মাতৃসত্তা
#পর্বঃ৪এবং শেষ
লেখনীতেঃসুমাইয়া_আফরিন_ঐশী
বিয়ে হওয়ার কিছুক্ষণ পরই শাফায়াত চেয়ারম্যান নতুন বউ নিয়ে নিজের বাড়িতে চলে এসেছে। মায়ের সাথে রুহিকেও নিয়ে এসেছেন উনি। হাসি-খুশী দু’বোন ও বাবা’র বাড়িতে এসেছে, গতকাল। বিয়েতে ওরা উপস্থিত ছিলো না। বাসায় বসে দু’জনই বাবা ও নতুন মায়ের আসার অপেক্ষা করছিলেন। উনাদের দেখে এগিয়ে আসলো দু’বোন। বাবা’র পাশে মা ছাড়া অন্য মহিলা’কে দেখে চোখ টলমল করছে তাদের। শাফায়াত মেয়েদের মনের অবস্থা বিচক্ষণ করে গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। নেহা সিদ্দিকী ঘরে প্রবেশ করতেই, শাফায়াত এসে সদ্য বিবাহিত স্ত্রী’র হাতটা ধরলো। পরমুহূর্তে দুই মেয়ে’কে উনার হাতে হাত তুলে দিয়ে কোমল কণ্ঠে বললো,
“আমার মা হারা মেয়েদের জন্য তোমাকে ওদের দ্বিতীয় মা করে এনেছি, নেহা। আমার মা হারা মেয়ে দু’টোকে কখনো বুঝতে দিয়ো না, ওদের মা নেই। আজ থেকে ওরাও তোমার মেয়ে। ওদের কখনো কষ্ট দিও না, প্লিজ! মেয়ে দু’টো আমার বড্ড আদরে..”
শাফায়াত চেয়ারম্যান একটু দম নিলো। পরক্ষণে মেয়েদের দিকে তাকিয়ে পুনরায় আবারো বললো,
“আর মেয়েরা উনি তোমাদের “সৎ মা” বলে কখনো অবহেলা করো না তাকে। আমি আশা করছি, তোমরা উনার প্রাপ্য সম্মানটুকু দিবে।”
পাশে থাকা রুহির দিকে তাকিয়ে, “আর এই হলো রুহি, তোমার নতুন মায়ের মেয়ে। এই রুহিও আজ থেকে তোমাদের আরেকটা বোন। তাই, তোমারা সবাই মিলেমিশে থাকবে।”
নিজের কথা শেষ করে একটু দূরে সরে দাঁড়ালেন, উনি। হাসি-খুশি নিশ্চুপ, নির্বাক! এরিমধ্যে নেহা সিদ্দিকী মৃদু হেসে হাসি-খুশির গাল ছুঁয়ে বললো,
“যদিও আমি তোমাদের গর্ভধারিণী নয়, তবুও আমি তোমাদের মা হওয়ার চেষ্টা করবো। রুহি যেমন আমার মেয়ে তোমরাও তেমনই আমার মেয়ের মতোই থাকবে। সৎ মা বলে আমাকে দূরে সরিয়ে দিও না কখনো। তোমাদের যখন ইচ্ছে হবে জামাই, নাতি-নাতনিদের নিয়ে চলে আসবে বাবা’র বাড়ি। আমি তোমাদের কখনো অমর্যাদা করবো না। তোমাদের যখন যেটা খেতে ইচ্ছে করবে, মায়ের মতো আমাকেও মন খুলে বলবে। আমি আমার সাধ্য মতো তোমাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু দিবো।”
মেয়েরা এবারো নিশ্চুপ। নেহা সিদ্দিকী ওদের বিচক্ষণ চোখে পরখ করে, হাসির কোলে থাকা হাসিবকে আদর করতে লাগলেন। বাচ্চাটা নতুন মানুষের আদর পেয়ে খিলখিল করে হেসে উঠলো।
হাসিব হচ্ছে হাসির ছেলে। সেবা’র মা ম’রা’র দুই মাস পরই ছেলে হয় তার। আর কয়েকমাস গেলে এক বছর পূর্ণ হবে, বাচ্চাটার।
.
.
