পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে পর্ব-৭+৮+৯

0
28

#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৭

~অহনা রাগে কটমট করে তাকিয়ে আছে রোহান এর দিকে “সেদিকে রোহান এর কোনো খেয়াল নেই, জীবনে এই প্রথম সে কোনো মেয়ের দিকে, এভাবে নির্লিপ্ত ভাবে তাকিয়ে আছে ” অহনা একটু ঝাজালো কন্ঠে বললো কি হলো বলেন পাবনা দুটো সিট কেনো নিতে যাবেন শুনি আপনি কি অনেক হাইপার পেশেন্ট নাকি..?

>>এতোক্ষনে রোহান সজ্ঞানে ফেরে “শুনো মেয়ে তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো বুঝছো.! তুমি এই দিনাজপুর এই থাকো তো. ..?

অহনা ভ্রুক্ষেপহীন ভাবে তাকিয়ে বললো “আপনাকে কেনো বলতে যাবো শুনি..?

” দেখে তো মনে হচ্ছে ভার্সিটির স্টুডেন্ট ” তা এখান কার ভার্সিটি তে যখন পড়ালেখা করো তার মানে এখানেই থাকো অবশ্যই “আমি কিন্তু তোমাদের এখানকার অতিথি বুঝছো ” ভালো ভাবে কথা বলো।

অহনা একটু হেয়ালি করে বললো , যেই বাসার মেহোমান সেই বাসায় যান “আর হে রাস্তা ঘাটে দেখে শুনে হাইটেন নাহলে আবার ড্রেনে পড়ে যাবেন আপনার যা চোখ একবার বরং চোখের ট্রিটমেন্ট টাও করিয়ে নিয়েন ” আমাদের দিনাজপুর এ অনেক ভালো ভালো চোখের ডাক্তার আছে।

~রোহান কথা গুলো হজম করার চেষ্টা করতে করতে অহনা চলে গেলো ওর বান্ধবীর সঙ্গে। রোহান তাকিয়ে দেখছে মেয়েটার চোলে যাওয়ার পানে “মোবাইল এর রিংটোন এর আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো রোহান এর ” ইরফান কল করেছে, ”

হ্যালো ”

! “কিরে সকালে গেছিস খবর নাই কেনো ” শশুর মশাই কে পেয়েছিস নাকি। কখন আসবি..?

–আরে না শশুরের মেয়ে কে পাইছি “,একটু কাজ বাকি আছে সেরে রওনা দিবো ফিরতে রাত হবে।

“! ওকে ”

~সন্ধ্যায় মাহি ও ফাইজা বসে গল্প করছে ” আর মনে হয় আর শারমিন আপু আসবে না পড়াতে “দুবোন এক টিচার এর কাছেই এক সাথে পড়ে ” মাহি ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে “ফাইজা এবার এস. এস.সি এক্সাম দিবে ” দুবোন এর গল্পের মাঝে ইরফান এসে বসলো সোফায় হাতে মোবাইল এক নজর দেখলো মাহি আর ফাইজা কে “এরপর ফোনের দিকে তাকিয়ে কিছু করতে করতে বললো ” টিচার আসেনি…?

সাহসা তাকালো ফাইজা ছোট করে জ্ববাব দিলো ” না ভাইয়া আসেনি..।

~নাজিফা বেগম কোথা থেকে ছূটে এসে বললেন , এসে বললেন “কিরে বাবা কি হয়েছে তোর হাতে দেখি দেখি ” এতোক্ষণে মাহি ও ফাইজা ইরফান এর দিকে তাকালো হাতে ব্যান্ডেজ লাগানো অথচ দুবোন এতোক্ষন খেয়াল করেই নি”

! ইরফান স্বাভাবিক ভাবেই বললো “কিছু হয়নি এমনি একটু কেটে গেছে “,

নাজিফা বেগম চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো “এমনি কি করে কাটলো “বলিস নি কেনো আমাকে ” দেখেছো কতোগুলা কেটে গেছে।

” কিছু হয়নি মা “তুমি বেশি টেনশন করো “।এক কাপ কফি দেবে..?

