একজোড়া আগুন পাখি পর্ব-৩৬

0
50

#একজোড়া_আগুন_পাখি
অরনীতা তুশ্মি (#তুশকন্য)

পর্ব→৩৬(১ম অংশ)

“কি হলো, আমার জান-প্রাণ,কলিজা, ফুসফুস! তোমার চেহেরার রং এভাবে উড়ে কেনো গেলো। বউ আমি তোমার, এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গিয়েছো আমায়?”

কেনীথ চোখেমুখে এখনো বিস্ময়। বুঝতে পারছে না এসব নেশার জন্য নাকি এখনো সে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে। এদিকে মেয়েটি খানিকটা কেনীথের দিকে ঝুঁকে এলো। কেনীথের বিস্মিত চোখ জোড়ার দিকে নিজের শান্ত চোখের আ’গুনের ন্যায় জ্ব’লন্ত তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টি নি’ক্ষেপ করলো।

সেই সাথে কেনীথের গ্রীবাটা ধরে খানিকটা টেনে নিজের মুখের কাছে আনলো। কেনীথের চোখ থেকে নজর সরিয়ে মেয়েটি ওর গ্রীবার নিচের অংশে লক্ষ করলো। ফর্সা ত্বক ছিঁড়ে র”ক্ত গড়িয়ে পড়ছে। মেয়েটি কিঞ্চিৎ হেসে কেনীথের ক্ষত জায়গাটা দিকে নিজের মুখটা আরেকটু এগিয়ে নিলো। নিমিষেই মেয়েটির জলে ভেজা চুলগুলো কেনীথ উন্মুক্ত বুকে আছড়ে পড়লো।
এদিকে মেয়েটিক মূহুর্তেই নিজের নাক ডগা দিয়ে কেনীথ র”ক্তপ্রবাহের ক্ষ”ত জায়গায় খানিকটা ঘষে নিলো।নিমিষেই কেনীথ অদ্ভুত শিহরণে জেগে গিয়ে খানিকটা কেঁপে উঠলো।

এদিয়ে মেয়েটি এটাও দিব্যি আন্দাজ করে পুনোরায় মুচকি হাসলো। নিজের নাকের ডগায় খানিকটা র*ক্তের ফোঁটাও লেগে গিয়েছে। মেয়েটি কেনীথের মুখের একদম কাছ এসে ফিসফিসিয়ে বললো,

“আমার জামাইটা মনে হয় একটু বেশিই সুশীল হয়ে গিয়েছে। নিজের বউয়ের স্লিট ড্রেসের উম্মুক্ত পায়ের দিকে চোখ পড়তেই চোখ ফিরিয়ে নেয়। অথচ কত সুন্দর পরিকল্পনা করে নিজের শা”লীর সাথে রাত কাটানোর প্লান করেছে। এতোটা সুশীল না হলেও পারতে, জান।”

মেয়েটি খানিকটা তাচ্ছিল্যের সাথেই নিজের কথা শেষ করলো। তবে মেয়েটি যেই না নিজের মুখটা তুলে সরে আসতে ধরেছে, ওমনি কেনীথ ক্ষি”প্ত বাঘের ন্যায় বাম হাতের থাবায় মেয়েটির ঘাড়ের পেছন থেকে চেপে ধরলো। যার দরূন মেয়েটি আর কেনীথ দু’জনেই আবারও একে অন্যের একদম মুখোমুখি।

মেয়েটি এবার খানিকটা অভিনয় করে বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টে বললো,
“ব্যাথা পাচ্ছি তো…”

মেয়েটির কথা শেষ হওয়ার আগেই কেনীথ শক্ত হাতে ওর ঘাড়টা আরো জোড়ে টেনে ধরলো। এবার মেয়েটির ঠোঁটের কোণা থেকে পুনোরায় হাসি ফুটে উঠলো। তার ভেজা ঠোঁটের কোণা হতে যেন রুক্ষ হাসিটা সরছেই না। এদিকে কেনীথ এতোটুকু ধ্যানে ফিরেছে যে এসব মিথ্যা কিংবা তার স্বপ্ন-ভ্রম নয়। এগুলো সত্যিই। তবুও কেনীথ খানিকটা কষ্ট করেই অস্ফুটস্বরে বললো,

“তুই… তুই কি সত্যিই তারা?”

মেয়েটি বিস্তৃত হেসে বললো,

“কেনো, ইরা হওয়ার কথা ছিলো বুঝি?”

কেনীথের চোখমুখ শক্ত হলো। যেন কিছু বলতে চাইছে কিন্তু কি বলবে জানে না। শ্বাস ভারী হয়ে উঠেছে। কেমন যেন শ্বাস আঁটকে আসছে। মেয়েটি আর কেনীথের চোখ একে অন্যের দিকে তাকিয়ে। দুজনের মধ্যে ব্যবধানটাও খুব ক্ষীণ। দুজনের নাকের ডগায় এক ক্ষুদ্র সং”ঘর্ষ এই হলো বলে!
আবার অদ্ভুত ভাবে কেনীথের অ্যাডামস্ অ্যাপেলটা ওঠানামা করছে। শুষ্ক ঠোঁট জোড়াও কিঞ্চিৎ কাঁপছে। চোখজোড়াও যেন জলে আচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে, পালাতে চাইছে যেন বিস্মিত চোখগুলো।

এদিকে কেনীথের এসব সুক্ষ্ম প্রতিক্রিয়ার সবটাই মেয়েটির চোখে ধরা দিলো। মেয়েটির আবারও কিঞ্চিৎ হাসলো। তবে সঙ্গে কেনীথের জন্য আরো একটা বিস্ময়কর কাজ করে বসলো। আচমকা কেনীথের শুষ্ক ঠোঁট জোড়ায় নিজের ভেজা ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। যদিও ঘটনাটা খুব অল্প মূহুর্তের জন্যই ঘটলো। কিন্তু এদিকে কেনীথ পুরো হতভম্ব। নিমিষেই আনায়াকে অনেকটা ধাক্কা দিয়ে পেছনে সরে এসে সোজা দাঁড়িয়ে পড়লো।

কেনীথ মেয়েটির দিক থেকে ঘুরে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস ফেললো। কি বলবে ও, কি করবে ও কিচ্ছু বুঝতে পারছে না। এখনো সবকিছু নেশার রিয়াকশন মনে হচ্ছে তার। তবে এটুকু বুঝে গিয়েছে যে এসব সত্যিই। কিন্তু মস্তিষ্ক যেন কোনো ভাবেই এটা বিশ্বাস করে মেনে নিতে পারছে না।

এদিকে কেনীথের অবস্থা পেছন থেকে দেখতে দেখতে মেয়েটি হাসলো। কেনীথের ধাক্কার ফলে অনেকটা বিছানায় পড়ে গিয়েছিলো। তবে আপাতত এখন বিছানায় নিজের ডান হাতের ভরে আধশোয়া হয়ে বসে রইছে। পরনের হাঁটু পর্যন্ত ধবধবে বাথরোবটা আরো খানিকটা উঁচুতে উঠে গিয়েছে। অতচ মেয়েটি নির্বিকার ভঙ্গিতে নিজের পা দুটো দুলিয়ে যাচ্ছে। তার মাঝে কোনো হেলদোলই নেই। আশেপাশের সবকিছু যেন সে উপভোগ করতে ব্যস্থ৷

এদিকে কেনীথ এতোক্ষণে নিজেকে যতটা পেরেছে স্বাভাবিক করেছে। জানে না ঠিক কোথায় থেকে কিভাবে কি বলে শুরু করা উচিত। কেননা এখানে সে এক অপ্রকাশিত মানবকে দেখছে, অথচ যে কিনা এতো বছর পর্যন্ত তার কাছে ছিলো মৃ’ত। তবে কিছু কিছু বিষয় হয়তো তার মস্তিষ্কে খেলতে শুরু করেছে। অনেকটা আন্দাজও করে নিয়েছে। তবুও যেন বিস্ময় কাটছে না। কেনীথ জোরে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পেছনে ঘুরে তাকালো। আর যাই হোক, বরাবরের মতো নিজের মধ্যে কাঠিন্যতা বজায় রাখতে হবে।

কেনীথ ঘুরেফিরে তাকাতেই মেয়েটি আবারও মুচকি হাসলো। অনেকটাই ফিট আর ছিপছিপে মসৃণ গড়নের, চোখেমুখে টানটান সৌন্দর্য। কেনীথের ভাবনা অনুযায়ী অনেকটাই শুকিয়ে গিয়েছে ও। যদিও এটা একদম সুষম কাঠামোর গঠনের মধ্যেই পড়ে তবুও সেই আগের আনায়ার মতো সেই নমনীয় ভাবটা কম। গাল দুটো আগে খানিকটা ফোলা ফোলা ছিলো অথচ এখন একদম খাপেখাপে। অতিরিক্ত চর্বি কিংবা অস্বাভাবিক রোগা ভাবটাও শরীরের কোথাও নেই।

শরীরের প্রতিটি অংশ যেন একে অপরটির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সোজা মেরুদণ্ড, উঁচু কাঁধ-গ্রীবা, কথাবার্তার ভঙ্গিমা,ভারসাম্যপূর্ণ চলাফেরা, শান্ত চোখের আগুনের ন্যায় জল*ন্ত চাহনির হাসি কিংবা গোলাপি ঠোঁটের কোণায় থাকা রুক্ষ হাসি ; সবই যেন কেনীথের কাছে নতুন। এছাড়া সর্বকালে শালীনতায় ঘেরা আনায়াও যেন আজ গায়েব। সবসময় মস্তিষ্কের কথা শুনতে থাকা কেনীথের মস্তিষ্কও আজ এই আনায়াকে মানতে পারছে না। বহুরূপী মনে হচ্ছে। অথচ তার চিরকালের অবহেলিত মন তাকে বারবার বলছে ” এটাই তোর আনায়া! এটাই তোর তারা!”

কেনীথ ভাবছে ঠিক কার কথা শোনো উচিত। এদিকে একে অন্যের দিকে তাকিয়ে শুধু সময় অতিবাহিত হচ্ছে। একজন নির্বিকার, তো অন্যজন দিশেহারা।

এরই মাঝে কেনীথ সবকিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে কড়া কন্ঠে বললো,

“মিস আনায়া, রাইট! আপনি…”

কেনীথের কথা শেষ হওয়ার আগেই আনায়া বাঁধা দিয়ে বললো,

“নো! ঠিক হলো আবার কিভাবে? ভুল বললে তো! মিস না মিসেস হবে। বাচ্চা কালেই বিয়ে গিয়েছে আমার। আর বিয়েটা আপনার সাথেই হয়েছে মিস্টার। ভুলে গিয়েছিলে বোধহয়, এখন মনে পড়েছে কি?”

কেনীথের চোখমুখ শক্ত হলো। বলতে চাইছে অন্যকিছু আর বলছে ভিন্ন কিছু। এদিকে আবার আনায়ার নির্বিকার ভাবভঙ্গির হাস্যরসের সব কথাবার্তা। মুডের ঠিক কি অবস্থা, নিজেও বুঝতে পারছে না। এদিকে কেনীথ কিছু না বলে চোখমুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইছে বিধায় আনায়া নিজেই কেনীথের কাছে এগিয়ে এলো। কেনীথ তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে অকপটে বললো,

” কিসের গেইম খেলছিস তোরা? কে কে রয়েছে তোর টিমে? বাবুশকা, পাভেল…সাথে আরো কেউ?”

কেনীথ কথা শোনা মাত্রই আনায়া কিঞ্চিৎ গা দুলিয়ে মুচকি হাসলো,

“দেখেছো, এই না হলো আমার জামাই। কিছু বলতেও হলো না, এমনিতেই সব বুঝে গিয়েছে।”

কেনীথ এবার আর কিছু বললো না। চোখমুখ শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইছে। এদিকে আনায়া এবার বিছানা থেকে উঠে এসে কেনীথের একদম কাছে এসে দাঁড়ালো। ওর নজর কেনীথের উন্মুক্ত বুকের দিকে চলে গিয়েছে। আলতোভাবে আঙ্গুল দিকে কেনীথের বুকের বা পাশে গ্লাইড করতে লাগলো। কেনীথ আনায়ার হাত ধরে ওকে সরিয়ে দেওয়ার আগে আনায়া নির্বিকারে হেসে বলতে লাগলো,

“উফ! তোমার এই হৃদয়টা তো মনে হয় অনেক বড় তাই না। কত জন যে এই হৃদয়ে জায়গা পেয়েছে কে জানে। চিন্তা নেই, অল্প সময়ের জন্য এলেও এটাকে খুব সুন্দর করে ধুয়েমুছে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো। তুমি আমার সঙ্গে না গেলেও চলবে।”

কেনীথের আনায়ার এমন রংতামাশা ঠিক সহ্য হচ্ছে না। খপ করে আনায়ার হাতের কব্জিটা শক্ত করতে ধরলো। তবুও আনায়া কেনীথের বক্ষস্থলের দিক হতে নজর সরিয়ে কেনীথের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। কিন্তু কেনীথ গাম্ভীর্যের সাথে বললো,

“কিসের জন্য এসেছিস? উদ্দেশ্য কি? আমায় মা”রার জন্য নিশ্চয় এতোগুলা বছর পর এখানে আসিস নি!তবে…”

“আরে! আরে! কিসব কথা বলছো। আমি কি তোমায় মা”রতে পারি?”

এই বলেই আনায়া কেনীথের বাধন থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো। অতঃপর কোনো কিছুরই তোয়াক্কা না করে সুন্দর করে কেনীথের গলায় নিজের দু-হাতে মালার মতো পেঁচিয়ে ধরলো।

এদিকে কেনীথ কিছুই বলছে না। শুধু চুপচাপ শক্ত মুখে সটানভাবে দাঁড়িয়ে রইছে।অথচ আনায়া নিজের পা দুটো উঁচিয়ে কেনীথের কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,

“ঠিক বলেছো,সুইটহার্ট! তোমায় মা”রার হলে এতোগুলো বছর অপেক্ষা করতাম না আমি। আমার তো অন্যকিছু চাই।”

কেনীথের কপালে নিমিষেই ভাজ পড়লো। এদিকে আনায়া মুখ তুলে পুনোরায় কেনীথের নজরের সাথে নজর মিলিয়ে শক্ত চোখে তাকালো। কেনীথ কঠিন কিছু শোনার জন্য হয়তো প্রস্তুতি নিচ্ছিলো কিন্তু আনায়া নিজের ভাবভঙ্গি পরিবর্তন করলো। মুচকি হেসে কেনীথের মাথায় নিজের হাতটা দিয়ে চুল এলোমেলো করে দিলো। বাম হাত কেনীথের গলার সাথে পেঁচিয়ে আনায়া এখন কেনীথের গায়ের সাথে লেপ্টে রয়েছে। আনায়া কিছুটা ইনোসেন্ট মুখ বানিয়ে বলতে লাগলো,

“এসব কি করেছো? এতো সুন্দর বড় বড় চুল গুলো কেটে ফেলেছো! ভেরী ব্যাড, আমার পছন্দ ছিলো তো তোমার বড় চুল গুলো। এই হেয়ার স্টাইলটা একটুও পছন্দ হলো না আমার।”

আনায়ার নির্বিকার কথাবার্তায় কেনীথ নিরেট কন্ঠে আনায়ার উদ্দেশ্যে বললো,

“এসব হেঁয়ালি কথাবার্তা শুনতে চাই নি আমি। দয়া করে এটা বলুন যে আপনাদের কি চাই? আমার কাছে এমন কি রয়েছে যা আপনাদের প্রয়োজন। আর সেটার জন্য আপনি এতবছর পর হুট করে আমার সামনে হাজির হয়েছেন।”

কেনীথের কথায় আনায়া খানিকটা তাচ্ছিল্যের সাথে হাসলো। চুল থেকে হাত সরিয়ে পুনোরায় দু-হাত দিয়ে গলা পেঁচিয়ে ধরে কেনীথের গায়ের সাথে লেপ্টে গেলো। দুজনের মধ্যে দুরত্বটা পুনোরায় ক্ষীণ হলো। তবে এত সব কিছুতে কেনীথের বিশেষ কোনো পদক্ষেপ কিংবা ভূমিকা নেই। সে শুধু সটান ভাবে দাঁড়িয়ে রইছে। আর হাত দুটো প্যান্টের দু-পকেটের কাছে খানিকটা মুঠো করা।

এদিকে আনায়া নির্বিকার ভঙ্গিমায় হেসে হেসে বললো,

“অনেক মিস করেছি জান! সত্যিই অনেক মিস করেছি তোমায়। তোমার অসাধারণ সব অত্যা”চার গুলো,শারীরিক-মানসিক সবদিক থেকে আমায় ধ্বং”স করার তোমার অত্যন্ত সুদক্ষ সব কলাকৌশল কিংবা নিজের আক্রোশ মেটাতে চারপাশের মানুষগুলোকে ধ্বং”স করা, এভভভরিথিং! খুব মিস করেছি আমি এসব।

তবে সে যাই বলো, কাল রাতে মিস-টিসের সবটাই মিটে গিয়েছে। নাইস পারফরম্যান্স জান!”

