হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব-০৯

0
15

#হৃদয়_মাঝে_হঠাৎ_তুমি
#সানা_শেখ
#পর্ব_9
[কার্টেসি ব্যতীত কপি করা নিষিদ্ধ]

ড্রইং রুমে এসে দাঁড়ায় আলভী। রাগে ওর মাথা ফেটে যাচ্ছে। ওকে তখন দৌড়ে বাইরে যেতে দেখে ঐশী রহমান আর মেহবুবা মেহের ড্রইং রুমে এসে দাঁড়িয়েছেন। আলভী কে দেখেই ঐশী রহমান বলেন,

_ এভাবে দৌড়ে কোথায় গিয়েছিলে? কিছু হয়েছে? আর এত রেগে আছো কেন?

আলভীর গম্ভীর স্বর।

_ বাড়ির মেয়ে কোথায় যায় , কার সাথে যায় খোঁজ খবর রাখো না?

_ কি হয়েছে?

_ মায়া কোথায় গেল?

_ ওর মামার বাড়িতে, কেন?

_ বলে গেছে তোমাদের?

_ হ্যাঁ।

_ কার সাথে গেল?

_ মাহিদ ওর সাথে।

_ মাহিদ ছিল না ওটা।

_ কোন টা?

_ যেই ছেলের সাথে মায়া গেল।

_ কোন ছেলের সাথে গেছে?

মায়ের কথায় বিরক্ত হয় আলভী। রেগেই বলে,

_ প্রশ্ন টা তো আমি করেছি, মায়া কার সাথে গেল? ছেলে টা কে আমি চিনলে তোমাদের জিজ্ঞেস করতাম নাকি? কে ওই ছেলে?

দুই জা একে অপরের মুখের দিকে তাকায়। মাহিদ এর সাথেই তো মায়ার যাওয়ার কথা। কার সাথে গেল তাহলে?
মেহবুবা মেহের বলেন,

_ ছেলে টা কে দেখতে কেমন?

_ লম্বা চওড়া মাহিদ এর চেয়ে বয়সে বড় মনে হলো। গাঁয়ের রঙ শ্যামবর্ণের। ক্লিন শেভ করা।

_ ক্লিন শেভ করা না, ওর দাড়ীই ওঠেনি এখনো। ওটা শিপন।

_ কোন শিপন?

_ ছোট ভাইয়ার ছোট ছেলে শিপন।

_ সেই ছোট্ট শিপন?

_ হ্যাঁ।

_ ও এত বড় হয়ে গেছে?

_ হ্যাঁ, শিহাব এর চেয়ে শিপন কেই বড় মনে হয়। সবার ছোট শিপন কিন্তু সবাই ওকেই সবার বড় বলে। বয়সের তুলনায় দ্রুত বড় হয়ে গেছে।

_ পুরো হরলিক্স ফ্যাক্টরি ওকে গুলে খাইয়েছে নাকি? সতেরো বছরের ছেলে কে পঁচিশ বছরের মনে হলো।

_ বলছি না, যে দেখে সেই ওকে সকলের বড় বলে।

_ মায়া মামার বাড়িতে কেন গেল?

_ আজকে শীতল এর জন্মদিন। জন্মদিন তো পালন করতে দেয় না। ওরা ছোটরাই নিজেদের মত করে আনন্দ করে। তাই মাহিদ আর মায়া কে যেতে বলেছিল। মাহির তো বড় হয়ে গেছে ওকে যেতে বললে যায় না। সেজন্য মায়া আর মাহিদ গেছে।

আলভী আর কিছু না বলে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। মায়া ওকে কি বলেছে সেসব আর বলে না মা শাশুরি মা কে। মায়া যে শয় তানি করে বলেছে ওকে জ্বা লানোর জন্য সেটা বুঝে গেছে। কি বজ্জাত মেয়ে ভাবা যায়? একটুর জন্য মিনি হার্ট এ্যাটাক হতে হতে বেঁচে গেছে।

দুই জা একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে ওঠেন। মায়া কে অন্য ছেলের সাথে দেখে আলভী জেলাস। সেজন্যই এত রেগে ছিল।
দুজনেই আবার কিচেনের দিকে এগিয়ে জান।
,
,
শিপন বাইক চালাতে চালাতে সামনের দিকে দৃষ্টি রেখেই বলে,

_ আপু ভাইয়া তো তোমাকে ডাকল কথা বললে না কেন? আর এত তাড়াহুড়ো করছিলে কেন?

