#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২৭
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
রাহার শরীর যখন বমিমাখা আর চোখ দুটো নিভু নিভু হয়ে ঢলে পড়ল রোহান শুকনো ঢোক গিলে। নিঃশ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসে। দুয়েকবার ডেকেও যখন সাড়া পেল না তখন পানি ছিটিয়ে দিল রাহার মুখে। পরমুহুর্তে রাহা মিনমিনে চাহনিতে তাকালেও আবার ক্লান্তিতে চোখ বুঝে নিল। রোহান ছোটশ্বাস ফেলে। বুঝে উঠতে পারে জ্বরের কারণেই বোধহয় এমন করছে। মৃদু স্বরে মাকে ডাকল সে। চেঞ্জ করানো দরকার রাহার। এই অবস্থায় থাকলে উল্টো তারই ক্ষতি হবে। যে ভাবা সেই কাজ। মাকে ডেকে সবটা বলল। তারপর রাহাকে চেঞ্জ করিয়ে দেওয়ার জন্য সরে গেল সেখান থেকে। নিজেও ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসল কিছুটা সময় পর৷ রোহান ছোটছোট চোখে তাকিয়েই বলে,
“ আম্মু? এই মেয়েকে আর কখনো বৃষ্টিতে ভিজতে দিবে না। এমন ভাবে অসুস্থতা দেখাচ্ছে যে আমার ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে থাপ্পড় দিয়ে বৃষ্টিতে বসিয়ে রাখি টানা চব্বিশ ঘন্টা। ”
রোহানের মা ছেলের অবস্থা দেখে হেসে দিবে যেন। তবুও হাসি চেপে বলল,
” ছোট বাচ্চা। ছেলে মানুষি করে হয়তো বৃষ্টিতে ভিজেছে। রাগ করলে চলবে? ”
রোহান মুখচোখ শক্ত করে বলল,
“ অবশ্যই চলবে। অমন চোখমুখ উল্টে পড়ে থাকলে অস্থির লাগে না বলো? যখন ও বমি করে নেতিয়ে পড়ছিল আমার সত্যিই কেমন অন্যরকম একটা অনুভূতি হচ্ছিল আম্মু। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ”
রোহানের মা বুঝতে পারল ছেলের মন গলেছে। এই চঞ্চল মেয়েটির প্রতি মন না গলার প্রশ্নই আসে না অবশ্য৷ উনি হেসে বললেন,
“ বুঝলাম, তোর কি চিন্তা লাগছে ওর জন্য? ”
রোহান মুহুর্তে আগের রূপে ফিরে শক্তস্বরে বলল,
“মোটেই না! ”
কথাটা বলেই হনহন করে বেরিয়ে যায়। উদ্দেশ্য ডক্টর আনা। মেয়েটার যে অবস্থা তাতে তো মনে হয় না সে হসপিটাল অব্দি যেতে পারবে৷ রোহান ছোটশ্বাস ফেলে৷ অবশেষে বিকালের দিকে ডক্টর নিয়ে ফিরে। ডক্টর রাহাকে দেখে ঔষুধ দেয়। ফের চলেও যায়। তারপর থেকে রোহান বিছানার কোণে বসে আছে। রাহাকে দেখছে।একটু পরপর জ্বর চ্যাক করছে। যখন সন্ধ্যা ফেরিয়ে রাত হলো তখন রাহার শরীর দিয়ে ঘাম দিল। শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কমে এল। রোহানের মা তখন একটা কাজে বাইরে গিয়েছে। রোহান নিজেই তখন রাহার হাত মুখ মুঁছিয়ে দিল। তারপর রান্নাঘরে গেল রাহার জন্য খাওয়ার কিছু আনতে৷ ততক্ষনে অবশ্য রাহা চোখ মেলে উঠে বসেছেে।আশপাশে কাউকে না দেখে এদিক সেদিক ফিরে চাইল। পরমুহুর্তে উঠে রুমের বাইরে এল। পুরো বাসায় তেমন কাউকে না পেয়ে যখন রান্নাঘরে রোহানকে খাবার করতে দেখল তখনই সে বলল,
“ শুনুন৷ ”
রোহান গম্ভীরভাবেই বলে উঠল,
“ উঠেছো কেন? ”
রাহা হেসে বলে
“ আমি একদম ফিট এখন। দেখুন! ”
রোহান বিড়বিড় করে বলে,
“ হু, কতটুকু ফিট তা তো দেখতোই পাচ্ছিলাম৷ ”
কিন্তু রাহার উদ্দেশ্যে মুখে বলল,
“ এখানে কেন এসেছো?”
রাহা মুহুর্তেই প্রশ্ন ছুড়ে,
“ আম্মু কোথায়?”
“বাইরে গিয়েছে। কেন? কোন প্রয়োজন? ”
রাহা উত্তর দেয় না৷ তবে রোহানের গম্ভীর স্বরে কথা শুনে বলে,
“আপনি কি রেগে আছেন? ”
“ না। তোমার উপর রাগ করাটা বোকামো। ”
রাহা ছোটশ্বাস ফেলে৷ তারপর যখন রুমের উদ্দেশ্যে পা বাড়াবে তখনই তার দৃষ্টি পড়ল তার জামার দিকে। এটা অন্য ড্রেস। মানে যে ড্রেসটা সে আজ পড়ে ছিল সেটা নয়। রাহা ভ্রু কুঁচকায়। কে পোশাক পাল্টাবে তার? রোহান? নাহ! ছিঃ ছিঃ! কিসব ভাবছে সে? হয়তো আম্মুই পাল্টে দিয়েছে জ্বরের কারণে৷ কিন্তু আম্মুও বাসায় নেই। রাহা শিওর হতে আবার ঘাড় ফিরিয়ে শুধায়,
“ আম্মু নেই না বাসায়? ”
“ না নেই। ”
রাহা তবুও স্থির দাঁড়িয়ে থাকে ওখানে। আবার মুখেও প্রশ্নটা করতে পারছেেনা যে তার পোশাক কে পাল্টিয়েছে? কিভাবে বা করবে? এমন প্রশ্ন করা যায়? রাহা হাঁসফাঁস করে। জিজ্ঞেস করবে করবে করেও করতে পারছে না। রোহান তা খেয়াল করে শুধাল,
” কিছু বলবে? ”
রাহা এবারে সাহস নিয়ে চাইল। দ্রুত গলায় তীব্র অস্বস্তি নিয়ে শুধাল,
“ আমার ড্রেস চেঞ্জ দেখাচ্ছে যে? ড্রেস চেঞ্জ করেছেন? ”
রোহান ছোটশ্বাস ফেলে। মেয়েটা ঘুম থেকে উঠে যে সর্বপ্রথম এই বিষয়টা খেয়াল করবে তা বোধহয় সে জানত। গম্ভীর স্বরে উত্তর দিল,
“বমি করেছিলে। নিশ্চয় বমে সমেত তোমাকে ফেলে রাখাটা উত্তম কাজ নয়? ”
রাহার এবার বুক ডিপডিপ করে। চেঞ্জ কে করিয়েছে? রোহান? সন্দেহী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“ড্রেস চেঞ্জ করেছেন তা নিয়ে তো কিছু বলছি না। কিন্তু কে করেছে? আপনি? ”
রোহান তাকায়। রাহার বাঁকা দৃষ্টি দেখে শুধায়,
“ ওভাবে তাকাচ্ছো কেন? ”
“ উত্তর দিন আগে, আপনি চেঞ্জ করিয়েছেন? ”
রোহান মনে মনে হাসে যেন। ভাবে রাহাকে এক ধাপ জ্বালানে যেতেই পারে। শক্ত স্বরে বলে,
“ উত্তর হ্যাঁ হলে কি করবে? ”
রাহা মুহুর্তেই আওয়াজটা একটু জোরে করে বলে উঠল,
” ছিঃ! আপনি আমার অনুমতি না নিয়েই পোশাক চেঞ্জ করিয়েছেন কেন? বলেছি আমি? ”
রোহান গলায় জোর দিয়ে বলল,
” তুমি না বললেও আমার মনে হয়েছিল তখন পোশাক চেঞ্জ করাটা উচিত। তাই করিয়েছি। এই অধিকারটা আমার আছে। ”
” ছিঃ! আপনার মনে তাহলে এসব ছিল? আমাকে ঘুমের মধ্যে….”
