পারবোনা আমি ছাড়তে তোকে পর্ব-৩৮+৩৯

0
45

#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৩৮

~” ল্যাপটপে কাজ করতে করতে প্রায় কুড়ি খানেক হাঁচি দিয়েছে ইরফান। সাথে কাশি তো আছেই এ সব গতকাল বৃষ্টি তে ভেজার ফল, হঠাৎ করে বৃষ্টি তে ভেজার কারণে ইরফানের বেজায় ঠান্ডা লেগে গেছে।

কলেজ থেকে ফেরার পর ফ্রেশ হয়ে নিচে নামার সময় ইরফানের হাঁচির শব্দে মাহির পা থেমে গেলো এরপর গুটি গুটি পায়ে হেঁটে ইরফান এর রুমের দিকে যায় একটু উকি দিয়ে দেখতে পেলো ইরফানের নাজেহাল অবস্থা একেরপর এক হাঁচি সাথে কাশি তো আছেই মাহি মনে মনে বিড়বিড় করে বললো,

“ইশ কাল ওভাবে আমার সাথে বৃষ্টি তে ভেজার জন্যই ইরফান ভাইয়ের এ অবস্থা,মাহি দ্রুত নিচে নেমে গেলো রাবেয়া বেগম মেয়েকে বললেন, খাবার খেয়ে নেওয়ার জন্য তবে মাহি পরে খাবো বলেই কিচেনে গিয়ে এক মগ চা রান্না করে নিয়ে উপরে উঠে যেতে নিলে রাবেয়া বেগম জিজ্ঞেস করলো,

~” কিরে মা এই অবেলায় চা কার জন্য নিচ্ছিস ..?

~” ইরফান ভাইয়ের জন্য,

~” কিন্তু..!

~” কিন্তু কি মা..?

~” ইরফান তো চা খায় না! পছন্দ করে না, কফি খায়।

~” খায় না তো আজকে খাবে..!

~” খেলে ভালো “তা তুই কষ্ট করে বানাতে গেলি কেনো আমায় বললেই তো বানিয়ে দিতাম।

~” মা….! চা রান্না করতেও আবার কষ্ট.? কি যে বলো না তুমি।

~” বলেই মাহি চা নিয়ে দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উঠে যাচ্ছে, রাবেয়া বেগম মেয়েকে বললেন, চা দিয়ে এসে তুই খাবার টা খেয়ে নিস..!

মাহি যেতে যেতেই উত্তর দিলো,

” আচ্ছা ”

~” ইরফান এখনো পর্যন্ত অনবরত হাঁচি দিয়ে যাচ্ছে, মাহি আস্তে করে হেঁটে ইরফানের কাছে গিয়ে টেবিলে ল্যাপটপের সামনে চায়ের মগ টা
রাখলো আলতো হাতে, ইরফান ল্যাপটপে মুখ গুজেই বলে,

~” চা কেনো এনেছিস খাই না তো..?

_” একটু খান ভালো লাগবে..! এটার মধ্যে আদা, এলাচ, তেজপাতা, লঙ, সব আছে, ঠান্ডা টা কমে যাবে।

–” তুই রান্না করেছিস..?

–” হ্যাঁ ”

~” ইরফান ল্যাপটপ বন্ধ করে এক সাইডে রেখে দিয়ে মগ টা হাতে তুলে নিলো, এক মগ ধোঁয়া উরানো চা হাতে নিয়েই এক চুমুক দিয়ে স্বাধ অনুভব করার চেষ্টা করলো চোখ বন্ধ করে, মাহি ইরফান ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ইরফান ভাইয়ের অভিভূত বোঝার চেষ্টা করলো কিছু বুঝতে পারছে না হঠাৎ করেই ইরফান বলে ওঠে,

” চমৎকার ফ্লেভার ,,!

~” এ বলে ইরফান তৃপ্তির হাঁসি দিয়ে একটু একটু করে পুরো এক মগ গরম চা দু মিনিটেই শেষ করে ফেললো, খাওয়া শেষ করে মাহির দিকে অপলক দৃষ্টি তে তাকিয়ে বললো,

~” Thanks dear,

মাহি অবাক চোখে তাকিয়ে বলে,

~” কিন্তু কেনো…?

~” ইরফান একটা তৃপ্তির হাঁসি দিয়ে বললো,

আমার জীবনের খাওয়া বেষ্ট চা ছিলো এটা।

~”ইরফানের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে ইরফানের কাছে ভালো লেগেছে। মাহির চিত্তে প্রফুল্লের হাওয়া বইছে ইরফান ভাইয়ের কাছে মাহির বানানো চা এতো ভালো লেগেছে তা শুনে।

~” গরম গরম চা খেয়ে এখন ইরফান কে বেশ ফুরফুরে লাগছে, হাঁচি টাও অনেকটা কমেছে।

~” মাহি মগ টা হাতে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো ইরফানের রুম থেকে নিচে নামতে নামতে ভাবছে সত্যি চা টা কি এতো ভালো হয়েছে যে ইরফান ভাই এভাবে বললো, বরাবরই মাহি চা টা ভালোই রান্না করতে পারে বিশেষ করে মসলা চা, এটা বড় আব্বুর ভীষণ পছন্দ যদিও মাহি কে রান্না ঘরে তেমন ঢুকতে দেওয়া হয় না তবে মাঝে মাঝে বড় আব্বুর ঠান্ডা লাগলে মাহি এই মসলা চা টা করে খাওয়ায় আর বড় আব্বু অনেক প্রশংসা ও করেন।

তবে ইরফান ভাই তো খুব একটা চা খায় না হঠাৎ করে মাহির বানানো চা খেয়ে এতো প্রশংসা করায় মাহি ইরফানের খাওয়া মগে অবশিষ্ট একটু খানি চা আছে তার থেকে মাহি এক চুমুক দিলো টেস্ট বোঝার জন্য।

~” আরে চা তে তো একটুও চিনি দেওয়া হয়নি..!

__মাহি বেশ লজ্জায় পরে গেলো, শেষ মেশ ইরফান ভাইয়ের সামনেই এমন কান্ড ঘটলো লজ্জায় মাহির নাকের ডগা লাল হয়ে গেলো।

.
.
.
.
.
.
.