_ কে ডাকল না ডাকল সেটা নিয়ে তো তোকে ভাবতে হবে না। তুই মনোযোগ দিয়ে বাইক চালা। ফেলে দিস না আবার।

_ রেগে যাচ্ছ কেন?

_ তুই মুখ বন্ধ রাখ।

_ ভাইয়া কেও নিয়ে আসলে ভালো হতো না?

_ এত যে ভাইয়া ভাইয়া করছিস, তোর কোন জনমের ভাই হয়? তুই চিনিস ওনাকে? আজকের আগে কখনো দেখেছিস?

_ ছোট বেলায় তো দেখেছিই।

_ তোর মনে আছে সে কথা?

_ একটু একটু।

_ ঢপ মা রা র আর জায়গা পাস না?

_ ঢপ মা রবো কেন? সত্যি কথা বলছি।

_ চুপ চাপ বাইক চালা।

_ তুমি তো আলভী ভাইয়া কে ভালো বাসতে আপু।

_ কে বলল তোকে?

_ আমি জানি।

_ ছোট মানুষ ছোটদের মতন থাকবি, বড় দের মতন কথা বলছিস কেন?

_ আমাকে তোমার ছোট মনে হয় এখনো? সবাই আমাকে বড় বলে।

_ শুধু হাত পায়েই বড় হয়েছিস, বুদ্ধিতে না।

কথা বলতে বলতে বাড়িতে এসে পৌঁছায় দুজন। বাইক পার্ক করে রেখে দুজন বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে। মায়া কে দেখেই দৌড়ে আসে শীতল।

_ আলভী ভাইয়ার বউ আপনার আসার সময় হলো তাহলে? আমি তো ভেবেছিলাম আজকে আসতেই পারবেন না।

_ আপু তোমাকে বলেছি না এই নামে সম্বোধন করবে না আমায়।

_ কেন? এই নামে সম্বোধন করলে তো তুই আ

_ চুপ করবে কি না? আমি কিন্তু চলে যাব।

_ এত রেগে যাচ্ছিস কেন? আচ্ছা চুপ করলাম, এখন আয়।

বাড়ির সকলের কাছে এগিয়ে যায় মায়া। অনেক গুলো দিন পর মামার বাড়িতে আসা হয়েছে।
_________________

রাত প্রায় দের টা। একা একা ছাদে বসে আছে আলভী। ঘুম দুই চোখের পাতায় ধরাই দিচ্ছে না। রুমে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে ছাদে উঠে এসেছে। গরমে ছাদেও ভালো লাগছে না, আবার রুমেও যেতে ইচ্ছে করছে না। বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে গেছে অনেক আগেই।

বিরক্ত হয়ে আবার সিগারেট ধরায়। ওর কেমন যে লাগছে ও নিজেই বুঝতে পারছে না।
জার্মানি থাকা কালীন ব্যস্ত সময় পাড় করতো সব সময়। কাজের মধ্যেই বিজি থাকতো। আর এখানে আসার পর থেকেই শুয়ে বসে সময় পাড় করছে।
আজকে সময় যেন পাড় হতেই চাইছে না।
কারো সাথে যে কথা বলবে সে উপায়ও নেই। সবাই ঘুমিয়ে আছে এখন।
রেলিং এর উপর বসে আবার সিগারেট ধরায়। উদাস মনে আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেটে টান দেয়।
ভাবতে শুরু করে অতীত, মায়া আর সেই পূরনো আলভী টা কে। সব কিছু আজ অন্য রকম হতে পারত। ওর আর মায়ার সুখের একটা সংসার হতো। দুজনের মধ্যে আজ এত এত দূরত্ব থাকত না।
সব কিছু কেমন এলোমেলো হয়ে গেছে। কোন কিছুই ঠিক নেই, আগেও ছিল না।
_______________

