তোমার সনে বেঁধেছি আমারও প্রাণ পর্ব-৪১+৪২+৪৩

0
49

#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্বসংখ্যা_৪১

“কিস! উই কিস ইচ আদার।‌ যাস্ট ইট। কিন্তু ততোটুকু অনেক গভীর ছিল। আমি বলে বুঝাতে পারব না গতরাতে তুমি কতোটা গভীর ভাবে চুম্বন করেছিলে আমায়!”

নরম সুরে কথাটা শেষ করতেই একটা শুকনো ঢোক গিলল তনয়া। উষ্ণ স্যারের চোখেতে চোখ রাখতেই তার আত্মা বেরিয়ে যায় যেন। পেটে গুড় গুড় শব্দটা হচ্ছে। খিদে তো পায়নি তাহলে এটা কিসের শব্দ। লজ্জায় তার গাল আর নাক লাল হতে দেখে উষ্ণ ঠোঁট কামড়ে ধরে বলল,

“এভাবে তাকিও না, নাহলে আমি ফের চুমু খেয়ে বসবো তোমায়!”

“থামুন প্লিজ, আর ভালো লাগছে না।”

“কেন থামবো? গতরাতে তুমি থেমেছিলে!”

স্যারের লাগাম ছাড়া কথাবার্তা শুনে তনয়া সাত আসমান থেকে টপকে পড়ল। ইতস্তত করে বলল,

“এতো কেন বকছেন? শুধু তো একটা চুমুই। বেশি কিছু তো না। বাড়িয়ে বাড়িয়ে কেন বলছেন? কথা বলার আগে একটু ভাববেন না?”

“না ভাববো না। যা হয়েছে তাই বলেছি। তবে তুমি খুব চালাক। আমি তো কেবল তোমায় চুমু খেয়েছি, তুমি কি করছো? আমায় ভালো মানুষ পেয়ে খুব যন্ত্র*ণা দিয়েছ? ভালোবাসার অত্যাচা*র যাকে বলে!”

তনয়া চোখ কপালে তুলে বলে, “আমি?”

“তো কে? এসব কে করেছে? এই গলার কাছে কামড়ে*র দাগ, ঘাড়ের কাছে নখের আঁচ*ড়। শরীরে আরো কতো জায়গায় কতো ক্ষ*ত আছে দেখাবো আমি!”

তনয়া উত্তেজিত হয়ে বলল, “প্লিজ থামুন!”

উষ্ণ কটুক্তি করে বলল, “নেহাত ভালো মানুষ আমি। তাই বেশি কিছু করিনি!”

কথাগুলো বলে উষ্ণ মুচকি হাসল। কথাগুলো ইতোমধ্যে তনয়া গিলে ফেলেছে। হজম করতে পারছে না। নিজের এমন উদ্য*ত আচরণে সে স্তম্ভিত! এতোবছর যেভাবে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলো, সাজিয়ে রেখেছিল কেবল একজনের জন্য! মূহূর্তেই তা কিভাবে উলোটপালোট হয়ে গেল। একটা ঝড়ে যেন সব লণ্ডভ*ণ্ড হয়ে গেল।

অফিসের ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে তারা দু’জন। হু হু দমকা হাওয়া বইছে চারদিক থেকে। তনয়া এই বাতাসের মধ্যে দাঁড়িয়েও অস্বাভাবিকভাবে ঘামছে। উষ্ণ এক পা এগিয়ে তনয়ার সামনে এসে দাঁড়াল। এতেই নাকে ভেসে সুগন্ধী। মিষ্টি মধুর সুগন্ধ নাকে যেতেই নিজেকে নেশা*ক্ত মনে হচ্ছিল তার। মাতা*ল করা সুগন্ধি! তনয়া উষ্ণ স্যারের পায়ের জুতোটা দেখে মুখ তুলে সামনে তাকাল। উষ্ণ তার থিতুনিতে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে মনে মনে আওড়ালো,

“হ্যাঁ শুধু মাত্র একটা চুমু, তুমি আর কি বুঝবে? কিভাবে জানবে আমি কতোকাল অপেক্ষা করেছি তোমার জন্য? কিভাবে জানবে তোমাকে নিজের করতে কতো কাঠ খড় পোড়া*তে হয়েছে? কিভাবে জানবে প্রতি ক্ষণে ক্ষণে তোমার দেওয়া তীব্র যন্ত্রণা*র মধ্যে থেকে ভালোবাসার আচ্ছাদন পেয়েছি। হয়তো নেশা*র ঘোরেই, কিন্তু তুমি আমার কাছে ছিলে, ঠিক এতোখানি কাছে। আমার বুকের মধ্যে! আমার হৃদয়ের হৃৎস্পন্দন শুনতে পেয়েছিলে নিশ্চিত, অবশ্যই পেয়েছিলে এখন মনে করতে পারছো না। কখনোই হয়তো পারবে না!”

এতোক্ষণ চোখে চোখ রেখে তাকাতে খুব কষ্ট হচ্ছিল তনয়ার। ভেতরে ভেতরে অস্বস্তি আর লজ্জার অদৃশ্য মিলনে সে কুঁচকে যাচ্ছিল। অস্ফুট স্বরে বলল, “কিছু বলছেন না যে?”

“বিয়ে করবে আমায় তনয়া?”

তনয়া বিস্মিত হলো। উষ্ণের চোখের জ্বলিত মণিজোড়া এদিক ওদিক ছোটাছুটি করছে। তনয়া পিছিয়ে গেল। কোনো জবাব না দিয়ে ছুটে পালি*য়ে গেলো সে। এছাড়া আর ভালো কিছু করতে পারত না সে!

———

দুদিন কেটে গেছে। এ দুদিনে স্যারের মুখোমুখি হয়নি সে। চোরে*র মতো লুকিয়ে লুকিয়ে থাকছে। এই মনে হচ্ছে চাকরিটা ছেড়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু সেটা করতে গেলেই তো স্যারের মুখোমুখি হতে হয়। পারবে না, এই জনমে তা সম্ভব নয়।

চোরে*র মতো সে লুকিয়ে থাকলেও ওদিক থেকেও যেন কোনো তোড়জোড় নেই। উষ্ণ স্যার এখন আর তাকে ডাকে না, সামনাসামনি থাকলেও নজর দেয় না। হঠাৎ তার এমন এড়িয়ে চলার ব্যাপারটা তনয়া নিতে পারছে না। স্যারের কি হলো? এই তো সেদিন চোখে চোখ রেখে বলছিলো বিয়ের কথা। আবার চুমু খাবার কথাটাও কতো সহজে বলছিলো, যাস্ট কিস! যেন বিরাট কিছুই না।

তনয়া বন্ধ মনিটরের সামনে বসা। দূরে স্যারের কেবিনে তী*ক্ষ্ম নজর দিয়ে দেখছে। স্যার কি সুন্দর হেসে হেসে কথা বলছে জ্যোতির সাথে। এই দুদিনেও তাদের কোনোরকম কথাবার্তা হয়নি। উষ্ণ স্যার নিজে থেকেও চেষ্টা করেনি। এমনকি বাড়ির সামনে ও এসে দাঁড়ায় না এখন। তার রা*গ হচ্ছে! কিবোর্ডের বোতাম গুলো আনমনে চাপতে চাপতে বিরবির করতে লাগল,

“একরাত পেয়ে গেছে বলে কি একেবারেই ভুলে গেল আমায়। পাত্তা দিচ্ছে না কেমন? মনে হচ্ছে আমি কেউই না! কথাই বলছে না। আমি না হয় লুকিয়ে লুকিয়ে থাকছি তিনি কি একবার এসে দেখা করতে পারেন না। পুরুষরা এমনই হয়। সব পুরুষই এমন। নারীকে কাছে পাবার জন্য কতো ছলনা। একবার পেয়ে গেলে আর মূল্য থাকে না! যেমন এখন তোর নেই তনয়া। কি করলি তুই?”