~” প্রায় দুদিন হলো মাহি ইরফানের মুখোমুখি হচ্ছে না, মাহি খুব সকালে ইরফানের আগে উঠেই গাড়ি তে করে কলেজে চলে যায়, ফেরার সময় ফাহাদ কে যেতে বলে ফাহাদ গিয়ে মাহি ও রাইসা কে বাসায় পৌঁছে দেয়। কাজের চাপ বারতি থাকায় ইরফান তেমন কিছু বলে না, ‘! সন্ধ্যা সাত টা নাগাদ অফিসে বসে একটা জরুরি কাজ করতে করে হঠাৎ করেই ইরফানের মনে হলো মাহি দু দিন ধরে হয়তো ইরফান কে এড়িয়ে চলছে,। ব্যাপার টা ইরফানের মাথায় আসতেই ইরফান ভ্রু জোরা কুচকে ভাবতে লাগলো কিন্তু কেনো..? নিজের ফোন টা বের করে একটা কল দিলো কল টা রিসিভ হলো না, ইরফানের কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো, মাথায় কিছু আসছে না। মাহি কি আবার অভিমান করলো..? কিন্তু এমন তো কিছু করেনি ইরফান। ভাবতে ভাবতে ইরফান হনহনিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো,

–“পেছন থেকে ইরফানের এসিস্ট্যান্ট ডাকছে ইরফানের হেলদোল নেই ছেলেটা ইরফানের পিছু নিতে নিতে গাড়ি পর্যন্ত এসেছে,

স্যার কোথায় যাচ্ছেন…?

~” ইরফান গাড়িতে উঠতে উঠতে বলে,

” শরীর দুর্বল লাগছে এনার্জি কমে গেছে .. ”

~” কি বলছেন স্যার! আপনি এ অবস্থায় কোথায় যাচ্ছেন আপনার চিকিৎসা প্রয়োজন আমি এক্ষুনি ডাক্তার কে কল দিচ্ছি।

~” ইরফান গাড়ির দরজা বন্ধ করতে করতে বললো, আরে বোকা এ রোগ ডাক্তার সারাতে পারবে না এটা হচ্ছে ভিটামিন বউ এর অভাব। বউ কে দেখলেই ঠিক হয়ে যাবে।

~” কিন্তু স্যার আপনার তো বউ নেই..!

~” ইরফান কপাল কুচকে বললো, তোমাকে কে বলেছে আমার বউ নেই..?

–” না মানে স্যার আগে তো জানতাম না আপনি বিয়ে করেছেন।

_ইরফান শান্ত অথচ গম্ভীর গলায় বললো, এসব জানা তোমার কাজের মধ্যে পরে না তুমি তোমার কাজে ফোকাস করো।

~” বলেই ইরফান গাড়ি স্টার্ট দিলো ছেলেটা থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো, আর হাত দিয়ে মাথা চুলকিয়ে বিষয় টা মাথায় ঢোকানোর চেষ্টা করছে।

— বাসায় ফিরেতেই নাজিফা বেগম ছেলের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো, কিরে বাবা এই সময়ে তো তুই..! কোনো সমস্যা..?

-” না মা এমনিতেই একটা ফাইল নিতে এসেছি।

—-~” ওওও, তা একটু কফি করে দেই!

~'” দাও,

রুমে যাওয়ার সময় ইরফান দেখতে পেলো মাহি ও ফাইজা শারমিন ম্যাম এর কাছে পড়ছে, নিচের রুমে, ইরফান রুমে গিয়ে বসে। একটু হাসফাস করছে, কখন মাহির পড়া শেষ হবে,

__নাজিফা বেগম এসে কফি দিয়ে গেলো, ইরফান কফি খেতে খেতে মোবাইল দেখছে, বেশ কিছুক্ষণ পর হাতের ঘড়িটার দিকে তাকাতে দেখতে পেলো আট টা দশ বাজে তাহলে অবশ্যই ওদের পড়া শেষ। ইরফান দ্রুত পায়ে হেটে মাহির রুমে গেলো।

~” মাহি রুমে এসে চুল গুলো হাত খোপা করে একটি কাঠি দিয়ে আটকে রাখলো, ইরফান রুমে প্রবেশ করে মেকি স্বরে বললো,

— কল কেনো রিসিভ করিস নি..?

~” হঠাৎ পুরুষালি সুপরিচিত কন্ঠে মাহি ঘুরে না তাকিয়েই জ্ববাব দিলো,

-” পড়ছিলাম ফোন রুমে ছিলো,।

— হাত খোপা করে রাখায় মাহির ফরসা ধপধপে পিষ্টথল টা উন্মুক্ত হয়ে আছে , ইরফানের উন্মাদনা সৃষ্টি হয় অনাকাঙ্ক্ষিত ইচ্ছে গুলো মনের আকাশে প্রজাতির ন্যায় উড়ে বেরাতে শুরু করেছে ইরফান একটা শুকনো ঢোক গিলে বেসামাল অবাধ্য চোখ দুটো বন্ধ করে মাহির চুল থেকে কাঠি টা খুলে ফেললো সাথে সাথে মাহির ঘন কালো হাটু সমান চুল গুলো খুলে গেলো।

~-” হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত এমন ঘটনায় মাহি ঘাড় ঘুরিয়ে মুখ তুলে তাকায় ইরফানের দিকে এর পর নিরেট কন্ঠে বললো,

~” এটা কি হলো..?

–” এতো বড় একটা দোতলা খোপক হয়েছে যে কোনো সময় পাখি এসে বসে পড়বে তাই চুল গুলো খুলে দিলাম।

~” মাহি নির্বিকার চোখে তাকিয়ে রইলো, ইরফান একটু হাস্কি স্বরে বললো,

— দুদিন ধরে এড়িয়ে যাচ্ছিস কেনো..?

— কই না তো..!

_” মিথ্যা বলিস না মাহি তোর চোখের ভাষা আমি বুঝতে পারি।

— মাহি একটু অভিমানী স্বরে বললো, সেদিন মিথ্যা কেনো বললেন..?আপনি বলতে পারতেন চা তে চিনি হয়নি আমি একটু চিনি মিক্স করে দিতাম। মানু মাত্রই ভুল হয় তাই বলে আপনি আমায় এভাবে অপমান করবেন..?

