প্রেমের সমর ২য় পরিচ্ছেদ পর্ব-২৪+২৫+২৬

0
35

#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২৪
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

আবির শাড়ি পরাতে জানে না৷ তবুও চেষ্টা চালাতে অপরাধ কি? নিজেরই তো বউ। সে কথা মনে নিয়েই সে শাড়ি হাতে অপেক্ষা করল। মোবাইলে টিউটোরিয়াল দেখল।অতঃপর একটা সময় পর ছুটি যখন উঁশখুশ করতে করতে বের হলো তখন বাঁকা চাহনিতে চাইল সে। ওদেশের মাটিতে তখন মোটামুটি রকমের ঠান্ডা। রুম হিটারের কারণে যা তেমন বুঝা যায় না। তবে ছুটির হাত পা তবুও ঠান্ডা হয়ে আসে। হিম স্রোত বয়ে যায় আবিরকে এগোতে দেখের।পরনে কেবল ব্লাউজ এবং পেটিকোড। মসৃন পেটের অংশটা দৃশ্যমান ঠেকছে । আবির হাসে ছুটির অবস্থা দেখে। এগিয়ে ভ্রু বাঁকিয়ে বলে,

“ রেডি আপনি শাড়ি পরার জন্য মিসেস ছুটি? ”

ছুটি মাথা তুলে তাকায়। কোনরকমে শুকনো গলায় শুধাতে নিল কিছু। কিন্তু পারল না। আজ এতকাল পর পুরুষটার দৃষ্টি দেখে সে নাজেহাল হতে বাধ্য। বুকের দ্রিমদ্রিম আওয়াজ উঠছে যেন। মুহুর্তেই বুঝে উঠে পুরুষ মনের আকাঙ্খা! আবির ঠোঁট এলিয়ে হাসে। এক হাত দিয়ে ছুটির কোমড় খিচে ধরে এগিয়ে আনে নিজের সম্মুখে। অতঃপর শাড়ির এককোণা গুঁজে নিল ছুটির কোমড় বরাবর। পেঁচিয়ে পরানোর চেষ্টা চালাতে চালাতে বলে,

“ তুই যদি চাস তবে সারারাত এভাবেই শাড়ি না পরেই আমার সামনে বসে থাকতে পারিস। আমি কিছু মনে করব না। ”

কথাটা বলতে বলতে স্পষ্টই আবিরের মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠেে।দৃষ্টিতে অন্যকিছু বুঝায়। ছুটি তা দেখে হাঁসফাঁস করে উঠে যেন৷ আড়ষ্ট স্বরে জানায়,

“ আপনি আগের থেকে বেহায়া হয়ে গিয়েছেন। ”

আবির ভ্রু বাঁকায় এবারে। ক্রুর হেসে বলে,

“ আগে বুঝি ভদ্র ছিলাম? অথচ তোর সাথে তো আমার বহু অভদ্রতার প্রমাণ আছে। তুই ভুলে গিয়েছিস? ”

ছুটির কান গরম হয়ে উঠে। লজ্জায় রক্তিম হয়ে উঠে মুখ। এই লোক এমন কেন? এমন কথাও বা কোথায় থেকে শিখেছে। ছুটি সে লজ্জা আড়াল করতে কোনভাবে না জানার ভান করে উত্তর করে ছোটস্বরে,

“ ভুলে গিয়েছি। ”

আবির হাসে এবারেও। ছুটির শাড়ির কুঁচিটা ধরতে ধরতে বলে,

“ সমস্যা নেই৷ নতুন করে মনে করাব সব আবার। খালি একটু ওয়েট কর। ”

ছুটি আর তাকাল না। উত্তরও করল না। শুধু জানে সামনের পুরুষটা আজ তাকে নির্ঘাত লজ্জায় ডুবিয়ে মারার প্ল্যান করেছে। আবির ছুটির অবস্থা দেখে হাসে। খুব যত্ন নিয়ে ছুটির কুঁচি করল। যদিও খুব একটা পারল না সে। তবুও যেটা পারল ওটাই যখন গুঁজতে নিব ছুটির পেটের দিকে ঠিক তখনই ছুটি দূরে সরে দাঁড়ায়৷ বলে উঠে,

“শাড়ির কুঁচিটা আমিই গুঁজতে পারব। দিন।”

আবির ভ্রু বাঁকায়। এমন ভাবো দূরে সরে যাওয়ার মানে কি? আবির কি তাকে আগে ছোঁয়নি? বলে,

“ এমন করছিস যেন তোর আর আমার নতুন বিয়ে হয়েছে। এটা আমাদের ফার্স্ট নাইট। তোকে এর আগে আমি আর ছুঁইনি কখনো। অথচ তোর সমস্ত শরীরেই… ”

ছুটি জানে এই মুহুর্তে এই মহান পুরুষ কি বলতে পারে। তাই দ্রুত কথা ঘুরানোর উদ্দেশ্যে বলে উঠল সে,

“আপনি কি আমায় ছোঁয়ার জন্যই শাড়ি পরাতে চেয়েছেন?আধৌ শাড়ি পরাতে পারেন? ”

আবির এমন উত্তরে যেন বড়ই ক্ষুদ্ধ হলো। বিদ্বেষ নিয়ে বলল,

“ ছিঃ! তোকে ছোঁয়ার জন্য এখন আমায় শাড়ি পরানোর আশ্রয় নিতে হবে? এত খারাপ দিন এসেছে আবিরের? যে নিজের বউকে ছুঁতে সে শাড়ির পরানোর ছল অবলম্বন করবে? ”

“ তাহলে? ”

আবির ফের তাকায়। একহাতে কোমড় টেনে নিজের আর ছুটির মাঝে আর এক ইঞ্চিও দূরত্ব সে অবশিষ্ট রাখল না। মুখ নামিয়ে ঠোঁট ছোঁয়াল ছুটির গলায়৷ অতঃপর সেভাবেই গলাতে মুখ ডুবিয়ে বলে উঠে,

“ তোকে ছুঁতে আমার এক সেকেন্ডও সময় নিতে হবে না বোকাপাখি৷কোন অযুহাতও না। ”

