূহুর্তেই বাচ্চার পা দুটো দু’হাতে ধরে কাপড় কাঁচার মতো শূন্যে তুলে নিচে আছড়ে ফেললো। নিমিষেই বাচ্চার নরম মাথা আর পেট ফেটে গিয়ে নাড়ীভুঁ’ড়ি, মস্তিষ্ক বের হয়ে গেলো। রক্তের সাথে বাচ্চার পুরো শরীরটা মাখামাখি হয়ে গিয়েছে। এবড়োখেবড়ো শরীরের নাড়ী”ভুঁ’ড়ি আর মস্তি’ষ্কের অংশগুলো অত্যন্ত বি’শ্রী দেখাচ্ছে।

হলরুমের বাকি সব নার্স গার্ডের রুদ্ধশ্বাস অবস্থা। কয়েকজনের চোখে বেয়ে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। আবার এতো হৈ-হুল্লোড়ের আওয়াজে অনেক গুলো বাচ্চা জেগে গিয়ে কান্নাকাটি করছে। বাঁধ্য হয়েই নার্সদের এমন পরিস্থিতিতেও বাকি বাচ্চাদের সামলাতে হচ্ছে।

এদিকে অলিভার ইনার কাছ থেকে উঠে এলো। ওর চোখেমুখে নিস্তব্ধতা। জোরে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তার আর কিছু বলার নেই। এমনটাই হওয়ার ছিলো হয়তো।

এদিকে ইনা সেই বীভৎস বাচ্চার দেহের এক পা ধরে উঠে দাঁড়ালো। অতঃপর বাচ্চাটির শুধু একটি পা ধরে শূন্যে ঝুলিয়ে নিয়েই সে হল রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। ইনার চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে র’ক্তের ধারা ফ্লোরে এক বীভৎস আলপনা একে দিচ্ছে। র’ক্তে মাখানো বাচ্চাটার কিছুটা মস্তি’ষ্ক আর না’ড়ীভুঁ’ড়ি ফ্লোরে এখনো পড়ে রইছে আর বাকিটা উল্টো হয়ে শূন্যে ঝুলতে থাকা দেহের সাথে।সঙ্গে ইনার নির্বিকারে হেঁটে চলে যাওয়ার দৃশ্য যেন এক নর’কীয় লো’মহর্ষক চিত্র।

এদিকে ইনা চলে যেতেই অলিভার পাশে রিভা সহ বাকিদের ইশারা করে বললো যেন ফ্লোরটা পরিস্কার করে দেওয়া হয়। অলিভারের নজর থেকে সবার চোখের কান্না গুলো এড়িয়ে গেলো না কিন্তু সে তাদের মতোই নিরুপায়। সঙ্গে এক সুস্থ মস্তিষ্কের পা’গল কিংবা জা’নো’য়া’রও।

যেমন মেয়ে মানুষের দেহে’র বিশেষ অংশের মাং’স খাওয়াটা তার নেশা। যদিও সে এই নেশাকে দমিয়ে রাখতে পারে।কিন্তু সময় সুযোগ হলেই তার এই নেশার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।তখন সে চাইলেও এই সুযোগ ছাড়তে পারে না। যেমনটা সে লিজার ক্ষেতেও সেই সুযোগ হয়েছিলো তার। এছাড়া আরো একটি নেশা হলো মস্তিষ্ক খাওয়া। মানুষের মস্তিষ্ক খেলে যে কুরু কিংবা প্রিয়ন রোগ হয় এটা তার ভালো করেই জানা। কিন্তু তবুও সে এই নেশা ছাড়তে পারে না। খুব নিয়ম করে অল্প একটু মগজ খেয়ে নিলেও তৎক্ষণাৎ সে মনে করে একগাদা এন্টি প্রিয়ন ড্রাগস্ নিয়ে খেয়ে নেয়।

এছাড়া এই পাপের রাজ্যে কাজ করতে করতে এসবে সে অভস্ত্য। এই যে কিছুদিন পর পর এতোগুলো করে বাচ্চা নিদিষ্ট গন্তব্যে পাঠাতে হয়, সে এসবের সাথেও আগে থেকেই অভস্ত্য। সে ভালো করেই জানে এসব বাচ্চার সাথে কি করা হয়। কিন্তু সে তো জা”নো’য়ার। এতোকিছু জেনেও তো দিনের পর দিন সে এসব কাজের লিপ্ত থেকেছে। আর ভবিষ্যতেও থাকতে হবে। এমনকি ভবিষ্যতে হয়তো এরচেয়েও আরো খা’রাপ কাজ করতে হবে। নিজ হাতেই করতে হবে। তবে সেটাই তো হবে তার পদোন্নতি।

অলিভার জানে ইনা এখন কোথায় গিয়েছে। তার মতো সুস্থ মস্তি’ষ্কের নরখাদক ব্যতীত এখানে আরো একজন রয়েছে। যে সত্যি সত্যিই সম্পূর্ণ বিকৃ’ত মস্তিষ্কের একজন নর’খাদক।

__________

ইনা বাচ্চাটির দেহটাকে নিয়ে একটা কালো কুচকুচে অন্ধকার ছোট ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। আশেপাশের সবকিছু কালো কুচকুচে অন্ধকার। শুধুমাত্র ঘরের সামনে একটা নীল রঙের আলোয় পথটা ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে।

