#নীল_সাঁঝের_উজান
#পর্বঃ৩১
#লেখনীতে_তানিয়া_রহমান
” এই কে আপনি? বাচ্চাকে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন? ছেলেধরা হয়ে দিনে দুপুরে বাড়ি থেকে বাচ্চা চু’রি করে নিয়ে যাচ্ছেন? আল্লাহগো কি দিন কাল পরছে ? ছাড়ুন বাচ্চাকে ছাড়ুন। আমি এখনই ৯৯৯ এ কল করতেছি। আর এভাবে বাচ্চাকে নিয়ে যাচ্ছে কেউ দেখেনি কেনো? সাঁঝ, আংকেল এবং আন্টি তারা কোথায় গেছে? বাড়ির কেয়ারটেকার চাচাই বা কোথায়? চাচা? চাচা? সাঁঝকে কল দিতে হবে”।
মিলির চিৎকারে কানে তালা লেগে যাওয়ার উপক্রম রায়হানের। সেই কখন থেকে আবোল তাবোল বকে যাচ্ছে একনাগাড়ে। সে নিহিন আর নিহা কে নিয়ে বেড়িয়েছে দোকানে যাবে বলে। চকলেট আইসক্রিম কেনার উদ্দেশ্যে। কোথায় থেকে মেয়েটা এসে বাড়ির গেইটে চিৎকার করছে। আর কি সব ছেলে-ধরা বলতেছে। ইতিমধ্যে আশেপাশের বাসার মানুষ বের হয়ে আসছে। রায়হান যথেষ্ট রেগে আছে তবুও সংযত হয়ে বললো
” এই যে ম্যাডাম কে আপনি? কোথায় থেকে আসছেন? আর কি সব যা তা বলে যাচ্ছেন তখন থেকে। আমি আমার বাচ্চাদের নিয়ে বের হয়েছি। আমাকে দেখে কি ছেলে’ধরা মনে হচ্ছে আপনার”?
মিলি তেঁতে গিয়ে বললো
” এখন কাপড় চোপড় দেখে কাউকে বুঝার উপায় নেই সে ভালো না খারাপ। বাড়ির ভেতরেও খারাপ মানুষের বাস এখন। সূচঁ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বের হয়। বললেই হলো আপনি ওদের বাবা? বাচ্চাদের বাবা দেশেই থাকেন না। সেতো বিদেশে থাকে”।
রায়হান স্থির হয়ে বললো
” বাবা কি বিদেশ থেকে বাচ্চাদের কাছে আসতে পারে না? আপনি কি বাচ্চাদের বাবাকে দেখেছেন এর আগে কখনো?
মিলি এবার থতমত খায়। আসলেইতো সে তো বাচ্চাদের বাবাকে দেখেনি। সাঁঝের সাথে পরিচয় হওয়ারও আগে সোমা আপুর বিয়ে হয়েছিলো। তাহলে লোকটা কি সত্যি বলছে? মিলিকে চুপ করে থাকতে দেখে রায়হান বললো
” কি ব্যাপার ম্যাডাম চুপ করে আছেন কেন এখন? বাচ্চাদের বাবাকে এর আগে দেখেছেন আপনি?
মিলি ইতঃস্তত করে বলে
” না আগে দেখিনি কোনোদিন। সাঁঝের সাথে পরিচয় হওয়ার আগেও বড় আপুর বিয়ে হয়েছিলো”।
রায়হান এবার তটস্থ হয়ে বললো
“তাহলে ম্যাডাম আপনি কিভাবে না জেনেই এরকম অস্থির হয়ে পরলেন যে আমি বাচ্চাদের বাবা নই”?
রায়হানের কথার মাঝেই সাঁঝ সহ তার বাবা মা সবাই নিচে নেমে এসেছে। কেয়ারটেকার ফোন দিয়ে তাদের আনিয়েছে। নিচে হুলুস্থুল কান্ড বেধেঁ গেছে। বিল্ডিং এর অন্যান্যরাও জড় হয়েছে। সাঁঝ ভীড় ঠেলে সামনে এসে বললো
” ভাইয়া কি হয়েছে? আপনিতো বাচ্চাদের নিয়ে দোকানে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করে কি হয়েছে?
ভাইয়া শব্দটা শুনে মিলি তব্দা খেয়ে গেলো। তার মানে উনি পরিচিত সাঁঝদের। মিলি নিজেই নিজেকে গালমন্দ করতে শুরু করলো কি ধরনের খিচুড়ি পাকিয়ে বসে আছে সে। কি লজ্জার ব্যাপার। না জেনে না বুঝে সে কিনা একজন মানুষকে ছেলে ধরা বানিয়ে দিয়েছে। মিলি শুকনো ঢোক গিলে বললো
“ভাইয়া মানে উনি?