~নাজিফা বেগম আর কিছু না বলে চলে গেলেন কিচেনে রাবেয়া বেগম পকরা ভাজছে সবার জন্য ” এইদিকে মাহি মনে মনে ভাবছে ইরফান ভাইয়া তাহলে সত্যিই ওই লোক টা কে এমন ভাবে মেরেছে “আচ্ছা ওই লোকটাকে মারতে গিয়েই।কি ইরফান এর ভাইয়া হাতে ব্যথা পেয়েছে ” তাহলে আমার কারনে ইরফান ভাইয়া ব্যাথা পেয়েছে। আমি আরো মনে মনে কতো কি ভেবেছিলাম কিন্তু ইরফান ভাইয়া তো দেখি ফাহাদ ভাইয়ার থেকেও বেশি ডেঞ্জারাস ওই লোকটাকে এমন ভাবে মেরেছে চেনাই যাচ্ছিলো না।

~ইরফান উঠে চলে গেলো রুমে, মাহি খেয়াল ও করা করে নি ভাবছে আর নিজেকে দোষারোপ করছে “ফাইজার ডাকে মাহির ভাবনা নষ্ট হলে মাহি বলে কি হয়েছে..?

~” আপু ইরফান ভাইয়া এভাবে ব্যাথা কিভাবে পেলো সেটাই তো বুঝতে পারছি না .!

~” আমি কিভাবে জানবো তুই ” ইরফান ভাইয়া কেই জিজ্ঞেস কর নাহয়..। ”

ফাইজা একদিক ওদিক মাথা নেড়ে না সূচক মাথা নাড়লো ” আমার এতো সাহস নেই “আমি ভাইয়া কে জিজ্ঞেস করবো তুমি এই জিজ্ঞেস করো।

~! “সাহস নেই তো চুপচাপ থাক ”

দুজনের কথার মাঝে হটাৎ নাজিফা বেগম এসে বললেন মাহি “মা যাতো ইরফান কে কফি টা দিয়ে আয়। ”

মাহি একটা শুকনো ঢোক গিলে বড় আম্মুর হাত থেকে কফির মগ টা নিয়ে চললো ইরফান ভাইয়ার রুম এর দিকে “দরজার সামনে এসে দারিয়ে দরজায় টোকা দিলো ” ~ভেতর থেকে ইরফান গলা খাঁকারি দিয়ে বললো খোলা আছে।

মাহি ভেতরে ঢুকে কফি টা টেবিল এর উপরে রেখে একটু তাকালো ইরফান এর হাতের দিকে ”

একটা কথা জিজ্ঞেস করবো ( কাপা কাপা গলায় বললো মাহি )

ইরফান জ্ববাব দিলো “হুমমম ”

~” হাত টা কিভাবে কাটছে মানে “বড় অনেকটা কেটে গেছে তাই ”


ইরফান বললো এমনি কাটছে কিচ্ছু হবে না “এইটুকু তে, ফাহাদ আর নিরব জোর করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলো বার বার না করলাম ‘তার পরেও শুধু শুধু এইগুলা আমার লাগে না বলেই ” হেচকা টানে খুলে ফেললো ব্যান্ডিজ টা “খোলা মাএই চারদিকে ছিটিয়ে পড়লো রক্ত ”

~মাহি চিৎকার দিয়ে কাছে গিয়ে বললো কি করলেন এটা “রক্ত বের হচ্ছে তো হায় আল্লাহ এখন কি হবে বলেই কিছু না ভেবেই নিজের ওড়নার একপাশ দিয়ে চেপে ধরলো ইরফান এর হাত টা ” মাহির অনেক কষ্ট হচ্ছে কিন্তু এমন লাগছে কেনো যানা নেই “মাহি ইরফানের কাছে আসতেই সেই সুমধুর ঘ্রাণ টা টের পাচ্ছে কিন্তু এবার আর অপরিচিত লাগছে না চিরোচেনা সুগন্ধি মনে হচ্ছে অথচ লোকটা বাসায় আসলো মাএ কয়টা দিন হলো।