–” অপমান..! অপমান কই করলাম মাহি কি বলছিস তুই এসব ওইদিন চা টা সত্যি ভীষণ ভালো হয়েছে।

— ” মাহি ঠোঁট ফুলিয়ে বললো, আপনি আবার ও মিথ্যা কথা বলছেন।

_” তুই বিশ্বাস কর মাহি আমি মিথ্যা বলছি না চায়ে মিষ্টি ঠিকঠাকই ছিলো। চিনি দিলে হয়তো বেশি হয়ে যেতো কারণ টা কি জানিস..?

~” মাহি ঠোঁট উল্টে জ্ববাব দিলো, কি…?

ইরফান মাহির কানের কাছে মুখ নিয়ে হিসহিসিয়ে নেশাক্ত গলায় বললো,

~” কারণ চা টা তুই রান্না করেছিস! তোর হাতের স্পর্শ মিষ্টি কেও হার মানায় মাহি । তোর ছোঁয়া পেলে ঝড়ে পড়া গাছটাও জীবন ফিরে পায়।

~” কথা গুলো মাহির মাথায় না ঢূকলেও ইরফানের নিশ্বাসে মাহির হৃদয়ে কম্পন সৃষ্টি করেছে ইরফানের নিশ্বাস ভারী অথচ গরম যা মাহির মনে প্রনয় চালাতে সক্ষম।

~” কথা গুলো বলেই ইরফান দ্রুত মাহির রুম ত্যাগ করে বেরিয়ে গেলো, মাহি তাজ্জব চোখে তাকিয়ে আছে ইরফান ভাইয়ের যাওয়ার দিকে।

.
.
.
.
.
.
.
. ~” রাতে অনেক দেরি করে ফিরলো ইরফান কিন্তু তখন ও মাহির রুমে লাইট জ্বলছে দরজা টাও খোলা ইরফান মাহির রুমের দিকে উকি দিলো, রাবেয়া বেগম ও মাহি দুজন মিলে কিছু একটা খুজছে, ইরফান ভেতরে এসে গলা খাঁকারি দিলো, রাবেয়া বেগম ও মাহি দুজন মিলে ইরফানের দিকে তাকালো ইরফান কে দেখে রাবেয়া বেগম কাছে এসে বললো,

~” এতো দেরি কেনো হলো বাবা..?

–” ইদানীং কাজের চাপ একটু বেশি কাকিয়া। তাই একটু দেরি হয়ে গেলো “তোমরা কি খুজছো এভাবে??

~” আর বলিস না মাহির একটা গলার নেকলেস খুজে পাচ্ছে না এখন সেটার জন্য বায়না করছে ওর নাকি সেটাই প্রয়োজন..! কিছুদিন যাবৎ কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করছে আজকে বিকেলে মলে গিয়ে প্রায় ত্রিশ টা দোকান খুজলাম তেমন টা পেলাম না ওকে নিয়ে যেতে চাইলাম ও সাথে গেলো না, ! গেলে দেখতে পারতো কি খোজা টাই না খোজলাম না পেয়ে এখন ঘরের টা খুজতে এসেছি দেখি পাই কিনা.!

_” ইরফান গম্ভীর কণ্ঠে বললো,

এতো খোজাখোজির প্রয়োজন নেই কাকিয়া তুমি বেস্ত হইও না আমি দেখছি ওর কি লাগবে.!

~” রাবেয়া বেগম বললেন ঠিক আছে দেখতো বাবা তুই কোথাও পাস কিনা আমি যাই খাবার গরম করি তুই ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় আর মাহি কে ও নিয়ে আয় নেকলেস খুজে পাইনি বলে রাতে খাবার ও খায় নি।

–” মাহি ইশারায় মা কে থামাতে চাইলো কিন্তু তা কি আর পারলো রাবেয়া বেগম নিজের মতো বলে চলে গেলেন, অথচ ইরফান ভাইয়ের সামনে মাহির ইজ্জতের দফারফা করে দিয়ে গেলো, মাহি লজ্জায় মুখ তুলতে পারছে না একটা নেকলেস এর জন্য মাহি রাতে খাবার খায় নি এটা শোনার পর ইরফান ভাই কি ভাবছেন আয় আল্লাহ। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে মাহির।

~” ইরফান শান্ত চোখে তাকিয়ে শীতল কণ্ঠে বললো,

__” কোন নেকলেস দেখি…?

__” না.. মানে! আসলে তেমন কোনো বিষয় না আসলে মা তো এমনি..

–” যেটা বলেছি তা কর কোন নেকলেস হারিয়েছে দেখবো আমি!

~” মাহি মনে মনে নিজেকে হাজার টা গালি দিয়ে টেবিল থেকে নিজের মোবাইল টা তুলে নিয়ে মাহির একটি ছবি দেখায় ইরফান কে, ছবি টা দেখেই ইরফান বুঝতে পারলো এটা ইরফানের দেশে ফেরার আগের ছবি, কারণ ইরফান দেশে ফেরার পর এই লুকে মাহি কে কখনো দেখা হয় নি। মাহির প্রতিটা লুক প্রতিদিনের সাজ ইরফানের প্রায় মুখস্ত হয়ে আছে।

~” ইরফান তীক্ষ্ণ নজরে ছবিটি পরখ করে নিলো, এর পর মাহি কে বললো,

~” ছবিটা আমার হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দে…. ”

~” মাহি কিছুটা আমতা আমতা করে বললো, আ.. আমি বলছি কি থাক লাগবে না আমার ওই নেকলেস আমি অন্য টা কিনে নেবো।

~” বেশি কথা বলিস না মাহি যা বলছি কর, আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামছি পাঁচ মিনিটের মধ্যে ছবি টা পাঠিয়ে নিচে গিয়ে খাবার টেবিলে বস।

__’ বলেই ইরফান বেরিয়ে গেলো মাহি দ্রুত ছবিটা পাঠিয়ে নিচে নেমে গেলো, বেশি দেরি হলে ইরফান ভাই না আবার ধমকে বসে। দুজন এক সাথে খাবার খেতে বসে ইরফানের সাথে খেতে বসলে মাহির একটাই ভয় লাগে কারণ তখন ইরফানের চোখ ফোনের স্ক্রিনে থাকলেও নজর থাকে মাহির প্লেটের মধ্যে, তাই কষ্টে সিষ্টে মাহি নিজের খাবার শেষ করে চলে গেলো।