সাঁঝের নজর এবার মিলির দিকে যায়। অনেকদিন পর মিলিকে দেখছে সে। তাওতো প্রায় দুই মাস পর। মেয়েটা শুকিয়ে গেছে অনেকটা আগের থেকে। চোখের নিচে কালি পড়েছে একটু। মনে হয় রাতে ঘুমের অসুবিধা হয়। ওরে দেখলেই বুক থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। মাঝে মাঝে দুনিয়ায় কত অদ্ভুত রকমের নিদারুণ সাজা ভোগ করতে হয় বিনা কারণে। মিলিকে দেখে সাঁঝ বলে
” মিলি তুই কখন এসেছিস? আর হ্যাঁ উনি রায়হান ভাইয়া। সোমা আপুর বর। নিহান নিহির বাবা। ভাইয়া বাচ্চাদের নিয়ে একটু বেড়িয়েছিলো”।
মিলি যেন আরেকদফা চমকায়। এতোক্ষন যাকে উল্টো পালটা বলে কথা শোনাচ্ছিলো সেই বাচ্চার বাবা। ইশ!কত বড় লজ্জার কথা। না জেনেই বাচ্চার বাবাদের ছেলে ধরা বলেছে। মিলির মনে হচ্ছে মাটি দুইভাগ হয়ে যাক আর সে নিচে চলে গেলে বাঁচে। নিহান সাঁঝের হাত ধরে বললো
” সাঁঝ আম্মু আন্টি বাবাকে ছেলে ধরা বলেছে। আন্টি মনে করেছে বাবা আমাদের নিয়ে কোথাও পালিয়ে যাচ্ছে। সেতো বাবাকে কখনো দেখেনি তাই চিনতে পারেনি। এই নিয়েই ঝামেলা হয়েছে”।
নিহানের কথা শুনে সাঁঝ মিলির দিকে তাকায়। মিলি অসহায় চোখে সাঁঝের দিকে তাকায়। তার চোখে মুখে লজ্জা অনুতাপ স্পষ্ট। রায়হানের চোখে সেটা ধরা পড়ে। রায়হান মিলিকে এরকম পরিস্থিতিতে দেখে বিষয়টা সামলে নিতে বলে
“আসলে হয়েছে কি উনিতো আগে আমাকে দেখেনি। আমিও দেখিনি। তাই কেউ কাউকে চিনি না। উনি বুঝতে পারেননি। এখন সব স্পষ্ট হয়ে গেছে। আমার মনে হয় এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির জন্য উনি নিজেও বিব্রতনোধ করছেন। আমরা বিষয়টা এখানেই শেষ করি। আপনাদের এতোক্ষন সময় নষ্ট হওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত। সাঁঝ উনি মনে হয় তোমার পরিচিত কেউ। উনাকে ভেতরে নিয়ে যাও। আমি বাচ্চাদের ঘুরিয়ে আনি “।
সাঁঝ মিলির হাত ধরে বলে
” চল বাসায় যাই। এই নিয়ে মন খারাপ করিস না। মানুষেরই ভুল হয় এটাই স্বাভাবিক। বাসায় গিয়ে কথা বলি আয়”।
সাঁঝ মিলিকে হাত ধরে সাথে নিয়ে যেতে থাকে। যাওয়ার সময় লজ্জাভরা মুখে রায়হানের দিকে এক পলক তাকায়। ভীষণ অনুশোচনা হচ্ছে তার। ক্ষমা চাওয়া উচিত। তার জন্য একটা মানুষকে অহেতুক অপদস্থ হতে হলো। কিন্তু কিভাবে চাইবে ক্ষমা?রায়হানও মিলির দিকে তাকাতেই দুজনের চোখাচোখি হয়ে যায়। রায়হান অবনত এই মুখ দেখে বুঝতে পারে মেয়েটা ভেতরে ভেতরে অনুশোচনায় ভুগছে। রায়হান বাচ্চাদের নিয়ে বাহিরে চলে যায়।
বাসায় আসার পর মিলি ব্যাগটা সোফায় রেখে ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ে। মাথায় হাত দিয়ে মাথা নিচু করে আছে সে। মিলিকে এরকম বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে সাঁঝ বলে
“কিরে কি হয়েছে? শরীর খারাপ করছে নাকি তোর? দাড়াঁ পানি নিয়ে আসছি”।
মিলি সাঁঝের হাত টেনে ধরে বলে
” এইটা আমি নিচে কি করে আসলাম? ছিঃ ছিঃ তোদের বাড়ির জামাইকে আমি এইভাবে উল্টো পালটা বললাম। তাও এতোগুলো মানুষের সামনে। আমি তাকে একদম সোজাসাপটা ছেলে ধরা বলে অভিযোগ তুলেছি। কেমন বিচ্ছিরি ব্যাপার হয়ে গেলো বলতো। আল্লাহ জানে উনি কি মনে করলেন আমাকে। আমি কত বড় বোকামো করলাম। পাগলের মতো কাজ করেছি আমি। আমার খুবই খারাপ লাগছে”।