কেটে গিয়েছে কয়েকটি মাস। রুহি সেবার কয়েকদিন মায়ের সাথে থেকেই ঢাকা চলে গিয়েছে। হাসি-খুশীও চলে গিয়েছে নিজেদের সংসারে।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ছন্নছাড়া সংসারটায় আবার প্রাণ ফিরে এসেছে, নেহা সিদ্দিকী’র স্পর্ষে। মানুষ হিসেবে নেহা সিদ্দিকী চমৎকার! সবার সাথে তাল মিলিয়ে থাকছে। যদিও মেয়েরা তাকে বাঁকা চোখে দেখে, মা বলে ডাকেনি কখনো।
ব্যাপারটা ধারণা করেও বরাবরের মতো সূক্ষ্ম ভাবে সেসব এড়িয়ে যায় উনি।
মেয়েরা মাঝে মাঝে বেড়াতে আসলে তাদের আদর-যত্নের কমতি রাখে না, নেহা সিদ্দিকী। স্ত্রী’র আচরণে মুগ্ধ, শাফায়াত চেয়ারম্যান। দু’জনের মধ্যে ভালো একটা সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ইতোমধ্যে। সময় গুলোই ভালোই চলছে।
এভাবে আরো কয়েক মাস যেতেই নেহা সিদ্দিকী’র মাঝে নতুন অস্তিত্বে’র আবিষ্কার ঘটে। ব্যাপারটা ক্লিয়ার হতেই আজ যখন টেষ্ট করে জানতে পারে, “সে পুনরায় মা হতে চলছে” আনন্দে চোখ ভিজে গেলো তার। রুহি জন্ম নেওয়ার পর আরো একটা সন্তানে’র জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। কিন্তু হলো না, এরিমধ্যে রুহির বাবা মা’রা গেলো। স্বপ্ন, সুখ সবকিছু ওলটপালট হয়ে গেলো। পুরনো চাপা পড়া সেই স্বপ্নেরা হাতছানি দিলো, নতুন সংসারে। নেহা সিদ্দিকী বেজায় খুশি। শাফায়াত চেয়ারম্যান, বাহিরে। এখনো ব্যাপারটা কেউ শুনেনি। নেহা সিদ্দিকী সবার আগে কল দিলো নিজের মেয়ে’কে। রুহি মাএই ক্লাস করে বেরিয়েছে। এরিমধ্যে মায়ের ফোন পেয়ে রিসিভ করে সহাস্যে বললো,
“হ্যাঁ আম্মু, বলো? কেমন আছো তুমি?”
“খুউব ভালো আছি আমি। তুই কেমন আছিস সোনা?”
মায়ের কথার মধ্যে আজ আলাদা একটা খুশী’র আভা ফুটে উঠছে যেন। বুঝতে পেরে রুহি বললো,
“আমিও ভালো আছি আম্মু। তোমাকে আজ ভীষণ খুশী মনে হচ্ছে, কারণ কি আম্মু?”
নেহা সিদ্দিকী লাজুক হেসে বললো, “তোর নতুন ভাই/বোন আসতে চলছে রুহি। আমি আজ ভীষণ খুশী! তুই খুশী হয়েছিস’তো আম্মা?”
আনন্দে বাকরুদ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো, রুহি। একটা ভাই/বোনের জন্য কত আফসোস ছিলো তার মনে, ফাইনালি কেউ আসছে…
তার কয়েক মিনিট সময় লাগলো ঘোর থেকে বের হতে। বাস্তবে ফিরে খুশীতে লাফিয়ে উঠলো, রুহি। মা’কে জানালো,
“তুমি সত্যি বলছো আম্মু? আমার নতুন ভাই-বোন আসছে… উফ্ আমার যে কি আনন্দ লাগতাছে, আম্মু। মন চাচ্ছে, তোমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাই। আমি আজই তোমার কাছে আসছি আম্মু, আজই আসছি আমি।”
মেয়ের পাগলামি দেখে হাসলো, নেহা সিদ্দিকী। পরক্ষণেই রুহি মা’কে বিজ্ঞদের মতো, এটা-সেটা বলে উপদেশ দিলো। মায়ের সাথে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রাখলো, রুহি।
বাসায় এসে ততক্ষণাৎ গোছগাছ শুরু করলো। মুখ থেকে তার হাসি সরছেই না। রুহি’কে এতো হাসি-খুশী দেখে বান্ধুবী “সেতু” জিজ্ঞেস করলো,
“কি ব্যাপার রুহি, তুই এতে খুশী কি নিয়ে? তখন থেকে দেখছি, মিটমিট করে হেসেই চলছিস। ঘটনা কি দোস্ত? নতুন প্রেমে ট্রেমে পড়লি না-কি?”