আনায়া এটুকু বলেই শয়তানি হাসিতে মুচকি হেসে কেনীথের উদ্দেশ্য বাম চোখ মা”রলো। এদিকে কেনীথ খানিকটা অস্থির হয়ে উঠেছে। ও দ্রুত গাম্ভীর্যের সাথে বললো,

“ছাড় আমায়!”

আনায়া ইনোসেন্ট মুখ বানিয়ে বললো,

“কেনো? আচ্ছা, তোমার কি আমায় অসহ্য লাগছে?”

কেনীথ নিরেট কন্ঠে বললো,

“বুঝতে পারছিস যখন, ছাড় আমায়!”

আনায়া কপাল কুঁচকে বললো,

“কি বলো এসব! তোমার জন্য এতো বছর ধরে, এতো কষ্ট করে,পুরো গরম গরম হটপট প্যাকেজ হয়ে এলাম। কই আমায় একটু কিসমিস দিবা, তা না!

সেই তখন থেকে মুখে একটাই কথা, ছাড় আমায়!ছাড় আমায়!
ছাড়ার জন্য এসেছি নাকি। যখন ছাড়তে হবে তখন এমনিতেই ছেড়ে দেবো। এতো আলগা ঢং করতে হবে না।”

কেনীথ এবার পুরো অসহ্য রকমের অস্থির। আনায়াকে পাত্তা না দিয়ে পাশে খানিকটা মুখ ফিরিয়ে উঁচু গলায় ডাকতে লাগলো,

“পাভেল! পাভেল! পাভে…”

কেনীথের চিল্লাচিল্লিতে আনায়া পুনোরায় কপাল কুঁচকে মুচকি হাসলো। কেনীথের দিকে মুখ উচিয়ে মুচকি হেসে বললো,

“দেবর সাহেবকে ডেকে লাভ নেই। উনি এতোক্ষণে হাওয়া হয়ে গিয়েছেন।”

কেনীথ আনায়ার দিকে মুখ ফিরিয়ে রাগা”ন্বিত চোখে তাকালো। মনে মনে হিসহিসিয়ে বললো,

“হাওয়া হয়ে আর যাবে টা কোথায়! সবকিছুর কা”লপ্রিট ওই শয়”তান। ওকে একবার হাতে পাই শুধু, মে’রে, ছিঁ’ড়ে মাটিতে গেঁ’ড়ে রাখবো।”

এদিকে কেনীথের ভাবভঙ্গি দেখে আনায়ার ঠোঁটে কিঞ্চিৎ শয়তানি হাসি ফুটে উঠলো,

“রাগ হচ্ছে তাই না! মা’রতে ইচ্ছে হচ্ছে? কা”টতে ইচ্ছে হচ্ছে?

ওসব বাদ দেও। আমি আছি তো। আমার মতো একটা ঝাক্কাস বউ থাকতে ওসব করে টাইম ওয়েস্ট করার কোনো মানে হয়? ওহ হ্যাঁ, অনেক হিসাব-নিকাশও বাকি রয়েছে। ওসবও তো এবার শেষ করতে হবে তাই না?”

—“তবে সেটাই ক্লিয়ার করে বল। তোর উদ্দেশ্য যেটাই থাকুক, আমার মনে হয় না তা সাধারণ কিছু। নয়তো এতো বছর ধরে এতো বড় গেইমটা কখনোই সাজাতিস না তোরা। কি চাস, সেটা শুধু ক্লিয়ার করে বল।”

এইটুকু বলেই কেনীথ নিজের গলা থেকে আনায়ার হাত দুটো সরিয়ে নিতে চাইলো। কিন্তু আনায়া আরো শক্ত করে, পারলে অনেকটা খামচে কেনীথের গলা দুহাতে পেঁচিয়ে ধরলো। অতঃপর কেনীথের একদম নিকটে নিজের শক্ত মুখটা এগিয়ে অনেকটা দাঁত খিঁচে হিসহিসিয়ে বলতে থাকলো,

—“এতো তাড়া কিসের আমার জান, প্রাণ, কলিজা, ফুসফুস! যথেষ্ট সময় রয়েছে তো। সব কাজ শেষ না করা অব্দি, যাচ্ছি না আমি। আর তোমাকেও ছাড়ছি না।
দ্য রিয়েল গেম হ্যাজ অনলি জাস্ট বিগান, মাই সুইটহার্ট।”

~চলবে

#একজোড়া_আগুন_পাখি
®অরনীতা_তুশ্মি(#তুশকন্যা)

পর্ব→৩৬(২য় অংশ)

“আমরা একজোড়া আগুন পাখি— তুমি হলে ধ্বং’স,আমি সেই ধ্বং’সের আড়ালে থাকা এক রহস্য! তুমি দহনের দীপ্তি, আমি পুনর্জন্মের গান; তুমি পোড়াও হৃদয়, আর আমি সেই দহন থেকে গড়ি নতুন প্রাণ।”

নিরেট কন্ঠে এটুকু বলেই আনায়া কেনীথের ঠোঁট আকস্মিক ঠোঁট ছুঁইয়েই নিমিষেই দূরে সরে এলো। অতঃপর রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলতে থাকলো,

“ফ্রেশ নেও জানপাখি। আরো অনেকের জান তো উড়িয়ে দেওয়া বাকি! আপাতত যেতে হচ্ছে, আবার দেখা হবে আমার আগুনপাখি।”

_______________

“শ্লা মীরজা’ফর! হা”রামি! শয়”তান! প্রতারক! তোকে আমি আজ শেষ করেই ফেললো। সব কিছু তুই করছিস। আমার সাথে থেকে আমার সাথেই…ছাড়বো না তোকে আমি। মে’রে, কে’টে বস্তায় ভরে ওই রাশিয়ার স্পেশাল নর্দ’মায় ফেলে আসবো তোকে!”

পুরো ড্রইং রুম ধরে দৌড়া দৌড়ি চলছে দুই মানবের। কেনীথের হাতের প্যান্টের লেদার বেল্ট আর সেটার ভয়েই ড্রইং রুমে উথাল-পাতাল ছুটে চলেছে পাভেল।

কেনীথ জানতো পাভেল শেষমেশ তার এপার্টমেন্টেই আসবে। বেশি পালাতে চাইলে আবার সমস্যা। তখন কেনীথের কাছে ধরা পড়লে এমনিতেই ভবলীলা সাঙ্গ! তবে পাভেল এটুকুও বুঝতে পারেনি যে কেনীথের ক্ষো”ভ এমন উথলে উথলে তার উপর ঝড়বে। বলা নেই, কওয়া নেই।বিকেলের দিকে এপার্টমেন্টে ঢুকেই প্রথমে শান্ত সিংহের মতো পাভেলকে খুজেছে। আর পাভেল যখন শান্ত কেনীথকে দেখে ওর সামনের এসে দেখা দিয়েছে ঠিক তখনই কেনীথ তার আসল রুপে ফিরে এসেছে।

বর্তমানে দুজন নিরীহ ইদুর আর জং’লী বিড়ালের মতো পুরো ড্রইং রুমে ছোটাছুটি করছে। একবার পাভেল কেনীথের হাতে ধরা পড়লেই কেল্লাফলে। চারপাশের সবকিছু এলোমেলো হয়ে জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে। পাভেল অনবরত এদিকে ওদিক দৌড়াতে দৌড়াতে বলছে,

—“ব্রো!যাস্ট একবার, একবার শুধু আমার পুরো কথা…

আমার সত্যিই কোনো দোষ…”

—“তুই একটা কথাও বলবি না! সব দোষ তোর। সবকিছু তুই আগে থেকেই জানতি। শুধু আমার সাথে থেকেই আমার সাথে… শ্লা মীরজাফর! তুই থাম বলছি, এখনি থেমে যা। নয়তো তোর অবস্থা আরো খারাপ করবো আমি।
পাভেল সে যত চেষ্টাই করুক না কেনো, এখন পর্যন্ত একবারও সে নিজের কথা শেষ করতে পারেনি।কেনীথ ওর কোনো কথাই শুনতে নারাজ।এরই মাঝে আচমকা তাদের ছোটাছুটিতে বাঁধা হয়ে ড্রইং রুমে প্রবেশ করলো আনায়া। পড়নে ওয়েস্টার্ন ক্লাসিক ড্রেস। সিল্কের চকলেট ব্রাউন কালারের শার্টের সাথে অফ হোয়াইট কালারের প্লাজো প্যান্ট। শার্টটা প্যান্টের সাথে ইন করা,আর শার্টের হাতা কুনুই পর্যন্ত গুটিয়ে রাখা। চুলগুলো সুন্দর করে হালকা কার্ল করা। কিছু চুল সামনের একপাশে ছড়ানো আর বাকিগুলো পিঠে ছড়িয়ে রইছে। গোলাপি ঠোঁটে হালকা চকলেট ব্রাউন কালারের লিপস্টিকের প্রলেপ আর কানে দুটো সোনালী রঙ্গের হালকা দুল ব্যতীত আর তেমন কিছুই নেই। অথচ বুকের মধ্যে হাত গুঁজে একদম বস বেইব ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রইছে।

আনায়াকে দেখা মাত্রই পাভেল দৌড়ে গিয়ে অনেকটা আনায়ার পেছনে এসে দাঁড়ালো। অন্যদিকে পাভেলের দিকে নজর রাখতে গিয়ে কেনীথের নজরে পড়লো বস বেইব ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ঠোঁটের কোণায় রুক্ষ হাসি ঝুলিয়ে রাখা আনায়ার দিকে। ওকে দেখা মাত্রই কেনীথের হিং”স্র ভাবমূর্তিতে খানিকটা পরিবর্তন হয়ে তা গম্ভীর্যে পূর্ণ হিং”স্র”তায় জেগে উঠলো। কেনীথ পাভেলের দিকে উদ্দেশ্য করে হিসহিসিয়ে জোরে জোরে বললো,

“পাভেল!ও এখানে কিভাবে এলো?”

পাভেল তো শুরু থেকেই তব্দা খেয়ে বসে রইছে। কেনীথকে দেওয়ার জন্য তার কাছে কোনো উত্তর নেই। এখানে আনায়ার আসার পারমিশনও গার্ডদের কাছে পাভেলই দিয়ে রেখেছে। বাকি এখন পাভেলকে করা কেনীথের প্রশ্নের উত্তরে আনায়া নিজেই নির্বিকারে বললো,

“দরজা খোলা ছিলো, আমি নিজ পায়ে হেঁটে হেঁটে এসেছি।”

আনায়ার নির্বিকার ভঙ্গিমায় কথাবার্তা শুনে কেনীথের মেজা”জ যেন আরো জ্ব’লে উঠলো। অনেকটাই আগুনে ঘি ঢালার মতো ব্যাপার। পারলে যেন পাভেল আর আনায়া দুজনকেই চি”বিয়ে খায়। কেনীথ এবার অনেকটা চিল্লিয়ে হুশি”য়ারি দিয়ে বললো,

“পাভেল ওকে আমার চোখের সামনের থেকে সরে যেতে বল!আমার মেজাজ আরো বিগড়ে গেলে কিন্তু একটাকেও ছাড়বো না।”

কেনীথ আর আনায়ার মাঝের দূরত্ব বর্তমানে অনেকটাই। কেনীথ সোফার কাছে কাঁচের টি-টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে। অন্যদিকে আনায়া আর পাভেল তার থেকে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে রইছে। আনায়া এবার নির্বিকার ভঙ্গিতে কেনীথের দিকে কয়েক পা এগিয়ে গেলো।তবে পাভেল যাবে না, সুযোগ পেলেই এখান থেকে পালানোর নিয়ত রয়েছে তার। আর এবারও পাভেল কিছু বলার আগেই আনায়া নির্বিকার ভাবে জোর গলায় বললো,

“যাবো না আমি, এখানে আসার সম্পূর্ণ অধিকার রয়েছে আমার।”

আনায়ার কথা শুনে কেনীথ তীব্র রাগের মধ্যেও তাচ্ছিল্যের সাথে কিঞ্চিৎ হাসলো। অতঃপর পুনোরায় চিল্লিয়ে বললো,

“কিসের অধিকার? কোনো অধিকার নেই তোর!”

” ভুলে যেও না, বউ আমি তোমার!”

“জাস্ট শা’ট আপ! আই উইল ফা””ক ইউ, ড্যাম ইট!

“সিওর! কাম অন বেইবি, আ’ম রেডি।”

আনায়ার আগুন ঝড়া তীর্যক চাহনি আর জোর গলায় বলা নির্বিকার এহেন কথায়, এবার কেনীথ আর পাভেল দুজনেই খানিকটা তব্দা খেয়ে গেলো। পাভেলের মনে হচ্ছে না এখানে আর থাকা সম্ভব না। একজন সিংহের মতো গ”র্জন করছে তো অন্যজন নি”রব হায়নার মতো আগুনে ঘি ঢালার কাজ করছে। আর দুজনের কথাবার্তাও এখন লাইন ছাড়া চলে যাচ্ছে।
যদিও পাভেলের সাথে সাথে কেনীথ অবাক আনায়ার এহেন ভাবভঙ্গি দেখে। তবে এসবই যেন তার আগুনের মতো জ্বলতে থাকা মে”জাজের উপর ঘি ঢালার কাজ করছে। আনায়ার এমন নির্বিকারে বেহা”য়াপনা করাটা শুরু থেকেই ওর অসহ্য লাগছে।

এরই মাঝে আনায়ার পেছন থেকে পাভেল কেনীথের দিকে উঁকি দিয়ে ইতস্তত ভাবে বেড়িয়ে এসে তোরজোরের সাথে এলেমেলো ভাবে বলতে লাগলো,

“আমার মনে হয়, আমার এখন যাওয়া উচিত। ভাই তোমরা থাকো আমি…”

কেনীথের রক্ত গরম চাহনি এখন আনায়ার দিকে। অন্যদিকে আনায়াও তার শান্ত ভাবসাব পূর্ন চেহেরায় কেনীথের দিকে তাকিয়ে রইছে। অথচ তার শান্ত চোখজোড়ায় আগুন যেন কেনীথের সম্পূর্ণ রাগের প্রকোপের চেয়েও বেশি। এদিকে কেনীথ আনায়ার দিক থেকে নজর না সরিয়েই পাভেলের কথা শেষ হওয়ার আগেই কেনীথ হুশিয়ারি দিয়ে বললো,

“যেখানেই যাবি একে সাথে করে নিয়ে যা। আর এক মূহুর্তও ওকে আমি আমার সামনে দেখতে চাই না।”

এদিকে আবার পাভেল হ্যাঁ বা না কিছু বলার আগেই আনায়াও কেনীথের দিকে তির্যক দৃষ্টিকোণে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই পাশে থাকা পাভেলের উদ্দেশ্যে নির্বিকার স্বরে বললো,

“দেবর মশাই, আপনি নির্দ্বিধায় যেতে পারেন।আমার যেতে হয়তো একটু দেরী হবে। আমার প্রানপ্রিয় পতি মহাশয়ের সঙ্গে কিছু পারসোনাল কাজ রয়েছে।”

এটুকু বলেই আনায়া কেনীথের দিক থেকে নজর সরিয়ে পেছনে ফিরলো। অতঃপর পাভেলের দিকে মুচকি হাসতেই পাভেল একপ্রকার ছুটে এপার্টমেন্ট থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে কেনীথের উদ্দেশ্যে বললো,

“ভাই একটু রা”গ কন্ট্রোল করে নিও। বউ কিন্তু তোমারই… সা’বধানে!”

—“পাভেল!”

