মেঘ পিওন পর্ব-৭+৮

0
8

#মেঘ_পিওন
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী
#পর্ব_৭
১১.
সকালে আইরা একটু তারাতাড়িই উঠে পরে আজ একটা টিউশন আছে খুব ইম্পর্ট্যান্ট তাই আগেই যেতে হবে।তাছাড়া বাড়িতে আজকাল তার দম বন্ধ লাগে।অন্তত কিছু সময় শান্তিতে থাকা তো যায়।রোজকার এর মতো আজো সবার সাথে নরমাল বিহেব করলো আইরা যেন কাল কিছুই হয়নি।মামা বাড়ির সবাই চলে যাবে বিকেল বেলা।মাহিন একপলক দেখলো আইরাকে।চোখমুখ ফোলা ফোলা নিশ্চয়ই ভোরের দিকে কেঁদেছে ।

আহিলকে ফিসফিস করে বললো
“তোর বোন এতো কিউট কেন বলতো কাঁদলেও ভালো লাগে।

আহিল একটু চোখ গরম করে তাকিয়ে সেও ফিসফিস করে বললো
“আমার বোনের দিকে কু নজর দিবি না শালা নয়তো চোখ তুলে নেব।

“একটু ভুল হলো।

” মানে?

“আরে তুই আমায় দুলাভাই ডাকবি শালা তো আমি তোকে ডাকবো।

” তোর লজ্জা করছে না আমার কাছেই তুই আমার বোনকে ফ্লার্ট করছিস?

“তুইও ভুলে জাস না কাল ওর ঘরে যেতে তুই আমায় সাহায্য করেছিস।এন্ড বাই দ্যা ওয়ে আমি ওকে ফ্লার্ট করলাম কখন।

” মাহিন চুপ কর শালা।

“তোমরা খাওয়া রেখে কি ফিসফিস করছো দুজন?

” কিছু না মামি।আমার খাওয়া শেষ এবার আমি উঠবো।

“আমার ও খাওয়া শেষ আমিও উঠছি।মা আমি একটু বাইরে যাচ্ছি একটু কাজ আছে।

আহিলের ভ্রু কুচকে গেলো মাহিনের কথায়।
” তোর আবার কি কাজ বাইরে?

“কেন আমার কি কোনো কাজ থাকতে পারে না।তোকে কেন বলতে হবে?

” যা ইচ্ছে কর।আইরা তোর হলো চল তোকে নামিয়ে দিয়ে যাই।

“হয়ে গেছে ভাইয়া তুমি যাও আমি আসছি।

আহিলের পিছু পিছু মাহিন ও বাইরে এলো।আহিল বাইকে বসে আবার উঠে গেলো।

” কি হলো কোথায় যাচ্ছিস?

“চাবি আনতে ভুলে গেছি।

” লাভ নেই চাবি আমার কাছে।

“তুই চাবি দিয়ে কি করবি দে আমায়।

” তুই গাড়ি দিয়ে যা আরুকে আমি নিয়ে যাচ্ছি।

“তুই যাবি কেন?

” আমার বউ আমি নিয়ে যাবো না তো তুই যাবি যা সর সামনে থেকে।

“তাই নাকি আর যদি তোর বউ করতেই না দেই তখন?

” থ্রেড দিচ্ছিস?যেন আমি তোর থ্রেডে ভয় পাই।তবুও যা তুই তো সম্পর্কে আমার বউ এর বড়ো ভাই একটু ভয় পাচ্ছি কেমন।

“এই ন্যাকামো বন্ধ করতো যত্তসব ঝামেলা ছ্যাহ।

“এই না ভাই এমন করিস না।আমি নিয়ে যাই না।আজ তো চলেই যাবো।আরুকে নিয়ে একটু ঘুরবো অন্য কিচ্ছু করবো না প্রমিজ।

“ভাইয়া আমি…।একি আপনারা এভাবে ধস্তাধস্তি করছেন কেন।কেউ দেখলে যা তা ভাববে।

” আরু বুড়ি আমার না জরুরী একটা কাজ এসে গেছে আমি যেতে পারছি না।তোকে মাহিন দিয়ে আসবে কেমন।গাড়ি নিয়ে যাচ্ছি আমি।মাহিন সাবধানে নিয়ে যাস আমার বুড়িকে আসছি।

“এই আরু আয় দাঁড়িয়ে আছিস কেন লেট হচ্ছে না তোর।

“হ্যাঁ আসছি।হুট করে ভাইয়ার কি কাজ পরে গেলো যে আমাকে না দিয়েই চলে গেলো।

” আমি কি জানি সেটা তুই তোর ভাইয়ার থেকেই জেনে নিস।নে ভালো করে বস।পরে গেলে আবার আমাকে কিছু বলতে আসবি না।

“আপনারা ওভাবে কি নুয়ে ঝগড়া করছিলেন?

” আরু তুই বড্ড প্রশ্ন করিস চুপ কর না বাপ।

মাহিনের কথায় বিরক্তিতে চোখমুখ কুচকে নিলো আরু।বেশি কথা না বলাই ভালো এই উজবুকের সাথে তাই সে চুপ করে গেলো।

প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে আইরার কোচিং এ আসতে।সেখানে মাহিন এসেছে ২০ মিনিটে। এতোক্ষণ রাস্তায় কেউ কোনো কথা বলেনি।বাইক থেকে নেমে যাওয়ার সময় মাহিন বলে-
“শোন তোর কি আজ ক্লাস করাটা খুব জরুরী?

” ইম্পর্ট্যান্ট কোনো ক্লাস নেই। তবে আমি ক্লাস ফাঁকি দেই না।কেন বলুন তো?