ছুটি সামলাতে পারল না এবারে আবিরের অবাধ্য ছোঁয়া। কেমন নাজেহাল দেখাল। আবিরের হাতের কুঁচিগুলো তখন ফ্লোরেই গড়াগড়ি গেল। অসম্পূর্ণ শাড়ি পরানোআর পুরুষটির অধরের উষ্ণ ছোঁয়া। দুটোতে হাঁসফাঁস করতে করতে সে কোনরকমে বলে,

“ শাড়ি ঠিক করব। ছাড়ুন। ”

আবির ছাড়ল না যেন। বরং ছুটির প্রতি আরো অগ্রসর হতে নিল তার প্রেমস্পর্শ। ঘাঢ় স্বরে জানাল,

“ ছাড়লাম না। ”

এইটুকু বলেই সন্ধ্যায় গলায় যে জায়গায়টায় কামড় বসিয়েছিল ঠিক সেখানেই ফের কাঁমড় বসাল। ছুটি তখন দাঁত খিচে নেয়। চোখ বুঝে এক হাতে খামচে আঁকড়ে ধরে আবিরের চুল। সেভাবেই বলতে নিল,

“ আবি….”

ছুটি বলতে পারল না। তার আগেই আবিরের ঠোঁটজোড়া গলা ছেড়ে কানের দিকে এল। ফিসফিস স্বরে জানাল,

“ আমার বোধহয় তোকে প্রয়োজন এইমুহুর্তে। নিজের উপর কন্ট্রোল রাখতে চাইছি না আপাতত। ইফ ইউ ওয়ান্ট, আই ক্যান কন্টিনিউ দিজ। ”

ছুটি উত্তর করে না। তখন হিম স্রোতের ন্যায় এক অনুভূতি তার শিরদাঁড়া বেয়ে চলেছে যেন। লোমকূপ অব্দি কেঁপে উঠে এই পুরুষের কন্ঠ আর কথাতে৷ আবির হাতে। ফের বলে,

“ ডু ইউ ওয়ান্ট মি টু? ”

ছুটি এই পর্যায়ে চোখ মেলে তাকায়। তবে সরাসরি দৃষ্টি ফেলতে পারে না এই পুরুষটির চাহনিতে। এই চাহনি তাকে এক সেকেন্ডেই কাবু করতে সক্ষম। ছুটি উত্তর দিতে পারে না। তবে এক হাত আবিরের চুলে খামচে রেখে অপর হাত আবার আবিরের ঘাড়ে রেখে যখন শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তখন বোধহয় আবির উত্তর পেয়ে গেল। মুখে বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে সে ছুটির দিকে তাকায়। বলে,

“ শাড়ি পরানোর প্রতিশ্রুত আজ বাকি থাক।তোকে পাওয়ার আকাঙ্খা যে বড্ড তীব্র! ”

.

রাহার শরীর উষ্ণ। জ্বর নেমেছে শরীরে। যার দরুন ঘুম ও আসছে না তীব্র মাথা ব্যাথায় আর শরীর ব্যাথায়।তবুও চোখ বুঝে ঘুমানোর চেষ্টা করে সে। কিন্তু ঘুম আসে না। হাঁসফাঁশ করে । একবার এদিক তো একবার ওদিক ঘুরে।রুমের মৃদু হলদেটে আলোতে কতক্ষন রোহানকে ঘুমাতে দেখে নিশ্চুপ তাকিয়ে থাকে।চুল গুলো পড়ে আছে কপালে এলোমেলো হয়ে।রাহা তাকিয়ে পরখ করে।ছেলেটাকে কি দারুণ লাগে ঘুমালে৷ আচ্ছা, এত তাড়াতাড়ি ঘুম পেয়ে গেল এই ছেলের? কই তার তো এতক্ষন যাবৎ চোখ বুঝে থেকেও ঘুম পেল না৷ রাহা বুঝে উঠে না,এই ছেলেটাকে তার এত মনে ধরেছে কেন? নির্দিষ্ট কোন কারণ তো নেই৷ তবুও এই ছেলেটাকে তার কেন জানি না ভালো লাগে। রাহা হাত এগোল। জ্বর শরীরেই রোহানের চুলগুলোতে হাত বুলাতে লাগল আলতো হাতে। রোহান এবারে চোখ মেলে তাকায়। এতক্ষন যে ঘুমিয়েছিল এমন ও নয়। ঘুমানোর ভান করছিল। কারণ এর আগের সময়টায় সে চোখ বুঝে থাকা রাহাকে পরখ করছিল। যখন রাহাকে চোখ খুলতে দেখা গেল তখনই সে চোখ বুঝেছিল। রোহান মনে মনে কিঞ্চিৎ হাসে তার এই গোপণ প্রেমে পড়া নিয়ে।সত্যিই কি সে এই মেয়েটার প্রেমে পড়েছে? নয়তো এসব লুকোচুরির কোন প্রশ্ন আসে? রোহান তাকায়। তার চুলে হাত বুলাতে দেখে ঠোঁট বাকিয়ে হেসে শুধায়,

“ কি ব্যাপার নবনী? না ঘুমিয়ে আমার চুলে হাত বুলাচ্ছো?”

রাহা ভ্রু বাঁকিয়ে তাকায়। অন্যদিনের মতো ছটফট চঞ্চল গলায় উত্তর করল না৷ তবে ছোটশ্বাস ফেলে শান্ত স্বরে জানাল,

“ আপনার চুলগুলো কপালে পরে ছিল। ভাবলাম সরিয়ে দিই। ”

রোহান বোধহয় এইটুকু উত্তরে সন্তুষ্ট বোধ করতে পারল না। জানাল,

“ শুধু এইটুকুই? ”

“ হ্যাঁ। ”

রোহান কিঞ্চিৎ নিরাশ দৃষ্টিতেই তাকায়। পরমুহুর্তেই আবার শুধায়,

“ ঘুমাও। রাত হয়েছে অনেক। ”

“ হ্যাঁ। ”

এই হ্যাঁ হ্যাঁ, আর শান্তস্বরে উত্তর যেন রাহার সাথে যায় না। রাহা ছটফটে, চঞ্চল তরুনী৷ এমন শান্ত উত্তর সে কেন দিবে? রোহান এমন উত্তর পেতে চায় না মোটেও৷ শুধাল,

“ হঠাৎ এত শান্ত দেখাচ্ছে তোমাকে? এটা একটু অপ্রত্যাশিত নয়? ”

রাহা এই পর্যায়ে অন্য দিকে ফিরে। বলে,

“ ঘুমান। শুভরাত্রি। ”

.

