#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_3
[কার্টেসি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ]
আলভী সোজা নিজের রুমে চলে আসে। প্রায় তেরো বছর আগে রেখে যাওয়া রুম টা এখন আর আগের মতো নেই। রুমের সব কিছু চেঞ্জ করা হয়েছে। রুমের চারো দিকে নজর বুলাতে বুলাতে চোখ যায় বেডের পাশে দেওয়ালের দিকে। চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে যায় দেওয়ালে টাঙ্গানো ফটো গুলো দেখে। সেই চৌদ্দ, পনেরো, ষোলো বছর বয়সের ফটো গুলো এখনো দেওয়ালে টাঙ্গানো রয়েছে। এই ফটো গুলো কি বাড়ির সবাই এখনো দেখে ? শরীর ঝাঁকি দিয়ে ওঠে আলভী। কেমন আজব আজব স্টাইলে ফটো গুলো তুলেছিল তখন। দেখতে একদম মদন মদন লাগছে এখন। এমন আজব স্টাইল গুলো কে শিখিয়েছিল ওকে ? হুম ওর স্কুল ফ্রেন্ড গুলো।
সুটকেস টা রেখে দ্রুত গতিতে এগিয়ে গিয়ে দেওয়াল থেকে ফটো গুলো নামায়। সব গুলো একসাথে করে উপরের ফটো টার দিকে তাকিয়ে থাকে।
এইটা ওর ফটো ! এমন দেখতে ছিল আগে ? ফটো গুলো জাদুঘরে সাজিয়ে রাখলে মন্দ হয় না। এই জেনারেশনের পোলাপান এই ফটো গুলো দেখে আজব স্টাইল গুলো শিখতে পারতো।
ফটো গুলো নিয়ে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রেখে দেয়।
বাকি জীবনে এগুলো আর এখান থেকে বের করবে না। সোজা হয়ে দাড়ায় আয়নার সামনে। নিজেকে একবার ভালোভাবে দেখে নেয় আয়নায়। বলিউডের হিরোর মতো লাগছে এখন। আর ওই ফটো গুলোতে হিরো আলমের মতো লাগছে।
মায়া কে কল্পনা করে। আগের মায়ার সাথে এই মায়ার আকাশ পাতাল ফারাক। আগের মায়া ছিল হ্যাংলা পাতলা চিকন। পরিষ্কার পরিপাটি হয়ে থাকতই না। চুল গুলো কাকের বাসা বানিয়ে রাখতো। চুল ব্রাশ করে বেঁধে দিলে সাথে সাথেই খুলে এলোমেলো করে ফেলতো। খাবার খাওয়ার সময় যা অবস্থা করতো নিজের বলার মতো না।
আর এখন ! গোলুমোলু গাঁয়ের গড়ন। যেমন টা আলভীর পছন্দ ঠিক তেমন। চুল গুলো সোজা সিল্কি শায়নি। একদম পরিপাটি গেটআপ। দুধে আলতা গায়ের রঙ জন্ম থেকেই। অনেক বড় হয়ে গেছে এখন। আলভী তো ভেবেছিল এখনো বোধহয় ছোটই রয়ে গেছে। আলভী নিজের জীবন সঙ্গী কে যেমন কল্পনা করতো মায়া হুবহু তেমন হয়ে গেছে এখন।
খুশিতে বাচ্চাদের মতো লাফিয়ে ওঠে আলভী। আহা ওর বউ টা কি কিউট , মায়াবী আর সুন্দরী।
ইস্ কেন যে এত গুলো বছর বাড়ির সকলের কথা শুনে মায়া কে একটা বার দেখেনি। কেন যে একটা বার দেশে আসেনি। যদি আসতো, দেখতো তাহলে কি এত গুলো বছর বউ ছাড়া থাকতে হতো ? কখনোই না, দুই তিন বাচ্চার বাপ হয়ে যেতো এত দিনে। আফসোস ভীষণ আফসোস।
এত গুলো বছর পর বাড়িতে ফিরলো বিদেশ থেকে অথচ বউয়ের জন্য একটা লিপস্টিক পর্যন্ত আনেনি। আর না বাড়ির কারো জন্য কিছু এনেছে। শুধু নিজের জন্য কয়েক টা ড্রেস আর প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে চলে এসেছে। রাগে অভিমানে কারো জন্য কিছুই আনেনি। কোন সমস্যা নেই, বাংলাদেশে কি কম আছে নাকি ? বাংলাদেশ থেকে সবাই কে কিনে দেবে।
