মেঘের আড়ালে সূর্য খুঁজি পর্ব-০৫

0
9

মেঘের আড়ালে সূর্য খুঁজি
পঞ্চম পর্ব


কেউ প্রেমে পড়েছে, দেখতে ভীষণ ভালো লাগে। চেহারায় একটা নিষ্পাপ ভাব ফুটে ওঠে।
কিন্তু ‘প্রেমে খুব লাভবান হচ্ছে’ এটা যে ভাবে, তার চেহারায় লোভ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তাকে দেখতে ঘৃনা লাগে। লোভে পড়া একটা চেহারা নিয়ে, আব্বা বাড়িতে এলেন।

অবশ্য তিনি এলেন একটা বিশেষ কারণে।বড় আপুর বিয়ে। প্রায় চার মাস পর, আপুর বিয়ে উপলক্ষে আব্বা বাড়ি এসেছেন।

আব্বাকে দেখে চিনতে পারিনি। পাঞ্জাবি পায়জামা ছেড়ে প্যান্ট শার্ট পরেছেন।দাড়ি ছেটে একেবারে ছোট করা।পাকা চুল দাড়ি কালো হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, মেজাজ‌ও বেশ ফুরফুরে ।

আমাদের সবাইকে কড়া শাসনে রেখে, আব্বা নিজে যে খুব আনন্দ ফুর্তি করতেন, তা নয়।নিজেও গম্ভীর মুখে থাকতেন সবসময়।সেই আব্বার মুখভরা হাসি।

এই হাসি, মেয়ের বিয়ের আনন্দে নয়। হাসির পিছনের কারনটা তখন‌ও আমাদের অজানা ছিল।তবে অনুমান তো করা যায়, তাই না?।

বড় আপুর বিয়ে হয়ে যাবে… এই কথাটা, আগে কষ্ট দিতো।চার মাসের ব্যবধানে, সেই কষ্ট কমে গেছে। মনে হচ্ছিলো ,বিয়ে হয়ে গেলে অন্ততঃ এখনের চেয়ে ভালো থাকবে।

এই পৃথিবীতে সব পুরুষ তো কাপুরুষ নয়।বড় আপুর জীবনে, একজন সত্যিকারের পুরুষ আসতেই পারে।

অনেক জায়গা থেকেই বড় আপুদের বিয়ের প্রস্তাব আসছিলো। কিন্তু বাড়িতে খোঁজ ছিল এমন একটা প্রস্তাব, যেখানে খরচ কম হবে। যেখানে বিয়ে ঠিক হলে, নূন্যতম খরচে বড় আপুকে বিদায় করা যাবে। এমন প্রস্তাব পেয়েই, বিয়েটা ঠিক হলো।

এই বিয়েতে আপু বা আমাদের মতামত নেয়া হয় নি। তবে সুখের কথা হলো, আপুকে দেখতে এসেছিল যখন, তখন থেকেই শাহাদাত ভাইকে আমাদের পছন্দ হয়েছিল। একজন পুরুষ যার চোখে সততা ছিল, মেয়েদের প্রতি সম্মান ছিল আর ছিল আপুর প্রতি মুগ্ধতা।

খুব ঘরোয়া আয়োজনে আপুর বিয়ে হয়ে গেলো। আব্বার পকেট থেকে দশহাজার টাকাও খরচ করতে হয়েছিল কিনা, সন্দেহ।

আপুর বয়স আঠারো তখন‌ও হয়নি।বয়স আঠারো করে ,দুই আপুর‌ বার্থ সার্টিফিকেট আগে থেকেই বানানো ছিল। বিয়েতে কোনো রকম ঝামেলা হলো না।

ঝামেলাটা হলো, আপুর বিয়ের ঠিক একমাস পর।
যেনতেন ঝামেলা নয়।এতোদিন ধরে যা পরিকল্পনা হলো,সব উল্টা পাল্টা করে দেবার মতো ঝামেলা।