ইনা বাচ্চাটির পা টাকে শক্ত করে ধরলো। অন্যহাত দিয়ে বদ্ধ দরজার লকটা খুলতেই বন্ধ রুম থেকে অদ্ভুত ভেপসা গন্ধে ইনা চোখমুখ খানিকটা বিরক্তিতে কুঁচকে গেলো। অন্যকেউ হলে হয়তো এতোক্ষণে তার গন্ধে গা গুলিয়ে যেতো। অথচ ইনা নির্বিকারে রুমে মধ্যে প্রবেশ করে রুমের নীল রঙের বাল্বটা জ্বালালো। হালকা একটু নীল রঙের আলোতেই ঘরের কোণায় বসে থাকা এক বীভৎস চেহেরার মানুষ তার নজরে এলো।
খুব বেশি বয়স হবে না সেই ছেলেটির। অল্পবয়সী যুবক বলা চলে। মাথা,গালে পাগলের মতো বড় বড় চুল দাঁড়িতে পরিপূর্ণ। পরনে শুধু একটা কালো রংএর ছিঁড়া ফাটা প্যান্ট। বাকি রোগা-সোগা দেহের হাড় হাড্ডি গুলো যেন দেহ থেকে বেড়িয়ে আসছে। শরীরে এক ছটাক মাংস ব্যতীত বাকি সবই যেন হাড় হাড্ডি। কতদিনের অভুক্ত সে তা আন্দাজ করা যাচ্ছে না।

শরীরের বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট ঘা। সেখান থেকে পঁচা পু’চ-এর মতোও কিছু সদৃশ্য। এছাড়া আঁচ’ড়-আঘা’তের কিছু চিহ্ন রয়েছে। ছেলেটি চুপচাপ ঘরেরে কোণায় ঝিমাচ্ছিলো। কিন্তু আচমকা ঘরের আলো জ্বলতেই সে পাগলের মতো ছটফট শুরু করতে লাগলো। অন্ধকারে থেকে সে অভস্ত্য।সপ্তাহে যখনই সে এইখানে আলোর দেখা পায় তখনই সে পাগলের মতো উম্মা*দ হয়ে যায়। এমনিতেও সে একজন পাগল। এক উ’ম্মাদ নর’খাদক সে।

বীভৎস চেহেরার ছেলেটি এই ঘরের কাউকে দেখা মাত্রই ওর দিকে হাম”লা করার জন্য ছুটে আসতে চাইলো। কিন্তু যখনই ইনার দিকে তাকালো তখনই কিছুটা চুপসে গেলো সে। গুটিয়ে নিলো নিজেকে। ইনাকে হামলা করার মতো সাহ’স তার মতো নরখাদ’কেরও নেই। কোনো এক অদ্ভুত কারণে সে ইনার কাছে দূর্বল। ইনা তাকে যাই বলে সে ঠিক তাই করে। সে ইনাকে যতটা ভয় করে তার চেয়েও বেশি সে ইনাকে পছন্দ করে।

ছেলেটি খেয়াল করে দেখলো ইনার হাতে মানুষের দেহ খ’ন্ড ঝুলছে। নিমিষেই তার চোখে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। এতোকিছুর মাঝে সে এটা খেয়াল করতেই তো ভুলে গিয়েছে। সে দৌড়ে ইনার কাছে আসতে চাইলে ইনার কিছুটা সামনে এসে তাকে থেমে যেতে হলো।

পায়ে তার মোটা শিকল বাঁধা। চাইলেও সে আর ইনার একদম কাছে যেতে পারবে না। ছেলেটি ইনার দিকে বাচ্চাদের মতো করুণ চোখে তাকালো। যত যাই হোক, একগাদা চুল দাঁড়ির মধ্যে দৃশ্যমান একজোড়া চোখ নিত্যন্তই মায়াবী। সেই চোখজোড়া ইনার দিকে প্রগাঢ় আকুতি নিয়ে তাকিয়ে রইছে।

ইনা কিঞ্চিৎ মুচকি হাসলো। মুচকি হেসে নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে ছেলেটির উষ্কখুষ্ক চুলে পূর্ণ মাথায় কয়েকবার আলতো হাতে হাত বুলিয়ে দিলো।ছেলেটিও কেমন যেন নিজেকে গুটিয়ে নিলো ইনার সান্নিধ্যে।

কিছুক্ষণ সময় পর ইনা ছেলেটির মাথা থেকে হাত সরিয়ে অন্য হাতে থাকা বাচ্চাটার দেহ ছেলেটির সামনে উঁচিয়ে ধরে মুচকি হাসলো। ছেলেটিও একগাল হেসে ইনার হাত থেকে বী”ভৎস দেহটা একপ্রকার পাগলের মতো ছিনিয়ে নিয়ে পুনোরায় ঘরের কোণায় গিয়ে বসে পড়লো।

এখন আর সে ইনাকেও চিনবে না। সবার আগে পেটের ক্ষিদে।ওটা মিটে গেলে বাকিসব। তরতাজা ছোট্ট মানব দেহের কচি নরম মাং”স। নিমিষেই ছেলেটি বাচ্চাটার কচি হাতটা কামড়ে দেহ থেকে ছিঁ’ড়ে ফেললো। অতঃপর পাগলের মতো একে একে দেহের বাকিসব অংশ গুলো কাম”ড়ে ছিঁ’ড়ে নিয়ে খাওয়ার সুবিধার্থে ছোট ছোট অংশ করলো। হিং*স্র মানবের দাঁতের প্রতিটি কামড়ে র*ক্তে মাখানো কচি মাংসে নিমিষেই ডেবে গিয়ে হালকা টানেই ছি’ন্নবি’চ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। বাচ্চাটির বুকের চামড়া-মাংস মুরগীর মতো টেনে হিঁ’চড়ে ছোট্ট কলি’জাটা হাতিয়ে বের করলো সে। তরতাজা কাঁ’চা ক’লিজাটা কয়েক কা”মড়েই ছিন্ন-বি”চ্ছিন্ন করে চিবিয়ে খেয়ে নিলো। বাচ্চাটির হাতের ছোট্ট ছোট্ট নখ গুলো কবুতরের হাড় মাং”সের মতো কড়মড় করে কা’মড়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে লাগলো। হাতের বড় বড় নখ গুলো দিয়ে বা’চ্চার দেহের না”ড়ীভুঁ’ড়ি গুলো এতোক্ষণ ছি’ন্নভিন্ন করে মাং’স থেকে সরিয়ে নিয়েছে।