সাঁঝ মিলির কাছে বসে বললো
“তুই এখনো এইটা নিয়ে চিন্তা করছিস? তোর জায়গায় আমি থাকলে আমিও এমন করতাম। হঠাৎ করে কেউ বাচ্চাদের নিয়ে বের হলে চিন্তা থেকে এমন প্রতিক্রিয়া করা স্বাভাবিক। আর তুইতো ভাইয়াকে আগে দেখিসনি তাই এই ভুল হয়েছে। চিনলেতো এই ভুল করতি না। ভাইয়া এসেছে পনেরো দিন হয়েই আসলো। দেশে আসার পর এখানে বাচ্চাদের সাথেই থাকছে। একেবারে চলে এসেছে। যদিও কাউকে না জানিয়ে এসেছে। তার বাসায় এখনো কেউ জানেনা সে এখানে। বাড়ির সবার উপর রাগ করে একেবারে দেশে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে। সবই হলো। সেইতো ভাইয়া দেশে আসলো। সে বুঝলো তার পরিবার কতটা স্বার্থপর। আমার বোনের সাথে কত অন্যায় করেছে। যদিও ভাইয়া আগেও বুঝতো এসব কিন্তু পরিবারের সাথে পেরে উঠেনি। এখন সবই ঠিক হচ্ছে কিন্তু মাঝখান থেকে আমার বোনটাই আর আমাদের সাথে নেই। এক দিক দিয়ে ভালো হয়েছে বেচেঁ থাকলে আরও কষ্ট পেতো সে। এখন যখন দুনিয়াতে নেই সবাই তার না থাকার কষ্টটা বেশ ভালো করে বুঝতে পারছি। এই জন্যই হয়তো বলে মানুষ চলে গেলে তার দাম বুঝতে পারে। আমরাও তাই পাচ্ছি”।
সাঁঝ লম্বা একটা শ্বাস টানে। মিলি অপলক তাকিয়ে আছে বান্ধবীর দিকে। কত হাহাকার নিয়ে সে কথাগুলো বললো। তার সাথেওতো কম কিছু হলো না। সেওতো একটা সুস্থ জীবন চেয়েছিলো কিন্তু পেলো না। গত দুই মাস ধরে তার উপর কত ঝড় ঝাপটা গেছে। শরীর এবং মন দুটোর অবস্থাই কাহিল। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে এখন সে। ঘর থেকে বের হতে মন চায় না তার। আজকে অনেকদিন পর একটু বাইরে বেড়িয়েছে সে। মিলির বুকটা হাহাকার করে উঠলো। চোখে পানি এসে গেছে তার। কান্না আটকাতে না পেরে ফুপিঁয়ে কেদেঁ উঠে বললো
” দুনিয়ার মানুষ এমন কোন দোস্ত। বিনা কারণে কত অবলীলায় মানুষকে কষ্ট দেয় অথচ তার জন্য নিজের ভেতর সামান্যতম অনুশোচনাও হয় না। লজ্জা অনুতাপ এবং অনুশোচনা মানুষের হয়তো কমে গেছে তাই হয়তো হয় না”।
সাঁঝ মিলির চোখ মুছে দিয়ে বলে
” চিন্তা করিস না দোস্ত। দুনিয়ার নিয়ম এমনই। এখানে মানুষ জানেই না কখন কিভাবে কাকে কষ্ট দিয়ে ফেলে। তাদের ভেতর সেই অনুধাবনটুকুও নাই। তুই এতোদিন পর আসলি তাও এই রকম বিধ্বস্ত অবস্থায়। ওদিকে কি অবস্থা। কেস কতদূর কি হলো”?
মিলি স্থির হয়ে শান্তভাবে বললো
” ওরা আপোষ করেছে। আইনি জটিলতায় যায়নি। সব দেনা পাওনা মিটিয়েছে। ক্ষতিপূরন হিসেবে আরও দ্বিগুণ টাকা দিয়েছে। টাকা দিয়েই সব মিটমাট করেছে। শুনেছি আমার প্রাক্তন স্বামীকে নাকি এখন আর সেই মামাতো বোন বিয়ে করবে না। অনেক নাকি তামাশা হয়েছে। লোক হাসানো হয়েছে। আমার শ্বশুর ছেলেকে বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি। সে নাকি এখন এখানে সেখানে কার কার বাড়ি ঘুরে ফিরে থাকে”।
সাঁঝ বললো
” যার জন্য তোর ঘর সংসার ভাঙলো সেই বিয়ে করলো না। তাহলে মাঝখান থেকে তোর সংসার নষ্ট করলো কেনো? এর জবাব কে দিবে?
