#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_4
[কার্টেসি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ]
_ ভাইয়া এখন তো রাত না, এখন দুপুর।
পুরোপুরি না ঘুরে শুধু ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় আলভী। ছোট ভাইয়ের দিকে চোখ রেখে বলে,
_ আমি যখন ঘুমাবো তখনই নাইট। সেটা হোক সকাল, দুপুর, বিকেল বা রাত। সবাই কে আবারো গুড নাইট।
বলে সকলের দিকে নজর বুলায়। মায়া এখনো নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে দাঁড়িয়ে আছে। সকলের চোখ মুখ গম্ভীর থমথমে শুকনো।
আলতাফ মাহমুদ ছেলের দিকে তাকিয়ে বলেন,
_ আলভী
আলভী পরের কথা না শুনেই দ্রুত সিঁড়ির বেয়ে উপরে উঠে যায়। এখানে আর কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকলে ওর মুখ দিয়ে জোর করে তালাক শব্দ বের করে ছাড়বে ওর বাপ।
সকলের চোখ মুখ দেখে বুঝতে পারছে এরকম হয়ে থাকার কারণ। সবাই যে ওর উপর কিছুটা রেগে আছে সেটাও বুঝতে পারছে।
মায়া ফর্সা সুন্দরী দেখে যে আলভী ওর প্রেমে পড়েছে এমন নয়। আলভীর বরাবর গোছানো পরিপাটি মেয়ে পছন্দ। যে সব সময় নিজেকে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রাখবে। নিজেকে পরিপাটি করে রাখবে। তার চুল এলোমেলো হয়ে থাকবে না। পরনের পোশাক চকচকে থাকবে ধুলো, বালি, ময়লা লাগবে না। হোক সে শ্যামবর্ণের, কালো বা ফর্সা। নিজেকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে পরিপাটি করে রাখলে কালো মেয়ে কেও সুন্দর লাগে। আর মাথার চুল উস্কখুস্ক এলোমেলো কাকের বাসা বানিয়ে , পরনের পোশাকে ধুলো, বালি, মাটি লাগিয়ে রাখলে সুন্দরী ফর্সা মেয়েকেও ভালো লাগে না।
কাজের মেয়ে মায়া কে দেখার পর আলভীর ছোট মায়ার কথা স্মরণ হয়েছিল। ছোট মায়াও ঠিক এই মায়ার বেস ধরেই থাকতো। হাতে পায়ে গায়ে মাটি বালি মাথার চুল উস্কখুস্ক এলোমেলো কাকের বাসার মতন।
তখন এক মুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিল এটা সেই ছোট মায়া। ওর আগের অভ্যাস চেঞ্জ হয়নি। এখনো বোধহয় বাড়ির বাইরে বাগানে রোদে মাটিতে বসে থাকে। রোদে পুড়ে কালো হয়ে গেছে। এমন একজন অগোছালো মানুষের সাথে আলভী মানিয়ে চলতে পারবে না। ওর বউ কে ওর মতোই গোছালো পরিপাটি হতে হবে। ফর্সা না হলেও চলবে শ্যামবর্ণের বা কালো হলেও সমস্যা নেই।
নিজের রুমে এসে দরজা লক করে। এসি অন করে খাটে উঠে শুয়ে পড়ে উপুর হয়ে। চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পরিপাটি মায়া। ওর কল্পনায় ছিল না মায়া এত পরিবর্তন হয়ে গেছে। আগের মায়া ছিল ওর সবচেয়ে বেশি অপছন্দের।