—“ব্রো,এখন আসছি। আগে জান বাঁচানো ফরজ।”

পাভেলকে চিল্লিয়ে ডেকেও কোনো কাজ হলো না। শেষমেষ ও চলে যেতেই কেনীথ সোফার উপর নিজের হাতে থাকা বেল্ট সোফার উপর ছুঁড়ে মে’রে জোরে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

এদিকে আনায়া তীক্ষ্ণ চোখে কেনীথের ভাবগতিক পর্যবেক্ষণ করছিলো। খুব বেশি সময় অতিক্রম হলো না বরং তার আগেই কেনীথ আচমকা কাঁচের টি-টেবিলটা লা”থি মার”তেই সেটা উল্টে নিচে পড়ে ভে”ঙ্গে চু’র”মা’র হয়ে গেলো। এটা দেখে আনায়া ছোট করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কেনীথের দিকে এগিয়ে গেলো।

কেনীথ একপাশ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। কাঁচের কয়েকটা টুকরো কেনীথের পায়ের কাছেও লেগে খানিকটা চামচা কেটে র”ক্ত পড়ছে। এরই মাঝে হঠাৎ আনায়ার সাদা হাই হিলের ঠকঠক আওয়াজে কেনীথ পাশে ফিরে আনায়ার দিকে তাকালো। কেনীথের চোখে মুখে স্পষ্ট ক্ষো”ভের ছাপ পড়ে রইছে। যেন তা পুরো মুখটাই এক আগু”নের কুন্ডলী।

আনায়া কাঁচের উপর দিয়েই হেঁটে নির্বিকার ভাবে কেনীথের মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো। অতঃপর আড়ালে ছোট করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে শান্ত-গম্ভীর কন্ঠে বললো,

“আমায় দেখলে কি শরীর জ্বলে? আমায় দেখে তোমার এতো জ্বালাপোড়া কিসের?”

কেনীথ রা”গান্বিত কন্ঠে বললো,

“কি চাই তোর, তাড়াতাড়ি বলে এখান থেকে বিদায় হ!”

“বলেছি তো, সময় হলে নিজেই চলে যাবো। আপাতত কোথাও যাচ্ছি না আমি। তোমার সাথে আমার কিছু কাজ রয়েছে,রুমে চলো!”

আনায়ার গাম্ভীর্যে পূর্ণ স্বাভাবিক কথাটুকু বলেই কেনীথের বেডরুমে দিকে যাওয়ার জন্য উল্টো ঘুরেছিলো। কিন্তু পেছন থেকে কেনীথ তীব্র কন্ঠে বলে উঠলো,

“কোথাও যাবো না আমি, যা বলার এখানে বলে বিদায় হ!”

আনায়া এবার বুকে হাত গুঁজে থাকা অবস্থাতেই পুনোরায় পেছনে ঘুরে কেনীথের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়ালো। আনায়ার ভাবভঙ্গি ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে যখন তখন উল্টো পাল্টা কিছু একটা করে ফেলবে৷ অনেকটা নি”রব ঘা”তক হায়নার মতো।আনায়া এবার জোর গলায় বলতে থাকলো,

“আমি যেতে বলেছি কিন্তু!”

কেনীথও খানিকটা তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে রাগান্বিত স্বরে বললো,

“যাবো না,কি করবি?মা”রবি আমায়?

কেনীথের কথা শুনে আনায়া তাচ্ছিল্যের সাথে কিঞ্চিৎ হাসলো। কেনীথের আরো কাছে গিয়ে দুহাত উঁচিয়ে কেনীথ কাঁধে আর বুকে হাত বুলিয়ে হুডিটা ঠিকঠাক করে দিতে দিতে বলতে থাকলো,

” ছিহ!তোমায় কি আমি মা”রতে পারি নাকি?ওতো সাহস আছে নাকি আমার? এমন চিন্তা ভাবনা কবে থেকে হলো তোমার?”

এই বলেই আনায়া কেনীথের হাত ধরে উল্টো ঘুরে নিয়ে যেতে নিলেই, কেনীথ আকস্মিক হেঁচকা টানে অন্যহাতের সাহায্যে আনায়ার হাত অনেকটাই মুচড়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে সোফায় ফেলতে চাইলো। কিন্তু ভুলবশত আনায়া সোফায় না গিয়ে সোজা কাঁচের উপর আঁচ”ড়ে পরলো। আনায়া হাতের সাহায্যে নিজেকে ব্যালেন্স করে নিলেও নিমিষেই হাতের তালু আর কুনুই কাঁচের দ”রুন কে”টে গিয়ে অঝোর র”ক্ত ঝড়তে লাগলো।

এদিকে কেনীথ এসব ঠিকভাবে খেয়াল না করেই নির্বিকার ভঙ্গিতে পেছন থেকে বলতে থাকলো,

“তোর সাহস না থাকলেও, আমার রয়েছে। পরবর্তীতে এসব থা”র্ডক্লাস তেজগিরি আমায় দেখাতে আসবি না।”

এই বলেই কেনীথ সেখান থেকে চলে যেতে নিয়েছিলো কিন্তু তা আর হলো না। আনায়া এক মূহুর্তও দেরী না করে কোনো মতে উঠে দাঁড়িয়েই কেনীথকে নিশানা করে সোজা ওর মুখ বরাবর নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে স”জোরে ঘু”ষি মা”রলো। আক”স্মিক ঘটনায় কেনীথ তাল সামলাতে না পেরে সোজা মু”খ থুব”ড়ে সোফায় গিয়ে পড়লো। কেনীথ নিজেকে কোনো মতে সামলে নিজের মুখে হাত দিতেই একগাদা র’ক্তে হাত ভিজে গেলো। নাক আর ঠোঁটের অনেকটাই কেটে যাওয়ার পাশাপাশি থেঁ”তলেও গিয়েছে। এদিকে আবার কেনীথ সোফায় আধশোয়া থেকে বসার আগেই আনায়া নিজের র”ক্তাক্ত হাত দিয়েই কেনীথের হুডি চেপে ধরলো। অতঃপর একটানে শক্ত হাতে কেনীথকে সোজা ভাবে বসিয়ে ও নিজেই কেনীথ উপর চড়ে বসলো। আনায়ার হাভভাব দেখে মনে হচ্ছে ও কেনীথকে আরো দুই তিনটা ঘু*ষি মা*রতে প্রস্তুত। কিন্তু আর তেমন কিছু না করে কেনীথর দুই কাঁধে ধাক্কা দিয়ে সোফার সাথে চেপে ধরলো। কেনীথের মুখের কাছে নিজের মুখ এগিয়ে হিসহিসিয়ে বললো,

“আপনাকে মা*রার সাহস নেই, তবে দশটা খেয়ে একটা দেওয়ার মতো দুঃসাহস রয়েছে আমার।”

—“একটা খেয়েই যে অবস্থা, আমি দশটা দিলে আর এই দুনিয়ায় টিকতে হতো না তোকে!”

—“ওতো ধৈর্য নেই আমার।”

আনায়া খানিকটা ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে অস্থির হয়ে বললো,

“এতো জেদ করছো কেনো বলতো? বলেছি তো কাজ আছে, কাজ শেষ হলে চলে যাবো।”

—“তো আমিও তো বলেছি, যা বলার এখানে বল। তোর সাথে এমন কোনো কাজ নেই যে আলাদা করে রুমে…

এই বলতেই বলতেই কেনীথ আনায়ার পিঠের শার্টের অংশ ধরে টেনে দূরে সরানোর আগেই আনায়া আকস্মিক কেনীথের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো। নিমিষেই আনায়ার সিল্কি চুলগুলো কেনীথ আনায়ার মুখের চতুরপাশে সমানতালে ছড়িয়ে ঢেকে গেলো। বাহির থেকে আর কারো সাধ্য নেই তাদের দুজনের মধ্যে হতে থাকা ওষ্ঠদ্বয়ের সং”ঘর্ষ সহজে দেখার। তবে এটুকু তো বোঝাই যাবে দুজনের মধ্যে চলছেটা কি।

কেনীথ যখন এবার তার তীব্র বিরক্তি আর রাগে আনায়াকে অনেকটা খামচে ধরে ছুঁড়ে ফেলতে উদ্বিগ্ন, ঠিক সেই মূহুর্তেই আনায়া শুধু কেনীথের ঠোঁট থেকে নিজের ঠোঁটটা কিঞ্চিৎ সরিয়ে আনলো। তবে দুরত্বটা অত্যন্তই ক্ষীণ, এতোটাই ক্ষীণ যে দুজনের ওষ্ঠের নরম অংশগুলো এখনো একে অপরের সাথে আলগাভাবে লেগে রইছে।

কেনীথ আনায়াকে এই সুযোগে বিরক্তি নিয়ে সরিয়ে দেওয়ার আগেই আনায়ার কিছু কথা শুনে কেনীথ ক্ষণিকের জন্য থমকে গেলো। আনায়া প্রচন্ড সিরিয়াস মুডে, অত্যন্ত ধীর সুরে ফিসফিস করে অতিদ্রুত বলতে লাগলো,

“এখানে সিসিটিভি রয়েছে। বাহিরের দরজায় পাভেল থাকতে পারে। ভেতরে চলো আর্জেন্ট দরকার রয়েছে।”

আনায়া আর কেনীথের নজর একে অন্যের দিকেই ছিলো। আনায়ার কথা শুনে কেনীথের হাভভাব পরিবর্তন হয়ে কপালে মৃদু ভাজ পড়লো। আনায়া কেনীথের এসব পর্যবেক্ষণ করে নিজের সিরিয়াস ভাবভঙ্গি পরিবর্তন করে কিঞ্চিৎ মুচকি হাসলো। অতঃপর আবারও অপ্রস্তুত কেনীথের ও”ষ্ঠ আঁকড়ে ধরলো। এবার যে শুধু ও”ষ্ঠদ্বয়ের কঠিন সংঘ”র্ষ হলো তা নয়।বরং আনায়া ক্ষণিকরে সময়ের মধ্যেই কেনীথের ঠোঁট পুরো কামড়ে ক্ষত বানিয়েই সোজা কেনীথের কাছ থেকে সরে এলো। কেনীথ ব্যাথায় কিঞ্চিৎ শব্দ করলেও আনায়ার দিকে র*ক্ত গরম চোখে তাকালো।কেনীথ বিরক্তি নিয়ে ঠোঁটে হাত দিতেই র”ক্তের সাথে সাথে চকলেট ব্রাউন কালারের খানিকটা লিপস্টিকও হাতে উঠে এলো।

কেনীথ নিজের ভেজা ঠোঁটটা বিরক্তির সাথে হাতের উল্টো পিঠের তালু দিয়ে ঘষেই পাশে থুথু ফেলে আনায়ার দিকে আগুন ঝরা চোখে তির্যক দৃষ্টিতে তাকালো। তখনই কেনীথের সামনে নির্বিকার দাঁড়িয়ে মুচকি হাসতে থাকা আনায়া বলতে লাগলো,

—“হ্যাপি বার্থ ডে মাই জান, প্রাণ, কলিজা, ফুসফুস, সুইটহার্ট!

অনেক বছর আগে ঠিক এভাবেই তুমি আমায় বার্থ ডে উইশ করে নিজের পতিধর্ম পালন করেছিলে। আমিও আজ আমার জামাইয়ের জন্মদিনে সেইম স্টাইলে উইশ করে ইস্ত্রী ধর্ম পালন করলাম। ব্যাপারটা সুন্দর না?”

কেনীথ যেন আনায়ার কথায় খানিকটা তব্দা খেয়ে গিয়েছে। তার জন্মদিনের হদিশ তো কারোরই জানার কথা না। সে নিজেও হয়তো নিজের জন্মদিনের কথা ভুলে গিয়েছে সেই কত বছর হলো। কেনীথ নিজের বাবা মা হারানোর পর কখনোই আর নিজের জন্মদিনকে বিশেষ কিংবা আলাদা ভাবে বিবেচনা করেনি। অভ্যাসগত কারণে সবার সাথে সাথে এটি সে নিজেও ভুলতে বসেছে। এদিকে কেনীথের হাবভাব দেখে আনায়া রুক্ষ হেসে বললো,

“এতো অবাক হওয়ার কিছু নেই। এইটুকু বিষয় না জানলে, তোমার কিসের বউ আমি! এখন দয়া করে একটু রুমে এসো,কিছু কথা রয়েছে।বেশি সময় নেই হাতে।”

কেনীথের থেকে আর কোনো উত্তর কিংবা প্রতিক্রিয়ার আশা না করেই আনায়া উল্টো ঘুরে সামনের দিকে নির্বিকারে এগোতে লাগলো। এদিকে কেনীথের ঠোঁটে এখনো খানিকটা লিপস্টিক লেগে থাকায় কেনীথ সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আরো কয়েকবার প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে ঠোঁট ঘষামাজা করতে করতে কয়েকবার থুতু ফেললো।

—“ইয়াক থু!”

ওর এহেন কাজকর্ম আনায়া পেছনে ঘুরে না তাকিয়েই,শুধু আন্দাজ করে মুচকি হাসলো। অতঃপর খানিকটা তাচ্ছিল্যের সাথে পেছনে না তাকিয়েই সামনে এগোতে এগোতে বলতে লাগলো,

“আমার আমিষ প্রিয় জামাই যে আদতে একটা নিরামিষ, তা বুঝতে পারিনি। বলছি কি, অভ্যাস করে নিও পিও। তাহলে আর এভাবে ঢং করে নাক ছিটকাতে হবে না!
তুমি চাইলে অবশ্য কালার-ফ্লেভার তোমার পছন্দ মতো চেঞ্জ করতে পারি। ব্র্যান্ডের লিপস্টিক;চকলেট পছন্দ না হলে ভ্যানিলা, স্ট্রবেরি, অরেঞ্জ, চেরী, বেরি,কফি, রোজ, ক্যারামেল…যা তুমি চাও!”

কেনীথ আনায়ার কথাগুলো শুধু পেছন থেকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে শুনলো। অতঃপর প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে চোখমুখ বিগড়ে বিড়বিড় করে আওড়ালো,

” বে”হায়া একটা!”

যদিও এটা আনায়া শুনতেই পুনোরায় তাচ্ছিল্যের সাথে মুচকি হাসলো।

______________

দুজনে রুমে প্রবশে করতেই কেনীথ গিয়ে সোফায় গা এলিয়ে বসে পড়লো। অন্যদিকে আনায়া গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে লক করে এলো। আনায়াকে দেখে কেনীথ কিছু বলার আগেই আনায়া কেনীথের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো,

“ফাস্টএইড বক্স কি এই রুমে আছে নাকি অন্য কোথায়?”

কেনীথ প্রথমে বিরক্তির সাথে আনায়ার সিরিয়াস হাভভাব দেখে কাবার্ডের দিকে ইশারা করতেই আনায়া দৃঢ় পায়ে হেঁটে কাবার্ড থেকে ফাস্টএইড বক্সটা নিয়ে এলো। অতঃপর কেনীথের পাশে বসতেই তুলোয় খানিকটা এন্টিসেপটিক দ্রবণ লাগিয়ে কেনীথের উদ্দেশ্যে বললো,

“এদিকে ঘুরে বসো!”

কেনীথ হুডির পকেটে হাত গুঁজে সামনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আনায়ার কথা শুনে একবার পাশে ফিরে ওকে দেখে নিয়ে পুনোরায় সামনের দিকে মুখ করে বললো,

“এসবের প্রয়োজন নেই!তোর কি কাজ রয়েছে তাড়াতাড়ি বল।”

আনায়া কেনীথের কথায় পাত্তা দিলো না। কেনীথের দিকে খানিকটা এগিয়ে বসে একহাতে কেনীথের গালটা চেপে নিজের দিকে ফেরালো। কেনীথ রাগি চোখে তাকালেও আনায়া তাতে পাত্তা না দিয়ে আন্টিসেপটিকে ভেজানো তুলো সোজা কেনীথের ঠোঁটে চেপে ধরলো। ক্ষ*ত জায়গায় এন্টিসেপটিক যেন ঝাঁঝালোর ন্যায় জ্বলাপোড়া করছে। তবে কেনীথ সবকিছুই নিজের রা’গের আড়ালে চেপে যাচ্ছে। কাঁ”টা ঠোঁট আর ফেটে যাওয়া নাকের আশেপাশে এখনো র’ক্ত লেগে রইছে।

আনায়া একে একে পুরো মুখের সব ক্ষ”ত আর র”ক্ত গুলো পরিষ্কার করে দিতেই কেনীথের গাল ছেড়ে দিলো। কেনীথ পুনোরায় পাশে ফিরতে নিলে আনায়া গম্ভীর কন্ঠে বললো,

“পা দেও!”

কেনীথ ওর কথাকে গ্রাহ্য করলো না। বরং উল্টো নিজেই মেমাজ দেখিয়ে বললো,

“পায়ে কিছু হয়নি আমার!”