রোহান ভ্রু নাচায়। দ্রুত ভ্রু বাঁকিয়ে বলে উঠে,
”তোমাকে ঘুমের মধ্যে কি করেছি? অন্য কিছু তো নিশ্চয় করিনি ? অন্য কিছু করলেও সেটা অন্যায় বা অনুচিত বলে আমার মনে হচ্ছে না। কারণ তুমি আমার স্ত্রী। ”
” অন্য কিছুও করেছেন? ছিঃ ছিঃ! আপনি আমার মান ইজ্জ্বত সব শেষ করে দিয়েছেন। ”
রোহান দ্রুত প্রতিবাদ জানিয়ে হুমকি স্বরূপ বলল,
”এখন ও কিছুই শেষ করিনি নবনী। শেষ করার আগেই যদি মিথ্যে মিথ্যে আমার নামে বদনাম দাও তাহলে কিন্তু সত্যিই তোমার সবকিছু শেষ করতে আমি দুবার ভাবব না মেয়ে। সে অধিকার আমার আছে! ”
রাহা সরু চাহনিতে তাকিয়ে থাকে। বিড়বিড় স্বরে বলতে লাগল,
“ শেষ করতে আর বাকি রেখেছেন কিছু? বেয়াদব পুরুষমানুষ! ”
রোহান আড়ালে হাসে। তবে মুখ গম্ভীর রেখে রাহার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে উঠে
“ তেমন হলে বিয়ের এতদিন পরেও ভার্জিন থাকতে না নবনী৷ ”
.
স্নিগ্ধ সবেই ঘুমিয়েছে। অল্প থেকে অল্প কিছুর আওয়াজেই ঘুম ভেঙ্গে যায় বাচ্চা ছেলেটার। বড্ড ঘুম পাতলা বাচ্চা। সুহা স্নিগ্ধর ঘুমন্ত মুখটা এক পলকেই তাকিয়ে দেখে। অতঃপর ঘুমন্ত মুখটাতে দুটো চুমু আঁকল। ঠোঁটে হাসি রেখে বলল,
”আব্বুজান? তাড়াতাড়ি বড় হয়ে যাও তো। তোমায় নিয়ে শহর দেখা বাকি তো আব্বুজান। ”
স্বচ্ছ তখন দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে। এতক্ষন যাবৎ খেয়াল করে যাচ্ছিল সুহার স্নিগ্ধাে ঘুম পাড়ানোর দৃশ্য। স্বচ্ছ হাসে। ছেলের যাতে ঘুম না ভাঙ্গে এইজন্য অতি সাবধানে পা ফেলে বিছানার কাছে এল।শান্ত গলায় শুধাল,
” ছেলের আব্বুও তো বেঁচে আছে। মাঝে মাঝে তার দিকেও তো একটু কৃপাদৃষ্টি রাখতে পারো সুহাসিনী। দুয়েকটা চুমুও তো দিতে পারো। কেন ছেলের আব্বুর বেলায় তোমার এত কিপ্টামো অভ্যেস? ”
সুহা তাকায়। হাসবে কি কাঁদবে বুঝে না। তবে স্বচ্ছর কথা আর মুখচাহনি দেখে তার সত্যিই পেট ফেটে হাসি পায়৷ বেচারা! বউ এর ভালোবাসা বিহীন থাকতে থাকতে মুখচোখ শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে যেন। সুহা হেসে শুধায়,
” কারণ ছেলের আব্বুকে যে ভালোবাসা দেওয়া হয়েছে তা এনাফ৷ তাকে আর ভালোবাসা দেওয়ার দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। এখন ছেলেকে ভালোবাসাটা গুরুত্বপূর্ণ! ”
কথাগুলো কেন জানি স্বচ্ছর পছন্দ হলো না। ভালোবাসার দরকার নেই মানে? সব ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটেছে তাহলে? শুধাল,
“ আমায় তুমি কতদিন ভালোবাসার নজরে দেখোনি সুহাসিনী! অথচ বলছো যা দিয়েছো তা এনাফ? তবে কি আমার প্রতি ভালোবাসা সব শেষ? আর কখনো তোমার সে প্রেমময় রূপ আমি পাব না? নিষ্ঠুর তুমি! আমায় কষ্ট দিতে দুবার ভাবো না।”
কথাগুলো একটু জোরেই বলছিল স্বচ্ছ৷ সুহা বুঝে এই ছেলেটা বাচ্চাদের মতোই কষ্ট পায়, বাচ্চাদের মতোই তার ভালোবাসা চায় সর্বক্ষন। কিন্তু সে আসলে কষ্ট দিতে চায়নি। মজা করেই তো বলেছে। মৃদু স্বরে জানাল,
” ঘুম ভাঙ্গবে ওর। ”
স্বচ্ছর বড্ড রাগ হলো। তার কথার উত্তরে এই কথাটা নিশ্চয় প্রাপ্য নয়? বলল,
“ ভাঙ্গলে ভাঙ্গুক! ও ও দেখুক আমার প্রতি এই অবিচার। সবকিছু মেনে এসেছি। তোমার দূরে সরে যাওয়া, আমাকে দোষী মনে করে বারবার কষ্ট দেওয়া সব! আমি আশায় ছিলাম তুমি কোন একদিন আগের মতো হয়ে যাবে। আবার আমার আগের সুহাসিনী হবে। আমার দিকে প্রেমময় হাত বাড়িয়ে দিবে। কিন্তু আমি ভুল! রাইট? তোমার কথা দ্বারা তো এটাই বুঝায় বলো? ”
এটুকু বলেই হন হন করে সে বেলকনিতে গেল। নিশ্চুপ দঁাড়িয়ে থাকল। সুহা ততক্ষনে নিভু নিভু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল।তারপর কি বুঝে ছেলেকে অতি সাবধানে দোলনায় রাখল। গুঁটিগুঁটি পায়ে বিড়াল ছানার মতো বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল স্বচ্ছর পিছনে৷ অতঃপর দুইহাত দিয়ে পেছন জড়িয়ে ধরল পুরুষটাকে। বলল,
“ স্বচ্ছ? ”
স্বচ্ছ উত্তর করে না৷ সুহা ফের বলে,
