প্রেমের সমর ২য় পরিচ্ছেদ পর্ব-১০

0
28

#প্রেমের_সমর
#পর্ব_১০
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

এর প্রায় সপ্তাহখানেক পর দেশের মাটিতে পা রাখল আবির। এই সপ্তাহখানেকের মধ্যে ছুটির সাথে একটাবারের জন্যও সে যোগাযোগ করে উঠতে পারে নি। না তো কথা বলতে পেরেছে। মেয়েটজ একদম নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে যেন হঠাৎ। যদি গ্রামের বাড়ি ঘুরতেই যায় এমন নিরুদ্দেশ হতে হবে কেন হুহ? আবির দমবন্ধ হয়ে নিজে থেকে অনেকবার চেষ্টা করে যখন যোগাযোগ করতে পারল না তখনই ফিহাাে ব্যবহার করল। শুনল ওরা নাকি গ্রামের বাড়ি ছেড়ে বাসায় ফিরে এসেছে। কিন্তু ফিরে আসার পর থেকেই নাকি ছুটি রুম ছেড়ে বের হয় না। কারোর সাথে কথা অব্দি বলে না। এমনকি ফিহাকেও এসব বলে বলে ছোটন তাড়িয়ে দিয়েছে। ছুটির সাথে দেখা করতে দেয়নি, কথা বলতে দেয় নি। অবশেষে ছটফট করা আবিরকে দেশেই ফিরতে হলো প্রিয়তমার খোঁজ নিতে। দেশে এসেও সর্বপ্রথম নিজের বাসায় না গিয়ে সর্বপ্রথম সে এল ছুটিদের বাসাতেই। এসেই বাবু হয়ে বসল সোফায়। নিজের ব্লেইজারটা খুলে একপাশে রাখতে রাখতে সামনে ছোটনকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,

“কি সমস্যা তোর বোনের? বিয়ে করে বর হয়েছি বলে সব যন্ত্রনা কেবল আমার? ফোন তুলে না কেন তোর বোন? ফোন অফ করে রাখে কেন ? একটুখানি খোঁজ নেওয়ার ভদ্রতাটুকু নেই তোর বোনের মধ্যে।এত সাহস হয় কি করে ওর? শুনলাম বাসা থেকে বের হয় না নাকি সে? আবার কারোর সাথে নাকি দেখাও করে না? ফিহাটা এতদিন এল অথচ এই কয়দিনে একবারও দেখা করল না। এত বেয়াদব হলো কি করে এই ছুটির বাচ্চা ছুটি? ”

ছোটন একদম শান্ত দৃষ্টিতেই তাকায়। আবির ভাই যে আপুর জন্যই ছুটে আসবে তা যদিও তার জানা তবে তার মনে হয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার আপুর কষ্টটা এই ছেলেটারও পাওয়া উচিত। সে নিজেই দেখেছে তার আপুটা কিভাবে গুমড়ে মরেছে প্রতিটাদিন।। কিভাবে চাপা কষ্ট বয়ে বেড়িয়েছে প্রতিটা সময়। তাই তো কথা ঘুরানোর প্রসঙ্গে হাসল সে। আবিরের পাশে বসতে বসতে হেসে বলল,

“ আবির ভাই?বহুদিন পর দেখা হলো।কবে ফিরলেন? ”

“ ঠিক, বহুদিন! অথচ তোর বোন নিষ্ঠুর। বহুদিন পর বর দেশে এসেছে শুনেও দেখা করবে না। তোর বোনের তো এতক্ষনে অন্তত আমায় দেখা দেওয়ার কথা বল? ”

ছোটন বেশ পরিপক্ব ও জ্ঞানী মানুষের মতো করেই পুণরায় কথাটা পাল্টাতে হাসল। ফের বলল,

“ কবে ফিরলেন? ”

আবির বিরক্ত হয় যেন। তিক্ত স্বরে বলল,

“ দেখে বুঝতে পারছিস না যে মাত্রই ফিরলাম। ”

ছোটন বলল,

“মাত্রই ফিরে আমাদের বাসায় এলেন?”