এসব সবকিছুই নির্বিকারে দূর থেকে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলো ইনা। যথারীতি বাচ্চাটার র’ক্ত লেগে থাকা হাত দুটো দিয়ে নিজের মুখে একবার ঘষে নিয়ে নিজের মুখটাও তাজা র’ক্তের আবরণে সাজিয়ে তুললো। অতঃপর নিজের বুকে দু-হাত গুঁজে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। মূহুর্তেই তার শান্ত চোখজোড়ায় তী”ব্র আ”গুন জ্ব”লে উঠলো। রুক্ষ স্বরে বলতে লাগলো,

“আমি বলেছিলাম ভিকে! আমি তোমায় কখনোই ছাড়বো না।তুমি যে আ’গুন জ্বা’লিয়েছিলে, সে আগু’নেই পু’ড়ে ছাই হয়ে যাবে তোমার নাম-পরিচয়। আমি শুধু সেই মুহূর্তেরই অপেক্ষায় রয়েছি।

তোমার ম”রতে হবে ভিকে। তোমায় ম”রতে হবে। তোমার জন্য সব হারিয়েছি আমি। সব হারিয়েছে আমার প্রিয়জন। এই সব কিছুর হিসেব দিতে হবে তোমায়। এই ইনায়ার হাতেই তোমায় ম”রতে হবে।

তোমার সৃষ্টিতে তুমি নিজেই ধ্বং’সের বীজ বুনেছ। এবার সেই বি’ষফল আমি ছুঁয়ে দেখবো; দেখবো তোমার করুণ সমাপ্তি।

সময়ের গতিপথ যেমন কখনো থেমে থাকে না, ঠিক তেমনি আমিও থামব না।জীবন আবারও তোমায় আরেকটি সুযোগ দিয়েছে হয়তো, কিন্তু আমি দিচ্ছি না। যেভাবেই হোক, তোমার গল্পের শেষ অধ্যায় আমি নিজ হাতে লিখব।”

চলবে…..

#একজোড়া_আগুন_পাখি
®অরনীতা_তুশ্মি(#তুশকন্যা)

পর্ব→৩৫(৩য় অংশ)

ব্যস্থ শহরকে ছাড়িয়ে এক নির্জন প্রান্তে অবস্থানরত বিলাসবহুল রিসোর্টে এক জমজমাট পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। চারপাশে গাছপালা আর সবুজে ঘেরা রিসোর্টটি রাতের আঁধারে এক মায়াবী রূপ ধারণ করেছে।

রিসোর্টের প্রধান লনে আলো ঝলমলে বাতি আর নানান রঙের ফেইরি লাইটে সাজানো। বাতাসে হালকা সুরেলা সঙ্গীতের ভেসে আসা সুর গুলো যেন রাতের অতিথিদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। এক কোণায় ড্রিংকস কাউন্টার, সেখানে ওয়েটাররা নিপুণভাবে নানা রকম ককটেল তৈরি করছে। আরেক পাশে বুফে সাজানো, যেখানে স্থানীয় আর বিদেশি সবধরনের খাবারের আয়োজন।

মধ্যখানে একটি ছোট ড্যান্সফ্লোর। ডিজে মঞ্চে জনপ্রিয় গান বাজাচ্ছে, আর মানুষজন তালে তালে নাচছে। কেউ কেউ হাসি-ঠাট্টায় ব্যস্ত, আবার কেউ গাছের নিচে আরামদায়ক চেয়ার নিয়ে গভীর আলাপ করছে।

এসব ছাড়িয়ে একপাশে গাছের সাথে হেলান দিয়ে খানিকটা কাত হয়ে দাঁড়িয়ে রইছে কেনীথ। বুকে দু-হাত গুঁজে রাখা। চুলগুলো একদম সুন্দর ভাবে জেল দিয়ে সেট করা। কিন্তু পরনে তার সেই একরকমের কালো হুডি আর কালো প্যান্ট। হুডির টুপিটা পিঠের উপর উল্টো হয়ে ঝুলছে।

কেনীথের চোখেমুখে খানিকটা চিন্তার ছাপ। নজর তার আশেপাশে সবকিছুর দিকে হলেও সে ভিন্ন কিছু ভাবতে বসেছে। এখানে আসার পর মেয়ে ব্যতীত মোটামুটি সব ধরনের অতিথিদের সাথে তার সৌজন্যেমূলক কথাবার্তা হয়েছে। কেনীথের এই বিষয়টা সবার জানা। কেনীথ এমনিতে কোনো মেয়ের সাথে তেমন কথা বলবে না।এছাড়া ছেলেদের সাথেও সে তেমন প্রয়োজন ছাড়া কিছু বলে না।

এই যেমন, হালকা একটু দেখা সাক্ষাৎ করে সবার থেকে দূরে গিয়ে একাই দাঁড়িয়ে রইছে। লোকেও আর তাকে বেশি বিরক্ত করে না। না জানে রেগে গিয়ে কখন কি করে।

