প্রেমের সমর ২য় পরিচ্ছেদ পর্ব-১৭+১৮+১৯

0
43

#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_১৭
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

স্বচ্ছর কোলে একটা বাচ্চা ছেলে।এডপ্ট করেছে। বয়স সবে মাস দুয়েক। গায়ের রং শ্যামলা হলেও বাচ্চাটা মিষ্টি। খুব সম্ভবত বাচ্চাটার মা বাবার পরিচয় জানা নেই কারোরই। স্বচ্ছও জানে না তার মা বাবার পরিচয়৷ অথচ বাচ্চাটা কি মিষ্টি। কি মায়া তার চাহনিতে। শান্তশিষ্ট! স্বচ্ছ কোলে নিয়েছে অনেকক্ষন। অথচ বাচ্চাটা একটুও কান্না করেনি, একটুও নড়চড় করেনি। প্রথমদিকে স্বচ্ছকে ড্যাবড্যাব করে দুয়েকবার উৎসুক চাহনিকে পরখ করেই ও গম্ভীর মুখ করে আছে। স্বচ্ছ বুঝে উঠে না, মাস দুয়েকের বাচ্চা এত ম্যাচিউরড ভাব কেন ধরবে? কি দরকার? বহুবার হাসানোর চেষ্টা করল সে। কিন্তু লাভ হলো। স্বচ্ছ ছোটশ্বাস ফেলে বাচ্চাটার কপালে চুমু আঁকে এবারে। পা বাড়িয়ে সুহার কাছে গিয়ে শান্ত স্বরে বলল,

“ বাচ্চা চেয়েছিলে তো তুমি সুহাসিনী? বাচ্চা এনে দিলাম। একটা মিষ্টি বাচ্চা।তবুও এবারে আমায় তোমাকে হারানোর দুঃশ্চিন্তা থেকে রেহায় পাওয়ার সুযোগ দাও।এবার অন্তত আগের মতো হয়ে যাও সুহাসিনী। ”

সুহা তখন জানালার ধারে বসা।হাতে তখনও ব্যান্ডেজ তার।স্বচ্ছর কন্ঠ শুনে ফিটফিট করেই তাকাল সে স্বচ্ছর দিকে।স্বচ্ছর কোলে সাদা তোয়ালেতে মোড়ানো বাচ্চাটাকে দেখেই সুহা উৎসুক হয়ে চাইল। কি মিষ্টি। কি সুন্দর গাল। চাহনি কতোটা মায়াময়। সুহার আপন আপন লাগে যেন। মাথা এগিয়ে উৎসুক স্বরে বাচ্চাদের মতো করেই বলল,

“ সত্যিই বাচ্চা? ”

স্বচ্ছ হাসে এবারে। সুহাকে মাঝেমাঝেই এখন বাচ্চা বাচ্চা লাগে একদম। কি সুন্দর আবদার করে। কখনও বাচ্চাদের মতো হু হু করে কেঁদে উঠে।কখনও মিষ্টি হাসে৷ স্বচ্ছ হেসে বাচ্চাটাকে এগিয়ে ধরল সুহার দিকেই। বলে,

“ হ্যাঁ,একটা ছোট্ট বাচ্চা। আজ থেকে আপনারই বাচ্চা সে। ”

সুহা এই পর্যায়ে ভীষণ খুশি হয় যেন। তবে প্রকাশ করে না। শুকনো ঢোক গিলে সে। হাত বাড়িয়ে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়েই চুমু দিল অসংখ্যবার। অথচ পুরোটা সময়ই বাচ্চাটা একদম নিশ্চুপ থাকল। এমনকি স্বচ্ছের কোলেও এতক্ষনে সে একটুও কান্না করে নি। সুহা তাকায়। বাচ্চাটা তখন তার দিকেই ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।সুহা তা দেখে কিঞ্চিৎ হাসে। বলে,

“ ও কোন প্রতিক্রিয়া করছে না কেন? কান্নাও করছে না। আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ”

স্বচ্ছ হাসে। একটু এগিয়ে সুহার কপালে চুমু দিয়ে বলে,

” ও হয়তো তার আম্মুর মতোই ভীষণ শান্ত বাচ্চা হবে।”

সুহা কেমন করে যেন চাইল মুহুর্তেই। প্রতিবাদ স্বরূপ বলে উঠল,

“ আমি মোটেই শান্ত নই স্বচ্ছ, আপনিও যে শান্ত বাচ্চা এমন নয়। ও আমাদের দুইজনের থেকেই ভিন্ন হবে। ”

স্বচ্ছ স্থির চাহনিতে তাকিয়ে রইল। এতগুলো দিন পর সে সুহার আগের কন্ঠস্বরটা শুনতে পেল যেন। আগের প্রতিবাদী স্বর। আগের চঞ্চল ঝগড়া। স্বচ্ছ ছোটশ্বাস টানে। সুহার দিকে স্থির চেয়ে বলে,

“ এবার বলুন, খুশি আপনি? বাচ্চার কথা ভেবে ভেবে আর মন খারাপ করবেন না তো? নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করবেন না তো? ”

সুহা কিয়ৎক্ষন চুপ থাকে। চোখ টলমল করে তার হঠাৎ। তারপর বলে,

“ আমি তো আমার মেয়ের কথা ভুলতে পারব না স্বচ্ছ। আমি তাকে সবসময় মনে রাখব ৷ সবসময়ই ! সে আমার প্রথম মাতৃত্ব-ময় অনুভূতি।”

স্বচ্ছ ছোটশ্বাস টেনে বলে,

“ আমার কি মনে থাকবে না তাকে সুহাসিনী?”

