পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে পর্ব-২৪+২৫+২৬

0
37

#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনীতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ২৪

“সন্ধ্যায় গলির মোড়ে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রোহান, সাব্বির একটু সাইডে গিয়ে সিগারেট টানছে “ইরফানের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে সাব্বির এরই একটু সিগারেট এর নেশা আছে বাকি রা কেউ সিগারেট খায় না। ইরফান ও ফাহাদ এসে দাঁড়ায় রোহান এর সামনে কিন্তু রোহান আনমনে কিছু একটা ভাবছে তাই খেয়াল করতে পারলো না, ইরফান গলা খাঁকারি দিয়ে রোহান কে উদ্দেশ্য করে বললো,

” কিরে দুনিয়ায় আছিস নাকি ভিনগ্রহে গিয়ে সংসার শুরু করে দিয়েছিস..?

“আকস্মাৎ ইরফানের কন্ঠস্বর শুনে থতমত খেয়ে কিছুক্ষণ ইরফানের দিকে তাকিয়ে বলে রোহান, কিরে কখন এলি।

” এসেছিতো বহু আগে তুই তো ধ্যানে ছিলি তাই খেয়াল করিস নি!

–এতোক্ষণে ওদের মাঝে নিরব ও এসে হাজির! সাব্বির এবার সিগারেট এর শেষ অংশ টুকু লম্বা একটা টান দিয়ে হাত থেকে ফেলে দিলো,নাক মুখ দিয়ে ধুমা ছেড়ে হাত দিয়ে সরিয়ে ওদের কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলে, আরে ভাই এই রোহান টার আবার কি হলো বুঝতে পারছি না, কিছু দিন ধরে কেমন একটা মনমড়া হয়ে থাকে “কারণ জিজ্ঞেস করলেও বলে না!

ফাহাদ কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে বললো ” কি ব্যাপার রোহান ভাই তোমায় আবার কোনো রোগে ধরেছে নাকি..,?

” ~ইরফান রহস্যময় হাঁসি দিয়ে বললো “আরে প্রেম রোগে ধরেছে ওকে। কিরে চুপ করে আছিস কেনো বল কিছু ভুল বললাম নাকি ”

~রোহান কিছু টা ব্যঙ্গ করে বললো “বুঝিস যেহেতু তো যা চাই তা দিয়ে দিলেই তো হয়।

” কি চাই তোর….?

__রোহান একটা ভাড়ী নিশ্বাস ফেলে জবাব দিলো ” তোর বোন…!

~ফাহাদ “নিরব ও সাব্বির হা হয়ে তাকিয়ে আছে রোহান এর কথা শুনে! ইরফানের কোনো হেলদোল নেই অলস ভঙ্গিতে বললো, কবে থেকে ভালোবাসিস অহনাকে।

~” কথা টা যেনো বিস্ফোরণের মতো ফাটলো।উপস্থিত সকলেই বেশ অবাক।

–“রোহান ধীর কন্ঠে বললো “তুই জানলি কিভাবে..?

–ইরফান শান্ত কন্ঠে জ্ববাব দিলো ” আমি বাসায় থাকি না থাকি বাসার সব খবর রাখি “অহনা আমার একমাত্র ফুপির একটা মাত্র মেয়ে আমার এক মাত্র ফুপাতো বোন! সিয়াম ভাইয়ার অবর্তমানে ওর ভালো মন্দ খেয়াল রাখা আমার কর্তব্য! তুই আমার ফ্রেন্ড তোর মনের খবর ও রাখা আমার দায়িত্ব। ফুপিরা বাসায় থাকতেই আমার সন্দেহ হয়েছিলো চেয়েছিলাম তোর মুখ থেকে শুনতে..!

_রোহান আবেগী চোখে ইরফানের দিকে তাকিয়ে বললো ” প্রথম দেখাতেই মেয়েটার প্রেমে পড়েছিলাম সেই দিনাজপুর তারপর তোদের বাসায় দ্বিতীয় বারের মতো দেখে বেশ অবাক হয়েছিলাম দিনাজপুরের দেখা মেয়ে তোদের বাসায় কি করে এর পর জানতে পাড়লাম ও তোর ফুপির মেয়ে “এখন তোর ফুপাতো বোন কে আমার লাগবে।

~” মামা বাড়ীর আবদার নাকি বলবি আর পেয়ে যাবি আগে দেখি অহনা তোকে ভালোবাসে কিনা সেটাও তো জানতে হবে।

“ওর যেই রাগ আমাকে পারে না শুধু গিলে খেতে কাছে পেলে ভষ্ম করে ফেলবে।

–এই রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করে ওর মন টাকে জিততে পাড়লে সিয়াম ভাইয়াকে রাজী করিয়ে অহনার সাথে তোর বিয়ে আমি নিজ দায়িত্বে দেবো ইনশাআল্লাহ।

রোহান যথেষ্ট ভালো একটা ছেলে কোনো ধরনের বাজে স্বভাব ভা নেশা রোহানের নেই ” জীবনে কখনো কোনো মেয়ের দিকে বাজে নজরে তাকায় নি। USA এতোগুলো বৎসর ইরফানের কাছে ছিলো এর মধ্যে রোহানের বাজে কোনো দিক ইরফানের নজরে পড়ে নি। USA থেকে লেখা পড়া শেষ করে দেশে ফিরে সফটওয়্যার নিঞ্জিনিয়ার ! বেশ ভালো একজন কর্মকর্তা । সিয়াম ভাইয়া কে বললেও খুব একটা আপত্তি করবে না । সিয়াম।ভাইয়া ও রোহান ভালো করেই চেনে। অহনা যথেষ্ট শান্ত ও ম্যাচিউর একটা মেয়ে রোহান ওকে ভালো রাখবে। ভাই হিসেবে সব কিছু বিবেচনা করে ইরফান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

রোহান কাতর কণ্ঠে বললো ” বন্ধু হয়ে তুই বন্ধু কে সাহায্য করবি না..?

“ইরফান একটা চোখ মেরে বলে, সমন্ধী হিসেবে তোর আমাকে ভয় পাওয়া উচিত কিন্তু বন্ধুত্বের খাতিরে কিছুটা ফেভার তুই পাবি।

–ফাহাদ ইরফানের দিকে তাকিয়ে গভীর গলায় বলে ” ভাইয়ার প্রেমে আমি হেল্প করছি আর ভাইয়া রোহান ভাইয়ার প্রেমে “আমার প্রেমে কে হেল্প করবে শুনি..!

শক্ত কন্ঠে রোহান বলে ” কেনো তোর বোন আছে না..?তোর বনের বেষ্ট ফ্রেন্ড কে পটাতে তুই তোর বোনের কাছে হেল্প নে!

রুষ্ট চোখে রোহানের দিকে তাকিয়ে ইরফান মনে মনে বিড়বিড় করে বলে, শালা তোরা.. তোরা কথা বলছিস ভালো কথা কথার মাঝে আবার আমার নিষ্পাপ বউ টাকে টানছিস কেনো ।

— ফুপি দের বাসার জন্য ইরফান শপিং করে নিলো কাল সকালে দিনাজপুরের উদ্দেশ্য রওনা হবে। রোহান ও ফাহাদ কে সাথে নিয়েই ইরফান কেনাকাটা করলো ফুপি-ফুপার জন্য অনেক কিছুই নিয়েছে “অহনার জন্য যখন কেনাকাটা করতে গেলো তখনই বাধে বিপত্তি রোহান বলে আমার হবু বউয়ের জন্য আমি শপিং করে দেবো ইরফান বলে, আমার বোন যখন তোকে মন থেকে মেনে নেবে তখন তুই ওকে কিনে দিবি এখন আমি ওর ভাই আছি তোর প্রয়োজন নেই এখানে তুই বড়জড় চয়েস করে দিতে পারিস! রোহান তেঁতে গিয়ে বলে বন্ধুকে হেল্প না করে শালা সমন্ধীর ভাব নিচ্ছিস। ইরফান হেস্কি স্বরে বললো..,

..!” উহুম “বড় ভাইয়ের কর্তব্য পালন করছি।

“–ফাহাদ কিছুক্ষণ রোহান এর দিকে তাকায় তো কিছুক্ষণ ইরফান এর দিকে তাকায় “। বেচারা এদের সাথে এসে মহা ঝামেলায় পড়েছে “।

–অনেক ঝামেলার পড়ে ” ইরফান রাজি হয় রোহান অহনা কে ড্রেস কিনে দিতে পারবে তবে মাত্র একটাই।

অনেক খোজাখুজি করে রোহান এর একটা মেরুন কালারের শাড়ি পছন্দ হয়। সেটাই কিনে দিলো। ইরফান একটু অনুনয়ের সাথে বলে,

“কাল আমাদের সাথে দিনাজপুর যাবি..?