চলবে………
#নীল_সাঁঝের_উজান
#পর্বঃ৩২
#লেখনীতে_তানিয়া_রহমান
” রোগীর বিপি অনেক কম। উনি ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করেননা। চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল দেখে মনে হচ্ছে ঘুমও অনিয়মিত। হয়তো এমন কিছু হয়েছে যার কারণে উনি অনেক দুশ্চিন্তা করেন । এজন্য মানসিক ভাবে উনি খুব ভেঙে পরেছেন।এরকম খাওয়া এবং ঘুমের অনিয়ম হলে খুব বড় কিছু হওয়ার আশংকা আছে। মানসিকভাবে স্থির হওয়া প্রয়োজন উনার। আর একটা কথা রোগী কিন্তু নিজের ক্ষ”তি করার মতো চিন্তা ভাবনাও করেছেন। যদিও সাহস করে উঠতে পারেননি এবং এইটাও একটা চিন্তার ব্যাপার। এই সময় উনার যে মনের অবস্থা তাতে করে একটা সুস্থ পরিবেশ প্রয়োজন যাতে উনি একটু ভালো থাকতে পারেন। উনার মন মেজাজ খুব অস্থিতিশীল অবস্থায় আছে। উনার সাথে সারাক্ষণ বন্ধুর মতো কারো থাকা দরকার। একা থাকলেই উনার জন্য বিষয়টা আরও মানসিক চাপ বৃদ্ধি করছে”।
এতোক্ষন বিচক্ষনভাবে কথাগুলো বলছিলেন ডাক্তার। মিলিকে চেকআপ করে উনি এই কথাগুলো বলছিলেন। হঠাৎ করে মিলি অজ্ঞান হয়ে যাওয়ায় সাঁঝ দিশেহারা হয়ে যায়। বান্ধবীকে কিভাবে সামলাবে কোথায় নিয়ে যাবে এই দোলাচলে সে যখন অস্থির হয়ে উঠেছিলো তখন রায়হান সামলে নেয় ব্যাপারটা।
কিছুক্ষণ আগে,
” তোর সাথে যে এতোবড় অন্যায় করলো তাদের ছেলে তার কি জবাব দিয়েছে তারা? দিনশেষেতো ঠিকই ছেলেকে ছাড়িয়ে নিয়েছে আপোষ করে। এগুলো কয়েকদিন নাটক করবে। ছেলেকে বাড়ি উঠতে দিবে না। ছেলের সাথে ঠিকমতো কথা বলবে না। তারপর ঠিকই এক সময় ছেলের জন্য দরদ উথলে উঠে ছেলেকে ঘরে তুলে আদর করবে। মাঝখান থেকে শুধু তোর জীবন এলোমেলো করে ফেললো। তোর জীবনের কি কোন দাম নাই? তোর সময়ের মুল্য নেই? মেয়েদের জীবন নিয়ে এসব মানুষদের কারো কোন মাথাব্যথা হয়না শুধু যার জীবন এরকম ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় সে বুঝে কি হচ্ছে”।
মিলি খুব আক্ষেপ নিয়ে বলে,
“আদালতে যখন শুনানি চলছিলো তখন আমার শ্বাশুড়ি আমাকে কি বলেছিলো জানিস? শুনলে তোর মনে হবে নারীরাই নারীদের প্রতি সবচেয়ে বেশি অসহনশীল। দুনিয়াতে যত খারাপ কিছু নারীদের সাথে হয় তার অন্যতম প্রধান কারন একজন নারীর প্রতি আরেক নারীর করা অন্যায়। কিভাবে একজন মানুষ সে নিজেও একজন স্ত্রী তবুও নিজের সন্তানের দোষ ঢাকতে বলে মেয়ে মানুষ পুরুষ মানুষকে নিজের রুপ দিয়ে সবই ভুলতে সাহায্য করতে পারে। এইটা তোমার নিজের ব্যর্থতা যে তুমি আমার ছেলেকে কোনদিক দিয়েই খুশি রাখতে পারো নাই। এজন্যই সে অন্য মেয়ের জন্য পাগল হয়ে গেছে। তুমিই ব্যর্থ”।
সাঁঝ এসব কথা শুনে অবাক হয় না। সে নিজের বেলাতেও দেখেছে এসব কিছু। এই উল্টো নিয়মই মেয়েদের জন্য তাদের জন্য বেধেঁ দেওয়া। যত যা কিছু হোকনা কেন দোষ ঘরের বউয়ের। সাঁঝ বলে,
” এতোই যখন প্রেমিকার জন্য উন্মাদ ছিলো তাহলে তোর সাথে বিয়ে দিয়েছিলো কেনো? ছেলের কাকে পছন্দ না অপছন্দ সেসব বুঝে বিয়ে দিলেই পারতো”।
মিলি অসহায়ের মতো বলে
“থাক বাদ দে দোস্ত। আমার কপালে এসব দুর্ভোগ ছিলো তাই হয়েছে। যা হবেই তা কি কোনভাবে এড়ানো যায়? সবই আমার কপাল। অবশ্য এইসব একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। এসব দুমুখো মানুষগুলোকে চেনা হয়েছে। যারা বাহিরে এক রুপ ধারণ করে আবার ভেতরে আরেক। এসব মানুষ খুবই বিষাক্ত ধরনের। রক্তের মতো জীবনের সাথে মিশে জীবনটা শেষ করে দেয়”।
সাঁঝ মিলির কাধেঁ হাত রেখে বলে
” মন খারাপ করবিনা এসব কথা ভেবে। মনে সাহস রাখবি সবসময়। ভালো খারাপ দুটো মিলিয়েই মানুষের জীবন। আজকে তোর জীবনে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে দেখবি কাল এই জন্যই তুই বুঝতে পারবি যা হয়েছে ভালোর জন্যই হয়েছে। তাই আমাদের এসবকিছু জীবনেরই একটা অংশ বলে মেনে নিয়ে সামনে আগাইতে হবে। তুই বস আমি তোর জন্য কিছু নাস্তা বানিয়ে আনি”।