মায়ার জন্মের পর বেশ খুশিই হয়েছিল দ্বিতীয় বোন হওয়ায়। সেভাবে কোলে নিতে না পারলেও আদর করতো, ভালোবাসতো । মায়া আস্তে আস্তে বড় হতে শুরু করে আর ওর অপছন্দের হয়ে উঠতে থাকে। আলভী যেসব বিষয় অপছন্দ করতো সেসব গুণ মায়ার মধ্যে ছিল। আলভীর পুরো উল্টো ছিল মায়া। অল্পতেই ভ্যা ভ্যা করে কান্না করা স্বভাব হয়ে গিয়েছিল। কেউ ভালো কথা বললেও কেঁদে উঠতো। বলাই যেতো না কিছু। বললেই চালু হয়ে যেতো ভাঙ্গা ক্যাসেট। তখন খুব বেশি বিরক্ত হতো আলভী। ওর ইচ্ছে করতো মায়ার মুখে কষ্টেপ লাগিয়ে দিতে। এলোমেলো চুল গুলো দেখে ইচ্ছে করতো মে রে ধরে চুল গুলো বেঁধে দিতে।
কোলে নিলে কোলে উঠে থাকতে চাইতো না। কেঁদে কুদে তখনই কোল থেকে নেমে যেতো। পরিষ্কার পরিপাটি করে দিলে সাথে সাথেই পোশাক নোংরা করে গা নোংরা করে ফেলতো। চুল গুলো সুন্দর করে বেঁধে দিলে সাথেই সাথেই এলোমেলো করে কাকের বাসা বানিয়ে ফেলতো। খাবার খেতে চাইতো না একে বারেই। দুজন ধরে রাখতো একজন খাওয়াতো। তাও কি খায় ? কান্না করে বাড়ি মাথায় তুলতো খেতে বসে। খেতে খেতে মুখ হাত নষ্ট করে ফেলতো। হাতের নাগালে পানি পেলেই ফ্লোরে ঢেলে পানির উপর শুয়ে পড়তো নয়তো বসে পড়তো। চার বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পরেও প্যান্ট ভর্তি করে প্রস্রাব করে দিত যেখানে সেখানে। তাই বড় হয়ে যাওয়ার পরেও ডায়পার পরিয়ে রাখতো। সর্দি সারতেই চাইতো না। কোনো ভাবেই এই মেয়ে কে কন্ট্রোল করা যেতো না। বাড়ির দরজা খোলা পেলেই দৌড়ে বাইরে গিয়ে মাটি খুবলে খুবলে তুলে খেয়ে ফেলতো। সারা গায়ে মাখাতো। এই সব দেখে আলভীর বমি চলে আসতো। দিন যেতে থাকে আর মায়ার এই সব বাড়তেই থাকে। ন্যাকামি, আল্লাদ আর জেদ হয় সঙ্গী। আলভীর কাছে ধীরে ধীরে মায়া অসহ্য হয়ে ওঠে।
মায়ার তখন চার বছর বয়স। আলভী বারো বছর বয়সী। শাওয়ার নেওয়ার জন্য ওয়াশরুমে প্রবেশ করে আলভী। একটু পরেই খেলতে খেলতে ওর রুমে আসে মায়া। রুমে আলভী কে না দেখে খাটে উঠে যায়। কতক্ষন লাফালাফি ঝাপাঝাপি করে। হঠাৎ ওয়াশরুমের চাপ দেয়। খাটে দাঁড়িয়ে থেকেই জোরে জোরে ওর মাকে ডাকতে শুরু করে। মেহবুবা মেহের নিচে থাকায় মায়ার ডাক শুনতে পাননা।
মায়া নিজেই কোনো রকমে ডায়পার খুলে ফেলে। খাট থেকে নামতে নামতেই কাজ সেরে ফেলে।
খাট থেকে নেমে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
কিছু সময় পরেই দাঁত কটমট করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে আলভী। রুমের চারো দিকে নজর বুলিয়ে দেখে মায়া চলে গেছে। মাথা টা ঠান্ডা হয় একটু। বজ্জাত মেয়ে রুমে আসলে একটা না একটা অঘটন ঘটিয়েই যায়। আজকে কিছু করেনি। স্টাডি টেবিল ঠিক ঠাক মতোই আছে। চুল মুছতে মুছতে খাটের দিকে এগিয়ে আসে।
টাওয়েল টা পাশে রেখে ধপাস করে খাটে শুয়ে পড়ে চিৎ হয়ে। শোয়ার সাথে সাথেই আবার লাফিয়ে উঠে দাঁড়ায়। বিছানার উপর তাকিয়ে দেখে মায়া তো পায়খানা করে দিয়েছে খাটের উপর। হলুদ আর লাল বিছানার চাদর হওয়ার কারণে চোখে পড়েনি আগে। এর গন্ধ কেন এতক্ষণ নাকে আসেনি ? গন্ধ পেলে অন্তত এই অঘটন ঘটত না।