“না কাল একটু কাজ আছে “।

— রাত তখন এগারোটা ছুই ছুই ” সারাদিন এর ক্লান্তি ভুলে মাত্রই ঘুমের জগতে পাড়ি জমিয়েছে রাইসা “হঠাৎ ফোন টা বেজে উঠল ” মাত্র ঘুমে তলিয়ে পড়ায় রাইসার ইচ্ছে করছে না আখি জোরা মেলতে “তবুও জোর পূর্বক চোখ খুলে ফোন টা রিসিভ করে ঘুম জড়ানো গলায় বললো,

” হ্যালো.!

ওপাশ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে রাইসা আবর ও বলে “হ্যালো কে বলছেন।

এবার ওপাশ থেকে পুরুষকলি এক কন্ঠস্বর ভেসে আসলো, রাই..!

তৎক্ষনাৎ রাইসা এক লাফে উঠে বসে ফোন এর দিকে তাকালো ” এতো রাতে ফাহাদ এর কল ভাবতে পারে নি “কিন্তু এতো রাতে ফাহাদ ভাই কেনো কল করেছে মাহি.. মাহির কিছু হয়নি তো।

_” রাইসা কাঁপা কাঁপা গলায় বললো “কি.. কিছু কি হয়েছে মাহি ঠিক আছে..?

–” কিছু হয় নি “বোন ভালই আছে ” কেনো ..?

রাইসা এক সস্থির নিস্বাস নিয়ে বলে ” না মানে এতো রাতে আপনার ফোন দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।

~”ফাহাদ শান্ত কন্ঠে বললো “নিচে আসবে..!

-” রাইসা বিস্মিত হয়ে গেলো “আৎকে উঠে বলে ” এ.. এতো রাতে বাইরে..? না..না। এখন বেরোতে পারবো না।

“একটা বার আসো প্লিজ..!

–রাইসা দের এক কোণে নিড়িবিরি পরিবেশ। বাসা থেকে বেড় হলে গলিড় মোড়ে কয়টা দোকান। রাইসার বাবা সিরাজ সিকদার একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন বেশ ভালো আভিজাত্য ছিলো তার! বাড়িতে বড় একটা দোতলা ঘর করে ছিলেন ” রাইসা রা ছিলো দুই বোন! এই দুই মেয়ে ছিলো তার চোখের মনি! রাইসার মা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা রাইসাদের পরিবার বেশ ভালই চলছিলো। হঠাৎ করে রাইসার বাবা ব্রেনস্টোক করে ” রাইসার বাবা মারা গেছে পাঁচ বছর হলো! রাইসার বাবার পেনশন এর টাকা ও মা শিক্ষকতা করে যা বেতন পায় তা দিয়ে সংসার ভালই চলে। আগে থেকে রাইসা দের বিলাশিতা অনেকটা কমে গেছে সাথে কমে গেছে রাইসার বাচ্চামো ভাব বায়না করা স্বভাব! বেড়েছে শুধু ম্যাচিউরিটি।

~”রাইসা দোতলায় ঘুমিয়ে ছিলো উঠে এসে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে চারদিকে চোখ বোলালো লাইটের আলোয় আবছা কিছু একটা দেখে রাইসার দৃষ্টি থামলো সেখানে, দেখলো ফাহাদ দাঁড়িয়ে আছে “রাইসার প্রিয় কাঠগোলাপ ফুল গাছটার নিচে ” কিন্তু ফাহাদ ভাই ভেতরে আসলো কি ভাবে আপু মনে হয় আজ মেন গেইট বন্ধ করতে ভুলে গেছে! রাইসা বেলকুনির আলো জ্বালিয়ে ফাহাদ কে হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে ফোনেই বলতে লাগলো এতো রাতে বাইরে যাওয়া টা ঠিক হবে না আপনি কি কিছু বলবেন তাহলে বলে ফেলুন আমি শুনছি.!

“আকস্মিক রাইসার বেলকনিতে আলো জ্বলতে দেখে ফাহাদ চোখ ঘুরিয়ে উপরে তাকালো ” উপর থেকে রাইসা কে খুব একটা দেখা যাচ্ছে না হালকা ছায়ার মতো সেদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কাতর কণ্ঠে বললো

“কেনো ভয় পাচ্ছ আমায়…?

” না.. না আপনাকে ভয় পাবো কেনো..? এমনি অনেক রাত তাই।

“ভয় নেই আমি আছি তো ” দুই মিনিটের জন্য আসো প্লিজ।

–আপু জানলে প্রবলেম হবে..!

“ফাহাদ এবার গম্ভীর কণ্ঠে বললো ” তাহলে তুমি আসবে না..?

–এই মানুষটাকে বোঝানো দ্বায় রাইসা নিজের মাথায় নিজেই গাট্টা মেরে একাই বিড়বিড় করে বললো “রাইসা তুই কতো আহাম্মক তুই ভুলে গেছিস এই লোকটার সাথে তুই কথায় পাড়বি না দিন শেষে এই মানুষটার জেদের কাছে তোকে হারমানতেই হবে তাহলে শুধু শুধু কথা বাড়াতে যাস কোন শুখে।

“আসছি আমি! বলে রাইসা ওড়না টা মাথায় পেচিয়ে দরজা খুলে আপুর রুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো আপুর দরজা বন্ধ দেখে লম্বা শ্বাস ফেলে সিঁড়ির কাছে আসতেই করিডোরের এক কোণে পুরোনো টিউবলাইট টি টিমটিম করে জ্বলছিল ” আসতে করে নিচে নামলো “মা বাসায় নেই তাই রাইসা বেচে গেলো নাহলে নিচের রুমে মা থাকেন ” রাইসা বাইরে বেরহলে অবশ্যই রাইসার আলাপ পেয়ে যেত। হালকা হাতে দরজা খুলে রাইসা বাড়ীর পেছনে থাকা সেই কাঠগোলাপ গাছের দিকে গেলো!

“রাইসা কে দেখে ফাহাদ নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রইলো “রাইসা কে দেখে বোঝা যাচ্ছে রাইসার চোখে মুখে ঘুমের রেস এখনো কাটেনি পুরোপুরি ” বাইরে অনেক হাওয়া বইসে বাতাসে রাইসার মাথার ওড়না টা পড়ে এলোমেলো খোলা চুল গুলি বেড়িয়ে আসলো “আজ বোধহয় বেনি করতে ভুলে গেছে মেয়েটা ” খোলা চুল গুলি অবাধ্যর মতো উরতে শুরু করেছে ” ফাহাদ বেসামাল হয়ে পড়ে রাইসার মায়া মাখা মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে “ফাহাদ চোখ নামিয়ে নিলো। রাইসা মাথার ওড়না টা হাত দিয়ে তুলে বলে মাথা নিচু করে বললো ”

“বলুন!

–কি বলবো..?

~”কেনো ডেকেছেন..!

” ওহ হ্যাঁ তাই তো ”

–এক হাত প্যান্টের পকেটে গুজে, অন্য হাতে দুটো ব্যাগ রাইসার দিকে দিলো ”

“এগুলো কার…?

–ফাহাদ এদিক ওদিক ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখতে লাগলো! রাইসা চিন্তিত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো ” কি দেখছেন..?

“দেখছি তুমি ছাড়া আর কেউ আছে কিনা!

” কি আছে এতে..?

_তোমার জিনিস তুমি ঘরে গিয়ে দেখে নিও।

–আমি এগুলো নিতে পাড়বো না।

~”ফাহাদ লম্বা হাই তুলে বলে “না নিলে এখানে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দাও..।

” রাইসা চোখ তুলে ফাহাদ এর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসু স্বরে বললো “কেনো..?

–তুমি এগুলো না নেওয়া..! গ্রহণ না করা পর্যন্ত এখানেই একটা ঘুম দিয়ে উঠি কি বলো..?

রাইসা বিড়বিড় করে বললো ” এমনিতেই যে চিকন! তালপাতার সেপাই সে আবার কিনা এখানে ঘুমিয়ে ম্যলেরিয়া বাধাতে চায়।

“~কি হলো কি ভাবছো ” আমার খুব ঘুম পাচ্ছে কিন্তু কিছু একটা দিয়ে যাও হালকা শীত ও করছে রাতে জ্বর আসবে বোধহয়!