এম্বুলেন্স ভাড়া করে, আব্বাকে বাড়ি আনতে হলো।

যাকে বিয়ে করবেন ভেবে, নিজের সাজপোশাক বদলে ফেলেছিলেন… সেই নারী, আব্বার ভালোবাসার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। আমার অতি চালাক আব্বার গলায়, অবশেষে কেউ একজন দড়ি পরাতে পেরেছে।
দুঃখ পাওয়া বদলে, আমরা খুশি হলাম।
স্বাভাবিক ভালোমানুষী আমাদের মধ্যে আর অবশিষ্ট নেই।

আমাদের কাছে বলা হলো, আব্বার এক্সিডেন্ট হয়েছে। তবে ,এইসব ঘটনা গোপন থাকে না।

মধ্যবয়সী পুরুষদের প্রেম এবং বিয়ের ফাঁদে ফেলে, টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়া এক চক্রের পাল্লায় পড়েছিলেন আব্বা।

টাকাপয়সা ভালোই খুইয়েছেন। আর চালাকি করতে গিয়েতো, জীবন যায় যায় অবস্থা।

সব মেয়েদের ,আমাদের মতো দুর্বল ভেবেছিলেন বোধহয় আব্বা। মহিলা বিয়ে করবে না, এরকম আঁচ করতে পেরে, টাকা উদ্ধার করতে চেয়েছিলেন।
সেই চক্রের লোকজন আব্বাকে এমন ভাবে মেরেছে,
সারাজীবন সোজা হয়ে হাঁটতে পারেনি আর।

একদিকে আমাদের তিন বোনের দায়িত্ব, অন্যদিকে আব্বার এই অবস্থা। বাড়িতে সবাই মহাবিরক্ত।বড় দুই ভাইয়ের কেউ আব্বার পাশে দাঁড়ালো না।

চাকরিটা চলে গেলে, শেষ পর্যন্ত পথে বসতে হবে আব্বাকে। এদিকে আবার শরীরের অবস্থা এমন যে,একা বাসায় চলতে পারবেন না। আমাদের মধ্যে কাউকে থাকতে হবে, রান্নাবান্না আর সেবা শুশ্রূষা করার জন্য।

আব্বা অবশ্য চেয়েছিলেন, শুধুমাত্র মেজো আপাকে নিয়ে ফিরতে। একা বাসায় আপার নিরাপত্তার বিষয়, এইবার আব্বার মাথায় এলো না।
আমরা আলাদা থাকতে রাজি হলাম না ,কোনো ভাবেই।

শেষ পর্যন্ত,আমাদের তিন বোনকে নিয়ে চিটাগাংয়ে ফিরলেন আব্বা।

আগের বাসাটা আর নেই। আম্মার কোনো স্মৃতি, কোথাও নেই।

এই বাসাটা, আগের বাসার চেয়ে ছোট। বেশ সুন্দর, ছিমছাম করে গোছানো। নতুন ব‌উয়ের জন্য সাজিয়েছিলেন শখ করে।

আব্বার সাজানো বাসায়, আমাদের জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু হলো।

আব্বা ক্র্যাচে ভর করে অফিস শুরু করেন। পরবর্তীতে, ঘরে খুঁড়িয়ে হাঁটতে পারতেন, ক্র্যাচ ছাড়াই। কিন্তু বাইরে গেলে, ক্র্যাচের প্রয়োজন হতো।

আব্বার এই অবস্থার জন্য, আমরা তো কোনো ভাবেই দায়ী ন‌ই। তবু, তার সব রাগ আমাদের উপর। যতক্ষণ বাসায় থাকেন, দিন নেই রাত নেই…মনের সাধ মিটিয়ে গালাগালি করতে থাকেন আম্মাকে, নানাভাইকে আর আমাদেরকে। কিছুতেই যেন আব্বার রাগ কমে না।

দিনরাত আমরা সেবাযত্ন করি আর আব্বার গালমন্দ শুনি।অবশ্য, ততদিনে আমরা অনেক পরিনত। সহ্য শক্তি আগের চেয়ে বেশি। কথায় কথায় কেঁদে বুক ভাসানোর দিন, আর নেই।

