বিষন্ন বসন্ত পর্ব-০৩

0
1

#বিষন্ন_বসন্ত
#সানা_শেখ
#পর্ব_3

ডিনার সেরে অভিরাজ রেস্তোরাঁ থেকে ফিরে আসে।
রুমে ঢুকেই ফোন চার্জে লাগিয়ে বেডে গা এলিয়ে দেয়।

একটা ভার্চুয়াল মেয়ে, যার নামটাও জানে না এখনো, জিজ্ঞেসও করেনি অভিরাজ। যাকে ও কখনো দেখেনি, যার কণ্ঠ পর্যন্ত শোনেনি, সেই মেয়ের মায়ায় জড়িয়ে গেছে আষ্টেপিষ্টে। তবুও ভালোবাসা এক অদ্ভুত শিকড় গেড়ে বসেছে। অদ্ভুত বড্ড অদ্ভুত। অভিরাজের সাথে তো এমন টা হওয়ার কথা ছিল না কিন্তু হয়ে গেছে। অভিরাজ জাওয়াদ এর মন কোনো এক মায়াবী কন্যা কে না দেখেই দুলে উঠেছে শুধু মাত্র মায়াবী কন্যার বাচ্চামো মেসেজ পড়েই।

চোখ বন্ধ করে মায়াবী কন্যা কে কল্পনা করে। বাস্তবে মায়াবী কন্যা কে দেখতে কেমন? গোলমল ছোট খাটো পিচ্চি একটা কিউট মেয়ে? নাকি উচা লম্বা মায়াবী? আসলে মায়াবী কন্যা কে দেখতে কেমন?
_________

অন্যদিকে, মিহিও আরেক জগতে।
বিছানার এক কোনায় বসে মেসেঞ্জারের চ্যাট স্ক্রল করে দেখছে কতগুলো অদ্ভুত, খ্যাপাটে কিন্তু মজার লাইন।
অভিরাজের করা মেসেজ।

“তোমার প্রোফাইল নাম ‘মায়াবী কন্যা’। সত্যিই কি তুমি মায়াবী?”

মেসেজ দেখে মুচকি হেসে মিহি উত্তর লিখেছিল,

“আমি মায়াবী নই, তবে কারো বিষন্ন বসন্ত যদি রঙিন করতে পারি তাহলে সেটা মন্দ কি?”

অভিরাজ লিখেছিল,

“তুমি আমার বিষন্ন বসন্তে এসে বসন্তের গন্ধ এনেছো, মায়াবী না হয়েও যেন জাদু করেছো। তোমার প্রোফাইল নাম মায়াবী কন্যা না দিয়ে জাদু কন্যা দেওয়া উচিত ছিল। তুমি জাদু করেছো আমার উপর।”

তারপর অভিরাজের করা আরো কয়েক টা মেসেজ।

“আমি ভালোবাসা থেকে অনেক অনেক দূরে ছিলাম। কিন্তু এখন মনে হয়, হয়তো অনেকদিন আগেই ওটা আমাকে খুঁজতে শুরু করেছিল। কখনো কখনো অনেক কিছু অনুভব করা যায়, ব্যাখ্যা করা যায় না। যেমন তুমি হঠাৎ এসে সব এলোমেলো করে দিলে। আমি এমন এলোমেলো ছিলাম না আগে।”

“ভালোবাসা যদি হতো বাজারের সবজি, তাহলে আমি প্রতিদিন বাজারে যেতাম কেবল তোমার জন্য।”

“তোমাকে হাতের নাগালে কবে পাব মায়াবী কন্যা?”