তখন মাঝরাত। রাহার শরীর ভীষণ উষ্ণ। জ্বরে তখন তার হুশজ্ঞান নেই বললেই চলে। শুধু শীত করছে এইটুকু বোধজ্ঞান তার আছে। উষ্ণতা পেতে ক্রমশ কোন কিছু পেতে চাইল যেন। রোহানের তখন চোখ বুঝে এসেছিল। হুট করেই নিজের শরীরের সাথে আরো একটা শরীরের উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ খুলে। উষ্ণতা টের পাওয়া যায় শরীর সংস্পর্শে। রোহান ভ্রু কুঁচকায়। দেখা গেল রাহা খুব গুঁটিশুঁটি মেরেই তার দিকটায় শুঁয়ে আছে ।যেন প্রচুর ঠান্ডা লাগছেে।রোহান আন্দাজ করে হাত রাখল মেয়েটার কপালে। মুহুর্তেই যা বুঝার বুঝা হয়ে গেল। জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। এই পর্যায়ে সে রাহাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“ বলেছিলাম বৃষ্টিতে না ভিজতে। তবুও ভিজেছো। ভেজা শরীরে কতোটা সময় ধরে ছিলে তারও ঠিক নেই। এখন তো এল জ্বর তাই না? ”

রাহা শুনে না৷ সে তো নিজের মধ্যেই নেই বলতে গেল। রোহান দ্রুত একটা কম্বল এনে পেঁচিয়ে নিল রাহাকে। ফুলো গালে মৃদু হাত স্পর্শ করে ডাকল,

“ নবনী? নবনী? মেডিসিন নিবে। উঠো। ”

রাহা শুনে না। রোহান ফের বলল,

” নবনী! ”

রাহা এতোটা সময়ে গিয়ে উত্তর করল। রোহানের কাছ ঘেষে শুঁয়ে এক হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরল রোহানের গলা। বড্ড আড়ষ্ট স্বরে ঘুমের মধ্যেই উত্তর দিল,

“ উহ্ শীত করছে।”

রোহান ছোটশ্বাস ফেলে।রাহাকে সরিয়ে দিতে মন চায় না৷মন বলে, যেভাবে কাছ ঘেষে আছে ওভাবেই থাকুক না, সমস্যা কি?রোহান নিজেও হুট করেই নিজের অবাধ্য মনকে প্রশ্রয় দিয়ে দুই হাতে আলতো করে জড়িয়ে নিল রাহাকে। উষ্ণতা স্বরুপ নিজের আলিঙ্গন দিল। রাহা তখন সে উষ্ণতায় গুঁটিশুঁটি হয়ে রোহানের বুকেই ঘুমিয়ে নিল। যেন আদুরের পাখির ছানাটা! রোহান তা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। বিনিময়ে রাহার কপালে খুবই সতর্কতা সহিত একটা আদুরে স্পর্শ আঁকল।

#চলবে…

#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২৫
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

ভোরের আলো যখন চোখে এসে পৌঁছাল তখন রাহা কপাল কুঁচকায়৷ মাথাটা কেমন যেন ব্যাথা করছে,ভার হয়ে আছে যেন! মুখটা কেমন তেঁতো ঠেকছে। কেমন যেন এক বিস্বাদময় স্বাদ।শরীর ঘেমে উঠে তার । যেন জ্বর সবেই নামছে শরীর থেকে।পরনের জামাটা ঘামে হালকা ভেজা ঠেকছে। রাহা যখন অল্প অল্প করে চোখ মেলে তাকাল তখন নিজে আবিষ্কার করল সে রোহানের সংস্পর্শেই আছে। রোহানের বাহুবন্ধনেই বুকের মাঝে গুঁটিশুঁটি হয়ে শুয়ে ছিল এতক্ষন । রাহা তাকায়। বিশ্বাস হয় না যেন। ফের চোখ পরিষ্কার করে তাকায়। রোহানই!এই আশ্চর্যময় কান্ডটা রাহা যখন বিশ্বাস করতে না পেরে গোলগোল চোখে চেয়ে থাকে ঠিক তখনই কানে এল,

“ জ্বর কমেছে নবনী? ”

এইটুকু বলতে বলতেই রোহান হাত বাড়াল।যে দুই হাতে এতক্ষন রাহাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়েছিল তার একটা হাতই ছোঁয়াল রাহার কপাল। শরীরের তাপমাত্রা বুঝে বলে উঠল,

” জ্বর তো কমেছে। ”

রাহা তাকায়।কমেছে বোধহয় জ্বর। তার তো সেসব খেয়াল নেই। সে এখনো একটা ঘোরে যেন। এখনে বিশ্বাস হচ্ছে যে রোহান তার আপুকে এতোটা ভালোবাসে সে রোহান তাকে এভাবে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়েছে।কি আশ্চর্য! রাহার জ্বরের বিষয়টা খেয়াল না হলেও খেয়াল আছে একটু আগেকার দৃশ্য।বলে উঠল,

“ আপনি যথেষ্ট দূরত্ব না রেখে ঘুমিয়েছেন মিঃ রোহান ফারাবী। ”

রোহানের এই পর্যায়ে হাসি আসে। যে মেয়েটা জ্বরে কাত হয়ে তাকে আঁকড়ে ধরেছিল সে জাগ্রত অবস্থায় যে এমন করবে তা তার জানা৷ শত হোক এটা নবনী তো!রোহানের হাসি পেলেও গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,

“ আমি নই, তুমি। ”

রাহা ভ্রু কুুচকে নেয়। বলে,

“ মানে? ”