“ ছেলের আব্বুটাও ছেলের মতো বাচ্চা। এত বেশি বাচ্চামো চিন্তাধারা যে কোন কথার কি অর্থ কিছুই বুঝে না। ”
স্বচ্ছ এবারে গম্ভীর গলায় উত্তর করে,
“ছাড়ো সুহাসিনী। আমার কেমন জানি এক বিশ্রী অনুভূতি হচ্ছে। ছেড়ে দাও। ”
সুহা হতাশ স্বরে বলে,
“ আমি জড়িয়ে ধরাতে বিশ্রী অনুভূতি হচ্ছে? ”
“ জড়িয়ে ধরার আগ থেকেই।”
সুহা এবারে বলে,
” তাহলে যেভাবে আছি ওভাবেই থাকি।ছেড়ে দিলে যে বিশ্রী অনুভূতিটা কমে যাবে এমন তো নয়। ”
এটুকু বলেই ফের আবার বলে,
“ স্বচ্ছ? স্নিগ্ধকে দোলনায় দিয়েছি আজ। ”
” কেন? ”
সুহা হাসে। বলে,
“ তার মা ভেবেছে তার বাবার থেকে ভালোবাসা নিবে। দেওয়া যাবে ভালোবাসা? ”
স্বচ্ছ হুট করেই ফিরে চাইল। বরাবরের মতো না গলে শক্ত স্বরে জানাল,
”তুমি কি ভাবছো? ফিজিক্যাল রিলেশনের জন্য আমি অস্থির হয়ে আছি যে বাচ্চাকে দোলনায় ঘুম পাড়িয়ে আমি তোমায় কাছে টানব? ”
সুহা মিনমিনে দৃষ্টিতে তাকায়। বলে,
” তা কখন বলেছি? আমি নিজেই চাইছি আপনার কাছে আসতে। কাছে টানবেন না?”
শক্ত স্বরে উত্তর আসল,
“ না! ”
সুহার চোখমুখ টলমল করল প্রত্যাখানে। বলল,
“ কেন? ”
স্বচ্ছ উত্তর দিল,
“ সময় হোক, যেদিন তুমি সত্যিই আমার দিকে আবার আগের মতো প্রেম নজরে তাকাবে সেদিন কাছে টানব। ”
সুহা মুখ তুলে তাকায়। প্রশ্ন ছুড়ে,
“ প্রেম নজরে তাকাইনি বলছেন? ”
” এটা হয়তো বা একটু আগে আমার বলা কথাগুলোর প্রভাবেও হতে পারে। আমি প্রভাব খাটিয়ে কিছু করতে চাইছি না। ”
সুহা ফের দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরল। মাথা গুঁজল স্বচ্ছর বুকে। হৃদস্পন্দন শুনতে শুনতে বলল,
“ আপনি আসলেই বাচ্চা স্বচ্ছ।প্রেমাস্পর্শ না দিন, কিছুটা সময় এভাবে জড়িয়ে ধরে থাকতে দিন। ”
#চলবে….
#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২৮
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
রাহার উষ্ণ জ্বর আর শরীর জুড়ে উত্তপ্ততা নিয়েই এক রাতে হুট করে অনাকাঙ্খিত একটা ঘটনা ঘটল। একটা উত্তপ্ত চুম্বন, একটা উম্মাদময় ওষ্ঠ স্পর্শ! সেদিন অবশ্য রোহানকে দেখাল বেশ অগোছাল। চুলগুলো কপালে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কেমন যেন। শার্টের উপরের বোতাম দুয়েকও খোলা আছে। রাহার তখন শরীর জুড়ে অল্প অল্প জ্বর।মাথা ব্যাথা, সাথে চোখ জ্বালা ও করছে। সে সেভাবে বসেই সরু চাহনিতে পরখ করছিল অফিস থেকে ফেরা রোহানকে। অতঃপর হুট করেই যেন চোখ গেল রোহানের হাতে বাঁধা একটা কাপড়ে। কারোর কাপড় বা ওড়নার অংশ বোধহয়। রোহান বোধহয় ব্যাথা পেয়ে এই নিয়ে যখন সে প্রশ্ন ছুড়বে তখনই দেখা গেল রোহান একটা গিফ্ট বক্স ও পাশে রাখল। রাহা বুঝে উঠে না। ভ্রু কুঁচকে ফের তাকাতেই চোখে পড়ে সাদা শার্টটার একপাশে লিপস্টিক জাতীং কিছুর দাগ। লালচে! বোধহয় প্রেমিকার চিহ্ন! রাহা ভ্রু কুঁচকায়। ভালো লাগল না বিষয়টা তার। তবুও সে হেসে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ কি ব্যাপার? মিঃ রোহান ফারাবীকে আজ হঠাৎ কেমন কেমন দেখাচ্ছে যেন? ”
রোহান ভ্রু কুঁচকায়। হাতের নতুন দামী ঘড়িটা খুলে রাখতে রাখতেই রাহার দিকে চেয়ে বলে,
“ কেমন কেমন? ”
রাহা মুখ টিপে হেসে শুধাল,
“ কোন বিশেষ নারীর সাথে মিট করেছেন নাকি? নতুন নতুন প্রেমে পড়েছেন? ”
রোহান কপাল কুঁচকায়। নতুন নতুন প্রেমে পড়েছে তা ঠিক কিন্তু তা রাহা কিভাবে জানে? রাহার উপরই তো প্রেম জম্মেছে। এখনও তো প্রকাশ করেনি রাহাকে। রোহান ভ্রু কুঁচকেই শুধাল,
“ কি দেখে মনে হলো নতুন নতুন প্রেমে পড়েছি? ”
“ নতুন শার্ট, শার্টের উপরে দুটো বোতাম খোলা। চুলগুলো এলোমেলো। হাতে একটা নতুন ঘড়িও। মুখচোখ একটু টানটান। সুন্দর দেখাচ্ছে, যেন উম্মাদ প্রেমিক। মনে হচ্ছে কারোর সাথে দেখা করে এসেছেন। ”
রোহান হাসল কেমন করে যেন। বাহ! তার এতকিছু খেয়াল করে মেয়েটা? আচ্ছা, তার প্রতিও কি নবনীর কোন না কোন অনুভূতি আছে? নিশ্চয় আছে? ক্রুর হেসে শুধাল,
“মানুষ কি দ্বিতীয়বার প্রেমে পড়ে? যদি পড়ে তাহলে আমি ও পড়েছি নাহয়৷ সমস্যা কি?”