কেনীথের কথা শেষ করতে করতেই আনায়া লাঠি দিয়ে সামনে থাকা টি-টেবিলেটাকে খানিকটা দূরে সরিয়ে দিলো। অতঃপর এক মূহুর্তও দেরী না করে কেনীথের ডান পায়ের প্যান্টের নিচের অংশ টেনে ধরে নিজের কোলের উপর তুললো। কেনীথ পা সরিয়ে নিতে ধরলে আনায়া নির্বিকার হেসে বলতে লাগলো,

“ভাবছি একবার আমার প্রাণপ্রিয় হলেও হতে পারতো জামাইয়ের সাথে দেখা করতে যাবো। তোমার কি মত,যাওয়া উচিত আমার?”

কেনীথ আনায়ার কথা শুনে খানিকটা কপাল কুঁচকে ফেলে কি যেন ভাবতে বসলো। এদিকে আনায়া মনে মনে মুচকি হেসে কেনীথের পায়ের র’ক্ত গুলো ভালো ভাবে পরিস্কার করে ব্যান্ডেজ লাগাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কেনীথ কিছু বলছে না দেখে আনায়া কেনীথের দিকে তাকিয়ে সিরিয়াস ভ”ঙ্গিতে বললো,

“তোমার সতীনকে ভুলে গিয়েছো?আমি রেহানের কথা বলেছি। আমার হলেও হতে পারতো জামাই,রেহান!

কেনীথ আনায়া কথা শুনে ওর দিকে কটমট দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। অতঃপর একটুও দেরী না করে এক ঝটকায় আনায়ার কোল থেকে পা টা সরিয়ে নিলো। এদিকে আনায়া মুচকি হেসে বললো,

“কোথাও জ্বলছে?আগে ঔষধ লাগতে হবে নাকি বরফ?”

কেনীথ একটা কথাও বললো না। গম্ভীর্যের সাথে চুপচাপ হুডিতে হাত গুঁজে সামনের দিকে মুখ করে তাকিয়ে রইলো।এদিকে এরই মাঝে আনায়া নিজের হাতের অনেকটাই কা”টা জায়গাটা এন্টিসেপটিকে তুলো ভিজিয়ে এমন ভাবে ঘষামাজা করলো যে পাশে বসে থেকে আড় চোখে দেখতে থাকা কেনীথেরও গলা শুকিয়ে ঢোক গিলতে হলো। তার কাছে মনে হচ্ছে আনায়া নিজের হাতের উপর যুদ্ধ চালাচ্ছে। একটু ধীরেসুস্থে করলে মনেহয় দুনিয়াটাই গায়েব হয়ে যাবো। কেনীথ খানিকটা বিরক্তও হলো। অবশ্য শুরু থেকে আনায়ার সব কাজকর্মতেই ও বিরক্ত।

এদিকে আনায়া নিজের হাতে ব্যান্ডেজ প্যাচাতে প্যাচাতে বলতে লাগলো,

“তুমি এতো ক্যারে’ক্টার লেস হলে কি করে?”

আনায়ার অকপটে বলা কথা শুনে কেনীথ আনায়ার দিকে খানিকটা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। এদিকে আনায়ার ব্যন্ডেজ বাঁধা শেষ। সেও যথারীতি কেনীথের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বলতে লাগলো,

“তাকিয়ে রইছো কেনো?ভুল বলেছি কি আমি?গত কয়েক বছরে সাইত্রিশ জন নতুন নতুন মেয়ে গিয়েছে তোমার কাছে। গতকাল আমি না গিয়ে ইরা গেলে আটত্রিশ নম্বরটা ইরাই হতো। একে তো ইরা তোমার শা”লী হয়, আবার ওকে ছোট বোনও ভাবো। আবার সুন্দর মতো প্লান করে রাত কাটানোর চিন্তাও করেছো! এরপরও বলতে তুমি সাধুপুরুষ?”

কেনীথ আনায়ার তির্যক কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনলো। অতঃপর গা ছাড়া ভাবে তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,

“এতো কিছু জেনেছিস যখন এটা জানিস নি যে ওই সাইত্রিশ জন মেয়ের সাথে কি করা হয়েছে?”

আনায়া কেনীথের কথা আর ভাবভঙ্গিতে খানিকটা থমকে গেলো। তবুও চোখমুখ শক্ত করে নিরেট কন্ঠে বললো,

“মানে? কি বলতে চাইছো? ওদেরকে ডেকে এনে কি, তুমি নিজের হাত পা টিপিয়েছো?

কেনীথ খানিকটা বিরক্ত হলো। তবুও নির্বিকারে খানিকটা হাই তুলে বললো,

” নাহ! উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি।”

#চলব

#একজোড়া_আগুন_পাখি
®অরনীতা_তুশ্মি(#তুশকন্যা)

পর্ব→৩৬(৩য় অংশ)

“এতো কিছু জেনেছিস যখন এটা জানিস নি যে ওই সাইত্রিশ জন মেয়ের কি করা হয়েছে?”

আনায়া কেনীথের কথা আর ভাবভঙ্গিতে খানিকটা থমকে গেলো। তবুও চোখমুখ শক্ত করে নিরেট কন্ঠে বললো,

“মানে? কি বলতে চাইছো? ওদেরকে দিয়ে কি তুমি নিজের হাত পা টিপিয়েছো?

কেনীথ খানিকটা বিরক্ত হলো। তবুও নির্বিকারে খানিকটা হাই তুলে বললো,

” নাহ! উপরে পাঠিয়ে দিয়েছি।”

এবার আনায়ার চোখেমুখে খানিকটা বিস্ময়ের ছাপ পড়লো। কেনীথ ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো৷

“রাশিয়ায় বসে বসে এসব খবর নিতেন নাকি? আপনাদের ওই প্রাণের চ্যালা পাভেল মহাশয়, এসব বলেনি?”

আনায়া কেনীথের দিকে শুধু তাকিয়ে রইলো। তবে কিছু বললো না। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর পুনোরায় কেনীথের উদ্দেশ্যে বললো,

“তার মানে ইনায়াকে মা”রতেই কি…?

আনায়ার কথা শেষ হবার আগেই কেনীথ তাচ্ছিল্যের সাথে বিস্তৃত হাসতে হাসতে বললো,

“তোর-আমার বোন ওরফে আমার গুনধর শালিকা ইরারানী, ইনায়া কিংবা সবশেষে সা”ইকো কি”লার ইনা! ও তোর আমার চেয়ে বহুগুণ এগিয়ে নিজের খেলা খেলছে। তার জীবনের উদ্দেশ্য এখন একটাই, আমাকে শে”ষ করা।”

কেনীথের কথায় আনায়া খানিকটা থমকে গেলো। সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললো,

“যা বলার ঠিক ভাবে বলো। ও কোথায়? আর সাই’কো কি’লার মানে কি বোঝাতে চাইছো? ইনায়া কোথায়?”

—” জানি না।”

—“জানি না মানে কি?সাত বছর আগে শেষবারও তোমার কাছ থেকে আমি এর যথাযথ উত্তর পাইনি। আজও সেই কথা,তুমি জানো না। তবে পাভেলকে কেনো বলেছিলে ইনায়াকে রিসোর্টে আনতে।”

আনায়া কড়া কথায় কেনীথ কিঞ্চিৎ মুচকি হেসে আবারও বলতে লাগলো,

“কিচ্ছু জানিস না? আমার খোঁজ খবর না নিলেও অন্ত্যত তোর নিজের বোনের খোঁজ তো ঠিকঠাক নিতেই পারতি!”

আনায়া খানিকটা গম্ভীর্যের সাথে বললো,

“জানি তো আমি অনেক কিছুই, আবার কোনো কিছুই না। সবকিছুই যে ধোঁয়াশা! সেই ধোঁয়াশা পরিষ্কার করতেই তো আমার এখানে আসা।”

আনায়ার কথা শুনে কেনীথ খানিকটা কপাল কুঁচকে আনায়াকে দেখলো। অতঃপর কিঞ্চিৎ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“ওকে ধরে আনার সাধ্য আমার হয়নি। এমনকি ওর সঠিক খোঁজটাও আমি জানতে পারিনি। কিন্তু গত কয়েকবছরে আমার উপর অসংখ্যবার নানান এ”ক্সিডেন্ট আর কিংবা সাজানো-গোছানো প্লান করে মা’রার চেষ্টা করা হয়েছে। যার পেছনে কোনো না কোনো ভাবেই ইনার নামটা উঠে এসেছে। প্রথম প্রথম বিষয়টা এমন ছিলো যে আমি বাড়ি থেকে বের হওয়া মানেই কিছু একটা আমার সাথে ঘটবে।
এরপর একবার এক পার্টিতে অতিরিক্ত ড্রিংকস্ করে ফেলেছিলাম। তখন একটা মেয়ে আমায় সিডিউস করার চেষ্টা করে আলাদা রুমে নিয়ে যায়। এবং আমায় ছুড়ি দিয়ে মা” রার চেষ্টা করে।

আমি যতই ড্রিংকস করি না কেনো, আমাকে পুরোপুরি সিডিউস করার সাধ্য কারো নেই।এটুকু এবিলিটি রয়েছে আমার। যথারীতি মেয়েটাকে আমার হাতেই শেষ হতে হয়। অবশ্য ওকে তখনই আমি মে’রে ফেলিনি। বরং আলাদা ভাবে পার্টি থেকে ওকে ঐ বাড়িতে নেওয়া হয়।এরপর অনেক জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়েছিলো। শেষমেশ শুধু একটা নাম পরিচয় উঠে এসেছে তা হলো ইনা।

এরপর আমিই প্লান করে অনেকবার পাভেলকে বলে এমন রুমডেটের ব্যবস্থা করেছিলাম। বিশ্বাস কর!তোর বোন একটা চান্সও হাতছাড়া করেনি। গুনে গুনে বাকি ছয়ত্রিশটা মেয়েই ওর পাঠানো লোক ছিলো। প্রত্যেকবারই আমার মা*রার চেষ্টা,কখনো ছু”রির আঘাত, কখনো ড্রিংকস্ এ বি”ষ মিশিয়ে,কখনো আবার আমার গ”লা চেপে। আর ওদের থেকে জিজ্ঞেস সেই একটা নামই বেরিয়ে আসতো, তা হলো ইনা। অবশ্য ও যাদের পাঠিয়েছিলো,তারা কেউই সাধারণ কোনো মেয়ে ছিলো না। এরা নিত্যান্তই সব এক্সপার্ট ছিলো। যাই বলিস না কেনো, ইরা কিন্তু প্রচুর কষ্ট করে যাচ্ছে।”

—“আর তুমি সবাইকে শেষ করে ফেলেছো?”

—“হুম! তো কি করবো। অবশ্য মেয়েগুলো দেখতে সুন্দর ছিলো। ডেট করলে করাই যেত!”

আনায়া কিঞ্চিৎ চোখ ছোট ছোট করে কেনীথের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। কেনীথও বিষয়টা হেসে উড়িয়ে দিলো।
—“এক মিনিট তুমি তবে এতো সিওর হয়ে কিভাবে বলছো যে ইনাই হলো ইরা? ওরা তো শুধু ইনার কথা বলেছিলো।”

কেনীথ আনায়ার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো,

“আমি যদি ভুল না হই তবে তুই অনেক কিছুই জানিস।তবে…”

—“বলেছি তো আমি অনেক কিছুই জানি তবে হয়তো কোনো কিছুই না। কনফিউশান অনেক রয়েছে, আগে হিসেব মিলিয়ে ওসব ক্লিয়ার করতে হবে। যাই হোক,যেটা জানতে চেয়েছি তা বলো। তুমি কিভাবে নিশ্চিত যে ইনাই ইরা!”

—“তোর বা”পকে কিভাবে মে’রেছি’লাম মনে রয়েছে তো?”

আনায়া খানিকটা গম্ভীর স্বরে উত্তর দিলো,

—“হুম!”

কেনীথ তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,

“যাক মনে আছে তবে। তো ঘটনা হলো আমার উপর দুই-তিনবার এ্যা”টাক হওয়ার পরপরই আমার কাছে একটা অসাধারণ গিফট আসে। একটা চিঠি আর একটা ডিভিডি। ডিভিডিটা ছিলো মূলত তোর বাপকে মা” রার পুরো ভিডিও ফুটেজটা। যেটা আমি তোকে দেখানোর জন্য ভিডিও করেছিলাম। আর চিঠিতে স্পষ্ট হাতে লেখা ছিলো,

“আমার বাবাকে তুমি যেভাবে মে’রেছো আমিও তোমাকে ঠিক সেভাবেই শেষ করতে চাই ভিকে!তুমি আমার বোনকে শেষ করেছো, আমার পুরো পরিবার ধ্বং”স করেছো। তুমি প্রস্তুত থেকো ভিকে, এই ইনায়া তোমায় কখনো ক্ষমা করবে না।”

এরপরও আর কি বলার আছে। অবশ্য আমারও জীবন নিয়ে ওতো ইন্টারেস্ট নেই। একমাত্র শা”লী নয়তো বউয়ের হাতে ম”রলে, বিষয়টা খুব বেশি খারাপ হবে না মনে হয়।”

কেনীথ হাই তুলতে তুলতে সোফায় গা এলিয়ে দিলো। এদিকে আনায়া খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শোনার পর বললো,

“ইরার কাছে কি করে ওই ভিডিওটা পৌঁছালো?”

এটা শোনা মাত্রই কেনীথের চোখমুখের ভাবভঙ্গি পরিবর্তন হলো। প্র”চন্ড রাগ নিয়ে বলতে লাগলো,

“ওটা তোর ওই গাধাকে জিজ্ঞেস কর!”

আনায়া কপাল কুঁচকে বললো,

“কার কথা বলছো?”

—“আপনার দেবর মশাই!”

—“পাভেল দিয়েছে ইরাকে। মানে পাভেল জানে ইরা কোথায়…”

—“নাহ!বিষয়টা তা নয়। ইরা আমাদের হাতের নাগালে নেই। ও বড় কোনো গেমারের হাতে পড়েছে৷ যেখান থেকে ও খুব সহজেই নিজের প্লান গুলো সাজিয়ে খেলতে পারছে।
আর পাভেলের বিষয়টা হলো…আমার সবকিছুর ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব সবসময় ওর কাছেই ছিলো। আর ওই ভিডিওর ফুটেজটাও যাস্ট একটা কপিই থাকার কথা ছিলো। কিন্তু পাভেল আমাকে কিছু না জানিয়েই ওই ফুটেজটাও আলাদা করে আমার সব ইনফরমেশনের সাথে এড করে রেখে দিয়েছিলো। যেটা ঘটনা ঘটার পর পাভেল স্বীকার করে এন্ড ওর ধারণা ফুটেজটা কেউ হ্যাক করেই সরিয়ে নিয়েছিলো। এছাড়া অবশ্য আর কোনো অপশনও নেই।”

আনায়া জোরে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। মনের মধ্যে আরো অনেক প্রশ্ন জমে রইছে। তবে এসবের কূলকিনারাটা কোথায় তাই বুঝতে পারছে না। আনায়া আবারও বললো,

“তার মানে তোমরা কেউ জানো না ইনায়া কোথায় তাই তো?”

কেনীথ নির্বিকারে উত্তর দিলো,

—“হুম!”

—“কাউকে কি সন্দেহ হয়, যে কিনা ইরাকে হেল্প করছে!”

কেনীথ কিছুক্ষণ ভেবে বললো,

“নাহ, তেমন কেউ সন্দেহের তালিকায় থাকলে ইনার খোঁজ পাওয়াই যেত।”

দুজনের মধ্যেই পিনপতন নীরবতা। আনায়া অনেককিছুই ভাবতে বসে গিয়েছে। কিন্তু কোনাটারই তাল খুঁজে পাচ্ছে না। তবে হুট করেই কেনীথের উদ্দেশ্যে বললো,

“তবে, সকাল বেলা কেনো ঘুম থেকে উঠেই তুমি ইরার নাম নিলে? মানে চাইলিছে,যেন ওখানে ওই অবস্থায় আমার জায়গায় ইরা থাকে?”