রোহান উঠে বসে। একদম ভদ্র গম্ভীর ছেলের ন্যায় উত্তর করল,

“ তুমিই আমাকে জড়িয়ে ঘুমাচ্ছিলে। তোমার জানা উচিত আমি কোন স্যুয়েটার বা ব্লাঙ্কেট নই যে তোমার শীত করলেই আমার বুকে নিয়ে তোমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে হবে। ”

রাহা মুহুর্তেই বলে,

” তো আপনাকে স্যুয়েটার বা ব্লাঙ্কেটের সাথে তুলনা করল টা কে? ”

“ তুমিই। শীত করছে শীত করছে বলে এমন ভাবে গুঁটিশুঁটি মেরে জড়িয়ে ধরে ঘুমালে যে ঔষুধ খাওয়ানোর সুযোগটা অব্দি দাও নি। পরে অনেক কষ্ট করে উঠে তোমায় ঔষুধ খাইয়েছি। ”

এটা ঠিক রাহা প্রথমে রোহানের বুকে গুঁটিশুঁটি মেরে ঘুমিয়েছিল। তবে পরেরবার উঠে যখন রোহান মেডিসিন দিল এর পরের বার রোহান নিজেই রাহাকে নিজের বুকে টেনেছে। ব্লাঙ্কেট জড়িয়ে আষ্ঠেপৃষ্ঠে এই মেয়েটাকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়েছিল। রোহান পরবর্তী কাহিনী টুকু প্রকাশ করল না। তবে রাহা এসব শুনে কিঞ্চিৎ হলেও থতমত খেল। বলল,

“ ওসব জ্বরের কারণে। কিন্তু আপনাকে ঔষুধ খাওয়াতে তো আমি বলিনি। আপনি চাইলে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতে পারতেন। কি প্রয়োজন ছিল এভাবে জড়িয়ে রেখে ঘুমানোর? ”

রোহান ছোটশ্বাস টানে। এই মেয়েটা সত্যিই জটিল! এত প্রশ্ন মাথায় কেন ঘুরে? রোহান নিশ্চয় আসল উত্তরটা দিবে না? রোহান গম্ভীর স্বরে উত্তর করে,

“ মানবতা। ”

রাহার কেন জানি উত্তরটা পছন্দ হলো না। একদমই পছন্দ হলো না। সকাল সকাল এই পুরুষটির বুকে নিজেকে আবিষ্কার করে যতটা চকচকে হয়েছিল তার চোখমুখ এই উত্তরটা পেয়ে তার ততটুকুই রাগ লাগল। কে বলেছে মানবতা দেখাতে? রাহা বলেছে? রাহা মুহুর্তেই উত্তর করল,

” লাগবে না আপনার মানবতা। আমাকে আমার আপুর বাসায় দিয়ে আসবেন আজই। ”

রোহান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় এবারে। ফের এই কথা উঠাবে কেন রাহা? কি পেয়েছে কি? রোহান যে তাকে মিস করে এটা বুঝে এই মেয়েটা? একটা অস্থিরতা যে কাজ করে এটা জানে? এই মেয়েটার প্রতি যে তার একটু হলেও দুর্বলতা কাজ করছে এটা বুঝে উঠে না মেয়েটা?রোহান ঘাড় ঘুরিয়েই সরাসরি উত্তর করল,

“ বললেই হলো? ”

“ অবশ্যই হলো। আমার অধিকার আছে যাওয়ার। আমার বাচ্চাটাও ও বাসায় পরে আছে। নিশ্চয় আমায় মিস করছে।আমাকে দিয়ে আসুন। ও বাসায় আমার আপু আছে, বাচ্চা আছে।এই বাসায় কেউ নেই যে আমাকে এখানে থাকতেই হবে। আমি মাঝেমধ্যে অবশ্যই আসব মিঃ রোহান ফারাবী। কয়েক সপ্তাহ কয়েক সপ্তাহ থেকে আবার চলে যাব। তাছাড়া আমাদের বিয়েটা তো হয়েছিলই এমন শর্তে যে আমরা নিজেরা নিজেদের মতোই বাঁচবে।আপনি আপনার মতো, আমি আমার মতো। ”

এত স্পষ্ট স্বরে এতগুলো কথা রোহান হজম করতে পারল না। সকাল সকালই মেজাজ খারাপ লাগল তার। রাগে মুখ কিঞ্চিৎ লাল দেখায়। বলে উঠে,

“ আগামী ছয়মাসে যদি কোথাও যাওয়ার নাম করেছো নবনী? সত্যি সত্যিই তুমি যা চেয়ে আসছো এতদিন তাই হবে। এবং তুমি এখানে থাকতে বাধ্য হবে। ”

রাহা বুঝে উঠে না। দ্রুত বলে,

“ কি হবে? ”

” বাচ্চা! তবে মেডিক্যালি দৌড়াদৌড়ি করে নয় বা ডক্টরের সাথে আলোচনা করে নয়। ”

রাহা ফের প্রশ্ন ছুড়ে,

“ তাহলে? ”

রোহান আর দাঁড়ায় না। যেতে যেতে বলে,

“ বুঝে নাও।এইটুকু বোঝার বয়স তোমার হয়েছে। ”

.