সুটকেস থেকে টুথব্রাশ, পেস্ট, শ্যাম্পু, শাওয়ার জেল আর টাওয়েল বের করে তাড়াহুড়ো করে ওয়াশরুমে প্রবেশ করে। ফ্রেস হয়ে দাঁত ব্রাশ করে শাওয়ারের নিচে দাঁড়ায়।
হঠাৎ স্মরণ হয় ওতো মায়া কে ডি ভো র্স দেওয়ার জন্য এসেছে। এখন সবাই কে কিভাবে বলবে “আমি মায়ার সাথেই সংসার করবো”। মেইলে বাবা কে যা যা বলেছিল তার পর এই কথা বলা ওর পক্ষে অসম্ভব। এখন পড়ল মহা টেনশনে। কি করবে কিভাবে বলবে ? শুধু একবার কেউ যদি বলে “আলভী আর একবার ভেবে দেখো। মায়ার সাথে কয়েক দিন সময় কাটিয়ে দেখো। মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করো একটু। বিয়ে তো ছেলেখেলা নয়, বিয়ে একবারই হয়”। সাথে সাথেই রাজি হয়ে যাবে আলভী। নিশ্চই এমন কিছুই বলবে বাড়ির সবাই।
খুশিতে গান গাইতে গাইতে গায়ে শাওয়ার জেল ঘষতে শুরু করে।
,
,
ড্রইং রুমে সোফায় বসে আছে সবাই। মায়া নিজের রুমে চলে গেছে। বড় ভাই আর বড় ভাতিজা কে কল করে বাড়িতে চলে আসতে বলেছেন আলতাফ মাহমুদ।
আলভী বাড়িতে ফিরে এসেছে জানিয়েছেন।
সোফায় বসে থাকা সকলের মুখ গম্ভীর থমথমে হয়ে আছে। মেহবুবা মেহেরের মুখ টা শুকিয়ে ছোট হয়ে গেছে।
শাওয়ার শেষ করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে আলভী। সোফার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে হাসি মুখে বলে,
_ কেমন আছো সবাই ?
সবাই একসাথে আলভীর দিকে তাকায়।
_ কেমন আছো তোমরা ?
_ আলহামদুলিল্লাহ ভালো , তুমি কেমন আছো ?
_ আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
বলতে বলতে সকলের সামনে এসে দাঁড়ায়। সকলে ভালো ভাবে তাকায় আলভীর দিকে।
ধূসর রঙের টিশার্ট গায়ে, পরনে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট।
চুল থেকে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই বোধহয় তাড়াহুড়ো করে নিচে নেমে এসেছে। চুল গুলোও ভালো ভাবে মোছেনি। হাতে গলার দিকে পানির ফোঁটা এখনো বিদ্যমান।
আলভী সোফায় বসে থাকা সকলের দিকে নজর বুলায়। ওর বউ টা কই ? বউ টা কে দেখার জন্যই তো এত তাড়াহুড়ো করে নিচে নেমে আসলো। তখন তো ভালো ভাবে দেখতে পারেনি। এখানে তো নেই কি আর করার। হেঁটে মায়ের পাশে এসে বসে। এক হাতে মাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
_ কেমন আছো আম্মু ?
ঐশী রহমান টলমলে চোখে ছেলের মুখের দিকে তাকান। তার ষোলো বছরের কিশোর ছেলে আজ ঊনত্রিশ বছরের পরিপূর্ণ পুরুষ। কয়েক মাস পর ত্রিশ বছর পূর্ণ হবে। লাস্ট এগারো বছর আগে সামনে থেকে দেখেছিল ছুঁয়ে ছিল যখন জার্মানি চলে গেল।
টুপ করে তার দু চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে পানি। মায়ের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,
_ কাদঁছো কেন আম্মু ? আমি চলে এসেছি তো। সরি তোমাকে এত গুলো বছর কষ্ট দেওয়ার জন্য। আর কষ্ট দেবো না তোমাদের কাউকে।
_ তুমি কেন সরি বলছো ? সরি তো আমার বলা উচিত।
_ পুরোনো সব কথা বাদ, এখন বলো কেমন আছো ?
_ ভালো।
_ ভীষণ মিস করেছো আমাকে তাইনা ?
_ তুমি আমার একমাত্র সন্তান। তোমার শূন্যতা কি অন্য কোন ভাবে পূর্ণ হয় ?