আব্বার সেবা করার বিনিময়ে, তার কাছ থেকে আমরা শুধুই তিন বেলার খাবার পেতাম। এছাড়া আর কোনো টাকা পয়সা দেননি তিনি।
তাতে করে আমাদের দিন থেমে থাকেনি ।

আগে বলতে ভুলে গেছি , আমাদের চার বোনের মধ্যে আমি আর নিমু স্কুলে পড়তাম।বড় দুই আপু , মাদ্রাসায় পড়তো।
আমাদের সবার নাম‌ও জানানো হয় নি।
বড় আপুর নাম শিনাজ, তারপর শায়রা আপু।
আমার নাম রাহমা আর ছোট বোনের নাম নিয়ামাহ্।

চিটাগাং ফিরে, শায়রা আপু কিছু বাচ্চাদের কোরআন শেখানো শুরু করেন। দাদার বাড়িতে যখন খুব খারাপ সময় পার করছিলাম, আপুরা তখন কোরআন শেখানো শুরু করেছিল। আমাদের দাদীর মাথা থেকে, এই চমৎকার বুদ্ধিটা এসেছিল।

অল্প কিছুদিনের মধ্যেই , বেশকিছু ছাত্রী যোগাড় হয়ে গিয়েছিল।বড় আপুর বিয়েটাও, তার এক ছাত্রীর মাধ্যমে ঠিক হয়েছিল।

বড় আপুর বিবাহিত জীবন সুখের হয়েছে। শাহাদাত ভাইয়ার আগ্রহে, সে লেখাপড়া শুরু করেছে আবার।
আমি আর নিমু স্কুল শুরু করেছি।

আমাদের মধ্যে একমাত্র শায়রা আপুর লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গেল।সে রান্নাবান্না, আব্বার দেখাশোনা করা আর কোরআন শেখানোর কাজ নিয়ে খুশি ছিল।

বড় আপু প্রতিমাসে সামান্য হলেও টাকা পাঠাতে শুরু করেন।শায়রা আপুও রোজগার করছিলেন।

আমার আর নিমুর লেখাপড়া ভালো ভাবেই চলছিলো।
এইভাবে, আমি এইচএসসি শেষ করি।

এইসময়টাতে সবকিছু ভালোই চলছিল, কেবল আব্বার দুর্ব্যবহার ছাড়া। এই একজন মানুষ, এতো কিছু হয়ে যাবার পরও আগের মতই রয়ে গেলেন। বলতে পারেন, আগের চাইতেও নিচে নেমে গিয়েছেন।

অনেক চেষ্টা করেও, তিনি বিয়ে করতে পারেন নি।

তার সেইসব ঘটনা, পাঠককে আনন্দ দেবে নিশ্চিত।তবে, আজকের দিনে এসে ওইসব কথা মনে করতে, আমার আর ভালো লাগে না।

আব্বার শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিলো। বিয়েও করতে পারেন নি। চাকরিটা করতে কষ্ট হচ্ছে।দিনদিন মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছিলেন তিনি।
এদিকে,আমরা চোখের সামনে আছি, ভালো আছি। দুষ্টলোকের মনে শান্তি নেই।

নিজের মনকে শান্ত করতে, আব্বা নানাভাইয়ের বাড়িটা বিক্রি করে দেন।এই কাজটা তিনি খুব গোপনে করেছিলেন।টাকা পয়সার লোভ দেখিয়ে,সেখানে কারো সাহায্য নিয়েই বাড়িটা বিক্রি করেছিলেন আব্বা।টাকা পয়সা পেলে, এইধরনের কাজ করার মতো লোকের অভাব নেই।

সেই ঘটনা থেকেই, পাকিস্তানী দুএকজন আত্মীয় স্বজনের সাথে আবার আমাদের যোগাযোগ শুরু হয়।আর সেখান থেকে, শায়রা আপুর সাথে একজনের আলাপ হয়।