কেনীথ নিজের বুকে গুঁজে রাখা দুহাত থেকে ডান হাতটা তুলে নিয়ে নিজের কপালে বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে কয়েকবার ঘষলো। চিন্তার ছাপ যেন চেহেরা থেকে সরছেই না। কেনীথ চারপাশে একবার নজর বুলিয়ে নিলো। আপাতত পাভেলকে খুঁজছে। কেনীথ খেয়াল করে দেখলো, পাভেল বুফের কাছে প্লেটে খাবার সাজিয়ে নিয়ে খাওয়া দাওয়াতে প্রচুর ব্যস্থ হয়ে পড়েছে৷

পাভেলের পরনে আজ আর কোনো হুডি নেই। কেনীথের অনুমতি নিয়ে ইচ্ছে মতো সেজেগুজে একদম ক্যাজুয়াল ফরমাল লুকে পার্টিতে এসেছে। পরনে টাইট ফিটিং গ্রে কালারে শার্ট, কালো রংএর প্যান্ট আর জুতো। কোঁকড়ানো চুলগুলো পরিপাটি করে গোছানো।সবমিলিয়ে পাভেলকে একদম স্টাইলিশ আর ক্লাসি লাগছে। অথচ কেনীথের কাছে ওকে পুরো বলদের মতো লাগছে। মনে মনে ভাবছে, ও কি খাবার দাবার চোখে দেখেনি? যেখানেই যায় সেখানেই এমন হাঁদারামের মতো হয়ে থাকার কোনো মানে হয়? একটা কাজও ঠিকমতো হয় না।উল্টো সব জায়গায় কোনো না কোনো ঝামেলা বাঁধিয়ে রাখে। আর এখানে এসে বিন্দাসে খেতে বসেছে।

কেনীথ প্যান্টের পকেট থেকে নিজের ফোনটা বের করলো। অতঃপর পাভেলকে দূর থেকে দেখতে দেখতেই একটা মেসেজ পাঠালো। কেনীথ খেয়াল করে দেখলো পাভেল নিজের প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা তো ঠিকই বের করলো কিন্তু কোনোভাবেই ফোনের স্ক্রিনটা দেখে নিয়েই পুনোরায় ফোনটা নিজের পকেটে ঢুকিয়ে নিলো। অতঃপর আবারও খাবার খেতে ব্যস্থ হয়ে পড়লো।

এদিকে এসব দেখে কেনীথ পুরো হতবাক। এতোক্ষণ গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে হইলেও এখন সম্পূর্ণ সোজা হয়ে পাভেলকে লক্ষ করছে। মেজাজটাও তার তুঙ্গে চলে গিয়েছে। ইচ্ছে করছে পাভেলকে ধরে এনে ইচ্ছে মতো কয়েকটা দিতে। কেনীথের নিজের রা*গ কন্ট্রোল করলো। এবার কোনো মেসেজ না দিয়ে সোজা কল করলো। কেনীথ পুনোরায় বুকে হাত গুঁজে গাছের সাথে হেলান দিলো। তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে রইলো পাভেলের দিকে।

এদিকে ফোন বেজে উঠতেই পাভেল প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে কিছু বিরবির করতে করতে, ফোন বের করলো। রা’গের বশে ফোন কাটতে নিয়ে হঠাৎ নামটা দেখে কলিজা ছ্যাত করে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে স্পষ্ট ভেসে রইছে “পি’শা’চরাজ কেনীথ পীর”

পাভেল জানে না এই বিষয়টা কখনো কেনীথের চোখে পড়লে কেনীথ ওর ঠিক কি হাল করবে। কিন্তু গত দু-তিন বছর ধরে সে কেনীথের নাম এটা দিয়েই সেভ করে রেখেছে। পাভেল তড়িঘড়ি করে আশেপাশে তাকালো। নজর পড়লো দূরে গাছের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা কেনীথের দিকে। পাভেল কেনীথের দিকে তাকাতেই কেনীথ বিস্তৃত মুচকি হাসলো।

ওর হাসি দেখে পাভেল ঢোক গিললো। তবে ইতস্ততভাবে পাভেলও একগাল হেঁসে ফেললো। এটা দেখামাত্রই কেনীথ চোখমুখ শক্ত করে চোখ দিয়ে ইশারা করলো ফোন ধরতে। পাভেলও তড়িঘড়ি করে ফোন ধরতেই কেনীথ রুক্ষ কন্ঠে বললো,

“এক মূহুর্তও দেরী না করে এখানে আয়”

পাভেলও যথারীতি কেনীথের কাছে ছুটে এলো। তবে সঙ্গে করে খাবারের প্লেটটাও নিয়ে আসতে ভুললো না। কেনীথের কাছে আসতেই কেনীথ গম্ভীর সুরে বললো,

“কাহিনি কি তোর?”

পাভেল ঠোঁট চেপে ইতস্তত হেসে হাসার চেষ্টা করলো।

“রাম ছাগলের মতো হাসবি না।”

নিমিষেই পাভেল স্বাভাবিক হয়ে বললো,

“ঠিক আছে।”

—“কি ঠিক আছে!মেসেজ দিলাম খেয়াল করেও দেখছি না। ফোনও কেটে দিতে নিয়েছিলি। খাওয়া দাওয়া কখনো করিস না নাকি?আমি তোকে কোনো দিন অভুক্ত রেখেছিলাম যে এখানে এসে…”

—“ছি’হ ব্রো, এসব কি বলো। তুমি আমার সাথে কখনো এমনটা করতে পারো নাকি! আর এখানে তো সবাই এভাবেই পার্টি এনজয় করছে। শুধু তুমি বাদে…!”