পরের দিন দুপুর পর বাড়ি ফিরে আসে মায়া আর মাহিদ। গত রাতেই ফিরে আসতে চেয়েছিল তবে ওর মামা মামী কেউই আসতে দেয়নি রাত বেশি হয়ে গিয়েছিল বলে।

ড্রইং রুমে এসে কাউকে দেখতে পায় না দুজন। শুধু মেড মায়া রয়েছে, ওই ডোর খুলে দিয়েছে। বাকি সবাই হয়তো নিজেদের রুমে বিশ্রাম নিচ্ছে।
,
,
আসরের নামাজের পর নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসে আলভী।
গত রাতে সারারাত জেগে ছিল। সকালে খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছিল তাই সারা দিন ঘুমিয়েই পাড় করলো।

ড্রইং রুমে এসে দেখে মাহিদ সোফায় বসে ফোন দেখছে ভাতিজী কে কোলে নিয়ে। নাহার বেগম অন্য সোফায় বসে তাসবীহ পাঠ করছেন। আশে পাশে নজর বুলায় আর কাউকে দেখতে পেলো না। মায়া বোধহয় নিজের রুমে রয়েছে।

হেঁটে এগিয়ে এসে বসে মাহিদ এর পাশে। মাহিদ ঘাড় ঘুরিয়ে বড় ভাইয়ের দিকে তাকায়। আলভী হাত বাড়িয়ে মানতাসা কে কোলে তুলে আদর করে। মাহিদ এর দিকে তাকিয়ে বলে,

_ কখন এসেছিস?

_ দুপুরের পরেই।

_ যা তৈরি হয়ে আয়।

_ কেন? কোথায় যাব?

_ মার্কেটে।

_ আমি?

_ হ্যাঁ, সাথে তোর বাইকের চাবিও নিয়ে আসিস যা এখন।

মাহিদ কে বসে থাকতে দেখে তারা দিয়ে বলে,

_ যা।

মাহিদ উঠে চলে যায় তৈরি হওয়ার জন্য।
আলভী মানতাসা কে নিয়ে মেতে ওঠে। মেয়ে টা কে ওর কাছে দারুন লাগে। একদম পুতুলের মতো দেখতে। কি সুন্দর করে ওকে ছোট আব্বু ডাকে। ছোট ছোট হাত দিয়ে গালে ছুঁয়ে দেয়, চুমু খায়। আধো আধো বুলিতে হাজারো কথা বলে।

পাঁচ মিনিটেই তৈরি হয়ে আসে মাহিদ।
মানতাসা কে দাদীর পাশে বসিয়ে দেয় আলভী। দাদীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,

_ তোমার কিছু লাগবে?

_ না।

দাদীর অভিমান ভরা গলার স্বর।

_ এখনো রেগে আছো?

_ আমি কে হই তোর যে তোর উপর রেগে থাকব?

_ আচ্ছা ফিরে এসে তোমাকে বোঝাব তুমি আমার কে হও। এখন আসছি, উম্মা।

দুই ভাই বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে।

বাইকের কাছে এসে দাঁড়ায় দুজন। মাহিদ চাবি এগিয়ে দেয় আলভীর দিকে।

_ এদিকে দিচ্ছিস কেন?

_ চালাও।

_ আমি?

_ তাহলে কে?

_ হাত পা ভাঙ্গতে চাস?

_ মানে?

_ আমি বাইক চালাতে পারি না। তুই চালা আমি পেছনে বসছি।

অবাক হয়ে বড় ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে মাহিদ।

_ তুমি বাইক চালাতে পারো না?