আবির উত্তর করল,

“ কারণ তোদের বাসায় তোর বোন থাকে। দেখি টুপ কর ডেকে দে তো ঐ বেয়াদব মেয়েটাকে। আমি একটু দেখি ওর এত বড় সাহস হয় কি করে যে আমায় এড়িয়ে যায় ও। ”

ছোটন শান্তস্বরে উত্তর করল,

“ আপু তো বলেছে আপু রুম ছেড়ে বের হবে না ভাইয়া। ”

আবির ভ্রু কুঁচকায় সঙ্গে সঙ্গে। কপাল কুঁচকে নিয়ে উত্তর করে,

“ কেন বের হবে না? বের হতে হবে বল গিয়ে। ”

ছোটন মানল না। আবিরের কথা মতো উঠে গিয়ে ছুটিকে ডাকও দিল না। আবির বিস্ময় নিয়ে দেখছে ছোটনকে। ছুটির সাথে সাথে এই এইটুকু ছেলেটার ও পরিবর্তর ঘটেছে বুঝতে পারছে সে৷ আগের ছোটন তার কথা মতো কাজ করত। এখনকার ছোটন তার চেয়ে ভিন্ন। আবির যখন ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থাকে ঠিক তখনই ছোটন গম্ভীর গলায় উত্তর দিল,

” আপুর মাথা ব্যাথা। ঘুমাচ্ছে। আমি চাই না এ ঘুম থেকে উঠে পড়ুক আবির ভাই। ঘুমাচ্ছে, ঘুমাক।”

আবিে ত্যাড়া স্বরে জবাব দিল,

” ওর ঐটুকু ঘুম আজ না গেলেও চলবে। ”

“ বকা দিবে আমায় আবির ভাই। ”

আবির বুঝে কাজ হবে না এই ছোটনকে দিয়ে। সে তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়ায়। তড়িঘড়ি করে পা বাড়াতে বাড়াতে বলে উঠে,

“ দরজা ভেঙ্গে আমার বউকে আমি দেখি আসি বরং।তোদের অতো শত কথা শুনতে পারছি না।”

ছোটন মুহুর্তেই উত্তর করল,

” আপু সত্যিই রাগ করবে আবির ভাই। ”

“ ওর রাগ আমার জানা আছে। ”

ছোটন উঠে পথ আটকাল আবিরের। বুকে হাত গুঁজে উত্তর দেয়,

“ আসলে একটু আগেই ঘুমিয়েছে তো।মাথা ব্যাথাটা দ্বিগুণ করবে এখন ঘুম ভাঙ্গলে। আপনি বরং নিজের বাসায় যান আবির ভাই, ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি আপুকে ঘুম থেকে উঠলে বলব যে আপনি এসেছেন। ”

আবির হুট করে থামে। ভাবে ঘুমাচ্ছে ঘুমাক। মাথা ব্যাথা করবে মেয়েটার। এমনিতে তার কারণে মেয়েটার লাইফের এমন পরিণতি হয়েছে। আবির দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বলে,

“ ওকে, ঘুম ভাঙ্গাব না। একবার ঘুমন্ত অবস্থায় দেখে তো যেতে পারি বল? ”,

“ আপু ভেতর থেকে দরজা আটকে রেখে ঘুমিয়েছে। ”

আবির এবারে তপ্তশ্বাস ফেলে। কিয়ৎক্ষণ চুপ থেকে বলে,

“ ওকে। তাহলে তোর বোনকে ঘুম থেকে উঠার পর ডিরেক্ট ছাদে পাঠাবি ওকে? বাকিটুকু আমি ওকে ওখানেই বলব। ”

ছোটন এবারে বাধ্য বাচ্চার মতো শুধাল,

“ আচ্ছা। ”

“ আমি যে এসেছি এটা একবারও যাতে ওর কানে না যায় ওকে? সারপ্রাইজ তোর বোনের জন্য। ”

ছোটন এবারেও বলল,

“ঠিক আছে, আপুর কানে যাবে না। ”

আবির খুশি হলো যেন। মনে মনে ছুটির সাথে বিকালে অথবা সন্ধ্যায় দেখা করার অপেক্ষা করতে লাগল। নিজ মনেই হাসল এটা ভেবে যে ছুটি আজ কতোটা চমকাবে, কতোটা বিস্ময় নিয়ে তাকে দেখবে। ছুটিকে সারপ্রাইজ দিবে বলে কথা। আবির হাসে। বিড়বিড় করে বলে,

“ এবার আর ছাড় পাবি না বোকাপাখি। তোর সমস্ত বোকামো এবার সামলে নিব নিজের নিয়মে। ”

.