পুণরায় আবারও সুহার হাতের উপরে হাত রেখে শুধাল,

“ কথা দিচ্ছি। এবারে আমি দ্বিগুণ সতর্ক থাকব সবকিছুতে। সবকিছুতেই আমি আমার স্ত্রী সন্তানকে রক্ষা করব সুহাসিনী৷”

সুহা তবুও উত্তর করে না। চুপ করে থাকে। স্বচ্ছ তাকায়।ডাকে,

“ সুহাসিনী? ”

সুহা হুট করেই যেন শুনতে পেল। উত্তর করল,

“ হু?”

স্বচ্ছ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়। শান্ত স্বরে বলে,

“ আমায় কি আর বিশ্বাস করা যায়?আর ভালোবাসো না? খুব বেশি ঘৃণা করো সুহাসিনী? আমার জন্য যেটুকু অনুভূতি তোমার হৃদয়ে ছিল সবটুকু কি ফুরিয়ে এসেছে? ”

সুহা কয়েক সেকেন্ড স্থির তাকায় স্বচ্ছর দিকে। পরক্ষণেই উত্তর দেয়,

“ স্বচ্ছ! আমার জীবনে প্রথম পুরুষ আপনি যাকে আমি ভালোবেসেছি। যাকে আমব জীবনের সবটা দিয়ে চেয়ে এসেছি। এত সহজেই তার প্রতি আমার অনুভূতি ফুরিয়ে আসার তো কথা নয়। ”

স্বচ্ছ চকচকে চোখে তাকায়। বলে,

“ তার মানে? এখনও আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা অবশিষ্ট আছে সুহাসিনী? ”

সুহা উত্তর দেয় না। ক্লান্তির শ্বাস টেনে বাচ্চাকে কোলে রেখে ওভাবেই স্বচ্ছর বুকে মাথা রাখে এবারে। বলে,

“ ঘুমাব স্বচ্ছ, আমার বড্ড ঘুম পাচ্ছে। ”

স্বচ্ছ বাচ্চাকে নিজ কোলে নেওয়ার যখন চেষ্টা চালাল তখন সুহাই বলল,

“ ওকে বুকে নিয়েই ঘুমাই না? আমি তো আমার মেয়েটাকে বুকে নিয়ে ঘুমাতেই পারিনি। চোখের আড়াল হয়েই সে আমায় ছেড়ে চলে গিয়েছে স্বচ্ছ। এখন ওকে আড়াল করলেও যদি ছেড়ে যায়?”

স্বচ্ছ সুহার মাথায় হাত বুলায়। শান্ত কন্ঠে বলে,

“ আচ্ছা, থাকুক ও।”

.

রাহা মাত্রই ফিরেছে।সুহা আর স্বচ্ছর বাচ্চাটাকেও দেখতে গিয়েছিল সে। মূলত সুহাকেই দেখতে গিয়েছিল। কিন্তু ওখানে যে আরো একটা আদর অপেক্ষার করছে তার জন্য তা সে জানতও না। রাহা মিষ্টিমতো বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে ইচ্ছেমতো আদর করেছে, চুমু দিয়েছে।তারপর আসার পথে ভেবে ভেবে এসেছো সেও শীঘ্রই একটা বাচ্চা নিয়ে নিবে। এই কারণে অগ্রীম একটা ডক্টরের এপয়েন্টমেন্ট ও নিয়েছে সে। তারপর যখন বাসায় ফিরল তখন রাত আটটা। বাইরে ঝড়ো হাওয়া বইছে। যার দরুন সো যখন বাসায় ফিরল তখন সর্বপ্রথম তার শ্বাশুড়িই দরজা খুলল। চিন্তিতি স্বরে বলল,

“ বাইরে যা ঝড়ো হাওয়া! আমার তো চিন্তা হচ্ছিল। ”

রাহা হাসে অল্প। শ্বাশুড়ি হিসেবে সে যে মানুষটিকে পেয়েছে সে মানুষটা নিতান্তই দারুণ একটা মানুষ। রাহা মনে করে পৃথিবীর চমৎকার মানুষ।আর কারোর শ্বাশুড়ি কি বউমাকে রাত আটটায় বাসায় ফিরলে এভাবে চিন্তা করতে পারে? রাহা হেসে উত্তর করে। বলে,

“ আপুর বাচ্চাটা এত কিউট আম্মু। যে আসতেই মন চাইল না। ”

উনি হেসে বললেন,

“ তাই নাকি? বাচ্চা এত ভালো লাগে? ”

রাহা মুহুর্তেই উত্তর দেয়

“ তোমার কাছে শুনেছি উনারও বাচ্চা ভালো লাগে। সুতারাং এই বাসায় একটা বাচ্চা আসলে সবারই মন ভালো হয় কি বলো আম্মু?”

রোহানের আম্মু হাসে এবারে।বলে,

“ যা তো, চেঞ্জ করে আয় পাগল। ”

রাহা হেসে পা বাড়াল। যখন রুমে প্রবেশ করল ঠিক তখনই রোহান এল। ভ্রু বাঁকিয়ে বলে উঠল,

“ আমার আম্মুকে তো ভালোই হাত করে নিয়েছো। ”

রাহা ভ্রু৷ কুঁচকায়। জানতে চায়,

“আমার লাভ কি হাত করে? ”

রোহান বলে,

“ আজকাল আমার থেকে সে তোমায় বেশি চোখে হারায়। তোমায় বেশি ভালোবাসে।”

রাহা ঠোঁট বাঁকায় এবারে। বলে,

“ কারণ আমি আপনার থেকে বেশি মিষ্টি। আপনার মতো রুক্ষ্ম একটা মানুষকে ভালোবাসা যায় নাকি? ”

রোহান দাঁতে দাঁত চাপে। এক্ষুনিই বেলকনি দিয়ে সে দেখেছিল রাহাকে সাদ এগিয়ে দিয়ে গেছে। সে যদি রূক্ষ্ম মানুষ হয় তবে সাদ নরমশরম। এই কারণেই কি রাহা রোহানকে পছন্দ করে না? রোহান দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,

“ তাহলে কি সাদের মতো নরমশরম মানুষকে ভালোবাসা যায়? ”

রাহা এবারে বিরক্তি নিয়ে বলল,

“ সবকিছুতে সাদ ভাই আসে কোথায় থেকে? ”

বিনিময়ে রোহান প্রশ্ন ছুড়ে,

“ সাদ কেন তোমায় এগিয়ে দিল?”