“হুঁশ! খুশী’র কারণটা সবসময় প্রেম জনিত হয়ে থাকে না-কি?”
“তাহলে? তোর কি হয়েছে, আমাকেও বল?”
“আমি আজ ভীষণ খুশী’রে সেতু। আমার নতুন ভাই/বোন আসছে রে। উফ্! কবে যে ছুঁয়ে দিবো ছোটছোট হাত-পা গুলো। আমার যে তর’ই সইছে না।”
একগাল হেসে বললো, রুহি। যা শুনে মুখ বিকৃত করে সেতু বললো,
“তোর কি কোনো লাজলজ্জা নেই, রুহি? নিজের বিয়ে’র বয়সে মা’কে বিয়ে দিলি কিছুদিন আগে, এখন আবার তোর মায়ের বাচ্চা হচ্ছে শুনে খুশীতে লাফাচ্ছিস। আমার তো শুনেই লজ্জা লাগছে, মানুষ এসব শুনলে কি…..”
রুহির মুখভঙ্গি’মা বদলে গেলো। শক্ত কণ্ঠে সেতুকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
“এরমধ্যে কোনটা লজ্জা’র দেখলি তুই? বিয়ে-বাচ্চা এগুলো পবিত্র জিনিস। এগুলোর জন্য তোর লজ্জা লাগলেও আমার লাগছে না, সেতু। আমার মায়ের কম বয়স, এই বয়সে তার বিয়ে-সন্তানের চাহিদা থাকতেই পারে। এটা নরমাল। সে-তো কোনো পাপ কাজ করেনি।
আর হলো লোক কি বললো, আই ডোন্ট কেয়ার। এই সমাজ’তো পারে পবিত্র জিনিস গুলোকে নিয়ে হাসি মশকরা করতে, আর অ’বৈ’ধ-অনৈতিক কাজ গুলোকে ফ্যাশন হিসেবে ব্যবহার করতে। যে সমাজ আমাদের ভালো থাকা নিয়ে ভাবে না, আমি সেই সমাজকে বরখাস্ত করেই চলবো।
আজ আমার মা’কে নিয়ে যে কথা বলার সাহস দেখিয়েছিস তুই, নেক্সট টাইম এমন সাহস দেখাতে আসবি না। খবরদার!”
সেতুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজের কাজে মন দিলো, রুহি। যা দেখে সেতু মুখ বাঁকিয়ে চলে গেলো।
_________
অনেকটা টায়ার্ড হয়ে দুপুরে বাসায় ফিরলো, শাফায়াত চেয়ারম্যান। যা দেখে স্বামীকে ততক্ষণাৎ কিছু বললো না, নেহা সিদ্দিকী। স্বামীকে খাবার খায়িয়ে ঠান্ডা মাথায় বিষয়টি জানালো। সবটা শুনে শাফায়াত চেয়ারম্যান উওেজিত হয়ে বললো,
“যে ভুলের জন্য আমি আমার প্রথম স্ত্রী’কে হারিয়েছি সেই একই ভুল তুমিও করলে, নেহা? এমনটা তো কথা ছিলো না।”
নেহা সিদ্দিকী স্বামী’কে বুঝালো। জানালো, তার একটা সন্তানের চাহিদার কথা। কিন্তু, এই সভ্য লোকটা আবারও নিজের রেপুটেশনের কথা ভেবে, বাচ্চা নষ্ট করার জন্য হুমকি দিলো। কিন্তু, নেহা সিদ্দিকী একজন স্ট্রং মা। উনিও সাফ জানিয়ে দিলো,
” দরকার পড়লে এই সংসার ত্যাগ করবো আমি তবুও আমি আমার রক্তের অস্তিত্ব’কে খু’ন করবো না।
দু’জনের ভিতর কথার অমিল হলো, তর্কও হলো। ইতিমধ্যে হাসি-খুশীও জেনেছে ব্যাপারটা। রুহিও ইতোমধ্যে চলে এসেছে মায়ের কাছে। এখানে এসে সবটা শুনে, গম্ভীর মুখভঙ্গিতে মায়ের পাশে দাঁড়ালো। মা’কে ভরসা দিলো। বিকেলে খবর শুনে হাসি-খুশী দুই বোন আসলো। এসেই নেহা সিদ্দিকী’কে খুশী গমগমে কণ্ঠে বললো,