রাত গভীর! সিয়ার হাতে ঘুমের ঔষুধ। আজকাল খুব সহজে ঘুম ধরে না তার। কেন যে ঘুম আসে না তাও জানে না। আর এইজন্যই রোজ রোজ ঘুমের ঔষুধ গিলে নেয় সে। কোন ডক্টরের পরামর্শে নয়। বরং নিজে নিজেই। যদিও এই বিষয়টা কাউাে জানায়ও নি সে। সিয়া ছোটশ্বাস ফেলে। ফেইসবুক হুট করেই একটা পোস্ট করে,

“ কল্প? তোমার মুখে আমি হাসি দেখি না বহুদিন। তুমি কি জানো? আমার মুখেও হাসি থাকে না আজকাল। আমি নির্জীব পদার্থের ন্যায় ঘুরে বেড়াচ্ছি! আমি শূণ্যতা নিয়ে দিক-বিদিক ঘুরে এইটুকু বুঝেছি তুমি আসলে আমার নও। কোনকালেই নও। কিন্তু তবুও তুমি আমার। বিশ্বাস করো, তুমি সত্যিই আমার। আমার কল্পনায়! ”

এই অল্প লেখাটুকু লিখতে লিখতেই সিয়ার চোখে পানি আসে। চোখ টলমল করে। এইটুকু পোস্ট করেই সিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। ঘুমের ঔষুধটুকু খেয়ে যখন ঘুমে ডুলুডুলু অবস্থা তার তখন আলো নিভাল সে। বিছানার এককোণায় যখন গুঁটিয়ে পড়বে ঠিক সেই মুহুর্ত টাতেই তার ফোনে কল এল। সিয়ার ঘুম ফেল। তবুও কেন জানি না সতর্ক হয়ে মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ বুলায় সে। নাম্বারটা চেনা। সচারচর এই নাম্বার থেকে কল আসে না। তবে আজ কিভাবে আসল তাও বুঝে উঠে না সে৷ সিয়ার ঘুমে চোখ নিভু নিভু।ঘুম পেল খুব। তবুও সে নতুন উচ্ছাসর কল তুলল সে। বলল,

“ এত রাতে কল দিলেন সাদ ভাই? আমি তো কিছু করিনি। আপনার কথা মতো রিক্সায় করে চলে এসেছিলাম তো তখন। ”

সাদ কিছুটা সময় চুপ থাকে। অতঃপর নিরব মুহুর্ত টুকু কাঁটিয়ে অনেকটা সময় পর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

“ সিয়া? আমি তোমায় হাসতে দেখতে চাই। ”

সিয়া হাসে এবারে। ঘুমু ঘুমু স্বরে বলে উঠে,

” এইজন্য কল দিলেন?”

ওপাশ থেকে সাদ মুহুর্তেই বলল,

“ আমায় অপরাধী করো না সিয়া। আমি তোমার হাসি কেড়ে নিতে চাই নি। কখনো চাইনি।আমাকে এভাবে অপরাধীদের দিকে ঠেলে দিও না। ”

সিয়া তখন ঘুমে চোখ বুঝে নিয়েছে। বলল,

“ আমি তো বলিনি আপনি আমার হাসি কেড়ে নিয়েছেন।”

সাদ আবারও চুপ থাকে। সিয়ার ঘুম চরম মাত্রায় তবুও প্রিয় পুরুষটির পাল্টা উত্তর শোনার জন্য সে অপেক্ষায় থাকল৷ চোখ বুঝে নিয়েও চোখ খুলে ফেলল সে। বহুক্ষন অপেক্ষা করল ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে৷ অতঃপর সাদ বলল,

“ তোমার চেহারায় পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি সিয়া। চোখের নিচে কালো দাগ বসিয়েছো। রাত জাগো তুমি। আমি প্রায়সময়ই দেখি তুমি রাতে অনলাইনে। ”

সিয়া মুহুর্তেই প্রশ্ন ছুড়ে,

” তো? ”

সাদ এবারে বলল,

“ কেন নিজের সুন্দর জীবনটা নষ্ট করছো? ”

সিয়া হেসে উত্তর করল,

“ এমনিই। ”

” আমি চাই তুমি সুন্দরভাবে বেঁচে থাকো। এসব আবেগ ভুলে বাঁচতে শিখো সিয়া। ”

সিয়ার ঘুম যেন কোথায় পালিয়ে গেল। মুহুর্তেই শক্তপোক্ত স্বরে উত্তর করল,

” আবেগ নয়।”

সাদ প্রশ্ন ছুড়ল,

“ অনুভূতি?”

” হ্যাঁ। ”

সাদ প্রতিবারের মতো জানাল,

“ মুঁছে ফেলো।”

সিয়া এবারে শক্ত গলায় বলল,

“ সম্ভব নয়।”

” সম্ভব। ”

“ আপনার থেকে তো অনুভূতি চাইনি আমি সাদ ভাই। কাজেই আমার অনুভূতি মুঁছতে বলার আপনার কোন অধিকার নেই৷ ”

এই কথাগুলো সিয়া শক্ত গলাতেই বলল। অতঃপর কল রেখে দিল। সিয়া এইভাবে সাদের দেওয়া কলকে প্রত্যাখান ও করতে পারে এটা বোধহয় আজই হলো। যে সিয়া সাদের একটা কথার অপেক্ষায় থাকে, কন্ঠ শোনার অপেক্ষায় থাকে সে সিয়া ফোন রেখে দিল?

.

ভীনদেশে এসে বহুদিন পর নিজের প্রিয় নারীকে কাছে পাওয়ার সুখে আবির নিরব চেয়ে থাকে। পরখ করে ঘুমন্ত ছুটিকে। মুহুর্তেই বাঁকা হাসে একটু আগের ঘটনা মনে করে। ছুটি ঘুমিয়েছে অল্প সময়ই হয়েছে। আর তখন থেকেই সে তাকিয়ে আছে এই মেয়েটার দিকে। মেয়েটা তার বক্ষেই গুঁটিশুঁটি হয়ে ঘুমোচ্ছে। চোখ বুঝে রেখেছে। ফুলো গাল দুটো বাচ্চাদের মতো লাগছে যেন। আবির বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে গাল ছোঁয়ে। মুখ নামিয়ে একটা চুমু এঁকে ফিসফিস স্বরে বলে,

“ তুই এতো বেশি আদুরে না হলেও তো হতো ছুটি। তোর মুখটা দেখলেই আমার এত আদুরে অনুভূতি আসে কেন? ”

এইটুকু বলেই আবির ফের ঠোঁট ছোঁয়াল ছুটির ঠোঁটে, নাকে,কপালে সমগ্র মুখে। বেচারা ছুটি ঘুমিয়েছেই অল্প কিছুক্ষন সময় হলো। এর মধ্যে ফের ঘুমের মধ্যে আবারও কিছুর বিচরন টের পেয়ে কোনভাবে চোখ মেলে তাকায় সে। শরীর জুড়ে অল্প রিনরিনে ব্যাথা টের পায়।যা স্পষ্ট মনে করায় তার সংস্পর্শে থাকা পুরুষটির একটু আগের পাগলামো। ছুটি ঝাপসা চাহনিতেই তাকায়।সাথে সাথে এই পুরুষটির এমন কান্ড দেখে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠে,