“ রাত হয়ে গিয়েছিল, তার উপর একা ছিলাম। এগিয়ে দেওয়াটা কি অন্যায়?”

রোহান ফের দাঁতে দাঁত চাপে। বলে,

“ অবশ্যই অন্যায়। আমার কন্ট্যাক্ট নাম্বার কি ছিল না? আমাকে কি বলা যেত না এগিয়ে গিয়ে তোমাকে নিয়ে আসা,র জন্য? ”

রাহা নিজেও রোহানকে মনে মনে পছন্দ করে। অন্তত বিয়ের পর এইকটা দিনে এত কাছ থেকে দেখে দেখে এমনিতেই এই লোকটার প্রতি তার অনুভূতি গাঢ় হয়েছে। শত হোক স্বামী তো তার। যদি তাকে সত্যিই নিয়ে আসত ত্হলে বোধহয় রাহাই সবচাইকে বেশি খুশি হতো। রাহা ছোটশ্বাম ফেলে শুধায়,

“ আপনিই বলেছিলেন আমরা একে অপরের জীবনে নাক গলাব না। সে হিসেবে আমার প্রয়োজনে যদি আপনাকে কল দিতাম তখন বিরক্ত হতেন না? ”

রোহান চিবিয়ে চিবিয়ে শুধাল,

“ নিজের বউয়ের সাথে অন্য কাউকে দেখার মতো বিরক্ত নিশ্চয় হতাম না? ”

রাহা এবারে হাসে। বলে,

“ আর ইউ জ্বেলাস মিঃ রোহান ফারাবী? ”

“ নো, নেভার। ”

রোহান এই উত্তরটাও চোয়াল শক্ত করেই দেয়। রাহা তাকায় রাগী চেহারাটার দিকে। টানটান হয়ে আছে।মনে হচ্ছে রাগী বাবু!সুন্দর লাগে রাহার। হেসে বলে,

“ আপনাকে রাগলে ভীষণ সুন্দর লাগে। প্রেমে পড়ার মতো সুন্দর। ”

“ আমি জানি আমি সুন্দর। ”

রাহা মুহুর্তেই উ্ত্তর করল,

“ মোটেই না, অতো বেশি সুন্দর না। তবে রাগলেন বলে একটু বেশি সুন্দর লাগছে। ”

“ তাই নাকি?”

রাহা তাকায়। হুট করেই কিছু মনে পড়েছে এমন ভঙ্গিতে বলে,

“ অবশ্যই। শুনুন, আজ আপুর কিউট বাচ্চাটা দেখে এলাম। কি সুন্দর চুপচাপ আলুথালু একটা বাচ্চা৷ আমিও এমন একটা বাচ্চা নিয়ে নিব। ভালো হবে না বলুন? ”

রোহান ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,

“ এডপ্ট করবে? ”

“ না।”

“ তাহলে? ”

“ বাচ্চা জম্ম দিব। ”

রোহান এবারে গুরুত্ব দিল না। যেভাবে বলছে যেন ও বলল আর বাচ্চা জম্ম দিয়ে দিল।এতই সহজ? রোহান তাকায়। বলে,

“ এই কয়েকদিন এমন বাচ্চা বাচ্চা করার কারণ? ”

রাহা মুহুর্তেই উচ্ছাস নিয়ে বলে,

“ আম্মু বলেছে একটা বাচ্চা নিতে।শুনেছি আপনিও বাচ্চা ভালোবাসেন। ধরুন আমাদের একটা বাচ্চা হলো, তখন আপনি অনেক বেশি খুশি হবেন কি? ”

“ হু?”

রাহা হঠাৎই যেন কিছু মনে করল। বেশ ছটফট স্বরেই বলল এবারে,

“ ডক্টরের এপয়েন্টমেন্ট নেওয়া আছেে।চলুন না, ডক্টরের সাথে কথা বলে বাচ্চা নেওয়ার প্রসেসটা শুরু করে ফেলি। ”

রোহান এবারে ভ্রু বাঁকাল। বাচ্চা জম্ম দেওয়ার প্রসেস শুরু করতে তাকে ডক্টরের কাছে কেন যেতে হবে?নাকি এতদিন একই ঘরে থেকেওএই মেয়েটাকে ছুঁয়েও দেখেনি বলে তার পুরুষত্ব নিয়ে সন্দেহ করছে? কোনটা? সে দাঁতে দাঁত চাপে। রেগে ভ্রু নাচিয়ে বলে,

“ আমি কি ফিজিক্যালি আনেবল যে বাচ্চা নেওয়ার প্রসেস শুরু করতে আমায় ডক্টরের সাথে কথা বলতে হবে ? নাকি তোমার মনে আমার পুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে? কোনটা?”

