তোমার সনে বেঁধেছি আমারও প্রাণ পর্ব-৫৫+৫৬

0
43

#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্বসংখ্যা_৫৫

উষ্ণ তনয়াকে নিয়ে ফিরে এসেছে নিজেদের এপার্টমেন্টে। তনয়ার হাত এক মুহূর্তের জন্য ছেড়ে দেয়নি সে। তার হাত ধরে বসিয়ে দিল সোফার উপর। অতঃপর ছুটে রান্নাঘরে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যে ফিরে এলো ফলের জুস নিয়ে। তনয়ার সামনে রেখে আবারো ভিতরে চলে গেল। ফল কেটে নিয়ে এসে তনয়ার সামনে রাখল। বাড়ি ঢুকেই একের পর এক খাবারের আয়োজন দেখে তনয়ার পেট খারাপ করছে। সে নিশ্চিত উষ্ণ স্যার এই সবগুলো খাবার তাকে না খাইয়ে ছাড়বে না। তাকে সবগুলো খেতে হবে। ঠিক তাই। উষ্ণ স্যার এসেই তার সামনে বসে পড়ল। তাড়া দিয়ে বলল,

“খাওয়া শুরু করো। এরপর ঔষধ ও খেতে হবে।”

“আমি সবে মাত্র নাস্তা করে এসেছি। আর কিছু খেতে পারব না।”

“সবেমাত্র মানে? এখন ১১ টা বাজে তনয়া। তুমি নাস্তা করেছো সেই ৮ টা বাজে। সেই খাবার এখনো পেটে আছে তোমার?

“একটু পর তো লাঞ্চই করব।”

“লাঞ্চের অনেক দেরি। দেখি হা করে!”

বলতে বলতে এক স্লাইস কমলা পুড়ে দিল তনয়ার মুখে। ডান হাতে চোট পাবার কারণে তনয়া এখন প্রায় পুরোপুরি উষ্ণ স্যারের উপরই নির্ভরশীল। গুরুত্বপূর্ণ কাজ গুলো তাকে ছাড়া করা সম্ভবই না।

উষ্ণ তার কপালে গালে হাত রেখে ফের পরীক্ষা করে নিল। না, শরীর আজ ঠান্ডাই আছে। জ্বর আসেনি তাহলে। একটু খেয়েই তনয়ার তালবাহানা শুরু। সারাজীবন মুরগির আধার খাওয়া মানুষ হঠাৎ করে তো আর গরু হয়ে যেতে পারে না। এতোটুকুনি পেটে আর কতোটুকু আঁটে তার।

উষ্ণ হার মেনে নিল। তনয়া কে ধরে নিয়ে গেল বেডরুমে। এবার ফ্রেশ করিয়ে দিবে। ওয়াশরুমের কাছে নিতেই তনয়া বলে উঠলো,

“আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”

“তোমার সাথে?”

তনয়া চোখ বড় বড় করে বলে,
“ওয়াশরুমে!”

“তুমি একা পারবে?”

তনয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “অবশ্যই পারব। সরুন! আমার এক হাত এখনো আছে!”

ছোট একটা ঝা*রি মেরে একাই ওয়াশরুমে ঢুকে ধপাস করে দরজা আটকে দিল তনয়া। উষ্ণ বুঝতে পারল না, রে*গে যাবার মতো এমন কি বলল সে?

সে গেল ড্রয়ারের কাছে। তনয়ার জামাকাপড় বের করতে। গিয়ে পড়ল বিপত্তিতে। এতো লম্বা সরু হাতার জামা এখন কি করে পরবে সে? হাতে প্লাস্টার করা। এখন দরকার ঢিলেঢালা হাতা। উষ্ণ পুরো ড্রয়ার চিরুনি তল্লাশি দিয়ে সেসবই খুঁজছিলো। হঠাৎ তার হাতে এলো অন্যকিছু। জামাকাপড়ের ভেতর থেকে টান মে*রে বের করল সেটা। হাতে তনয়ার ইনার দেখে সচকিত হয়ে উঠল চোখ জোড়া। দরজা খোলার শব্দ। তনয়া বা হাতে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে এদিক ফিরতেই উষ্ণ কে দেখে একখান চিৎকার মেরে বলল,

“আপনি কি করছেন?”

উষ্ণ হকচকিয়ে উঠল। ঝটপট ড্রয়ার বন্ধ করে এদিক ফিরল। রা*গে, লজ্জা*য় রক্তিম হয়ে উঠল তনয়ার মুখশ্রী। উষ্ণ নিজেও থতমত খেয়ে গেছে। হাসার চেষ্টা করল। আমতা আমতা করে বলল,

“ওই আমি!”