হতাশা ভরা চাহনি সমেত আবার তাকাল। এখনো হাসাহাসি করছে। এসব দেখে ঠোঁট কামড়ে ধরল সে।

“এই তো সেদিন বলছিলো বিয়ের কথা। আমায় বিয়ে করবে তনয়া, আহা আর এখন দেখো। একবারই কেবল বিয়ের কথা বলে মশাই উদ্ধার হয়ে গেছে। ভাদাইম্যা কি আর সাধে সাধে বলি। আরেকবার বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করে…”

তনয়া হুশে ফিরে এলো। ছিঃ ছিঃ এসব কি ভাবছে সে? স্যার কে বিয়ে! এজন্মেও সম্ভব না। স্যার কে কিভাবে বিয়ে করতে পারে সে। না না, মাথা ঝাড়া দিয়ে উঠল। ওদিক আবারো ফিরতেই উষ্ণ স্যারের সাথে চোখাচোখি হলো। সাথে সাথে চোখ নামিয়ে ফেলল তনয়া। লজ্জা পেয়েছে ভীষণ। এভাবে আড়চোখে দেখা একদম উচিত হয়নি। শুকনো ঢোক গিলল সে।

তনয়া উঠে চলে গেল টেবিল ছেড়ে। গেলো ক্যান্টিনের কাছে। উষ্ণ স্যারকে মাথা থেকেই নামাতে পারছে না সে। চোখ বন্ধ করলেই সেদিন রাতের কথা মনে পড়ে। অস্পষ্ট, ঝাপসা স্বপ্নের কথা মনে পড়তেই মন আনচান করে। কি অস*হ্য অনুভূতি। যে অনুভূতি কখনোই চায়নি সে। এখন সেসব!

চায়ের কাপ হাতে নিতেই মনে হলো পাশে কেউ দাঁড়িয়েছে! পাশ ফিরে তাকাতেই চমকে উঠল! তন্ময়! আশ্চর্য হলেও সত্যি গত দুদিনে এক মূহুর্ত তার তন্ময়ের কথা মনে পড়েনি। কি বেমালুম ভুলে গেলে সে। সে কথা মনে পড়তেই লজ্জায় মাথা নামিয়ে ফেলল। তন্ময় অকস্মাৎ তার হাতটা ধরে বলল, “ তোর সাথে কথা আছে তনু!”

তনয়ার অস্বস্তি হতে লাগল। ওর হাতটা দেখে বার বার তরীর কথা মনে পড়ছে। এই হাত দিয়েই তো তরীকে ছুঁয়েছিল সে। কৌশলে তনয়া হাতটা সরিয়ে নিয়ে বলল, “বল কি বলবি?”

তন্ময় ফের হাতটা ধরে বলে, “এখানে না বাইরে। চল!”

অতঃপর অধিকারবোধ থেকে হাতটা ধরে টেনে বাইরে নিয়ে যায়। তনয়া বুঝতে পারছে না এখন এসব অধিকার বোধ কোথা থেকে আসছে তার। কোন অধিকারে তন্ময় ধরেছে তার হাতখানা। কিছু জিজ্ঞেস করল না। নিশ্চুপে তার সাথে পা মিলাতে লাগল। অথচ মনের গহীনে একরাশ অভিমা*ন আর ক্ষো*ভ! বুঝতে পারল, তন্ময় কে আর ভালো লাগছে না তার। মনের সেই ভালোলাগাটুকু আর নেই। কিভাবে এতো বছরের ভালোবাসা উগড়ে দিল সে। ভাবতে গিয়েই চমকে উঠে!

উষ্ণ চৌধুরী এদিকেই আসছিলো তার নীলাম্বরীর সাথে কথা বলছে। তখন তনয়ার আড়চোখে ফিরে তাকানো সে দেখেছে। তার চোখেতে কিছু তো ছিল? জেলাসি! হুম! সেটাই। কথা বলতে এসে এমন অদ্ভুত দৃশ্য দেখবে ভাবতে পারেনি। তন্ময় তনয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তনয়ার হাত ধরেছে। ভাবতেই শরীর জ্বা*লা করছে সে। মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এতো কিছুর পর তনয়া কিভাবে পারল তাকে হাত ধরার অনুমতি দিতে। তবে কি তনয়া এখনো মনে মনে..?

আর বেশি ভাবলো না। ভাবনার পথ আগাচ্ছে না। হনহনিয়ে কেবিনে চলে গেল। জেএস কে ডাকিয়ে এনে শান্ত ভঙ্গিতে চেয়ারে বসে বলল,

“মিস তনয়ার জন্য পাত্র দেখা শুরু করো জেএস! আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে তার বিয়ে ব্যবস্থা করতে হবে?”

জেএস কথাটা প্রথমে বুঝতে পারিনি। পরেও বুঝল না। কেবল হতবাক নয়নে হা করে চেয়ে রইল। স্যারের মাথা কি পুরোটাই গেছে নাকি? আবোলতাবোল কিসব বলছে। কিন্তু কথা শেষে উষ্ণের বাকা হাসিটা অন্যকিছুর রেশ দিচ্ছে!

#চলমান

#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্বসংখ্যা_৪২

“আই’ম সরি তনু, আমি তোর সাথে অন্যা*য় করেছি। অনেক বড় অন্যায়। তোর থেকে কিভাবে মাফ চাইবো তাই বুঝতে পারছিলাম না। আমি…

কথার ভাঁজে তনয়া বলে উঠে, “কি করেছিস তুই”

তন্ময় থমকে যায়। কয়েক পলক তনয়ার চোখে চোখ রেখে শুকনো ঢোক গিলে বলে,
“ঠকি*য়েছি! তরী এসেছিল। দেশে ও এসেছে শুনেছে আমি হন্তদন্ত হয়ে ওর পিছন ছুটে যাই। তোকে একা ফেলে ছুটে যাই। তরী এসেছে বেশ কয়েকদিন হলো। আমি…

ফের ফোঁড়ন কেটে দিল তনয়া। আদ্রকণ্ঠে বলল,

“এজন্য আমার ফোন তোলার সময় পাস নি তাই না। ওই বন্ধু, চট্টগ্রাম, নতুন ফোন সব মিথ্যে ছিল তাই না?”