কেনীথ বিরক্তির চাহনিতে পাভেলের দিকে তাকালো। মনটা চাচ্ছে এখানেই মে’রে গেঁ’ড়ে রাখতে।

—“ফালতু কথা না বলে কাজের কথা বল! যা করতে বলেছিলাম তা হয়েছে?”

পাভেল এবার থতমত খেয়ে গেলো। আমতাআমতা করে বলতে নিলো।

—“না মানে হ্যাঁ…”

—“যা বলার ঠিক মতো… ”

কেনীথের কথা এবার আর শেষ হলো না। বরং এর আগেই আশেপাশে হৈচৈ পড়ে গেলো। রিসোর্টের ভেতর গুনে গুনে তিনটা বিলাসবহুল গাড়ি প্রবেশ করেছে। প্রথম গাড়িটা লাল রংএর আর পেছনের দুটো কালো। গাড়ি গুলো থেমে যেতেই বেশিরভাগ লোকেরই সেদিকে গিয়ে ভীর জমালো।

কেনীথ আর পাভেলের নজরও এখন সেদিকেই। তবে কেনীথের কপাল কুঁচকে গিয়েছে। ও পাভেলকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“এখানে আমি বাদে আরো কোনো গেস্ট আসার কথা ছিলো?”

পাভেল খানিকটা ইতস্তত হয়ে বললো,

“হুম, ঐ যে রকস্টার অ্যানা রয়েছে না!যার দেশে আসার কথা ছিলো।সেই এখানে এসেছে।”

কেনীথ ভ্রু উচিয়ে বললো,

“এ.টি.?

পাভেল মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,

” হুম।”

কেনীথ যেন খানিকটা বিরক্ত হলো।

—“আমায় আগে বলিসনি কেনো?”

পাভেল এবার কি বলতে বুঝতে পারছে না। তবুও ইতস্ততভাবে বললো,

“আমি তো ভেবেছি এটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না তাই আর…”

কেনীথ তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,

“কোনটা গুরুত্বপূর্ণ আর কোনটা অপ্রয়োজনীয় তা তুই বুঝলে তো কাজই হতো। সকল অপ্রয়োজনীয় জিনিসই তো কাজে গুরুত্বপূর্ণ আর সকল গুরুত্বপূর্ণ জিনিস তোর কাছে অপ্রয়োজনীয়। ভালোই করেছিস, ভাগ্য করে আমার কপালেই জুটেছিস।”

পাভেলের আর এতে কিছু বলার নেই। ছোট ভাই হিসেবে বড় ভাইয়ের দুই তিনটা গা’লাগা’লি হজম করা ব্যাপার না। অবশ্য সে নিজেও জানে, সে কাজকর্ম সত্যিই ঠিকঠাক করতে পারে না। ভুল জায়গায় সঠিক কাজ আর সঠিক জায়গায় ভুল কাজটা করে ফেলে।

তবে তাদের নজর গিয়ে পুনোরায় গাড়ির দিকে পড়লো। কালো গাড়ি দুটো থেকে ৮-১০ জন নেভী ব্লু রং-এর পোশাক পড়া বডি গার্ড বেড়িয়েছে। এরা সকলেই লাল গাড়ির সামনে সারিবদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে। কেনীথ মনে মনে কিঞ্চিৎ হাসলো। মেয়ে মানুষ হলে যা হয়। একজনের জন্যই ৮-১০ জন বডিগার্ড।

এরপর লক্ষ করলো চকচকে লাল গাড়িটার দিকে। একজন গিয়ে দরজা খুলে দিতেই একটা অত্যাধিক স্টাইলিশ মেয়ে দৃশ্যমান হলো। একদম ফিনফিনে চিকন শরীরের উপর সিল্কের ডার্ক চেরী রেড কালারের স্লিট ড্রেস। যেটাও কিনা এক্সপেন্সিভ ডিজাইনার ব্র্যনান্ড এলি সাব নামক লেবানিজ ফ্যাশন ব্রান্ডের। এছাড়া দু কাঁধে উপর আলগা ভাবে ঝুলিয়ে রাখা কালো রংএর স্টাইলিশ জ্যাকেট। চোখে মুখে সেই বিশেষ মাস্কারেড মাস্ক।

অ্যানা গাড়ি হতে বের হয়েই সুনিপুণ ভঙ্গিতে নিজের বড় বড় চুল ঠিক করে নিলো। তার হাতে একটি মিনিমালিস্ট ক্লাচ। পায়ে ক্রিশ্চিয়ান লুবউটিন নামক প্রিমিয়াম ফ্যাশান ব্র্যান্ডের সিগনেচার স্টাইলের লাল সোলের কালো রংএর উঁচু হাই হিল। সে বের হওয়ার সাথে সাথেই বডিগার্ড গুলো সারিবদ্ধ হয়ে তাকে রাস্তা বানিয়ে দিলো। ক্যাটওয়াক স্টাইলে দক্ষতার সাথে হাঁটতে গিয়ে প্রতিবার কানে ঝুলতে থাকা দুটো চেরী ফল আকৃতির ইয়ার রিং গুলো নেচে উঠছে।

তবে আরো একটা জিনিস রয়েছে যা বারবার সদৃশ হচ্ছিলো। যে কারণে কেনীথ অনেকটা বিরক্ত হয়েই নিজের চোখ ফিরিয়ে নিলো।অ্যানার হাঁটা, তার অঙ্গভঙ্গি—সবকিছুতেই আভিজাত্যের পাশাপাশি আধুনিকতার ছাপ তা অবিশ্বাসের কিছু নয়। কিন্তু স্লিট ড্রেস পড়ায় প্রতিবার সমান তালে হাঁটার দরূন তার বাম পাশের সরু পায়ের হাঁটু থেকে খানিকটা উপর পর্যন্ত দৃশ্যমান হচ্ছিলো। যেটা নিত্যন্তই কেনীথের কাছে অনেক বেশি বিরক্তিকর লাগলো। আপাতত এসব মেয়ের দিকে ঘুরে তাকানোর আর কোনো ইচ্ছে নেই।

কেনীথ সেখান থেকে চলে যেতে নিলেই পাভেল জিজ্ঞেস করলো,
“হেই ব্রো, কোথায় যাচ্ছো?ওদের সাথে কথা বলবে না?”