“বের হন এখুনি এখান থেকে!”

তনয়ার ঝারি খেয়ে উষ্ণ ছুটে বেরিয়ে গেল। তার হাত কাঁপছে এখনো। কে জানে তনয়া কি ভাবছিলো। তনয়ার মাথায় কি চলছে ওসব ভেবেই মুখ টিপে হাসল সে।

কিছুক্ষণ বাদে, তনয়া বিছানার উপর বসে আছে মুখ কালো করে। পাশেই তার সেলোয়ার কামিজ। এখন এসব কিভাবে পরবে সে। জামাকাপড় বদলানো দরকার। এক জামা পরেও তো আর থাকা যায় না। ঠিক এই মুহূর্তে দরজার ওপাশ থেকে চিকন স্বরে উষ্ণ বলল,

“আসব?”

তি*রিক্ষি মেজাজে তনয়া জবাব দিল, “কি চাই?”

উষ্ণ মুখটা কাচুমাচু করে দরজা ভেড়িয়ে ঘরে ঢুকল। মাথা চুলকাতে লাগল। মুখাবয়বের এমন ভাব, যেন তার চেয়ে ইনোসেন্ট আর কেউ নেই। আবারো যাচ্ছে ড্রয়ারের দিকে। তনয়ার সূক্ষ্ম দৃষ্টি সেখানে। উষ্ণ তনয়ার ড্রয়ার নয় বরং তার ড্রয়ার থেকে একটা শার্ট আর ফরমাল প্যান্ট বের করে দিয়ে বলল,

“আমার মনে হয় তোমার জন্য এগুলো পরা অনেক সহজ হবে। মানে এই অবস্থায়!”

তনয়া ছো*মেরে তার হাত থেকে শার্টটা কেড়ে নিয়ে বলল, “বের হন এবার!”

“বেরিয়ে যাব? মানে একা পরতে পারবে?”

উষ্ণের কথাবার্তায় ল*জ্জায় তার কান দিয়ে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। তবু নিজেকে সামলে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “বের হবেন।”

“ভেবে দেখো!”

তনয়া চোখ রাঙা*তেই উষ্ণ মুখ আঙুল দিয়ে দরজার দিকে পা বাড়াল। তনয়া দু মিনিটের জন্য চিন্তায় পড়ে গেল। সত্যি সত্যি এসব খুলে কিভাবে পরবে। হাতে য*ন্ত্রণা মাথায় ব্যান্ডেজ! আর ভাবতে না পেরে অস্ফুট স্বরে বলে উঠল, “শুনুন”! তনয়ার কণ্ঠস্বর পেয়েই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মিনমিনিয়ে হেসে উঠল উষ্ণ চৌধুরী!

কিন্তু এবার তার মুখ ভার হয়ে গেল। তনয়ার পিছনে দাঁড়িয়ে বলল, “অন্ধকার কেন?”

“অন্ধকার থাকবে না তো কি থাকবে? আমি আলো জ্বালাতে পারব না ব্যস!”

খানিকক্ষণ আগেই হৃদয়ে গৃহীনে যেই রঙ লাগছিলো তা মূহূর্তে ধূসর হয়ে গেল। পানসে একটা বউ তার। উষ্ণ বিরবির করে বলল, বর বউয়ের মধ্যে এতো প্রাইভেসি হলে চলে! আজ নয়তো কাল সব তো দেখবোই!”

তনয়া চ*ড়াও গলায় বলল, “কি দেখার কথা বলছেন!”

“ককিছু না! কি করব?”

“জামার চেই*ন খুলুন!”

উষ্ণ ঠোঁট টিপে হেসে বলল, “বুঝলে তনয়া! অন্ধকার রুমে এই কথাটা শুনতে অনেক অন্যরকম লাগছে!”

তনয়া ঠোঁট চেপে তার পায়ের উপর পা তুলে দাঁড়াল। উষ্ণ চেঁচিয়ে উঠে বলল, “কি করছো? বরের গায়ে কেউ পা তু*লে?”

“স্বামীর আক্কেল গুড়ুম হলে আক্কেল ঠিক করতে দেওয়া লাগে।”

“সম্মান দিয়ে কথা বলো। এখন আমিই তোমার সব। আমি ছাড়া এসব হেল্প আর কারো থেকে নিতে পারবে?”