তন্ময় শ্বাসরোধ করে মাথা নাড়ায়। কথাগুলো যেন বার বার আঁটকে আসছিলো গলায়। তনয়ার সাথে যেই অন্যায় সে করেছে তা দ্বিগুণ সমেত ফিরত এসেছে তার কাছে। তনয়ার ইচ্ছে করছিলো তৎক্ষণাৎ এক চড় মে*রে বসতে তন্ময়ের গালে। কিন্তু পারল না। তার হাত কাঁপছে! মাথা ভনভন করছে। তন্ময়কে সে অনেক ভালোবাসত! ভালোবাসত কেন বলছে? জীবনের গত ৮ টা বছর এই মানুষটিকে ভালোবেসে কাটিয়েছে। এখন এসে মনে করছে ভুল করেছে। নিজের জীবনের সবটুকু দিয়ে তাকে ভালোবাসার পর এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই তার কাছে। নতুন করে কাউকে ভালোবাসার শক্তি অবধি নেই! তনয়া নিঃস্ব!

তরীর সাথেই যে তন্ময় এসব সে জানত। জানত বলেই বড়সড় ধাক্কাটা খায়নি। এখানে আসার আগ মুহূর্ত অবধি ভেবেছিলো কষ্ট হবে না। সে কাঁদবে না! কিন্তু কিছুতেই মনকে স্থির রাখতে পারছে না। দুজনের পিনপিন নিরবতা কাটিয়ে উঠে তন্ময় বলল,

“আমাদের এই সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যৎ নেই তনু, আমি কখনো তোকে ভালোবাসতে পারব না।‌তরীর মতো করে কখনোই নয়। আর ঠকা*তে পারব না তোকে। আমি হাঁপিয়ে গেছি!”

তাচ্ছিল্যের স্বরে জবাব এলো, “সম্পর্ক! সম্পর্ক ছিলো কখন? ভালো তো আমি একাই বেসে গেলাম তন্ময়!”

তন্ময় কিছু একটা ভেবে হাতটা ছুঁয়ে যেতেই তনয়া এক পা পিছিয়ে গেল। জীবনে এই প্রথম তন্ময়ের থেকে দূরত্ব চাইছে সে। অশ্রু থেকে নোনাজল গড়িয়ে পড়ল আনমনে। শত চেষ্টা করেও আটকানো যায় না এদের। তন্ময় বুঝে গেলো সব শেষ। তনয়া দ্রুত চোখের পানি মুছে বলল,

“বাদ দে, আমি সব ভুলে যাব। সব, এমনকি তোকেও!”

তন্ময় নিশ্চুপ পাথরের মূর্তির মতো স্থির হয়ে রইল। এসব সে আশা করেই এসেছিলো। কিন্তু তনয়ার মুখ থেকে কথাগুলো শোনামাত্র তনয়াকে তার খুব অচেনা মনে হলো। এতো তার তনু নয়।

তনয়া হাসার চেষ্টা করে বলল, “ভালোই হলো বল, তরী ফিরে এসেছে। তুই তো তাকেই চাইতি!”

তন্ময় অস্ফুট স্বরে বলল, “তুই জানতি?”

“হ্যাঁ তো, দেখেছিলাম তোদের দুজনকে হাতিরঝিলে। সব তাহলে মিটমাট হয়েই গেল তাই না বল!

তন্ময় জবাব দিলো না। এখন বুঝতে পারল তনয়া কেন এতো রিয়েক্ট করেনি। সবকিছু জানা সত্বেও তাকে কিছু বলেনি। আর এদিকে তন্ময় অবলীলায় নাটক করে গেল। কি হিসেবে আখ্যায়িত হলো সে? ছলচা*তুরি, ধান্দা*বাজ, প্রতার*ক! প্রতার*না করল তনয়ার সাথে।

তনয়া হেসে বলল, “তাহলে, সংসার শুরু করছিস কবে?”

“কিছুই আর হচ্ছে না!”

“হচ্ছে না মানে?”

“তরী চলে গেছে। যেখান থেকে এসেছিলো সেখানেই ফেরত চলে গেছে।”

“মানে?”

“মানে একসাথেই ছিলাম দুজন। সকালে উঠে দেখি টেবিলে একটা চিরকুট লেখা, “আমি চলে যাচ্ছি”। এরপর আর কিছু জানি না।”

বিশাল বড় ধাক্কাটা এখন খেলো তনয়া। তন্ময়ের মনের অবস্থা এখন বুঝতে পারল না। যেখানে এতোক্ষণ ধরে কেবল একটু একটু করে ঘৃ*ণা, রা*গ, অভি,মানের দেওয়াল করছিলো এখন সেখানেই মায়া, মমতা এসেছে ভিড় করেছে। তন্ময়ের জন্য তার অনেক মায়া হচ্ছে। কষ্ট লাগছে ভেতরে ভেতরে। এই ছেলেটা কেন সুখ পায় না। সৃষ্টিকর্তা কেন এরকম করে? সে না হয় এক পাক্ষিক ভালোবাসে কিন্তু ওরা! ওরা তো দুজন দুজনকেই ভালোবাসে। তাহলে সমস্যা কোথায়? এতো কেন বাঁধা তাদের মধ্যে!

তন্ময়ের দেওয়া ব্যথা কমেছে। কিন্তু তন্ময়ের অপ*রাধবোধ কমেনি। সে ওখান থেকে চলে গেছে। তনয়া কিছুক্ষণ ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থেকে পা বাড়াতে গিয়ে থমকে দাঁড়াল। পা বাড়াতে পারছে না। শরীর কেমন করছে? পুরো শরীর কাঁপছে। অচল হয়ে পড়ছে এতোটুকুনি দেহটা। হেলিয়ে দুলিয়ে পড়ে যেতে ঝাপ্টে এসে ধরল কেউ। চোখ বুজে থেকেও বুঝতে পারল এটা কার হাত। স্পষ্ট চিনতে সে। কোনো ফারাক নেই। এ তো উষ্ণ স্যার। তিনি ডাকছেন! কিন্তু তনয়া উত্তর দিতে পারল না। সে শূন্যে মিলিয়ে যাচ্ছে, তিমিরে ঢেকে পড়ছে ক্রমশ। উষ্ণ স্যারের কোলের মধ্যেই মূর্ছা গেলো সে!

———

আলিশান বাড়ি হচ্ছে চৌধুরী ভিলা। মাত্র চারজন মানুষ এ বাড়িতে থাকলেও গোটা রুম প্রায় ১০ টির কাছাকাছি। গেস্ট রুম রয়েছে আলাদা। বাড়ির চারদিকে কেবল আভিজাত্য আর ঐতিহ্যের ছোঁয়া। বাড়িটা বানিয়েছেন উষ্ণের দাদার বাবা। তখন তারা ছিলেন যৌথ পরিবার। এখন অবশ্য নেই। সংসার, বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে আলাদা হয়ে গেছে সেই কবেই। তবে বাড়িটা আগের মতোই আছে। কিছুটা আবার বদলে গেছে তিলোত্তমা বেগমের দৌলতে। উষ্ণ পেয়েছে তার দাদার ঘরটা। এই ঘর দাদা নিজে উষ্ণ কে দিয়েছেন। ঘরটা দোতলায়। দাদাজান অসুস্থ হবার পর থেকে হাঁটা চলা কম করতেন, মাঝে মাঝে করতেই পারতেন না। তখন তাকে নিচতলা শিফট করা হয়। সেই সময় উষ্ণ দাদাজানের রুম হাতানোর সুযোগ পেয়েছিল। সে সময় মা ছিলেন, তিনি ঘরটা সাজিয়ে দিয়েছিলেন। এখন তিনি নেই তবে জিনিস গুলো যত্ন সহকারে রুমে পড়ে আছে।