ওর পিঠ আর মাথার চুলে লেগে গেছে। বমি করতে করতে দৌড়ে আবার ওয়াশরুমে প্রবেশ করে। বেচারা মাত্রই শাওয়ার নিয়ে এসেছিল।
এক ঘন্টা সময় নিয়ে শুধু শাওয়ার জেল আর শ্যাম্পু লাগায়। শাওয়ার নিতে নিতে আরো কয়েক বার বমি করে দেয় ঘৃণায়।
গা না মুছে, ভেজা প্যান্ট চেঞ্জ না করেই ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়। চিৎকার করে ওর মাকে ডাকতে শুরু করে। ওর চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বাড়ির সবাই এগিয়ে আসে সিঁড়ির কাছে।
সবাই থাকলেও মায়া নেই এখানে। রাগে গর্জন করে বলে,
_ মায়া কোথায় ?
_ কেন মায়া আবার কি করেছে ?
_ ও কোথায় ? ওকে আজকে আমি মে রে ই ফেলবো। ওকে নিষেধ করা সত্ত্বেও ও কেন বার বার আমার রুমে গিয়ে প্রস্রাব পায়খানা করে ? আমার বিছানা কে কি ওর টয়লেট মনে হয় ? আমার বিছানায় পায়খানা করে দিয়েছে। আমি না দেখে সেই পায়খানার উপর শুয়ে পরেছিলাম।
আলভীর কথা শুনে খিলখিল করে হেসে ওঠে মাহিদ। আলভীর রাগ আরো বেড়ে যায়।
_ হাসছিস কেন ? ধরে কিন্তু আছাড় মা র বো তোকে।
কোনো রকমে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঐশী রহমান আলভী কে বাইরে রেখে ওর রুমে প্রবেশ করেন। দেখেন বিছানায় মায়ার পটি চ্যাপ্টা হয়ে ছড়িয়ে রয়েছে। ডায়পার ফ্লোরে পড়ে রয়েছে। মায়ার কান্ড দেখে হাসবেন নাকি ছেলের দুঃখ দেখে কষ্ট পাবেন বুঝলেন না। চাদর তুলে নতুন চাদর বিছিয়ে দেন। রুম স্প্রে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে আসেন চাদর আর ডায়পার হাতে নিয়ে।
আলভী রুমে এসে পুরো রুমে পারফিউম স্প্রে করে নেয় আবার।
সেদিন থেকে মায়া কে একে বারেই দেখতে পারে না আলভী । চোখের সামনে সহ্যই করতে পারে না। দেখলেই রাগে শরীর রিরি করে।
সেদিনই সন্ধ্যায় সেলুনে গিয়ে মাথা টাক করে এসেছিল। ওই চুল নিয়ে থাকতে ঘৃণা হচ্ছিল। বার বার বমি আসছিল। এমনিতেই মায়া কে পছন্দ করতো না। সেদিন থেকে যেন ওর শ ত্রু ই হয়ে যায়।
এভাবেই দিন গড়িয়ে যেতে থাকে। মায়া বড় হওয়ার সাথে সাথে আরো একরোখা জেদী হয়ে ওঠে। এই মেয়ে কে কেউ পরিষ্কার পরিপাটি করে রাখতে পারে না। বাড়ির প্রথম মেয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে তাই মায়া কে বকতো না কেউ। সেভাবে জোরে ধমক দিয়ে কথাও বলতো না কখনো। সকলের আদরের ছিল তাইতো আরো লাই পেতো।
কিন্ডার গার্ডেনে ভর্তি করানো হয়। মেহবুবা মেহের নয়তো ঐশী রহমান মায়া কে কিন্ডার গার্ডেনে নিয়ে যেতেন আবার নিয়ে আসতেন।
তখন মায়ার ছয় বছর বয়স।