“তুমি কি জাদু জানো মায়াবী কন্যা? নিশ্চই জাদু জানো তুমি, নাহয় আমাকে পাগল করা এত সহজ ছিল না।”

“ভার্চুয়ালি আর সংসার করতে ইচ্ছে করছে না, এবার বাস্তবে সংসার করতে চাই, বয়স তো আর কম হলো না বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। আমার বাচ্চাদের আমি বুড়ো বাপ দিতে চাই না। লাল টুকটুকে বউ সেজে অপেক্ষা করো আমি আসছি।”

মিহির মুখে হাসি ফুটে ওঠে। ভার্চুয়াল ফ্রেন্ড হিসেবে কথা বলতে বলতেই অভিরাজ জাওয়াদ এর কথার প্রেমে পড়ে গিয়েছিল মিহি। কি সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলে লোক টা। কথা বললেই মন ভালো হয়ে যায়।
আর এখন তো পা’গল করার মতন মেসেজ করে। এরকম মেসেজ পড়ে প্রেমে না পড়ে কি থাকা যায়? অন্তত মিহি থাকতে পারেনি।

সেদিনই একসেপ্ট করে নিয়েছিল অভিরাজের প্রপোজাল। অভিরাজ কয়েক দিন পর নিজের বাড়ি ফিরবে তখন নিজের পরিবার কে নিয়ে মিহির বাড়িতে আসবে মিহি কে বউ করে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

যদিও এখনো দুজনের একজনও জানে না দুজনের এক হওয়া সহজ হবে কি না!
____________

রাত দশ টা।
অভিরাজ ফোন হাতে নিয়ে মিহিকে একটা মেসেজ করে,

“মনে হচ্ছে ভার্চুয়াল বউ আমার কথা ভুলে গেছে।”

একটু পর মিহির রিপ্লাই আসে,

“মেয়েরা ভুলে যায় না।”

“একদিনও তো মনে করতে দেখলাম না। একটা দিন তো আগে আগে মেসেজ দিতে পারো, আমি মেসেজ না দিলে তো তোমার খোঁজ খবরই পাওয়া যায় না।”

“আমি কেনো মেসেজ দিব? মেসেজ দেওয়ার দায়িত্ব কার ভুলে গেছেন?”

“একদম না, ভুলে যাওয়ার মত সাহস আছে নাকি আমার?”

“নেই?”

“উঁহু।”

দুজনের মধ্যে শুরু হয় প্রেমালাপ।

মেসেজ গুলো ধীরে ধীরে আর ভার্চুয়াল দুষ্টুমি নয়, বরং অনেক আগেই রঙ পেতে শুরু করেছে অনুভবের। প্রতিটা টেক্সটে ভেসে উঠছে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা।

রাত গভীর হয়।
দুই পাড়ের দুটো বিছানায় শুয়ে আছে দুজনেই।
দুই প্রান্ত, দুটি ফোন, কিন্তু মনে এক রকম উত্তাপ।
কথার পিছে কথা, ইমোজির পিছে ইমোশন।

অভিরাজ লিখে,

“তুমি কি জানো, বিষন্ন বসন্তও সুন্দর হতে পারে যদি কারো মায়াবী হাসি পাশে থাকে?”

মিহি উত্তরে লেখে,

“তাহলে আপনি কি সেই বিষন্ন বসন্তে আমার হাসিটা দেখতে চান?”

অভিরাজ কিছুক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকে
তারপর ধীরে ধীরে টাইপ করে,

“হ্যাঁ, আমি চাই তোমার হাসি দেখতে।”

মিহি টাইপ করে,

“কিভাবে দেখবেন?”

“তোমার সামনে দাঁড়িয়ে।”

“কবে?”

“খুব শীগ্রই।”

“অপেক্ষায় রইলাম আমি।”

“ইচ্ছে করে ছুটে চলে আসি।”

“কোথায়?”

“তোমার কাছে।”

“আপনি জানেন আমি কোথায় থাকি?”

“জেনে নিব।”

“আপনি আমাকে চিনবেন?”

“চিনে নিব। আচ্ছা তোমার পছন্দের রঙ কি?”

“সাদা, আপনার?”