রাহার উত্তরটা একদমই পছন্দ হলো না। দ্বিতীয়বার প্রেমেই যদি পড়ে অন্য কারোর উপর কেন? তার উপর পড়া যেত না? মুখে বলল,
” অবশ্যই পড়ে। আমি খুশি হয়েছি আপনি আপুকে ভুলে অন্য কারোর প্রেমে পড়েছেন নতুন করে। এবার তো আমায় সরতে হবে যা বুঝা যাচ্ছে। কি বলুন? ”
রোহানের হাতের শার্টের বোতামে। একের পর এক বোতাম গুলো খুলতে খুলতে যখন রাহার কথাটা কানে গেল তখনই সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। দুই পা বাড়িয়ে নিতে নিতে বলল,
“ এত সরে যাওয়ার ইচ্ছে কেন? থেকে যাওয়ার ইচ্ছের কথা তো কখনো বলো না নবনী? ”
রাহা হেসে শুধাল,
“ থেকে যাওয়ার ইচ্ছের কথা বলার অধিকার নেই আমার।যায় হোক, নতুন প্রেমিকা ডার্ক রেড কালারের লিপস্টিক দিয়ে দেখা করেছিল? আর পোশাকটা ব্ল্যাক কালারের?”
আচমকা কথাগুলো শুনে সে বুঝে গেল রাহা কার কথা বলতে চাইছে। যার সাথে তার এখানে আসার আগেই দেখা হয়েছে। সাদিয়া!একটু গায়ে পড়া ধরণের মেয়েটাকে রোহান সহ্য করতে পারে না। আজও ফাইল নিয়ে আলোচনা করতে করতে দুয়েকবার তার গায়ে ঢলে পড়ার চেষ্টা চালিয়েছে। রোহান বিরক্ত হয়। বিজন্যাসের খাতিরে তবুও দেখা হতেই হয়। যদিও রোহান অপমান করতে পিছু পা হয় না৷ রোহান এসব ভেবে দাঁতে দাঁত চাপে। শুধায়,
“ তুমি কি করে জানলে? ”
রাহা হেসে বলল,
“ আপনার হোয়াইট কালারের শার্টটায় লিপস্টিকের দাগ বসে আছে জনাব, আর হাতটায় কাল রং এর কাপড় বাঁধা। ”
রোহান দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত স্বরে শুধায়,
“ ও নতুন প্রেমিকা নয়। ”
তাচ্ছিল্যমাখা উত্তর আসল,
“ তাহলে? পার্টটাইম প্রেমিকা নাকি? এত প্রেমিকা আপনার? বলেন নি তো এতদিন। ”
রোহান মুখচোখ শক্ত করে তাকায়। নির্ঘাত এই মেয়ের জ্বর, নয়তো রোহান এতক্ষনে ডপাং করে চড় মেরে দিত৷ বলল,
“ আমি চরিত্রহীন নই। ঘরে বউ রেখে বাইরে মেয়ে নিয়ে ঘোরার ইচ্ছে নেই। ”
“শুনে খুশি হলাম। কিন্তু বউ এর জন্য এত স্যাক্রিফাইস করে তো লাভ নেই৷ আপনার জীবন যৌবন তো পড়ে আছে বলুন? আপনার অধিকার আছে অন্য মেয়েদের থেকে নিজের সুখ খোঁজার।”
রোহাস ভ্রু বাঁকায়। আপনাআপনিই ঠোঁট বাঁকা হয়ে এল। অতঃপর একটা বাঁকা হাসি উপহার দিয়ে শুধাল,
“তুমি আমার জীবন যৌবন নিয়ে খুব চিন্তিত দেখছি? ”
“ একটু আধটু। ”
“ এদিকে এসো তাহলে। ”
রাহা চোখ বড় বড় করে তাকায়। এই লোকের গলার টোন তো সুবিধার শোনাচ্ছে না। দৃষ্টিও স্বাভাবিক লাগছে না। আবার ঠোঁটে ঝুলছে মারাত্মক এক বাঁকা হাসি৷ রাহা মুহুর্তেই শুধাল,
“ কেন? ”
রোহান উত্তর করে না এবার৷ নিঃশব্দে ওভাবেই হাসি বিদ্যমান রেখে এগিয়ে গেল৷ রাহা এগোল না তবে পিছিয়ে যেতেও পারল না। তার আগেই রোহান ঝুঁকে গেল। দুইহাতে পরম আদুরে ভাবে রাহার উষ্ণ নরম মুখটা আগলে নিল। অতঃপর মুখ নামাল। এক হাত মুখ থেকে ঘাড় যেতেই তার ওষ্ঠদ্বয় অবস্থান নিল রাহার পাতলা মিহি ঠোঁটজোড়ায়। রাহা আকস্মিক এই উম্মাদময় আক্রমন সইতে পারে না। পুরুষালি উত্তপ্ত চুম্বনে সে কেবল বিস্ময় নিয়ে বুঝে উঠার চেষ্টা করল কি হচ্ছে? আসলেই কি হচ্ছে তা বুঝতে তার একটু সময় লাগল। তারপরই সরে যাওয়ার ক্রমাগত চেষ্টক চালাল অথচ পুরুষালি বন্ধনের জোরে পারল না সে। একপাক্ষিক ওষ্ঠ সংঘর্ষে রোহান কতোটা কি সুখ খুঁজতে পারল জানা নেই তবে রাহা স্তব্ধ৷ যখন রোহান ছাড়ল তখন সে হাঁপানি রোগীর মতোই হাঁপাল। নিঃশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাল। আর রোহান তখন হেসে তার গালে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
“ জীবন যৌবনের সামান্যতম চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করলাম। আশা করি তুমি পরেরবার থেকে আমায় বেটার হেল্প করবো?”
রাহা তখনও হাঁপাচ্ছে। যখন মোটামুটি রকমের স্বাভাবিক হলো তখন হাঁপাতে হাঁপাতেই রেগে বলে উঠল,
“ এটা কি হলো? ”
রোহান হাসে বিনিময়ে। বলল,
“ যা তুমি চাইছিলে? জীবন যৌবনের সাধ মেটানো উচিত তো তাই না?”
রাহা মুহুর্তেই দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে,
“ আমি এটা চাইনি, মোটেই চাইনি। অন্য এক মেয়ের প্রেমিক, অন্য এক মেয়ের সাথে কি না কি করে এসে এখন আমাকে চুমু খাচ্ছে। ইয়াক থু!”