কেনীথ এবার খানিকটা বিরক্তি নিয়ে বললো,

“হেই, কি শুরু করেছিস তুই!কাজের কথা… ”

—“উত্তর দেও আমার।”

—“এ্যাই, খবরদার,তোর এই তেজ অন্তত আমায় দেখাতে আসবি না। আর এটা তো আমার তোদের জিজ্ঞেস করার কথা। ইনাকে যে পাভেল কখনোই রিসোর্টে আনতে পারতো না তা তো আমার জানা কথা। যে কাজ গত সাত বছরে করতে পারেনি সেটা কিনা ও এক বেলায় করবে, এমন অমূল্য পদার্থ পাভেল নয়।

আর আমার নিজের প্রতিও যথেষ্ঠ কনফিডেন্স রয়েছে। অন্তত নেশা করে কারো সাথে…সত্যি করে বলতো! তোরা আমার ড্রিংস এ কিছু মিশিয়ে ছিলি, তাই না! আর আমি যখন রুমে গিয়েছিলাম তখন কেউ ছিলো না।কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখি তুই আমি…অথচ আমার রাতের কিছুই মনে নেই।

আমাকে কি গাধা পেয়ছিস?এখন আবার আমাকেই ব্লেইম করছিস।”

—“আরেহ ব্লেইম কখন করলাম। শুধু জিজ্ঞেস করেছি তুমি ইরাকে কেনো সরি বলছিলে।”

কেনীথ খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলতে লাগলো,

“তুইও জানিস, আমি ওকে বোনের মতো মানি। আর ঘুম থেকে উঠে মাথা কাজ করছিলো না। সবকিছু গুলিয়ে ফেলেছিলাম।আর ভেবেছি ওটা…ইরা হয়তো। মানে… পাভেল হয়তো সত্যি সত্যিই…।”

কেনীথ এটুকু ইতস্ততভাবে বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এদিকে আনায়া কেনীথের দিকে তির্যক চাহনিতে তাকিয়ে ছিলো। তবে আনায়া কিছু বলার আগেই হুট করে কেনীথ বললো,

“কিন্তু তুই আমায় এটা বল যে, তোরা কেনো গতকাল রাতে আমার সাথে এমনটা করলি। ইচ্ছে তো করছে তোদের দুজনকে ধরে মে”রে কুঁ”চিকুঁ’চি করে কা”টাতে।”

আনায়া ভ্রু কুঁচকে বললো,

“কি করেছি?”

—“কি করেছিস মানে! একটানা সাত বছর স্টিল ভার্জিন ছিলাম আমি। যেটা তুই একরাতে শেষ করে দিয়েছিস৷”

কেনীথ কথাটা খুব গর্বের সাথে বলতেই আনায়া চোখমুখ কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে বললো,

—“জীবনে একবার আকাম-কুকাম করার পর, সে আবার ভার্জিন থাকে কি করে? যাই হোক,যা করছো আমার সাথেই করেছো, নিজের বউয়ের সাথেই করেছো। এতো হা-হুতাশের কিছু নেই।

আর সাত বছর তোমাকে একা ছেড়ে দিয়েই সমস্যাটা হয়েছে। আমার সাথে একবার ডাক্তারের কাছে যাবে।চেক-আপ করাতে হবে।”

—“আমি একদম ঠিক আছি। সামান্য হাত পা কেটে যাওয়াতে ডাক্তার কে দেখাতে যাবে?”

—“হাত পায়ের জন্য না। তোমার মাথায় যে সমস্যা তা আমার জানা। ওটা আর না ঠিক করলেও চলবে। তবে দেখতে হবে তোমার সিস্টেমে কোনো গড়বড় রয়েছে কিনা। একবার ভালোমতো চেক-আপ করা প্রয়োজন।”

—“থা”প্পড়ে গাল ফাটিয়ে দেবো৷ বেহা’য়াপনা ছেড়ে কাজের কথা বল, অ’সভ্য!”

কেনীথ আনায়ার কথা প্রথমে বুঝতে পারেনি। তবে বোঝা মাত্রই মেজাজটা পুরো বিগড়ে গিয়েছে। আনায়ার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে কড়া কন্ঠে বললো। তবে কেনীথের কথায় আনায়ার পাত্তা না দিয়ে নির্বিকারে বললো,

“ভুল বলিনি মনে হয়। যাই হোক,কাজের কথায় আসি।”

এই বলেই আনায়া হঠাৎ তার দুহাত পেছনের দিকে উঁচিয়ে ঘাড়ের শার্টের কলারের ভেতরে ভেতর দিয়ে হাত ঢোকানোর চেষ্টা করলো। এটা যেন কেনীথ বিরক্তি নিয়ে দেখেও না দেখার ভান করলো। এদিকে আনায়া কয়েকবার চেষ্টা করার পর কেনীথের দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বললো,

“তাকিয়ে রইছো কেনো, সাহায্য করো!”

কেনীথ কিছুটা তব্দা খেয়ে গেলো। কিসের সাহায্য করতে বলছে বুঝে উঠতে পারলো না। এদিকে আনায়া ত্বরিত কেনীথের দিকে পিঠ দিয়ে ঘুরে বসলো। অতঃপর অকপটে বললো,

“রুমে সিসিটিভি নেই তো?”

কেনীথ পেছন থেকেই অপ্রস্তুত হয়ে উত্তর দিলো,

“নাহ!”

“তাড়াতাড়ি পেছন থেকে শার্টের ভেতরে হাত দেও!”
আনায়ার কথায় কেনীথ কপাল কুঁচকে বললো,

“হেই কি চাচ্ছিস তুই? এসব ফা”লতু কাজ আমি করতে পারবো না।”

আনায়া বিরক্ত হয়ে আর কিছু বললো না। বরং কেনীথের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে থাকার পর আবার সোজা হয়ে বসলো। অতঃপর আচমকাই নিজের শার্টের বোতাম খুলতে বসলো। এটা দেখা মাত্রই কেনীথ আকস্মিক তব্দা খেয়ে গেলো। আনায়ার শার্ট খোলায় এমন তোরজোর দেখে কেনীথ দ্রুত খাবলা দিয়ে ওর হাত টেনে চেপে ধরলো। কিঞ্চিৎ ঢোক গিয়ে কড়া কন্ঠে বললো,

“অ”সভ্য!, বে’হায়া!, নির্ল”জ্জ! এসব তোর জরুরি কাজ? এতো নির্ল”জ্জ কবে হয়েছিস? আসার পর থেকে তোর এই বেহা”য়াপনা সহ্য করছি। আরেকবার এসব করতে দেখলে মে’রে থা”প্পড়ে সোজা ত”ক্তা বানিয়ে দেবো।”

কেনীথের কথায় আনায়া ওর দিকে বিরক্তি নিয়ে প্রচন্ড তাকালো।অতঃপর শার্টের প্রথম খোলা দুটো বাটন লাগিয়ে কেনীথের দিকে ঘুরে বসে বলতে লাগলো,

“সেকেন্ড সেকেন্ড তোমার এতো সাধুগিরি আমার সহ্য হচ্ছে না।”

—“আর তোর বেহা”য়াগিরি আমার সহ্য হচ্ছে না।”

—“কথাবার্তা ঠিক মতো বলো। বারবার কিসের বেহায়া বলছো আমায়? আমি কোনো পরপুরুষের সামনে রয়েছি নাকি? যা করার সব নিজের জামাইয়ের সাথে করছি। আর এসব ড্রেস তো এখন মোটামুটি সবাই পড়ে। আমি পড়লে তোমার এতো কোথায় জ্বলছে?এসব তোমার জেলাসি নয়তো?”

আনায়া কথাগুলো ভ্রু উঁচিয়ে শেষ করতেই কেনীথ স্পষ্ট ভাবে বলতে লাগলো,

“খোসাযুক্ত ফলমূল মানুষ খোসা ছাড়িয়ে খায়। যদি বিক্রেতা মনে করে খোসা ছাড়িয়ে বিক্রি করলে মানুষের শ্রম কমবে এবং ফলের দাম বাড়বে, তবে সেটা তার ভুল ধারনা। খোসাহীন ফল দ্রুত নষ্ট হয়ে মূল্যহীন হয়ে পড়ে। নারীর শালীনতাও ঠিক এমন—শালীনতার আচ্ছাদনে নারী সবচেয়ে সুন্দর ও মূল্যবান। কিন্তু যখনই শালীনতা ত্যাগ করে সমাজে নিজের মূল্য বাড়ানোর চেষ্টা করে, তখনই সে তার প্রকৃত মর্যাদা হারায়। তেমনটা তোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ।”

আনায়া কেনীথের কথা মনোযোগ দিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে হাসলো।

“তুমি কবে থেকে এসব সমাজের ধার ধারতে শুরু করেছো। সোসাইটি ম্যাটার করে ব্রো,সরি হাব্বি!”

কেনীথ কিছুই বললো না। বিরক্তি নিয়ে চুপচাপ রইলো। এদিকে আনায়া কেনীথের হাভভাব দেখে আবারও তাচ্ছিল্য করে বললো,

“আমার মহাপণ্ডিত আওলিয়া পীর কেনীথ বাবাজি সাহেব!তোমার মুখে আর যাই হোক, এসব হাদিস মানায় না আমার কলিজা!”
—“যা ভাবার ভাবতে পারিস। তবে সারাবেলা তোর মুখে তুই আমার বউ, এই নাম করে বেহায়াপনা করবি তা দেখতে চাই না আমি।”

—“হেই! বাচ্চাকাল থেকে বউ আমি তোমার।জোর করে এক বাচ্চার মা পর্যন্ত বানিয়েছো। এরপরও তোমার এসব ঢং সাজে?”

যদিও বাচ্চার কথাটা বলতে গিয়ে অদ্ভুত এক অনুভূতিতে গলা শুকিয়ে আসছিলো আনায়ার। তবে আনায়া কথাটা অন্ত্যত স্পষ্ট ভাবে বললো। এদিকে কেনীথ চুপচাপ রইলো। আনায়াও কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর দৃঢ় কন্ঠে পুনোরায় বললো,

“আচ্ছা সত্যি করে বলো তো, কেউ কি আছে? অন্য কাউকে ভালোবাসো কিংবা…বিয়েও করে নিয়েছো।যদি এমন কিছু না হয় তবে এই আমিতে এতো কিসের সমস্যা তোমার? অতিরিক্ত কথাবার্তা চালচলন পছন্দ হচ্ছে না?আর বেহায়া যে বলছো আমি তো অন্যকোথাও গিয়ে বেহা”য়াপনা করছি না।নিজের জামাইয়ের সাথে এসব করলে ওটাকে বেহা”য়াপনা বলে না।”

—“এই সবসময় এই বউ বউ করবি না তো। কিসের বউ। তুই যে আমার বউ এটার কোনো প্রমাণ আছে? তোর বাপে কোন আমলে নাকি বিয়ে দিয়েছিলো, এই যা! বিয়ের কোনো প্রমাণ থাকলে তবেই বউগিরি দেখাতে আসবি।”

এবার আনায়ার চোখমুখ বেজায় শক্ত হলো। রা”গে ঠোঁট কামড়ে ধরলো। শক্ত হলো দুহাতের মুঠো। কেনীথ আনায়ার দুজনের মাঝে দুরত্ব বেশি নয়।যে কারণে আনায়া কেনীথের দিকে ঝুকে খানিকটা হিসহিসিয়ে বললো,

“আ’লতু-ফা’লতু কথা বলে মেজাজ খারাপ করবে না আমার! আরেকবার এসব কথা বললে খু”ন করে জা’ন হাতে তু’লে জা’হান্নামে পাঠাবো।সমস্যা নেই, সাথে আমিও যাবো।যদি একবার দেখেছি ওখানেও কোনো তিড়িংবিড়িং করেছো তবে…আহ! কিসব বলছি। নিজের সাথে সাথে আমার মাথাটাও শেষ করে দিয়েছো।”

কেনীথকে আর কোনো কিছুর বলার সুযোগ না দিয়ে আনায়া পুনোরায় কেনীথের দিকে পিঠ দিয়ে বললো। অতঃপর দীর্ঘশ্বার ফেলে খানিকটা ধীর সুরেই বললো,

“পিঠে হাত দিয়ে দেখো শার্টে ভেতরে একটা কিছু কাগজ রয়েছে।”

আনায়ার কথা শুনে কেনীথ খানিকটা কপাল কুঁচকে ফেললো।আনায়া আবারও কড়া কন্ঠে বললো,

“তাড়াতাড়ি, বের করো।”

কেনীথ আর দেরী না করে আনায়া ঘাড়ের পেছন থেকে কলারের ভেতর হাত দিয়ে শার্টের খানিকটা নিচে হাত প্রবেশ করাতেই কিছু কাগজের চিকন ঘামের মাথার অংশটা পেলো। যেটা কিনা আনায়ার ইনারের ভেতরে গুঁজে রাখা ছিলো। কেনীথ আচমকাই ঢোক গিললো। তবে ত্বরিত জিনিসটাকে বের করে আনায়ার দিকে এগিয়ে দিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরালো। এদিকে আনায়া পেছনে ঘুরে কেনীথকে দেখতেই ওর চোখমুখ কুঁচকে গেলো। বিরক্তির সাথে বলতে লাগলো,

“বুঝে গিয়েছি, তোমাকে ডক্টর দেখাতেই হবে।”

এটা শুনে কেনীথ অন্যদিকে থেকে আনায়ার দিকে গরম চোখে তাকাতেই আনায়া তাচ্ছিল্য করে বললো,

“আমার দিকে ভাবে না তাকিয়ে ওটা খুলে দেখো।”

কেনীথ আর কিচ্ছু বললো না।যথারীতি আনায়ার কথা মতো কাগজের ভাজটা খুলতে লাগলো। কেনীথ ভেবেছিলো এটা কোনো খাম হবে পরে খেয়াল করে দেখলো এটা যাস্ট কয়েকটা কাগজ খাম আকৃতির ভাজ করা। তবে কাজগুলো খুলে ভালো করে দেখতেই কেনীথের চোখেমুখে গাম্ভীর্যের ছাপ পড়লো। কপালও অনেকটাই কুঁচকে গেলো।

এদিকে আনায়া সিরিয়াস ভঙ্গিতে কেনীথের উদ্দেশ্যে বললো,

“আন্ডারওয়ার্ল্ডের সেরা মাফিয়া খ্যাত আর্তেম দিমিত্রি। অর্থাৎ তোমার নানা কিংবা আমার নানা শ্বশুর।তার ওয়াইফ এবং বর্তমান আন্ডারওয়ার্ল্ডের আরেক সেরা মাফিয়া লেডি লুসিয়া বেঁচে থাকার পরও, তিনি তার পুরো প্রোপার্টিস,অ্যাসেটস, পাওয়ার, এভ্রিথিং তোমার নামে করে দিয়ে গিয়েছেন। তাও পস্টহিউমাস ট্রান্সফার অব ওউনারশিপ এগ্রিমেন্টে।

যেটা কিনা উনি মা”রা যাবার অনেক বছর আগেই করেছেন, যখন তুমি নিজেও অনেক ছোট।কিন্তু কথা হলো, এখনো তুমি সেসবের ওউনারশিপ নও। কেননা তিনি তার এগ্রিমেন্টে নিদিষ্ট করে সময়টাও উল্লেখ করে গিয়েছেন। আর্তেম দিমিত্রির সত্তর বছর অর্থাৎ আজ থেকে ঠিক আরো সাত বছর পর তোমার জন্মদিনেই তুমি এসবকিছুর মালিক হবে।

আর সবচেয়ে সুন্দর বিষয়টা কি জানো? আজ থেকে সাত বছর পর যদি তুমি সেই সবকিছুর ওউনারশিপ হওয়ার পরও সেসব অন্যকাউকে নিজ হাতে হস্তান্তর না করো তবে কারো সাধ্য নেই এই বিশাল সাম্রাজ্য অন্য কারো নেওয়ার। এবং এই সাত বছরের মধ্যে যদি কোনো ভাবে তোমার কিছু হয় কিংবা তুমি মা’রা যাও তবে তোমার সঙ্গে সঙ্গে আর্তেম খ্যাত পুরো মাফিয়া সাম্রাজ্য ধ্বং”স হয়ে যাবে।”

আনায়ার কথাগুলো কেনীথ খুব মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। সে সঙ্গে পেপারস্ গুলোও মনোযোগ দিয়ে দেখছি। এতোসব কিছু দেখে কেনীথ নিজেই যেন এক বিস্ময়ের জগতে প্রবেশ করলো। এসবের মানেই কি আর আনায়া বোঝাতেই বা চাইছে কি। কেনীথ কপাল কুঁচকে অস্ফুটস্বরে বললো,

“তুই কি বোঝাতে চাইছিস? ঠিকভাবে বল, আর এসব তুই কিভাবে পেয়েছিস। এতসব কিভাবে জেনেছিস? কই, আমি তো এসব কখনোই জানতাম না।”

আনায়া কিঞ্চিৎ রুক্ষ হাসিতে মুচকি হাসলো। মাথাটা হ্যাং হয়ে গিয়েছে। কতসব প্যাচ মিলিয়ে যেন এক জগাখিচুড়ি তৈরি হয়েছে।

—“মিস্টার কেনীথ!এক বড়সড় গেইম খেলা হচ্ছে। আমার প্রাণপ্রিয় নানী শ্বাশুড়ি লুসিয়াকে রেখে আমার নানা শ্বশুর;যে কিনা বেঁচে থাকতেই তার সবকিছু তোমার নামে করে দিয়ে গিয়েছেন। তাও কিনা তুমি অনেক ছোট থাকতেই। আবার তোমার কিছু হলেই সেই পুরো সা”ম্রাজ্যই ধ্বং”স হয়ে যাবে।এতবড় একটা ডিসিশন নিশ্চিয় তার মতো লোক এমনি এমনি নেয়নি।