“রাইসা বেশ জ্বালায় পড়লো ” এই লোকটা মাঝে মাঝে বাচ্চাদের মতো আচারণ করে আবার মাঝে মাঝে গম্ভীর হয়ে যায়। ফাহাদের এই দুই রকম মুড রাইসা কে হয়রানি করে ছাড়ে। এই মুহুর্তে যদি আপু ঘুম থেকে উঠে রাইসা কে এখানে দেখে তাহলে কি হবে রাইসা ভেবে পাচ্ছে না। আবার যদি উনি এখানে জেদ ধরে বসে থাকে তাহলে তো আরেক সমস্যা হবে।

রাইসার আত্মসম্মান বোধ অনেক প্রখর কারো কাছ থেকে কিছু নেওয়া রাইসার পছন্দ নয়! তবু্ও ফাহাদ এর হাত থেকে শপিং দুটো নিয়ে ধীর কন্ঠে বললো “এবার যান প্লিজ।

–ফাহাদ এক ঝলক হাঁসি নিয়ে বেড়িয়ে গেলো রাইসা এসে গেইট বন্ধ করে ভেতরে চলে গেলো ” রুমে এসে শপিং ব্যাগ টা খুলে দেখলো “একটা সাদা গাউন আর একটা বাসন্তী রঙের থ্রিপিস। সাথে ১২ ডজন চুড়ি ” ম্যাচিং কানের দুল ” ৬ টা লিপস্টিক।

রাইসা মনে মনে ভাবছে এগুলো রেখে কি ভুল করলাম আমি “রাখা টা উচিত হয়নি বোধহয়! তালপাতার সেপাই টা এমন জেদ ধরে বসলো না রেখে তো উপায় ছিলো না। এখন এগুলো দিয়ে কি করবো আমি। কপালে হাত দিয়ে বিছানায় ধপ করে বসে পড়লো রাইসা ।

চলবে……..?

#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ২৫৷ (ঈদ স্পেশাল পর্ব)

~”পবিত্র ঈদের দিনের সকাল টায় যেনো অন্য রকম অনুভূতির প্রকাশ “ছোট বড় সকলের মনে আনন্দের বিমহিত খুশির আনাগোনা ” ভোর বেলায় চৌধুরী পরিবারে রান্নার আয়োজন বিশাল আকারে হচ্ছে ” অনেক রাত পর্যন্ত জেগে হাতে মেহেদি দেওয়ায় মাহি খুব বেশি সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারে নি “প্রথমে ফাইজার হাতে মেহেদি দিয়ে দিয়েছে পড়ে নিজের হাতে দিয়েছে ” ফাইজা রাত করে ঘুমালেও ফাইজার খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার স্বভাব বরাবরই আরো আজ ঈদের দিন তাই ফাইজা ভোর ছয়টার কিছু আগেই উঠে পড়লো ! ফাইজা ঘুম থেকে উঠে মাহির ঘরের দিকে দু বার চক্কর দিলো কিন্তু ঘুম থেকে ডেকে তুললো না! মাহির ঘুম ভাঙলো সকাল আট টা নাগাদ।ততক্ষণে বাসার ছেলেরা সকলে ঈদের নামাদ আদায় করতে চলে গেছে।

“ঘুম থেকে উঠে মাহি ফ্রেশ হয়ে মাহি ড্রেসিং টেবিলের কাছে গিয়ে ” আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হাঁসি দিয়ে আনমনে ভাবতে লাগলো আজকের দিন টা সবার জন্য স্পেশাল কিন্তু মাহির জন্য একটু বেশি স্পেশাল “৯ বছর পরে এই প্রথম ঈদ ইরফান ভাইয়ের সাথে কাটাবে এটা ভেবেই মাহির চিত্ত চিরে প্রশান্তি বয়ে আসে! হৃদয়ের প্রজাপতি গুলো উড়ে বেড়ায় মনের মণিকোঠায় ” ইরফান ভাই যে মাহির মন প্রাণ আত্তা সব দখল করে নিয়েছেন এটাই তার প্রমাণ দিচ্ছে।

“মাহি দরজা খুলতেই ফাইজা দৌড়ে এসে মাহির হাত টা নিজের হাতের উপড়ে রেখে মাহির মেহেদী রাঙা হাতের পানে চায়, এরপর স্মিত হাঁসি দিয়ে বললো আপু তোমার হাতের মেহেদীর রঙ টা অনেক ফুটেছে দেখো দি টকটকে লাল হয়েছে! আপু তোমার ভবিষ্যৎ জামাই তোমাকে অনেক ভালোবাসবে, বলেই খিলখিলিয়ে হাঁসতে লাগলো ফাইজা! কপাল কুচকে কোমড়ে দুই হাত দিয়ে মাহি বললো ” তোকে এই কথা কে বলেছে..?

“দুই হাত সামনে এনে ভাজ করে অভিজ্ঞ দের মতো বললো ফাইজা ” আমি দেখেছি, মুভি তে বা নাটকে নাইকা দের হাতের মেহেদী লাল হলে সবাই এই কথাই বলে বলে আর নায়কে রা নাইকা দের অনেক ভালোবাসে!

~”ওগুলো মুভি তে হয় নাইকা দের সাথে আমাদের সাথে হয় না! বাস্তবে এমনটা হয় না বুঝলি।

“তুমি কি নাইকা দের থেকে কম নাকি ” আমার মাহি আপু বেষ্ট!

মাহি মৃদু হেঁসে বলে, তোর হাতের মেহেদী ও তো অনেক সুন্দর হয়েছে লাল টুকটুকে। আচ্ছা আব্বু বড় আব্বু ভাইয়া রা সবাই কি নামাজে চলে গেছে..?

~”হুম ”

মাহি রুমে গিয়ে সাওয়ার নিয়ে ইরফানের কিনে দেওয়া ড্রেস থেকে একটা পার্পেল কালারের ড্রেস পড়ে হালকা রেড কালারের লিপস্টিক দিলো, ম্যাচিং চুড়ি পড়ে নিলো, কানের ঝুমকো জোরা পড়ে নিলো, ওড়না টা বাম দিকে জড়িয়ে নিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখতে লাগলো “রুম থেকে বেড়িয়ে ছাদে চলে গেলো ” ছাদের রেলিঙে ঝুঁকে দেখলো “বাবা রা গেইট দিয়ে ঢুকছে কিন্তু ফাহাদ ভাইয়া আর ইরফান ভাই এখনো আসছে না কেনো ভাবতে ভাবতেই ইরফান ও ফাহাদ গেইট এর কাছে চলে এসেছে ” ফাহাদ বরের মতোই শার্ট পড়ে টুপি মাথায় দিয়ে গিয়েছিল “কিন্তু ইরফান ভাই কে দেখে মাহি আবার ও একবার টাশকি খেয়ে ফেল্লো ” কালো রঙের পাঞ্জাবি পড়ে লম্বা চওড়া সুদর্শন যুবক হেটে আসছে “একপলক দেখেই মাহি চোখ বন্ধ করে নিয়ে মনে মনে বিড়বিড় করছে উফ এ চোখ এখানেই থমকে যাক আমি শুধু ইরফান ভাই কে আখি ভরে দেখতে থাকি ” চোখ মেলে দেখলো ওরা দুজন ভেতরে চলে এসেছে বোধহয়।

মাহি ছাদের এক কোণে এসে একটি গাছ থেকে সন্ধ্যামালতী ফুল খোলা চুলে গুজে নিলো, আকাশের পানে তাকিয়ে ভাবছে এবছর ঈদে প্রথম সালাম টা ইরফান ভাই কে দিবে ” ইরফান ভাইয়ের সাথে আগে যখন ঈদ কাটিয়েছে তখন কার কথা মাহির খুব একটা স্মরনে নেই, প্রতি বারই তো সকলের সাথে ঈদ করার সুযোগ পেয়েছে কিন্তু ইরফান ভাইয়ের সাথে এই প্রথম ঈদ “তাও আবার এবার মাহির মন প্রান জুড়ে শুধু ইরফান ভাই আর ইরফান ভাই “অন্য কিছু ভাবতে ও পারছে না মাহি আপাতত। আকাশে অনেকটা মেঘ জমেছে ” কখন বৃষ্টি নামে তা বলা যাচ্ছে না। মাহি প্রানবন্ত হাঁসি দিয়ে মেঘে জমা আকাশের পানে আনমনে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ “!ফাইজার ডাকে ধ্যান ভাঙলো মাহির। ফাইজা বড় বড় শ্বাস ফেলছে । ঈদ এর নতুন ড্রেস পড়া ” হাত ভর্তি অনেক গুলো টাকা

” কি রে ফাইজা হাপাচ্ছিস কেনো..?

“তো কি করবো বলো তুমি যে উঠে বসে আছো নিচে তো নামলেই না ” তাই তোমায় ডাকতে ছুটে এলাম!

“ছুটে আসার কি হলো ” ধীরে সুস্তে আসলেই হতো।

–ছুটে আসবো না ইরফান ভাইয়া চলে যাচ্ছে তা বলতে আসলাম।

মাহি ভ্রু জোরা কিঞ্চিৎ বাকা করে বললো ” চলে যাচ্ছে মানে কোথায় যাচ্ছে ইরফান ভাই..?

_তুমি আসো তাহলেই দেখতে পাবে “এই দেখো আমায় কতো গুলো টাকা সালামি ও দিয়েছে “।

” তারাহুরো করে নিচে নামলো মাহি “!নিচে নেমে মাহি শরীর কেঁপে উঠল ইরফান ভাই সদর দরজার কাছে চলে গেছে ” ফরমাল ড্রেসআপ, হাতে একটি ছোট্ট লাগেজ, মাহির মাথা ঘুরছে মাত্র মানুষ টা পাঞ্জাবি পড়ে ঘরে ঢুকলো এরই মাঝে রেডি হয়ে চলে যাচ্ছে.??কিন্তু কোথায় যাচ্ছে। এই ঈদ এর দিনে কেউ এমন করে যায়!