#পারবোনা_আমি_ছাড়তে_তোকে
#লেখনিতে_ইশিতা_ইসলাম
#পর্বঃ ৩৯

—“কিছুদিন যাবৎ বাবা কাকা দের চাপে ফাহাদ কে অফিসে বসতে হয়েছে, ইরফান নিজের কোম্পানি চালাচ্ছে সে এখন নিজের কাজে ফোকাস করে দেশের বাহিরে থাকতে বাবা কাকা দের ব্যাবসা ইরফান অনেকটা সামাল দিয়েছে কিন্তু এখন পারছে না নিজের ব্যাস্ততা অনেক এর মধ্যে বাবা কাকা দের অফিস নিয়ে ভাবতে পারছে না। স্বাভাবিক ভাবেই এখন ফাহাদ কেই সব সামাল দিতে হবে। ফরহাদ চৌধুরী ও কাশেম চৌধুরীর পরে এখন পুরো কোম্পানির ভার ফাহাদ কেই নিতে হবে এটা ফরহাদ চৌধুরীর করা আদেশ। মনির চৌধুরী কে ও বলা হয়েছিল ফাহাদ এর সাথে থাকতে তিনি বলেছেন বছর খানেক চাকরি করে পরে বাসায় এসে ব্যাবসা সামলাবে।

~” ফাহাদ কে কোম্পানির C.E.O ঘোষণা করেছেন ফরহাদ চৌধুরী, মনির চৌধুরী ও ইরফানের সাথে কথা বলে মতামত নিয়ে ফরহাদ চৌধুরী এই সিধান্ত নিয়েছেন, কখনো বাবা কাকা দের অফিসের ধারে কাছে না ঘেঁষে হঠাৎ করে এতো বড় দায়িত্ব ঘাড়ে এসে পড়ায় ফাহাদ কিছুটা নার্ভাস হয়ে যায় ইরফান ফাহাদ কে সাহস যোগায় তবে অফিসে বসার পর ফাহাদের পার্ফোমেন্স ভালোই, ফরহাদ চৌধুরী ও কাশেম চৌধুরী বেশ সন্তুষ্ট হয়েছে ফাহাদের কাজের জন্য। ফাহাদ ভালো মেধাবী ছাত্র ছিলো সেই হিসেবে অফিসিয়াল কাজ গুলো একটু সহজ হয়ে যায়। ফাহাদ অফিসে বেশ মনোযোগী হয়েছে।

–” বিকেলে ছাদে বসে আচার খাচ্ছে মাহি ও ফাইজা, ছাদে বসে পাখিদের গাছের ডালে বাসা ও অপুর্ব ডানা ঝাকানো দেখে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে দুই বোন। আচার খেতে খেতে মাহি রাইসা কে বেশ কয়েক বার কল করেছে, মাহি আজকে কলেজ যায় নি, তাই কিছু পড়া নেওয়ার জন্যই রাইসা কে কল করা কিন্তু পর পর তিন টা কল করেও যখন রিসিভ হলো না মাহি ভাবলো হয়তো ফোনের কাছে নেই তাই আর কল করলো না।

~” মনের সুখে আচার খেতে খেতে মাহি ফাইজা কে প্রশ্ন করলো,

” কিরে তোর এক্সাম কবে শেষ হবে..?

~’ ফাইজা উল্লাসিত হয়ে বলে,

” আপু আর মাত্র একটা আছে, তাও দুই দিন পর এই দুইদিন ইচ্ছা মতো পড়বো এর পর শেষ!ইয়াহহহ।

-” মাহি মৃদু হেঁসে বলে,

-” ওমা তুই এতো খুশি।

~” হ্যাঁ! আর কিছুদিন পর আমি কলেজে ভর্তি হবো। তবে আপু আমি কিন্তু তোমাদের কলেজেই ভর্তি হবো বলে দিলাম।

~” তোর খুশি তুই যেখানে চাস তোকে সেখানেই ভর্তি করানো হবে।

” ফাইজা চমৎকার হেঁসে মাহির গলা জরিয়ে ধরলো।

_” আছরের নামায আদায় করে মাহি নিচে নেমে এসে শোফায় বসলো।

ফাহাদ তিনটার দিকে বাসায় এসেছে খেয়ে দেয়ে রেস্ট নিয়ে এখন আবার অফিসে যাবে ফিরবে রাত আট টা নয় টায়, “ইরফান আজকে দুপুরে বাসায় ফেরেনি,নাজিফা বেগম কল করে জানতে পারলো ইরফান মিটিং শেষ করে ক্লাইন্ড দের সাথে লান্স করেছে।

~” ফাহাদ অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্য বের হতে নিলে, নাজিফা বেগম বলেন,

~” কফি বানিয়েছি বস বাবা খেয়ে যা..।

— ” ফাহাদ বসলো, নাজিফা বেগম কফি দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো,

” কাজ কেমন চলছে বাবা..?

” ভালো বড় আম্মু, আর কদিন সময় হলে সব টা গুছিয়ে নিতে পারবো।

-” তুই ছোট মানুষ বেশি চাপ পড়ে বাবা তোর উপরে তাই না।

” না, না সমস্যা নেই প্রথম প্রথম তো আর দুই তিন মাস গেলে আর কোনো প্রবলেম হবে না। আমি তো আগে পরে এসব দিকে ঘুরেও দেখি নি তাই বুঝতে একটু সময় লাগবে। ভাইয়া তো আগে থেকেই এসব ভালো বোঝে তাই দেখো না দেশে ফিরেই কোম্পানি চালু করে সেটা আবার কতদূর এগিয়ে নিয়েছে ভাইয়ার কোম্পানির এখন অনেক মান চাহিদা বেশি এই সবই ভাইয়ার ট্যালেন্ট।

~” তুই ও পারবি তোর ভাইয়ের মতো। কয়টা দিন শিখে নে।

–‘ মাহি দুজনের কথা শুনছে আর টিভি তে গোপাল ভাড় দেখছে, ফাইজা মাহির ফোন টা নিয়ে নিচে নামতে নামতে বলছে আপু তোমার ফোন টা সেই তখন থেকে বেজে চলেছে! ছুটে এসে মাহির হাতে ফোন টা দিয়ে ফাইজা হাপাতে লাগলো, কল এসেছে শুনে মাহি ভেবেছে হয়তো রাইসা কল করেছে তবে ফোন স্ক্রিনে তাকাতেই দেখলো রাইসার মা কল করেছে, “! হয়তো আন্টির ফোন থেকে রাইসা কল দিয়েছে ভেবেই মাহি ফোন টা রিসিভ করে সালাম দিলো, সালামের উত্তর দিয়েই মরিয়ম বেগম কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে প্রশ্ন করলো,,

–” কলেজ শেষে রাইসা কি তোমার সাথে গিয়েছে মা…?