“কাজটা একদম ঠিক করেননি আপনি। ভুল যখন করেই ফেলছেন, ভালোয় ভালোয় চুপচাপ বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলুন। একে তো বাবা’র দ্বিতীয় বিয়ে’র জন্য লজ্জায় মাথা হেট হয়ে গিয়েছে আমাদের, এটা নিয়ে কম কথা শুনিনি আমরা। এখন আবার এই বয়সে বাচ্চা…
আপনি আমাদের রেপুটেশনের কথা ভাবলেন না একবার? আপনি বুঝতে পারছেন, এটার জন্য শ্বশুর বাড়িতে কতটা অপদস্ত, লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে পড়েতে হবে আমাদের। আর বাবা তুমিও… একটা ভুলের জন্য আমরা আজ মা হা’রা। নেক্সট টাইম আবারও একই ভুল।”
মেয়ের এহেন কথায় লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো,শাফায়াত। তার মুখে কোনো রা নেই।
সবটা শুনে নেহা সিদ্দিকী শক্ত মুখে বললো,
“অসম্ভব! এই বাচ্চা নষ্ট করার প্রশ্ন’ই আসে না। আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত, তুমি চাপিয়ে দেওয়া’র কে? আমি তোমাদের সব কিছু মেনে নেই বলে, আমাকে দুর্বল ভেবো না তোমরা। আমি আমার বাচ্চা দুনিয়াতে আনবো, দেখি কে কি করতে পারে।”
পাশ থেকে হাসি খেঁকিয়ে বললো,
“হ্যাঁ, হ্যাঁ আনবেনই তো। আমার মায়ের সংসারে ভাগিদার না আনলে সারাজীবন আপনি মাতুব্বরি করবেন কি করে?
এজন্যই লোকে বলে, সৎ মা কখনো আপন হয় না। হাহ্! আপনি কি আর আমাদের ভালো চাইবেন!”
যা শুনে নেহা সিদ্দিকী মুচকি হেসে বললো, “মেয়েরা তোমরা বড় অকৃতজ্ঞ!”
এতক্ষণ চুপচাপ এদের কথা শুনছিলো, রুহি। এবার মুখ খুললো সে। মায়ের একটি হাত আলগোছে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আমি অবাক হচ্ছি, তোমাদের মানসিকতা কতটা নিচু। মাতৃত্বের মতো একটা পবিত্র জিনিস’কে তোমারা কতটা বিশ্রী ভাবে উপস্থাপন করছো। ছি!
হোক বয়স, তবুও মাতৃত্ব অসম্ভব রকমের সুন্দর। মাতৃত্ব একটা মেয়ের পূর্ণতা, মাতৃত্ব সৃষ্টিকর্তার দেওয়া বিশেষ রহমাত। মা হওয়ার মতো আনন্দ পৃথিবীর সকল আনন্দে’কে হার মানায়।
আচ্ছা, মা হওয়ার বিষয়টা তোমাদের কাছে লজ্জা জনক? বাচ্চা বড় হয়ে গেলে পুনরায় একজন নারী/পুরুষ মা-বাবা হতে পারবে না, এটা কোন সংবিধানে বলা হয়েছে? কই আজ অবধি এমন ধরাবাঁধা নিয়মতো কোথাও দেখিনি।
বলতো, বাচ্চা হওয়ার পিছনে মানুষের কি হাত আছে? আবার বাচ্চা না হওয়ার ক্ষেএেও কি আমাদের কারো হাত আছে? কই নেই তো! যদি থাকতো, তাহলে পৃথিবীতে কোনো নারী নিসন্তান থাকতো না। সৃষ্টিকর্তা কাকে কোন বয়সে সন্তান দান করবে এটা একান্তই তার ব্যাপার।
যে জিনিস স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা দিয়ে থাকেন, তাকে নষ্ট করার মতো দুঃসাহস তোমারা কি করে দেখাও? তোমাদের কলিজা কাঁপে না!
একটা জীবন অকালে বি’না’শ করার মতো পাপ আর দু’টো নেই। এই পাপের সাথে জড়ানো প্রত্যেকটা মানুষকে সৃষ্টিকর্তার নিকট জবাবদিহি করতে হবে।
তবুও জেনে শুনে তোমারা কেন এই পাপকেই প্রধান্য দিচ্ছো? এটাই কি আমাদের বর্তমান উন্নত শিক্ষা?