ছুটি ছোটনের থেকে কিছুটা সময় আগে সবটাই শুনতে পেয়েছে। আবির তাকে সারপ্রাইজ দিবে শুনে খারাপ লাগল কেন জানি তার। কারণ ভালোবাসার মানুষ বলে কথা তার। ছুটি কিয়ৎক্ষন দীর্ঘশ্বাস ফেলে এক নজরে চেয়ে থাকে আবিরের একটা ছবির দিকে। শুধায়,

” আমি আপনাকে বুঝতে পারি না আবির ভাই। সত্যিই কি ভালোবাসেন আমায়? সত্যিই কি গুরুত্ব দেন আমায়? আবির ভাই? যদি সত্যিই এত বেশি গুরুত্বের চোখে আমায় দেখেনই তবে এত অবহেলা করলেনই বা কেন? কি দোষে? ”

.

আবির অপেক্ষা করতে লাগল দুপুর জুড়ে। বিকাল হলো। অতঃপর সন্ধ্যা। ছাদের কার্নিশে দাঁড়িয়ে অনবরত চোখ বুলাতে থাকল ছুটিদের ছাদটাতেই। অথচ ছুটির আসার নাম নেই। আবির বুকে হাত গুঁজে পায়চারি করে। একবার কে যেন বিকালে কাপড় নিতে এল ছাদে, আবির তাও ভেবে নিল এটা বুঝি ছুটি। কিন্তু পরক্ষণেই তাকে আশাহত হতে হয় এই দেখে যে এটা ছুটি নয়। আবির দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেলে। ফোন নিয়ে দ্রুত ছোটনকে কল করে বলে,

“ কি সমস্যা? তোর আপু ঘুম থেকে উঠে নাই এখনও? নাকি বুঝে গিয়েছে আমি এসেছি? আমি আছি বলেই আসছে না তো ও?”

.

রোহান তখন গাড়ি করে বাড়ি ফিরছিল। রাত আটটা। ঠিক তখনই তাদের বাড়ির গলিটায় দেখা মিলল সাদের। এই কয়েকদিনে সে কয়েকবারই সাদকে দেখেছে এখানে। এবং হসপিটালের সেদিনের পর থেকে মাথায় এটাই গেঁথে নিয়েছে যে সাদই নবনীর সে গোপন প্রেমিক৷ রোহান দাঁতে দাঁত চাপে। গাড়িটা এক পাশে সাইড করে জানালা সরিয়ে সাদের উদ্দেশ্যে হেসে বলে,

“ আজকাল এই পাড়ার অলিতে গলিতে আপনাকে মাঝেমধ্যেই দেখা যায় ভাই। কি ব্যাপার বলুন তো? কাউকে খুঁজতে আসেন নাকি? ”

সাদ প্রথমে চমকে তাকায়। পরমুহুর্তেই সরল হাসি দিয়ে বলে,

“ হু? না না। এখানে একটা টিউশনি আছে ভাই। এইকারণেই.. ”

রোহান জানে এই পুরোটাই মিথ্যে। টিউশনির জন্য আসে নাকি নবনীর জন্য তা সে জানে না? রোহান ক্রুর হাসে। বলে,

“ শিওর? ”

“ হ্যাঁ। ”

আবারও মিথ্যে। রোহান এই মুহুর্তে টের পেল প্রকৃতি তার প্রতি প্রতিশোধ নিচ্ছে।ঠিক এই মুহুর্তে এসে স্বচ্ছর দিকটা উপলব্ধি করতে পারে। মানতে পারে না যে কোন এক ছেলে তারই বউয়ের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ো আছে এমন দৃশ্য।প্রকৃতির প্রতিশেধ ভয়াবহ। সে যে স্বচ্ছকে জ্বালিয়েছে সুহাকে নিয়ে, এখন অন্য কেউও তার বউয়ের প্রতি রোজ রোজ মুগ্ধ হয়ে তাকে জ্বালাচ্ছে। রোহান মনে মনে রেগে যায় যেন। কিন্তু উপর দিয়ে বলে,

“ এতদূরে টিউশন করানোর কি প্রয়োজন বলুন? এরচেয়ে ভালো টিউশনিটা ছেড়ে দিন। আপনারই তো কষ্ট হয়। ”

সাদ মুহুর্তেই বলে,

“ না, না। কষ্ট হয় না। অতোটাও দূরে হয় না আমার জন্য। ”

রোহান ঠোঁট বাঁকিয়ে শুধায়,

“ আচ্ছা? তাও ভালো।”

কথাটুকু বলেই আর একটুও ভদ্রতা না দেখিয়ে গাড়ি চালিয়ে চলে গেল সে। সাদ আহাম্মকের মতো চেয়ে থাকল কেবল। অন্যদিাে রোহান বাসায় এসে নিজের রুমে গেল। নবনীকে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে
দেখেই রাগে চোয়াল শক্ত হয় তার। হুট করেই খপ করে নবনীর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে সে। তারপর রুমে এনে শক্ত গলায় বলে,

“বেলকনিতে কার জন্য দাঁড়িয়ে থাকো জানি না আমি?আজ থেকে তুমি বেলকনিতে যাবে না নবনী।”

রাহা বিস্ময় নিয়ে তাকায়। এর আগে রোহান এমন অধিকারবোধ দেখায়নি।এমন রাগও নয়। কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল,

কেন?