— কথা টা শোনা মাত্র মাহি কিছুটা থম মেরে রইলো, তারপর আস্তে করে বললো, কিন্তু আন্টি আমি তো আজকে কলেজে যাই নি..।

~” কি বলো তুমি যাওয়নি! তাহলে রাইসা কোথায় গেলো..?

~” মাহি চিন্তিত ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলো, কেনো আন্টি রাইসা বাসায় যায়নি..?

~” এমন কথায় নাজিফা বেগম ও ফাহাদের মনোযোগ গেলো মাহির দিকে তাকালো দুজন ..! রাইসার নাম শুনতেই ফাহাদ কেমন উশখুশ করছে.., মনে মনে ভাবছে, রাই বাসায় যায়নি মানে কি..?

__” মরিয়ম বেগম কেমন জানি কাতর কণ্ঠে বলে উঠলো, না রে মা .. সেই সকালে কলেজ গিয়েছে বিকেল প্রায় শেষ হয়ে সন্ধ্যা নামলো বলে এখনো বাসায় ফেরেনি! মেয়েটা কোথায় চলে গেলো ওতো এমন হুটহাট কোথাও যায় না গেলে।

~” মাহি চিন্তায় পড়ে গেলো, হঠাৎ করে কেমন অস্থির হয়ে গেলো মাহি এর পর কাঁপা কাঁপা গলায় বললো, রিয়া আপুর বাসায় যায়নি তো..?

~” মরিয়ম বেগম ভাঙা গলায় বললো, রিয়া কল দিয়ে ওর কথা জিজ্ঞেস করছিলো কিছুক্ষণ আগে আমি ভেবেছিলাম হয়তো তোমার সাথে আছে বা কোনো বই কিনতে গিয়েছে তাই দেরি হচ্ছে, কিন্তু এখনো ফিরলো না মা! কল করেছি বহুবার রিসিভ করছে না আমার মেয়েটা কোথায় চলে গেলো ওর কোনো বিপদ হয়নি তো..?

–” না আন্টি এসব কিচ্ছু হবে না আপ শান্ত থাকুন আমি দেখছি বলেই মাহি কল কেটে দিলো, এইটুকু শান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কিছু বলার নেই কারণ এই খবর শুনে মাহির নিজেরই কিছু ঠিক লাগছে না রাইসা হঠাৎ করে কোথায় গেলো কাউকে না বলে ওতো এমন টা করে না কখনোই না, মাহির ভাবনার দেওয়াল ভেঙে ফাহাদ বললো,

~” কি হয়েছে মাহি আন্টি কি বলছে..?.

–” মাহি অস্থির ভাবে তাকিয়ে বলতে লাগলো, ভাইয়া রাইসা নাকি সেই সকালে কলেজ এর জন্য বেরিয়েছিল এখনো বাসায় ফেরেনি।

–” কথা টা শোনা মাত্রই ফাহাদ হাত থেকে মগ টা টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়িয়ে হাসফাস করতে লাগলো,

_” নিজের ফোনটা বের করে কল দিতে লাগলো কিন্তু ফোনটা বন্ধ বলছে, মাহি উদাসীন থমথমে কন্ঠে বলে,

” ভাইয়া একটু আগে আমি কল করেছিলাম রাইসা কে একটু দরকারের জন্য তখনো কল রিসিভ হয় নি আন্টি কল করেছে তাও নাকি রিসিভ হয় নি।

__” ফাহাদ এক হত মাথার পেছনে দিয়ে নিজের চুল খামছে ধরে অন্য হাতে মোবাইল পকেটে রাখতে রাখতে চোখ বন্ধ করে বললো,

~” এখন ফোন বন্ধ বলছে…।

~” মাহি কাদো কাদো মুখে তাকিয়ে রইলো ভাইয়ের দিকে চোখ ভর্তি পানি টলমল করছে, কাতর চোখে তাকিয়ে বললো,

_” ভাইয়া রাইসার কিছু হয়নি তো…?

~” ফাহাদের দৃষ্টি তে আতংক অথচ তা আড়াল করে বললো, ওর কিচ্ছু হবে না…আমি আছি তো ভরসা রাখ আমার উপরে আমি আসছি…!

~” নাজিফা বেগমের চোখে মুখে দুশ্চিন্তার চাপ বোঝা যাচ্ছে, রাইসা মেয়েটা অনেক নম্রভদ্র হঠাৎ করে কোথায় চলে গেলো।

~” মাহির চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরছে ফাইজা মাহি কে শান্তনা দিচ্ছে। নাজিফা বেগম এসে মাহির কাছে বসলেন, মাহির মাথা টা নিজের কাধের উপর রেখে বললেন,

-” চিন্তা করিস না মা ফাহাদ গিয়েছে দেখবি একটা না একটা খোজ নিয়ে আসবে, কোথায় আর যাবে আশে পাশে আছে হয়তো কোথাও।

~” অথচ নাজিফা বেগম নিজেই ভেতর থেকে অনেক চিন্তিত দিন কাল তো খুব একটা ভালো না মেয়েটার সাথে খারাপ কিছু নাহয়..!

