#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_০৯
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
সুহার জ্ঞান ফিরেছে ঠিক তবে সে এখনো শারিরীক ভাবে অতোটা সুস্থ নয়। ফলস্বরূপ স্বচ্ছকে প্রথমে দেখা করতে না দিতে চাইলেও স্বচ্ছর জেদের কাছে হার মানলেন ডক্টর। বললেন জাস্ট কয়েক মিনিটের জন্যই দেখা করে আসতে। স্বচ্ছ সে সুযোগ হাতছাড়া করল না। গিয়েই সর্বপ্রথম সুহার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে অভিযোগ শুধাতে লাগল নিজের মতো করে,
“ নিষ্ঠুর! তুমি নিষ্ঠুর সুহাসিনী। আমায় ওভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়ে তুমি একটাবারও আমার খোঁজ করলে না অব্দি?দিব্যি এতক্ষন চোখ বুঝে ছিলে? ”
সুহা কথা বলতে পারল না। শরীর বড্ড ক্লান্ত যেন তার। তবে চোখে হাসল স্বচ্ছর কথা শুনে। নার্সদের কথায় শুনেছে তার মেয়েটা তার মতোই দেখতে হয়েছে। যদিও অসময়ে জম্মানোতে বাচ্চাটাও অল্প দুর্বল তবে মেয়েটা তার বড্ড আদুরে। এসব শুনেই সুহার মন ফুরফুরে লাগছিল। নিজেে মেয়েকে ছুঁয়ে দেখার, একটাবার চোখ ভরে দেখার ইচ্ছা জাগে যদিও মনে তবে পূরণ করতে পারল না৷ কিংবা মুখে বলে বুঝাতেও পারল না। শুধু হাসল। স্বচ্ছ আবারও ডাকল,
“ সুহাসিনী? ”
সুহা এবারেও কথা বলল না। স্বচ্ছ কিছুটা ঝুঁকে একটু আগের মতো করেই আবারও চুমু খেল সুহার চোখমুখে। বলল,
“ এই কয়েক মুহুর্তেই বহু জ্বালিয়ে ফেলেছেন জনাবা। আপনি নিজেও জানেন না আপনাকে ছাড়া আমি নিঃশ্বাস অব্দি ঠিকভাবে নিতে পারি না৷ ”
সুহা যখন এবারেও শুধুই চোখে হাসল ঠিক তখনই স্বচ্ছ অসন্তুষ্ট হয়ে ডক্টরের দিকে তাকাল। কপাল কুঁচকে নিয়ে বলে উঠল,
“ ওর জ্ঞান ফিরেছে অথচ ও কথা বলছে না কেন ডক্টর? আপনারা এতক্ষন কিসের ইঞ্জেকশন ফুশ করেছেন আমার বউকে? ”
ডক্টর এই পর্যায়ে হাসে। কি ভেবেছে এই ছেলেটা? ইঞ্জেকশন পুশ করে কথা দূর করে দিল? হেসে বলল,
” প্রাথমিক ভাবে জ্ঞান ফিরেছেই শুধু স্বচ্ছ। ওর শরীর এখনো অতোটা স্টেবল নয়। ”
স্বচ্ছ মুহুর্তেই প্রশ্ন ছুড়ল,
“ স্টেবল হতে কতক্ষন লাগবে ডক্টর? ”
“ সময় দিতে তো হবে স্বচ্ছ। এটা ওর শরীরের কন্ডিশন এবং সময়ের উপর ডিপেন্ড করছে।এমনও হতে পারে ওর অবস্থা উন্নতির দিকে না গিয়ে অবনতিে দিকে গেল। কোনকিছুই তো আমরা নির্দিষ্ট করে বলতে পারি না। ”
“ ভয় দেখাচ্ছেন ডক্টর? ”
উনি বললেন,
“ না স্বচ্ছ, বাস্তবিকই বলছি। আপাতত তুমি ওর সাথে কথা বলে কিছুক্ষন যাও। ”
কথাটুকু বলেই ডক্টর চলে গেলেন।
“ সুহাসিনী? কথা বলবে না আমার সাথে? ”
“ আম্মুজানকে দেখবে? একদম তোমারই কার্বন কপি সে। ”
এই পর্যায়ে সুহা উৎসুক হয়ে তাকাল। যেন বুঝতে চাইল ও কেমন আছে? স্বচ্ছ সে উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে হাসল। কপালে চুমি এঁকে বলল,,
” ও ভালো আছে। তুমিও ভালো হয়ে যাও সুহাসিনী। তারপর তিনজনে আমরা সুখ কুড়াব। ”
.