“সাদা-কালো কিন্তু আমার মনে হয় তোমাকে লাল আর নীল রঙের শাড়িতে বেশি সুন্দরী লাগবে। আমি যেদিন তোমাকে প্রথম দেখতে যাব সেদিন তুমি নীল রঙের একটা শাড়ি পড়বে, চোখে কাজল পড়ার দরকার নেই, হালকা করে লিপস্টিক দিবে, দুহাত ভরে সাদা আর নীল রঙের চুড়ি পড়বে। আমি দুচোখ ভরে দেখবো তোমায়। আর আমাদের বিয়ের দিন লাল রঙের শাড়ি পড়ে লাল টুকটুকে বউ সেজে অপেক্ষা করবে আমার জন্য, আমি আসবো আর তোমাকে আমার নামে লিখে নেব অনন্ত কালের জন্য।”

পুরো মেসেজ পড়ে লজ্জায় লাল নীল হয়ে যায় মিহি।
মিহি থেমে থেমে টাইপ করে,

“যেদিন আমাকে প্রথম দেখতে আসবেন সেদিন সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট পড়ে আসবেন। নীল রঙের শাড়ি পরিহিতা আমার সাথে সাদা-কালো ড্রেস পড়া আপনাকে দারুন মানাবে। সবাই যেন আমাদের দেখে বলে এরা একে অপরের জন্যই তৈরি।
বিয়ের দিন আপনি আসবেন সাদা শেরওয়ানি পড়ে নবাবের বেশে। লাল টুকটুকে বউ সেজে আমি অপেক্ষায় থাকবো আপনার।”

“তাহলে দেখা হচ্ছে খুব শীগ্রই।”
____________

মাঝখানে পেরিয়ে যায় কয়েক দিন।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে ড্রইং রুমে আসতেই মিহির চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। বজ্জাত টা বাড়িতে আসলো কখন? রাতে এসেছে বোধহয়। নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টা করে সোফায় বসে থাকা বড় কাকার একমাত্র ছেলে শেহজাদ খান জারিফ এর সামনে এসে দাঁড়ায়। শেহজাদ ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে ছোট বোনের দিকে তাকায়। ওই গম্ভীর শীতল চাহনি দেখেই মিহির ভেতর পর্যন্ত কেঁপে ওঠে।
নাম শেহজাদ হলে কি হবে? মানুষ টা বড্ড বজ্জাত।
মিহি এই শেহজাদ এর দুটো নিক নেম দিয়েছে, মিহি আর আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউ জানে না এই নিক নেম এর ব্যাপারে। শেহজাদ ভাইয়া কে মিহি মনে মনে বজ্জাত ভাইয়া আর রা’ক্ষ’স ভাইয়া ডাকে, কারণ শেহজাদ সব সময় ছোট ভাই বোনের দিকে চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে ভয় দেখায় বিশেষ করে মিহি কে। মিহি ছোট বেলা থেকেই একটু চঞ্চল আর এই জন্যেই ওর দিকে শেহজাদ চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে ধমক দিয়ে শান্ত করিয়ে বসিয়ে রাখে। ধমক দেয় রা’ক্ষ’সের মতন অনেক জোরে জোরে। নিজে ত্যাড়ামি করবে তাতে কোনো সমস্যা নেই কিন্তু ওরা ছোট তিন ভাই বোন একটু ত্যাড়ামি করলেই এই বজ্জাত ভাইয়া প্লাস রা’ক্ষ’স ভাইয়া গোল গোল করে তাকিয়ে একটা ধমক দেবে আর সব শান্ত হয়ে যাবে। নিজে কারো কোনো কথা শোনে না অথচ তার কথা কেউ না শুনলেই হলো। মিহি মাঝে মধ্যেই ভাবে এই বজ্জাত খান কার মতন হয়েছে? বজ্জাত খানের মতন গম্ভীর, রাগী চুপ চাপ মানুষ দ্বিতীয় জন দেখেনি মিহি নিজের বংশে। বজ্জাত খান বাড়িতে না থাকলেই মিহি বেশি খুশি হয়। বজ্জাত খান বাড়িতে আসলেই মিহির সব আনন্দ মাটি।
মিহি জোর পূর্বক মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,

“কেমন আছো ভাইয়া?”