দুই হাতে মাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খায়। তারপর অপরাধীর ন্যায় বলে,
_ আমি ভীষন সরি আম্মু।
মাকে ছেড়ে পাশে ঘুরে বসে। দাদি কে জড়িয়ে ধরে বলে,
_ তুমি কেমন আছো দাদু।
দাদি আলভী কে নিজের থেকে আলাদা করার চেষ্টা করে বলে,
_ ছাড় তুই ধরবি না আমাকে , ছুবি না তুই। তোর দাদু
ম রে গেছে অনেক আগেই। আমি তোর দাদু নই।
_ এত রাগ এত অভিমান ? যাই বলো দাদু তোমাকে কিন্তু আগের চেয়ে এখনই বেশি সুন্দর দেখা যায়। একটাও কালো চুল নেই সব দেখি লাল। এই লাল চুলে কিন্তু তোমাকে আরো মারাত্মক সুন্দরী লাগছে।
_ সর তোর মিষ্টি মিষ্টি কথায় আমি গোলছি না। বিদেশী দের গিয়ে তোর এই বাণী শোনা ওরা গোলে যাবে।
_ রাগ করছো কেন ? আমার দিকে তাকাও একটু।
_ বলছি না আমাকে ছাড়তে ? সর আমার কাছ থেকে।
_ এই যে ছেড়ে দিচ্ছি পরে কিন্তু ডাকলেও আর ধরবো না।
_ ধরতে হবে না ছাড় তুই।
আলভী দাদি কে ছেড়ে দেয়। বুড়ি তো ভীষণ খেপে আছে ওর উপর। ধরার সাথে সাথেই ছ্যাত করে উঠেছে। লাঠি দিয়ে যে মা রে নি এটাই অনেক।
মা আর দাদির মাঝ খান থেকে উঠে শাশুরি মায়ের পাশে গিয়ে বসে। শাশুরি মা কে এখন কি বলে সম্বোধন করবে ? আগের মতো বড় আম্মু বলবে নাকি শাশুরি মা বলবে ? যাই হোক বলতে তো হবে একটা। গলা খাঁকারি দিয়ে আস্তে আস্তে বলে,
_ কেমন আছো বড় মা ?
_ ভালো তুমি কেমন আছো ?
_ ভালো।
আর কি বলবে ? বলার মতো আর কিছু খুঁজে পাচ্ছে না। এদিক সেদিক নজর বুলায়।
আলতাফ মাহমুদ বলেন,
_ কাউকে খুজছো ?
বাবার কথা শুনে সেদিকে তাকায়।
_ বাড়ির আর সবাই কোথায় ?
_ ভাইয়া আর মাহির আসছে অফিস থেকে।
সোফায় বসে থাকা একজন মেয়ে কে দেখিয়ে বলে,
_ উনি কে ? ওনাকে তো চিনলাম না।
সবাই সেদিকে তাকায়। আলতাফ মাহমুদ বলেন,
_ ও সানজিদা, মাহিরের ওয়াইফ।
_ ভাইয়া বিয়ে করেছে ?
অবাক হয়ে বলে কথা গুলো। আলতাফ মাহমুদ বলেন,
_ শুধু বিয়ে করেনি তিন বছরের একটা মেয়েও আছে।
ছোট ভাই মাহিদ এর দিকে তাকায় আলভী। মাহিদ এর কোলে একটা বাচ্চা মেয়ে বসে আছে। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে ওর দিকেই। হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে এই অপরিচিত লোক টা কে ? ওদের বাড়িতে কেন এসেছে ? হাত দিয়ে দেখিয়ে বলে,
_ ও ভাইয়ার মেয়ে ?
_ হ্যাঁ।
আলভী দুই হাত বাড়িয়ে ডাকে,
_ মামণি আমার কাছে আসো।
বাচ্চা টা আসে না বরং চাচ্চু কে আঁকড়ে ধরে।
আলভী আবার ডাকে ,
_ মামণি চাচ্চুর কাছে আসো।
মাহিদ ভাতিজী কে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে বলে,
_ উনি তোমার বড় চাচ্চু। ওই যে বিদেশে থাকে না তোমার বড় চাচ্চু সেই উনি। যাও চাচ্চুর কাছে যাও।
গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে বাচ্চা মেয়ে টা। আলভী সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। ভাতিজী কে কোলে তুলে নিয়ে আগে আদর করে। তুলতুলে নরম তুলোর মতো ছোট দেহ খানা। গাল দুটো যেন শিমুল তুলা। ওর স্পষ্ট মনে আছে ছোট বেলায় মায়ার শরীর ও এমন নরম তুলতুলে ছিল। এখনো কি এমন নরম তুলতুলে আছে নাকি শক্ত হয়ে গেছে ? ছুঁলেই বুঝতে পারবে। রাইটার সানা শেখ। আগে আগে গল্প পড়তে সানা শেখ পেজ টি লাইক ফলো দিয়ে রাখবেন।
_ নাম কি তোমার আম্মু ?