★মাহির মনে কেমন এক ঝর বইছে সাগরের ঢেউ খেলছে বুকে কিন্তু কেনো”কিছুক্ষণ পড়ে রক্ত থেমে গেলো ” মাহি এক দৌড়ে গিয়ে নিজের রুম থেকে ফাস্টএইড বক্স টা নিয়ে এসে ইরফান এর কাছে বসলো এরপর হাত টা নিয়ে আলতো করে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে আর হাল্কা ফু দিচ্ছে যাতে জ্বালা কম করে “মনে হচ্ছে ইরফানের ব্যাথা টা মাহি অনুভব করছে ” ইরফান নির্লপ্ত দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলো কিছু বলছে না “কেমন নেশালো চোখে তাকিয়ে আছে মাহির দিকে

★মাহি মলম লাগিয়ে হাত টা সুন্দর করে বেধে দিচ্ছে ” অনেকক্ষন এর নিরবতা ভেঙে ইরফান বললো আচ্ছা মাহি একটা কথা বলবো ”

~মাহি একটা শুকনো ঢোক গিলে বড় বড় শ্বাস ফেলে জ্ববাব দিলো “হুম ‘

–: ছাদে তোর কয়টা ফুল গাছ আছে তাই না…!

সাহসা মাহি জ্ববাব দিলো ” হুমম”

তোর খুব শখের.?

“খুব ”

– গাছ গুলো তে কেউ বদনজর দিলে তোর কেমন লাগবে বল। রাগ উঠবে কি না।

–হ্যা “রাগ তো উঠবেই ছোট থেকে বড় করেছি যত্ন করেছি খারাপ তো লাগবে।

ইরফান এবার সরাসরি মাহির দিকে তাকিয়ে বললো ” ” জানিস প্রতি টা মানুষ এরোই কিছু না কিছু একটা শখের জিনিস আছে যাতে সে অন্য কারো নজর টাও সহ্য করতে পারে না ”

চলবে…?

#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৮

~সকালের স্নিগ্ধ আলো এসে পরছে ঘুমন্ত মাহির চোখে মুখে ~ঘুমের রেস কাটে না যেনো মাহির মৃদু হাওয়ায় উরছে বেলকনির পর্দা টা থাই গ্লাস টা খোলা তা দিয়ে সূর্যের আলো ভেতরে ঢুকে মাহির সুন্দর মুখশ্রী তে পরছে চেহারা টা জ্বলজ্বল করছে “তীব্র আলো চোখে মুখে পড়া তে একটু নড়ে চড়ে, ঘুম ভাঙলো মাহির ” ঘুম থেকে উঠেই মাহির পাতলা চিকন ঠোঁট জোড়ায় এক চিলতে হাঁসির রেখা দেখা দিলো “আকাশের পানে তাকিয়ে মাহি বললো.!

এই ভোর রাখে প্রকৃতির মায়া, মায়াবী আঁচল পেতে
এই ভোরে বনের পাখিরা ওঠে আরাধনা সুরে মেতে।

~ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো মাহি ” আজ খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠেছে সে “সচারাচর এতো সকালে ঘুম থেকে ওঠে না ” মাহবুবা বেগম এসে মাহি কে এক কাপ চাঁ আর সাথে কিছু বিস্কুট দিয়ে দিয়ে গেলো ” মাহির চাঁয়ের সাথে বিস্কুট খুব একটা পছন্দ করে না “তাই সুধু চাঁ টুকু খেয়ে সোফায় বসে আছে ” এমন সময় ফাহাদ নিচে নেমে “মাহি কে উদ্দেশ্য করে বললেন মা কে বল ভাইয়া কে এক কাপ কফি করে দিতে ” বলেই বাইরে চলে যাচ্ছে “মাহি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ”

“ভাইয়া তুমি খাবে না??

“না…!

” এতো সকালে না খেয়ে কোথায় যাচ্ছো “??

” পেছনে ঘুরে একটু রসিকতার স্বরে ফাহাদ বললো “আরে আমার দাদি ” ~একটু কাজ আছে “বাসায় ফিরে খাবো “!