ওহ হ্যাঁ,পুরোটা বললেও ভুল হবে।খুব অল্প হলেও খুব কিছুটা অংশ কিন্তু রোজের নামেও রয়েছে। তবে সেটা শুধু প্যালেস আর তথাকথিত সামান্য কিছু পাওয়ারের জন্য প্রযোজ্য।যেটাও কিনা আজ থেকে ঠিক সাত বছর পরেই গিয়ে কার্যকর হবে।”

—“এসব না হয় বুঝলাম। কিন্তু তুই বারবার বাবুশকার কথা বলে কি বোঝাতে চাইছিস?তার উপর তুই কিসের… ”

আনায়া তাচ্ছিল্যের সাথে কিঞ্চিৎ হাসলো। অতঃপর চোখমুখ গম্ভীর করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কাটকাট করে বলতে লাগলো,

“হিসেবটা অনেক গড়মিল। কোনো কিছুরই সঠিক কোনো ক্লু নেই। আমার এসবে কোনো সমস্যা ছিলো না। সত্যি বলছি, তোমাদের পাপের সাম্রাজ্যে মিশে যেতে আমার কোনো আফসোস ছিলো না। জীবন তো আমার অনেক আগেই শেষ।

মিসেস লুসিয়ার হয়ে গত সাত বছর ধরে একটানা কাজ করে এসেছি। সবই পাপের খেলা। নিজ হাতে নি’র্দোষ কিংবা দো’ষী ৫৭৩ টা প্রা’ণ নিয়েছি।শুধু জানতাম আমি পাপের খেলায় ডুবে গিয়েছি। শুধু আমি একাই ডুবেছি।

আমার আফসোস ছিলো না। না কিছু হারানোর আর না কিছু পাওয়ার। ভেবেছিলাম এবার হয়তো সবাই ভালো থাকবে। কিন্তু আফসোস… আমার নিষ্পাপ বোনকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। আমি জানি না, ও কোথায়। এতো বছর যখন আমি ওর খোঁজ-খবর জানতে চেয়েছি তখনই আমায় বলা হয়েছে ও একদম ভালো রয়েছে। ও এদকম ঠিক রয়েছে।আমি যেন এসবের চিন্তা না করি। আমিও বিশ্বাস করে নিয়েছি। কিন্তু আমি জানি আমার বোন ঠিক নেই। ওকে প্রতিনিয়ত আমার চেয়েও খারাপ ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এমনকি এতোবছরে মিসেস লুসিয়াস এতো সব কঠোর ব্যবস্থার মাঝে আমি ছিলাম বাহিরের দুনিয়া থেকে প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। আমাকে যা দেখানো হতো তা যেনো ছিলো নিত্যন্তই সাজানো-গোছানো মিথ্যে।আমার প্রতিটা পদক্ষেপ ছিলো বাবুশকার ইচ্ছে অনুযায়ী। আর তুমি জানো?আজ আমি তোমার সামনে রয়েছি শুধুমাত্র এই কারণেই যে, আমি তাদের জানিয়েছি যে এবার তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চাই। নয়তো এখানে আসার অনুমতিও পেতাম না আমি।”

কেনীথ বিস্ময়ে কিছু বলতে পারছে না।চোখেমুখে অবাধ নিস্তবতা। এতসব গড়মিল কি করে হলো৷ এরই মাঝে আনায়ার চোখের কোণায় কিঞ্চিৎ জল এসে ভির করেছে। আনায়ার সে-সবে পাত্তা দেওয়ার সুযোগ নেই। সে আগুন ঝড়া চোখে বলতে লাগলো,

“আমি তোমায় একটা কথা পরিষ্কার করে বলছি। তুমি কিংবা তোমার পরিবারের জন্য যদি আমার আর কোনো প্রিয়জনের ক্ষ”তি কিংবা হারাতে হয় তবে আমি আমার এই ব্যার্থ জীবনের সবটুকু দিয়ে হলেও সবকিছু ধ্বং’স করে ছাড়বো।

আই রিপিট, আই উইল ডে”স্ট্রয় এভরিথিং।আনায়াকে তো তুমি নিজ হাতে শেষ করেছো। তাই নিজের জীবনের পরোয়া আর আনায়া করে না। এখন তুমি নিজ চোখের সামনে যাকে দেখছো, এটা অ্যানা! অ্যানা তাইসিয়া;যাকে ভুলবশত হলেও, তোমার বাবুশকা নিজ হাতে বানিয়েছে সবকিছু ধ্বং”স করার জন্য।”

চলবে….

#একজোড়া_আগুন_পাখি
®অরনীতা তুশ্মি (#তুশকন্যা)
পর্ব→৩৬(৪র্থ অংশ)

গত সাত বছর আগে ঘটে যাওয়া রহস্যে ঘেরা সেই কালরাত্রি। যে রাতেই কেনীথের জীবন থেকে আনায়ার অস্তিত্ব নিমিষেই ফুরিয়ে গিয়েছিলো। কেনীথ জেনেছিলো তার আনায়াকে এই রাতেই কয়েকটা মানুষরূপী জা”নোয়ার ছিঁ”ড়েখুঁ”ড়ে খেয়ে শেষ করে ফেলেছিলো। অর্ধেক শরীর পর্যন্ত পুড়ি”য়ে দেওয়া হয়েছিলো। বারবার নিশ্চিত হতে ডিএনএ টেস্ট করেও রিপোর্ট একটাই এসেছিলো। তা হলো সেই পুড়ে যাওয়া লা”শটা আনায়ারই।

কেনীথ শুরুতে বিশ্বাস করতে পারেনি।কোনোভাবেই সে এসব বিশ্বাস করতে পারেনি। কিন্তু শেষমেশ তার মস্তিষ্ক মন সব মেনে নিয়েছে যে আনায়া আর পৃথিবীতে নেই। সে তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে। অথচ সাত বছর পর আজ এক ঝাঁক বিস্ময়ের সাথে আনায়া আবারও ফিরে এসেছে।

এইসব কিছুই যেন ছিলো এক অপ্রত্যাশিত সাজানো-গোছানো পরিকল্পনা।তবে শুরুতে আনায়ার নিজস্ব কোনো পরিকল্পনা ছিলো না এতে। শুরুটা হয় সেদিন রাতে আনায়া যখন ওই বখাটে খারা”প লোকেদের মুখোমুখি হয়। সেসব নিত্যান্তই আনায়ার কাছে অপ্রকাশিত এক পরিস্থিতি ছিলো। তবে সেজন্য তার নিজস্ব কোনো ক্ষতি হয়নি। বরং তার নিজের হাতেই সে রাতে দুজনের প্রাণ হারাতে হয়।

পাঁচ জন মানুষ রুপী জা”নোয়ারের মাঝে হসপিটাল ড্রেস পড়া এক একাকী মেয়ে। নিত্যান্তই সেসব জা”নোয়ারদের মাঝে মেয়েটিকে ছিড়েখুঁ”ড়ে খাওয়ার এক অসীম নেশা জাগ্রত হয়েছে।

আনায়ার কাছে লোকগুলো এগিয়ে গেলেই কিছু মূহুর্তের জন্য আনায়া নিজের জীবনের পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছিলো। ভেবেছিলো এই পৃথিবীতে অন্তত তার থাকার আর কোনো প্রয়োজন নেই। সে এখন সবার জন্য অ”ভিশাপ হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকের জীবন তার জন্য ধ্বং”স হয়ে গিয়েছে। আর সবকিছুর উৎস হিসেবে সে নিজেকেই দোষারোপ করছিলো।

যথারীতি লোকগুলো তার কাছে এগিয়ে আসা পর্যন্তও সে একদম নিস্তব্ধ ছিলো। পাগলের মতো নিজের জীবনকে তাচ্ছিল্য করে হাসতে ব্যস্থ ছিলো সে। কিন্তু লোকগুলো তার কাছে চলে এলেই তার সিদ্ধান্ত নিমিষেই বদলে যায়। লোকগুলোর মাঝে একজনের হাতে কাঁচের বোতল সাথে নিয়েই আনায়ার দিকে হেলতে দুলতে এসে আনায়ার কাঁধে হাত দিয়ে ওর কানের কাছে ফিসফিস করে কিছু কথা বললো। যেসব শোনা মাত্রই আনায়া ত্বরিত লোকটির দিকে শক্ত চোখে তাকালো।

লোকটি ওর এহেন চাহনিতে দাঁত কেলিয়ে হাসতে ব্যস্থ হয়ে পড়লো। সেই লোকটির সাথে সাথে বাকি চারজনও অট্টহাসিতে মেতে উঠলো। এদিকে আনায়া আচমকা এদের হাসির মাঝেই তার পাশে থাকা লোকটির মুখে সজোরে ঘু”ষি মারলো। যার ফলে মাতাল লোকটির ছিটকে খানিকটা দূরে সরে গেলো। সঙ্গে তার হাত থেকে কাঁচের মদের বড় বোতলটা পড়ে গিয়ে ভেঙ্গে দু টুকরো হয়ে গেলো।

এদিকে পড়ে যাওয়া লোকটি সহ বাকি চারজনও আনায়ার কাজে ক্ষে”পে গিয়ে ওর দিকে রাগান্বিত হয়ে এগিয়ে আসতে নিলে আনায়া দ্রুত নিচ থেকে কাঁচের চোখা একটা অংশ তুলে নিলো। এরপর তার পাশে থাকা হ্যাংলা পাতলা লোকটির পেট বরাবর সো”জা ঢুকিয়ে দিলো।

আনায়ার চোখ-মুখ হতে আচমকাই যেন আগুন ঝড়ছে। মন মস্তিষ্ক এখন এটাই বলছে,”তোর জীবন এমনিতেই শেষ হয়ে গিয়েছে আনায়া। এবার নিজের আর নতুন করে বাঁচার চিন্তা বাদ।শুরু এই জানো”য়ারগুলো শেষ করতে হবে।”

এরই মাঝে আনায়া কাঁচের বোতলটা টেনে পেট থেকে বের করে নিয়ে এলো। আনায়ার শরীর, হাত সহ চারপাশ র”ক্তে ছড়াছড়ি। এরই মাঝে সেই চারজন লোকের মাঝে একজন এসে আনায়ার মাথার পেছনে আরেকটা কাঁচের বোতল দিয়ে সজোরে বারি মা”রলো। নিমিষেই যেন আনায়ার সর্বস্ব দুনিয়া ঘুরে গেলো। নিশ্বাসের গতি কমে গেলো। মাথা ঘুরে পড়ে নিতে নিয়েও আবারও শক্ত হলো। হুট করেই পুনোরায় হিং”স্র হয়ে উঠে লোকটির চুল টেনে হিঁচড়ে কাঁধে হাতে কা”মড়ে রাস্তায় ফেলে দিলো। তবুও আনায়া লোকটিকে ছাড়ছে না। এই পর্যায়ে আনায়াকে সম্পূর্ণ বিধস্ত এক ধ্বং”’সকারী মনে হচ্ছিলো। আনায়া আকস্মিক লোকটির উপর চড়ে বসলো। অতঃপর লোকটির মাথা ধরে রাস্তায় মধ্যে আঁচড়াতে লাগলো। এটি বেশি সুবিধার মনে হলো না তার। আচমকাই পাশ থেকে মাঝারি আকারের একটা পাথর তুলে এনে আবারও লোকটিকে মুখে অনবরত মা”রতে লাগলো। লোকটি চিৎকার করলো, মুখ থেঁতলে গিয়ে র”ক্ত বের হলো তবুও আনায়া থামলো না। সম্পূর্ণ উম্মাদে পরিণত হয়েছে সে। মানুষ হ”ত্যার উম্মাদ সে এখন।

এদিকে আবার সেই কখন থেকে বাকি দুজন লোক তাকে অনবরত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। বারবার আনায়াকে থামাতে চাইছে কিন্তু পারছে। এই দুজন অবশ্য একটু বেশিই মাতাল হয়ে গিয়েছে। যে কারণে দুজনে মিলেও আনায়াকে সরাতে পারছে না। অন্যদিকে আরেকজন গিয়েছিলো আনায়ার প্রথম আ”ঘাত করা লোকটির কাছে। সে এখন অনেকটাই অচেতন হয়ে পড়েছে। এদিকে আবার আনায়া এই লোকটিকে প্রায় মে”রেই ফেলছে দেখে সেই লোকটি ছুটে আনায়াকে থামাতে এলো। আনায়ার চুল ধরে টেনে হিঁচ”ড়ে সেই লোকটির পেটের উপর হতে আনায়াকে সরিয়ে আনলো।

এই পর্যায়ে লোকটি আনায়ার সাথে খা”রাপ কিছু করার জন্য উদ্বেগ হলো। আনায়াকে শুয়েই সে লোকটিই গিয়ে ওর উপর চড়ে বসলো। আনায়া হাত পা ছোটাছুটি করছিলো দেখে স্বাস্থ্যবান পুরুষটি আনায়ার হাত দুটো চেপে ধরে আনায়ার দিকে মুখ এগিয়ে নিলো।

এদিকে আনায়ার চোখমুখ অত্যন্ত নিরেট। চোখমুখে নেই কোনো ভয় কিংবা আ”তংক। ও যেন কোনো যুদ্ধের ময়দানে নেমেছে। লোকটি আনায়ার মুখের কাছে আনতেই আনায়া সজোরে মাটি থেকে মাথা তুলে লোকটির মুখ বরাবর আ”ঘাত করলো। আকস্মিক আঘাতে লোকটির নাক ফেটে র’ক্ত গড়ালেও লোকটি যেন এতে আরো হিং””স্র হয়ে উঠলো। আনায়ার হাত দুটো চেপে ধরলো আরো জোরে। কিন্তু আনায়া তবুও ভয় পাচ্ছে না। ওর আসলে বাঁচা-ম”রার কোনো ভয়ই নেই। না কোনো জানো”য়ারের কাছে নিজের স”তিত্ব হারানোর। আনায়ার কাছে সেই সময় কেনীথ আর এই লোকগুলো যেন একই ছিলো। ও বুঝতেও পারছিলো না যে তার মানসিক পরিস্থিতি ঠিক কোন পর্যায়ে চলে গিয়েছে।

আনায়া এবারও নিজের সর্বস্ব শক্তি প্রয়োগ করে মাটি থেকে খানিকটা ওঠার চেষ্টা করেই লোকটির কাঁধে সজোরে কামড়ে ধরলো। লোকটি আনায়ার হাত ছেড়ে দিয়ে আনায়ার চুপ পেছন থেকে টেনে ধরে ওকে সরাতে চাইলো কিন্তু আনায়া যেন ছাড়ছেই না। লোকটি একটা পর্যায়ে ব্যাথায় চেঁচাতে লাগলো কিন্তু আনায়া যেন এসব কিছুই কানে নিচ্ছে না। ওদিকে বাকি দুই মাতাল এখন আনায়াকেই ভয় পাচ্ছে। সবকিছু ছেড়ে হুট করেই দুজন জঙ্গলের ভেতরের দিকে পালাতে লাগলো।

এদিকে লোকটির কাঁধের মাংস উঠে গিয়ে রক্ত গড়িয়ে আনায়ার সম্পূর্ণ মুখে দাঁতে লেগে গিয়েছে। তবুও আনায়ার শান্ত হওয়ার নাম নেই। এরই মাঝে আনায়া অনুভব করলো হুট করেই লোকটি কেন অদ্ভুত ভাবে শব্দ করে কেঁপে উঠলো। আনায়া কাধঁ থেকে মুখ সরাতেই দেখলো লোকটি অদ্ভুত ভাবে তার দিকে একপলক তাকিয়ে। বড়বড় চোখ যেন এ মূহুর্তেই তার দেহ থেকে প্রাণটা কেউ তুলে নিয়েছে। লোকটি নিমিষেই আনায়ার উপর ভর ছেড়ে দিতেই লোকটি মুখ থুবড়ে আনায়ার কাঁধের একপাশে গিয়ে পড়লো। আর সেই মূহুর্তেই আনায়ার চোখের সামনের এক অপ্রত্যাশিত মানবের মুখ দৃশ্যমান হলো।

কালো রংএর হুডি আর প্যান্ট পড়া। মাথায় একঝাঁক কোঁকড়ানো চুল। চোখে-মুখে গাম্ভীর্যের স্পষ্ট ছাপ। হাতে থাকা বন্ধুকটা আনায়ার উপর পড়ে থাকা লোকটির দিকে তাক করা। আনায়ার এই অর্ধ অন্ধকার পরিবেশেও এই মানবটিকে চিনতে আর বাকি নেই। এই মুহূর্তে পাভেলকে সে হয়তো আশা করেনি।

এরই মাঝে পাভেল এসে আনায়ার উপর থেকে টেনেটুনে লোকটি সরিয়ে দিলো। অতঃপর হাঁটুগেড়ে আনায়ার পাশে বসে আনায়াকে দু’হাতে আলতো হাতে বসালো। আনায়া বসে পাশে পড়ে থাকা লোকটিকে খেয়াল করে দেখলো লোকটির পিঠে গুলির দুটো নিশানা। আনায়া ঘুরে পাভেলের দিকে তাকালো।একবার ওর হাতে থাকা বন্দুকটাও দেখলো। মনে হলো হয়তো বন্দুকে সাইলেন্সার লাগানো। নয়তো গুলি করার শব্দ সে ঠিকই শুনতে পেতো। পাভেলকে নিয়ে আনায়ার চোখে-মুখের বিস্ময়তা কেটে গিয়েছে। পুনোরায় চোখ-মুখ কঠোর হয়েছে।

এদিকে পাভেলের নিরেট গম্ভীর্যে আচ্ছন্ন চেহেরা গায়েব হয়ে গিয়ে একদম নরম হলো। হুট করেই কেমন যেন ইনোসেন্ট হয়ে পড়লো। অতঃপর তড়িঘড়ি করে আনায়ার উদ্দেশ্যে বললো,

“আপনি ঠিক আছেন তো? ওরা আপনার কিছু করেনি তো?”