_ মানতাসা।
_ মানতাসা ?
_ হুম।
_ তোমার মতো তোমার নাম ও সুন্দর।
মানতাসা খুশি হয়ে হেসে ওঠে। কেউ ওকে সুন্দরী বললে ভীষণ খুশি হয়।
_ কেমন আছেন ভাবী ?
_ ভালো , আপনি কেমন আছেন ?
_ জ্বি আমিও ভালো আছি।
হেঁটে মাহিদ এর পাশে গিয়ে বসে।
_ তুই কেমন আছিস ? এখন তো অনেক বড় হয়ে গেছিস দেখছি।
_ ভালো আছি , এত গুলো বছর পেরিয়ে গেছে বড় হবো না ?
_ পড়াশোনা কেমন চলছে ?
_ ভালোই।
_ কোন ইয়ার ?
_ ফাইনাল।
সবাই আলভী কে দেখে ভীষণ অবাকই হচ্ছে। আলভী যে সকলের সাথে এমন স্বাভাবিক ভাবে কথা বলবে কেউ ভাবেনি। সকলের ধারণা ছিল কিছু জিজ্ঞেস করলেও বোধহয় উত্তর দেবে না এই ছেলে। এখন তো দেখা যাচ্ছে নিজেই আগ বাড়িয়ে হেসে হেসে কথা বলছে। মতলব কী এই ছেলের ? এত খুশি হয়ে আছে কেন ?
মেহবুবা মেহের বলেন,
_ আলভী নিশ্চই খিদে পেয়েছে তোমার। খাবার খেয়ে নাও তারপর সকলের সাথে কথা বলবে। ঐশী চলো।
বড় জায়ের সাথে সোফা ছেড়ে উঠে ডাইনিং রুমের দিকে এগিয়ে জান ঐশী রহমান। পেছন পেছন যায় আলভী।
ওর কেমন যেন আনন্দ হচ্ছে ভীষণ। খুশিতে নাচতে ইচ্ছে করছে। আহা আফসোস বউটার দেখা পেল না। তবুও খুশি খুশি লাগছে।
চেয়ার টেনে বসে আলভী। মা আর শাশুরি মিলে ওর প্লেট ভর্তি করে খাবার বেড়ে দেয়। এটা ওটা প্লেটে তুলে দেয় একটু পর পর। কথা না বলে চুপ চাপ খাওয়া শুরু করে আলভী। এত গুলো বছর পর মা চাচীর হাতের রান্না অমৃতর মতন লাগছে। যত যাই হোক এত গুলো বছর প্রত্যেক বার খাবার খাওয়ার সময় এই রান্নার স্বাদ মিস করেছে।
_ তোমরাও খাও।
_ খাবো তুমি খেয়ে নাও আগে।
,
,
খাওয়া শেষ করে ড্রইং রুমে এসে দেখে বড় চাচ্চু মানে শশুর আর বড় ভাই মাহির বাড়িতে চলে এসেছে।
এক প্রকার দৌড়ে গিয়ে বড় ভাই কে জড়িয়ে ধরে হাসি মুখে বলে,
_ কেমন আছো ভাইয়া ?
হঠাৎ এমন হওয়ায় হকচকিয়ে যায় মাহির। এভাবে এসে জাপটে ধরবে কল্পনাও করেনি।
গম্ভীর স্বরে বলে,
_ আমি ভালো আছি তুই কেমন আছিস ?
_ ভালো।
ভাই কে ছেড়ে শ্বশুরের সামনে দাঁড়ায়।
_ কেমন আছো চাচ্চু ?
_ ভালো তুমি কেমন আছো ?
_ এইতো ভালো।
আলতাফ মাহমুদ বলেন ,
_ সবাই এখানে উপস্থিত আছে যার জন্য তুমি দেশে এসেছো সেটা করে মায়া কে মুক্তি দাও নিজেও মুক্ত হও।
_ আচ্ছা ডাকো মায়া কে।
সবাই আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো। আলভীর ঠোঁটের কোণে হাসি বিদ্যমান রয়েছে। এত খুশি ? রাগ ওঠে মাহিরের। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে দুটো লাগিয়ে দিতে।
_ মায়া ড্রইং রুমে আয়।
গলা ছেড়ে ডাকেন আলতাফ মাহমুদ।
সাথে সাথেই একটা মেয়ে দৌড়ে আসে ড্রইং রুমে।
মানতাসা মেয়ে টা কে দেখিয়ে বলে ,
_ দাদা ভাই মায়া আন্টি চলে এসেছে।
মানতাসার কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় আলভী। কোথায় মায়া ? এটা তো অন্য একটা মেয়ে।
মানতাসার দিকে তাকিয়ে বলে,
_ কোথায় তোমার মায়া আন্টি ?