— কলেজের চারোদিকে খোজ নিলো ফাহাদ কোথাও পেলো না ! কলেজ ছুটির পরে রিক্সায় উঠতে দেখা গিয়েছে ব্যাস এইটুকু খবরই জানা গিয়েছে আর কোনো খবর পায় নি।

~” সাব্বির এসেছে ফাহাদের কাছে রিয়া বাসায় অনেক কান্নাকাটি করছে বোন কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না এ খবর শুনে। আগে থেকেই ফাহাদ রাইসা কে ভালোবাসে সেই সুবাদে রাইসার প্রতি সাব্বিরের আন্তরিকতা ছিলোই এখন সেই সাথে আবার বউয়ের বোন। বিয়ের পর থেকে সাব্বির রাইসা দের বাসায় কম যাওয়া পরলেও রাইসা ও রিয়া কে নিয়ে কয়েক বার ঘুরতে গিয়েছে । সাব্বিরের কোনো ভাই বা বোন নেই তাই রাইসাকেই নিজের বোন মনে হয় নিজের ছোট বোনের নজরেই দেখে, সাব্বির ও এক রাশ হতাশা নিয়ে বোন কে খুজতে এসেছে,

–” সাব্বির ফাহাদের অবস্থা দেখে নিজেই ভরকে গিয়েছে, ফাহাদ প্রায় পাগলা ঘোড়ার মতো এদিক ওদিক ছুটছে, কিছুক্ষণ পর ইরফান এসেছে ওদের কাছে সাথে রোহান , ইরফান মাত্রই শুনতে পেয়েছে রোহানের কাছ থেকে সাব্বির রোহান কে কল করেছিলো, হয়তো এতক্ষণে ওদের মাঝে নিরব ও উপস্থিত হতো তবে নিরব ঢাকার বাইরে আছে আপাতত,

ইরফান ফাহাদের কাছে এসে ভাই কে কি বলে শান্তনা দেবে বুঝতে পারছে না, সন্ধ্যা হয়ে গেছে এখনো কোনো খোজ পাওয়া যায়নি ব্যাপার টা এখন রিস্ক মনে হচ্ছে, তবে ভাইয়ের কাধে হাত রেখে বলে,

–” ভেঙে পরিস না আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো!

~’ ফাহাদ উন্মাদের মতো বলতে লাগলো, ভাইয়া আমি রাই কে খুব ভালোবাসি আমি ওকে হারাতে পারবো না আমি রাই কে হারিয়ে বাঁচতে পারবো না ভাইয়া বিশ্বাস করো যেকোনো অবস্থায় যেকোনো পরিস্থিতি তে আমি রাই কে চাই ভাইয়া।

-” ইরফান নিজের হতাশা লুকিয়ে বলে, নিজের সব টুকু দিয়ে তোর ভালোবাসা কে রক্ষা করবো, ভাই তুই দুর্বল হয়ে পরিস না।

—” ইরফান দ্রুত মাহিকে কল দিয়ে কোনো কথা না বলেই বললো, মাহি দ্রুত তোদের সব ফ্রেন্ড দের কল করে জিজ্ঞেস কর রাইসা কে লাস্ট কখন দেখা হয়েছে… ফাস্ট !

~” মাহি নিপা কে কল করলো নিপা আগেই ছুটি নিয়ে বারি ফিরে গিয়েছিলো তখন নিপা রাইসা কে ক্লাসেই দেখেছিলো, রাইসা ও আদিবার থেকে বিদায় নিয়ে নিপা বাসায় চলে গিয়েছিলো ওদের বাসায় একটা প্রোগ্রাম ছিলো তাই।

–” নিপার কল কেটেই মাহি আদিবা কে কল দিয়েছে আদিবা মাহি কে বললো ,

” আজকে ক্লাসে I.C.T স্যার কয়টা সিট দিয়েছিলো, রাইসা তোর টা স্যার এর কাছ থেকে চেয়েছিল স্যার তখন বলেছে আজকে যে যে আসে নাই তাদের সিট দেওয়া হবে না, এটা তাদের ক্লাস মিস দেওয়ার সাজা, রাইসা বাসায় যাওয়ার সময় বলে রিক্সায় উঠেছে, আগে লাইব্রেরি থেকে তোর জন্য সিট টা ফোটোকপি করে তার পর বাসায় যাবে, বিকেলে তোকে সিট টা পাঠিয়ে দিবে, পড়ে তো রাইসা চলে গেছে লাইব্রেরি তে বোধহয়..! কিন্তু কেনো…?

__” পরে বলবো তোকে রাখি এখন।

-” রাইসা কোন লাইব্রেরি তে যেতে পারে তা মাহি জানে কারণ মাহি ও মাঝে মাঝে একি লাইব্রেরি তে যায় রাইসার সাথে বা বাসায় কারো সাথে।

~” বাকি রইল রিফাত আর সাগর তবে ওদের ফোন নাম্বার মাহির কাছে নেই তাই মাহি ইরফান কে কল করে আদিবার কাছে যা জানতে পেরেছে সব জানালো সাথে লাইব্রেরি এড্রেস টা দিয়ে দিলো । মাহির কন্ঠে কান্না মিশ্রিত যা নিমিষেই ইরফানের হৃদয়টা ছিন্ন ভিন্ন করতে সক্ষম।

–” ইরফান রিফাত কে কল দিতেই রিফাত কল রিসিভ করে সালাম দিলো,

–” আসসালামু আলাইকুম ভালো আছেন ভাই..?

~” ইরফান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে, তোমরা তোমাদের দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করতে পারলে না রিফাত, তোমাদের বলেছিলাম মাহি ও রাইসার দিকে একটু খেয়াল রেখো। আশে পাশে যা হয় আমাকে কনফার্ম করবে যাই হোক তোমারা রাইসা কে লাস্ট কোথায় দেখেছো আজকে..?

~” আমরা তো আজ কলেজ যাইনি ভাই আমি আর সাগর একটা কাজে আটকে গিয়েছিলাম তাই যাইনি। কেনো ভাই কোনো সমস্যা..?