মিলি হ্যাঁ সুচক মাথা নাড়িয়ে সোফায় উঠে বসে গা এলিয়ে দেয়। ক্লান্তিতে চোখ বুজে আসে তার। কত দিন তার ঠিকমতো ঘুম হয় না। খাবার নিয়ে অনিয়ম করছে সে। আজকেও সে না খেয়ে বাড়ি থেকে উদ্দেশ্যহীন ভাবে বেড়িয়ে এসেছে। এমনটাই হচ্ছে। হঠাৎ করে মনে হয়েছে সাঁঝের কাছে গিয়ে কিছুক্ষণ সময় থাকলে দুটো মনের কথা বলে হালকা হওয়া যাবে। মাথাটা ধরেছে তার খুব আজকে। এরই মধ্য ডোর বেল বাজলো। সাঁঝ রান্নাঘরে আছে। তাই সে নিজেই গেলো দরজা খুলতে। দরজা খুলেই সে দেখলো রায়হান বাচ্চা দুটোকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মিলি যা একটু বিষয়টা ভুলতে নিয়েছিলো রায়হানকে দেখে আবার মনে পড়ে গেলো তার। রায়হান মিলিকে এরকম থ মেরে থাকতে দেখে বললো
” কি ম্যাডাম এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না যে আমি ছেলে ধরা নই বাচ্চাদের বাবা। কি ঘরে ঢুকতে দেবেন না নাকি? বাচ্চাদের নিয়ে চলে যাবো? সাঁঝ কোথায়? নিহা সাঁঝকে অনেকক্ষন না দেখার জন্য কাদঁছে। ওদের এখানে রেখে আমি একটা কাজে বের হবো”।
মিলি লজ্জায় মাথা নিচুঁ করে। তখনকার বোকামির কথা ভেবে আবারও তার নিজের উপর রাগ হচ্ছে। এতো বড় বোকামি করে ফেলেছে সে। মিলি অনুশোচনা থেকে বললো
” না না বাচ্চাদের নিয়ে চলে যাবেন কেনো? ছি!ছি! এসব কথা বলে আমাকে আর লজ্জা দিয়েন না। আমি খুবই অনুতপ্ত। না বুঝে আপনাকে তখন কত অপদস্থ হতে হলো। আমারই ভুল পুরোটাই। আগে বুঝে নিতে হতো। আসলে বাচ্চারা সাঁঝ আর আংকেল আন্টি ছাড়া কারো সাথে বের হয়না তাই আমি এরকমটা ভেবেছিলাম। আমাকে মাফ করবেন দয়া করে”।
রায়হান এক নজর ভালো করে তাকালো মিলির দিকে। সোমার সাথে তার বিয়ে হয়েছিলো পারিবারিক ভাবে। দেখতে এসেই হঠাৎ করে বিয়ে। বিয়ের আগে কথাবার্তা বলার তেমন সুযোগ হয়ে উঠেনি তাদের। বিয়ের পর রায়হান সোমার সহজ সরলতার গুনে বেশি খুশি হয়েছিলো। এটাই ছিলো সবচেয়ে খারাপ কথা। মেয়েটা এতো চাপা স্বভাবের ছিলো যে নিজের খারাপ লাগা রাগ অভিমান বুঝতে দিতো না। সোমাকে সে বিয়ের পর থেকেই ভালোবেসেছিলো খুব। সোমাও নিজের সবটা উজার করে দিয়েছিলো রায়হান আর তার সংসারের ভালো চেয়ে। দিনশেষে মেয়েটা এক বুক হাহাকার নিয়ে চলে গেছে। রায়হানের মাঝে মাঝে নিজেকে খুব বেশিই ছোট মনে হয়। সোমার প্রতি সে যদি আরেকটু যত্নশীল হতো তাহলে মেয়েটা একটা সুস্থ সংসার পেতো। এগুলো কথা মনে হলে এখন বুক চিড়ে চাপা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া আর কিছু আসে না। মেয়েটা দেখতে সোমার মতো না হলেও সোমার গড়নের। গোলগাল ফর্সা মুখ। মাঝারি গড়নের কায়া। চেহারায় একটা লাবন্য আছে তবে তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে ভালো নেই। চোখ মুখ শুকনো। মনে হয় রাতে ঠিকমতো ঘুমায়না ঠিকমতো। রায়হানকে চুপ করে থাকতে দেখে মিলি বললো
” কি ভাবছেন? ভাববেন না হেয়ালি করে মিথ্যা কথা বলছি। আমি সত্যিই অনুতপ্ত “।
রায়হান বললো
” আমি বিশ্বাস করেছি আপনি ইচ্ছা করে এটা করেননি। আপনার জায়গায় আমি থাকলেও এমন কিছু হয়তো করতাম। মানুষ মাত্রই ভুল করে। শুধরে নিতে পারলে তার মতো ভালো কিছু আর হয় না। তবে অনেকেই এই বিষয় বুঝতে পারে না বলেই তাদের মধ্য ভালো মন্দের অনুধাবন হয় না”।
মিলি রায়হানের কথায় অনেক মুগ্ধ হয়। সে বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলো মানুষের মধ্যে ভালো মন্দের বাছ বিচার উঠে গেছে। সবাই তার প্রাক্তন স্বামী এবং তার পরিবারের মতো। তার সাথে এতো বড় অন্যায় করেও কত অবলীলায় তার উপর সব দায় দিয়ে দিয়েছে। মিলিকে চুপ করে থাকতে দেখে রায়হান বললো
” সাঁঝ কোথায়”?