” আমাকে মোটেও বুড়ি লাগে না “তুমি আমায় দাদি বলবা না ভাইয়া ” একটু অভিমানের ভঙ্গিতে মাহি বললো ”

“ওকে সরি “ছোট মিষ্টি বোন আমার ” আর অভিমান করে না ভাইয়ার সাথে “এবার আমি যাই…??

” আচ্ছা “তাহলে আসার সময় আমার, আর ফাইজার জন্য আইসক্রিম নিয়ে আসবা ” মনে থাকবে…?

“আচ্ছা ঠিক আছে ”

~ফাহাদ বেড়িয়ে গেলে “মাহি রান্না ঘরে গিয়ে গিয়ে ছোট আম্মু কে বলে ” ইরফান ভাইয়ার জন্য কফি বানানোর জন্য ”

“সোফায় বসে মাহি ভাবছে ” রাতে ইরফান ভাইয়ার হাতের এমন অবস্থা দেখলো এখন কেমন হয়েছে “একবার যাওয়া উচিত ” এখন মাহির ভয় অনেক টা কমেছে ইরফান এর উপর থেকে “তাছাড়া গতরাতে ইরফান মাহির সাথে ” যেভাবে মায়ামাখা স্বরে কথা বলেছে ” মাহি অনেক অবাক হয়েছে “ইরফান ভাইয়া অনেক মিশুক আমরা শুধুই ভয় পাই তাকে ” মাহি মনে মনে বিড়বীড়ালো।

“মাহবুবা বেগম কফি নিয়ে ” দোতলায় উঠতে যাচ্ছে এমন সময় মাহি বলে ওঠে “-

~ ছোট আম্মু ”

“হুম ” কিছু বলবি..??

“আমি তো রুমে যাচ্ছি ” তুমি আবার কষ্ট করে উপরে উঠবে আবার নামবে “এর চেয়ে ভালো আমায় দেও আমি ইরফান ভাইয়াকে কফি দিয়ে দিবো।

” আচ্ছা নে “এই বলে মাহবুবা বেগম চলে গেলেন রান্না ঘরের দিকে ”

” মাহি কফি নিয়ে গেলো “ইরফান এর রুমের দরজা খোলা মাহি আস্তে করে রুমের দিকে পা বাড়ালো ” রুমে নেই ইরফান ভাইয়া তাহলে কোথায় গেলো এতো সকালে “মাহি একটু ভেতে যেতেই শুনতে পায় ” পুরুষালি কণ্ঠে এক গান “মাহি আনমনে ভাবে ” এতো সুন্দর করে কে গান গাইছে..??

“ইরফান ভাইয়া না তো…?

” এতো সুন্দর সুর টা বেলকনি থেকে আসছে “গান টা ভালোকরে শোনার জন্য মাহি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বেলকুনির কাছে গিয়ে দড়ালো ”

“মনে যন্ত্রনা,প্রেমে শান্তনা,,
তবুও আশা কি থামে..??
কিছু স্বপ্ন যে,পেল রং খুঁজে
আজ তোমারি নামে…!!
প্রেম আমার….
ওও প্রেম আমার..!

” ইরফান ভাইয়া এতো সুন্দর করে গান গাইতে যানে “আগে তো কখনো শুনিনি ” মাহির ঘোর কাটে ইরফান এর ডাকে ”

“কিরে কোন জগতে আছিস…??

“হুম” হে”এই যে এখানেই তো “(ভ্যবাচেকা খেয়ে মাহি বললো)

” কখন এসেছিস “আর ডাক দিস নি কেনো..?

” মাহি কিভাবে বলবে যে সে অনেকক্ষন ধরে এসে ইরফান এর গান শুনছে.. “সে কফি মগ টা ইরফানের দিকে।এগিয়ে দিয়ে নিঁচুস্বরে জ্ববাব দিলো মাএই আসছি..।আপনার হাতের কি অবস্থা ব্যাথা কমেছে..?

” হুম “রাতেই কমেছে অনেকটা আর এখন পুরোটা।

” মাহি বেশ অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুড়লো ইরফানের দিকে “এতো জখম ব্যাথা এতো তারাতারী কমে গেলো “..?