উষ্ণের ঘরটার উপর উষাণের বেশ নজর। সে চায় উষ্ণ একেবারের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে যাক। তাহলে সে ঘরটা পাবে। এতো বছর বিদেশ থাকা সত্ত্বেও বাবা এই ঘরটায় থাকার অনুমতি তাকে দেয়নি। বাড়ি ছাড়ার পর নিশ্চিত দেবে।

এ বাড়িতে একটা জিমনেসিয়ামে আছে যেটা উষাণের পছন্দ অনুসারে করা হয়েছে। জিমনেশিয়ামটা অনেক বড়। সেখানে ছোট খাটোই একটা বক্স রিং আছে। উষ্ণ এখানে সচরাচর না এলেও শেহনেওয়াজ উষাণ চৌধুরী আর বাবা জাওয়াদ শেহনেওয়াজ চৌধুরী এখানে প্রায় আসেন। বক্সিং খেলে দুজনে। আজ উষাণ একাই ছিল। হঠাৎ সেখানে আগমণ ঘটে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তির! তার পদাচরণের শব্দে উষাণের মতিভ্রম হলো। একগাল হেসে বলে, “আসবে না কি ব্রো?”

উষ্ণ হাসে, বিপরীতে হাসে উষাণও! বক্সিং রিং এ তারা দুজন। উষ্ণ চৌধুরী হাতে বক্সিং গ্লাভস পরে একদম তৈরি। পরনে তার কালো রঙের হাফ স্লিভ টি শার্ট আর স্পোর্টস প্যান্ট। উষাণ পরেছে লাল রঙের হাফ স্লিভ‌ টি শার্ট আর স্পোর্টস প্যান্ট। তার হাতে নীল রঙের বক্সিং গ্লাভস!

খেলা শুরু। দুজনেই ঘুরছে! উষ্ণের বাজপাখির দৃষ্টি উষাণের দিকে তাক করে বলে,

“তনয়ার সাথে দেখা করেছিলি তুই?”

উষাণ হাসে। তার দিকে লক্ষ্য রেখে বলে উঠে, “এই কারণেই তবে এদিক আসা। হুম, ঠিক ধরেছিলাম তনয়া স্পেশাল কেউ তাই না!”

“তোর সবকিছুতে অনেক আগ্রহ উষাণ। আজ তোকে সব বুঝিয়ে দিচ্ছি!”

“আচ্ছা দেখা যাক!”

প্রথমে হামলা করল উষ্ণ। তার এক ঘুসি*তে উষাণ বেকাত হয়ে পড়ল। নাকে ভীষণ ব্য*থা পেল। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে উষ্ণ তাকে ল্যাং মে,রে নিচে ফেলে দিল। অতঃপর তার বুকের উপর বসে এলোপাথাড়ি মা*রতে লাগল। সবকটা তার গায়ে না লাগলেও যা লেগেছে নেহাত কম কিছু না। উষাণের চোখ ফুলে গেছে, নাক ফেটে রক্ত বেরুচ্ছে। উষ্ণ হিং,স্র হয়ে উঠেছে। জানো*য়ারের মতো আঘা”ত করছে তাকে। এক পর্যায়ে হাতের লাল রঙা গ্লাভস দুটো ছুঁড়ে ফেলে দিল। এক হাতে উষাণের টি শার্ট টেনে অন্য হাতে আবারো ঘুসি মা*রল নাক বারবর। উষাণ ততোক্ষণে মেঝেতে লুটি*য়ে পড়েছে। উষ্ণ তার শার্টের গলা ধরে দাঁতে দাঁত চেপে শাসা*তে লাগল, “তনয়া শুধু আমার, শুধু আমার! ওর কিছু হলে তোকে জানে মে*রে দিব। আজকেই দিতাম। কেবল তুই আমার ভাই বলে, সম্পর্কে আপন না হলেও রক্তের ভাই তাই ছেঁড়ে দিচ্ছি। কিন্তু এটা আমার লাস্ট ওয়ার্নিং ঊষাণ! শুধরে যা! বুঝলি শুধরে যা!”

ঘামে চিকচিক ললাটে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে গেল সে। তখনো বক্সিং রিং রক্তা*ক্ত হয়ে মেঝেতে পড়ে আছে ঊষাণ। উষ্ণ দাঁড়ায়নি। চট করে চেঞ্জ করে বেরিয়ে গেছে। ইদানিং সে বাড়িতে তেমন একটা আসে না। সপ্তাহে এক কি দুদিন। কারো সাথে কথাও বলে না ঠিক করে। কার সাথে বলবে? কথা বলার তো কোনো মানুষই আর নেই তার জীবনে।

তাকে যেতে দেখে পিছন থেকে ডাকতে চাইলেন জাওয়াদ চৌধুরী। ডাকলেন না। উষ্ণ গাড়ি নিয়ে বেরুনোর পরপরই তিলোত্তমা বেগমের গলা শোনা গেল। তার একমাত্র ছেলেকে মে*রে আধ*মরা করে ফে*লা হয়েছে!

———–

নিজের ঘরের বিছানার উপর বসে চা খাচ্ছে তনয়া। তার সামনে মৌ বকবক করে মাথা খেয়ে ফেলছে আধঘণ্টা ধরে। গল্পের বিষয়বস্তু হচ্ছে উষ্ণ স্যার। সেদিন উষ্ণ স্যার কিভাবে তাকে বাড়ি নিয়ে এসেছিলো সে গল্প!

মৌ মজা করে বলল, “তোমায় কি বলব আপু? সেদিন তোমার উষ্ণ স্যার যেভাবে তোমাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে এলো, বাব্বাহ! একদম হিরো হিরোইন লাগছিলো দুজনকে!”

কথাটা তনয়া একশবার শুনে হাঁপিয়ে গেলেও মৌ ক্লান্ত হয়নি। সে দ্বিগুণ উৎসাহে বলা শুরু করল। সেদিনের অনেক ঘটনাই খাপছাড়া লাগে তনয়ার। কখন জ্ঞান হারালো মনে নেই। যখন জ্ঞান ফিরল তখন উষ্ণ স্যারের গাড়ির মধ্যে। উষ্ণ স্যার ও ছিল সেখানে। শরীর দুর্বল লাগছে। কোথায় যাচ্ছে সে জানে না, জানার ইচ্ছেটুকু ম*রে গেছে। সে কেবল হাত পা এলিয়ে বসে রইল নিশ্চুপ ভাবে। গাড়ি এসে থামল তনয়ার বাসার সামনে। উষ্ণ স্যার গাড়ি থেকে নেমে আচমকা তাকে কোলে তুলে নিল। তনয়া বাঁধা দিলো না। এখন এই মূহুর্তে উষ্ণ স্যারের সঙ্গ তার ভালো লাগছে। তিনি সিঁড়ি বেয়ে উপর অবধি দিয়ে গেলেন। মৌ আজ বাসাতেই ছিল। দরজা খুলে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় রীতিমতো চমকে গেল। উষ্ণ স্যার তাকে ঘরের বিছানার উপর রেখে বলল, “নিজের যত্ন নাও!” তনয়া মাথা নাড়ল আর তিনি চলে গেলেন। সেই যে গেলেন আর ফিরে এলেন না। দু’দিন কেটে গেছে। তন্ময়ের সাথে কোনো কথাবার্তা হয়নি। তনয়া আর করতেও চায় না। হ্যাঁ মনটা একটু আনচান করে কিন্তু সে বুঝে গেছে, তন্ময়ের তাকে প্রয়োজন নেই। কখনোই ছিলো না!