রাহাকে হসপিটালে নিয়ে এল রোহানই। খবর পেয়ে সুহার মা আর দাদা এসেছেন আরো আগেই। রাহাও এল মাত্রই। রোহান তখন দরজায় দাঁড়িয়ে স্বচ্ছ আর সুহাকে দেখছিল এক চাহনিতেই। সুহাকে কেমন যেন ঝিমিয়ে আছে মনে হচ্ছে। রাহা অবশ্য দূর থেকে রোহানের তাকিয়ে থাকাটা খেয়াল করে। অতঃপর সামনে এসে হেসে বলে,
“ আপুর বাচ্চাটা একদম কিউট ফিউট। দেখতে একদম আপুর মতোই সুন্দর বুঝলেন।”
রোহান তাকাল রাহার দিকে। বলল,
“ বুঝলাম।”
রাহা এবার সুহা আর স্বচ্ছর দিকে একবার তাকায়। বলল,
“ দুলাভাই আপুকে একটু বেশিই ভালোবাসে দেখুন।”
রোহান এবারেও উত্তর করল,
“দেখেছি।”
রাহা মুহুর্তেই বলে উঠে,
“ আপনার কি কষ্ট হচ্ছে আপু আর দুলাভাইকে একসাথে দেখে?”
রোহান এবারে রেগে তাকায়৷ বলল,
“ কেন কষ্ট হবে?”
রাহাও বল,
“ আমি জানি আপনি আপুকে একটু বেশিই ভালোবাসেন তাই না? ভুল না হলে এখনও ভালোবাসেন। ”
এখানে এসেও কথাটা তোলার কোন মানে আছে রোহান বুঝে না। রাহার দিকে চোয়াল শক্ত করে তাকায় সে। বলে,
“ এটা তোমার জানা কথা নবনী।তাকে একটা সময় পাগলের মতোই ভালোবেসেছিলাম, সুতারাং এখন না ভালোবাসার প্রশ্নই উঠে না। ”
রাহা এবারেএ সুহা আর স্বচ্ছকে খেয়াল করতে করতে বলে উঠে,
“ আমার দুলাভাই খুবই ভালো জানেন? আপুকে পাগলের মতো ভালোবাসে সে। সুতারাং আপনি আপুকে পাগলের মতো ভালো না বাসলেও চলবে বুঝলেন?”
রোহান রাগ নিয়ে বলে,
” তোমাকে তো ভালোবাসছি না, সুতারাং তোমার সমস্যা না হলেও চলবে। ”
“ সমস্যা এখানেই, আমাকে না ভালোবেসে প্রতিনিয়ত অধিকার ফলাচ্ছেন আমার উপর। আপুর অবশ্য এদিক দিয়ে ভাগ্য ভালো। দুই পুরুষের ভালোবাসা পেয়ে গেল বিনাকষ্টে। আজকাল তো পুরুষদের ভালোবাসা মানেই বিরল বস্তু!”
রোহান ভ্রু উঁচিয়ে শুধাল,
“ হিংসে হচ্ছে নাকি নিজের প্রতি?”
রাহা মুহুর্তেই উত্তর করল,
“ এই জীবনে হয়নি, ভবিষ্যৎ জীবনেও কখনো হিংসা হবে না। ”
.