“হ্যাঁ, হ্যাঁ! স্বামী মহোদয় হেল্প করুন আমার। ভুল হয়ে গেছে।”

উষ্ণ মাথা নেড়ে তনয়ার পিঠে হাত রাখল। মূহুর্তেই কেঁপে উঠল সে। সরু চেইনটা এক টানে খুলল ফেলল উষ্ণ। জামার গলা ঘাড় বেয়ে আপনাআপনি বেয়ে নিচে নেমে গেছে। নিস্তব্ধ ঘরে হঠাৎ করেই দুজন মানবী আরো নিস্তব্ধ হয়ে গেল। তনয়া ঠোঁট চেপে দাঁড়িয়ে আছে। কেবল তার প্রখর শ্বাস নিঃশ্বাসের শব্দ পাওয়া যায়। উষ্ণ ঠান্ডা হাতটা এখনো তার উন্মুক্ত পিঠ ছুঁয়ে আছে। কি ভীষণ রকমের অ*স্বস্তি। উষ্ণ পুরোপুরি নিশ্চুপ! আচমকা মেয়েলী সুবাস তাকে করে তুলেছে হতভম্ব! তিমিরে ঢাকা এই অন্ধকারের মধ্যেই কি করে যেন দুই মানবীর হৃদয়ে বিলের পদ্মফুল ফুটে উঠল।

তনয়া এবার সামনে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছে। তার শরীর জুড়ে যাচ্ছে একটা ঘ্রাণে। উষ্ণ স্যারের ঘ্রাণ! গায়ে শার্ট জড়ানোর সাথে সাথে তার গায়ে যেন মিশে গেছে তীব্র ঘ্রাণ। মনে হচ্ছে আষ্টেপৃষ্ঠে লোকটা জড়িয়ে ধরে আছে। উষ্ণ একে একে শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিচ্ছে। গুমোট নিস্তব্ধ হয়ে ছিল এতোক্ষণ তারা দু’জন। শার্টের বোতাম আটকে দিয়ে উষ্ণ নিচু গলায় বলল, “এর রিভার্স কবে হবে?”

“কি বললেন?”

“তোমার মাথা।”

“আপনার মণ্ডু!”

“হ্যাঁ, কাজ শেষ হলে সকলেই এমন করে। বে*ইমান সব। বউ আমার আস্ত এক বে*ইমান।”

“বেকবেকানি থামাবেন।”

“থামালাম। বসো, সেলোয়ার খুলে দিই এবার!”

কথাটা বলার পরপরই উষ্ণ গাল গর*ম হয়ে গেল। অন্ধকার রুমেও তনয়ার ছক্কা মিস হয়নি। বা হাতে চড়টা ঠিকঠাক ভাবেই গালে লেগেছে। উষ্ণ অন্ধকার রুমে গালে হাত দিয়ে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তনয়া দূরে সরে আলো জ্বালিয়ে বলল, “অস*ভ্য ই*তর লোক। কথাবার্তা কি করে বলতে হয় জানেন না। বের হন এই রুম থেকে!”

একের পর তনয়ার ধ*মক খেয়ে চোখ বুজে নিল উষ্ণ। সাফাই গাওয়ার জন্য কিছু বলার আগেই তনয়া দিল আরেক ধ*মক। নিজের বলা কথা নিজেই বিড়বিড় করল। ভুল কি বলেছে সেটা বুঝতে পেরেই হেসে উঠল। তনয়া চোখ মুখ গরম করে বলল,

“আপনি আবার হাসছেন!”

উষ্ণ গালের হাত থিতুনিতে ধরে দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগল। তনয়া চিৎকার করে বলল, “কি রকম নি*র্লজ্জ আপনি। এখানে দাঁড়িয়ে হাসছেন!“

“সরি সরি! আমি বুঝতে পারিনি। হ্যাঁ হ্যাঁ, তুমি নিজেই পারবে পরে নিতে!”

তনয়া এসেই এক হাত দিয়ে তাকে ধা*ক্কা মেরে ঘর থেকে বের করে দিল। উষ্ণের হাসি তখনো থামছে না। আন্দাজেই হোক! কি ভয়ং*কর কথা সে বলে ফেলেছে! হাসতে হাসতে তার চোখ মুখ সব লাল হয়ে গেছে। ওদিকে দরজা আটকে রেখে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে তনয়া। ঠোঁট কামড়ে ধরে অ*সভ্য লোকটাকে গালিগালাজ করে যাচ্ছে সে! বজ্জা*ত লোকটা এখনো হাসছে! “আআআআ” বলে চেঁচিয়ে উঠলো তনয়া!