সম্পর্কে ছেলেটি আমাদের মামাতো ভাই। আম্মার তো আপন ভাই ছিল না। একটু দুঃসম্পর্কের ভাই। আম্মার সাথে একসময় সুসম্পর্ক ছিল তাদের। ছোটবেলায় নাকি ছেলেটির মা, আমাদের ভীষণ স্নেহ করতেন। নিজের পরিবারের সম্মতিতে, শায়রা আপুকে বিয়ে করতে চাইলো ছেলেটি।

ওইদিকের কারো নাম শুনলে,তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন আব্বা। বিয়েতে রাজি হবার প্রশ্নই ওঠে না। তবে আপুদের ধারণা, বিয়েতে রাজি হলে,টাকা পয়সা খরচ করে বিয়ের আয়োজন করতে হবে।খরচ বাঁচাতেই বিয়েতে অমত করছেন তিনি।

আব্বার অমতে, শায়রা আপু বাসা থেকে পালিয়ে যান। দায়িত্ব পালন করতে করতে,আপুও হাঁপিয়ে উঠেছিল।

আব্বার হাতে সেসময়, বাড়ি বিক্রির টাকাগুলো আসে। তিনি চাকরিটা ছেড়ে দেন।

এছাড়া আর কোনো উপায়ও ছিল না।
চলাফেরা করতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো, আব্বার।
এদিকে আব্বার শরীরের এমন অবস্থা যে, নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যে থাকতে হয়।গ্রামে সেই চিকিৎসার সুব্যবস্থা নেই। চিটাগাং থাকলেই তার চিকিৎসা ভালো হবে। এছাড়া ,বাড়িতে তো নিজের কোন ঘর নেই তার।

ঠিক করলেন, চিটাগাং থেকেই গ্রামে বাড়ির কাজ করবেন। কোনোভাবে মাথার উপর ছাদের ব্যবস্থা হলে, গ্রামে ফিরে যাবেন।

আব্বার যেহেতু চাকরি নেই, তিনি আমাদের জন্য আর কোনো খরচ করতে রাজি হলেন না। আমাদের উপর শুরু হলো, আরো কয়েকগুণ বেশি মাত্রায় অত্যাচার।

কোনো উপায় না দেখে, নিমুকে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন বড় আপু । শাহাদাত ভাইয়ার কাছে আমাদের ঋনের শেষ নেই।
রয়ে গেলাম কেবল হতভাগা আমি আর আব্বা। দু’জনের তুলনায় বাসাটা বড়।খরচ কমাতে, একরুমের বাসা নিলাম এবার।

আগের বাসার বেশিরভাগ জিনিস, বিক্রি করে দিয়েছেন আব্বা। আমিও খরচ যতভাবে কমানো যায়, কমাচ্ছিলাম। তবু, আব্বার মাথা ঠান্ডা হয়না।

সারাদিন আমার সাথে সে কি দুর্ব্যবহার!

অথচ আমিই রান্না বান্না করি,ওষুধপত্র খাওয়াই, বাজার সদাই করি। আমাকে খেতে দেখলেই, চেঁচামেচি শুরু করেন আব্বা।

অতিষ্ঠ হয়ে , চাকরি খোঁজা শুরু করলাম।

আমার ইচ্ছা ছিল, অন্তত গ্রাজুয়েশন শেষ করা। কিন্তু আব্বার যন্ত্রণায় টিকতে পারছিলাম না।

অনেক খোঁজাখুঁজি করে ভাগ্যক্রমে ,একটা নামকরা সুপারশপে চাকরি পেলাম আমি।

ইংরেজি, উর্দু, বাংলা এবং আরবি চারটা ভাষা আমার জানা। সাথে পরিশ্রম করতে পারি।এইচএসসি পাশের সার্টিফিকেট নিয়েও, তাই সম্মানজনক একটা জায়গা পেয়ে গেলাম। অবশ্য, বেতন খুব একটা বেশি নয়।