~”ফাহাদ ইরফান কে বলে, ভাইয়া আমি এগিয়ে দিয়ে আসি চলো।

— ইরফান মুখে কিছু বললো শুধু না সূচক মাথা নাড়লো।

“ইরফান পেছনে ঘুরে তাকিয়েই মাহি কে দেখতে পেলো ” মাহি ইরফানের দিকে ছলছল নয়নে তাকিয়ে আছে “ইরফান এক নজর দেখেই চোখ নামিয়ে নিয়ে সামনের দিকে হাটা শুরু করলো। ইরফান চেয়েছিলো মাহি দেখার আগেই ইরফান চলে যাবে কিন্তু সেই মাহি ইরফান কে যেতে দেখে ফেলল, মাহির শুকনো মুখ দেখে ইরফানের যেতে ইচ্ছে করছে না একদমি না। নাজিফা বেগম ছেলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে ঝরে পড়া অশ্রু টুকু আচলের কোণে মুছে মনমরা হয়ে ঘরে চলে গেলো ” এতোগুলা বছর পরে ছেলের সাথে ঈদ কাটাবে ভেবেছিলো তা হলো না নাজিফা বেগম এর খারাপ লাগাটা স্বাভাবিক! মাহি এক দৃষ্টি তে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সদর দরজার দিকে। রাবেয়া বেগম এসে মাহি কে বললেন ”

কিরে মা সকাল থেকে কিছু খাস নি একটু সেমাই খেয়ে নে! ইরফান টা ঠিক মতো খেতে ও পারলো না! কি একটু খেয়ে চলে গেলো ছেলেটা।

মাহি চোখ বন্ধ করে নিজেকে সামলে নিলো “লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে তাকালো, এরপর রাবেয়া বেগম কে জিজ্ঞেস করলো, মা ইরফান ভাই কোথায় যাচ্ছে.??

রাবেয়া বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো ” কি নাকি কাজ পড়েছে আজকে একটা মিটিং আছে ইন্ডিয়া যেতে হবে ” বিদেশি কোম্পানির থেকে লোক আসবে আজকে না গেলে বড় একটা লস খাবে তাই যাচ্ছে চার পাঁচ দিন পড় চলে আসবে।

“মাহি কিছুক্ষণ সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলো ” খুব অভিমান জমে গেলো ইরফান ভাইয়ের উপর “আজকের দিনটা যাওয়া টা কি খুব প্রয়োজন ছিলো ” তা নাহয় গেলো কিন্তু একটা বার কি আমাকে বলা যেতো না। কেনই বা বলবে উনি কি আর আমার কথা ভাবে আমিই তো বোকা। বোকা না হলে কেউ এমন একটা মানুষ কে ভালোবেসে যার মন বলতে কিছু নেই। সকলের মাহির চোখে মেঘেরা এসে ভীড় করেছে যেকোনো সময় চোখ বেয়ে বৃষ্টি ঝরতে শুরু করবে তার আগেই চলে গেলো মাহি “নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করতেই চোখের কোণে জমে থাকা বিন্দু কণা গুলো ঝড়তে থাকে। মাহি দরজার পেছনে হাটু গেড়ে বসে পড়ে ” হাটু সমান চুল গুলো ফ্লড়ে গড়াগড়ি খাচ্ছে। মাহির খুব কষ্ট হচ্ছে হৃদয়ের অন্তরালে অদ্ভুত এক চাপা কষ্ট যেই কষ্ট টা মাহি কাউকে বলতে পারবে না কাউকে না নিজের মা কে ও না। উঠে এসে খাটে বালিশে মুখ গুজে শুয়ে পড়লো মাহি “চখ যেনো বাধ মানে না আজ এখনো মাহির চোখে বৃষ্টি পড়ছে ” বেশ অনেকটা সময় কান্না করার পর মাহি ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

__রকবেয়া বেগম এসে ডেকে মেয়ের সাড়া না পেয়ে মনে মনে ভাবলেন হয়তো রাতে ঠিক মতো ঘুম হয়নি তাই ঘুমাচ্ছে, এই ভেবে আর বেশি ডাকলেন না “বাসা ভর্তি মেহমাহ বাসার কর্তাদের বন্ধুরা অফিসের লোক জন অনেকে এসেছে তাদের সবার তদারকি করতে বেস্ত সকলে, মাহির ঘুম ভাঙলো দুপুরের একটু আগে ” উঠে ওয়াশ রুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে টাওয়াল।দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে আয়নার সামনে এসে দাঁঁড়িয়ে থমকে গেলো “চোখ দুটো ছানা বড়া হয়ে গেলো ” মাহির ড্রেসিং টেবিলের উপরে একটা বড় সাইজের বুকে কিন্তু ফুলের নয় এটা এক হাজার টাকার নোট ভর্তি বুকে ” বুকে টা অনেক সুন্দর ভাবে ডেগারেশন করা “টাকা গুলি সুন্দর করে কোণ আকারে ভাজ করা, টাকার মাঝে কয়েকটি সাদা ফুল ও আছে, পুরো বুকে টা পিংক কালারের একটা সিল্কের কাপরের তৈরি “মাহি পুরো বুকে টায় চোখ বুলালো কতো টাকা আছে বলা যাচ্ছে না ভাজে ভাজে সারি করে অনেক গুলো এক হাজার টাকার নোট, ঠিক মাঝ বড়াবড় একটা চিরকুট।

” অনাকাঙ্ক্ষিত এই কান্ডে মাহি ভাবনায় পড়ে গেলো “একবার রুমের দরজায় তাকালো মাহি, নাহ দরজা তো বন্ধই আছে! আমি তো তখন এসে দরজা লক করেই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। তার মানে মাহি রুমে আসার আগেই কেউ রেখে গিয়েছিলো ”

হয়তো মাহি তখন ছাদে ছিলো “রুমে এসে মাহি কান্নায় ভেঙে পড়ে এরপর এদিক ওদিক না খেয়াল করেই ঘুমিয়ে পড়েছিল তাই খেয়াল করতে পারেনি। কিন্তু কে রাখলো মাহির রুমে এতো গুলো টাকা ভর্তি বুকে অযাচিত ভাবনা রা মাহির মাথায় আনাগুড়ি দিচ্ছে ।

–বেশ কৌতূহল নিয়ে মাহি হাত দিয়ে চিরকুট টা নিয়ে চিরকুট টা খুলে দেখলো ” অসম্ভব সুন্দর হেন রাইটিং লেখা দেখেই যেন চোখ ভড়ে যায় “তাতে ছোট ছোট অক্ষরে লিখা…………

~ আসসালামু আলাইকুম, মাই ডিয়ার স্বপ্নচরনী ~

” ঈদ মোবারক ”

-” ঈদের দিনের মতো আনন্দময় হোক তোর জীবনের প্রতিটা মূহুর্ত দোয়া করি!

★তার নিচে লেখা………

আমি চলে যাওয়ার পর তুই হয়তো আমার সাথে অভিমান করে আছিস, কিন্তু বিশ্বাস কর কিছু করার ছিলো না আমার যেতেই যে হতো, আমারো ইচ্ছে করে নি তোদের সবাই কে ছেড়ে আসার। আজকের এই দিনটার জন্য অনেক দিন অপেক্ষা করে ছিলাম কিন্তু আজকের মিটিং এর জন্য অনেক দিন রাত এক করে পরিশ্রম করেছি ” প্লিজ আমায় ভুল বুঝিস না আমার উপরে অভিমান করে থাকিস না তোর অভিমান আমার মস্তিষ্কে বিচলন ঘটায়।

★চিরকুট টা পড়ে বুঝে ফেললো এটা ইরফান ভাইয়ের রেখে যাওয়া ঈদ সালামি। কিন্তু ইরফান ভাই মাহি কে স্বপ্নচারনী কেনো বললো এর মানে কি! পরক্ষণেই মাহির চিকন পাতলা ঠোঁটের কোনায় মৃদু হাঁসির রেখা ফুটে ওঠে, ইরফান ভাই মাহি কে স্পেশাল নামে সম্মধন করেছে তা ভেবে কিন্তু অভিমান পুরোপুরি কমেনি মাহির। মাহি বুকে টা সযত্নে এক জায়গায় রেখে দিলো। নিচে নামতেই রাবেয়া বেগম মাহি কে ধরে নিয়ে খেতে বসালো, সকাল থেকে কিছু খায় নি তাই রাবেয়া বেগম এবার বেশ জোর করেই খাওয়ালো মেয়ে কে।