এই যে এতো এতো অনৈতিক কাজ করছো তোমরা, এতে তোমাদের রেপুটেশন যায় না? কই যায় না তো। আর একজন বয়স্ক নর-নারীর মা-বাবা হলেই তোমাদের রেপুটেশন যাবে। হাহ্!
ওহ্! তোমরা তো এই সমাজের কথা চিন্তা করছো। আচ্ছা একটু বলবে, এই সমাজ আসলে কিসে খুশী হয়? জাস্ট কিসে? আমি তো দেখি এই সমাজের সব কিছুতেই সমস্যা। এই ধরো, একটা মানুষ একটু ভালো থাকছে, এটা নিয়েও তাদের সমস্যা। একটা মানুষ অসহায় পড়ে কষ্ট করছে, এটা নিয়েও সমস্যা।
যে সমাজ আমাদের নিয়ে ভাবে না, আমরা কেন তাদের কথা চিন্তা করে এতো এতো বিসর্জন দিবো?হোয়াই?
সমাজ! সমাজ! সমাজ!
আমরা যে সব কাজে সমাজের দোহাই দেই, এই সমাজটা আসলে কি? এই সমাজ যে এতো কথা বলে আমাদের, আচ্ছা ওদের কি আলাদা বাকশক্তি রয়েছে?
এই সমাজ কাদের নিয়ে গঠিত, এই সমাজে কারা বাস করছে?
তোমরা, আমরা, মানুষেরাই তো বাস করছি। সবকিছু তো মানুষরাই বলছে। তাহলে, আমরা মানুষেরাই যদি নিজেদের পাল্টে ফেলি, দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলি, তবেই তো সমস্যার সমাধান বেরিয়ে আসবে।
অন্যায়কে অন্যায়, পাপকে পাপ, ভুলকে ভুল বলার মতো শত সাহস যাদের নেই এরা না-কি আবার শিক্ষিত, এদের আবার রেপুটেশন…”
লম্বা কথা বলে থামলো, রুহি। পুরো ঘরজুড়ে নিস্তব্ধতা। কারো মুখে কোনো শব্দ নেই। মেয়ে তার কতটা বড় হয়ে গিয়েছে, আনন্দ কাঁদছে মা। রুহি একবার সবার দিকে দৃষ্টি বুলািয়ে পুনরায় শাফায়াত চেয়ারম্যানের উদ্দেশ্যে বললো,
“আপনার কাছ থেকে এমনটা আশা করিনি, আঙ্কেল। আপনার উচিত ছিলো, আপনার স্ত্রীকে সাপোর্ট করা। কি আর বলবো আঙ্কেল, আপনাদের থেকে কি-ই বা আশা করবো।
আপনারা খু’নী! আপনার প্রথম স্ত্রী’র খুনী আপনি, আপনারা। উনি মা’রা যায়নি বরং আপনারা কৌশলে খু’ন করেছেন। খু’ন করেছেন একটা অনাগত শিশুকে। আপনাদের মানসিকতা এতোটা নিচু এটা জানলে আমি আমার মা’কে কখনো এখানে পাঠাতাম না।
আমার মায়ের গর্ভে’র সন্তান নিয়ে তোমাদের যখন এতোই সমস্যা, চিন্তা করো না আপু’রা আমি আমার মা’কে আমার সাথেই নিয়ে যাবে। আমি আমার মা’কে আমার সাথে রাখবো, তাকে পুরোপুরি সাপোর্ট করবো। আমি নিজে তার যত্ন করবো।”
বলতে বলতে নিজের মা’কে জড়িয়ে ধরলো রুহি। মায়ের কপালে চুমু খেলো,ভরসা দিলো। এই মাএ রুহি মেয়েটার ভয়ংকর কিছু সত্য কথা শুনে কেঁপে উঠলো, প্রত্যেকটা মানুষের আপন সত্তা। মস্তিষ্ক সচল হলো, ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো হাসি-খুশী।
তারা কি এভাবে ভেবেছে কখনো? কখনো বুঝেছিল তার মা’কে? উঁহু! কেউ তো তার মা’কে বুঝেনি। উল্টো কতটা না কথা শুনিয়েছে, মানুষটাকে। নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছে সবাই মিলে।
আজ যদি রুহির মতো তারাও তার মায়ের পাশে দাঁড়াতো, ভরসা দিতো। আজ তারা মা হা’রা হতো না, তাদের মা-ও বেঁচে থাকতো। বেঁচে থাকতো একটা নিষ্পাপ প্রাণ।
(সমাপ্ত)