স্কুল ছুটির পর আলভী ওর স্কুল ফ্রেন্ড দের নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। মায়া তখন বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে বাইরে ঘাসের উপর ল্যাটা দিয়ে বসে আছে। ঘাড়ের নিচে পড়ে থাকা চুল গুলো এলোমেলো চোখ মুখ ঢেকে ফেলেছে প্রায়। গায়ের জামায় মাটি লাগিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে। মুখে মাটি হাতেও মাটি। এই মেয়ে বোধহয় মাত্রই মাটি খেয়েছে। দেখে মনে হচ্ছে রাস্তার কোন পথশিশু বসে আছে। আলভী কে দেখেই ডেকে ওঠে,
_ ভাইয়া।
পাশ থেকে আলভীর একটা ফ্রেন্ড বলে,
_ আলভী ও তোদের বাড়ির বুয়ার মেয়ে ? দেখতে কিন্তু সুন্দর আছে শুধু একটু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখলে অনেক সুন্দর দেখা যাবে।
আলভী কটমট করে তাকিয়ে থাকে মায়ার দিকে। মায়ার দিকে দৃষ্টি রেখেই রাগী স্বরে বলে,
_ ও বুয়ার মেয়ে না। ও নিজেই এই বাড়ির বুয়া প্লাস মালি। এখন ভেতরে চল।
কাউকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ভেতরের দিকে এগিয়ে যায় আলভী। পেছন পেছন ওর ফ্রেন্ড রাও এগিয়ে যায়। বার কয়েক পেছন ফিরে মায়ার দিকে তাকায়। এত ছোট মেয়ে এই বাড়ির বুয়া প্লাস মালি ? কাজ করে কিভাবে ? আলভী নিশ্চই ওদের সাথে মজা করছে।
মায়া কে খাটে পড়তে বসিয়ে রেখে মেহবুবা মেহের ওয়াশরুমে গিয়েছেন। এই সুযোগে মায়া চুপি চুপি বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছে। ঐশী রহমান ভাবছেন মায়া তো ওর মায়ের সাথেই রয়েছে। তাই তিনি বুয়ার সাথে রান্না করছেন।
আলভী ড্রইং রুমে এসে দেখে মেহবুবা মেহের মায়া কে ডাকতে ডাকতে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছেন।
_ পে*ত্নী বাইরে গিয়ে মাটি খাচ্ছে।
আলভীর কথা শুনে মেহবুবা মেহের তাড়াহুড়ো করে বাইরে বেরিয়ে আসেন।
আলভীর কথা মায়া মেয়ে মানুষ। ও থাকবে শান্ত শিষ্ট প্রকৃতির। মেয়ে মানুষ মানেই সেজে গুঁজে পরিপাটি হয়ে থাকবে। দেখলে শুধু দেখতেই ইচ্ছে করবে। ও কেন এরকম পাগলের বেস ধরে থাকবে ? শাক*চুন্নি পে*ত্নীর মতো হয়ে থাকবে ? পরিষ্কার করে পরিপাটি করে দিলে পুতুলের মতো দেখা যায়, সেই মেয়ে ধরে থাকে পে*ত্নীর রূপ। এরকম দেখলে কার না রাগ উঠবে ? আলভীর মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে মায়া কে ধরে ইচ্ছে মতো মা রতে তারপর ওয়াশিং মেশিনে ধুয়ে পরিষ্কার করে সুন্দর করে সাজিয়ে দিতে। চুল গুলো শক্ত করে বেঁধে দিতে যেন জীবনেও আর খুলতে না পারে।
মায়া কে পরিপাটি করে রাখলে ওর দিক থেকে চোখ ফেরানো যায় না। তখন দেখে মনে হয় কোন রাজ্যের রাজকন্যা। কিন্তু দুই মিনিটে রাজকন্যা থেকে হয়ে যায় রাস্তাকন্যা। রাইটার সানা শেখ। গল্প টি আগে আগে পেতে সানা শেখ পেজ টি লাইক ফলো দিয়ে রাখবেন সবাই।