–দুপুরে ইরফান ফাহাদ কে কল করে জানালো ইরফান পৌছে গিয়েছে মিটিং এ আছে ” ফাহাদ ঘুরতে নিয়ে যাবার জন্য মাহি ও ফাইজা কে রেডি হতে বলে ফাইজা রেডি হতে চলে গেলো কিন্তু মাহি যাবে না বলে দিলো।মাহির মন টা পুরোপুরি ভালো হয় নি জীবনে প্রথম কাউকে ভালোবেসেছে তার সাথে ঈদ এর দিন টা স্পেশাল ভাবে কাটাবে বলে কতো পরিকল্পনা করে রেখেছিল কিন্তু সে চলে গেলো।মাহির ঘুরতে যাওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই কিন্তু ফাহাদ জোরাজোরি করে বোন কে রাজি করায়। দু বোন কে নিয়ে ফাহাদ গাড়ী করে বেড়লো মাহি বেশিদূর যেতে রাজি হয় নি তাই বাসার কাছেই এক বড় পার্কে গেলো! সেখানে ঈদ উপলক্ষে অনেক আয়োজন করা হয়েছে! নাগর দোলা থেকে শুরু করে অনেক রাইড ও খাবারের আয়োজন হয়েছে।

~”বেশ অনেকক্ষন ঘোরাঘুরির পড়ে মাহি ও ফাইজা একটা ভেলপুরির দোকানে বসে ভেলপুরি খাওয়ার জন্য “রাইসা কে মাহি খুব মিস করছে এই সময় টায় তাই রাইসা কে একটা ফোন দিলো কিন্তু ফোনটা রিসিভ হলো না, হয়তো কোনো কাজে বিজি আছে বা ঘুরতে গিয়েছে তা ভেবে মাহি ফোন টা ব্যাগে রেখে দিলো ” দুজন এর জন্য ভেলপুরি অর্ডার দিয়ে ফাহাদ বাইরে এসে দাঁড়াতেই ফাহাদ এর এক বন্ধুর সাথে দেখা হয় “ওদের দুজন কে খাওয়ার সুযোগ দিয়ে ফাহাদ একটু সামনে এগিয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে ” দুইপিস ভেলপুরি মুখে দিতেই ফাইজার প্রচুর ঝাল লাগে কিন্তু সেই দোকানে পানি না থাকায় তার পাশের দোকান থেকে পানি কিনতে যায় ফাইজা, পানি খেয়ে ঝাল কমিয়ে ভেতরে এসে দেখে মাহি নেই। ফাইজা কিছুক্ষণ এদিক ওদিক দেখে কিন্তু কোথাও মাহিকে দেখতে না পেয়ে ফাহাদ এর কাছে গিয়ে সব বলে “ফাহাদ চারোদিকে খোজা শুরু করে কিন্তু কোথাও নেই মাহি। এবার ফাহাদ ফাইজার এক হাত ধরে ফাইজা কে নিয়ে চারোদিকে পাগল এর মতো খুজতে লাগলো, চারোদিকে লোক লাগালো কিন্তু কেউ পেলো না।

“বোন তো একা একা কোথাও যাবে না কিন্তু এইটুকু সময়ের মধ্যে কথায় চলে গেলো ” ফাহাদের পাগল প্রায় অবস্থা এরি মধ্যে এক মেয়ের সাথে ধাক্কা খেলো তাকানোর সময় নেই বোন কে খুজতে হবে “কিন্তু সেই মেয়েটি ফাহাদ এর হাত চেপে ধরলো ঠিক এতো জোরে চেপে ধরলো যেনো কেউ টেনে হিচরে হাত ছোটাতে পারবে না! আকস্মিক ঘটনায় ফাহাদ খেপে গিয়ে তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো মেয়েটির দিকে ” ফাহাদ চমকে উঠলো “কেউ যেনো ফাহাদ মস্তিষ্কে প্রবল বেগে ধাক্কা লাগলো “মেয়েটি আর কেউ না ফাহাদ এর মনের মানুষ প্রথম ভালোলাগা ও ভালোবাসার মানুষ রাইসা যাকে ছোট থেকে ফাহাদ অনেক পছন্দ করে তবে প্রকাশ করা হয়নি কখনো ”

~” রাইসার চোখে মুখের ভয়ংকর অবস্থা “খুব বিধস্ত দেখাচ্ছে এক টেনশনের উপরে আবার রাইসার আহত চাহনি ফাহাদের অবস্থা আরো বেগতিক হয়ে যায়, ফাহাদ বিচলিত হয়ে প্রশ্ন করলো..?

” কি হয়েছে. তুমি এখানে কি করো ? তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো।

“চিৎকার দিয়ে কান্না জুরে দিলো খোলা মাঠে ” চারোদিকের মানুষ তাকিয়ে দেখছে কিন্তু রাইসার কান্না থামানো দ্বায় “ফাহাদ খুব অসহায় হয়ে গেলো বোন কে পাচ্ছে না আবার প্রিয় মানুষ টার এ অবস্থার কারণ টাই বা কি তাও অজানা ” ফাইজা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে কিছু বুঝতে পারছে না। ততক্ষণে রাইসা কে খুজতে খুজতে রাইসার ফুপাতো দু বোন ও চলে এসেছে রাইসার কাছে কিন্তু রাইসার সেদিকে খেয়াল নেই রাইসা কান্না করেই যাচ্ছে। রাইসার ফুপাতো বোনেরা রাইসা দের বাসায় আসাতে রাইসা ওদের নিয়ে ঘুরতে বেরহয় কাছে যেহেতু এই পার্ক তাই এটাতেই আসে দূরে একা যাওয়া অভ্যস্ত নয় রাইসা। ফাহাদ এবার রাইসার দু হাত চেপে ধরে শীতল কণ্ঠে বললো ”

“কি হয়েছে রাই বলো আমায়! কেউ কিছ্য বলেছে, বলো কি হয়েছে..?

রাইসা কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো ” মাহি “ওরা মাহি কে তুলে নিয়ে গেছে..।আপনি কিছু করুন ফাহাদ ভাই।

” ফাহাদ কেঁপে উঠল “বুকের ফেতর টা ছ্যাত করে উঠলো অজানা এক আশংকায় ভেতরটা দুকরে উঠলো।

” বোন কে নিয়ে গেছে মানে কোথায় নিয়ে গেছে কে নিয়ে গেছে..?

“রাইসা কাদতে কাদতে বললো আমি চিনি না জানি ও না কোথায় নিয়ে গেছে কিন্তু আমি দেখেছি ” কতো গুলো ছেলে মাহি কে ধরে গাড়ি তে জোর করে বসালো মুখ টা মাহির বাধা ছিলো আমি কাছে যেতে যেতে ওরা গাড়ি স্টার্ট দিয়ে মাহি কে নিয়ে চলে গেলো আমি মাহির কাছে ও যেতে পারলাম না ফাহাদ ভাই ওরা নিয়ে চলে গেলো!

–“এবার রাইসার সাথে যোগ দিলো ফাইজা ” দুজন মিলে কান্না করছে “অজানা ভয়ে ফাহাদ কে ঘিরে ফেললো ” ফাহাদ পাগলাটে অবস্থা হয়ে গেলেও কিছুক্ষণ এর মধ্যে নিজেকে সামলে নিয়ে ফাহাদ ওর সকল বন্ধু ছোট ভাই দের চারোদিকে খোজ লাগালো ”

~”মাহি কে নিয়ে গাড়ি টা যখন চলে যাচ্ছিল তখন রাইসা নাম্বার টা মুখস্ত করে নিয়েছিলো সেই নাম্বার অনুযায়ী খোজ চালাতে লাগলো। প্রায় এক ঘন্টা পড়েও যখন মাহির খোজ পাওয়া গেলো না তখন ফাহাদ নিরুপায় হয়ে ইরফান কে ফোন করে মাহির নিখোঁজ হবার কথা জানালো।

–কথা টা শোনা মাত্রই ইরফানের শরীরের রক্ত চলাচল যেনো বন্ধ হয়ে গেলো “ঘারের রগ গুলো সব ফুলে উঠেছে ” ইরফান এক গগন কাপানো চিৎকার দিয়ে বললো ”

“কোন লটির বাচ্চার এতো বড় সাহস আমার কলিজায় হাত দিয়েছে আমি ওকে মেরে ফেলবো আই রিপিট আমি ওকে মেরে ফেলবো!