“ ঘুমোন নি কেন এখনো? ”

আবির হাসে। দুই হাতে ছুটিকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়ে বড্ড সন্তুষ্ট স্বরে বলে উঠে,

“ আমি বহুদিন তোকে দেখি নি এভাবে ছুটি। তোর ঘুমন্ত মুখটা দেখাও আমার নেশা নেশা লাগত, এখনও লাগে।”

“ আপনার নতুন জব এখানে। ঘুমানো উচিত আপনার এবার। ”

আবির হেসে শুধায়,

“ একদিন নির্ঘুম কাঁটুক না। তুই আছিস তো পাশে।”

ছুটি ওভাবেই নিরব থাকে। তারপর হুট করেই আবিরকে প্রশ্ন ছুড়ে বসে,

“ আরো একজন আসলে কেমন হবে? আমাদের একটা ছোট্ট প্রাণ থাকলে কেমন হবে আবির ভা…”

আবির মুহুর্তেই ছুটির মুখ চেপে ধরল। সতর্কতা স্বরূপ বলে উঠল,

” এ্যাঁ! খবদ্দার! ভাই বলবি না । ভাই ডেকে তুই আমার সাথে বাচ্চার প্ল্যানিং করতে আসিস? ফাজিল মহিলা! ”

#চলবে…..

#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২৬
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি

আবিরের পরনে দেখা গেল একটা সাদা তোয়ালে ব্যাতীত অবশিষ্ট কোন পোশাক নেই। বাইরে বেশ ঠান্ডা পরা স্বত্ত্বেও রুম হিটারের কারণে ততোটা ঠান্ডা বোধ হচ্ছে না বোধহয়। আবির মাত্রই গোসল সেরে বের হলো। ভেজা চুলগুলো কপালে পড়েছে। ছুটি তখন কিচেনটায় ব্রেকফাস্ট তৈরির জন্য গিয়েছিল।সকাল সকাল উঠেই গোসল সেরে সে শাড়ি পরেছে। সে শাড়িটা যেটা আবির কাল রাতে পরাতে লেগে অর্ধেক পথেই আবার সিদ্ধান্ত বদলে নিয়েছিল। ছুটি আর যায় হোক আবিরের শাড়ি পরার সে অনুরোধটা পূরণ করার উদ্দেশ্যে শাড়ি পরল। প্রিয় পুরুষের দেওয়া শাড়ি! আজ কতগুলো দিন পর সে ফুরফুরে মনে আনন্দ চিত্তে শাড়ি পরেছে। ছুটি মনে মনেই হাসল। ব্রেকফার্স্ট রেডি করে এসে আবিরকে এরূপ অবস্থায় দেখে মিনমিনে চাহনিতে তাকাল। সুদর্শন দেখাচ্ছে পুরুষটাকে। বেহায়া মন টানছে। বেহায়া দৃষ্টিও ঘুরিফিরে পুরুষটার খালি শরীরের আটকাতে চাইছে। ছুটি আড়ষ্টতার ন্যায় দৃষ্টি অন্যদিকে রেখে বলল,

“ আপনি কি পোশাক পরে প্রথমদিন অফিসে যাবেন জানি না তাই আর বের করে রাখিনি। ”

আবির মৃদু হাসে ছুটির আড়ষ্টতা স্বরূপ দৃষ্টি দেখে। দু পা এগিয়ে এসে ছুটির দিকে আসতে আসতে বলে,

“ অমন ভাবে দৃষ্টি অন্য দিকে রাখার কারণ কি? আমি কি তোর নতুন বিয়ে করা বর? ”

“ না। ”

আবির ঠোঁট কাঁমড়ে হাসে। সরু চাহনি ফেলে অবলোকন করে ছুটিকে। শাড়িতে সুন্দর দেখাচ্ছে।স্নিগ্ধ লাগছে। এই মেয়েটাকে সবসময়, সব রূপেই এতোটা মানানসই লাগে কেন আবিরের কাছে? আবির বুঝে উঠে না। তবর ঠোঁট কামড়ে হেসে জানায়,

“ বিয়ের এতদিন পর এসেও এমন আড়ষ্টতা দেখালে তো মানুষ আমায় সন্দেহ করবে। ভাববে আমাদের মাঝে কিছুই হয়নি। ”

ছুটির কান গরম হয়ে উঠল। বিড়বিড় করে বলল কেবল,

“ ভাবলে ভাবুক। ”

আবির শুনে। তবে বিপরীতে উত্তর করে না। এগিয়ে আসে ছুটির দিকে। শাড়ির সাথে সাথে গলায় একটা পাতলা ওড়নাও জড়িয়েছে মেয়েটা। আবির ভ্রু কুঁচকে শুধায়,

“ শাড়ি পরে গলায় ওড়না কে জড়ায়? ”

ছুটি ছোটশ্বাস ফেলে ওড়না সরিয়ে গলার একদিকে একটা ক্ষত দেখাল। যেটা আবিরেরই করা।ছুটি তা দেখিয়ে ছোটস্বরে জানাল,

“ গলায় দাগ বসে গিয়েছে। একটু পর উইলি আর এলিনা আসবে। দেখলে খারাপ ভাববে।”

আবির হাত বাড়ায়। ক্ষতটায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

“ ভাবুক না, সমস্যা কি তোর? ”

ছুটি সরু চোখে তাকায়। প্রশ্ন ছুড়ে,

“ জ্বালাচ্ছেন? ”

আবির হাসে এবারে। নিজের ভেজা চুলগুলো একহাতে ঝেড়ে নেয়। ছুটির কাছাকাছি দাঁড়ানোতে জলের ছিটেফোটে পড়ে ছুটির মুখেও। আবির ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,