মিলি বললো
” রান্না ঘরে আছে। আমি ডেকে নিয়ে আসি”।
মিলি রান্নাঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই হঠাৎ করে মাথাটা ঘুরে উঠলো তার। সারাদিনের না খাওয়া ছিলো তার মতো। পেটের মধ্য কেমন গুলিয়ে উঠলো তার। মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পরে গেলো। ধুপ করে একটা জোরালো শব্দ হলো। রায়হান মাত্রই মেয়ের দিকে তাকিয়েছে কথা বলার জন্য। এর মধ্যই এমন অবস্থা। রায়হান দ্রুত মিলির কাছে যায়। মিলি একদম অচেতন হয়ে গেছে। রায়হান সাঁঝকে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো। সাঁঝ ডাকাডাকি শুনে বাহিরে এসে দেখে মিলি অজ্ঞান হয়ে পরে আছে। সাঁঝ অস্থির হয়ে বলে
” কি হয়েছে ওর? এরকম অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো কি করে? অবশ্য ওরে দেখার পর থেকেই মনে হচ্ছিলো ওর শরীরটা খারাপ। আর হবেই বা না কেন যা যাচ্ছে মেয়েটার উপর দিয়ে। কি করবো এখন?
রায়হান বলে
“তোমার পরিচিত কোন ডাক্তার থাকলে ফোন করে বাসায় আসতে বলো তাড়াতাড়ি”।
সাঁঝ তাদের পরিচিত একজন মহিলা ডাক্তারকে ফোন করে বাসায় আসতে বলে। ডাক্তার এসে জানায় মানসিক ভাবে মিলি ঠিক নেই যার প্রভাব তার শরীরেও ফেলেছে।
বর্তমান,
ডাক্তার বলে,
” আমি কিছু ওষুধ লিখে দিচ্ছি এগুলো নিয়মমতো খেতে হবে। তবে ওষুধের চেয়ে তার বেশি দরকার মনের সুস্থতা। এমন কিছু যা তাকে কষ্ট দিচ্ছে এগুলো থেকে তাকে দূরে রাখতে হবে “।
ডাক্তার চলে যাওয়ার পর রায়হান মিলির বিধ্বস্ত মুখের দিকে তাকায়। তার চোখ যায় মিলির হাতের দিকে। সেখানে ছোট বড় অনেক হালকা দাগ। মেয়েটা নিজের সাথে….. আর ভাবতে পারেনা রায়হান। কৌতুহল দমাতে না পেরে রায়হান বললো
” কি হয়েছিলো মিলির সাথে যার কারণে ওর আজকে এই অবস্থা”?
চলবে……..
#নীল_সাঁঝের_উজান
#পর্বঃ৩৩
#লেখনীতে_তানিয়া_রহমান
“এই বউ তুমি কিন্তু আমার দিকে ঠিকমতো খেয়াল করছো না। ইদানীং কেন জানি মনে হচ্ছে তুমি আমাকে কম ভালোবাসছো? তোমার এই কম কম যত্ন আর ভালোবাসাতে আমার ওজন কমে যাচ্ছে। এইটা কি ঠিক বলো”?
কিছুক্ষণ আগে,
উজান অফিস থেকে ফিরেছে অনেকক্ষন হচ্ছে। সেই যে সাঁঝ এক গ্লাস পানি হাতে দিয়ে রান্নাঘরে ঢুকেছে এখনো বের হওয়ার নাম নেই। উজান হাতমুখ ধুয়ে কাপড় পরিবর্তন করে এসেও দেখে সাঁঝ এখনো ঘরে আসেনি। রান্নাঘরেই আছে। অন্যদিন উজান আসার আগেই সব কাজ শেষ করে উজানের জন্য অপেক্ষা করে সাঁঝ। আজকে রান্না শেষ করতে দেরি হচ্ছে। সারাদিন অনেক ব্যস্ত ছিলো নাকি কাজে? উজান রান্নাঘরে যায়। সাঁঝ কোমড়ে আঁচল গুজেঁ ভাতের মার গলাচ্ছে। চুলটা খোপা করে উচুঁ করে বাধাঁ। বউয়ের উন্মুক্ত ঘাড় দেখে উজানের ভেতরে ভেতরে কেমন জানি বউ এর কাছ থেকে আদর নেওয়ার তীব্র ইচ্ছা হলো। যদিও তার বউ যথেষ্ট আদুরে। বউ কাছে থাকলেই তার সবসময়ই আদর আদর পায় কিন্তু এখন বেশি পাচ্ছে। সাঁঝ ভাতের মার গলিয়ে মাত্র পাতিলটা রাখতেই পেছন থেকে এক জোড়া হাত তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিলো। সাঁঁঝ হঠাৎ এই আদুরে আক্র”মন সামলাতে না পেরে চমকে উঠলো খুব। সারা গা মনে হলো যেন একটা তীব্র ঝাঁকুনি খেলো। উজান শান্ত স্থির হয়ে নিজের কাজ করছে। বউকে আদর করতে সে কোন কার্পণ্য করে না আবার বউয়ের কাছ থেকে আদর নিতেও ছাড় দেয় না। উজান এর স্পর্শ যখন ধীরে ধীরে গভীর হচ্ছে তখন সাঁঝ হুশে আসে। সাঁঝ বলে
” মিলি আসায় ওরে সময় দিতে গিয়ে রান্না করতে দেরি হয়ে গেছে। তার উপর আজকে ও হঠাৎ এখানে অসুস্থ হয়ে পরেছিলো। খাবার দেই।আগে খেয়ে নাও”।
উজান সাঁঝের কোমরে অবাধ্য হাতের বিচরণ করতে করতে নিজের দিকে ফেরায়। বউ এর গলায় এলোপাথাড়ি ভেজা আদর দিতে দিতে বলে
” আগে আমাকে শান্ত করো তারপর বাকি কথা হবে “।
সাঁঝ বলে
” খিদে পায়নি আজকে? অন্যদিনতো এসেই বলো খাবার দিতে”।
উজান এখন কোন কথার শোনার বা বুঝার ইচ্ছেতে নেই। খিদে পেয়েছে ঠিকই কিন্তু সেটা বউকে আদর করার। এই মেয়েটা তাকে কোনভাবেই শান্তি দিতে প্রস্তুত না৷ এমন এমন সব রুপ দেখাবে যে উজানের ভেতরে ঝড় বয়ে যায়। ঠিক যেমন আজকে পড়েছে কচু পাতা রংয়ের শাড়ি। এটাতে যে তাকে মারাত্মক লাগছে সে কি জানে। উজান ঝট করে বউকে পাজাকোলে করে তুলে নেয়। সাঁঝ কোনরকমে গলা জড়িয়ে ধরে বলে
” এই এই কি করে? এখন এসব করার সময়?