আলভী বরাবর গোছানো পরিপাটি একজন ছেলে। এলোমেলো কোনো কিছুই দুই চোখে দেখতে পারে না। ও যখন রাস্তায় বের হয় তখন এলোমেলো চুল ওয়ালা কোনো মানুষ দেখলেই ওর হাত নিশপিশ করতো চুল গুলো ঠিক করে দেওয়ার জন্য।
নিজে যেমন সব সময় তেমন মানুষ পছন্দ করতো।
মায়ার বয়স সাত পেরিয়ে আট হয়। আগের মতো এখন আর ড্রেস নোংরা করে না। পানিতেও বসে থাকে না বেশি। তবে চুল গুলো এখনো আগের মতোই করে রাখে। সেই সাথে ভীষণ অগোছালো।
ক্লাস টেনে ওঠার পরেই সুন্দরী গোছানো পরিপাটি স্টাইলিশ ক্লাস মেট মিলার সাথে প্রণয়ে জড়িয়েছিল আলভী। মিলার স্বভাব একদম আলভীর মতোই ছিল।
একদিন বিকেলে মিলার সাথে ঘোরাঘুরি শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় আলভী। বাড়িতে এসে দেখে ড্রইং রুমে বাড়ির সবাই বসে আছে। সাথে ওর ফুপু ফুপা আর ফুপাতো ভাই বোন।
আলভীর কোনো কথা কেউ শোনে না। ওই দিনই জোর করে মায়ার সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় ওকে। বেচারা ব্যাগ টা রাখার জন্য রুম অব্দি যেতে পারেনি।
যখন জানতে পারে প্রেম করে বলে এভাবে বিয়ে দিয়েছে মায়ার সাথে। তখন রাগে ক্ষোভে রুমে গিয়ে কাপড় চোপড় গুছিয়ে নেয়।
আর এক রাত ও থাকবে না এই বাড়িতে। মায়া কে বউ হিসেবে মানে না। অমন সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড রেখে এমন অপছন্দের পে ত্নী কে কে বিয়ে করতে চায় ?
ব্যাগ হাতে ড্রইং রুমে এসে দাঁড়ায়। ওর হাতে ব্যাগ দেখে কারণ জানতে চাইলে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে। কোনো ভাবেই থাকবে না এই বাড়িতে। এমন সিন ক্রিয়েট করে যা বলার বাইরে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে জীবনে এই বাড়িতে আসবে না। ওর অবস্থা দেখে ওর ফুপু ফুপা ওকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যায়। কয়েক দিন পাড় হলে ঠিক হয়ে যাবে এটাই ভাবে সবাই। কিন্তু কিছুই ঠিক হয় না। আলভীর রাগ জেদ দিন দিন বাড়তেই থাকে। সারা জীবন বউ ছাড়া থাকবে তবুও অমন মায়ার সাথে থাকবে না। যাকে দুই চোখে দেখতে পারে না, যাকে সহ্যই হয় না তার সাথে কিভাবে থাকবে? তখন ঐ ছোট মাথায় অত কিছু ধরতো না। জেদ চেপে থাকতে থাকতেই এত গুলো বছর পাড় করেছে। মায়া কে নিয়ে কখনো ভাবতেই চায়নি, ভাবেওনি। আর এখন বাবার মেইল পাওয়ার পর শর্ত দিয়ে দেশে এসেছে। ওর ভাববনা ছিল মায়া এখনো আগের মতোই রয়ে গেছে। কোনো পরিবর্তন হয়নি ওর। আগের মতোই চুল গুলো কাকের বাসা বানিয়ে রাখে।
,
,
মায়া সকলের সামনে থেকে সরে ডাইনিং রুমে চলে যায় খাবার খাওয়ার জন্য।
মাহির রেগে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। আলভী পেয়েছে টা কি ? ওর বোন কে নিয়ে খেলবে ? এত গুলো বছর কষ্ট দিয়ে শান্তি হয়নি? আরো দেওয়া বাকি আছে?