“ইরফান কফি তে একটা চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো ”

স্নিগ্ধ ভোর, হাতে এক কাপ ধোঁয়া ওড়ানো কফি…
বাগানের সুন্দর ফুল গুলোর দিকে অপলক দৃষ্টি…
জীবন সুন্দর হওয়ার জন্য আর কি লাগে!

” ইরফান এর এতো সুন্দর ছন্দময় কথা শুনে মাহি”স্নিগ্ধ মিষ্টি হাঁসি দিয়ে চলে গেলো।

“মাহির এই হাঁসি দেখে ইরফান এর ইচ্ছে করছে আরো একটা গান গাইতে ” কিন্তু তার এখন রেডি হয়ে একবার এয়ারপোর্টে পৌঁছতে হবে!

“ইরফান বাইরে যাওয়ার সময় ” নাজিফা বেগম কে বলে বেরোলেন তার এক ফ্রেন্ড আসছে USA থেকে কদিন এই বাসাতেই থাকবে বাবা কাকা দের বলা আছে আগে থেকেই “একটা রুম ফ্রেশ করে যেন রাখা হয়।

” মাহি “ফাইজা দুই বোন শুনলো এই কথা ”
~~~
ইরফান ভাইয়ার ফ্রেন্ড আসবে বাসায় বাইরের কেউ থাকলে আমার অস্বস্তি লাগে আপু “ফাইজার নির্লিপ্ত জ্ববাব…!

” এইভাবে বলে বোন “বাসায় মেহমান আসলে খুশি হতে হয়..
নাহলে আল্লাহ নারাজ হন বুঝলি..” মাহির কথায় বুঝার মতো উপর নিচঁ মাথা নাড়ায় ফাইজা।

চলবে…?

#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৯

~সবাই গ্রীষ্মের ফুল ও ফলে বিমুগ্ধ হয়। প্রকৃতিপ্রেমীরা হরেক রকমের পুষ্পের বন্দনায় মেতে ওঠে। সবুজের নান্দনিকতার মাঝে শুভ্র, লাল, হলুদের পসরা। গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুর জনজীবনে অস্বস্তি আনলেও মৌসুমের ফুল-ফলের প্রেমে পড়ে আবিষ্ট সবাই। হরেক রকমের নজরকাড়া ও মনজুড়ানো ফুল ফোটে এ সময়। লাল ও হলুদ রঙের কৃষ্ণচূড়ার সঙ্গে প্রকৃতির সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দেয় হলুদ রঙের সোনালু, বেগুনি রঙের জারুল ও হলুদণ্ডলাল রাধাচূড়া। এ ছাড়া কনকচূড়া, গন্ধরাজ, স্বর্ণচাপা, উদয়পদ্ম, গুলাচি, নাগেশ্বর, গুস্তাভিয়া, মধুমঞ্জুরি, লালসোনাইল, কুরচি, মেঘশিরীষ, রক্তিম গুলবাহার, ডুলিচাপা, ঝুমকোলতা, হিজল, বরুণ, কাঠগোলাপসহ বিভিন্ন ফুলের সৌন্দর্যে প্রফুল্লিত হয়ে ওঠে প্রকৃতিপ্রেমীর অন্তরের অন্তস্তল। প্রকৃতিপ্রেমীদের বলতে শোনা যায়, বর্ষার ফুল যেমন কদম, তেমনি গ্রীষ্মের মূল আকর্ষণ কৃষ্ণচূড়া। গ্রীষ্মে লাল কৃষ্ণচূড়া আর সোনালু ফুলে বিমোহিত হওয়া ছাড়া উপায় কই!গ্রীষ্মকাল জুড়ে সোনালু ফুলের রেশ থাকে। প্রকৃতির এমন সতেজ ও সাজানো রূপ দেখে গ্রীষ্মের রুক্ষতা ভুলে থাকে সবাই! যেভাবেই হোক এমনকি অযত্নে-অবহেলায় হলেও গ্রীষ্মের ফুলেল রূপ তার সৌন্দর্য জানান দেবেই।