কেনীথ গম্ভীর সুরে বললো,

“মুড নেই!”

—“মুড নেই মানে,একটু…”

—“বললাম তো, এসবে আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।”

এই বলে কেনীথ চলে যেতে নিলেই দেখলো ওরা তাদের দিকে আসছে। পাভেল এটা দেখে হতভম্ব হয়ে বললো,

“ব্রো ওরা তো এদিকেই আসছে।”

কেনীথ নির্বিকার হয়ে বললো,

“আমি যাচ্ছি। ওদের বলে দিস আমাকে যেন বিরক্ত না করে।”

এটা বলেই কেনীথ আর এক মূহুর্তও দেরী করলো না । সেখান থেকে সোজা ড্রিংকস কাউন্টারের দিকে চলে গেলো। এদিকে পাভেল পুরো ইতস্তত হয়ে হাসার চেষ্টা করছে। কেননা অ্যানার সাথে থাকা পার্টি এরেঞ্জমেন্টের লোকগুলোও বিষয়টা বুঝে গিয়েছে। অ্যানাও বিষয়টা ভালো করেই বুঝেছে। কিঞ্চিৎ হাসলোও সে।

কেনীথ আর ওর সমস্যাটা অদ্ভুত। কেউই কাউকে চেনে না অথচ তবুও তাদের মধ্যে এক অদৃশ্য শ’ত্রুতা। মূলত কেনীথ পুনোরায় রকস্টার ইন্ডাস্ট্রিতে ফেরার পর যখনই ইন্টারন্যাশনাল ভাবে বাহিরে কনসার্ট করার কথা উঠেছে তখনই সে জায়গায় অ্যানা নিয়ে গিয়েছে। মূলত কেনীথের কনসার্ট বাতিল হয়ে সেখানে অ্যানার কনসার্ট হয়েছে। এছাড়া আরো ছোট-বড় কিছু ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইস্যু ক্রিয়েট হয়েছে। যেসব কিছুতে ঘুরেফিরে কেনীথের বাঁধা হয়ে গিয়েছে অ্যানা। এটাই দুজনের মধ্যে সমস্যার মূল কারণ। অথচ এখন পর্যন্ত কেউ কারো সাথে কথাটাও পর্যন্ত বলেনি। কিন্তু কেনীথের বিশ্বাস এই মেয়ে ইচ্ছে করেই তার পিছনে লেগেছে। কেনীথ চলে গিয়েছে বিধায় অ্যানারাও অন্যদিকে ঘুরে ফিরে গেলো। তবে পাভেল সৌজন্যতা বজায় রাখতে অ্যানার সাথে দেখা করতে চলে গেলো।

_______________

Darlin’, can I be your favorite?
I’ll be your girl, let you taste it
I know what you want, yeah, just take it (take it)
Darlin’, can I be your favorite?
Want you to tell me you crave it
My name’s whatever you make it (make it)

I swear you’re heaven, but boy, you’re no angel
You take me places only we go
You’re so pretty, God, I swear that it’s painful

I whisper things only we know, put your hands around my neck, make me faithful….

আশেপাশে গানবাজনা শুরু হয়ে গিয়েছে। অ্যানা গান গাইছে, মিউজিক বাজছে, কেউ কেউ নাচছে, কেউ খাচ্ছে। সবমিলিয়ে গভীর রাতের জমজমাট পরিবেশ।পাভেল আপাতত কেনীথের পাছে এসে দাঁড়িয়ে রইছে ড্রিংকস কাউন্টারের কাছে। হাতে একটা ককটেল নিয়ে মজায় মজায় খেয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে কেনীথ তার পাশে দাঁড়িয়ে আজ অনেক দিন পর কয়েকবার ড্রিংকস করে নিয়েছে। মুডটা কেমন যেন বিগড়ে গিয়েছে। কারণটা তার জানা নেই।

এদিকে আজ কেনীথেরও গান গাওয়ার কথা ছিলো কিন্তু ও একদম পরিষ্কার করে পাভেলকে জানিয়ে দিয়েছে যে ও কোনো গান গাইবে না। যথারীতি পাভেলও বাধ্য হয়ে সবাইকে এ কথা বলে দিয়েছে। আপাতত এই নিয়ে কেনীথকে জোরাজুরি করে বিরক্ত করার মতো সাহস কারো নেই।

কিন্তু এমনিতেই প্রচুর বিরক্ত হচ্ছে। এই অ্যানা মেয়েটাকে চোখের সামনেই দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না। যদিও কেনীথ স্টেজের উল্টোদিকে ঘুরে ড্রিংকস করছে। তবুও অ্যানা এহেন গানের লিরিক্স শুনেই যেন শরীর জ্বলে যাচ্ছে। গান তো দুনিয়াতে বহুত রয়েছে, এসব ফালতু গান এখানে গাওয়ার কোনো মানে হয়।