উজান তখন বলে
“আমার বউকে আমি যখন তখন আদর করতে পারি। এতে সময় অসময় আসছে কেন?
সাঁঝ আর কি বলবে। তার আর কিছুই বলার নাই। বললেও উজান আর কিছু শুনবে না। চুপচাপ স্বামীর কথা শোনাই তার কাছে শ্রেয় মনে হলো। মিলির জন্য তার মনটা খারাপ ছিলো। মেয়েটা বিনা কারণে এতো কষ্ট পাচ্ছে। নিজের কি হাল করেছে। কখন কি করে বসে তার ঠিক নেই। এই জন্যই কোন কাজ আজকে তার হাতে উঠছে না। বারবার মেয়েটার বিধ্বস্ত মুখটা ভেসে উঠছে। কেমন যেন অস্থির লাগছে। মেয়েদের সুখ শান্তি নিরাপত্তা আর আশ্রয় দুনিয়াতে আসলে কোন জায়গায়? অবুঝ হলেও দোষের বেশি বুঝদার হলেও কত কথা শুনতে হয়। বিনা কারনে দায় নিতে হয়। হঠাৎ করে সাঁঝ বুঝতে পারলো উজান তাকে তাদের ঘরে নিয়ে এসেছে। বিছানায় পিঠ ঠেকেছে তার। ওর বুকের উপর একদম মুখ বরাবর উজান মুখোমুখি হয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে। উজান চুপ করে আছে কিন্তু কোন প্রশ্ন করছে না। বউয়ের চোখে চোখ রেখে গভীরতা বুঝার চেষ্টা করছে। আজকে বউ অন্যমনস্ক তার। অন্যদিন উজান যখন আদর করে তার বউ এর আগ্রহ তার থেকেও বেশি গভীর হয় কিন্তু ব্যাপারটা তেমন নয়। বউয়ের মন আজকে একটু অন্যরকম। উজান সাঁঝের কপালে আসা ছোট ছোট চুল সরিয়ে দেয়। কপালে আর নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। এই বিষয়টা খুব মোহনীয় লাগে উজানের কাছে। উজান বউয়ের কপালে গভীরভাবে দীর্ঘ একটা চুমু দেয় তারপর বলে
” কি হয়েছে? আজকে আদরে আহ্লাদে এতো টান পড়ছে কেন?
সাঁঝের এই কথা শুনে মনটা কেমন আরও বেশি ভার হয়ে যায়। আসলেইতো তাই। অন্যদিন উজান এর কিছু বলা বা করার আগেই সাঁঝ নিজের আদর বুঝে নেয়। আজকে তার এসবে মন বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। সাঁঝ উজানের মুখটা দুহাতের আজলায় নেয়। অসহায়ের সুরে বলে
“আজকে মনটা কেমন যেন অস্থির হয়ে আছে। মিলি এসেছিলো। ও ভালো নেই। আমার ওমন সহজ সরল বান্ধবীর জীবন কি থেকে কি হয়ে গেলো চোখের পলকে কিছুই বুঝতে পারলাম না। মানুষের জীবন এতো বিচিত্র কেন উজান”?