কিছুটা সময় আগে হসপিটালে সাদ ও এসেছে। সিয়া সাদকে দেখেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আজ কতগুলো দিন হলো তাকে সাদ পড়ায় না। ইচ্ছে করেই পড়ানো বাদ দিয়েছে। শুধুমাত্র ঐ সিগারেটটের ঘটনাটা নিয়েই। সিয়ার দুঃখ হয়। এতকাল কথা বলার জন্য ছটফট করে অবশেষে যখন সুযোগ মিলল ঠিক তখনই সে নিজেকে আর দমিয়ে রাখল না। সাদের সাথে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে গুঁটিকয়েক কথা বলেই শুধাল,
“ হসপিটালে রাহা আপুও এসেছে। আপনার ভালোবাসার মানুষ সাদভাই। ”
সাত মুহুর্তেই ভ্রু কুচকে নেয়। চমকায়।বলে,
“ কি বললে? ভালোবাসার মানুষ মানে? ”
সিয়া হেসে বলে,
“ চমকালেন কেন? আমি জানি, রাহা আপুর গোপন প্রেমিকটা আপনিই ছিলেন সাদভাই। বেলকনিতে দেখতে পাওয়ার জন্য ঘুরঘুর করতেন, আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ দিতেন। আরো কত কি তাই না?তবে কাহিনীটা ইন্টারেস্টিং সাদ ভাইয়া। ”
ওপাশ দিয়ে তখন রোহান হেঁটে যাচ্ছিল। সিয়ার শেষ কথোপকোথন গুলো সবটাই শুনল সে। অতঃপর ঘাড় বাকিয়ে তাকিয়ে দেখল ছেলেটা কে। সাদ? ঐ ছেলেটা যে সুহাদের বন্ধু ছিল? রোহান ভ্রু কুঁচকেই তাকায়। সাদকে আগাগোড়া পরীক্ষা করে দেখতে থাকে কেমন নজরে যেন।
.
পুরো চব্বিশঘন্টা আবির যোগাযোগ করে নি ছুটির সঙ্গে। নিজ থেকে কল করে নি৷ নিজ কল করলেও যে মেয়েটা আজকাল সঙ্গে সঙ্গেই রিসিভড অথবা খুব খুশি হয় এমনটাও নয়। বরং বুঝায় খুবই বিরক্ত সে। আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলে। অতঃপর নিজেকে মানাতে না পেরে যখন কল দিল তখন বুঝতে পারল কল যাচ্ছে না। আবিরের কপালে ভাজ পড়ে। বারকয়েক চেষ্টা করে যখস হতাশ হলো সে তখনই ফোনটা ছুড়ে ফেলল সে। বিড়বিড় স্বরে বলল,
“ অবহেলা করছিস কর ছুটি, পালিয়ে বেড়াচ্ছি বেড়া। কিন্তু আর মাত্র কয়েকটা দিন। কয়েকটা দিন পর যখন দেশে ফিরব তখস তোর সব ভুল ভাঙ্গাব। ভেবেছিলাম তোর সব ভুলবুঝাবুঝি সরাসরি দেশে ফিরে সামনাসামনিই ভাঙ্গাব। বুঝিয়ে বলব। কিন্তু তুই হতে দিচ্ছেস কই? বারবার আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিচ্ছিস। প্রমিজ, একচুল ছাড় দিব না তোকে এসবের জন্য। কড়া গন্ডায় শাস্তি পাবি ছুটি। ”
.
ছুটি তখন অচেনা দেশের উদ্দেশ্যে। হাতে মোটা মোটা লাগেজ। একটি আগেই ছোটনর্ এয়ারপোর্টে পৌঁছে দিয়ে গেছে। অবশেষে এয়ারপোর্টের যাবতীয় কার্যকলাপ শেষ করেই অনেকটা সময় পর বিমানের সিটটায় গা এলিয়ে বসল ঠিক তখনই তার মন খারাপ হলো। কান্না পেল। আচ্ছা? আবির ভাই যেদিন দেশে ফিরবে সেদিন তাকে খুঁজবে?খোঁজ করবে তার? নাকি ভুলে যাবে কোথাও তার জীবনেও ছুটি নামক একটা অধ্যায় ছিল…
#চলবে…