সারাদিন চাকরি করে এসে,আব্বার জঘন্য আচরণ আমার সহ্য হচ্ছিলো না। মনে হচ্ছিলো, আলাদা বাসায় উঠি। কিন্তু নতুন চাকরি। জানিনা কেন,একা থাকার সাহস করতে পারছিলাম না।

ছোট থেকে এতো অত্যাচার সহ্য করেছি ।হয়তো সে কারণেই,আমি একটু ভীতু স্বভাবের হয়ে গেছি। বাইরের পৃথিবীটাকে নিয়ে, আমার মনে অস্বাভাবিক একটা ভয় কাজ করে।

বড় দুই আপু বিয়ে করে সুখী হয়েছে। মনে হলো, বিয়ে করলেই আমার মুক্তি হবে।

আব্বা বললেন, আমাকে কেউ যদি নিজের খরচে বিয়ে করে নিয়ে যায়, আব্বার তাতে আপত্তি নেই। কিন্তু উনি আমার বিয়ে নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। তার কাছে যেন, কিছু আশা না করি।

একটু তাড়াহুড়া করেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি। জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সেটাই। অথবা সৃষ্টিকর্তা এমন টাই চেয়েছেন।তা না হলে, এতো ঠেকেও মানুষ চিনতে পারিনি কেন আমি?

খুব অল্প দিনের পরিচয়ে, একজনকে বিশ্বাস করলাম। বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলাম।সে আমার সাথে এক‌ই সুপারশপে কাজ করে। ছেলেটার নাম রাশেদ।সে একাউন্টসে আর আমি মার্কেটিংয়ে কাজ করি।

রাশেদ বললো, আমাদের বিয়ের কথা অফিসে জানাজানি হলে, তার সমস্যা হবে।তাই বিয়ে করলে গোপন রাখতে হবে। শুধু তাই নয়, আলাদা বাসা নেয়াও সম্ভব হবে না।

আলাদা সংসার করার আশাতেই, বিয়ে করতে চাইছি আমি।অথচ রাশেদ বলছে, বাসা নিতে পারবে না।তখন‌ই যদি ফিরে আসতাম, হয়তো জীবনটা এরকম হতো না আমার। ফিরতে পারিনি।

জীবনে কখনো ভালোবাসা পাইনি তো,তাই ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে দূরে যেতে পারিনি আমি সেদিন।

আমরা দু’জন মিলে ঠিক করলাম, আপাতত আব্বার সাথে এক‌ই বাসায় থাকবো। প্রয়োজন হলে ,আরেকটু বড় বাসা নিবো। তবে, অফিসে বিষয়টা গোপন রাখবো।

আব্বার অনুমতি নিয়েই বিয়ে করলাম। তবু বিয়ের সাথে সাথে আব্বা বললেন, তার বাসায় যেন আর না ঢুকি। বিয়ে করেছি যখন, তখন আমার দায়িত্ব আর এক মুহুর্তের জন্য নিতে চান না।রাতেই অন্য কোথাও চলে যেতে বললেন।

এদিকে রাশেদ কোনো ভাবেই হোটেল বা তার বাসায় আমাকে নিয়ে যাবে না।বোকা আমি,তখন‌ও কিছুই বুঝতে পারিনি। আব্বার হাতে পায়ে ধরে, রাতটা সেখানে থাকার অনুমতি নিলাম।

আব্বার হৃদয় পাথর দিয়ে তৈরি। বললেন,
থাকতে হলে, সারারাত বারান্দায় থাকতে হবে।একরুমের বাসা এটা। আমাদের জন্য, তিনি নিজের জায়গা ছাড়বেন না।

বিয়ের প্রথম রাতটা, নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে কাটাতে চেয়েছি আমি।না হয় গল্প করেই কাটিয়ে দিবো, সারাটা রাত। আমার জীবনে যাই কিছুর অভাব থাকুক না কেন, গল্পের তো অভাব নেই। আপনারা সেই গল্প‌ই তো শুনছেন, লম্বা সময় নিয়ে।

তাই… আমার বিয়ের প্রথম রাতটা কাটলো, এই ভাড়া বাসার বারান্দায়।

চলবে…