“শুক্রবার এর ছুটি তে মাহির বেশির ভাগ সময় কাটে ছাদে ” আজও মাহি ও ফাইজা দুবন মিলে ছাদে এসেছে “ফাইজা ছাদের এক কোনে থাকা মাহির লাগানো একটি টবে গোলাপ গাছের ডাল-পালা পরিষ্কার করছে। মাহির কৃষ্ণচূড়া ফুল অনেক ভালোলাগে মাহিদের বাড়ির পাশে গেইট এর পাশে একটা বড় কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে সেই গাছের ফুলে চারোদিকে পরিবেশ টা অসম্ভব সুন্দর লাগছে ” মাহি তাকিয়ে বিস্ময়কর ভাবে তার সৌন্দয্য উপভোগ করছে “তখন বাড়ির গেইটে প্রবেশ করে তাদের সাদা রঙের গাড়ী টা ” ড্রাইভিং সিট থেকে ইরফান কে নামতে দেখে মাহি একটু ভ্যবাচেকা খেলো কারণ “ইরফান ভাইয়া তো যাওয়ার সময় বাইক নিয়ে বেরহয়েছিল “তখন দেখেছিলো তাহলে এখন গাড়ী করে কিভাবে ফিরলো..?

” ফাইজা এসে বললো “আপু কে আসছে গড়ী করে!আব্বু বলেছিলো সময় পেলে আজকে বাসায় চলে আসবে “..!

” না ছোট আব্বু আসে নি ওই দেখ ইরফান ভাইয়া আসছে “বলে মাহি নিজের তর্জনী আঙুল দিয়ে ইরফান এর দিকে ইশারায় দেখালো ”

” ইরফান এর গাড়ীর ব্যাক সিট থেকে একজন মেয়ে কে নামতে দেখে দুই বোন অবাক ভাবে একবার নিজেদের মধ্যে চোখাচোখি করলো আবার তাকালো ওই মেয়েটার দিকে”

“একটি কালো রঙের শাড়ি পড়া ” খোলা চুল গুলো কোমর এর নিচ পর্যন্ত পড়ে আছে “সুন্দরী রমনী বলা যায়, ফরসা ধপধপে চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট।

” এর পরপরই মাহি তাকালো ইরফান ভাইয়ার দিকে “ভাইয়া তো বলে ছিলো তার একজন ফ্রেন্ড আসবে USAথেকে তাহলে এটাই কি তার সেই ফ্রেন্ড ” ইরফান ভাইয়ার মেয়ে বান্ধবী ও আছে…?? (মনে মনে ভাবছে)

“থাতেই পাড়ে সবার এই তো থাকে আমার ও তো আছে রিফাত সাগর ওরা তো ছেলে কিন্তু ওরা ও তো আমার ফ্রেন্ড। কিন্তু সেই USA থেকে বাংলাদেশ একটা মানুষ এতোদূরে চলে এলো সুধু ফ্রেন্ডশিপ এর কারণে নাকি অন্য কিছু..? পরক্ষনেই উপলব্ধি করতে পাড়লো মাহির শরীর কেঁপে উঠল কিন্তু ” মাহির গলাটা শুকিয়ে আসে “একটু পানি খাওয়া জরুরি ” মাহির অসস্তি হচ্ছে “কারাণ টা বুঝতে পারছে না..!

“মাহি ও ফাইজা নিচে নামলো ফাইজা কে ভিষণ খুশি দেখাচ্ছে ” ফাইজা আগে ভেবেছিলো ইরফান ভাইয়ার বন্ধু হয়তো কোনো ছেলে বাসায় আসবে তাই অন্য রকম লাগছিল “কিন্তু এতো মিষ্টি একটা আপু যে আসবে ফাইজা আগে জানলে না জানি ” কি করতো “আপুটার সাথে ফাইজার কিছুক্ষণ কথা হলো ” দুজনের বেশ ভাব জমে গেলো! বেশ কিছুটা সময় পড়ে মাহি রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামার উদ্দেশ্য রওনা হলো ”