“আজ আর ক্লাস করতে হবে না।কোচিং শেষ করে সোজা এখানে চলে আসবি।আমি অপেক্ষা করবো।

” মানে দুই ঘন্টা সময় লাগবে আমার কোচিং শেষ হতে আপনি এতো সময় বসে থেকে কি করবেন মাহিন ভাই।আর ক্লাস না করে কোথায় যাব আমি?

“আমার সাথে যাবি।

” কোথায়?

“হাউ ডেয়ার ইউ আরু?আমি বলেছি মানে আজ ক্লাস করবি না।আমি লক্ষ্য করেছি তুই আগের মতো আমাকে ভয় পাস না।কেমন গায়ে পরা স্বভাবের হয়েছিস।বেয়াদব ও হয়েছিস।কোন সাহসে তুই বড়দের মুখে মুখে তর্ক করিস?

” আরে আমি কি করলাম আজব।ঠিক আছে যাবো না ক্লাসে।এবার আমি যাই অলরেডি ৫ মিনিট লেইট আমি।

“ঠিক আছে।তারাতাড়ি আসবি আমি এখানেই আছি।

আইরা আর কথা বাড়ালো না।লোকটার কথায় এখন বেশ রাগ হচ্ছে ওর।
“আমাকে অপমান করলো।আবার আমি নাকি তর্ক ও করলাম।কি এমন করলাম আমি।আমি বেয়াদব? তুই বেয়াদব তোর বউ বেয়াদব। সরি সরি তোর হবু বউ বেয়াদব। আমাদের বাড়িতে এসে আমাকেই অপমান করলো হুহ।

এসব ভাবতে ভাবতেই কোচিং ক্লাসের সামনে এসে স্যার এর থেকে পারমিশন নিয়ে ক্লাসে ঢোকে আইরা।ওর বন্ধুরা এখানে কেউ পরে না।তেমন কাউকে ভালো করে চিনেও না আইরা।এখানে ভর্তি হয়েছে দুই মাস হলো।এখানকার স্যার যিনি উনি ওর বাবার পরিচিত।
ক্লাসের মাঝেই আইরা লক্ষ্য করলো ওর পাশের বেঞ্চে বসে কিছু মেয়ে কি যেন বলছে আর ব্লাশড হচ্ছে।এভাবে একবার দু’বার তিনবারের মাথায় বেশ বিরক্তবোধ করে আইরা।তাই নিজেকে আর চুপ রাখতে পারলো না।

” তোমরা কি আমাকে নিয়ে কিছু বলছো।কি হয়েছে?

তার মধ্য থেকে লিজা নামের একটি মেয়ে বেশ উৎসাহ নিয়েই বলে-
“এক্সুয়ালি আইরা সুলতানা ইওর নেম রাইট?

” ইয়েস।

“তো যেটা বলছিলাম।আমি দেখলাম তোমাকে রোজ যিনি এখানে দিয়া যায় আজ তিনি নেই।উনি তোমার ভাই তাই তো?

” হ্যাঁ ভাই।কেন কি হয়েছে?

“আর আজ যিনি এসেছে?

এবার আইরা বুঝলো লিজা নামের মেয়েটি কি বলতে চাইছে।মনে মনে বেশ কয়েকটা গালি দিল লিজাকে।ছেলে দেখলেই তোর লাফালাফি কোথা থেকে আসে এতো।বেহায়া মেয়ে ছেলে ছ্যাহঃ।আরও অনেক কিছু বললো কিন্তু মুখে কিছুই প্রকাশ করলো না।

” উনি আমার মামার ছেলে মাহিন শিকদার।
কেন বলতো।উনি কি তোমায় কিছু বলেছে?

“আরে না না।আমি জানতে চাইছিলাম উনি কি বিবাহিত?

” না তবে মেয়ে দেখা হচ্ছে।

“তাই!এই আমার বাড়ি থেকেও ছেলে দেখছে আমার বিয়ের জন্য।তুমি একটু প্লিজ ম্যানেজ করে দাও প্লিজ প্লিজ।এক্সুয়ালি প্রথম দেখেই ক্রাশ খেয়ে গেছি আমি।প্লিজ একটু ম্যানেজ করে দাও।

” আমাকে বেয়াদব বলা তাই না মাহিন সাহেব। এবার ঠ্যালা সামলাও।
দেখো আমি কিছু ম্যানেজ করে দিতে পারবো না।তবে হ্যাঁ তুমি চাইলে একটা হেল্প তো করতেই পারি।

“তাই! কি করবে। যা বলবে তাই হবে।

” বেশি কিছু না।আমার সাথে যেও।আমি একটু দূরত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো তখন তুমি তোমার মনের কথা বলতে পারো।

“ঠিক আছে তাহলে তাই হবে।

১২.
যথারীতি ৭ টা থেকে ৯ টা অব্দি কোচিং চলার পর মাহিন তার নির্দিষ্ট যায়গায় এসে বাইক নিয়ে আইরার জন্য অপেক্ষা করলো।দুই মিনিটের মাথায় আইরাকে বের হয়ে আসতে দেখে একটু শান্তি পেল মাহিন।কিন্তু আইরা একা না ওর সাথে আরও দু’টো মেয়েকে দেখা গেলো।একবার দেখে আর দেখলো না মাহিন সে আইরার দিকেই তাকিয়ে আছে।হুট করে কপাল কুচকে নিলো মাহিন।তার থেকে প্রায় ৪ হাত দূরে আইরা দাঁড়িয়ে পরলো।আর সাথে যে মেয়ে দুটো ছিলো সেখান থেকে একটি মেয়ে এগিয়ে এলো।মেয়েটি অসম্ভব সুন্দর। মুখে মেকাপের প্রলেপ আছে যদিও।পরনের ড্রেসটা গায়ের সাথে লেগে আছে।

“হাই।

মাহিন বুঝলো না কাকে উদ্দেশ্য করে মেয়েটি হাই বললো তাই সেও কোনো প্রতি উত্তর দিল না।পাশ থেকে আবারও হাই বললো মেয়েটি।

” আপনি কি আমাকে বলছেন?