রোহান এবারে কটমট করে চাইল যেন। শাসিয়েই একপ্রকার বলল,
“ মেজাজ খারাপ করলে আরো অনেক কিছু করব। আজেবাজে বকবে না, অন্য মেয়ের সাথে কিছু করার মতো মেন্টালিটি থাকলে আমি লাইফে কখনো বিয়ে করে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতাম না৷ ”
.
মাঝখানে বেশ কয়েকটা দিন পার হয়েছে। সিয়ারা আরো দুয়েকজন মেয়েসহ বাসাটায় উঠেছে যেটা সাদদের বাসার ঠিক উপরেই৷ সিয়া সকাল বিকাল সন্ধ্যা নিয়ম করেই জানালার ধারে বসে থাকে। তারপর কখন সাদ আসে, কখন সাদ যায় সবটা পরখ করে দেখে। চোখের শান্তি। মানুষটাকে নিজের করে না পাক তবুও দেখতে তো পাচ্ছে? চোখে তৃষ্টা মিটছে। সিয়া ছোটশ্বাস ফেলে। তারপর ব্যাগপত্র নিয়ে হুট করেই বাসা ছেড়ে বের হলো। উদ্দেশ্য দিকবিদিক একা একা হাঁটা। আজকাল সিয়া প্রায়সই এমন করে। আজও করবে। সেই উদ্দেশ্যেই বের হওয়া। অথচ পথে বেখেয়ালি ভাবে চলার কারণে কেউ একজনের সাথে ধাক্কা খেল। সিয়া মাথা তুলে দেখল কেউ একজনটা হলো সাদের সেই রুমম্যাটটাই। বিদ্ঘুটে হাসি। সিয়া কপাল কুঁচকায়। ততক্ষনে দেখা মিলল সাদেরও। তবে কিছু বলল না। তার রুমম্যাটই বলে উঠল,
“ কি ম্যাম? কোথায় এমন অমনোযোগী হয়ে চলে যাচ্ছেন? চলুন আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি।”
ছেলেটা হাসল কথাটা বলে। অথচ সিয়ার কাছে হাসিটা সুন্দর লাগল না। ছেলেটাকেই সুন্দর লাগল না। কেন লাগল না তার জানা নেই, তবে ছেলেটা লম্বা চওড়া৷ সাধারণ দৃষ্টিতে সুন্দরই। সিয়া ছোটশ্বাস ফেলে। হুট করেই সাদের দিকে তাকিয়ে তার কি হলো কিজানি। বলল,
“ চলুন। ”
ছেলেটার চোখ চকচক করে যেন। অবিশ্বাস্য স্বরে বলে,
“ সত্যিই? এতদিন তো পাত্তা দিলে না মেয়ে!আজ কি হলো হঠাৎ? ”
সিয়া নিরব চাহনি ফেলে একবার সাদকে দেখে নিয়ে উত্তর করল,
“ মনে হলো আপনাকে না করাটা আজ আর উচিত হচ্ছে না। চলুন দুই কাপ কফি নিই। ”
ছেলেটা যেন খুবই খুশি হলো এতে। যাক! মেয়েটা তাকে অনুমতি দিচ্ছে। আস্তে আস্তে মনে জায়গাও করে নিবে নাহয়৷ খুশিতে গদগদ হয়ে সাদকে ফিসফিস করে বলল,
“ স্বপ্ন না তো এটা দোস্ত? ”
সাদের রাগ লাগছে৷ সিয়াকে ইচ্ছে হচ্ছে একটা থাপ্পড় দিতে। কিন্তু ভদ্রতার খাতিরে সে থাপ্পড়টা সে দিতে পারল না৷ শুধাল,
”বাস্তবই। যা, ওর সাথে ঘুরে আয়। ”
ছেলেটা মুহৃর্তেই প্রশ্ন ছুড়ল,
“তুই? তুই যাবি না? ”
সিয়া তা শুনে হাসল। মুহুর্তেই বলে উঠল,
“ উনি তো প্রায়সই ব্যস্ত থাকেন । হয়তো সময় হবে না উনার। আপনিই চলুন ভাইয়া।”
এটুকু বলে পা বাড়াল সে। পিছু পিছু বত্রিশ টি দাঁত বের করে হেসে এগিয়ে গেল সাদের সেই রুমম্যাটও৷ সিয়া তা দেখে। কয়েক পা বাড়িয়ে যখন মোটামুটি সাদের চোখের আড়াল হলো ঠিক তখনই সিয়া একটা রিক্সা ডাকল। অতঃপর চুপচাপ ছেলেটার সামনে দিয়ে রিক্সায় উঠে বসে ছেলেটাকে শুধাল,
“ আমি আসলে বাসায় যাচ্ছি ভাইয়া। আমি রিক্সা নিয়ে চলে যাচ্ছি। আপনি বরং সাবধানে বাসায় চলে যান। ধন্যবাদ এইটুকু এগিয়ে দেওয়ার জন্য। ”
ছেলেটা বড্ড হতাশ হলো। নিরস সরে বলল,
“ শুধু এইটুকু পথ? ”
#চলবে..