মানতাসা হাত দিয়ে মেয়েটির দিকে দেখিয়ে দেয়।
মেহবুবা মেহের বলেন,
_ মায়া তোমাকে যা করতে বলেছিলাম করেছো ?
মায়া মাথা নাড়ায়।
ফট করে ডান হাত টা তুলে বুকের বা পাশে খপ করে চেপে ধরে আলভী। মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। এটা মায়া ? তাহলে ওটা কোন মায়া ছিল ?
এই মায়ার চুল গুলো সেই ছোট মায়ার চুলের মতোই উস্কখুস্ক এলোমেলো হয়ে আছে। গায়ের রঙ শ্যামবর্ণের। ছোট মায়ার মতোই দুই হাতে মাটি আটকে রয়েছে। এটা ওর বউ ? তাহলে কাকে দেখে ক্রাশ খেলো ? কাকে বউ মনে করে খুশিতে এতক্ষণ লাফালো ? ওর ক্রাশ তো এখন বাঁশে পরিণত হলো দেখা যায়। ওর ফর্সা বউ টা এমন শ্যামবর্ণের হলো কিভাবে ? বেচারা এখন হার্ট এ্যাটাক করে ম রে ই যাবে। আহ কেউ বাঁচাও।
_ ওই তো মায়া চলে এসেছে।
মাহিদ এর কথা শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে আবার সেদিকে তাকায় আলভী। এইতো সেই মায়া যাকে প্রথম দেখে ক্রাশ খেলো। এই মায়া ওই মায়া দুই মায়া কোথা থেকে আসলো বাড়িতে ?
আলভী মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
_ এটা কে ওটা কে ?
ছেলের কথা শুনে বিরক্ত হন আলতাফ মাহমুদ। মায়া কেও চিনতে পারছে না ?
ঐশী রহমান বলেন,
_ এই মায়া আমাদের বাড়ির কাজের মেয়ে। আর ওই মায়া এই বাড়ির মেয়ে।
বুক থেকে হাত সরিয়ে ফোস করে শ্বাস ছারে আলভী। বাঁচা গেল। যাই হোক অন্য কোনো মেয়ে কে নিজের বউ ভাবেনি। নিজের বউ কেই নিজের বউ মনে করেছে।
মায়া কে টেনে আলভীর সামনে দার করান আলতাফ মাহমুদ।
মায়া একবার ও আলভীর মুখের দিকে তাকায় না। নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। আলভী তাকিয়ে থাকে মায়ার দিকে। ওর ছোট বেলার সুন্দরী, কিউট বউ টা। একটু জড়িয়ে ধরতে পারলে ভালো লাগতো। থাক এত গুলো মানুষের সামনে ধরা যাবে না।
_ সবাই উপস্থিত আছে এখন। যা করার দ্রুত করো।
আলভী বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
_ আমি ভীষন ক্লান্ত হয়ে আছি। যা বলার তা আগামী কাল সকালে বলবো। এখন আমার ঘুমের প্রয়োজন ঘুমে দিন দুনিয়া চোখে দেখছি না। কথা বলার শক্তিও অবশিষ্ট নেই আমার।
_ এতক্ষণ ধরে বকবক করছো আর তিন টা বাক্য উচ্চারণ করার শক্তি নেই ? দশ সেকেন্ড সময় লাগবে বলতে তারাতারি বলো।
_ বলতে পারবো না আমি এখন। আমি এখন ঘুমাবো সারা দুপুর, বিকেল আর রাতে কেউ ডিস্টার্ব করবে না আমাকে। গুড নাইট গাইস আগামী কাল সকালে দেখা হচ্ছে আবার টাটা বাই।
বলেই হাটা শুরু করে সিঁড়ির দিকে। বিস্ময়ে বিমূঢ় হয়ে সবাই তাঁকিয়ে আছে ওর দিকে। কি হয়েছে এই ছেলের ? ভর দুপুর বেলা বলছে গুড নাইট ? যার জন্য এত দূর আসলো তা না করে যাচ্ছে ঘুমোনোর জন্য ?
চলবে…………