ইরফানের চিৎকার শুনে পাশে থাকা সকলেই যেনো কেপে উঠলো ” চোখ দুটি রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। কয়েক ঘন্টার মধ্যে ইরফান একটি হেলিকপ্টার নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাক করলো।

#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনীতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ২৬

~” হসপিটালের কেবিন রুমে বসে আছে ফাইজা ও রাইসা, দুজনের চোখ মুখ ফুলে উঠেছে রান্নার বেগে, মাত্র কিছুক্ষণ যাবৎ কান্না থেমেছে, যখন শুনেছে, বিপদ সিমা কেটেছে ভয়ের কনো কারণ নেই দুজনেই ভালো আছে, মাহি ও ইরফান দুজকে দুটো কেবিনে শিফট করা হয়েছে ” বাসায় এখনো কিছু জানানো হয়নি সকলে টেনশন করবে তাই বাসায় বলা হয়েছে মাহি ও ফাইজা রাইসা দের বাসায় গিয়েছে বাসায় ফিরতে দেরি হবে, রাইসার ফুপাতো বোন দের বাসায় পাঠানো হয়েছে, কিন্তু রাইসা কে চলে যেতে বলা হয়েছিলো কিন্তু রাইসা মাহি কে এই অবস্থায় একা রেখে কিছুতেই যাবে না। তাই রাইসা ওর ফুপাতো বোন দের রিকুয়েষ্ট করে বলে যেনো বাসায় কিছু না বলে, মা আর আপু কে যেনো বলে রাস্তায় মাহির সাথে দেখা হয়েছিল তাই মাহি রাইসা কে জোর করে নিয়ে গেছে ওদের বাসায়, ওরা বাসায় গিয়ে তাই বলে, কিছুক্ষণ পর ফাইজা ও ফাহাদের মোবাইল দিয়ে কল দিয়ে রাইসার মা কে বলে, রাইসা আপু কে আমি আর মাহি আপু নিয়ে এসেছি আজকে আমাদের সাথেই থাকবে।

“রাইসার মা যথেষ্ট ভালো মানুষ তবে অনেক বিচক্ষণ মন মানসিকতা ” যথেষ্ট ভদ্র পরিবার রাইসা দের তাই হুট হাট কারো বাসায় মেয়ে রাতে থাকবে এ ব্যাপার টা তিনি মেনে নিলেন না, রাইসার মা একটু হাঁসি মুখে বললেন, আচ্ছা মা তোমাদের সাথে থাক এক সন্ধ্যা কিন্তু রাতে পাঠিয়ে দিও । ফাইজা বিনয়ের সাথে বললো, আচ্ছা আমরাই দিয়ে আসবো আপনি কোনো চিন্তা করবেন না আন্টি।

ফাহাদ ইরফানের কেবিনে এসে ইরফানের বেড এর কাছে গিয়ে দাঁড়ায় ইরফানের মাথায় , হাতে ব্যান্ডেজ লাগানো, লম্বা দেহ টা বেডে স্থীর হয়ে শুয়ে আছে, ফাহাদের চোখ ভারী হয়ে যাচ্ছে চোখ টলমল করছে, লম্বা নিশ্বাস নিয়ে নিজকে সামলে নিলো, কিন্তু চোখের সামনে ভেসে আসলো কিছুক্ষণ আগের ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা গুলো….

_____________________★★★ _________________

বাংলাদেশে ফিরে ইরফান চারোদিকে ঝড় তুলে ফেললো কিন্তু মাহির খোজ পাওয়া গেলো না, পুলিশে কমপ্লেন জানালে পুলিশের লোক চারোদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে , রাস্তা ঘাটে প্রতি টা গাড়ি চেক করতে লাগলো ইরফানের লোকে রা, ইরফানের শিরা উপশিরা দপদপ করছে মাথা টা ফেটে যাচ্ছে যন্ত্রনায় বুকে জলন্ত আগুনের কুন্ডলীর মতো জ্বলছে “মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তার এক মাত্র ভালোবাসা এক মাত্র আসক্তি যেই মাহিতে আবদ্ধ তাকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না, কারা জানি তাকে তুলে নিয়ে গেছে, ব্যাথাতুর কন্ঠে বললো,

~” অভিমান করে হারিয়ে গেলি, ফিরে আয় মাহি আর কখনো তোকে না বলে কোথাও যাবো না “যাবো না তোকে এভাবে একা রেখে ফিরে আয় আমার প্রানপাখি ।

—মাহির মোবাইল টা নিয়ে হয়তো বন্ধ করে রাখা হয়েছে, ট্রেস করা যাচ্ছে না, হঠাৎ রাইসার মনে পড়লো ওরা যখন মাহি কে জোর করে গাড়ি তে তুলছিলো তখন রাইসা ছূটে যেতে যেতে নিজের ফোন টা ছুরে মেরেছিলো এক জনের মাথা বড়াবর কিন্তু লোক টার মাথায় পড়লো না গাড়ির মধ্যে কোনো এক কোনে পড়ে রইলো, এতো কিছুর মধ্যে লোকগুলো সেটা খেয়াল করতে পারে নি বোধয় । কথা টা ফাহাদ কে বলা মাত্রই ইরফান কে জানালো ফাহাদ “সাথে সাথে ইরফান রাইসার নাম্বার টা দিয়ে দিলো ওর একটা ফ্রেন্ড এর কাছে সে রাইসার নাম্বার টা ট্রেস করে একটা লোকেশন ট্র্যাকিং করে ইরফান কে পাঠালো,।

ঈদ এর ভীড়ে রাস্তায় আজকে হাজার হাজার গাড়ি সেই সকল গাড়ি কে পিছনে ফেলে ইরফান অনেক বেশি স্পিডে গাড়ি চালালো, বাতাসের গতিতে চলছে ইরফানের চালানো ব্ল্যাক এন্ড হোয়াইট রঙের BMW টি , কিছুর সাথে হালকা একটা ধাক্কা লাগলেই গাড়ি টা উড়ে যাওয়ার আশংকা আছে তবুও ইরফান স্পিড কমাচ্ছে না নিজের জিবনের পরোয়া নেই মাথা ভর্তি এখিন একটাই চিন্তা মাহির কিছু হওয়ার আগে ওখানে পৌছাতে হবে। অনেক দূর এর রাস্তা পেরিয়ে ইরফান পৌছালো সেই জায়গায়। সেখানে গিয়ে রাইসার নোট করে রাখা সেই নাম্বারের হলুদ রঙের গাড়ী টা পেলো এক সাইডে দাড় করানো। গাড়ি টার কাছে গিয়ে দেখলো গাড়ি ফাকা কেউ নেই, ইরফান গাড়ি টার ডান পা দিয়ে গাড়ি তে জোরে একটা লাত্থি দিয়ে বললো, ওহ শীট “ড্যা*ম*ইট!

” গাড়ি টা যেহেতু এখানে থেমেছে নিশ্চয়ই এর আশে পাশে কোথাও একটা আছে ভেবেই ইরফান চারদিকে খোজা শুরু করেছে,

–ফাহাদ রাইসা ও ফাইজা কে নিয়ে পেছনের গাড়ি তে করে এসেছে, রাইসা সেই গাড়ি টি দূর থেকে দেখেই চিনে ফেলে, হাত উঁচিয়ে তর্জনী আঙুল দিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় ফাহাদ কে বললো ওই যে ওই গাড়ি করেই মাহি কে তুলে এনেছে আমি এটাই সেই গাড়ি। ফাহাদ গাড়ি টার কাছে গিয়ে গাড়ি টা খোলার পর মাহির ফোন টা দেখতে পেলো সিট এর উপরে রাখা, হাতে নিয়ে দেখলো ফোন টা সুইচ অফ। যাতে ট্র‍্যাকিং না করা যায় তাই জন্য অফ করে রাখা হয়েছে। আরেকটু খোজাখুজি করলো ফাহাদ নিচের দিকে পড়ে আছে রাইসার মোবাইল টি কিডনাপার রা এটা দেখতে পেলে হয়তো একটাও সুইচঅফ করে রাখতো, তাহলে মাহির খোজ এতো টা তারাতারি পাওয়া যেতো না, ভাগ্য ক্রমে ফোন টা নিচে এক কোণে ছিলো যা কারো নজড়ে পড়ে নি। ফাহাদ আরেকটু খোজাখুজি করলো মাহি কে নিয়ে ওরা কোথায় রেখেছে তার কোনো ক্লু পাওয়া যায় কিনা, কনো লাভ হলো না। তাই তিনজন মিলে খোজা শুরু করেছে।