“হ্যাঁ। আপনি ছাড়া এখানে সুদর্শন যুবক আর কে আছে?

” এক্সকিউজ মি।আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।আমার বয়স জানেন আপনি। কি আপনি আপনি করছি হাটুর বয়সী মেয়ে।এতোদিনে বিয়ে করলে না তোমার মতো মেয়ের বাবা হতাম আমি।

“তাতে আমার কোনো সমস্যা নেই।আপনি বললে আমি পাপাকে আপনার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে পাঠাতে পারি।তার আগে বলুন আপনাকে আমি কি বলে ডাকলে আপনি খুশি হবেন?
লাজুক হেসে প্রশ্ন করলো লিজা।

” কি!বিয়ে!
মাহিন যেন আকাশ থেকে পড়লো। এই মেয়ে বলে কি।আর আইরা কেন দূরে দাঁড়িয়ে ওভাবে মুখ চেপে হাসছে।এতোক্ষণ এ মাহিন বুঝলো বিষয় টা।

“শোনো খুকি আ’ম অলরেডি এনগেজড। লুক মাই হ্যান্ড।আংটি দেখতে পাচ্ছো।হিসেব মতে তুমি আমাকে দুলাভাই বলে ডাকবে।কল মি জিজু।

” মানে আপনি বিবাহিত? কই আইরা তো এসব কিছু বলেনি।এতোবড় অপমান আইরাকে আমি কিছুতেই ছাড়বো না।
একপ্রকার রেগে মেগে চলে যায় লিজা।

“ইশ আইছে বিয়া করতে।আর তুই দূরে কেন বাইকে উঠে বস ইডিয়ট।

বাইক চলছে নিজ গতিতে। কিছু দূরে যাওয়ার পর মাহিন বাইকের স্পিড বারিয়ে দেয় আইরাকে ভয় দেখানোর জন্য।

” মাহিন ভাই বাইক থামান। এতো স্পিডে কেন যাচ্ছেন।দেখুন আপনার মরার ইচ্ছে হয়েছে আপনি মরেন।আমি এই বয়সে মরতে চাই না।প্লিজ প্লিজ বাইক থামান।

“এখনই ভয় পেয়ে গেলি আসল কাজই তো হলো না।

” আসল কাজ! কিসের আসল কাজ।কি করতে চাইছেন আপনি?

“তখন ওই মেয়েটাকে তুই এনেছিলি তাই না?যাতে আমাকে বিরক্ত করে।তুই ইচ্ছে করে এসব করেছিস।

” কি হলো চুপ করে আছিস কেন কথা বল বেয়াদব।

“সত্যি বলছি আমি কিছু জানি না।

এবার মাহিন আরো স্পিড বাড়ায় যেটা দেখে আইরা প্রায় কান্না করে দিলো।

” ভালোই ভালোই সত্যি বল নয়তো আজ তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।

“বলছি বলছি আগে প্লিজ স্পিড কমান।

” শিওর তো?

“হ্যাঁ রে বাপ।এক্কেবারে শিওর।

” ঠিক আছে এই আমি স্পিড কমালাম।নে এবার বল।

তারপর একে একে সবটা বলে থামলো আইরা।

“হয়েছে খুশি হয়েছেন তো।এবার বাড়ি চলুন আমি আর এক মুহূর্ত বাইড়ে থাকতে চাই না।

” তা তো হচ্ছে না।আজ আমরা সারাদিন ঘুরবো।কাল তো কিছুই হলো না তাই আজ তুই যা চাইবি তাই হবে।

“যা চাই তাই?

” হ্যাঁ। শুধু একবার বল কি চাস।
একবার বল আমাকে চাস নিজের সবটুকু উজার করে তোকে দিয়ে দিব আরু।মনে মনে বললো মাহিন।

“আমি যা চাই আপনি কখনো সেটা দিবেন না মাহিন ভাই।আমি যে কালো আমাকে কেউ ভালোবাসে না।আপনিও বাসবেন না।

” এই আরু চুপ করে গেলি কেন।

“কিছুই চাই না।তবে আপনি যদি চান কিছু দিতে তাহলে একটা নিরিবিলি যায়গায় নিয়ে চলুন যেখানে প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবো।যেই নিঃশ্বাসে দূষিত বায়ু নেই।

“তাই হবে।

তখন দুপুর।মাহিন আইরাকে নিয়ে শহর থেকে অনেকটা ভেতরে গ্রামের দিকে নিয়ে এসেছে। কোথায় এসেছে জানে না।এখানে এর আগে একবার এসেছিলো মাহিন আহিলরা সদরঘাটের আশেপাশে একটা ছোট্ট গ্রাম।বিশাল এক পার্কের মতো যায়গা।পাশে একটা ঝিল।তার ধার ঘেঁষে ছোট ছোট স্টল বসে এখানে।এখন দুপুর হওয়ায় তেমন কেউ আসেনি।বিকাল করে আস্তে আস্তে লোকসমাগম বাড়বে।

“আমরা কোথায় আছি মাহিন ভাই?