রাহা মুহুর্তে কপাল চাপড়ায়। বলর

“আরেহ দূর! আপনি তো আর আমাকে ভালোবাসেন না তাই না? আপনি আমায় নিয়ে সংসার করবেন এই আশাতে নিশ্চয় বিয়ে করেন নি? সে আশা নিয়ে করলে প্রথমেই আমায় শর্ত দিতেন না। তাছাড়া আপনি তো আপুকে ভালোবাসেন। সে কারণে আমাকে নিশ্চয় কখনো ভালোও বাসবেন না আমি জানি। তাই আমি ভেবেছি আমরা অন্য উপায়ে বাচ্চা নিতে পারি। ফিজিক্যালি ইনভলড না হলে কোন পুরুষের শুক্রানু দ্বারা কোন নারী ভ্রূণ গর্ভে ধারণ করতে পারে IUI,ICSI আরো বহু পদ্ধতি আছে মিঃ রোহান ফারাবী। এই কারণেই ডক্টরের সাথে কথা বলার জন্য বললাম।আমরাও ওভাবে বাচ্চা নিতে পারব বলুন? ”

রোহান থ হয়ে তাকাল। বাহবা দিয়ে বলে উঠল,

“ বাহ! অনেক এগিয়ে। ”

#চলবে

#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_১৮
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

কয়েকমাস পরের কোন এক বিষন্ন সন্ধ্যা। ছুটি মাত্রই বন্ধুদের সাথে বাসায় ফিরেছিল। তখন সেখানে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের শুরু বোধহয়। ছুটির পরণে লং একটা শার্ট আর স্কার্ট। গলায় একটা জর্জেট ওড়না প্যাঁচানো।চোখে কালো ফ্রেমের চশমা। ছুটিকে ক্লান্তই দেখালো কিছুটা। উইলি আর এলিনার সাথে কথা বলে যখন নিজের রুমে গেল তখন আলো না জ্বালিয়েই সর্বপ্রথম ছুটি বিছানাতেই ঝাপিয়ে পড়ল। এতই ক্লান্ত যে তার আর এক মুহুর্তও চোখ খুলে রাখতে ইচ্ছে হচ্ছে না যেন৷ ছুটি মিনিট পাঁচ ওভাবেই চোখ বুঝে পড়ে থাকে। পরক্ষণে না চাইতেও সে উঠে বসে। গলা থেকে ওড়নাটা সরিয়ে একপাশে অবহেলায় ছুড়ে ফেলে আলো জ্বালাতে নিলেই কেউ একজন তার হাত চেপে ধরল শক্ত করেই। মুহুর্তেই নিজের দিকে টেনে নিল এক ঝটকায়। ছুটি ভয়ে ঢোক গিলে। চিৎকার করতে যাবে নেবে সাহস ও পায়না। গলা দিয়ে স্বর আসে না যেন। পরমুহুর্তেই যখন লোকটার শরীরের পরিচিত ঘ্রান নাকে আসে বুঝতে পারে এটা তারই প্রিয় পুরুষ, আবির। ছুটি এবারে সাহস পায়। ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ায়। ফের হেঁচকা টানেই ছুটিকে নিজের সামনে আনল আবির। দূরত্ব কয়েক ইঞ্চি কেবল। অতঃপর ঠোঁটে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে এক হাতে খিচে ধরল ছুটির কোমড়। অপর হাতে ছুটির গলায় আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বলল,

“ তো ম্যাম, অনেক তো হলো লুকোচুরি খেলা। অনেক তো হলো দূরে দূরে থাকা।তারপর বলুন, সেদিন ঐ ছেলেটার গলায় কোন জায়গায় না লাভ বাইট দেখিয়েছেন? আমি খুবই ডেস্পারেট আপনার গলায় তেমন একটা লাভ বাইট বসানোর জন্য৷ ”

ছুটি চোখ ছোট ছোট করে তাকায় কেবল। শরীর কাঁপছে তার। শ্বাস প্রশ্বাস ঘন হচ্ছে এত দিন পর এই পুরুষটার সংস্পর্শে এসে। ছুটি বারবার শ্বাস ফেলে। চোখেমুখে জেদের ছাপ নিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই আবির মুখ নামাল তার গলায়। নিজের পুরু ওষ্ঠের ছোঁয়া ওর গলায় দিতে দিতেই হঠাৎ গলার বাম পাশটায় যত্নসমেত কাঁমড় বসাল। কাঁমড়ের দৃঢ়তায় এতটাই যে ছুটি দাঁতে দাঁত খিচে চোখ বুঝে। হঠাৎই দুই হাতে ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইল আবিরকে। কিন্তু আবিরকে সরানো অতো সহজ বুঝি? আবির মুখ উঠিয়ে হাসে এবারে। এক হাতে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে অন্য হাতে ছুটির সেই কামড় দেওয়া জায়গায়টায় হাত বুলায়। ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,

“ এটা তোর শাস্তি। তোর মুখ দিয়ে অন্য ছেলের গলায় লাভবাইট দেওয়ার কথাটা বের হওয়ার জন্য। ”

ছুটি তীক্ষ্ণ চোখে তাকায় এবারে। ক্ষ্রিপ্ত চাহনিতে বলে,

“ শাস্তি দেওয়ার অধিকার কেবল আপনারই আছে? শুধু আপনিই সারাজীবন আমার উপর অধিকার খাটাতে পারবেন? নিজের যা ইচ্ছে তাই করতে পারবেন? আমি কি? আমি কিছু না? ”

ছুটি কথাগুলো বলতে বলতে একপ্রকার কেঁদে ফেলল৷ চোখ টলমল করে। লাল টকটকে বর্ণ ধারণ করে চোখ৷ আবির তা দেখেই শান্তস্বরে শুধাল,

“ যত অভিযোগ, অভিমান সব ভাঙ্গাব। তোর সব শাস্তি মাথা পেতে নিব। কিন্তু কান্না করবি না, মানব না আমি। ”

ছুটি তখন রাগে জেদে ক্ষুদ্ধ। বলে,

“ একশোবার কান্না করব। আপনার কথা আমি মানব কেন? কে আপনি হু?”