#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_২৯
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
একটা আদুরে প্রভাত। নরম শীতল বাতাসের ছোঁয়া। বাইরে টিপটিপ করে বৃষ্টির অল্প অল্প ফোঁটা পড়ছে। রাহা তখনএ ঘুমে। তবে রোহানের ঘুম ভেঙ্গেছে মিনিট কয়েক হয়েছে। রাহাকে ওভাবে চোখ বুঝে থেকে গুঁটিশুঁটি হয়ে বাচ্চার মতো ঘুমাতে দেখে হাসে রোহান। এক হাতের উপর মাথা রেখে রাহার দিকে ফিরে শুঁয়ে অন্য হাত দিয়ে রাহার চোখমুখে হাত বুলাতে বুলাতে ফিসফিস স্বরে বলে,
“ নবনী? আমি জানি না আমি সুহাকে কতোটা ভালোবেসেছিলাম। সুহার প্রতি আমার কতোটা অনুভূতি ছিল তাও জানা নেই। তবে এটা টের পাচ্ছি আমি তোমার মাঝে ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছি, অস্তিত্ব হারাচ্ছি। আমি তোমাক৷ ছাড়া আমার জীবন কাঁটাতে চাইছি না এইটুকুই তো এনাফ তোমার প্রতি আমার কি তৈরি হয়েছে তা বুঝার জন্য। তবে তুমি কেন বুঝতে পারছো না মেয়ে? ”
কথাগুলে বিড়বিড় করে বলতে বলতেই বৃদ্ধাআঙ্গুলি বুলিয়ে নিল রাহার চোখের পাতায়, ঠোঁটে, নাকে, গালে। রাহা তখন নড়চড় করে উঠে। চোখ কুঁচকে নেয় কেমন করে।রোহান বুঝে উঠে যে রাহা এক্ষুনিই চোখ খুলবে। তৎক্ষনাৎ বুঝে উঠে সে হাত সরাল। একইভাবে থেকেই চোখ বুঝে নিল ঘুমানোর ভান করে। রাহা তার পরমুহুর্তে চোখ খুলল। পাশ ফিরে রোহানকে এভাবে ঘুমোতে দেখে সে ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। মুহুর্তেই মনে পড়ে কাল রাতে উত্তপ্ত চুমুর স্মৃতি! রাহা মুহুর্তেই লজ্জায় কেমন লাল হয়ে এল। আবার পরমুহুর্তেই যখন রোহানের শার্টে সে লালচে লিপস্টিকের দাগের কথা মনে পড়ল তখন মুখ চুপসে এল তার। উঠে কতক্ষন থম মেরে বসে থাকল সে। তারপর হুট করেই উঠে দাঁড়িয়ে হাতে নিল রোহানের সেই শার্টটা। রাহা কতক্ষন যে সাদা শার্টটা হাতে নিয়ে সেই লিপস্টিকের দাগটা দেখে গেল। ঠিক ঠোঁটের চাপ নয় তবে লিপস্টিকের দাগ যে তা স্পষ্ট! রাহার দুঃখ হয় কেন জানি না। কেন অন্য একটা মেয়েকে রোহান প্রেমিকা বানাল? কেন? তাকে কি দ্বিতীবার ভালেবাসার স্বীকৃতি হিসেবে সে গ্রহণ করতে পারত না? রাহা এসব ভেবে সরু চাহনিতে চেয়ে চেয়ে যখন শার্টটা দেখতে লাগল তখন সরু চোখ মেলে চাইল রোহানও৷ রাহাকে এত মনোযোগ দিয়ে তা দেখতে দেখে বলল,
“ ওটা আমার কোন লুকানো প্রেমিকার নয়, এক বিজন্যাস পার্টনারের মেয়ের কার্যকলাপ এটা। উল্টোপাল্টা ভাববে না বলে দিলাম। ”
বাহ! বিজন্যাস পার্টনারের মেয়ে হলে কি যা তা করবে? রাহাকে কি বোকা পেয়েছে সে? রাহা ত্যাড়া স্বরে বলল,
“ বিজন্যাস পার্টনারের মেয়ে বিজন্যাস না বুঝে কি প্রেম বুঝতে এসেছিল আপনার কাছে? বোকা পেয়েছেন আমায়? ”
রোহান এবার কেমন হাসল রাহার রাগ দেখে। শুধাল,
“ তোমাকে সত্যিই সত্যিই বউ বউ লাগছে নবনী। টিপিক্যাল বউদের মতো সন্দেহ করছো ! ”
“ আমি মোটেই আপনার বউ নয় জাস্ট একটা বন্ধনে আবদ্ধ আমরা। তাও লাইফে কোন একবার বিয়েটা তো করতেই হবে এই ভেবে আপনাকে বিয়ে করেছিলাম। টক্সিক লাগা শুরু করলে যে কোন সময় এই বন্ধন ভেঙ্গে দিয়ে চলেও যেতে পারি৷ ”
রোহান ভ্রু বাঁকায়। শুধায়,
“ তাই নাকি? গিয়ে দেখাও তবে। ”
রাহা স্পষ্ট স্বরে বলল,
“ যাওয়া কি এখনই প্রয়োজন ? তাহলে সত্যিই ভাবতে হচ্ছে।”
রোহান উঠে বসে। রাহাকে আরোটু জ্বালাতে শুধাল,
“ হ্যাঁ, এখনই প্রয়োজন নবনী! তৈরি হও। ”
রাহার চোখে বিস্ময়। বাহ! এত তাড়া! বলল,
“ কেন? ডিভোর্স দেওয়াতে নিয়ে যাবেন? ”
রোহান মনে মনে হাসে। বাইরে গম্ভীর স্বরে বলে,
“ হ্যাঁ”
রাহার চোখেমুখে বিস্ময় এবার কেঁটে আসল। গম্ভীর গলায় বলল,
“ ওকে! ”
এটুকু বলেই রাহা জামা নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে গেল। খুব দ্রুত তৈরিও হলো। অতঃপর ফিরে আসতেই রোহান তাকিয়ে দেখে বলে,
“ বাহ! অনেক উৎসাহ তোমার! একদম জটফট তৈরি হয়ে গেছো। ”
রাহার তখন মনে প্রাণে অদৃশ্য জেদ চিড়বিড় করছিল। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ অবশ্যই। এমন একটা পুরুষের সাথে কখনোই থাকা যাবে না। বাইরে আরেক মেয়ের সাথে কি কি করে আসবে, তারপর ঐ মেয়েকে মনে পড়লে আমার সাথে কি না কি করে বসবে বলা তো যায় না। আমি রিস্ক নিতে চাই না। ”
রোহান হাসল এবারে। দুই পা বাড়িয়ে রাহার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে মাথা নোয়াল। কানের কাছে ফিসফিস স্বরে বলে উঠল,
“ তুমি রিস্ক নিয়ে ফেলেছো নবনী। এখন ভেবে লাভ নেই।ফেরার পথও বন্ধ! রোহান ফারাবীর বউ যখন হয়েছো তখন ছাড়াছাড়ির বিষয়ে আর না ভাবাটাই তোমার জন্য ভালো। মাইন্ড ইট। ”
.