_ না, দেরি হয়ে যাচ্ছে বেশি কথা না বলে বোস তো সামনে।

_ আমি ভেবেছি তুমি চালাবে। তুমি চালাতে পারো না তাহলে গাড়ি নিয়ে যাই।

_ না , আমি বাইকেই যাব।

আর কথা না বাড়িয়ে সামনে উঠে বসে মাহিদ। পেছনে বসে আলভী।

_ আমি যত দিন আছি তত দিনে তুই আমাকে বাইক চালানো শিখাবি।

_ আচ্ছা।

বাইক স্টার্ট দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে দুজন। কিছু টা এগিয়ে আসার পর হঠাৎ বাইক থামায় মাহিদ। আলভী বিরক্ত হয়ে বলে,

_ মাজ রাস্তায় থামাচ্ছিস কেন?

_ সামনে দেখো।

সামনে তাকায় আলভী। একটি মহিলা দাড়িয়ে আছে একটা বাড়ির সামনে। দুই হাতে দুটো পাঁচ বছরের বাচ্চার হাত। পাশেই সাত আট বছরের একটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। মেয়ে টিকে একটু একটু পরিচিত মনে হলো আলভীর। তবে পুরোপুরি মনে পড়ছে না মেয়ে টা কে? কিছু সময় তাকিয়ে থাকার পর বলে,

_ কে ওই মহিলা? আর ওনাকে দেখতে বলছিস কেন?

_ চিনতে পারছো না কে ওটা?

_ উহু।

_ তোমার এক্স ভাইয়া।

চমকে ওঠে আলভী। আবার তাকায় সামনের দিকে। যা ভেবেছিল এখন তাই দেখছে। তিন বাচ্চার মা হয়ে গেছে মারিয়া। একটু পরেই মুচকি হেসে বলে,

_ ওই মহিলা মারিয়া?

_ হ্যাঁ।

_ এত বড় বড় ছেলে মেয়ে ওর?

_ তুমি জার্মানি চলে যাওয়ার পরের বছর বিয়ে করেছিলে পালিয়ে গিয়ে। তিন বছর পর বড় ছেলে কে কোলে নিয়ে ফিরে এসেছিল দুজন। তারপর পাঁচ বছর আগে যমজ ছেলে মেয়ে হয়েছে।

_ কার সাথে পালিয়ে গিয়েছিল? সিয়াম এর সাথে?

_ নাহ্।

অবাক হয় আলভী।

_ তাহলে কার সাথে?

_ এই বাড়ির বড় ছেলে তারেক রহমানের সাথে।

_ তারেক ভাইয়ার ফ্রেন্ড ছিল না?

_ হুম।

আলভী হেসে বলে,

_ সিয়াম কে ও ছ্যাঁকা দিয়েছে নাকি সিয়াম ওকে ছ্যাঁকা দিয়েছে?

_ তুমি বেঁচে গিয়েছিলে। নয়তো কয়েক দিন পর তোমাকেই ছ্যাঁকা দিয়ে দিতো।

_ মানে?

_ সিয়ামের সাথে ওর আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল।

_ তুই জানলি কিভাবে?

_ এটা তো সবাই জানতো। তুমি ফুপুদের বাড়িতে থাকতে তাই জানতে না কিছু।

_ ভাই ভীষণ আফসোস হচ্ছে।

_ কেন?

_ এক্স তিন বাচ্চার মা হয়ে গেছে আর আমি এখনো এক বাচ্চার বাপ হতে পারিনি।

_ সেটা তোমার দোষ।

_ হুম , চল এখন এখান থেকে নয়তো হার্ট এ্যাটাক চলে আসবে।

_ এক্স কে অন্যের বাচ্চার মা হতে দেখে?

মাহিদ এর মাথায় চাটি মা রে আলভী। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

_ উল্টা পাল্টা কথা বলবি তো লাথি দিয়ে তোর মাজার হাড্ডি ভেঙ্গে দেব বেয়াদপ। আমি এখনো বাপ হইনি সেজন্য এ্যাটাক চলে আসবে। বোন কে অল্প বয়সে বিধবা না করতে চাইলে বাইক টান দে শা লা।

চলবে………..