চিত্ত চিরে বেরিয়ে এক ঘন কালো দীর্ঘ নিঃশ্বাস। মৌ বলে উঠে, “এই শুনছো? কি গো কথা কেন বলো না।”

“শুনছি তো, বল!”

“কচু শুনছো? তোমার উষ্ণ স্যার দুদিন ধরে আসেন না জানো? গাড়ি নিয়ে এখন আর আসেন না।”

“ওহ তাই!”

“ওহ তাই! এটা কি বলছো? কেন আসে না? খোঁজ নেও না কেন? ফোন করে জিজ্ঞেস করো?

“আমি করব?”

“তো? তুমিই তো করবে তবেই না ছুটে চলে আসবে!”

মৌয়ের কথাবার্তা তনয়া বুঝতে পারছে না। তবে মৌ ভীষণ এক্সাইটেড। তার মনে হচ্ছে তনয়া আর উষ্ণ স্যারের মধ্যে কিছু একটা চলছে। তন্ময়ের ভূত মাথা থেকে নেমেছে। কিন্তু একি? এরা এমন কেন? কিছু একটা হবার পর কথাবার্তাই বলে না।
তনয়া মনে মনে ভাবছে সে উষ্ণ স্যার কে কল করবে না। সেদিন বাড়ি দিয়ে যাবার পর তিনি আর ফোন করেননি। খোঁজ নেয়নি। সে কেন ফোন করবে ভাই। খেয়েদেয়ে কাজ নেই কোনো! হুহ!

তাও মৌয়ের জোর জবরদস্তির কারণে ফোনটা হাতে নিল। কিন্তু ফোন করার আগেই ফোন চলে এলো। স্যারের নয় খালার ফোন। তনয়া ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে তার খালাত বোন সিমরানের ম*রা কান্না শোনা গেল। কি হলো আবার? তনয়ার হৃৎপিণ্ড কেঁপে উঠল। ফোনটা হাতে নিয়েই ছুটে বেরিয়ে গেল সে।

খালা ভীষণ অসুস্থ, একদম বিছানায় পড়ে গেছেন। হাঁটা চলা সব বন্ধ। আজ সকাল থেকেই আবার কথাবার্তা বলেছিলেন না। সকলে বুঝে গেলো খালা বেশিদিন বাঁচবেন না। তাই কল করে সকলকে আনানো হলো। সকলকে দেখে তিনি এখন খানিকটা সুস্থ। বোধহয় সকলকে একটি নজর দেখার অসুখ করেছিলো তার। একা একা এই জীবন আর ভালো লাগছে না। সবচেয়ে বেশি খুশি হলেন তনয়াকে দেখে। হাত বাড়িয়ে তাকে কাছে ডাকলেন!

তনয়ার খালাতো ভাই বোন তিনটে। দু ভাই আর একটি বোন সিমরান। তার সখ্য কেবল সিমরানের সাথেই! তনয়া খালার কাছে এসে বসতেই খালা তার মাথায় হাত ছুলেন। বড় ভাবী, ছোট ভাবী, সিমরান, সিমরানের বর সব এখানে। এদের বাচ্চাকাচ্চা আছে গুটিকয়েক। সবগুলো অন্যরুমে। সবগুলোই বাচ্চা, ৯ কি ১০ বছর বয়সী!

খালা ফিসফিসিয়ে বলেন,

“কতোদিন ধরে বলছি আসতে, এই অসুস্থ খালাকে কি একবার চোখের দেখাও দেখতে ইচ্ছে করে না তোর?”

তনয়া মাথা নুইয়ে ফেলল। খালার প্রতি সে অবিচা*র করেছে। মা বাবা মা*রা যাবার একমাত্র এই খালাই তাকে আগলে রেখে মানুষ করেছে। সেই খালার এমন দুঃসময়ে এখানে না থেকে অ*ন্যায় করেছে। খালা বলেন,

“শুকিয়ে কেন গেছিস? খাওয়া দাওয়া করিস না।”

“করি তো খালা। তোমার শরীর কেমন এখন?”

“শরীর আর কি? এই ভালো এই খারাপ!”

বড় ভাই বললেন, “তনয়া, মায়ের শেষ ইচ্ছে তিনি তোর বিয়ে দেখতে চান! আমরা একটা ছেলেও পছন্দ করেছি। এখন তোর মতামত বাকি!”

তনয়া জবাব দিলো না। এটা নতুন কিছু না। বড় ভাই এর আগেও এমনটা করেছেন। কথাবার্তা না জানিয়ে হুটহাট বিয়ে ঠিক করে দেন। এবারও তাই। তিনি আবার বলেন, “লোকটা খারাপ না। এই একটু বয়স বেশি,‌ তবে দেখতে ভালো। আমার অফিসেই চাকরি করে। আমার সিনিয়র স্যার। ভালো একটা মেয়ে খুঁজছিলেন বিয়ের জন্য। আমি তোর ছবি দেখাই পছন্দ হয়েছে বলেছেন। এখন তোর মতামত চাই। বেশি ভাবিস না, লোকটার বেতন আমার চেয়েও বেশি। তোর ও আর চাকরি করা লাগবে না। তার টাকায় সংসার জীবন সব কাটিয়ে ফেলতে পারবি? লোকটার ছবি দেখবি।”

তনয়া না করতেই যাচ্ছিল তখনি খালা বলেন, “দেখ, ছেলেটা খারাপ না। আমিও দেখেছি। ভালোই তো দেখতে। বেঁচে আর কদিন থাকব তনু, মরে*ই তো যাব। মরা*র আগে না হয় তোর বিয়েটা দেখেই যাই। তোকে সুখী দেখে যাই মা!”

খালার এসব কথা সে আশা করেনি। বড় ভাই এবার খালার মত পেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে বলেন, “তাহলে স্যারকে আসতে বলি মা। ওরা দেখুক দুজনকে। এরপর কাজি ডাকিয়ে নাহলে আজই কাবিন হয়ে যাক!”

ছোট ভাই ও মাথা দুলিয়ে বলেন, “ভালোই তো হয়। সবাই এখন বাড়িতেই আছে। শুভ কাজে দেরি না করলেই ভালো হয়!”