— খুজতে খুজতে ইরফান ছন্নছাড়া পাগল হয়ে গেলো “উন্মাদের মতো করছে ” নিজের চুল নিজে মুষ্টিবদ্ধ করে ছিড়ে ফেলতে চাচ্ছে। ছূটটে ছূটছে এক জনমানবহীন এক জায়গায় এসে দাঁড়ায় ইরফান! চারোদিকে কেউ নেই শূণ্য। অনেক গুলো গাছপালার ভীড়ে এক পুরোনো পরিত্যক্ত বাড়ির দিকে নজর পড়লো ইরফানের, ঘর টি অনেক পুরোনো দেওয়াল গুলো তে শেওলা পড়ে আছে। পুরোনো ঘড় টির কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই একটা মেয়ের গোঙানির আওয়াজ কানে ভেসে আসলো! ইরফানের শরীর কেঁপে উঠল মস্তিষ্কেকে শিহরণ বয়ে গেলো, একটু সামনে এগিয়ে ইরফান ঘরে প্রবেশ করবে এমন সময় দুটো ছেলে তেরে আসে ইরফান কে মারার উদ্দেশ্য “ওরা দরজার বাইরে ছিলো বাড়ি টা পাহাড়া দিচ্ছিলো ” ইরফান কাছেই পড়ে থাকা একটি বেসবলব্যাট নিয়ে দুজন কে মারা শুরু করে, একজন পকেট থেকে ছুরি বের করে তেরে আসে ইরফানের কাছে, ব্যাট দিয়ে হাত বরাবর একটা বাড়ি দিতেই হাত থেকে ছুরি টা পরে যায়, ইরফান হাত থেকে ব্যাট টা ছুরে নিচে ফেলেতেই স্টিলের ব্যাট টা জোরে আওয়াজ হলো, ইরফান এসে লোক টার কলার চেপে ধরে একের পর এক ঘুষি মারছে কিছুক্ষণের মধ্যে ছেলেটা জ্ঞান হাড়ালে ইরফান ছেড়ে দিলে লোক টা ধপাস করে নিচে মাটিতে পড়ে রইলো। পেছন ফিরে ইরফান পাশের জন কে দেখলো না বোধহয় পালিয়েছে।

–পুরোনো ঘরে প্রবেশ করতেই ইরফানের গা গুলিয়ে এলো এক ভ্যাপসা গন্ধে, চারোদিকে প্রায় অন্ধকার পুরোনো টিউবলাইটে হালকা টিমটিম আলো জ্বলছে এই ঘরে মনে হয় বাজে ছেলেরা এসে নেশা পানি করে রুমটায় চোখ বোলালে খাওয়া সিগারেট এর খোসার ও মদের ভাঙা কাচের বোতলের অভাভ নেই! কিন্তু এদিকে নিজর দিলে চলবে না! মাহি কোথায়..? ইরফান গলা ছেড়ে ডাকতে লাগলো

মাহি..? মাহি “ইরফানের গলা শুকিয়ে এলো মাথা টা ব্যাথা ফেটে যাচ্ছে! অজানা ভয় ঘিরে ধরেছে। অনেক বড় রুম ইরফান চারোদিকে চোখ বোলালো আরেকটা দরজা দেখা যাচ্ছে কিন্তু সেটা তালা বন্ধ, দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়ায় ইরফান, সাথে সাথে মেয়ে মানুষ এর গোঙানির আওয়াজ টা স্পষ্ট শুনতে পেলো, ইরফান বুঝে ফেললো এটা তার প্রাণ প্রণোয়নেসির স্বর তার স্বপ্নচারনী, ইরফানের প্রেয়সী একমাত্র ভালোবাসার মানুষ। ইরফান অস্থির হয়ে গেলো পাগল হয়ে তালা তা খোলার চেষ্টা করছে, কিছুতেই খোলা যাচ্ছে না, ইরফান বড় তালায় কিল ঘুষি মারছে কয়েক বার মারাতে ইরফানের ডান হাত ছিলে রক্ত ঝড়ছে ” তবু ইরফান থামছে না পড় পড় ঘুষি দিয়েই চলেছে, বেশ অনেকটা জখম হলো, কোনো সুস্থ মানুষ এতোটা জখম হওয়ার পড়েও সেই হাত নাড়াতেই চাইতো না কিন্তু ইরফান উন্মাদের মতো ঘুষি দিতে দিতে তালা টা ভাঙতে সক্ষম হয়েছে ” এতো বাজে ভাবে আঘাত লাগার পড়ে ইরফানের হাত ব্যাথার চোটে অবশ হয়ে যাওয়ার কথা “কিন্তু হাতের এই অবস্থা নিয়ে ইরফানের কনো হেলদোল নেই, কোনো ব্যথা অনুভব করার শক্তি নেই আপাতত! তালা টা সড়িয়ে দরজা টা খুলতেই ইরফানের চোখে পড়লো তার প্রানপ্রিয় চিরোচেনা চাঁদের ন্যায় সচ্ছ সুন্দর মুখশ্রী টা, শুকনো ঝরা ফুলের মতো পড়ে আছে এক কোণে, আর কিছুক্ষণ পড় পড় হালকা স্বরে মৃদু আওয়াজ করছে মুখটা বাধা তাই কিছু বলতে পারছে না গোঙানির আওয়াজ বেরোচ্ছে গলা দিয়ে! হাত দুটো বাধা,।

— ঝড়ের গতিতে গিয়ে ইরফান মাহির কাছে বসে, মাহি কে মাটি থেকে তুলে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো, হাত দুটো খুলে দিলো মুখের কাপড় টা সরিয়ে দিলো, ইরফান মৃদু স্বরে ডাকলো..

~” মাহি…!মাহি, দেখ আমি এসেছি দেখ না আমি এসেছি।

মাহির কোনো হেলদোল নেই,হালকা নড়া চড়া করছে ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে, নিভু নিভু চোখে হালকা করে তাকায় আবার চোখ বন্ধ করে নেয়, মনে হয় কোনো অষুধের প্রভাব “মাহির ঠোঁট গুলো তিরতির করে কাঁপছে, কিছু বলতে চাচ্ছে কিন্তু কথা বলার শক্তি টুকু নেই, শুধু গলা দিয়ে ” গোঙানির আওয়াজ ছাড়া কিচ্ছু বেড়োচ্ছে না। ঝড়ে পড়া গোলালের পাপড়ির মতো নেতিয়ে গেছে । ইরফানের হৃদয়ে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে, মাহির মুখের কাছে চলে আসা অবাধ্য চুল গুলো হাত দিয়ে কানের পেছনে গুজে কাতর কণ্ঠে বললো বললো ,

“এখনো অভিমান করে আছিস মাহি, কথা বলবি না আমার সাথে, সরি মাহি,তোকে না বলে আর যাবো না আমি।সরি বলছি তো এই দেখ তুই বললে আমি কান ধরেও ওঠবস করবো, তুই শুধু কথা বল মাহি একটা বার বল, ইরফান ভাই! বল মাহি বল।

–এতোক্ষণে মাহি সব ভার ছেড়ে দিলো ইরফান ভাইয়ের ওপর, চোখ গুলো আর মেলছে না। হাত পা নাড়াচ্ছে না।

-” ইরফানের শরীল শিথিল হয়ে গেলো “অস্থির ভাবে উন্মাদের মতো বলতে লাগলো,

” মাহি জানবাচ্চা আমার চোখ খোল।দেখ তুই এমনটা করতে পারিস না আমার সাথে। পারিস না তুই, এই মরে যাবো কিন্তু আমি “তখন আর কারো সাথে অভিমান দেখাতে পারবি না তুই। চোখ খোল বলছি চোখ খোল। এভাবে আমায় কেনো পড়াচ্ছিস বল আমায়! আমি তো অলরেডি পুরতে পুরতে ছাই হয়ে গেছি। তোর দূরত্ব আমাকে এতোগুলো বছর রোজ পুড়িয়েছে এখন তুই কাছে থেকে আমায় পোড়াচ্ছিস।

–ইরফান মাহি কে কোলে তুলতে যাবে এমন সময় পুরুষালি কণ্ঠে কেউ একজন বলে উঠলো,

” দাড়াও সাহেব এতো তারাহুরোর কি আছে, এসেই যখন পড়েছো একটু আপ্যায়ন না করে পাঠালে ভালো দেখায় না।

_মাহি কে এক পাশে রেখে ইরফান ঘুরে তাকালো, সামনে দাঁডিয়ে থাকা লোকটার মুখের দিকে তাকাতেই ইরফানের চোখ গুলো আগুনের মতো জ্বলে উঠলো, সেইদিন কলেজে মাহির হাত ধরে ছিলো সেই ছেলেটা, হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাতে দাত চেপে বললো, হারামির বাচ্চা তুই ,

“চিনতে পেরেছিস তাহলে বলেই, ছেলেটা পৈশাচিক হাসিতে মেতে উঠলো পুরো রুম কেঁপে উঠলো, ওর পৈশাচিক হাসি তে। সাথে আরো ১০-১২ জন চ্যালা প্যালা।

” তোকে ওই দিন মাটিতে পুতে ফেলা উচিত ছিলো, তোকে ছেড়ে দেওয়া টা আমার চরম ভুল হয়েছে, আজ সেই ভুল টা শুধদ্রে নেবো,রাগে ফসফস করতে বললো ইরফান ” সাহস থাকে তো কাছে আয় শালা আয় আমিও দেখি তোর বুকে কতো কতো জ্বালা আমি নেভাতে পারি কিনা আয় “বলে এক চিৎকার দিলো ইরফান।

–হাসি থামালো ছেলেটা, মোটা করে ফরসা গায়ের রঙ ছেলে টা বখাটে ভাব চেহারায় স্পষ্ট ঠোঁট জোড়া পুড়ে কালো কুচকুচে রঙ ধারণ করেছে, ,হাতে গোলায় মোটা মোটা চেইন আংটি ব্রেচলেট কোনো বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া ছেলে মনে হয় ” দেখেই মনে হচ্ছে এখনো নেশার ঘোরে আছে তবুও টালছে না নিত্যদিন নেশা করলে ওসব টাল ঠাল থাকে না বোধহয়। এবার এবার ছেলেটা চোখ বড় বড় করে বললো, আমি তুহিন তোর মতো এক ছোকরার কাছে হার মানবো কি ভাবছিস ওইদিন পাবলিক প্লেসে কিচ্ছু করি নাই তাই বলে এখনো ছেড়ে দিবো তোকে এটা আমার ডেড়া তোর জন্য আমি একাই যথেষ্ট পুরোনো শোধ তুলতে হবে তো ” এই তোরা কেউ কাছে আসবি না আমি আগে ওর তেজ কমিয়ে আসি। বলেই এগিয়ে যায় ইরফান কে ঘুষি মারার জন্য “!