আবির এবারে ছুটির থুতনি তুলে ধরে। বলে উঠে,

“ তোর জীবনের অলিখিত মালিক আমি। যদি কথা না শুনিস তো সোজা কিডন্যাপ করে নিজের কাছে বন্দি করে রাখব৷ কান্না করলেই ভালোবেসে শোধ করে দিব। ”

ছুটি চোখ খিচে। যেন সে সহ্য করতে পারে না আবিরের ছোঁয়া। কপাল কুঁচকে বলে,

“ দূরে সরুন বলে রাখছি। ”

আবির সরল না। উল্টো আরেকটু চেপে দাঁড়িয়ে বলল,

“ তুই বললেই হলো? এতদিন পর বউ এর কাছে এসেছি আমি। আর তুই বলছিস এখনও দূরে দূরে থাকতে? ”

ছুটি তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসে এবারে। বলে,

“ বাহ! যখন অবহেলা করলেন? খোঁজ নিলেন না? কথা বললেন না আমার সাথে? তখন বুঝি কাছে কাছে থাকার ইচ্ছে ছিল আপনার? ”

আবির ছোটশ্বাস টানে। উত্তরে বলে,

“ এই একটায় কারণে আজ এত কাল তোর থেকে দূরে দূরে আছি। এতোটা কষ্ট সহে এসেছি। এতোটা যন্ত্রনা পুষে রেখেছি৷ এই একটা কারণেই। এইজন্যই তোর জন্য সবকিছু রেডি করে নিয়ে এসেছি। সব প্রমাণ হাজির করেছি। এবার অন্তত এই অভিমাণ থেকে মুক্তি দে। ”

ছুটি তীক্ষ্ন চাহনিতে তাকায়। মুহুর্তেই বলে,

“ আমার আপনাকে সহ্য হচ্ছে না। আমাকে একটু একা থাকতে দিন প্লিজ। একটু বের হয়ে যান এই রুম থেকে। দয়া করুন। ”

আবির এবারে মনোযোগ দিয়েই তাকায় ছুটির দৃষ্টির দিকে। যে দৃষ্টিতে সত্যিই উপেক্ষা, অনাগ্রহ, ঘৃণা!আবির ভয় পায়। খব বেশি দেরি হয়ে গেল কি? সময় পেরিয়ে গেল? বলল,

“ এতোটাই অসহ্য ঠেকছে আজকাল আমাকে? ”

ছুটি উত্তর করল,

“ হ্যাঁ। ”

আবির দূরে সরে দাঁড়ায়। অবিশ্বাস্য স্বরে বলে,

“ তুই আমায় ঘৃণা করছিস ছুটি? ”

ছুটি কাঁদতে কাঁদতে প্যাচপ্যাচে স্বরে বলে,

“ আমি আমাকেই ঘৃণা করি, আপনাকে ভালোবাসার বিষয়টাকেই আমি ঘৃণা করি এখন। ”

আবির কিছুক্ষণ স্থির দাঁড়িয়ে থাকে। কি করবে বুঝে উঠে না যেন। বুকের ভেতর টের পেল অদ্ভুত যন্ত্রনা। আবির স্থির দাঁড়িয়ে থেকে অবিশ্বাস্য চাহনিতে ছুটির দিকে তাকায়। বলে,

“ ঠিকাছে। চললাম, টেইক কেয়ার। ”

এটুকু বলেই আবির বের হয়ে যায়। ছুটি এবারে শব্দ করেই কেঁদে ফেলে। অবহেলায় চশমাটা ছুড়ে ফেলে অন্যদিকে। নিজের চুলগুলো সে নিজের হাতেই খামচে ধরে। মুহুর্তেই দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসে পড়ে সে। অনেকটা সময় সে কাঁদে। অনেকটা সময়ই অন্ধকারে বসে থেকে সে নিশ্চুপ কেঁদে অতঃপর একটা সময় পর নিজেকে স্থির করল। উঠে বসে। গিয়ে রুমের দরজা অফ করে বিছানায় গা এলিয়ে দেয় সে। অতঃপর দীর্ঘ একটা ঘুম দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাতেই চোখে পড়ে নিজের ল্যাপটপের উপরে একটা গিফ্টবক্স। ছুটি ভ্রু কুঁচকায়। এই গিফ্টবক্স টা কার? কোথায় থেকেই এল? আবির রাখল? ছুটি উঠে বসে। অতি ক্লান্তিতে গিফ্টবক্সটার প্রতি অতোটা আগ্রহ না দেখিয়ে নিজের কাপড় নিল প্রথমে, অতঃপর শাওয়ার নেওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে অগ্রসর হলো।তারপর আধঘন্টা সময় শাওয়ার সারল সে। ভেজা চুলগুলো তোয়ালেতে জড়িয়ে নিয়ে আগের মতোই একটা লং শার্ট আর স্কার্ট পরে বের হলো। দ্রুত হাতে এক মগ কফি করে গিফ্টবক্সটা খুলে নিল সে। অতঃপর যত্ন করেই তা খুলে৷ চোখে পড়ে কয়েকটা কাঁচের চুড়ি। ছুটি ভ্রু কুঁচকায়। কাঁচের চুড়ি? তাও এদেশে? কে আর গিফ্ট করবে? আবির? আনমনে নামটা ভেবেই ছুটি ছোটশ্বাস ফেলে। বুঝতে পারে এটা আবিরই। আবিরের সাথে তো মাস দুয়েক হলো কথাই হয়নি তার। খোঁজও পায়নি এই দুয়েক মাস। এমনকি ছোটনও জানিয়েছে সে নাকি জানে না। ছুটি ছোটশ্বাস টানে। এই দুয়েকমাস যোগাযোগের পথই রাখল না আর হঠাৎ এসে এসব গিফ্ট, আকস্মিক দেখা দেওয়া মানে কি? ছুটি এবারে আবিরের প্রতি জমা ক্রোধ, অভিমান, অভিযোগ থেকে বিড়বিড় স্বরে বলে,