রোহান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

“আমি বলছি এটা যথেষ্ট নয়? ”

রাহার ও ত্যাড়া জবাব,

“কারণ ছাড়া আমি যথেষ্ট হিসেবে নিতে পারছি না।”

রোহান অনেক কষ্টে একটা কারণ হাজির করল। গম্ভীর স্বরে বলল,

“ বেলকনিতে খুব মশা হয়েছে। তোমায় কামড় দিলে রোগ হতে পারে। পরে দৌড়াদৌড়ি আমাকেই করতে হবে। তার চেয়ে বরং আগে থেকেই প্রতিরোধ করা ভালো নয়? তাই।”

রাহার বিশ্বাস হয় না যেন। মশা?কোথায়?রাহাকে তে আজ পর্যন্ত একটা মশাও কাঁমড় দিল না । তাহলে?

.

এখন সপ্তাহখানেক পর যখন সুহা সুস্থ হলো পুরোপুরি ঠিক তখনই তাদের ছোট্ট প্রাণটার শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা দেখ দিল। এমনিতেও যে স্বচ্ছর আর সুহার ছোট্ট পিচ্চিটার শারিরীক অবস্থা খুব বেশি ভালো ছিল এমন নয়।এমনকি বাচ্চাটার শারিরীক বিভিন্ন জটিলতাও ছিল। তবুও সে ধীরে ধীরে সুস্থতার দিকেই এগোচ্ছিল। কিন্তু হুট করে এই সমস্যা দেখে ঘাবড়ে গেল স্বচ্ছ সহ সবাইই প্রায়। সুহাকে তখনও কিছু না জানালেও ডক্টরদের পিছু পিছু সে ভোররাত থেকেই দৌঁড়াদৌড়ি করছিল সে। ঐটুকু নি প্রাণটা তার! আর কতটুকুই বা সহ্য ক্ষমতা ওর? স্বচ্ছ বারবার মুখ দেখে। কতোটা মায়াময়। চোখ গুলো কতোটা সুন্দর তার প্রাণের। যেন পুরোপুরি মায়ের মতোই চেহারা পেয়েছে তার আম্মুটা। স্বচ্ছ অস্থির হয়ে মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ডাক দিল বহুবার। এবারের মতো, এবারের মতো তার মেয়েটাকে সুস্থ করে দিক।স্বচ্ছ এরপর আর মেয়ের কিছুই হতে দিবে না। মাথায় তুলে রাখবে তার একরত্তি মেয়েটাকে। এত যত্ন করবে যে মেয়ে তার অসুস্থ হবেই না। স্বচ্ছ যখন বুকের ভেতর তীব্র কম্পন সামলে বারবার এই একই প্রার্থনাই করছিল ঠিক তখনই চাইল্ড স্পেশালিস্ট তাসনিয়া সামনে এলেন৷ হালকা গলা ঝেড়ে শান্ত স্বরে শুনালেন,

“ মিঃ স্বচ্ছ, আপনার বাচ্চাটা আর আমাদের মাঝে নেই। দুঃখিত। ”

স্বচ্ছ যেন শুনতে পেল না কথাটা প্রথমে। পরমুহুর্তে যখন বোধগম্য হলো তখন হতবিহ্বল নজরে তাকায় সে৷ দৃষ্টিতে যেন হাজারে অবিশ্বাস, সহস্র অসহায়তা। একটু আগেই তো সে কাঁচের দেওয়ালের ভেতরে তার এইটুকু মেয়েকে দেখে এসেছে।একটু আগেই নার্সদের অনুমতি নিয়ে মেয়েকে চুমুও দিয়েছে সে। ফিসফিস স্বরে বলেও ছিল, “ আম্মুজান? তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাও। আমরা তিনজনে বাসায় ফিরব তো বলো?” স্বচ্ছ বিশ্বাস করে না একদিকে, অন্যদিকে তার চোখ রক্তিম হয়ে উঠে। মুখ গম্ভীর। একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুধায়,

“ আমার প্রাণটা ডক্টর। দয়া করে মিথ্যে বলে আমায় বিভ্রান্ত করবেন না ডক্টর। আমি বোধহয় সত্যিই এবারে দমবন্ধ হয়ে ছটফট করব। ”