সিমরানের বর মশাইও মত দিয়ে দিল। কেবল ভাবী দু জনের চোখে মুখে হতাশা। কারণ এখন বিয়ে পড়লেই কতো শত কাজ। এসব কাজ করতে হবে তাদের। পরায়া মেয়ের জন্য এসব কাজ করতে তাদের ভালো লাগবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বড় ভাবী হঠাৎ যেন বদলে গেলেন। তিনি যেচে এসে তনয়াকে বলতে লাগলেন, “লোকটা সত্যিই ভালো তনয়া, দেখতেও খারাপ না। বয়স এই ৩৫ এর কাছাকাছি। তাতে কি? তুমিও তো ২৫ এ পড়েছ। এরচেয়ে ভালো লোক কি আর পাবে? বরলোকদের বয়স একটু বেশি হলেই ভালো। সংসার বুঝে! তাই না মা!”

খালা ও মাথা নাড়লেন। বড় ভাবীর এসব কেবলই লোক দেখানো মনে হলো কারণ পাত্র বড় ভাইয়ের ঠিক করা। তাই এতো উচ্ছ্বাস। আশ্চর্যজনকভাবে দেখা গেল, তনয়ার মত ছাড়াই এরা বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে। এমনকি খাওয়া দাওয়ার তোরজোরও শুরু করে ফেলেছেন!

সকলের এসব কর্মকাণ্ডে‌ তনয়ার হাঁসফাঁস লাগছে। সিমরান কয়েকবার এসেছিলো কথা বলার জন্য। পারেনি বাচ্চাটার জন্য। খালি কান্নাকাটি করে।এতো কান্নাকাটি করলে কি আর কথা বলা যায় নাকি। এদিকে খালা অসুস্থ মানুষ, ঘুমাচ্ছেন! খালার পাশেই বসা তনয়া। তার মন আনচান করছে। আজ সত্যি সত্যি তার বিয়ে হবার সম্ভাবনা আছে। বড় ভাই বেশ কয়েকবার ফোন করে ফেলেছে তাদের। তারা আসছে!
তনয়া খালার মাথায় হাত বুলিয়ে চোখ বন্ধ করে খাটের মাথায় হেলান দিল। চোখ বন্ধ করতেই উষ্ণ স্যারের মুখটা ভেসে উঠল। আজ যদি তার বিয়ে হয়ে যায় তখন? তখন উষ্ণ স্যারের কি হবে? কি হবে তাদের সম্পর্কের? তাদের সম্পর্কের আদৌ আছে টা কি? সম্পর্কের নাম কি? এটাই বা কেমন সম্পর্ক!

তনয়া আর পারল না। তার গলা শুকিয়ে আসছে,‌ ভেতরে ভেতরে অ*স্বস্তি হচ্ছে। হাত পা কাঁপছে। প্যা*নিক অ্যা*টাক করবে বুঝি এখন। আর মানসিক চাপ নিতে পারছে না। খালার রুম থেকে উঠে এসে দাঁড়াল বেলকনির কাছে। ফোনটা হাতে নিয়ে নাম্বার ডায়াল করল। সাথে সাথেই ফোনটা রিসিভ হয়ে গেল। যেন এই অপেক্ষাই ছিল। রিসিভ হবার পর ওপাশ থেকে কোনো কথা নেই। যেন এখানে কি বলে সেটাই আগে শোনা দরকার। তনয়া অস্ফুট স্বরে বলল,

“হ্যালো!”

“হুঁ, বলো?”

“বিয়ে করবেন আমায়?”

ওপাশ থেকে নিরবতা। কোনো জবাব না পেয়ে তনয়া হার মেনে নিল। ফোনটা কানের কাছ থেকে সরিয়ে ফেলার আগেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো, “কোথায় আছো?”

তনয়া জবাব দিতে পারল না। মুখে হাত চেপে কেঁদে উঠল সে!

——-

পাত্রপক্ষের আসার কথা বিকেলবেলায়। তনয়াকে সিমরানের ভালো একটা থ্রি পিস পরিয়ে বসানো হয়েছে। খালাকে ধরে বসার ঘর আনানো হয়েছে। তার পাশেই মাথায় ঘোমটা টেনে তনয়া বসে আছে। সামনে টি টেবিলের উপর হরেক রকম খাবার সাজানো। বড় ভাই ফোনের উপর ফোন করছে। আর কতোদূর?

কলিং বেল বেজে উঠল। সবাই ভাবল পাত্রপক্ষই এসেছে। একসঙ্গে দাঁড়িয়ে পড়ল সকলে। বাচ্চাগুলোও ভালো জামাকাপড় পরে হাজির। বড় ভাই নিজে গিয়ে দরজা খুললেন। দরজার বাইরে অপরিচিত ব্যক্তিকে দেখে খানিকটা চমকে গেলেন। অপরিচিত ব্যক্তির গলার স্বর তনয়া পেলো। জেএসের গলার স্বর শুনেই তার বুকটা ধক করে উঠল। তবে কি উষ্ণ স্যার এসেছেন?

#চলমান

#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্বসংখ্যা_৪৩

শুভ্র রাঙা দরজাটা‌ ঠক ঠক শব্দ করে বন্ধ হয়ে গেল। পারফিউমের তীব্র গন্ধে মৌ মৌ করছে ঘরটা। নাম না জানা ফুলের সুবাস সকলকে শ্বাসরোধ করে আছে। না তা না, লোকটার কথা শুনেই সকলের শ্বা*সকষ্ট শুরু হয়ে গেল। উষ্ণ সকলের সামনে রাখা বড় চেয়ারটার উপর বসে পড়ল। চেয়ারটা বরাদ্দ ছিল বড় ভাইয়ের জন্য। এ চেয়ারে তিনি ছাড়া কেউ বসেন না আসলে। তাই উপস্থাপিত ঘটনাটি মেনে নিতে পারছেন না। তিনি এবার একটু কঠো*র গলায় বলে উঠলেন,

“বলবেন আপনি কে?”

সাদা শার্টে আবৃত সুদর্শন পুরুষের মুখে ফুটে উঠল এক চিলতে হাসি। দাঁড়িয়ে হাতটা বাড়িয়ে দিল। বড় ভাইয়ের মনে ভীষণ *সংশয়। তিনি হাতটা ছুঁতে না চাইলেও উষ্ণ জোর করে হাতটা বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করল। বলল,

“আমি শেহনেওয়াজ উষ্ণ চৌধুরী। এস কে কোম্পানির নাম শুনেছেন নিশ্চয়। তার সিইও!”

বড় ভাইয়ের চোয়াল খসে পড়ল। ছোট ভাই আমতা আমতা করে বলল,

“তনু যেই অফিসে চাকরি করে সেখানকার!”

“জি।

বড় ভাবী খানিকটা কটাক্ষ স্বরে শুধালো,

“এখানে এসেছেন কেন?”

“জি বিয়ে করতে!”

“কি?”

“ধুরি আপনাকে না তো, ওকে!‌”
ইশারা করল তনয়ার উপর। তনয়া যেখানে বসা ছিল সেখানেই শক্ত হয়ে বসে রইল। ছোট ভাবী দূর থেকে দাঁড়িয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে নাটক দেখতে লাগলেন। এসবে নাটকে তার ভারী আনন্দ হয়। বলেছিলো মেয়েকে চাকরি করতে না দিয়ে বিয়ে দিয়ে দিক। না তিনি চাকরি করবেন, একা থাকবেন! হলো তো! বংশে চু*লকানি লাগিয়ে এলো। এসব কথা মুখে না বললেও মনে মনে ঠিকই আওড়ালো!