” সদরঘাটের পাশে এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না।শুধু যায়গা টা চেনা ।

“যায়গাটা অনেক সুন্দর। কিন্তু আসতেই আমাদের ৩ ঘন্টা লেগেছে।আপনারা তো আবার চিটাগং ফিরবেন।তারাতাড়ি ফিরতে হবে তো।সবাই চিন্তা করছে নিশ্চয়ই।

” কেউ চিন্তা করছে না।আমার যাওয়া নিয়ে তোকে কেউ ভাবতে বলেছে?

“উহু।ঠিক আছে সরি।আর ভাববো না আপনার কথা।

” কেন ভাববি না?তুই শুধু আমার কথাই ভাববি।আমি কিন্তু এখন ও একটা উত্তর পাই নি।

“কিসের উত্তর?

” আমাকে লুকিয়ে কেন দেখিস আরু?

“আপনাকে।লুকিয়ে কেন দেখতে যাবো।লুকিয়ে দেখার মতো কিছু আছে?শুধু সাদা চামড়া।

” নেই বলছিস!তাহলে তো ভালোই হলো তিন মাসের জন্য যে ট্রেনিং এ যাচ্ছি সেখান থেকে বিদেশিনী একটা ধরে নিয়ে আসবো কি বলিস?

“তিন মাস মানে!কোথায় যাবেন আপনি?

” তোকে কেন বলবো।কোনো মিথ্যেবাদীকে আমি কিচ্ছু বলতে চাই না।

“ঠিক আছে বলতে হবে না। আমি কে হই আপনার যে আমাকে বলবেন।

অনেকটা অভিমানী সুরে কথাটা বললো আইরা।আহিলের মুখে অন্য বিদেশিনীর কথা শুনে মনে সুক্ষ্ম কষ্ট ও জমা হলো বইকি।মাহিন সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।

” আরু তাকা আমার দিকে।এই আরু রাগ করলি?

“না আমি কারো সাথে রাগ করে থাকতে পারি না।এখানে আমার আর ভালো লাগছে না। বাড়ি চলুন মাহিন ভাই।

” যাবো না। তোকে এখানে রেখেই চলে যাবো।

“ইয়ার্কি করছেন?ভালো লাগছেনা মাহিন ভাই প্লিজ চলুন।

” যাবো তার আগে তোর মনে যেটা আছে সেটা বলে দে।

“আমার মনে কিচ্ছু নেই।

” তাই! তাহলে আমি যদি কাউকে বিয়ে করে নেই তাহলে তো তোর কোনো সমস্যা নেই তাই না?

“জানি না।

” কেন জানবি না?অবশ্যই জানবি তোর জানার ওপর সবকিছু নির্ভর করছে আরু।

শেষের কথাটা খুব করুন শোনালো আইরার কাছে।তাহলে কি লোকটা ও তাকে ভালোবাসে?কিন্তু এমন কিছু তো কখনো দেখেনি আইরা মাহিনের মাঝে।ওর এমন কোনো ব্যবহার ও মনে পরছে না যেটা থেকে শিওর হবে মাহিন তাকে ভালোবাসে বা পছন্দ করে।
“না না এসব কি ভাবছি আমি।আমার মতো কালো অসুন্দর মেয়েকে উনি কেন ভালোবাসতে যাবেন।

“যেটা ভাবছিস সেটা মুখেও আনিস না ইডিয়ট। তোর গায়ের রঙ নিয়ে আমি কখনো কিছু বলেছি?তুই কেন আমাকে বুঝিস না বলতো।

” আপনি কি করে বুঝলেন আমি কি ভাবছি!

“প্লিজ এখন এটা বলিস না যে তুই আমাকে পছন্দ করিস না।আমি সবটা জানি।

” কিন্তু বাড়ির কেউ আমাদের এই সম্পর্ক মেনে নিবে না।মামা নানু মামি কেউ না।

“কে মানলো কে মানলো না সেটা আমার দেখার বিষয় না।তুই মানিস তো?

” আমি..আমি মানে।

“মানিস কি না?

” হ্যাঁ মানি।

“ব্যাস আমার আর কিচ্ছু চাই না।এবার বাড়ির সবাইকে আমি ম্যানেজ করবো। তুই শুধু ঠিক থাকিস বাকিটা আমার ওপর ছেড়ে দে।মাত্র তিন মাস আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবি আরু?

” খুব পারবো মাহিন ভাই।

চলবে

#মেঘ_পিওন
#গোলাপী_আক্তার_সোনালী
#পর্ব_৮
১৩.
সময় বহমান। দেখতে দেখতে দুই মাস কেটে গেলো।এই দুইমাসে আহিল মার্জিয়ার দূরত্ব ও বেড়েছে বেশ।কাজের চাপে আহিল সময় দিতে পারছে না মার্জিয়াকে।মার্জিয়ার এই নিয়ে অনেক অভিযোগ। চেয়েও আহিল কিছু করতে পারছে না।আজ একটু বেশিই করেছে আহিল।আহিলের নিজের একটা বিজনেস আছে এক মাস হলো নিজের চাকরি ছেড়ে সেই বিজনেস এ জয়েনিং করেছে আহিল।যদিও স্বল্প টাকায় শুরু করেছি আরও এক বছর আগে।এক বছরে অনেক উন্নতি ও করেছে।তাতেই হিসাবে বেশ বড় অংকের গড়মিল পাওয়া যায়।অনেক কষ্ট করে এই বিজনেস শুরু করা।তার পরিশ্রম এর সব কিছু দিয়েই এটা দাঁড় করিয়েছে।সেখানে এতো বড় একটা এমাউন্ট মিসিং এটা মেনে নিতে পারছে না।ম্যানেজার এর সাথে যখন এসব নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় তখনই মার্জিয়ার কল আসে।আহিল রাগের মাথায় একটু বকা ঝকা করে মার্জিয়াকে।তাতেই মার্জিয়ার বেশ খারাপ লাগে।