শেহজাদ গম্ভীর গলায় বলে,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তুই কেমন আছিস?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

“পড়াশোনা কেমন চলছে?”

মিহি মনে মনে বলে,

“এই যে শুরু হয়ে গেছে শিক্ষকতা। ভার্সিটিতে নিজের শিক্ষার্থীদের টর্চার করেও শান্তি হয় না বাড়িতে এসে আবার আমাকেও টর্চার করতে হবে! একটা বিয়ে করে বউ নিয়ে চলে গেলেই বাঁচি তাহলে অনেক দিন পর পর বাড়িতে আসবে। না থাক এই রা’ক্ষ’সের বিয়ে করতে হবে না, যেই মেয়ে কে বিয়ে করবে সেই মেয়ের জীবন শেষ। তার চেয়ে ভালো আমিই বিয়ে করে চলে যাব। অভিরাজ আপনি তাড়াতাড়ি চলে আসুন আমাকে নেয়ার জন্য নাহলে এই রা’ক্ষ’স ভাইয়া ভয় দেখিয়ে দেখিয়ে আমাকে মে’রে ফেলবে।”

শেহজাদ গম্ভীর গলায় বলে,

“কি বলেছি শুনতে পাসনি? কি ভাবছিস এত?”

“কি..কিছু না ভাইয়া, পড়াশোনা ভালো চলছে।”

“কয়টা বাজে এখন?”

“দ দশটা।”

“রাতে ঘুমিয়েছিলি কখন?”

“নয়টায়।”

“রাতে নয়টায় ঘুমালে সকালে ঘুম ভাঙতে দশটা বেজে যায়? কাকি যে দরজা ধাক্কালো খুলিসনি কেনো তখন?”

“শুনতে পাইনি।”

“রাতে কয়টা পর্যন্ত ফোন দেখেছিস?”

“রাতে মোবাইল টিপি না তো ভাইয়া। খেয়ে দেয়ে একটু পড়েই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। বাকি পড়া আজকে শেষ করব।”

“নাস্তা সেরে বই খাতা নিয়ে ড্রইং রুমে আয়, দেখি এত গুলো দিন ধরে কি কি পড়েছিস।”

মিহি কিছু না বলে উল্টো ঘুরে ডাইনিং টেবিলের দিকে এগিয়ে যায়। রা’ক্ষ’স টা আসতে না আসতেই ওর সব আনন্দ মাটি করে দিচ্ছে। ড্রইং রুমে শেহজাদ আর মিহির ছোট ভাই আনভীর বসে আছে। মিহির বাবা কাকা দুই ভাই, ওনাদের ছোট একটা বোন আছে। মিহির বড় কাকার এক ছেলে এক মেয়ে, শেহজাদ খান জারিফ আর সাবরিন মিলি। মিহির একটাই ছোট ভাই আনভীর খান জায়ান।

মিহির মা চাচী রান্না ঘরে রয়েছে, এত গুলো দিন পর ছেলে বাড়িতে এসেছে তাই ছেলের জন্য দুপুরের খাবার রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছেন দুজন।
মিহির কাকা অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার, বর্তমানে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন। মিহির বাবা এখনো অবসর নেননি, ওনার জবের মেয়াদ আরো সাত বছর আছে, সাত বছর পর অবসর নেবেন।
______________

সময় টা বিকেল পাঁচ টা। মিহির মা চাচী আসরের নামাজ আদায় করতে নিজেদের রুমে গেছেন। মিহির ছোট ভাই ঘুমিয়েছে।
মিহি সোফায় বসে ধুমছে চ্যাটিং করছে অভিরাজের সাথে।
শেহজাদ নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আসে ফোন চাপতে চাপতে। মিহি বড় ভাই কে দেখেই ফোনের পাওয়ার বাটন চেপে কুশনের আড়ালে রেখে দেয় ফোন।
শেহজাদ সোফায় বসে বলে,

“ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে আয়।”

মিহি সোফা ছেড়ে উঠে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। নিজে আগে পানি খেয়ে শেহজাদের জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসে।
শেহজাদ পানির গ্লাস হাতে নিয়ে আবার বলে,

“এক মগ কফি নিয়ে আয়।”

“চিনি ছাড়া?”