সিমরান এবার শক্ত গলায় বলে উঠলো,
“আপনি মশাই ভালো করে বলুন তো এখানে কেন এসেছেন? আর কাকেই বা বিয়ে করতে এসেছেন!”

উষ্ণ বড় ভাইয়ের হাতটা এবার দিয়ে বিনয়ী ভঙ্গিতে বলল,
“জি, কয়েক ঘণ্টা আগে এক অতিশয় সুন্দরী রমনী আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন তিনি আমায় বিয়ে করতে চান। তাই আমিও কোনো কিছু না ভেবে না চলে এলাম। সুন্দরী রমনী বলে কথা, না করতে পারিনি।”

বড় ভাবী রুদ্ধ কণ্ঠে বলে উঠল, “এসব কি তনয়া? তুই লোকটাকে আসতে বলেছিস? লোকটাকে বিয়ে করবি বলে?”

তনয়ার মাথা এখনো নিচু। খালা কিছু একটা আঁচ করতে পেরে তনয়ার হাতটা চেপে ধরল। তনয়া বুঝি এতোক্ষণে নিঃশ্বাস ফেলল। বড় ভাবী আর বড় ভাইয়া তেলে বেগুনে জ্ব*লে যাচ্ছে। সিমরানের জামাই অর্থাৎ দুলাভাই একটু নরম স্বরেই বলল,

“তুমি কি উনাকে ভালোবাসো তনয়া, বিয়ে করতে চাও!”

তনয়া হকচকিয়ে উঠল। উষ্ণ স্যারের মুখের পানে চেয়ে রইল। তার অশ্রুসিক্ত আঁখি জোড়া উষ্ণের চোখে পড়তেই সে থমকে গেল। উষ্ণ স্যার কে কি সে ভালোবাসে? না বোধহয়? জানে না সে! তবে হ্যাঁ তাকে বিয়ে করতে চায়। কেন চায়? সেসব না হয় পরে শুনব। তনয়া শুকনো ঢোক গিলে বলল,

“আমি উনাকে বিয়ে করতে চাই।”

বড় ভাইয়া তেড়ে উঠলেন এবার। রূঢ় স্বরে বলে উঠলেন,
“বিয়ে করতে চাও মানে? তাহলে আমরা এতোক্ষণ কি বললাম? এতোক্ষণ ধরে যে সবকিছু ঠিকঠাক করলাম তখন তো কিছু বললে না। এখন এসে বলছো উনাকে বিয়ে করতে চাও? মগের মুল্লুক নাকি!”

বড় ভাবী শায় দিয়ে বললেন, “মেয়ের পাখনা গজিয়েছে। ছিঃ ছিঃ, দেখো না! অফিসের বসের সাথেই এতো রঙ ঢং। আর কি না কি করতো আল্লাহ ভালো জানে!

কথাগুলো শোনা মাত্রই উষ্ণ ফিরে চাইল বড় ভাবীর দিকে। তার চোখে যেন আ*গুন ঝরছে। চোয়াল শ*ক্ত করে এদিক ফিরতেই জেএস এসে তার বাহু চেপে ধরল। ফিসফিসিয়ে বলল, “স্যার আমি দেখবো?

“না থামো! দেখো কি হয়?”

বড় ভাইয়া আর ভাবীর সাথে ছোট ভাইয়া ও তাল মিলাতে লাগল। সিমরান আর দুলাভাই পড়েছে দোটনায়। ছোট ভাবী দূর থেকেই এসব দেখে মজা লুটছে। এক চিৎকারে আচমকা সবকিছু নিশ্চুপ হয়ে গেল। তনয়া দাঁড়িয়ে সকলের সামনে স্পষ্ট আর দৃঢ় কণ্ঠে বলে উঠলো,

“বললাম তো আমি তাকে বিয়ে করতে চাই। ব্যস কথা এখানেই শেষ। আর তোমরা তো কেউ আমায় জিজ্ঞেস করোনি আমি কি চাই? কোনো পছন্দ আছে কি না আমার? নিজেরা নিজেরাই তো সব ঠিক করে ফেললে। এখন যখন আমি মত দিচ্ছি এসব কেন শুরু করেছো?”

তনয়ার কথায় সকলে হতভম্ব। উষ্ণ এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলো। যেদিন তনয়া নিজে সকলের সামনে বলবে, সে তাকে বিয়ে করতে চায়। এই দিনটারই তো! সকলের সামনে তৃপ্তির হাসি দিল সে। বড় ভাবী কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই তনয়া তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, “প্লিজ ভাবী! আর কিছু বলো না। আমি ভালো না, খারাপ খুব খারাপ। তোমরা সবাই ভালো। নিজের কথা কি মনে নেই তোমার? মা বাবা থাকা সত্ত্বেও তো তাদের অমতে আমার ভাইয়ের হাত ধরে চলে এসেছে। এখন আমায় এসব বলছো? নিজের দিকে একটু তাকাও। আর একটা কথা, বিয়েতে আমি তোমাদের মতামত চাই নি, আমার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। মানলে ভালো, না মানলে…

“না মানলে কি তনয়া? অস্বীকার করবি আমাদের? লোকটার হাত ধরে চলে যাবি এখান থেকে। এসবের জন্য এতো বছর ধরে তোকে বড় করেছি আমরা। আমার মা দেখে রেখেছিল তোকে আজকের এই দিনের জন্য। বিয়ে করবি বুঝলাম। আগে বললি না কেন? স্যারকে আসতে বারণ করে দিতাম? এখন তিনি এলে আমার মান সম্মান কোথায় যাবে?”

তনয়া কথা গুছিয়ে নিচ্ছে। এরই মধ্যে উষ্ণ দু হাত প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে বলল, “আপনার স্যার আবার কে?”

বড় ভাইয়া কিছু বলার আগেই তার ফোনটা বেজে উঠল। ফোন নাম্বার দেখেই চোখ মুখ কালো করে ফেললেন। নিশ্চয়ই তার স্যারের ফোন। তিনি ফোনটা নিয়ে ঘরে চলে গেলেন। বড় ভাবী ফুঁসতে ফুঁসতে ঘরে চলে গেলেন। তনয়া শান্ত হয়ে বসল খালার পাশে। খালা এতোক্ষণ নিরব দর্শকের মতো সমস্ত কিছু দেখে তনয়ার হাতটা চেপে ধরে বলে উঠলেন,

“তনু, তুই কি সত্যিই ছেলেটাকে বিয়ে করতে চাস?”

তনয়া খালার পানে চেয়ে সামনে ফিরল। উষ্ণ পানির গ্লাস তার দিকে বাড়িয়ে ধরে বলল,
“পানি খেয়ে মাথা ঠান্ডা করে নাও!”

তনয়া পানির গ্লাস হাতে তুলে নিয়ে খালার দিকে ফিরে বলল, “হ্যাঁ, বাকিটা জীবন তার সাথেই কাটাতে চাই!”

উষ্ণ গিয়ে বসে পড়ল তার চেয়ারে। খালা ফের শুধালেন, “সংসার চারটে খানি কথা না তনু। সিদ্ধান্ত ঠিক করে নে। সুখী হবি তো তুই? সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে হবে তো?