তেমন কিছু তো বলেনি শুধু খোজ খবর নেওয়ার জন্যই তো কল করেছিলো।তাতে বকারই বা কি আছে?
মানছি খুব ব্যস্ততার মধ্যে আছে তাই বলে একটু কথা বলবে না?হুহ আমিও এবার মজা বুঝাবো।বিয়ের আগে তো আমিও রাগ করতাম কই তখন তো উনি এমন ব্যবহার করতেন না।যাবোই না আর আমি। এটা ভেবেই সে আইরাকে বলে নিজের মামার ফ্ল্যাট এ চলে আসে।ফোনটাও রেখে আসে নিজেদের রুমে।এদিকে আহিল বার বার ফোন করে না পেয়ে সব কাজ ফেলে বাসায় ফিরে আসে।রাস্তায় জ্যামে পরে তবুও বাসায় ফিরতে দেরি হয়ে যায়।

তখন প্রায় ৯ টা ছুই ছুই।রুমে গিয়ে কয়েকবার মার্জিয়াকে ডাকে কিন্তু সারা পায় না।ভেবেছে আইরার কাছে আছে সেখানে গিয়ে জানতে পারে মার্জিয়া তার মামার ফ্ল্যাটে গেছে।মনে মনে হাসে আহিল।

“বোকা একটা। মামার বাড়ি কি খুব দূরে যে রাগ করে চলে যাবে আর আমি যেতে পারবো না।সত্যিই আজ হয়তো একটু বেশিই কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।

ফ্রেশ না হয়েই আহিল জহির রায়হানদের ফ্ল্যাটে গিয়ে কলিং বেল বাজায়।রুবি বেগম দরজা খুলে দেয়।

” আসসালামু আলাইকুম মামি কেমন আছেন। মামা মনির সবাই ভালো আছে?

“সবাই ভালো বাবা।তোমার মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেন।বসো আমি একটু শরবত করে আনি।খাওনি নিশ্চয়ই। আমি খাবার গরম করে আনি।

” তার দরকার নেই মামি।আমি পরে খাবো।আপনি গিয়ে শুয়ে পরুন রাত জাগার অভ্যাস নেই তো।

“তা বললে কি করে হবে।তুমি আমাদের জামাই তোমাকে না খাইয়ে শুয়ে পরি কি করে।

” একদিনেই জামাই আদর করতে চাইছেন?আমি আরো ভাবলাম দ’দিন থেকে যাবো।

“এমা ছিঃ ছিঃ অবশ্যই থাকবে।এটা তো আমার জন্য আনন্দের খবর।এই সুযোগে জামাই আপ্যায়ন এর ও একটা সুযোগ পাবো।

” তাহলে লক্ষি মেয়ের মতো গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন।মার্জিয়া কিছু খেয়েছে?

“দেখনা বাবা সেই কখন থেকে বলছি কিছু খেয়ে নিতে এসেছে পর ঘর থেকেই আর বের হয়নি।মনির এতোক্ষণ ওর সাথেই ছিলো একটু আগেই নিজের রুমে গেছে।মার্জিয়া বললো ওর খিদে নেই।জিগ্যেস করলাম কিছু হয়েছে কি না তাও বলছে না।কিছু কি হয়েছে?

” না মামি।আসলে একটু কাজের জন্য ব্যস্ত থাকায় ওকে ঠিক মতো সময় দিতে পারি না তাই একটু রাগ করেছে। আপনি চিন্তা করবেন না।আমি দেখছি কি করে রাগ ভাঙাতে পারি।

“তাহলে বাপু তোমাদের সমস্যা তোমরাই মিটিয়ে নাও।আমি গেলাম।

পুরো রুম অন্ধকার। আহিল অন্ধকারেই সারা রুমে একবার চোখ বুলালো।না কেউ নেই।কি ভেবে বারান্দায় গেলো।যা ভেবেছিলো তাই। চুল খুলে এলোকেশী একটা মেয়ে অগোছালো ভাবে আকাশের পানে তাকিয়ে।দেখে মনে হচ্ছে তার মত অভাগী এই পৃথিবীতে আর নেই।

” এভাবে না বলে চলে এলে যে?বলে আসবে তো।তাহলে এতো চিন্তা হতো না।

“আজ এতো তারাতাড়ি ফিরলেন যে।ক্ষতি হয়ে গেলো না?

” রাগ করেছো?

“উহু।

” অভিমান?

“হু।

” তো এখন কি করতে পারি।এই চকলেট খাবে?

“আমি কি বাচ্চা?

” নও? বাচ্চারাই তো তোমার মতো কথায় কথায় রাগ করে।

“একদম ফালতু কথা বলবেন না।আমার অভিমান আপনার কাছে বাচ্চামো মনে হচ্ছে?আপনি আমাকে আর ভালোবাসেন না ‘#মেঘ_পিওন’।আগের মতো চিঠি লিখেন না।যেই চিঠি পড়ে আমি এক আকাশ সমান তৃপ্তি পেতাম।

” এদিকে ঘুরো।জানোই তো আমি আমাদের ভবিষ্যতের জন্যই এসব করছি।আমি চিঠি লিখি না ওটা তুমি মিস করো তো? কোনো ব্যাপার না এবার থেকে রোজ লিখবো।তখনকার ব্যবহারের জন্য আমি সরি। এই দেখো কান ধরছি।আর বকবো না।প্লিজ ক্ষমা করে দাও।

“হয়েছে এতো ঢং করতে হবে না।চলুন উপরে খাবার দিচ্ছি খেয়ে নিন।

” চলে যাবো বলছো কিন্তু আমি তো শাশুড়ী মাকে বলে এলাম দু’দিন থাকবো।ছুটি নিয়েছি তো।

“সিরিয়াসলি!