খুব অদ্ভুতভাবেই আজকাল সিয়া সাদকে কম কম গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছে। আগে যেমন কথা বলার ছটফট করত? বারবার কল দিত? এখন দেয় না। আগে যেমন দেখা করতে চাইত? এখন আর চায় না। সাদ এই বিষয়টা গত কয়েকদিনই ভাবছে। কেন ভাবছে বোধহয় সে নিজেও জানে না। তবে সে এইটুকুই তো চেয়েছিল। যেন সিয়া তাকে ভুলে যায়৷ সাদ যখন এসব ভেবে ভেবে সরু শ্বাস টানল তখনই ফোনে কল এল। সাদ ভ্রু কুঁচকাল। কলটা তার রুমম্যাট নিলয়ের। সাদ কলটা রিসিভড করতেই সে জানাল,
“ দোস্ত!সিয়া কি পছন্দ করে সবচেয়ে বেশি? চকলেট পছন্দ করে ও? আচ্ছা, ওর কোন ফুল বেশি পছন্দ? ”
সাদ বুঝে উঠে না। কপাল কুঁচকে বলে,
“ হু? ”
ওপাশ থেকে ফের উত্তর আসে,
“ সিয়া শাড়ি পড়েছে। কি সুন্দর দেখাচ্ছে মেয়েটাকে। আমার কলিজা ছটফট করছে। ওকে প্রোপোজ করতে চাইছিলাম মামা। ”
সাদের কেন জানি রাগ লাগে। তবুও গম্ভীর গলায় জানাল সে,
“ গুড। ভালো সিদ্ধান্ত! ”
নিলয় ফের বলে,
“ও এত সুন্দর কেন দোস্ত? এত সুন্দর না হলেও তো পারত বল? ”
“ হু। ”
সাদের এত সংক্ষিপ্ত উত্তর পেয়ে নিলয় মুহুর্তেই জানায়
“তুই কি ওর টিউটর হিসেবে রাগ করছিস ? ”
“ না। ”
“, ও যদি রিজেক্ট করে আজ তাহলে পরবর্তীতে তুই আমায় হেল্প করবি। ”
সাদ দ্রুত কল রাখতে চাইণল। তাই দ্রুত বলল,
“ দেখব। ”
এটুকু কাটকাট স্বরে বলেই সে কল রাখল। তার একটু পরই আবার কল এল। নিলয় জানাল সে প্রোপজ করেছে। কিন্তু সিয়া কোন উত্তর না দিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গিয়েছে। সাদ ছোটশ্বাস পেলে যখনই বুঝল সিয়া বাসায় ফিরছে তখনই দ্রুত সব কাজ গুঁছিয়ে গিয়ে গেইটের সামনে দাঁড়াল। উদ্দেশ্য সিয়া যাওয়ার সময় দেখা হবে। হলোও তাই। সিয়া সাদকে ওভাবে অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল,
“ একি সাদ ভাই? এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন যে? কাউকে খুঁজছেন? ”
সাদ তাকাল। সিয়াকে আসলেই সুন্দর দেখাচ্ছে শাড়িতে। নিলয় যে মিথ্যে বলেনি তা বুঝে উঠে সাদ ছোটশ্বাস টানে। গম্ভীর গলায় উত্তর করে,
“ না। ”
সিয়া উত্তরটা শুনে আর কিছু বলার মতো পেল না। পা বাড়াতে নিল। ঠিক তখনই আবার সাদ বলল,
“ সিয়া? ”
সিয়া তাকায়। হেসে বলল,
“ হ্যাঁ, কেমন আছেন সাদ ভাই? ”
সাদ উত্তর দেয় না। বরং মুখচোখ শক্ত রেখে শোনায়
“ এখানে বাসা নিয়েছো আসলে কেন? কি উদ্দেশ্যে? ”
উত্তর আসে,
“ কোন উদ্দেশ্য নেই। ”
“ তাহলে ফিরে যাও। আজেবাজে আড্ডায় না মিশে জীবনটা গুঁছিয়ে নাও।”
সিয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ আমি আজেবাজে আড্ডায় মিশছি? আর আপনি? আপনি যাদের সাথে ঘুরেন তারা বুঝি খুব ভালো? ”
“ রুমম্যাটদের মধ্যে নিলয় বাদে বাকি সবাই ব্যাক্তিত্ববান ব্যাক্তি। ”
“ নিলয় কে? ”
“ যে তোমায় প্রোপোজ করেছে একটু আগে”
সিয়া এবারে ভ্রু বাঁকিয়ে শুধায়,
“ ওহ এইজন্যই বদনাম করছেন তার নামে।”
সাদ শক্ত চাহনিতে তাকায়। জানায়,
“ বদনাম না, সাবধান করছি। বদনাম করে তো আমার লাভ নেই৷ ”
সিয়া হেসে বলল,
“ থাকতেও পারে। আমি আপনাকে পছন্দ করতাম, এখন তাকে পছন্দ করছি বিষয়টা হয়তো আপনি মানতে পারছেন না। ”
সাদ নিরব চাহনিতে তাকায়। বড্ড শান্ত স্বরে শুধায়,
“ তুমি অন্য কাউকে পছন্দ করলে আমার কিচ্ছু এসে যায় না সিয়া। আমি নিজেও চাই তুমি অন্য কাউকে পছন্দ করো।সুখী থাকো। আমাকে ভুলে। তবে নিলয়কে পছন্দ করলে তুমি সুখী হতে পারবে না। আমি শিওর সে তোমায় একটা সময় পর চিট করবে। ”
#চলবে…
#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৩০
লেখনীতেঃঅলকানন্দা ঐন্দ্রি
ছুটি তখন মাত্রই বাসায় ফিরেছে৷ আবির সাধারণত তার ফেরার একটু পরই ফিরে। কিন্তু আজ ব্যাতিক্রম হলো। আবির আগে আগেই ফিরল। অথচ অন্য রুমে ল্যাপটপ নিয়ে বসে থাকাতে ছুটি তা খেয়ালই করল না। নিজের মতো করেই দরজার লক খুলে ডুকে পড়ে আগে এক মগ কফি করল। অতঃপর চুমুক দিয়ে একটু সময় নিয়ে কফি শেষ করল। এর পরমুহুর্তেই কাপড় নিয়ে রুমের সাথে এডজাস্ট করা ওয়াশরুমে প্রবেশ করে। ওয়াশরুমটা কাঁচের তৈরি। এমনি ওয়াশরুম গুলো ফ্রস্টেড গ্লাস দিয়ে তৈরি করা হলেও এটাতে ভেতর থেকে পর্দা দেওয়া ছিল। পর্দা না দিলে বাইরে থেকে ও দেখায় ভেতরের সব৷ ছুটি যে এসেছে তা আবির খেয়াল করেছে শুরু থেকেই। এতক্ষন আড়াল থেকে দেখছিল। যেহেতু একটু পরই সে এক ইভেন্টের উদ্দেশ্যে বের হবে তাই তৈরি হতে যখন নিজের রুমে প্রবেশ করল এবং মনে আগ্রহও থাকল ছুটি কি করছে এতক্ষন তা দেখার জন্য তখনই ওয়াশরুমের পর্দার এক ফাঁকে চোখে পড়ল ভেজা শরীরে দাঁড়িয়ে থাকা ছুটিকে। মুখে পানি দিচ্ছে। অতঃপর ঝর্নার নিচে দাঁড়াল চোখ বুঝে।পোশাকটা শরীরে বেশ এঁটে আছে যেন। আবির নিজের প্রিয়তমা নারীর আড়ালে এভাবে দাঁড়িয়ে কার্যকলাপ দেখাতে বেশ মজা পেল যেন। দৃষ্টি নিবদ্ধ করে এক মুহুর্ত তা দেখে বসে থাকল বিছানার এক কোণে। অতঃপর মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে ক্রমেই।ছুটি যখন ড্রেস চেঞ্জ করে নিতে যাবে ঠিক তখনই আবির চোখ বুঝে নিল। শুকনো ঢোক গিলে সে। ছুটি তার স্ত্রী। দেখার অধিকার তার আছে সে জানে৷ তবুও কারোর আড়ালে কারের এতটাও প্রাইভেসি নষ্ট করা উচিত নয় বোধহয়। এতক্ষন সে মজা করেই ছুটিকে পরে জ্বালাবে বলে তাকিয়ে দেখছিল। অতঃপর সে চোখ বুঝেই অন্য পাশে ফিরে বিড়বিড় করে বলল নিজ মনে,
“ এই মেয়েটা আমায় ভালো থাকতে দিবে না। এমন কেন? এমন কেন এই মেয়েটা? এক নিমিষেই আমার মাথা পাগল করে দেয়! এই বেয়াদব মেয়েটা কি জানে তাকে দেখলে আমার হৃদয়ে কেমন পাগল পাগল বোধ হয়!”