__” রাইসা কে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না,,!

~” কথা টা শোনা মাত্রই রিফাত কেমন আতংকিত গলায় বললো, কি বলছেন ভাই এসব..! আসবো আমি সাগর কে নিয়ে..? কোথায় আছেন।

_” না প্রয়োজন হলে বলবো,

” বলেই ইরফান কল কেটে দিলো, আগে লাইব্রেরি তে যেতে হবে, ফাহাদ ও আগে গিয়েছে বহুবার তাই লাইব্রেরির কথা শুনতেই ফাহাদ নিজের বাইক টায় উঠেই এক টানে চোখের আড়াল হয়ে গেলো, একেক করে সবাই গেলো, আশ্র পাশে খোজ করে ও রাইসার খোজ পেলো না, ফাহাদ লাইব্রেরির দোকানের মালিকের কাছে যেতেই দকানের মালিক সালাম দিয়ে বলে।,

~” আরে ছোট সাহেব ভালো আছেন..?

–” ফাহাদ এসব কথার জ্ববাব না দিয়েই উদ্বিগ্ন হয়ে বলে ফেলে, চাচা রাই এসেছিলো..!

~” ইরফান, সাব্বির, রোহান প্রথমে অবাক চোখে তাকালেও পরে অবশ্য বুঝতে পেরেছে এই দোকানে হয়তো মাহি রাইসা ওরা বেশি আসাতে ওদের কে ভালোভাবে চিনে সাথে ফাহাদ কেও যেহেতু এই কবছরে বহুবার ফাহাদ ওদের সাথে এসেছে,

‘ দোকানের মালিক একটু ভেবে বলে, না সাহেব রাইসা মা তো আজকে আসেনি..!

~” সকলে আরো দুশ্চিন্তায় পরে গেলো, ফাহাদ লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে এসে বাইকের সাথে একটা লাথি মেরে এক হাতে চুল গুলি মুষ্টিবদ্ধ করে রাখলো এর পর ফোন টা বের করে আরও একবার কল করলো,

~” কল টা রিং হচ্ছে ফাহাদ চিৎকার দিয়ে বললো, ভাইয়া কল রিং হচ্ছে। রাইয়ের ফোন অন হয়েছে

–” ইরফান শত মেঘের ভিরে একটুকরো রোদের দেখা পেলো মনে হচ্ছে, সাথে সাথে ফোন করে রাইসার নাম্বার টা দিলো ট্রাক করতে, ভাগ্যক্রমে লোকশন ট্যাংক করে এড্রেস বের করার সাথে সাথে আবার নাম্বার টা বন্ধ হয়ে গেলো, ফাহাদ আর কলে পাচ্ছে না রাইসা কে।

~” লোকেশন কাছেই ওরা দ্রুত রওনা হলো , ইরফান, সাব্বির ও ফাহাদ দ্রুত বাইক নিয়ে চলে গেলো, ইরফান বিপদের আশক্ষা করে, রোহান কে বলে গিয়েছে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার জন্য, আর বড় গাড়ি নিয়ে যেতে।

~’ আজ কদিন হলো ফাহাদের সাথে রাইসার তেমন দেখা হয় না, অফিসিয়াল কাজের চাপে ফাহাদ একটু বেশি আটকা পরে গিয়েছিল। নয়তো কিছুদিন রাইসার সাথে দেখা না হলে যেকোনো বাহানা করে রাইসার বাসার পাশে গিয়ে রাইসার সাথে দেখা করে আসতো। ফাহাদ এখন নিজেকে দোষারোপ করছে, বাইক নিয়ে চলতি পথে ভাবছে,

~” আমার আরো কেয়ারফুলি হওয়া উচিত ছিলো রাইয়ের প্রতি।

~” ফাহাদের বাইক ফুল স্পিডে চলছে সাথে ইরফান ও সাব্বিরের টাও।

.
.
.
.
.
.
.
.
.
.তিনজন পৌঁছে গেছে সেই লোকেশনে তবে চারোদিকে ঘন জঙ্গল ছাড়া আর কিছু নজড়ে পরছে না, চারোদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার সবাই একটা করে টর্চ নিয়ে চারোদিক দেখছে, খুজতে খুজতে একটা ছোট কুটির ঘর চোখে ভাসলো পুরোটা পাঠখড়ি দিয়ে তৈরি মাটির ঘর, ঘরটির সামনে দাঁড়াতেই ইরফান মাটিতে তাকাতেই হকচকিয়ে গেল, ইরফানের পায়ের কাছে রক্ত,আরো ভালো করে নজর বুলিয়ে দেখলো হ্যাঁ এটা রক্তই কিন্তু এ জঙ্গলে তাজা রক্ত কিভাবে এসেছে..?

–” ভাবতে ভাবতেই ফাহাদ দরজায় লাত্থি মেরে খুলে ফেলেছে দরজা খোলাই ছিলো তবে বাইরে থেকে চাপানো থাকার কারণে মনে হয়েছে দরজা টা বন্ধ।

_” ভেতরে প্রবেশ করেই ফাহাদের দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেলো ফাহাদের পা মাটিতে আটকে গেলো,

~” রাইসা কাত হয়ে শুয়ে আছে, গায়ের ওরনাটা ও নেই, পড়নে জামা টা কয়েক জায়গায় ছিড়ে ফরসা শরীরের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে, ফরসা ধপধপে গায়ে লাল লাল ছোপ ছোপ রক্তের দানার মতো কি সব। দাগহীন চেহারায় অজস্র খামচির দাগ, গলার মাঝ বরাবর নিল বর্ন ধারণ করেছে, হয়তো গলা চেপে ধরা হয়েছিলো, রাইসার পাশে ছড়িয়ে আছে অনেক খানি তাজা রক্ত অনেকটা শুকিয়ে জমাট বেধে আছে, সাথে রাইসার হাতে লেগে আছে রক্ত,

~” ফাহাদের শরীর অসার হয়ে আসছে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি টুকু পাচ্ছে না হাত পা ভেঙে আসছে তবু একটু একটু করে এগিয়ে এসে রাইসার পাশে ধপ করে বসে পড়লো ফাহাদ, রাইসা কে ধরার সাহস পাচ্ছে না হাত কাপছে তিরতির করে, কম্পিত হাতে রাইসার হাত টা শক্ত করে ধরে ডাকছে,

~” রাই..? এ রাই..!