“ একদম নয়, বরং জ্বলছি। বাহিরের দেশে এসেও বাংলাদেশী শাড়ি পরিহিত বউ দেখে হৃদয় জ্বলেপুড়ে ছারখার।অথচ এখন আমায় বউ রেখে বেরুতে হবে। বড্ড জ্বালাচ্ছিস। ”

“ আপনি বলেছিলেন শাড়ি পরতে। কাল পরা তো হয়ে উঠে নি তাই ভাবলাম আজ সকালে পরা যেতে পারে।তাই ।”

আবির ফের হেসে জানাল,

“ পরা হয়ে উঠে নি না, আসলে তোকে শাড়ি পরাতে পরাতে কন্ট্রোলল্যাস হয়ে পরে শাড়ি পরানো হয়নি তা বল। ”

“ বাজে বকছেন। এসব ছাড়া কি মাথায় আপনার কিছুই ঘুরে না? ”

“ বাজে বকছি? অথচ তুই সকালেও আমার কাছে বাচ্চার আবদার করলি? কাল রাতে শাড়ি পরানোর আবদার করলি। এসব আবদার করে করেই তো মাথা নষ্ট করিস। ”

ছুটি মুহুর্তেই বিরোধিতা করে জানাল,

” শাড়ি পরানোর আবদার আমি করেছিলাম? ”

“ ইচ্ছে করেই তো প্রথমে পরিসনি যাতে আমি পরিয়ে দেই, আর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে তোর মাঝে ডুব দিই। ”

ছুটি ক্রমশ লজ্জ্বায় লাল হচ্ছিল। ফর্সা গাল রক্তিম হয়ে উঠছিল। কান উষ্ণ হয়ে উঠছিল। এই পুরুষের কথা গুলো আজকাল তাকে মারাত্মক ভাবে লজ্জ্বায় ফেলতে সক্ষম! ছুটি প্রসঙ্গ পাল্টানোর কথা ভাবে। বলে,

“ কথা না বলে তৈরি হয়ে নিন। লেট হবে পরে।”

“ ঐ যে তুই আছিস। লেট হলেও একমাত্র তোর জন্য ই হবে। ”

“চলে যাব? আপনি বললে চলে যেতে পারি।”

“ সেটা বলার সাহস তো এখনও আমার হয়নি৷ তার চেয়ে বরং থেকে যা, দিনে রাতে আমার দুশো একবার করে মাথা নষ্ট কর, কয়েকবছর পর আমার বাচ্চার মাও হয়ে যেতে পারিস। সমস্যা নেই।আমি কিছু মনে করব না। ”

ছুটি মুহৃর্তেই ভ্রু কুঁচকায়। শুধায়

“ কয়েক বছর পর বাচ্চার মা হবো? ”

আবির কিছুটা ঝুঁকে এবার। কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,

” এখনই হবি? ”

ছুটি উত্তর করতে পারে। একরাশ লজ্জা এসে ছুঁয়ে যায়। তবে আবির হেসে আবারও শুধাল,

“ এখনও বউকেই ভালোবেসে শেষ করতে পারিনি, বাচ্চাকে কিভাবে এক্সট্রা ভালোবাসা দিয়ে সামলাব বল? তাছাড়া এই ভীনদেশে আপনি একা মা হওয়ার জার্নিটা সামলাতে পারবন না। পারলে আমি অবশ্য অপেক্ষা করতাম না। ”

.

সিয়া বাসা থেকে বেরিয়ে ফ্রেন্ডদের সাথে একটা ভাড়া বাসায় উঠার জন্য বেশ কয়েকদিনই হলো পরিবারে জানিয়েছে। পরিবার প্রথমে রাজি না হলেও অবশেষে মেয়ের মানসিক অবনতির দিক খেয়াল করে মত দিলেন তারা। স্বচ্ছও অবশেষে না করল না। বোনটা বড্ড আদুরে তার। সিয়া খুশি হলো। বেঁছে বেছে বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য সাদ যে বিল্ডিং এ থাকে ওখানেই গেল। টুলেট ঝুলছে। স্পষ্ট লেখা আছে বাসা ভাড়া দেওয়া হবে। সিয়া নিচে লেখা নাম্বারটায় কথা বলল। জানাল সবটা। অবশেষে কথা বলে যখন পাকাপোক্ত প্রায় তখনই কল রেখে মুদু হাসল সে। তারপর পথ এগোতে নিয়ে হুট করেই শুনল,

“ আবারও এসেছো এখানে? কেন? ”

সিয়া ঘুরে তাকাল। সাদ! গম্ভীর পুরুষটা! সিয়া একনজর তাকাল। একদম স্বাভাবিক স্বরে উত্তর করল,

“ এলাকা টা তো আপনার নয় সাদ ভাই। এমনিই এসেছি একটু দরকারে। ”

সাদ বিনিময়ে ফের বলল,

“ কি দরকার? ”

সিয়া কৌতুহল দেখে হালকা হাসে। বলে,

”আপনাদের বাসার নিচে একটা টু-লেট ঝুলছে। দেখেছেন?”

”দেখেছি। তা নিয়ে তোমার কাজ কি সিয়া? ”

“ ভাবছি ভাড়ায় উঠব। ”

সাদ প্রশ্ন ছুড়ে,

“ কোথায়? ”

” আপনাদের বাসার ঠিক উপরের বাসাটায়। ”

“ কি জন্য? ”

“ এমনিই, যাতে আপনি আর এই এলাকায় দেখলেই চলে যেতে বলতে না পারেন।”

সাদ এবারে গম্ভীর দৃঢ় স্বরে জানাল,

“ পিঁছু ছেড়ে দাও আমার। ”

সিয়া উত্তর করল,

“ কে বলল আপনাকে যে আমি আপনার পিছু নিয়েছি? ”

“ শিওর নাও নি? ”

দৃঢ় স্বরে আওয়াজ আসে,

“ শিওর! ”

“ না নিলেই মঙ্গল! নিজের মতো থাকো। ”

এটুকু বলেই সাদ ফের বাসার দিাে পা বাড়াতে নিল। অথচ সাদের পোশাক, বেশ দেখে মনে হয়েছিল সাদ কোথাও যাওয়ার জন্য বের হচ্ছে যেন। সিয়া মুহুর্তেই বলে,

“ আবার বাসায় চলে যাচ্ছেন যে? যেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলেন সেখানে যাবেন না নাকি? ”

সাদ ফিরে না আর তার দিকে। ওভাবেই যেতে যেতে বলল,

“ যাব না। ”

.