তনয়া পানির গ্লাসে চুমুক দিল। মাথা নেড়ে বলল, “আমি আমার সুখের সংসার উনার সাথেই বাঁধব খালা!”

খালা জবাব পেয়ে গেলেন। বড় ভাইয়া আর ভাবী কথা শেষ করে ফিরে আসতেই খালা বলে উঠলেন, “তনয়া যার সাথে চায় তার সাথেই বিয়ে হবে। এখানে আর দ্বিতীয় কোনো কথা হবে না। আমি যখন বলেছি না তো না!”

অতঃপর বড় ভাইয়া কে উদ্দেশ্য করে বললেন, “রেজা, তুমি তোমার স্যারকে ফোন করে জানিয়ে দাও তিনি যেন এখানে না আসেন!”

বড় ভাইয়া ছোট মুখ করে বলল, “তিনি আসবেন না বলে দিয়েছেন?”

উষ্ণ মুচকি হেসে জেএসের দিকে ফিরে তাকাতেই জেএস মাথা নাড়ল। যার অর্থ, “আমি থাকতে কোনো চিন্তা নেই স্যার!”

খালা বলে উঠলেন, “তাহলে তো ভালোই হলো। তোমাদের কোনো আপত্তি নেই তো, থাকলেও যায় আসে না। সংসার তনয়া করবে তোমরা নও। রেজা যাও কাজী ডেকে নিয়ে আসো!”

বড় ভাইয়া কিছু না বলে নিশ্চুপে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। খালা উষ্ণ চৌধুরীর দিকে ফিরে তাকালেন কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য। তখনি তার নজর পড়ল পাশে থাকা কয়েকটা শপিং ব্যাগের দিকে। তিনি ওদিক ফিরতেই উষ্ণ যেচে বলল, “হুট করেই বিয়ের কথা বলল তাই বেশি কিছু কিনতে পারিনি। কেবল একটা লাল শাড়ি আর কিছু গহনা আছে। গহনাগুলো আমার মায়ের!”

খালা সিমরানের দিকে ইশারা করতেই তারা শপিং ব্যাগগুলো সহ তনয়াকে নিয়ে ভেতরে চলে গেল। সিমরানের বর এসে দাঁড়াল পাশে। খালা এবার উষ্ণ চৌধুরীর সাথে কথা বলতে শুরু করলেন। সব প্রশ্নের একটাই জবাব দিল উষ্ণ, “আমার কেউ নেই। মা খুব ছোট বেলায় মা*রা গেছেন। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। আমার জীবন নিয়ে তার কোনো বোঝাপড়া নেই। আমার জীবন একান্তই আমার!”

খালা মাথা দুলিয়ে মিলাতে গেলেন। পর পুরুষের সাথে হেলেদুলে চলার মেয়ে তনয়া নয়। ভীষণ বাস্তববাদী সে। এসব প্রেম ভালোবাসায় তনয়া আসক্ত হতে পারে না বলেই তার ধারণা। কিন্তু উষ্ণ চৌধুরী কে বিয়ের কারণ তিনি বোধহয় বুঝতে পেরেছেন। উষ্ণ তার মতোই, একা! কিন্তু দুজনের এই অন্ধকার জীবনে ঠিকমতো সংসার সাজাতে পারবে তো তারা। একটু চিন্তিত হলেন!

অতঃপর খানিকক্ষণ বাদে লাল শাড়ি পরে হাজির করা হলো তনয়াকে। উপস্থিত সকলের সামনে বেহায়ার মতো হা হয়ে চেয়ে রইল উষ্ণ। তার নজরই পড়ছে না। পড়া সম্ভব না। ঘোর লেগে গেছে দৃষ্টিতে, মূর্ছা গেছে চেতনা শক্তি। সে ডুবে গেছে অনন্তে, তার মনের গহীনে যেখানে ঠাঁয় পেয়েছে তার আকাশসম সীমাহীন ভালোবাসা! তার নীলাম্বরী! তার রাগিনী! তার তনয়া!

উষ্ণের এমন হাবভাব দেখে কাজী সাহেব তো বলেই ফেললেন, “নজর ঠিক করুন। আগে আসতাগফিরুল্লাহ পড়ুন। তিনি এখনো আপনার বিয়ে করা বউ হয়নি। বেগানা নারীর দিকে ওমন করে চাইতে নেই। আল্লাহ গজব দেবে, বুঝলেন!”

এই অদ্ভুত, কঠোর পরিস্থিতিতে সকলে যেন কিভাবে হেসে উঠলো। উষ্ণ লজ্জা পেয়ে হেসে ফেলল। তনয়ার টেনশন কমার বদলে বেড়ে গেলে দ্বিগুণ। এই মূহুর্তে আচমকা মৌয়ের আগমন কিছুটা স্বস্তির ছিলো। মৌ কে এখানে দেখে বিশেষ অবাক হয়নি সে। উষ্ণ স্যার আর মৌয়ের তো ভীষণ ভাব।

মৌ ফোড়ন কেটে বলে উঠলো, “কাজী সাহেব, এসব বলবেন না। আল্লাহ ক্ষমাশীল! বিয়ের আগে দু নজর বউকে দেখে এতোবড় পাপ তো আর করেনি। আপনি না হয় কবুল বলিয়ে উদ্ধার করে ফেলুন!”

খালা সমেত সকলে হেসে উঠলো আবারো। সকলের হাসি ঠাট্টা উপেক্ষা করে উষ্ণ ফের চাইল তার রমনীর দিকে, তার অর্ধাঙ্গিনীর পানে। এই তো আর কিছু মূহূর্ত, তিনবার কবুল পড়তেই সারাজীবনের মতো বাঁধা পড়বে তারা। উষ্ণের চোখ কথা বলছে। সে বলছে,

“দেখলে তনয়া? আমি বলেছিলাম তুমি আমার হবে? কেবল আমার! দেখছো আজ, সব ঘুরে গেছে। সবার সামনে তুমি আমায় জীবনসঙ্গী হিসেবে স্বীকার করেছো। বিয়ে করছ, আমার হাতটা ধরে ওয়াদা করছো মৃত্যু*র আগ অবধি তুমি আমার! বিধাতা আমার পাঁজরের হাড় থেকেই সৃষ্টি করেছে তোমায়। কোনো সন্দেহ নেই এতে, কোনো দ্বিধা নেই!”

লাল ঘোমটার আড়ালে তনয়ার লজ্জিত, গম্ভীর মুখখানা দেখে মিটিমিটি হাসল উষ্ণ!

———–

উষ্ণ আর তনয়ার বিয়ে নিয়ে পুরোপুরি উষ্ণের ভাঁওতাবাজি না থাকলেও কিছুটা আছে। আর কিছুটা আছে ভাগ্যের। যে ভাগ্য এই প্রথম তার সঙ্গ‌‌ দিয়েছে। এবার সবটাই হয়েছে কেবল ভাগ্যের জোরে। উষ্ণ তো কেবল আঁটকে দিয়েছে লোকটাকে। তার প্রেয়সীকে অন্য কোনো পুরুষ দেখবে একি তার সহ্য নয়। হুঁ হুঁ কখনোই নয়!

#চলমান