“ আপনি খুব স্বার্থপর! খুব। কখনো আমার দিকটা ভাবেনই নি।খুব স্বার্থপর একটা লোক আপনি। ”

কথাটুকু বলেই সে হতাশ শ্বাস ফেলে। পুনরায় আরো একটা গিফ্ট বক্স পাওয়া গেল টেবিলের নিচে। ছুটি ভ্রু কুঁচকে তাও নেয়। খুলে দেখে একজোড়া নুপূর। কিছুটা বিস্ময় নিয়ে ছুটি যখন উঠবে তখনই আবারও টেবিলের বাম পাশটাতে সে আরো একটা গিফ্ট বক্স পেল। যেটাতে আছে লাল টকটকে একটা শাড়ি। ফের আরো দুটো গিফ্ট বক্স। একটাতে কানের দুল, অপরটাতে আলতা আর কাজল। ছুটি ছোটশ্বাস ফেলে। তার অবর্তমানে এই রুমে ডুকতে পারার মতো কেবল উইলি আর এলিনাই আছে। তারাই যে আবিরকে সাহায্য করেছেেতা বুঝতে আর বাকি থাকে না তার। কিন্তু কিভাবে?আবিরের সাথে যোগাযোগ হলো কিভাবে ওদের? আবিরই বা ওর এড্রেস পেল কিভাবে? ছুটি ভ্রু কুঁচকায়। রুম থেকে বেরিয়ে পা বাড়ায় এলিনা আর উইলির কাছে জিজ্ঞেস করতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

#চলবে…

#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_১৯
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

ছুটি যখন রুমে মূর্তির মতো স্থির বসে থাকল তখন ফের বাইরে থেকে আবির নক করল। পরমুহুর্তেই যখন বুঝল দরজা খোলাই আছে তখন পা বাড়াল সে। ছুটিকে তৈরি না হয়ে স্থির বসে থাকতে দেখে ভাবল আগের মতোই রাগ পুষছে। আবির ছোটশ্বাস ফেলে। বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,

“ আমার উপর রাগ জেদ যাই থাকুক সরাসরি দেখা, ওভাবে দরজার ভেতর চুপচাপ লুকিয়ে থেকে তো দেখাতে পারবি না। ”

ছুটি চোখের পানি মুঁছে ফিরে চাইল এবারে। স্থির তাকিয়ে থাকে সে প্রিয় পুরুষটার দিকে কান্না পাচ্ছে এখনো তার।আটকাতে পারছে না। ঠোঁটগুলো কেঁপে কেঁপে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। যেন কান্নায় ভেঙ্গে পড়বে সে এক্ষুনি। ধীর পায়ে পা এগিয়ে বহুকষ্টে সে আবিরের সামনে এসে দাঁড়াল। ফুঁফিয়ে কাঁদতে লেগেও থামানোর চেষ্টা চালায় ঠোঁট কাঁমড়ে। অতঃপর হুট করেই ঝাঁপিয়ে পড়ল আবিরের বুকে। দুই হাতে পুরুষটাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বোকা কন্ঠে বলে উঠে,

“আপনার প্রতি আমার আর রাগ নেই আবির ভাই। আমি আপনার পাশে ছিলাম না। ঐ মুহুর্তে আম্, আমি আপনার পাশে অব্দি ছিলাম না। জানতাম না পর্যন্ত আপনি কোমায় ছিলেন। আমার ভাগ্যটা ঠিক কতটুকু খারাপ! যদি এখনও আপনি সুস্থ না হতেন? যদি এখনও আপনি কোমায় থাকতেন? আমি তো কোনকালেই জানতে পারতাম না আপনি ঠিক কোন অবস্থায় আছেন,কেমন আছেন।আমার ভাগ্যটা সত্যিই খারাপ। ”

কথাগুলো বলতে বলতেই কাঁদে সে। আবির মৃদু হাসে। মেয়েটা এখনো তার বুকে মাথা রেখে কাঁদছে। হাতজোড়া আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে তাকে যেন ছাড়লেই সে হারিয়ে যাবে। আবির জানত এই মেয়েটা এমন করবে। আগে থেকেই ধারণা করেছিল বোকা ছুটি সবকিছু জানার পর এমন ভাবেই কাঁদবে তাকে আঁকড়ে ধরে। আর হলোও তাই। আবির এক হাত রাখে ছুটির পিঠে। অপর হাতে ছুটির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে মুখ নামিয়ে ছুটির চুলে চুমু দেয়। বলে,

“ কিন্তু আমার ভাগ্যটা খুব ভালো। আমার জীবনে যে আস্ত এক বোকাপাখি আছে ছুটি। ”

ছুটি কাঁদতেই থাকে বোকা বাচ্চার মতো। চোখ লাল টকটকে বর্ণ ধারন করেছে। মুখের অবস্থা বেহাল। ফুলো ফুলো লাগছে কান্নার দরুণ। আবির তা দেখে হাসে। ছুটির থুতনি হাতের আঙ্গুলে ঠেকিয়ে মুখটা উপরে তুলল। গম্ভীর স্বরে বলল,