উজান বউয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে দিতে দিতে বললো
” মানুষের জীবনে খারাপ সময়টা আসে তার ভালোর জন্যই। এই সময়গুলো মানুষকে আরও বুঝিয়ে দিয়ে যায় যাদের আমরা আপন ভেবে জীবনে পাশে চাই, যাদের আমরা নিজের প্রিয়জন আপনজন এবং প্রয়োজন মনে করি তারা আসলে আমাদেরকে কতটা ভালোবাসে নিজেদের জীবনে গুরুত্ব দেয়। তারা আমাদের কিভাবে দেখে। আমরাতো প্রিয়জনের কাছে বেশি কিছুতো চাইনা শুধু ভালোবাসা আর নিরাপদ আশ্রয়। যারা আমাদের জীবনে ক্ষনিকের জন্য আসে তাদের দ্বারা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আগে উপরওয়ালা সাময়িক বিপদ আপদ বিচ্ছেদ দিয়ে বুঝিয়ে দেন যে সময় হয়ে গেছে তাদের সাথে বিচ্ছেদ ঘটানোর”।
সাঁঝ মন্ত্রমুগ্ধের মতো স্বামীর কথা শুনলো। মাঝে মাঝে এইসব ভেবেই সাঁঝের খুব ভালো লাগে যে উজানের মতো মানুষকে তার জীবনে স্বামী হিসেবে পেয়েছে। সাঁঝ নিজেকে চেনে সেতো এতো বুঝদার না। এতো সহনশীল বা বিচক্ষণ না। তার স্বভাব হুটহাট করে কিছু করে ফেলার মতো। মনে যা আসে তাই বলে ফেলে। উজান এর কাছ থেকে সে শিখছে কিভাবে জীবনে ছোট বড় বিষয় বুঝে কথা বলতে হয়। পরিস্থিতির সাথে সমঝোতা করতে হয়। এক জীবনে সব কিছু পেতে হবে এটা জরুরী না আবার কিছু না পাওয়ার কষ্টটাও ভোলার মতো না। এটাই নিয়ম। এভাবেই মানুষকে নিজের জীবনে এগিয়ে যেতে হবে। সাঁঝের মনের ভারটা মুহুর্তেই যেন কমে গেলো মনে হচ্ছে। সে উজানের দিকে চেয়ে আছে। বউকে চুপ করে থাকতে দেখে সে বুঝে নিলো বউ এখন চাইছে না এমন কিছু। উজান উঠতে নিলেই সাঁঝ তার হাত হ্যাচঁকা টান দিয়ে আবার নিজের বুকের উপরে ফেলে। উজান বলে
” কি হয়েছে? কিছু বলবা?
সাঁঝ বলে
“হুম”
উজান বলে,
“কি বলতে চাও”?
সাঁঝ বলে,
” উঠে পড়লে যে? আদরতো করলে না”।
উজান হেসে সাঁঝের ফোলা গাল টিপে ধরে। হঠাৎ করে মেয়েটা যেন আরও বেশি সুন্দর হয়ে যাচ্ছে। চেহারাতে আলাদা একটা জেল্লা এসেছে। আগের চেয়ে আরও বেশি মায়াবী হয়ে গেছে। বউয়ের দিকে চেয়ে বলে
” তুমি চাও সেটা”?
সাঁঝ চুপ করে আছে। মাঝে মাঝে এমন এমন কথা বলে নিজের বউকে লজ্জায় ফেলে দেয় তার উদাহরণ হচ্ছে তার স্বামী। সাঁঝ কোন কথা বললো না। উজানের মাথাটা নিজের বুকের মধ্য চেপে ধরে বললো
” সব কিছু কি বলেই বুঝাতে হবে? তুমিতো অবুঝ নও”।
উজান হেসে বললো
” কে বলেছে আমি অবুঝ নই। আমি হচ্ছি দুনিয়ার সবচেয়ে বোকা পুরুষ যে বউয়ের আদর বুঝে নেওয়ার জন্য অবুঝ হয়ে যাই “।
সাঁঝ মিষ্টি করে শব্দ করে হেসে উঠে। এই হাসি উজানকে আরও বেশি উতলা করে ফেলে। উজান বউয়ের অধরে নিজের অধর মিশিয়ে ভেজা আদরের উষ্ণতা নেয়। সাঁঝ নিজেও সেই উষ্ণতা অনুভব করা বাড়িয়ে দেয়। এখন আর কোন কিছু নিয়ে ভেবে এই মুহুর্তটাকে নষ্ট করতে মন চাচ্ছে না আর। উজান এর স্পর্শ সাঁঝের কায়ার প্রতিটা ভাঁজে এক অন্যরকম অনুভূতির জন্ম দিচ্ছে। সাঁজ নিজেও এখন তটস্থ হলো নিজের প্রাপ্য আদর বুঝে নেওয়ার জন্য।
অন্যদিকে,
রায়হান বাহির থেকে আসার পর সেও মিলির কথা ভেবে বেশ বিষন্ন। মিলির সাথে যা হয়েছে তা সোমার সাথে তার পরিবার যা করতো সেই দুঃখের মুদ্রার আরেক পিঠ। রায়হান ভাবছে আমরা মানুষ সবসময়ই কি এমন অকৃতজ্ঞই রয়ে যাবো? আমরা ভালো মানুষদের মূল্যায়ন করতে জানিনা। তাদের আগলে রাখতে জানিনা। ভালোবেসে ধরে রাখতে চাইনা। যখন সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাই তখন তাদের না থাকাটা আমাদের পোড়ায়। রায়হান শুনেছে সাঁঝ এর কাছে মিলির সাথে কি হয়েছে। সব শোনার পর মনে হয়েছে মানুষ এতো অবিবেচক আর নির্বোধ কি করে হয়? হঠাৎ করে তার মাথায় একটা চিন্তা খেলে যায়। একটা নাম্বারে ডায়াল করে ফোন রিসিভ হতেই বলে
” কখন ফ্রি আছো? আমার একটা বিষয় নিয়ে কিছু জানা প্রয়োজন। কাল সময় হবে”?
চলবে………