#চলমান

#তোমার_সনে_বেঁধেছি_আমারও_প্রাণ
#মিমি_মুসকান
#পর্বসংখ্যা_৫৬

হাসপাতালের ইর্মা*জেন্সি করিডোরের বাইরে অস্থি*র হয়ে পায়চারি করছেন জামান সাহেব। তিলোত্তমা বেগম ভাইকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করছেন। কি থেকে কি যে হয়ে গেল তারা কেউ বুঝতে পারছে না। ডাক্তার জানিয়েছেন শরীরের প্রায় অর্ধশতাংশ পু*ড়ে গেছে তার। অবস্থা ভীষণ খারাপ। শরীরের জ*খম বেশ গাঢ়। জামান সাহেব এবার কাঁদতে কাঁদতে ভেঙ্গে পড়লেন। তাকে কেবল সান্ত্বনা দিচ্ছে তার একমাত্র বোন তিলোত্তমা বেগম। তার পাশে জাওয়াদ চৌধুরীও আছে। দূরে দাঁড়ানো উষাণ চৌধুরী। জামান সাহেব যখন কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠেন, “আমার মেয়ের এমন হাল কি করে হলো বোন? তুই বল! এমন কি করেছো ও। মা ম”রা মেয়েটা আমার। এতো বড় ক্ষ*তি কে করল? ওর কিছু হলে আমি ম*রে যাব বোন। একদম ম*রে যাব!”

তিলোত্তমা বেগম ভাইকে আঁকড়ে ধরেন। জাওয়াদ চৌধুরী জানেন এই কাজ তার গুণধর পুত্র ছাড়া আর কারো না। উষাণ ও জানে সেই কথা। সৎ ভাইকে গড়ায় গণ্ডায় চিনে সে। তার ভাই ছাড়া এই নৃ*শংস আচরণ আর কেউ করতেই পারে না! তাই আড়ালে তারা দুই বাপ বেটা সরে গেল।

তনয়ার এই অবস্থায় উষ্ণ অফিস যাওয়াই বাদ দিয়েছে। তনয়াকে বাসায় একা রেখে এসে কেবল ছটফট করতে থাকে সে। ভালো লাগে না কিছু। সর্বক্ষণ তনয়ার কথাই মাথায় ঘুরে। মেয়েটা একা একা কি করবে? গ্লাসে করে পানি খেতে পারবে তো, ঔষধ খেয়েছে তো। খাবার গুলোও তো গরম করতে পারবে না। এসব চিন্তা মাথায় ঘুরলে অফিসে মনোযোগ থাকবে কি করে। তাই তো সকালে অফিসে চলে আসে। কিছুক্ষণ থেকেই বেড়িয়ে যায়। যতক্ষণ বাসা থেকে দূরে থাকে ততোক্ষণই তার মন ছটফট করতে থাকে।

উষ্ণ দ্রুত হাতের কাজ গুলো শেষ করছে। পাশে দাঁড়িয়ে জেএস। স্যার ভীষণ উদ্বিগ্ন! এ কথা তার অজানা নয়। উষ্ণ তখন ফাইল দেখতে ব্যস্ত। জেএস ধীরে স্বরে বলল,

“স্যার ইরিশা জামান।”

বেঁ*চে আছে?”
বলার আগেই প্রশ্ন। জেএস জবাব দিল,‌
জ্বি।

তো ভালো তো। এখন কি হয়েছে?

তারা পুলিশের কাছে যাবে।

যেতে দাও।

কোনো প্রমাণ নেই। সেখানকার কোনো সিসিটিভি ফুটেজ ও পাওয়া যাবে না।

গেলেও ক্ষ*তি নেই!

বলেই জেএসের দিকে ফিরে হাসল। জেএস নিজেকে ধাতস্থ করল। ভ*য় পেয়েছে নিশ্চিত। উষ্ণের কেবিনের টেলিফোন বেজে উঠল। রিসেপশন থেকে কল এসেছে। উষ্ণ হাতের কাজ ছেড়ে ঘড়ির দিকে নজর দিয়ে বলল,
গাড়ি বের করো। বাড়ি ফিরব!