” ইয়েস বউ।এই দুইদিন তোমাকে নিয়ে ঘুরবো।যেখানে যেতে চাও সেখানে নিয়ে যাবো বলো কোথায় যেতে চাও।

“পরে ভেবে বলবো।আগে ফ্রেশ হয়ে নিন খাবার গরম করে আনছি।

” আমি তো অন্য কিছু।

“কি..?

” কিছু না যাও গরম করো ফ্রেশ হয়ে আসছি।ধুর বা* বুঝেও না।তোর কপালে বহুত কষ্ট আছে বুঝলি আহিল।এই জনমে আর ছাওয়াল-পানের মুখ দেখা লাগবো না।

এই বলে ওয়াশরুমে চলে যায় আহিল।এদিকে দরজার আড়াল থেকে সবটা শুনে মার্জিয়া।মুখে একটা বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে উঠে আহিলকে জব্দ করতে পেরে।
“বেশ হয়েছে।এবার ঠ্যালা সামলাও চান্দু।

সকালে মার্জিয়া খুব ভোরে উঠে। রাতের কথা মনে করে বার বার লজ্জা পাচ্ছে।পাশেই আহিল ঘুমে বিভোর।মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। তবুও দেখতে ভালো লাগছে।

” ইশ লোকটা সারাদিন কতো কষ্ট করে।চেহারাও শুকিয়ে গেছে।আমার এভাবে হয়তো রাগ করাটা উচিৎ হয়নি।

“এভাবে কি দেখছো।হবে নাকি আরেকবার?

” আপনি জেগে আছেন অসভ্য লোক।আমি যাচ্ছি শাওয়ার নিতে।

” যেওনা সাথী। লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছিলে এখন জরিমানা দাও।

“জরিমানা দিচ্ছি।এই যে মগে পানি দেব?

” এই না বউ।আমার কোনো জরিমানা লাগবে না।যাও তুমি শাওয়ার নাও।আমি আরেকটু ঘুমাই।

সকালের নাস্তা মার্জিয়া রুবি বেগম দুজনে মিলেই বানালো।বিয়ের পর এটাই প্রথম রাত্রিযাপন এখানে আহিলের।বলতে গেলে একেবারেই নতুন জামাই সে।তাই রুবি বেগম কোনো কমতি রাখেন নি। জহির রায়হান সকালের নাস্তা করে অফিসে চলে যান।যদিও রুবি বেগম বলেছিলো আজ না যেতে। মার্জিয়া বললো যেতে।একটু তারাতাড়ি ছুটি নিয়ে আসলেই হবে।তাছাড়া আহিল তো বলেছে দু’দিন থাকবেই।তাহলে অফিস ছুটি নেওয়ার কোনো দরকার নেই।তবুও জহির রায়হান সমস্ত বাজার সদাই করে দিয়ে গেলেন যাতে কোনো রকম অস্বস্তিতে না পরতে হয়।

মার্জিয়া আর রুবি বেগম যখন নাস্তা করতে বসলেন ঠিক তখন সেখানে আইরা, আহাদ রহমান এর আগমন ঘটে।

“আমাদের ছাড়াই খেয়ে নিচ্ছেন বেয়ান?

” আরে আপনি আসুন বসুন।এখন ও খাইনি।

“শুনেছি খাওয়ার সময় নাকি শত্রু আসে ছোট বেলায় মা চাচিরা বলতেন।

” সে না হয় হলাম শত্রু ক্ষতি কি।কেমন আছো আইরা মা।তুমি তো এখন এখানে আসোই না।আগে যদিও আসতে।

“সময় হয় না আন্টি।ভাইয়া উঠেনি?

” তোমার ভাই ঘুমোচ্ছে আরু।বললো পরে উঠবেন।বাবা আফিসে যাননি আজ?

“যাব তো তার আগে বেয়ানের হাতের তৈরি খাবার খেয়ে যাই।আরুকে কলেজে দিয়েই আমি অফিস যাবো মা।বসো তুমিও একসাথে খাই সবাই।

” রাতের দাওয়াত রইলো ভাইজান।আপা তো আসবেন না আপনারা দু’জোন আসবেন কিন্তু।

“অবশ্যই আসবো।

আহিলের ঘুমটা আজ ভালোই হয়েছে।কত রাত ভালো করে ঘুমাতে পারে না তার হিসেব নেই।আহিল যখন ঘুম থেকে ওঠে তখন প্রায় ১০টা বাজে।এতো বেলা অব্দি ঘুমিয়েছে তাও শশুর বাড়িতে এটা ভেবেই কেমন লজ্জা লাগছে আহিলের।মার্জিয়াকে একটু শাসাল কেন তাকে ডেকে দেয় নি।

“আমি ডাকিনি আপনাকে!বদমাইশের বস্তা।যখনই ডেকেছি তখনই বলেছেন আরেকটু ঘুমাই।আমি নাকি আপনাকে ঘুমোতে দিই নি।এখন আমাকে সব দোষ দিচ্ছেন?