“ আমার সাদা টিশার্টটা তো তোর নাকের পানি চোখের পানিতে এক হয়ে গেল ছুটি। আমার বুকটা ভিজিয়ে দিলি পুরো।আমি কি এই সুন্দর টিশার্ট টা এইজন্য পরেছি যে তোর চোখের পানি নাকের পানি ওটা বহন করবে বলে? ”

ছুটি ফ্যালফ্যাল করে তাকায় মুহুর্তেই। কান্না থেমে যায় যেন হুট করেই। আবিরের কথাগুলো শুনেই হঠাৎ দুই হাত পিঁছিয়ে যায়। তাকিয়ে দেখে সত্যিই আবিরের টিশার্টের অনেকাংশ ভিজে চুপসে গিয়েছে। ছুটি একটা টিস্যু পেপার নিয়ে আবিরের টিশার্টটা মুঁছে দিতে গেলেই আবির হাত চেপে ধরে। বলে,

“ তুই কার বোকাপাখি? ”

ছুটি এবারে শান্ত দৃষ্টি ফেলে তাকায়। অস্ফুট স্বরে শুধায়,

“ হু? ”

আবির ফের বলল,

“তুই কি অন্য কারোর নাকি আমার? আমার তো?”

ছুটি চুপ থাকে। আবির আবারও থুতনিতে হাত রেখে বলে,

“কী হলো বল। ”

ছু্টি উত্তর করল,

” হু,আপনার। ”

আবির হাসে। কিছুটা ঝুঁকে বলে,

“তাহলে তোর চোখের পানি নাকের পানিও আমারই। মানে আমার বুকে থাকতেই পারে। যেমনটা তুই আছিস। ”

ছুটি তাকায়। নরম স্বরে বলতে লাগে,

“ আবির ভাই… ”

আবির ভাই? আবির ভ্রু কুঁচকায়। এই মেয়েটাকে বিয়ের পর থেকে কয়বার বলবে তাকে আবির ভাই সম্বোধন না করতে? তবুও ডাকবেই এই মেয়ে। আবির চোয়াল শক্ত করে। মুখ টানটান করে বলে,

“ আবার বল। ”

ছুটি ফের বলতে নিল,

“ আবির ভা…”

আবির থুতনি চেপে ধরে এবারে। মুখ উপর করে। ছুটির চোখ লাল টকটকে। পাতলা মিহি ঠোঁটজোড়া এখনও কাঁপছে।আবির তাকায় মোহিত নজরে। অতঃপর নিজেকে না আটকিয়ে দ্রুত নিজের ঠোঁটজোড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করল নিজের প্রয় নারীটির অধর। আবির কিঞ্চিৎ হুশজ্ঞান হারিয়েই ছুটির অধরে সুখ খুঁজে যেন উম্মাদের মতো। এক হাতের অবস্থান ঠেকে ছুটির ঘাড়ে। অপর হাতে ছুটির কোমড়ে। মেয়েটাতে নাজেহাল করে দিয়ে যখন চুম্বনের সমাপ্তি ঘটাল তখনই আবির নিজের রুক্ষ্মতার প্রমাণ দিয়ে কাঁমড় বসাল ছুটির ঠোঁটে। অতঃপর কপালে কপাল ঠেকিয়ে বলল,

“এটা তোর ভাই বলার শাস্তি। বলবি আর ভাই? ”

ছুটি শুনতে পায় না যেন। ঠোঁট জ্বলে তার। চিনচিনে ব্যাথা হয় কাঁমড় দেওয়া জায়গায়। ছুটি হাঁপাতে থাকে। হাঁপাতে হাঁপাতেই হাত রাখে নিজের ঠোঁটে। ব্যাথায় চোখ টলমল করে তার। আবির তা দেখে দুই হাতে মুখ আগলে ধরে। বলে,

“ কেঁটে গিয়েছে? ”

ছুটি ফ্যালফ্যাল করে উত্তর দেয়,

“ রক্ত ও.. ”

আবির দেখে। ঠোঁটের এককিনারায় রক্তের লালাভ চিহ্ণ। খুব জঘন্য কাঁমড়ে যে এই অবস্থা তা বুঝে উঠে আবির ঝুঁকে কিছুটা৷ কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,

“ একটু বেশি হিংস্র হয়ে গেছি? উম্মাদের মতো স্পর্শ? তোর কষ্ট হচ্ছে খুব? ”

ছুটি তাকায়৷ কেঁদে ফেলবে যেন। আবির তা বুঝে হালকা হাসে৷ ফের সে অধর ক্ষতটায় ঠান্ডা চুমু আঁকল। বলল,

“মনে হতে পারে আমি কিছুটা হিং’স্র হয়ে উঠেছি। তবে আমি আমার এই আচরণের জন্য একটুও দুঃখিত নই৷ সব তোরই শাস্তি। আমার বহুদিনের দূরত্বের যন্ত্রনা প্রণয়ের রূপ নিলে একটু তো তীব্র হবে বোকাপাখি। তাছাড়া তোর ঠোঁট ওভাবে কাঁপছিল কেন? নয়তো আমি মোটেও ওভাবে ঝাপিয়ে পড়তাম না। আমায় ওভাবে টানছিল কেন তোর ঠোঁটজোড়া বল? দোষ তো তোর ঠোঁটেরই। ”

ছুটি এবারে ছোটশ্বাস টানে। বলে,

“ গলায় ও এখনও তীব্র ব্যাথা। সব শাস্তি কি কেবল কাঁমড় দিয়েই দিতে পারেন? ”

আবির ঠোঁট কাঁমড়ে ধরে এবারে। হাসি পায় তার। ঠোঁট বাকিয়ে বলে,

“ মোটেই না।বহুভাবে শাস্তি দিতে পারি। এসব তো ক্ষুদ্র শাস্তির নমুনা। আপনার বৃহৎ শাস্তি তো এখনো বাকি রয়ে গেছে ম্যাম। ”

.