~সচারাচর বাসায় মেহমাহ আসলে ফাইজার থেকে বেশি খুশি হয় মাহি “কিন্তু আজ মাহির অনুভূতি গুলো অন্যরকম ” কেমন একটা থমথমে মেজাজ! এর কারণ মাহির নিজের ও জানা নেই “ইরফান ভাইয়ার মেয়ে বান্ধবী দেখে মাহির কি হিংসা হচ্ছে কিন্তু কেনো…? ইরফান ভাইয়ার মতো এতো গম্ভীর একটা লোকের মেয়ে বন্ধবান্ধবী আছে নাকি ছেলে বন্ধু তাতে মাহির কি আসে যায়..!

নির্লিপ্ত ভাবে আনমনে নিচে নামছে সিড়ি পর্যন্ত আসতেই স্লিপ কেটে মাহি পড়ে যাওয়ার আগেই এক হেচকা টানে শক্ত হাতে মাহি কে নিজের দিকে করে নেয় ইরফান ” আমি তাল সামলাতে না পেরে বেসামাল হয়ে ইরফান এর বুকে মাথা ঠেকালো “তৎক্ষনাৎ এক ঝাজালো ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে গেলো মাহি ” এটা এক সুপরিচিত ঘ্রাণ মাহির কাছে এখন।

“উপর দিকে মানুষ টার চেহারার দিকে না তাকিয়েই মাহি বুঝে ফেললো মানুষ টা কে ” ভ্রম কাটতেই মাহি সরে দাড়ালো”

“ইরফান গম্ভীর কণ্ঠে বললো কি হলো এক্ষুনি মুখ থুবড়ে পরতি ” এতো বেখেয়ালি কবে থেকে হলি তুই মাহি…?!

“মাহি কিছু বলতে পারলো না ” দ্রুত নিচে নেমে গেলো.!

“নিচে নামতেই ফাইজা বলা শুরু করেছে ” আপু এটা হচ্ছে “লিসা ” আমাদের ইরফান ভাইয়ার ফ্রেন্ড “আপুরা বাংলাদেশি কিন্তু পুরো পরিবার USA থাকে। ” আর লিসা আপু এটা হচ্ছে.. ফাইজা বলার আগেই লিসা বলে ওঠে ”

“মাহি ”

তুমি মাহি এম. আই. রাইট

মাহি অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো “লিসা আপু আজকেই প্রথম মাহি কে দেখলো মাহি ও প্রথম লিসা আপু কে দেখলো তাহলে লিসা আপু মাহির নাম। কিভাবে জানলো..?

” মাহি লিসা আপুর সাথে অনেক কথা বললো যদিও লিসা আপু অনেক সিনিয়র মাহি দের থেকে কিন্তু অনেক মিশুক

তাই খুব বেশি দেরি হলো না ওদের ভাব জমতে “ওরা কথা বলছে এমন সময় বাসায় এলো মনির চৌধুরী ফাইজা তো অনেক দিন পড়ে বাবা কে দেখে মহা খুশি ” ড্রইংরুমে বাসার সব গিন্নী রাও আছে “নাজিফা ভেগম, রাবেয়া বেগম ” মাহবুবা বেগম ও এখানে উপস্থিত সকলে “,শুধু ” ফরহাদ চৌধুরী আর কাশেম চৌধুরী দুই ভাই এখনো একটু দেরি তে বাসায় ফিরলো”!

“যোহর এর আযান পড়লো একে একে তিন ভাই নামাযের জন্য বের হলো ” কিন্তু ইরফান ফাহাদ এর জন্য অনেক টা দেরি করলো দুটো ফোন করলো ফাহাদ কে রিসিভ হয়নি “তাই ইরফান ও নামাযের জন্য রওনা হলো “একটা শুভ্র সাদা পাঞ্জাবি পড়ে টুপি মাথায় দিতে দিতে নিচে নামার সময় ইরফান এর আতরের ঘ্রাণ মাহির রুপ পর্যন্ত পৌছালো ” মাহি একটু উকি দিয়ে দেখলো ”

চলবে……….?