“তুই জানিস না আমি কি কফি খাই?”

মাথা নাড়ায় মিহি, জানে।
উল্টো ঘুরে দাঁত কিড়মিড় করে রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে যায়। কি সুন্দর এতক্ষণ বসে বসে অভিরাজের সাথে কথা বলছিল। রা’ক্ষ’স টা এসেই দিল প্রেমের বারোটা বাজিয়ে। নিশ্চই অভিরাজ ফোন হাতে ওর রিপ্লাই এর অপেক্ষা করছে।

কফি বানিয়ে নিয়ে আসে মিহি। শেহজাদ চোখ মুখ শক্ত করে বসে আছে। ভয়ংকর রকম রেগে মিহির দিকে তাকায় শেহজাদ। এভাবে রেগে তাকাতে দেখে শুঁকনো ঢোঁক গিলে নেয় মিহি। এভাবে তাকাচ্ছে কেনো রা’ক্ষ’সের মতো? কফির মগ এগিয়ে দিয়ে বলে,

“ভাইয়া তোমার কফি।”

শেহজাদ কিছু না বলে আগের মতোই রেগে তাঁকিয়ে রইলো। মিহি কফির মগ টেবিলের উপর রেখে দেয়। নিজের ফোন নেয়ার জন্য সোফার দিকে তাকিয়ে দেখে
ওর ফোন শেহজাদের হাতে। মিহির আর বুঝতে একটুও বাকি থাকে না শেহজাদের এমন দৃষ্টির মানে। শেহজাদের চাহনি দেখে মিহির আত্মারাম খাঁচাছাড়া। শেষ, আজকে ওকে কেউ বাঁচাতে পারবে না, আজকে তো টা টা গুড বাই গেয়া।

শেহজাদ মিহির মুখের দিকে তাকায়। মিহির চোখ মুখ শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে।
শেহজাদ নিজের ফোন আর মিহির ফোন মিহির মুখের দিকে ঘুরিয়ে ধরে।
মিহি দুটো ফোনের স্ক্রিনে তাঁকিয়ে হা হয়ে যায়।
অভিরাজ জাওয়াদ আর কেউ নয় ওর এই বজ্জাত প্লাস রা’ক্ষ’স ভাইয়া। ওর করা মেসেজ গুলো শেহজাদের ফোনের স্ক্রিনে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।

মিহি আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ায় না। দে দৌড় রুমের ভেতর। এক দৌড়ে রুমের ভেতর চলে আসে।
ডোর লক করতে যাবে তার আগেই শেহজাদ শক্ত হাতে ডোর ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে ভেতর থেকে ডোর লক করে দেয়।

মিহি বেডের উপর উঠে দেয়ালের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে যায়। বেচারি ভয়ে আতঙ্কে কুঁকড়ে গেছে।
শেহজাদের ফর্সা মুখ লাল টকটকে হয়ে গেছে।
মিহির ফোন টা জোরে বেডের উপর ছুঁড়ে ধমক দিয়ে বলে,

“নিচে নাম।”

মিহি কেঁদে দিয়ে বলে,

“ভুল হয়ে গেছে ভাইয়া আর জীবনেও এমন করবো না। আমি আজকেই ফেসবুক মেসেঞ্জার সব ডিলিট করে দিব। এবারের মতন ছেড়ে দাও আর জীবনেও এমন ভুল হবে না।”

“তোকে নিচে নামতে বলেছি নিচে নাম।”

“আর জীবনেও এমন ভুল হবে না।”

“তুই নিচে নামবি না তাইনা?”