~” রাইসা চেতনাহীন ভাবে শুয়ে রইলো, চোখ বন্ধ শ্বাস নিচ্ছে ধীর গতিতে, ফাহাদ ছটফটিয়ে বলে উঠলো,

–” এই মেয়ে শুনতে পাচ্ছো না তুমি ডাকছিতো আমি..! উঠো রাই তাকাও তাকাও আমার দিকে..।

_” ফাহাদের চোখ থেকে এক ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ে রাইসার চোখের উপর, ফাহাদ হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখ মুছে আবার ভাঙা গলায় বললো,

~” ওঠো রাই তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন বুনে রেখেছি যে আমি, এখনো কিছুই পূর্ণ হয়নি, আমি তোমাকে নিয়ে বাঁচতে চাই রাই! এভাবে আমাকে কষ্ট দিও না তুমি তাকাও আমি তোমাকে এভাবে আর দেখতে পারছি না, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে রাই প্লিজ তুমি কথা বলো।

~” ফাহাদ নিজের শার্ট টা খুলে রাইসার গায়ে জরিয়ে দিলো, রাইসা কে নিজের উরু তে রেখে তাকায়, রাইসার মুখ টা খামচির দাগে রক্তে ভেজা হাত টা রক্তে লাল হয়ে আছে, নির্জীব চোখ দুটো কাঁপছে ক্ষনে ক্ষনে,

~” ইরফান এসে রাইসার এই অবস্থা দেখে চোখ সরিয়ে নিলো, ফাহাদ ইরফান কে দেখা মাত্রই ভেজা গলায় বললো,

–” ভাইয়া দেখো না রাই কথা বলছে না, তাকাচ্ছে না ভাইয়া!

_” ইরফান আতংকিত স্বরে বললো, রাইসা কে দ্রুত হসপিটালাইসট করতে হবে,

~” ইরফান অনেকটা ঘাবড়ে গেছে রাইসার কন্ডিশন খুব একটা ভালো দেখাচ্ছে না, বাজে কোনো ঘটনা ঘটে যায় নি তো..?!” ইরফান চারোপাশে নজর বোলায় কেউ নেই তাহলে রাইসা এখানে একা পড়ে আছে কেনো. ওকে যারা তুলে এনেছিল তারা কোথায়..? রাইসার হাতের দিকে তাকালে খেয়াল করলো রক্ত অথচ ভালো ভাবে খেয়াল করলে বুঝতে পারলো তা রাইসার হাত থেকে রক্ত পড়ছে না তাহলে এটা অবশ্যই যারা তুলে এনেছে তাদের কারো।

_” ইরফান বাজ পাখির নজরে তাকিয়ে চারোদিক পরখ করে নিলো,

~” রাইসার নরম অধর জোরার কিনারা বেয়ে এক ফোটা রক্ত পরতে নিলে , ফাহাদ হাত দিয়ে মুছে রাইসা কে পাজা কোলে তুলে নিলো,

_” জঙ্গল থেকে বেরহতেই দেখতে পেলো মাত্র রোহান গাড়ি থামালো, সাথে সাথে রাইসা কে নিয়ে গাড়ি তে উঠে বসলো, ইরফান রোহান কে উদ্দেশ্য করে বললো, সামনে বড় কোনো ক্লিনিকে নিয়ে যা। আমি আসছি..!

.
.
.
.
.
.
.
.
.
.
.

__” মাহি আর রিয়ার কান্নায় পুরো হসপিটাল বেজে উঠল, চৌধুরী পরিবারের সকলে এসেছে দুই কর্তা বাদে তারা অফিসে আছেন , মাহমুদা বেগম কে আনতে চাওয়া হয়নি এই শরীরে রাতের বেলা তবে মাহমুদা বেগম একপ্রকার জ্বোর করেই এসেছেন, রাইসার এ অবস্থার কথা শুনে মাহমুদা বেগম নিজেকে বাসায় রাখতে পারেন নি। তাই সবার বারণ সত্ত্বেও তিনি এসেছেন।

~” একদিকে মাহি ও রিয়ার কান্না অন্য দিকে ফাহাদের করুন অবস্থা ইরফান কে খুব যন্ত্রণা দিচ্ছে, সাথে বেশ টেনশনে ফেলে দিচ্ছে, রাইসার জ্ঞান ফেরেনি, এখনো পুরো ঘটনা জানা যায়নি কি হয়েছে সেখানে রাইসার সাথে! ডাক্তার রুম থেকে বের হলে জানা যাবে।

_” ইরফান রাইসা কে ফাহাদের সাথে হসপিটাল পাঠিয়ে দিয়ে সাব্বির আর ইরফান মিলে সেই বারিটা তন্ন তন্ন করে খুজেছে, তেমন কিছু পাওয়া যায়নি না কারো দেখা পেয়েছে।

~” বিধ্বস্ত অবস্থায় বসে আছে ফাহাদ, মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তা উপর থেকে দেখেলে বোঝা অসম্ভব, মনে মনে নিজেকে দ্বায়ী করছে রাইসার এই অবস্থার জন্য কিন্তু কেনো কোনো জ্ববাব নেই ফাহাদের কাছে। ইরফান এসে ফাহাদের কাছে বসলো,

–” ভাইয়া ভালো মানুষরা কেনো এতো কষ্ট পায়..?

_” ইরফান অসহায় নজরে তাকায় ফাহাদের দিকে কিছু বলে না,

–” ফাহাদ নিষ্প্রাণ চোখে ফ্লোরে তাকিয়ে বললো,

–” রাই খুব ভালো মেয়ে জানো ভাইয়া ছোট থেকে ওকে আমি দেখে এসেছি,, এইটুকু বয়সের থেকে বোনের সাথে স্কুলে যেতো আসতো, খুব চঞ্চল ছিলো তখন একটু বড় হলো ওর সব থেকে বড় ছায়া ওর বাবা যখন মারা যায় ওর বুক ফাটা কান্নায় আমার হৃদয় ছিড়ে আসছিলো মনে হচ্ছিল আমার কলিজাটা ছিড়ে দু টুকরো হয়ে যাচ্ছে। তখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমি ভালো থাকতে চাইলে রাই কে ভালো রাখতে হবে। আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমি রাই কে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।

__” ইরফান একটি লম্বা শ্বাস ফেলে ভাইয়ের মাথায় হাত রাখলো,

.

চলবে।