আনায়া মাথা নাড়িয়ে না সূচক সম্মতি দিলো। পাভেল আবারও অস্থির হয়ে বললো,

“এখানে কি করে এসেছেন। কখন এসেছেন, হসপিটাল থেকে বের হওয়া মানা ছিলো আপনার। আপনি পুরোপুরি ঠিক নন”

আনায়া পাভেলের দিকেই তাকিয়ে ছিলো। হুট করে ওর একথা শুনে তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,

“পুরোপুরি ঠিক নই? আরো ঠিক হওয়ার কিছু রয়েছে? আমি তো জানি আমি সবটাই ভুল। আমার জীবনটাই তো ভুল।”

পাভেলের বুঝতে বাকি নেই আনায়া সত্যিই আর ঠিকঠাক নেই। ওর কথায় কিছুক্ষণ চুপচাপ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকার পর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“ওদের এই অবস্থা কি করে হয়েছে। এখানে তো আপনি ছাড়া…আরো কেউ এসেছিলো কি?”

—“কেউ আসেনি,আমিই করেছি।”

আনায়ার এহেন নির্বিকার কথা শুনে পাভেল থমকে গেলো। আনায়া এসব করছে মানে। কেনো যেন ওর এহেন অবস্থা তার বিশ্বাস হচ্ছে না। কিছুটা বিস্ময়ের সাথে বললো,

“আপনি? ”

আনায়া কিঞ্চিৎ রুক্ষ হাসিতে মুচকি হেসে বললো,

“কেনো করতে পারি না? আমি কি অনেক ভালো? সবাই তো আমায় কষ্ট দেয়। আমি কি তবে কাউকে কষ্ট দিতে পারবো না? আমিও কষ্ট দিতে চাই। মানুষকে কষ্ট দিয়ে তার সর্বস্বকে নিঃস্ব করতে চাই। আমি কি এমনটা করতে পারবো না?”

পাভেল আনায়ার দিকে অপলক তাকিয়ে ওর কথা গুলো শুনলো। আনায়া নিজের মধ্যে নেই। এমনিতেই ওর মানসিক পরিস্থিতিটা খুব বেশি ভালো ছিলো না আর তার মধ্যে আজকের এই ঘটনা! পাভেল ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,

“উঠে আসুন, যেতে হবে।”

—“কোথায় নিয়ে যাবেন? আবার ওই জা”নোয়ারটার কাছে?”

আনায়ার নির্বিকার কথায় পাভেল আবারও থমকে গেলো।

—“মানে কার কথা… কেনীথ ব্রো এর কথা বলছেন।”

আনায়া নির্বিকারে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো,

“হুম।”

—“এমনটা কেনো বলছেন। আমি জানি উনি ভুল করেছেন কিন্তু…”

পাভেলের কথা শেষ হওয়ার আগেই আনায়া আবারও বললো,

“আপনি আপনার হাতের গানটা দিয়ে আমায় মে’রে ফেলুন।তাহলেই সব সমস্যা শেষ হয়ে যাবে।তবুও আর আমায় ওই লোকটার কাছে নিয়ে যাবেন না। ওনার মুখটাও দেখতে চাইনা আর আমি৷”

পাভেল আনায়ার ছলছল চোখ আর তাচ্ছিল্যে ভরা হাসিমাখা মুখটার দিকে কিছুক্ষণ অপলক তাকিয়ে রইলো। ঠোঁট চেপে কিছু একটা ভাবার পর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

“ঠিক আছে, আপনাকে আর বসের কাছে যেতে হবে না। এবার আপনাকে অন্য একটা জায়গায় যেতে হবে।”

—“কোথায়?”

—“রাশিয়া।”

আনায়া খানিকটা কপাল কুঁচকে ফেললো। যা দেখে পাভেল ইতস্ততভাবে বললো,

“চিন্তা করবেন না। এখানের সব কিছু আমি সামলে নেবো। আজকের পর আপনি যতদিন না চাইবেন ততদিন পর্যন্ত আপনাকে সবাই মৃত হিসেবে জানবে। আর রাশিয়াতে কেনীথ ব্রো এর বাবুশকা মানে নানী থাকেন। উনিই আপনার সব দেখভাল করবে না। আপনি রাজি কি না… ”

—“উনিও জানবেন না যে আমি রাশিয়ায়?”

পাভেল অকপটে বললো,

“নাহ! আপনি না চাইলে, বস কিচ্ছু জানবে না”

আনায়াও ছোট করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললো,

“ঠিক আছে, আমার যেতে কোনো অসুবিধা নেই। শুধু আমার বোনটা যেন ঠিকঠাক থাকে। আর কিছু চাই না আমি। কে বাঁচল, কে মরলো তাতে আর কিছু যায় আসে না আমার। আর হ্যাঁ,আরেকটা রিকুয়েষ্ট রাখবেন?”

পাভেল ইতস্ততভাবে বললো,

“জ্বী বলুন!”

আনায়া খানিকটা তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বলতে লাগলো,

“এই পৃথিবীতে রেহান নামের একজন রয়েছে। যে কিনা আনায়া নামক অভি”শাপের জন্য নিজেকে প্রতিনিয়ত শেষ করছে। যদি সম্ভব হয় তবে তাকেও জানিয়ে দিবেন, তার আনায়া আর নেই। সে যেন তার বউপাখির স্মৃতির ইতি এখানেই ঘটিয়ে নেয়। আজ থেকে আনায়া নামক অভি”শা’পের সমাপ্তি এখানেই ঘটলো।”

____________

কেনীথের কাছে আনায়া সেদিনের ঘটনাটা মোটামুটি এভাবেই ব্যাখা করলো। এরপর পাভেল আনায়াকে পাঠিয়ে দেয় রাশিয়ায়। আর এদিকে সে একটা সুন্দর পরিকল্পনা সাজিয়ে নেয়। সে রাতের মধ্যেই তার লোকজন সহ কিছু নিজস্ব পুলিশকেও সেই জায়গায় ডেকে আনা হয়। সঙ্গে মর্গ থেকে জোগাড় করে আনা হয় আনায়ার মতো শারিরীক গঠনের একটি মেয়েও। অতঃপর সেই মেয়েটির দেহটাকে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে আনায়ার হাতে অলরেডি দুজনের প্রাণ চলে গিয়েছে। তারা দুজন বেশিক্ষণ বাঁচতে পারেনি। পাভেল সে লা”শ দুটোকেও সরিয়ে দেয়। সাথে তার নিজের হাতে প্রাণ নেওয়া লোকটিরও। এছাড়া জঙ্গল থেকে খুঁজে, পালিয়ে যাওয়া সে দুজনকেও সেই রাতের মধ্যেই বের করে প্রাণ নিয়ে নেওয়া হয়।

পাভেল আনায়ার খোঁজেই সে রাতে যখন জঙ্গলের রাস্তায় চলে আসে তখন সে নিজ চোখেই দুজন লোককে জঙ্গলের দিকে পালাতে দেখেছিলো। যথারীতি তারা দুজনও বাঁচতে পারেনি।

আর এইসব বিষয় গুলো খানিকটা গোপনেই ধামাচাপা দেওয়া হয়। মিডিয়াতেও এই নিয়ে তেমন কোনো সোরগোল পড়তে দেওয়া হয় না। আর কেনীথের কাছে সুন্দর ভাবে বর্ননা করা আনায়ার নৃ””শংস মৃ”ত্যুর ঘটনা। কেনীথকে তিন চারবার দেখানো নতুন ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট কিংবা তাকে বলা গল্পের সবকিছুই ছিলো সাজানো। এমনকি কেনীথ যেন কিছু বুঝতে না পারে সেজন্য আলাদা ভাবে এই কাজে পুলিশকেও যুক্ত করা হয়। যেন কেনীথ তাদেরকে কিছু জিজ্ঞেস করলেও উত্তর একটাই আসে যে আনায়া আর নেই।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে গিয়েছে। শীতের সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হতে বেশি দেরী নেই। কেনীথ চুপচাপ মাথা নিচু করে এসব ঘটনা শুনে যাচ্ছিলো। তার হাতের কনুই দুটো হাঁটুতে ঠুকে রাখায় তা এখন শুন্যে ঝুলছে। আনায়ার কথা শেষ হতেই আনায়া জোরে শব্দ করে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে সোফায় হেলান দিয়ে দুহাত দুদিকে এলিয়ে দিলো। পায়ের উপর পা তুলে তা অনবরত নাড়াতে লাগলো। আনায়ার নির্বিকার হাভভাব, ঠোঁটে বিস্তৃত মুচকি হাসি৷ কেনীথ কিছু বলছে না দেখে আনায়া নির্বিকারে জিজ্ঞেস করলো,

“কি হলো? ছ্যাকা খাওয়ার গল্প শুনে ব্যাকা হয়ে গেলে। এখন তো দেখছি সোজাও হচ্ছো না।”

কেনীথ আনায়ার কথা শুনে তাচ্ছিল্যের সাথে কিঞ্চিৎ হাসলো। অতঃপর ঝুকিয়ে রাখা মাথাটা তুলে আনায়ার দিকে তাকিয়ে বললো,

“সত্যিই একটা জানোয়ার আমি, তাই না?”

আনায়াও রুক্ষ হেঁসে বললো,

“হয়তো, আবার না। মানে দেখতে মানুষের মতো, কিন্তু ভেতরটা জানো”য়ারের মতো।”

কেনীথ আবারও তাচ্ছিল্যের সাথে হেঁসে সোজা হয়ে বসলো। আনায়া আবারও বললো,

“এতো হা হুতাশের কিছু নেই। আমিও এক সময় ভেতর বাহিরে সব মিলিয়ে মানুষই ছিলাম। এরপর তুমি নিজ হাতে আমায় শেষ করলে আর আমিও তোমার মতো মানুষরূপী জানো”য়ার হয়ে গেলাম।

এখন দুজনই সমান সমান। আমারও আর কোনো জানো”য়ারের সংসার করতেও আর কোনো সমস্যা নেই। সবকিছুই এবার ঝাক্কাস হবে।”

কেনীথ অমায়িক বিস্তৃত হেসে পুনোরায় গম্ভীর্যের সাথে বললো,

“তুই বলিসনি যে এই কাগজগুলো তুই কোথায় পেলি? আর এগুলো দেখে তো মনে হচ্ছে এগুলো কপি পেপার্ এন্ড সম্পূর্ণও নয়। আরো কিছু অংশ থাকার কথা এখানে।”

“ঠিক ধরেছো,এটা সম্পূর্ণ নয়। তবে এটা আমি কোথায় পেয়েছি তা বলবো না। ধরে নেও, বাবুশকার কোনো সাজানো গোছানো কারসাজি থেকে গোপনে পেয়েছি।”

আনায়ার হাসিখুশি মুখ দেখে কেনীথ কপাল কুঁচকে ফেললো। আনায়া ঠিক কি চাচ্ছে সেটা তার কাছে পরিষ্কার নয়।

“আমার যদি ভুল না হয় তবে তোর এখানে আসার সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হয়তো ইনায়াকে খুঁজে বের করা। তবে তোর উদ্দেশ্যের সমাপ্তি এখানে হলে ভালোই হতো কিন্তু আমার মনে হয় না তুই এখানেই থেমে থাকবি। একটু ক্লিয়ার করে বলতো তুই কি চাচ্ছিস?”

আনায়া হুট করেই মাথা সোফা থেকে হেলিয়ে কেনীথ কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।পায়ের উপর পা তুলে নাচাতে থাকলো। আনায়া নির্বিকারে চোখ বুঁজে বললো,

“মাথা ধরেছে, টিপে দেও তো!”

কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও আনায়া কেনীথের কোনো প্রতিক্রিয়া অনুভব করতে না পেরে চোখ খুললো। খুলতেই কেনীথের ভ্রু উঁচিয়ে থাকা বিরক্তিমাখা গম্ভীর মুখটা দৃশ্যমান হলো। কেনীথ ওর দিকেই তীক্ষ্ণ নজরে চেয়ে রইছে। আনায়া পুনোরায় মুচকি হেসে বললো,

“বউয়ে মাথা টিপে দিলে জাত যাবে বুঝি?”

—“আমি আমার উত্তর পায়নি।”

—“উত্তর পেলে পত্নীসেবা করবে?”

—“শুধু পত্নী কেনো, তুই ম”রার পর পেত্নী হলে তারও সেবা করতে রাজি আমি। ফালতু কথা না বলে যা জানতে চাইছি তা বল। আমি বিরক্ত হচ্ছি। তোর কথা এখনো অসম্পূর্ণ।”

—“আপনার বিরক্তিতে তো আমার কিছু আসে যায় না।”

কেনীথের চোখেমুখে স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ। আর সহ্য করা যাচ্ছে না। ত্বরিত আনায়ার মাথাটা টেনে উঁচিয়ে বসাতে চাইলে আনায়া কেনীথের ঘাড়ের পেছনে দু-হাত দিয়ে চেপে টেনে ধরে উল্টো কেনীথের মুখটা নিজের কাছে নিয়ে এলো। অতঃপর বিস্তৃত বাঁকা হেঁসে ফিসফিস করে বললো,

“চাই তো আমি অনেক কিছুই কিন্তু এক্সাক্ট কি চাই আমি? ওহ,ধ্বং’স! ধ্বং’স চাই আমি।”

এই বলেই আনায়া অমায়িক হেসে টুপ করে কেনীথের নাকের ডগায় ঠোঁট ছুঁইয়েই কেনীথকে ছেড়ে দিয়ে সোজা উঠে দাঁড়ালো। অতঃপর পানি ভর্তি জগের মধ্যে কাগজগুলো ডুবিয়ে সেগুলো একটা কাঠি দিয়ে নেড়েচেড়ে গুলিয়ে ফেলতে লাগলো। এদিকে কেনীথ ওর কাজকর্মে বেশি একটা অবাক হলো না। ও আনায়ার দিকে তাকিয়ে অকপটে বললো,

“এই পেপারস্ এর আসল কপিটা কোথায় আনায়া?”