” ঠিকি তো ঘুমোতে দিলে কই।

“আহিল।

” সরি সরি।যাও বউ খাবার রেডি করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।

১৪.
এক সপ্তাহ হয়ে গেছে মাহিন বিদেশ থেকে স্পেশাল ট্রেনিং নিয়ে এসেছে।যেহেতু পেশায় সেও একজন ইঞ্জিনিয়ার। ট্রেইনার হিসেবে তাকে তিন মাসের জন্য জাপান, ভুটান সহ আরো কিছু দেশে যেতে হয়েছে। সুযোগ পেয়ে এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায়নি মাহিন। এদিকে চিটাগং ফিরে বাবার সাথে একটা বিষয় নিয়ে বেশ রাগারাগি হয় মাহিনের।সব কিছু মিলিয়ে একটা তিক্ততা পরিবেশে ছিলো। এর মধ্যে আহিলের থেকে শুনতে পায় আদিবা বেগম তার কোন পরিচিতের ছেলের সাথে আইরার বিয়ে দিতে চান ।আর এর সাথে বাবাও জরিত।তিনিই আদিবা বেগমকে উষ্কেছেন যাতে ছেলেকে হাতের মুঠোয় আনা যায় ।আর সব চেয়ে বড় কথা আইরাও নাকি এতে মত দিয়েছে। তাই সেই উপলক্ষে কাল আইরাকে ছেলের বাড়ি থেকে দেখতে আসছে।মাহিনের বাবা একমাত্র মামা হিসেবে সেখানে উপস্থিত থাকবেন।মা মনিরা বেগম জানায় সব কথা মাহিনকে।তিনি নিজেও জানতেন না।কোনো ভাবে জানতে পেরেই আগে মাহিনকে জানিয়েছে।মাহিন সেসময় একটা কাজে বেরিয়েছিলো নিজের বাইকে করে।খবর শোনা মাত্রই আর দেরি করে না।সমস্ত কাজ ফেলে ঢাকার উদ্দেশ্য নিয়ে রওনা হয়।যদিও আহিল অনেকবার আইরাকে বুঝিয়েছে যাতে মায়ের কোনো কথায় কান না দেয় তবুও আইরা শুনেনি ভাইয়ের কথা।

“কখন থেকে কল করছি ধরছিস না কেন?দুদিন ধরে চেষ্টা করছি কথা বলার কোনো রেসপন্সই করছিস না।সমস্যা কি তোর ইডিয়ট? শুনলাম ফুপি তোর বিয়ে ঠিক করেছে আর তুই ও রাজি হয়ে গেছিস?
কি হলো মুখে কুলুপ এটেছিস কেন কথা বল।

” আপনি আমার ঘরে এলেন কি করে আমি তো।

“লক করেছিলি জানি।তুই ভুলে যাচ্ছিস আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার এসব লক খোলা আমার কাছে কোনো ব্যাপারই না।

তারপর একটু থামে মাহিন।আইরাকে ভালো করে পা থেকে মাথা অব্দি লক্ষ্য করে।স্বদ্য গোসল দিয়েছে মেয়েটা।চুল থেকে এখন ও পানি পরছে যেন জীবন্ত ঝর্না।
” গোসল দিয়েছিস?আরে বাহ আবার শাড়ি ও বের করেছিস। শাড়িটা খুব সুন্দর তো।এটা পরেই তো ওই ছেলের সামনে যাবি তাই না?

“মা..মাহিন ভাই।আপনাকে ঠিক লাগছে না।

” ঠিক লাগার কথা?কোন সাহসে তুই এই বিয়েতে রাজি হয়েছিস বল?

“আপনিও তো হয়েছে বিয়েতে রাজি।আমাকে না জানিয়ে দেশে এসেছেন।এসেই মেয়ে দেখেছেন।বলুন দেখেন নি?
আমাকে কি এখন আপনার কোনো প্রয়োজন আছে মাহিন ভাই?আপনি যেহেতু নিজের জন্য মেয়ে দেখেছেনই তাহলে আমাকে কেউ দেখতে আসলে আপনার কি সমস্যা?

” খুব সাহস বেড়েছে তোর তাই না?আমি মেয়ে দেখেছি কে বলেছে তোকে হ্যাঁ?

“দেখেন নি? তাহলে এই ছবি গুলো কিসের। কোথা থেকে এসেছে।এগূলো সব মিথ্যে?

আইরা নিজের ফোন বের করে কিছু ছবি দেখালো মাহিনকে যেটা দেখে মাহিনের হাত মাথায় উঠে গেলো।

” শিট। এগুলো তুই কোথায় পেলি।কে দিয়েছে?

“তার মানে এগুলো সত্যি!আপনি আমাকে ঠকিয়েছেন মাহিন ভাই।আপনাকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না।
আপনি আমায় কি কথা দিয়েছিলেন মাহিন ভাই।ট্রেনিং থেকে ফিরে সবাইকে সবটা জানাবেন। জানিয়েছেন?উলটো কি করলেন বিদেশ থেকে এসেই বিয়ের জন্য পাত্রি দেখতে চলে গেলেন।

“দেখ আরু ছবিগুলো সত্যি কিন্তু তুই যা ভাবছিস তোকে যা বোঝানো হয়েছে তা সত্যি নয়।প্লিজ লেট মি এক্সপ্লেইন আরু।আমি বুঝিয়ে বলছি তোকে।

” কিচ্ছু শুনতে চাই না।চলে যান আপনি।আমি এই ছেলেকেই বিয়ে করবো আজই করবো আপনার সামনে।

“এই চুপ একদম চুপ।আর একবার এই কথা বললে তোর জিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো।আরু সোনা আমি তোকে ছাড়া কাউকে ভালোবাসি না।এই তাকা আমার দিকে।আমায় বিশ্বাস করিস না।তোর মাহিন ভাই তোর সাথে এটা করবে এটা তোর বিশ্বাস হয় বল?