এদিকে এই গান শেষ হতে না হতেই কেনীথ আরেটু ড্রিংকস করে নিয়েছি। পাভেলও কোনো নিষেধ করেনি। ও নিজেই পার্টি এনজয় করতে ব্যস্ত। কিন্তু কেনীথের নেশাগ্রস্ত হতে থাকা মস্তিষ্ক খানিকটা পর বিগড়ে গেলো। আচমকা অ্যানার ভিন্ন একটা গান শুনে। ও বাংলা গান গাইছে তবে সেটাও কিনা কেনীথের সিগনেচার সং “ভ্রমর কইও গিয়া”।

ভাইবে রাধারমণ বলে শোন রে কালিয়া
নিভা ছিল মনের আগুন কে দিলাই জ্বালাইয়ারে…
ভ্রমর কইও গিয়া।

ভ্রমর কইও গিয়া…
শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে…
অঙ্গ যায় জলিয়ারে ভ্রমর কইও গিয়া
ভ্রমর কইও গিয়া…
শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে…
অঙ্গ যায় জলিয়ারে ভ্রমর কইও গিয়া…

কেনীথ খানিকটা রাগান্বিত আর বিস্ময়ের সাথে পেছনে ফিরে অ্যানাকে দেখলো। কেনীথের মনে হলো সে পেছনে ফিরে তাকাতেই অ্যানা অন্যদিকে মুখ ফেরালো। এরমানে অ্যানার নজর হয়তো কেনীথকেই লক্ষ করছিলো। আবার কেনীথ এটাও খেয়াল করছে অ্যানা মুচকি মুচকি অদ্ভুত ভাবে হাসছে আর গান গাইছে।

এদিকে কেনীথ পাশে ফিরে তাকিয়ে পাভেলকে দেখলো। পাভেল একদম নির্বিকারে ককটেল খাচ্ছে। কেনীথ পাভেলকে এলোমেলো ভাবে জিজ্ঞেস করলো,

“হেই, ও কেনো এই গান গাইছে?”

পাভেল তব্দা খেয়ে কেনীথের দিকে তাকালো।কেনীথের প্রশ্নের উত্তরে কি বলা উচিত বুঝতে পারছে না। ইতস্তত হয়ে তবুও বলতে থাকলো,

“কেনো ব্রো! ভালোই তো গাইয়ে…”

—“দুনিয়ায় আর কোনো গান নেই। এটাই গাইয়ে হবে? এই মেয়ে চায় টা কি?”

—“কোনো সমস্যা হলে…আমি কি না করে আসবো?”

কেনীথ কপাল কুঁচকে কিছু একটা ভেবে বললো,

“থাক, দরকার নেই।”

এই বলেই কেনীথ আবারও ড্রিংকস করতে শুরু করলো। একেবারে উম্মাদের মতো তিন চার গ্লাস খেয়ে নিলে পাভেল তাড়াহুড়ো করে বাঁধা দেয়। ও ধান্দায় খেয়াল করেনি প্রথমে। এদিকে কেনীথের অবস্থা খারাপ হয়েছে। মাথা রীতিমতো চক্কর দিচ্ছে। নিয়মিত ড্রিংকস করার অভ্যাস নেই তার। মাঝেমধ্যে বেশি খেয়ে নিলে আর নিজের মধ্যে থাকে না।

পাভেল গিয়ে কেনীথকে ধরতেই কেনীথ ওকে বললো যেন তাকে রিসোর্টের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনিতেই এখানে অনেক বেশি অস্থির লাগছে তার। পাভেলও যথারীতি কেনীথকে নিয়ে রিস্টার্টের ভেতরে চলে গেলো। কেনীথের জন্য আলাদা রুম ঠিক করে রাখা হয়েছে। পাভেল ওকে নিয়ে সেখানেই গেলো।

রুমে পৌঁছাতেই কেনীথ কোনোমতে জুতোটা খুলে বিছানায় লেপ্টে শুয়ে পড়লো। পাভেলকেও নিষেধ করলো যেন ওকে কোনো বিরক্ত না করা হয়। পাভেলও কেনীথের কথা মতো রুমের লাইটটা বন্ধ করে, দরজাটা পেছন থেকে লাগিয়ে দিয়ে চলে গেলো।

তবে কেনীথের কিছুটা অদ্ভুত লাগছে। যতই সে নেশা করুক না কেনো আজ যেন একটু বেশিই খারাপ লাগছে।আনায়া চলে যাওয়ার পর দেড় বছর তো কম নেশা করেনি সে। তখন তো এতো এমনটা হয়নি। অথচ আজ মাথাই যেন তুলতে পারছে না। তার সবকিছুই যেন আপনা-আপনি অচল হয়ে যাচ্ছে। নিমিষেই কেনীথ অন্ধকার ঘরে নিদ্রার অতলে ডুবে গেলো।

____________

গায়ে ধবধবে সাদা রংএর কমফোর্টার জড়িয়ে উপর হয়ে শুয়ে রইছে কেনীথ। অতিরিক্ত নেশার দরুন এখন চোখজোড়াও খুলতে পারছে না। ঘুম অনেকটাই ভেঙ্গে গিয়েছে তার। কিন্তু নেশার রেশ এখনো কাটেনি। মূলত কেনীথ এসবে খুব বেশি অভস্ত্য নয়। আনায়ার চলে যাওয়ার পর মাঝেমধ্যে খেয়েছে। আবার কখনো একেবারে ছেড়ে দিয়েছে। এভাবেই চলতো। কিন্তু গতকাল রাতে হয়তো একটু বেশিই অভার ডোজ হয়ে গিয়েছিলো।