শেহজাদ নিজেই বেডের উপর উঠে আসে।
মিহি উপায় অন্ত না দেখে শেহজাদের দুই পা নিজের চার হাত পা দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে পায়ের উপর বসে পড়ে। শেহজাদের পায়ের সাথে মাথা ঠেকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে এক নাগাড়ে বলতে থাকে,

“ভাইয়া গো ভুল হয়ে গেছে আর জীবনেও এমন ভুল হবে না। তুমি মা’ই’রো না আমাকে, ভাইয়া গো তোমার যেই হাত, এক চড় খাইলেই আমি শেষ। আব্বু আম্মু আর বাড়ির কাউকেই কিছু বইলো না গো ভাইয়া। আমি আজকের পর থেকে আর ফোনই চালাব না। ও ভাইয়া গো এবারের মতন শুধু মাফ করে দাও।”

শেহজাদ মিহি কে টেনে সরানোর চেষ্টা করে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,

“পা ছাড় বলছি।”

“ভুল হয়ে গেছে মাফ করে দাও।”

রাগে ক্ষোভে মিহির চুল গুলো মুঠো করে ধরে টেনে দাঁড় করানোর চেষ্টা করে বলে,

“তুই ফেক আইডি খুলে অন্য ছেলের সাথে কেনো কথা বলিস? তোকে এত বড় সাহস কে দিয়েছে? ফোন হাতে পেয়ে নিজেকে কি মনে করেছিস? কত জন ছেলের সাথে এমন করেছিস বল। কয়জন ছেলের সাথে কথা বলিস বল নয়তো আজকে তোকে আমি মে’রেই ফেলব।”

মিহি শেহজাদের পা জড়িয়ে ধরে রেখেই কেঁদে কেঁদে বলে,

“বিশ্বাস করো ভাইয়া তোমার সাথে ছাড়া আর কারো সাথে কথা বলি না, তুমি আমার ফোন চেক করে দেখতে পারো। আমি তো জানতাম না ওই টা তুমি। জানলে জীবনেও এমন কিছু হতো না। ভাইয়া আমি ব্যাথা পাচ্ছি ছাড়ো।”

চুল গুলো ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায় শেহজাদ।
রাগে ওর পুরো শরীর কাপছে। কি হলো এটা? যাকে এত কাল নিজের ছোট বোন ভেবে আসলো তার সাথেই কিনা এত গুলো দিন ধরে প্রেমালাপ করলো। ভাগ্য ভালো চাচাতো বোন ছিল নিজের বোন না।
আরেক টা কথা মনে হতেই প্রচণ্ড রাগে ক্ষোভে আবার মিহির চুল গুলো মুঠো করে ধরে টেনে সরানোর চেষ্টা করে বলে,

“ছাড় আমাকে, দূরে সর আমার কাছ থেকে। অসভ্য মেয়ে একজনের বাগদত্তা হয়ে আরেক জনের সাথে দিনের পর দিন কিভাবে প্রেমালাপ করলি তুই?”

এতক্ষণে এসে মুখ তুলে তাকায় মিহি। ফর্সা মুখ টা লাল টকটকে হয়ে গেছে। কাদতে কাদতে বলে,

“কি বলছো এসব? কে কার বাগদত্তা?”

“আমি বাড়িতে কিসের জন্য এসেছি?”

“কিসের জন্য?”

“বাড়ির কেউ কিছু বলেনি তোকে এখনো?”

“কি বলবে?”

“দুদিন পর তোর বিয়ে, তোকে বিয়ে দেওয়ার জন্যই আমি এখন বাড়িতে এসেছি।”

“আমার বিয়ে? ক কবে? কা কার সাথে?”

“শুক্র বারে তোর বিয়ে শুভর সাথে। তোর বিয়ের জন্যই এখন বাড়িতে এসেছি নয়তো এখন আমি বাড়িতে আসতাম না।”

চলবে……….