আনায়া বেডসাইড টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে নিজ কাজে ব্যস্থ ছিলো। কেনীথের কথা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে নির্বিকারে হেঁসে বললো,

“বলতে চাইছি না, আবার হয়তো আমি জানি না।”

—“তুই কি পাভেলকে কোনো ভাবে সন্দেহ করিস? নয়তো তুই এসব কথা ওর সামনেও তো বলতে পারতি। পাভেল তো এখন পর্যন্ত তোর সব কাজে যুক্ত ছিলো।”

আনায়া আবারও মুচকিে হেঁসে বললো,

“উনি মানুষটা অদ্ভুত। মনে হয়, ভুলবশত আমার মতো উনি নিজেও ফেঁসে গিয়ে অন্ধকার দুনিয়ায় প্রবেশ করছে। এছাড়া তার আরো এক মহা গুন কি জানো? উনি সবার হয়ে খেলেন। উনি তোমার সাথে থেকে যেমন তোমার হয়েও কাজ করে তেমনি সে বাবুশকা কিংবা আমার হয়েও কাজ করে। সবটাই ব্যালেন্স করতে চান তিনি।কিন্তু উদ্দেশ্যটা হয়তো তার সবকিছু ভালো করা। অন্ধকার জগতের এক অদ্ভুত ভালো মানুষ উনি।”

কেনীথ কিছু বললো না। এদিকে আনায়া আবারও মুচকি হেসে বললো,

“কলিজা! তুমি কিন্তু ভালো রকমের ভ’ণ্ড হয়ে গিয়েছো।”

কেনীথ চুপচাপ রইলো। মন বলছে আনায়া আবারও একটা ফাও কথা বলতে প্রস্তুত। কেনীথের হাভভাব দেখে আনায়া নিজেই হাসতে হাসতে বললো,

“একে তো বারবার বলো, আমায় দূরে সরে থাকতে। এদিকে আমি নিজ থেকে তোমার কাছে গিয়ে কিছু একটা করে নিলেও ঢং করে নাক ছিটকাও। অথচ তোমার মতো লোক চাইলেই আমাকে কোনো না ভাবে আঁটকে নেওয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু তুমি কাজের বেলায় তেমন কিছুই করো না।

ফুলের মধুও খাবা, আবার নাকও ছিকটাবা। ভালোই ভ’ণ্ডামি শিখেছো কিন্তু। এসব ভ’ণ্ডামি কোন শয়তানে শিখায় শুনি?”

কেনীথ আচমকাই বিড়বিড় করে বললো,

“ভ’ণ্ড তুশ।”

আনায়া কপাল কুঁচকে বললো,

“এটা আবার কে?”

—“বোন হয় আমার।”

—“কিহ! তোমার আরো কয়টা বোন আছে? রোজ আর ইনায়া…আমি তো এখন বউ হই। তবে এটা আবার কোথায় থেকে আসলো।”

—“তোর না জানলেও চলবে। নিজের কাজ কর।”

আনায়াও আর কিছু না বলে নিজের কাজে মনোযোগী হলো। পানিতে সম্পূর্ণ কাগজ গুলো গুলিয়ে ফেলা হলে আনায়া সেগুলো নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে কমডের ভেতর ফেলে দিয়ে ফ্ল্যাশ করে দিয়ে আবারও রুমে চলে এলো। অতঃপর কেনীথের সামনে দাঁড়িয়ে বুকে হাত গুঁজে অকপটে বললো,

“কাল রেহানের সাথে দেখা করতে চাই।”

কেনীথ ভ্রু কুঁচকে বললো,

—“তো আমাকে কেনো বলছিস?”

—“তুমি আমার দশটা না বিশটা না, একটা মাত্র জামাই। এটুকু অনুমতি নিয়ে কাজকর্ম না করলে কি করে হয়। যতই হোক, রেহান আমার হয়েও না হওয়া এক্স জামাই।”

—“তো এক্স জামাইয়ের সাথে শুধু দেখা কেনো, বিয়ে করে সংসার করে তাকে সারাজীবন চোখের সামনে সাজিয়ে রাখেন। আমার তো কোনো আপত্তি নেই।”

আনায়া কেনীথের অকপটে বলা কথাগুলো শুনে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। মাঝেমধ্যে কেনীথের না চাইতেও ছ্যাত করে ওঠার বিষয়টা ভালোই লাগে।

“কলিজা! আবারও জ্বলছে বুঝি?”

কেনীথ কটমট চোখে তাকাতেই আনায়া আবারও হেঁসে ফেললো। এরই মাঝে রুমের দরজায় শব্দ হলো। আনায়া গিয়ে দরজা খুলে দিতেই আনায়ার সমানে পাভেল দৃশ্যমান হলো। হাতে একটা ট্রে তার মধ্যে দুটো শরবতের গ্লাস সাজিয়ে রাখা। আনায়া দেখামাত্রই ইতস্ততভাবে মুচকি হেসে বললো,

“ডিস্টার্ব করলাম না তো?”

আনায়া বিস্তৃত হেসে বললো,

“আরেহ নাহ, ভেতরে আসুন।”

পাভেলও মুচকি হেসে রুমে প্রবেশ করলো। কেনীথের গম্ভীর আর তির্যক চাহনিতে নজর পড়তেই ওর কলিজা কেঁপে উঠলো। পাভেল আর কেনীথের দিকে এগিয়ে গেলো না। দূর থেকেই আনায়ার আর কেনীথের উদ্দেশ্যে বললো,

“রাতে কি খাবেন আপনারা,ওটাই জানতে এসেছিলাম।”

পাভেলের কথা শেষ হতে না হতেই কেনীথ গম্ভীর্যের সাথে বললো,

“রাতে কিছু খাবো না আমি। এসব নিয়ে টেনশন না করলেও চলবে তোর।”

কেনীথ যেন কথাটা অনেকটা ধমকের সুরেই বললো। তবে আনায়া মুচকি হেঁসে বললো,

“আমারও আজ রাতে খাওয়ার কোনো মুড নেই। এমনিতেও একটু পর আমি চলে যাবো।”

পাভেল কিছুটা তাড়াহুড়ো করে বললো,

“চলে যাবেন মানে?থাকবেন না আপনি? এটা কি করে হয়। আপনি এখানেই থাকুন…”

পাভেল নিজের কথা আর শেষ করতে পারলো না। কেনীথের রক্তগরম চোখের দিকে নজর পড়তেই তব্দা খেয়ে গেলো। আনায়া এসব দেখে আবারও মুচকি হেসে বললো,

“ইচ্ছে তো ছিলো চলে যাবার।তবে এখন মনে হচ্ছে থাকা উচিত।”

এটা শোনা মাত্রই কেনীথ জোর গলায় বললে,

“এমন ইচ্ছে থাকলে মে”রে ফেল। আর যেটাই করিস, আমার রুমে থাকতে পারবি না তুই।”

আনায়াও কেনীথের রাগের আগুনের মাঝে ঘি ঢালার ন্যায় বিস্তৃত শয়তানি হাসি উপহার দিয়ে বললো,

“ঠিক আছে। তোমার রুমে থাকবো না কিন্তু তোমার সাথে চিপকে থাকলে তো আর কোনো সমস্যা নেই, তাই না?”

কেনীথ চোখমুখ শক্ত হতেই পাভেল ত্বরিত বলতে লাগলো,

“রাতের খাবার না খান, ঠিক আছে। আপাতত দুজনে এই শরবতটা খেয়ে নিন। মাইন্ড ফ্রেস হয়ে যাবে।”

কেনীথ রেগে গিয়ে আওড়ালো,

“মীর জাফরের মতো সবকিছুর আড়াল থেকে কলকাঠি নাড়িয়ে এখন এসেছে মাইন্ড ফ্রেস করাতে।”

আনায়া পাভেল দুজনেই চুপচাপ কথা শুনে হজম করে নিলো। তবে আনায়া দুটো গ্লাস ট্রে থেকে তুলে নিয়ে একটা কেনীথের সামলে ধরলো। কেনীথ প্রথমে মানা করলেও অনেকটা বিরক্তি আর অনিহা নিয়েই অর্ধেকটা শরবত খেয়ে নিলো।আর বাকিটুকু টেবিলের উপর রেখে দিলো। এটা দেখামাত্রই হঠাৎ পাভেল ইতস্ততভাবে বললো,

“বলছিলাম বস, পুরোটা খেয়ে নিলে ভালো হতে না?”

পাভেলের কথায় কেনীথ রেগে গিয়ে বললো,

“আমার খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না, তুই খা বলদ।”

পাভেল আর এখানে নতুন করে কিছু বলার সাহস পেলো না।এদিকে আনায়ার আরেক কান্ড করে বসেছে। নিজের গ্লাসের পুরো শরবতটা একেবারে খেয়ে নিয়ে কেনীথের রেখে দেওয়া অর্ধেক শরবতের গ্লাসটা তুলে নিয়ে বললো,

“চিন্তা নেই দেবর মশাই। আপনার কেনীথ পীর-বাবাজি পুরোটা না খেলে, তার বিবি রয়েছে কোন কাজে!আমিই না হয় এটুকুও খেয়ে নিচ্ছি।”

—“আরেহ নাহ!আরেহ!আমি আপনার জন্য নতুন করে আরো এক গ্লাস…”

পাভেলের কথা আর শেষ হলো না বরং এর আগেই আনায়ার বাকি শরবতটুকুও খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছে। স্বস্তির দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে পাভেলের উদ্দেশ্যে বললো,

“পুরো ঝাক্কাস হয়েছে দেবোর মশাই।”

কেনীথ আনায়ার আচরণে আবারও বিরক্তি প্রকাশ করলো। এদিকে পাভেলও কেমন যেন প্রচন্ড দুশ্চিন্তা নিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করে বললো,

” এবারও গড়বড় হয়ে গেলো। না জানি এর ফল কি হয়।”

_____________

রাত কতটা গভীর তা জানা নেই। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার ঘরের মাঝে টেবিল ল্যাম্পের হলুদ আলোয় রুমের অনেকটা অংশই পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। বিছানার দুই পাশে দুজন মানব উল্টোপাল্টা হয়ে শুয়ে রইছে।একজন বেঘোরে ম”রার মতো ঘুমাচ্ছে তো অন্যজন ঘুমের মধ্যেও কেনো যেন হাত পা ছোটাছুটি করে গড়াগড়ি করছে।

আনায়ার চোখেমুখে দিব্যি ঘুৃম তবুও এক অদ্ভুত অস্বস্তিতে চোখবুজেই বিছানায় গড়াগড়ি করছে। অন্যদিকে কেনীথ সেই যে ঘুমিয়েছে আর ওঠার নাম নেই। হুট করে দুজনের কি হয়েছে তা নিজেরাও জানে না। সেই শরবত খাওয়ার আরো কিছুক্ষণ দুজনে মিলে তর্কবিতর্ক করছিলো। মাঝেমধ্যে কাজের কথা বলছিলো তো আবার কখনো কখনো ভুংভাং কথা-কাটাকাটি। এরই মাঝে কেনীথের প্রচন্ড ঘুম পেলে সে আনায়াকে চলে যেতে বলে কিন্তু আনায়া যেতে নারাজ। সে অবশ্য তখন কেনীথের পারসোনাল ইনফরমেশন গুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি করছিলো কেনীথের লেপটপে।

তবে কেনীথের আর এতো ধৈর্য হয়নি। আচমকাই মাথা অনেক বেশি ব্যাথা করছিলো বিধায় বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দেয়। এদিকে আনায়ার শুরু থেকে অস্বস্তি হচ্ছিলো। মাথাটাও ঝিমঝিম করছিলো আবার কাজেও মনোযোগ দিতে পারছিলো। আবার মনে হচ্ছিলো ঘুম পেয়েছে তার। হঠাৎ তার নিত্যদিনের রুটিনে আজ এমন গড়মিল হলো কেনো তা আনায়ার জানা নেই। তবে আনায়াও আর বেশিক্ষণ না জেগে থেকে কেনীথের পাশেই শুয়ে পড়েছিলো।

আনায়া আরো কিছুক্ষণ বিছানায় হাত পা ছোটাছুটি করার কর হুট করেই বসে পড়লো। মাথা নিচের দিকে কিছুক্ষণ ঝুকিয়ে রেখে এলোমেলো চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে সোজা হলো। পাশে তাকিয়ে দেখলো কেনীথ নির্বিকারে ঘুমিয়ে যাচ্ছে। আনায়ার কপালে ভাজ পড়লো। হাভভাবও ঠিকঠাক মনে হচ্ছে না। আচমকাই কেনীথের গায়ে হাত দিয়ে ঠেলাঠেলি করে ডাকতে লাগলো। কেনীথ আনায়ার এহেন কাজে ঘুমের মধ্যেও বিরক্ত হলো। বিরক্ত নিয়ে এক ঝটকায় আনায়ার হাত গা থেকে সরিয়ে দিলো। এদিকে আনায়া এবার দু-হাতে কেনীথকে ঠেলাঠেলি করে বলতে লাগলো,

“ঐ বুড়াই বেডা উঠো! উঠো বলছি, তাড়াতাড়ি উঠো।”

প্রায় অনেকক্ষণ আনায়ার ডাকাডাকি আর জোরাজোরির পর কেনীথ উঠে বসলো। চোখমুখ থেকে গভীর ঘুম যেন কাটছেই না। হঠাৎ এমন ঘুম কোথায় থেকে জেঁকে বসেছে তার জানা নেই। প্রচন্ড অসহ্য আর বিরক্তি নিয়ে পাশে তাকিয়ে আনায়ার উদ্দেশ্যে বললো,

“কে তুই? কি চাই তোর?”

আনায়া কিছুটা কপাল কুঁচকে নেশাগ্রস্তের মতো করে বললো,

“ভুলে গিয়েছো?বউ আমি…বিয়ে করা বউ আমি তোমার।কি জামাই কপালে জুটালে বাবা, দিনের মধ্যে একশোবার এটাই ভুলে যায় তার বউ আমি।”

কেনীথ ঘুৃম নেশায় আসক্ত ব্যক্তির মতো বিরক্ত হয়ে বললো,

“হুম…জানি আমি জানি। মনে পড়েছে, এতো বারবার বলতে হবে না।

আনায়া কিছুটা মুচকি হেসে বললো,

“যাক, ভুলে যাওনি তবে।”

—“তো আমায় ডেকেছিস কেনো?দেখছিস না আমি ঘুমিয়ে ছিলাম!”

কেনীথের ঘুমে গা এদিক ওদিক ঢুলে পড়ছে। নিজেকে বারবার ঠিক করে সামলাতে চাইলো। আনায়ার দিকে তাকিয়ে কিছুটা গম্ভীর স্বরে বললো,

” এতো রাতে কি চাই তোর?”

“জান একদমই ঘুম আসছে না, চলো খেলি!”

আনায়া একগাল মুচকি হেসে বলা কথায় কেনীথ ঘুমঘুম চোখে প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে বললো,

“মাথা খারাপ নাকি? এই বাড়িতে খেলার মতো লুডু, চেস কিংবা ক্যারাম কিছুই তো নেই। কি খেলবি তুই?”

আনায়ার চোখের পাতাও কেমন নিভে নিভে আসছে। অথচ ও লজ্জামাখা আর শয়তানি হাসিতে বিস্তৃত মুচকি হেসে বললো,

“আরে ওসব না, ওসব খেলা।”

কেনীথের চোখমুখ কুঁচকে গেলো। মাথা খারাপ করে কিসব বলছে আনায়া নিজেও বুঝতে পারছে না।

“গাধী কিসের কথা বলছিস, ঠিক করে বল। কিছু খেয়েছিস? নেশা…”

আনায়া কেনীথের কথা শেষ হাওয়ার আগেই গিয়ে কেনীথের কোলের উপর চড়ে বসলো৷ নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে অনেকটা বাবু হয়ে মাথা ঝুকিয়ে নিলো। অতঃপর কেনীথের গলায় নিজের দুহাত মালার মতো পেছিয়ে মুচকি মুচকি হাসতে লাগলো। এদিকে কেনীথের ইচ্ছে হচ্ছে আনায়াকে ধরে একটা আছাড় দিতে। মাঝ রাতে ঘুম আর মুডের পুরো পয়তাল্লিশটা বাজিয়ে দিয়েছে। কেনীথের চোখেমুখে প্রচন্ড বিরক্তি।চুপচাপ আনায়ার অদ্ভুত ভাবভঙ্গি দেখছে। কেনীথ বিরক্তি নিয়ে বললো,

“আনায়া, প্লিজ বিরক্তি করিস না।হয় ঘুমা নয়তো, ঠিকঠাক বল কি চাইছিস?”

আনায়া মুচকি হাসলো। মাথা খানিকটা নীচু করে বললো,

“বললামই তো… বুঝে নেও না একটু।”

কেনীথ আচমকা ভাবুক চিত্তে ভাবতে বসলো। হুট করেই নিমিষেই ওর চোখমুখের রং উড়ে গেলো। তব্দা খাওয়ার মতো করে বিস্ময়ের সাথে মাথা নিচু করে আনায়ার মুখটা দেখার চেষ্টা করে বললো,

“তারা তুই…”

কেনীথের কথা শুরু হওয়ার আগেই আনায়া থামিয়ে দিয়ে মাথা তুলে তড়িঘড়ি করে ইনোসেন্ট মুখ বানিয়ে বললো,

“বেশি না! যাস্ট চার-পাঁচ রাউন্ড খেলেই ঘুমিয়ে যাবো,পাক্কা!”

এই বলেই আনায়া আবার কেনীথের দিকে বিস্তৃত হেঁসে বাম চোখ মা”রলো।

চলবে…….