জ্বরে যে মেয়েটা মাথা অব্দি উঠাতে পারে না,বিছানায় এলিয়ে আছে সে মেয়েটাকে রোহান কিছুটা সময় মনোযোগ দিয়ে দেখল। এই মেয়েটার রূপে আটকায়নি সে, রূপে আটকালে তো প্রথমেও আটকাতে পারত! তবে সর্বোপরী এই মেয়েটার মাঝে সত্যিই এমন কিছু আছে যে রোহানকে অবশ্যই আটকাতেই হলো। রোহান ছোটশ্বাস ফেলে। হাত দিয়ে রাহার জ্বর পরখ করে। শরীর উষ্ণ! জ্বরের আগমন ঘটেছে আবার ও। রোহান বুঝতে পারল মেয়েটার কষ্ট হচ্ছে। ছোটশ্বাস ফেলে তার কষ্ট কমানোর বুদ্ধি খুঁজল। একটা বাটিতে জল নিয়ে জলপট্টি দিল বার কয়েক। যদি জ্বর যায় এতে? এই মেয়েটা তো সকাল থেকে মেডিসিন নেওয়া তে দূর একটু পানি অব্দিও খায় নি। সুখ নাকি তেঁতো ঠেকছে।রোহান ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে থেকে এসবই ভাবল। এরই মধ্যে রোহানের মা গরম গরম এক বাটি স্যুপ নিয়ে হাজির হলো। বলল,

“ দেখি সর। ওকে এটা খাইয়ে দিই। সকালে থেকে তো কিছু খেল না। ”

রোহান সরল না। বরং বলল,

“ আমাকে দাও আম্মু। খাইয়ে দিচ্ছি আমি।”

তার মা প্রশ্ন করল,

“ পারবি? ”

“ পারব না কেন? অবশ্যই পারব। ”

“ ঠিকাছে। ”

কথাটুকু বলেই রোহানের হাতে দিল। বলল,

” আস্তে ধীরে যত্ন নিয়ে খাওয়াবি। কোন বকাঝকা করবি মেয়েটাকে। এমনিতেই কি ভীষণ জ্বর! ”

রোহান মাথা নাড়াল। রোহানের মাও নিশ্চিন্ত হয়ে চলে গেল। রোহান স্যুপের বাটিটা একপাশে রেখে রাহার দিকে তাকাল। এক হাতে রাহার গাল আলতো ছুঁয়ে ডাকে,

“এই মেয়ে? নবনী? উঠো। একটু উঠে বসো।”

রাহা শুনে। গুঁটিশুটি মেরে শুঁয়ে আছে। রোহান ফের মুখে হাত রেখে বলে,

“ নবনী? ”

রাহা এবারে অস্ফুট স্বরে উত্তর করল,

“ হু। ”

“উঠো। ”

রাহা ফ্যালফ্যাল করে তাকায় ঘুম ঘুম দৃষ্টিতে। মাথা ব্যাথা হচ্ছে তার৷ চোখগুলোকেও তীব্র জ্বালা করছে।জানাল,

“ইচ্ছে হচ্ছে না। মাথাটা খুব যন্ত্রনা করছে। ”

রোহান ছোটস্বরে বলল,

“ করবে না আর। খাওয়ার পর মাথায় হাত বুলিয়ে দিব। তারপর তৈরি হয়ে ডক্টরের কাছে যাবে। একটু উঠো এখন। ”

রাহা ফের চোখ বুঝে নেয়। রোহান আবারও ডাকল,

“নবনী?”

রাহা এবার খুব কষ্টে চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে উঠে বসার চেষ্টা করল। রোহানও সাহায্য করল। পিঠের পিছনে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে বসাল। রাহা কোনভাবে বলল,

“ উঠলাম।”

রোহান দেখল। হাতে স্যুপের বাটিটা নিয়ে চামচ ধরে খাবার এগিয়ে ধরে বলল,

“ হা করো। ”

রাহা নাক সিঁটকাল।জানাল,

“ খেতে ইচ্ছে হচ্ছে না।”

রোহান গম্ভীর আওয়াজেই জানাল

“খেতে ইচ্ছে না করলেও খেতে হবে । ”

“ তবু ইচ্ছে করছে না।”

রোহান এবার কিঞ্চিৎ ধমকের স্বরেই বলল,

হা করো। এক্ষুনি শেষ করবে এটা। ”

রাহার চোখ এবারে কেমন টলমল করে জ্বরের মধ্যে। আকস্মিক হা করে সে। রোহান চামচ দিয়ে খাবার বাড়ায় আর সে মুখে তোলে। এভাবে করে যখন পুরো বাটিটা খালি হওয়ার পথে ঠিক তখনই রাহার পেট থেকে পুরোটা খাবার উগড়ে আসল তার নিজের শরীর এবং রোহানের শরীরের উপরে। রাহার চোখ তখন গোলাটে। শরীর কাঁপছে কেমন। বুঝতে পারে শরীরের নিয়ন্ত্রন হারাচ্ছে সে। রোহান চোখে বিস্ময় নিয়ে তাকায়। এই প্রথমবার সে কোন মেয়েকে অসুস্থ অবস্থ্য় খাওয়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছিল। আর এমন একটা কান্ডে সে যখন হতবিহ্বল হয়ে তাকাবে ঠিক সেই মুহুর্তেই রাহাকে শরীর এলিয়ে পড়ে যেতে দেখে সে ভয় পেয়ে গেল। কলিজায় কেমন যেন করে উঠল মেয়েটার এমর অবস্থা দেখের।ঘাবড়ে গিয়ে দ্রুত সে বমিমাখা শরীরেই মেয়েটাকে আঁকড়ে ধরে শুধাল,

“ নবনী? ”

#চলবে…