কেনীথ কোনমতে চোখখুলে উঠে বসার চেষ্টা করলো। বাহির থেকে দিনে আলো হুড়মুড়িয়ে রুমে ঢুকছে। আচমকা আলোর প্রতিফলন চোখে পড়তেই কেনীথের মাথায় পুরো ঘুরে গেলো। খানিকটা সময় নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার পর খেয়াল করলো সে আজ একদম ঠিকঠাক নেই। সম্পূর্ণ বস্ত্রহীন সে। কেনীথের মাথা আসছে না কাল রাতে ঠিক কি হয়েছে। ওর কেনো এই অবস্থা! মস্তিষ্কে খানিকটা জোর খাটাতেই কেনীথ পুরো আঁতকে উঠলো। আগে-পিছে সব ছেড়ে মাথায় শুধু একটা নামই এলো, তা হলো ইনায়া।

কেনীথ পাগলের মতো অস্থির হয়ে আশেপাশে তাকাতেই তার নজর পড়লো বিছানারই একপাশের কোণায় উল্টো ঘুরে গুটিসুটি বসে থাকা একটি মেয়ের দিকে। মেয়েটির পরনে ধবধবে সাদা রংএর বাথরোব। বড় বড় সিল্কি চুল হতে টপটপ করে পানি ঝড়ছে।

কেনীথ সম্পূর্ণ হতভম্ব হয়ে গেলো। এসব তো হওয়ার কথা ছিলো না তবে সে কি করে…! কেনীথ হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লো। দ্রুত প্যান্টটা খুঁজে নিয়ে পড়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে জোরে জোরে কয়েকবার দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। মেয়েটির কাছে এগিয়ে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। একে তো নেশাগ্রস্ত মস্তিষ্ক, এর উপর এক অপ্রত্যাশিত সকালের সূচনা।

কেনীথ তবুও মেয়েটির দিকে এগিয়ে গেলো। মেয়েটি মাথা খানিকটা নিচু করে রেখেছে। চুলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে। মুখটা সরাসরি দেখা যাচ্ছে না। কেনীথ মেয়েটির কাছে গিয়ে কি করবে,কি বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। নিজেকেই তো তার অসহ্য লাগছে। কেনীথ অস্থির হয়ে গিয়েছে; মেয়েটির সামনে গিয়েই হাঁটু গেঁড়ে নিচে বসে পড়লো।

আগে-পিছে কোনো কিছুর ভাবার সময় নেই এখন। প্রবল অনুশোচনা নিয়ে মাথা ঝুকিয়েই বলতে থাকলো,

“আ’ম সরি ইরা। আই রিয়েলি ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড…ইরা আমি… ”

কেনীথ কি বলবে জানে না। এমনিতেই সে কিছু বলে উঠতে পারছে না।বলার মতো যেন কোনো ভাষাই খুঁজে পাচ্ছে না। মাথা উঁচু করে তাকিয়ে যে ক্ষমা চাইবে সেই সক্ষমতাও হচ্ছে না তার। এদিকে তাকে এক প্রকার বিস্মিত করে দিয়ে মেয়েটি কেনীথের চুলে নির্বিকার ভঙ্গিমায় নিজের হাত বুলিয়ে দিতে দিতেই বললো,
“হোয়াই আর ইউ ফিলিং সো গিলটি, বেইবি?”

এহেন কন্ঠস্বরে কেনীথ সম্পূর্ণরুপে চমকে উঠলো। নিমিষেই কপালে ভাজ পড়ে গেলো। মাথা উঁচিয়ে মেয়েটিকে দেখে নেওয়ার আগেই মেয়েটি নিজের ডান হাতের তর্জনী আর বৃদ্ধা আঙ্গুলের সাহায্যে কেনীথের গ্রীবার খানিকটা নিচে নরম অংশে জোরে চেপে ধরলো। মেয়েটির হাতের সুদক্ষ ভাবে সাজানো হাতের ডার্ক চেরী রেড কালারে বড় বড় নখগুলোর দরূন কেনীথের পাতলা চামড়া ভেদ করে যেন মাং’সে ডেবে যাবে।

মেয়েটি নিজ থেকেই গ্রীবায় আরেকটু জোরে চাপ দিয়েই নিজের দিকে কেনীথের মুখ উঁচিয়ে ধরলো। মেয়েটির ঠোঁটের কোণায় দিব্বি বিস্তৃত রুক্ষ হাসি ঝুলছে। একজোড়া শান্ত চোখে এক অদ্ভুত চাহনি। এদিকে মেয়েটির নখ কেনীথের গলার চামড়া ভেদ করে মাং’সে ডেবে গিয়ে অনবরত র”ক্তের ফোঁটা ঝড়ছে। অথচ কেনীথের এসবে কোনো হুস নেই।

কপাল কুঁচকানো চেহেরায় এখন সর্বস্ব জুরে প্রগাঢ় বিস্ময়। সামান্য কিছু ভাবনা চিন্তা করার মতোও সক্ষমতা নেই। ভেবে উঠতে পারছে না এটা সপ্ন নাকি সত্যি। মস্তিষ্ক যেন কাজ করাই বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে তাকে আরেকটু অবাক করে দিতে মেয়েটি মুচকি হেঁসে চোখ মে’রে বললো,

“মাই ডিয়ার হাব্বি! তুমি আমায় দেখে খুশি হওনি? ইট’স মি,…ইয়োর বিলােভড ব্লাড।”

চলবে….