“প্রথমে আমিও বিশ্বাস করিনি। কিন্তু সব কিছু আমার চোখের সামনে কিভাবে না বিশ্বাস করে থাকতে বলছেন?

” আরু সেদিন এসব হয়েছে ঠিকি কিন্তু আমি এই বিয়েতে রাজি হইনি।আমি তোকে সব বুঝিয়ে বলছি।

★অতীত★
“আচ্ছা তুমি যে মাহিনের বিয়ে ঠিক করেছো এটা কি ওকে জানানোর একটুও প্রয়োজন মনে হলো না তোমার?ছেলেটা আজই দেশে ফিরছে এসেই যদি এসব দেখে তাহলে ও কিভাবে এটা মেনে নিবে আমি জানি না।

” দেখো মনিরা আমি যা করেছি সব ওর ভবিষ্যতের কথা ভেবেই করেছি।

“তবুও আমি বলবো তোমার ওকে সবটা জানানো উচিৎ। ঠিক আছে আমি জানাচ্ছি।

” খবরদার বলছি তুমি ওকে কিচ্ছু জানাবে না।আর কিছুক্ষণের মধ্যেই ও চলে আসবে তখন এলেই সব বলবো।তার আগেই রাইসারাও চলে আসবে।রাইসা মাহিনকে পছন্দ করে মাহিনেরও উচিৎ রাইসাকে মেনে নেওয়া।তুমি ওকে কিচ্ছু জানাবে না মনিরা তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।

তখন বিকেল বেলা।বাড়ির ড্রয়িং রুমে রাইসা,মিঃ ফয়সাল চৌধুরী এবং স্ত্রী নিলিমা বসে আছে।তাদের হালকা মিষ্টি ফলমূল খেতে দিয়েছে মনিরা বেগম ইচ্ছা না থাকা সত্বেও। তিনি মনে মনে ভয় পাচ্ছেন।মাহিন বাড়িতে এসে এসব জানলে কি করবে সেসব নিয়ে।কারণ তিনি জানেন মাহিন আইরাকে কতটা ভালোবাসে।সেখানে এইসব তামাশা ও কিছুতেই মেনে নিবে না।

“হ্যাঁ আমি এই জাস্ট বাড়িতে এলাম আহিল।এখন মায়ের হাতের স্পেশাল বিরিয়ানি খাবো তারপর ফ্রেশ হয়ে লম্বা একটা ঘুম। রাখছি হ্যাঁ।
কথা বলতে বলতে মাহিন তখন মেইন দরজার দিয়ে ঘরে ঢুকছিলো। ড্রয়িং রুম ভর্তি মানুষ দেখে মায়ের দিকে তাকালো।মা ইশারায় বললো শান্ত থাকতে।

” আরে এই তো মাহিন।এতোক্ষণ তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।এসো এখানে বসো।

“আমার জন্য মানে!কিছু বুঝলাম না আংকেল।

” সব কথা কি দাঁড়িয়েই হবে। মাহিন তুমি আমার সাথে এসো আমি সব বুঝিয়ে বলছি।

মাহিনকে নিয়ে মহিউদ্দিন সিড়ি বেয়ে উপরে নিয়ে যান।তার ঠিক কিছুক্ষণ পরেই মাহিন রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।

“এতো তারাতাড়ি কথা হয়ে গেলো?তাহলে জামাই এবার তুমি রেডি তো?

” সরি আংকেল।আপনার মেয়েকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।

“মজা করছো।আমি জানি তুমি মজা করছো।দেখো আমার মেয়েটা তোমার জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে।

” এই দায় আমার নয়।আপনার মেয়ে কেন অপেক্ষা করছে কার জন্য করছে সেটাও আমার দেখার বিষয় নয়।মেইন কথা আমি এই বিয়ে করছি না।এবার আপনারা আসতে পারেন।

“মাহিন ভদ্রভাবে কথা বলো।ভুলে যেও না উনি আমার বন্ধু।

” তো বন্ধুকে বন্ধুর মতোই থাকতে বলো বাবা।
শোনো রাইসা তোমার মনে আমাকে নিয়ে কি আছে আ’ম নট ইন্টারেস্টেড।তুমি আমার বয়সে অনেক ছোট তাই তুমি করেই বলছি।আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি আর বিয়ে করলে তাকেই করবো।

মাহিন যখন রাইসার সাথে কথা বলছিলো ঠিক সেই সময় মিমি দূর থেকে কিছু ছবি তুলে সেটা আইরাকে পাঠিয়ে দেয়।মিমি আগে থেকেই জানতো মাহিন আইরাকে পছন্দ করে।একদিন মাহিন আর আইরার ফোন-আলাপ শুনে নিয়েছিলো মিমি।তখনই জেনেছিলো সবটা।যেই বাড়িতে ও বউ হয়ে যেতে পারেনি সেই বাড়ির মেয়েকে এই বাড়ির বউ হতে দিবে না ও।আইরা মিমিকে পছন্দ করে না সেটাও খুব ভালো করেই জানে মিমি।তাই এই সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না।নিজের কাজ শেষ করে আবারও নিরবতা পালন করে মিমি।আর কেউ কিচ্ছু বুঝতে পারে না।ফয়সাল চৌধুরী নিজের স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে রেগে বেড়িয়ে যান মাহিনদের বাড়ি থেকে।
যাওয়ার আগে মহিউদ্দিনকে কিছু কথা শুনিয়েও যান

“কাজ টা ঠিক করলেন না মহিউদ্দিন সাহেব।আজ যেই অপমান আপনারা আমাদের করলেন তার প্রতিশোধ ও আমি কড়ায় গন্ডায় বুঝে নিব।

চলবে