ইরফান নিজের জখম হওয়া কাটা ছেড়া হাত দিয়েই “তুহিনের নাক বড়াবড় একটা ঘুষি মারে ইরফান এর পর পেট বড়াবড় লাথি মারতেই তুহিন বসে পড়ে ছটফট করতে লাগে ইরফানের জিম করা বডির ঘুষি টা হজম করতে পারলো না নাক মুখ দিয়ে রক্ত বেড়িয়ে আসলো তুহিনের ” তীব্র ব্যাথা ও রাগে ফোসফাস করে হুংকার দিয়ে চ্যালাদের হুকুম করে মার শালার ব্যাটা কে ।

_সব গুলো এক সাথে তেরে আসছে ইরফানের দিকে হামলা করতে, ইরফান একবার পেছন ফিরে তাকালো মাহি কে এক নজর দেখলো, পুরোপুরি সেন্সলেস হয়ে পড়ে আছে দ্রুত হসপিটালে পৌছাতে হবে। এদিক ওদিক তাকালো একটা ভাঙা চেয়ার পড়ে আছে এক কোণে সেটা তুলে ছুড়ে মারতেই সব গুলো হুমরি খেয়ে পড়লো, দুই একটা উঠে আবার হামালা করতে আসলে ইরফান রাগের চোটে এলোপাথাড়ি মাড়তে লাগলো! সব গুলো মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে, ইচ্ছে তো করছে তুহিন কে শেষ করে মাটিতে পিষে রেখে যেতে কিন্তু মাহির দিকে তাকিয়ে ভাবলো তুহিন এর ব্যবস্থা পড়ে করবে আগে মাহির চিকিৎসার প্রয়োজন! হঠাৎ পেছন থেকে একজন উঠে এসে ইরফানের মাথার পেছন সাইডে ভাড়ী কিছু একটা দিয়ে বারি দিলো!ধব করে বসে পড়লো, ইরফানের মাথা টা ঝিম মেরে ওঠে, চারোদিক ঘোলাটে হয়ে এলো, চোখে অদ্ভুত আলোর রশ্মি দেখতে পাচ্ছে, এমন সময় , মাহি কে খুজতে খুজতে ফাহাদ চলে এসেছে ইরফানের মাথায় আঘাত করা ছেলেটা কে উড়াধুড়া মারতে লাগলো ফাহাদ! তুহিনের লোকেরা আরো কয়েক জন উঠে এলো।

“-ইরফানের মাথা ফেটে রক্ত বেরচ্ছে অনগ্রল ” দুর্বল শরির নিয়ে উঠে দাঁড়ায় ইরফান, ফাহাদ ও ইরফান দুজন মিলে মারতে লাগলো, এরি মধ্যে সাব্বির ও নিড়ব তাদের দলবল নিয়ে এসে ইরফান ও ফাহাদ এর সাথে যোগ দিলো।

হঠাৎ এই ইরফান ছুটে আসে মাহির কাছে, মাহির পাতলা দেহ টা মাটির সাথে ল্যাপ্টে আছে! ইরফান মাহি কে পাজা কোলে নিয়ে সেখান থেকে বেড়িয়ে আসে, পিছে ফাহাদ , রাইসা ও ফাইজা। হঠাৎ ফাইজা বমি করতে শুরু করলে ফাহাদ ও রাইসা ফাইজা কে সামলাতে বেস্ত হয়ে পড়ে! পুরোনো ঘরের অন্ধকার রুমটার ভ্যাপসা গন্ধে সাথে বিভিন্ন নেশা দ্রাব্য ও সিগারেট এর বিশ্রী গন্ধ সাথে এতোগুলা মানুষ এর তাজা রক্তের গন্ধে, ফাইজা বমি করে ফেললো, রাইসার খারাপ লাগলে ও ওড়না দিয়ে নাক চেপে ধরে রেখেছিলো। বাইড়ে এসে ফাইজা লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। কিন্তু এতোটুকু সময় ও ইরফান নষ্ট না করে মাহি কে নিয়েই গাড়ি তে উঠে বসলো।

~”ইরফানের মাথা থেকে চুইয়ে চুইয়ে এখনো রক্ত পড়ছে পড়নে সাদা শার্ট ভিজে গিয়েছে ইরফানের তাজা রক্তে লাল হয়ে গেলো শার্ট টা। তা নিয়েই ইরফান গাড়ি স্টার্ট দিলো মাহি কে ইরফানের উরু তে বসিয়ে মাহির মাথাটা ইরফানের বুকে গুজে বাম হাত দিয়ে চেপে ধরলো, রক্ত মাখা কেটে যাওয়া থেতলানো ডান হাত দিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করলো।

ফাহাদ দ্রুত এসে, রাইসা ও ফাইজা কে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো, বোনের সেন্স নেই! ভাইয়ার মাথা ফেটে রক্ত বেরচ্ছে! দুশ্চিন্তা রা এসে ফাহাদের মাথায় উকি দিচ্ছে “ইরফানের গাড়ি ফলো করতে লাগলো ফাহাদ! এ অবস্থায় ভাইয়া জ্ঞান হারালে যেকোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

ইরফানের হাত কাঁপছে, মাথা ঘুরছে “দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছে পাশেই এক ক্লিনিকের কাছে গাড়ি থামালো! মাহি কে শক্ত হাতে জরিয়ে ধরে কোলে নিয়ে হসপিটালে আসতেই ডাক্তার রাও কনফিউজড হয়ে গেলো কাকে আগে চিকিৎসা শুরু করবে দুজনের অবস্থাই খারাপ! ইরফানের অবস্থা বেশি খারাপ মাথা থেকে অনেক টা রক্ত ঝড়ে পড়েছে এমন সময় ইরফানের জীবনের অনেক রিস্ক আছে কিন্তু ইরফান মাহির চিকিৎসার জন্য চাপ দিতে লাগলো ”

~” আমার কিচ্ছু হয় নি “আপনারা ওর চিকিৎসা শুরু করেন প্লিজ ” ওর যেনো কিছু না হয়।

— ডাক্তার রা মাহির চিকিৎসা শুরু করে দিলো, ফাহাদ এসে ইরফান কে জোর করে ভর্তি করালো “! কেবিনে নিতেই ইরফান সেন্স হারালো।

” দুই রুমে দুজনের চিকিৎসা চললো “মাহির বিপদ কমে গেছে ” অতিরিক্ত কড়া ডোজের ঘুমের ওষুধ ও বিষাক্ত পরিবেশ এর ফলে মাহির এরকম অবস্থা “অবশ্য এখন মাহি পুরোপুরি আউট অফ ডেঞ্জার মাহির জ্ঞন ফিরেছে কিন্তু ঘুমের ওষুধের প্রভাব কমতে একটু সময় লাগবে তাই ঘুমাচ্ছে । কিন্তু ইরফান এর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এর ফলে রক্ত দেওয়া লাগছে দুই ব্যাগ, রোহান রক্ত দিয়েছে। এখনো জ্ঞান ফেরেনি। ডাক্তার রা বলেছে অনেকটা রক্ত বেরিয়ে পড়ায় ইরফানের অবস্থা খুব একটা ভালো না জ্ঞান ফিরতে একটু সময় লাগবে।

_____________________________★★★★_______________________

” ~রোহান এসে ফাহাদের কাধে হাত রাখতেই ফাহাদ ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসলো ”

“ভাইয়ার কিছু হবে না তো…?

” কিচ্ছু হবে না “তুই শান্তহ ফাহাদ ” অনেকটা জখম হয়েছে ঠিক হতে একটু সময় দে।

মাহির ঘুমের রেশ কাটলে উঠে বসতে চায় কিন্তু বসার শক্তি টুকু পায় না পুরো শরীর অবশ হয়ে আছে একটানা অনেক্ক্ষণ বাধা অবস্থায় পড়ে থাকার জন্য গায়ে ব্যাথায় জরজরিত হয়ে গেছে ফাইজা হাতে মুখে পানি দিতে গিয়েছে ওয়াশ রুমে রাইসা এসে মাহিকে ধরে বসায়।

চলবে……………?