জেএস মাথা দুলিয়ে দরজার কাছে যেতেই আপনাআপনি দরজা খুলে গেল। জেএস ফিরে দেখল জাওয়াদ চৌধুরী দাঁড়িয়ে। স্যারের সাথে দীর্ঘদিন পর চোখাচোখি হতেই জেএস চোখ নামিয়ে নিল। জাওয়াদ চৌধুরী কাঠ কাঠ গলায় বললেন, তোমার সাথে আমার কথা আছে উষ্ণ!

জেএস বেরিয়ে গেছে। তার মনের ভিতর হাঁসফাঁস লাগছে। কেবিনে তার দুজন স্যার কি বলছে কে জানে? কারো থেকে কেউ কম না। অফিসের মধ্যে না গণ্ডগোল পাকিয়ে দেয়।
জাওয়াদ চৌধুরী উষ্ণের সামনে টেবিলে বসে পড়লেন। আরাম করে বসে একটা সিগারেট ধরালেন। ছেলেকেও সাধলেন একটা। উষ্ণ অবলীলায় একটা সিগারেট নিয়ে নিল। দুজনেই সিগারেট ধরাল। সিগারেটের বিষাক্ত ধোঁয়ায় ঘর ভরে উঠছিলো। বেশ অনেকক্ষণ একসাথে সিগারেট টানার পর জাওয়াদ চৌধুরী বলে উঠলেন,
“তুমি মেয়েটাকে মে*রে ফেললে না কেন? এভাবে বাঁচিয়ে রেখে কিসের কষ্ট দিচ্ছ? এতো বছরের জমানো রা*গ পুষিয়ে নিচ্ছ নাকি?”

উষ্ণ ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে জবাব দিল,
“ইরিশা আমার কাছে কেউ না। ওর জন্য কখনো প্রতিশোধের ভূত মাথায় চাপেনি। এখন যা করেছে এটা তারই ফল!”

জাওয়াদ চৌধুরী মাথা দুলিয়ে আবারো সিগারেট দু ঠোঁটে চেপে ধরলেন। বললেন, “একটা মেয়ের জন্য!”

“আপনিও তো করেছিলেন একটা মেয়ের জন্য।”

জাওয়াদ চৌধুরী হেসে উঠলেন। সিগারেট সামনের এস্ট্রেতে মুচরে নিয়ে বললেন,
“তুমি আমার মতো হওয়ার চেষ্টা করো না উষ্ণ।”

“আমি হতেও চাই না।”

“কিন্তু তুমি পা সেদিকেই দিচ্ছ!”

জবাবে সে হাসল। দু আঙ্গুলের মাঝের সিগারেট মুচরে বলল, “র*ক্ত কি অস্বীকার করা যায়।”

জাওয়াদ চৌধুরী দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
“মা বাবারা অনেক স্বার্থপর হয় উষ্ণ। নিজের সন্তান কে বাঁচাতে এরা সব করতে পারে। আমিও পারব। আর বলব এমন পাগলামি আর করো না।”

প্রতিত্তুরে উষ্ণ জবাব দিল, “তাহলে সবার আগে নিজের স্ত্রী কে সামলান। নাহলে এরপরের শি*কার তিনিও হতে পারেন!”

জাওয়াদ চৌধুরী চোয়াল শক্ত করে দৃষ্টি মিলালেন। সেই দৃষ্টিতে কেবল কঠোরতা! নিজের সন্তান হয়ে বাপকেই থ্রেট দিচ্ছে। সাংঘা*তিক ব্যাপার। তিনি উঠে দাঁড়ালেন। বললেন,
“অতিরিক্ত ভালোবাসার ফল ও কিন্তু অতিরিক্ত হয় উষ্ণ! সাবধানে থেকো!”

“চিন্তা করবেন না। আপনার মতো ভুল আমি কখনো করব না। শুধু আমাদের একা ছেড়ে দিন। ওর নাম মিসেস তনয়া‌ চৌধুরী, আমার স্ত্রী সে, আমার অর্ধাঙ্গিনী। আমার নামের মতোই‌ তার জীবনের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছি আমি। মনে রাখবেন, এখানে আমিও জড়িয়ে আছি।”

জাওয়াদ চৌধুরী এক নজর ছেলেকে দেখে বেড়িয়ে গেলেন। উষ্ণের মধ্যে নিজেকে দেখতে পাচ্ছেন তিনি। এখন টের পাচ্ছেন, তাকে নিয়ে তার বাবার জীবন কতোটা দু*র্বিষহ কেটে ছিল। জীবনে এই প্রথমবার বাবার জন্য আফসোস করলেন তিনি!

#চলমান