ডক্টর অসহায় চাহনিতে তাকায়। স্বচ্ছ যখন বুঝে উঠে কথাটা সত্যিই তখন তার চোখ জোড়া রক্তিম হয়ে আসে৷ দাঁত খিচে সে বহুকষ্টে কান্না দমানোর চেষ্টা চালায়। অসহায় মুখশ্রী নিয়ে সে এপাশ ওপাশ চাইল। কথা আছে পুরুষ মানুষ কাঁদে না। জনসম্মুখে হলে তো আরে নয়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে স্বচ্ছ নিজেকে মানাতে পারল না। চোখ গড়িয়ে তার পানি পড়তে নিল। স্বচ্ছ মুহুর্তেই এক হাতে তা মুঁছে নেয়। পরবর্তীতে অসহায় চাহনি আর অবিশ্বাস্য চাহনিতে স্বচ্ছ যখন তাকাল তখনই ডক্টর আবারো বলল,

“ আপনার বাচ্চার শারিরীক অবস্থা দুর্বল ছিল, তার উপর বিভন্ন জটিলতা ছিল। হার্টবিট স্বাভাবিকের থেকে কম ছিল। সাধারণ ক্ষেত্রেই এত সমস্যাজড়িত বাচ্চাগুলো কম বাঁচে মিঃ স্বচ্ছ। তার উপর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাও যুক্ত হওয়াতে আমরা সত্যিই বাচ্চাটাকে আগলে রাখতে পারিনি । ”

স্বচ্ছ চোখ বুঝে নেয় এবারে। একটাহাত মুখে নিয়ে দাঁত দিয়ে কাঁমড়িয়ে লাল টকটকে চোখের কান্না আটকানোর চেষ্টা চালায়। কিন্তু পারল কোথায়?ঐটুকু প্রাণের চলে যাওয়া কি মেনে নেওয়া যায়? যাকে এই এক সপ্তাহ যাবৎ সে দিনে নিয়ম করে বিশবারের উপর দেখত। কথা বলত আনমনে এইসেই, স্বপ্ন বুন বাসায় যাবে তারা তিনজনে। আচ্ছ৷ সুহাসিনীকে সে কি উত্তর দিবে? কি বলবে তাকে? তার এত কষ্টে লালন পালন করা বাচ্চাটা আর নেই?এটা সে বলতে পারবে?গলা দিয়ে বেরুবে? সুহাসিনী? সে বা কিভাবে মানাবে? স্বচ্ছ হাঁসফাঁস করে। বহু কষ্টে বলে,

“ আমার আম্মুজান কোথায় ডক্টর? ওকে একবার কোলে নিব। জিজ্ঞেস করব কেন চলে গেল সে। আমি কি বাবা হিসেবে খুব বেশিই খারাপ ছিলাম তার কাছে? ”

ডক্টর তাসনিয়ার চোখ টলমল করল স্বচ্ছর কথা শুনে। বলল,

“ আপনার আত্মীয়রা আছে মিঃ স্বচ্ছ। উনাদের কাছেই। উনারা এই সংবাদটা আপনাকে দিতে পারবেন না বলেই আমি বলতে এসেছি। নিজেকে মানসিক ভাবে শক্ত করুন মিঃ স্বচ্ছ।”

স্বচ্ছ ডক্টরের সব কথা না শুনেই হন্তদন্ত হয়ে পা বাড়াল৷ অতঃপর দ্রুত নিজের আম্মুর কাছে গেল। ছোট পুতুলটাকব তার আম্মুর কোলে চোখ বুঝে থাকতে দেখে স্বচ্ছ এবারে প্রকাশ্যেই কেঁদে ফেলল। আম্মুকে ঝাকিয়ে বলল,

“ আম্মু? এই আম্মু? আমার আম্মুজানটা নাকি চলে গেছে আম্মু। ওকে এনে দাও না প্লিজ। বলো না, আমি খুব করে যত্ন নিব। খুব করে ভালো রাখব ওকে।খুব ভালো বাবা হবো, বলো না আম্মু? বলো না প্লিজ। ”,

স্বচ্ছর মা এতক্ষন যাবৎ কাঁদছিলেনই। ছেলের পাগলামো দেখে অস্থির লাগে তার। কি বলে সান্ত্বনা দিবে তার পাগল ছেলেটাকে? কি বলে শান্ত করবে? অন্যদিকে আরেকজন? সুহা? সে শুনলে তাকেই বা কিভাবে মানাবে ওরা?

#চলবে…