রাহা কোলে নাদুসনুদুস একটা বাচ্চা। বাচ্চা স্বচ্ছ আর সুহার। নাম স্নিগ্ধ! রাহা ড্যাবড্যাব করেই সে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে থাকে। আজ এক মাস হলো সে স্বচ্ছদের বাড়িতে। ওদিকে রোহানের তখন নাজেহাল অবস্থা যেন। যে মেয়েটাকে নিজের প্রথম ভালোবাসার মানুষটার মতোই দেখতে,আচার আচরণে ঐ মানুষটার মতো বলে বিয়ে করেছিল সে মানুষটাকেও যে সে সত্যিই মন দিয়ে ফেলবে তা রোহান বুঝে উঠেনি। এই কয়েক মাসে মেয়েটা না চাইতেও যে তার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে তা রোহান বুঝে উঠতে পারে এই একমাস সময়ে। যখন মেয়েটা তার বোনের বাড়িতে গিয়ে বসে আছে। রোহান নিজে থেকে বারবার যোগাযোগ করতে চেয়েও কোন এক ইগোর কারণে সে আর যোগাযোগ করে উঠতে পারে না। রাহা কেন তাকে কল করল না এই এক মাসে? উচিত নয় কি কল করা? রোহান ছোটশ্বাস ফেলে। একবার যেন রাহাকে দেখতে পায় এই কারণেই সে স্বচ্ছদের ওদিক দিয়েই গাড়ি নিয়ে আসল। অথচ দেখা মিলল না। অতঃপর যখন বাড়ি গেল তখন দেখা মিলল তার মায়ের। সোফায় বসে কারোর সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে। রোহান ভ্রু বাঁকায়। ফোনের ওপাশ থেকে রাহার গলায় শুনতে পায়,

“ আম্মু? ও ভীষণ মিষ্টি না বলো? আমার না ওকে খুব পছন্দ হয়েছে। আমি আরো মাস ছয়েক এখানেই থাকব আম্মু। ওর হামাগুঁড়ি, হাঁটতে পারা সব নিজ চোখে দেখব বুঝলে? ইশশ! আমার বাচ্চাটা! ”

রোহান ভ্রু কুঁচকে নেয়। মাস ছয়? প্রশ্নই উঠে না৷ এই মেয়ে পেয়েছে কি? এই পরিবারের সবার খোঁজখবর নেয়, সবাইকে কল করে অথচ তার একটা বার খোঁজ নেয় না? একটাবার জিজ্ঞেস করে না সে কেমন আছে? এতই অহংকার মেয়েটার? এত ভাব? রোহান ছোটশ্বাস টানে। দ্রুত ওভাবেই বের হয়ে যায় সে গাড়ি নিয়ে। তারপর মিনিট দশের মধ্যেই স্বচ্ছদের বিল্ডিংয়ের সামনে এসে ফোন দেয় রাহাকে। রাহা ভ্রু কুঁচকায়৷ এতগুলো দিন যে মানুষটা কল করেনি সে মানুষটা আজ কেন কল করবে? বুঝে উঠে না৷ মাত্রই তো সে রোহানের আম্মুর সাথে কথা বলল। রাহা অতোশত না বুঝে কল তুলে। বলে,

“ মিঃ রোহান ফারাবী? আপনাকে কি ভূতে ধরেছে আজ? ”

রোহান দাঁতে দাঁত চাপে। এসব আজেবাজে কথা যে একমাত্র রাহার দ্বারাই সম্ভব তা সে জানে। বলে,

“ দ্রুত নিচে নামো নবনী। অপেক্ষা করছি। ”

রাহা চোখ গোলগোল করে তাকায় এবারে। বলে কি? সোজা এখানে চলে এসেছে এই লোক? কারণ কি? রাহা বুঝে উঠে না। স্নিগ্ধকে সুহার কাছে দিয়ে বিড়াল পায়ে বেলকনিতে যায়। দেখে, সত্যিই একটা গাগি দাঁড়িয়ে আছে। রাহা একদিকে খুশি হয় অপরদিকে কৈাতুহলি নজরে চেয়ে থাকে। পরমুহুর্তেই কি বুঝে ওড়না মাথায় দিয়ে নিচে নামে। একদম গাড়ির কাছে গিয়ে কাঁচ দিয়ে রোহানের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকাতেই রোহান কাঁচ নামাল। গম্ভীর স্বরে বলল,

“ গাড়িতে উঠো। ”

রাহা তাকায়। গাড়িতে উঠবে কেন এখন? কোথায় নিয়ে যাবে? সে তো কাউকে বলেও আসেনি। নিজের ফোনটাও আনেনি। রাহা সরাসরি দৃষ্টিতে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই রোহান ফের গাঢ় গলায় ধমকস্বরূপ বলে,

“ কি হলো? উঠতে বলেছি তো? ”

ছুটি হুট করে আর কিছু বলতে পারল না। গটগট উঠে বসল। সামনে তাকিয়ে সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ল,

“ কোথায় যাব জনাব রোহান ফারাবী? ”

রোহান গাড়ি চালাতে শুরু করে। নাক লাল হয়ে উঠছে তার অজানা কারণেই। অজানা কারণেই তার রাগ লাগছে রাহার প্রতি? অথচ এটা যৌক্তিক নয়। বেমানান। তবুও রোহানের রাগ লাগে। বলে,

“ যেখানে তোমার যাওয়ার ওখানেই যাবে। ”

#চলবে…