আহনাফ মাহমুদ ছোট ভাইয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন। আলভী মেইলে যা যা বলেছিল এখন তো তার কিছুই করছে না। কেমন গা ছাড়া ভাব নিয়ে চলছে এখন।
তিনি কোনো কথা বাড়ান না। ফ্রেস হওয়ার জন্য নিজের রুমে চলে যান।
আলভী নিজের মাথা আর মুখের ডিম পরিষ্কার করে যখন ফ্রেস হওয়ার জন্য রুমে চলে যায় তখন মায়া নিজেও নিজের রুমে চলে যায়।
আলভীর দাদি ছোট ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন,
_ আলভী কে কোনো ভাবে বুঝিয়ে সুঝিয়ে মায়ার সাথে সংসার করানো যায় না ? এখন তো মায়া বড় হয়ে গেছে। আলভী কে বুঝিয়ে বললে নিশ্চই বুঝবে।
ঐশী রহমান বলেন,
_ মা ঠিক বলছে। বিয়ে কোনো ছেলে খেলা নয় যে একবার বিয়ে করলাম আবার তালাক দিয়ে দিলাম। আলভী এখন আমাদের সামনে আছে। সবাই বোঝালে, বুঝিয়ে বললে নিশ্চই বুঝবে।
_ কোনো লাভ নেই। তোমাকে আমি শুধু এটাই বলেছিলাম আলভী বাড়িতে আসবে মায়া কে তালাক দেওয়ার জন্য। আর যদি মেয়ে পছন্দ হয় তাহলে বিয়ে করবে। আলভী যেই শর্ত গুলো দিয়েছে সেসব তোমাকে বলিনি আমি। ও আমাকে ওয়াদা করিয়েছে ও দেশে আসার পর ওকে মায়ার সাথে সংসার করার জন্য ফোর্স করতে পারবো না। ওকে বলতেও পারবো না একটা বার ভেবে দেখতে। ওকে বোঝানো যাবে না মায়ার সাথে সংসার করার জন্য। ও বাড়িতে আসার সাথে সাথেই মায়া কে তালাক দেবে। আমরা কেউ কিছু বলতে পারবো না। যদি বলি তাহলে ও দেশে আসবেই না। তাই আমাকে ওয়াদা করিয়েছে ও। ওকে আমার আর কিছু বলার নেই। ও মায়া কে তালাক দিয়ে মুক্ত করে দিক নিজেও মুক্ত হোক। মায়ার জন্য আমি ওর চেয়ে হাজার গুণ ভালো ছেলে খুঁজে বের করব। পেয়েও গেছি একজন। তারা নিজে থেকেই আমার সাথে যোগাযোগ করেছে। ছেলে ইংল্যান্ডে থাকে। ওখানে নিজস্ব বিজনেস আছে। দেখতে আলভীর চেয়ে বেশি সুদর্শন। খোজ খবর নিয়ে জেনেছি ছেলে টা খুবই ভালো। ছেলে টা মায়া কে বিয়ে করতে রাজি। মায়ার আগের বিয়ে নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
আলভী মায়া কে তালাক দিলেই ওই ছেলের সাথে মায়ার বিয়ে ফাইনাল করবো আমি নিজে। নিজের হাতে মায়ার জীবন টা দুর্বিষহ করে তুলেছিলাম এখন নিজের হাতেই গুছিয়ে দেবো আবার।
চলবে……….