কথাটুকু বলতে বলতেই দেখা গেল সে শুকনো ঢোক গিলল। যেহেতু এখন সে বের হবে নিজের সমস্ত চেষ্টা দিয়ে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করল। ছুটির প্রতি ঝুঁকবে না এখন। ঝুঁকলেই বিপদ। বের হওয়া আর হবে না। এমনটা মনকে বুঝিয়েই দ্রুত নিজের ফর্মাল পোশাক নিয়ে তৈরি হতে লাগল। অতঃপর তাকে আরেকটু নিয়ন্ত্রনহীন বানাতে দেখা মিলল ছুটি সদ্যই গোসল সেরে বের হয়েছে। চুলগুলো টাওয়ালে বাঁধা। পরনে কেবল একটা লং শার্ট এবং স্কার্ট। বুকে ওড়না নেই। সাদা শার্টটার উপরের বোতামটা খোলা থাকাতেই গলা এবং গলার নিচাংশে কিছুটা অংশ পানিতে ভেজা দেখা মিলল।আবির ভ্রু কুঁচকেই তাকায়। সে নিজেকে এত চেয়েও ভদ্র সাঁজাতে পারছে না এখন। অথচ বিয়ের আগের আবির কতোটা সংযত ছিল। ছুটির প্রতি এত প্রেম থাকা সত্ত্বেও সে কতোটায় এড়িয়ে চলত এই মেয়েটাকে। এখন কেন পারে না? আবিরের মন চাইল বরাবরের মতো অভদ্র রূপে ফিরতে । করলও তাই। অতঃপর শেষমেষ নিজেকে এইটুকু কন্ট্রোলে রাখার চেষ্টা না চালিয়ে পেছনে থেকে এক মুহুর্তেই আঁকড়ে ধরল ছুটিকে। ভেজা চুল গুলো খুলে দিল টাওয়াল ছাড়িয়ে। অতঃপর ভেজা কাঁধে, গলায় নাক ঘষতে ঘষতেই গলার অদ্ভুত টোন এনে বলল,
“ আমায় বের হতে হবে এই মুহুর্তে, অথচ তুই আমার প্রেমপ্রেম অনুভূতি এনে আমায় মেরে দেওয়ার চেষ্টা করছিস ছুটি। সাংঘাতিক মেয়ে তুই! ”
ছুটি শাওয়ার শেষে তখনও আবিরকে খেয়ালই করে উঠেনি। আকস্মিত এই ছোঁয়া এবং এই কথাগুলো কানে বাঁজতেই সে শিউরে উঠে। প্রিয় পুরুষের স্পর্শ বুঝে উঠে চোখ বুঝে নেয় সে। আবিরের ঠোঁটজোড়া তখন লাগামহীন ভাবে বিচরণ করছে ঘাড় কাঁধময়। হাত দুটো সাদা মিহি শার্টটার আড়ালে গিয়ে পৌঁছে ছুটির উদরে। ছুটি চোখ বুঝে এই পুরুষটার পাগলামো সহ্য করে। অতঃপর খেয়াল হলে আবিরের একটা ইভেন্ট থাকার কথা ছিল আজ। সেটা মনে করেই একটা সময় পর মিহি স্বরে বলল,
“ বের হতে হবে বললেন তো। দেরি হবে আপনার। ”
আবির বোধহয় নিজের মধ্যে তখন নেই। থাকলেও নিজের স্বত্ত্বা তখন প্রেয়সীতে মাতেয়ারা হতে ব্যস্ত। অন্য কোন কিছুকে সে এর চাইতে বেশি গুরুত্ব দিতে চাইল না। দিল ও না। সে মাতাল মাতাল অনুভূতিকে সে রুখে দিল না একবারের জন্য ও। বরং প্রশ্রয় দিল। উম্মাদের মতো আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিতে লাগল মেয়েটাকে। কানের কাছে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিস স্বরে বলল,
“ আজ আর বের হওয়া সম্ভব না। তুই আমার বের হওয়াটাকে আটকে দিলি ছুটি।”
ছুটি বিস্ময় নিয়ে শুধায়,
“ আমি? ”
“ তো কে? তুই ই তো অলটাইম আমার সর্বনাশটা ঘটাস। আমার শরীর মন সবকিছুতে পাগল পাগল অনুভূতি এনে দিস। ”
ছুটি এই কথাটায় হতাশ হলে যেন। উদরে বিচরণ কারী হাতদুটো এলোমেলো হতেই সে চেপে ধরল শক্ত করে। শুধাল,
“ আমি সর্বনাশ ঘটাই? ”
“ অবশ্যই! আমার উচিত এখন ইভেন্টে পার্টিসিপ্যান্ট করা, তা না করে আমি বউয়ের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে কন্ট্রোলল্যাস হয়ে পড়ে আছি তোর মধ্যে। ”
ছুটি বুঝল আবিরকে হয়তো সত্যিই এখন পাঠানো যাবে না। ভদ্র আবির অভদ্র হলে উচতি অনুচিত ভুলে যায়। যেমন এখন যে তার যাওয়া উচিত সেটা সে মাথাতেই নিচ্ছে না। বউ তো তার আছে। চলে যাচ্ছে না। ছুটির নিজেরও এই পুরুষটার সান্নিধ্যে পাগল পাগল লাগল, কোমর এক ভালো লাগা ছুঁয়ে ছুঁয়ে গেল মনে। তবুও সে কিছুটা নিরাস স্বরে জানাল,
“ লেইট হবে আপনার। এক্ষুনিই আপনার যেখানে যাওয়ার ওখানে যাবেন। আমাকে ছাড়ুন। বিরক্ত হচ্ছি। ”
আবির এই ধাপে ভ্রু কুঁচকায়। কপাল কুঁচকে নেয়। ছুটি বিরক্ত হচ্ছে? তার ছোঁয়াতে? তার ভালোবাসাতে? ছুটি? সে বিশ্বাস করতে পারল না। ছুটিকে নিজের দিকে ফিরিয়ে তাকাতেই সে এর বিপরীত দেখতে ফেল। প্রেমে আধ ডুবো এক তরুনী মনের দেখা মিলল যেন। আবির জানে সে ছুটিকে খুব ভালো বুঝে। তাই তো আবারও আঁকড়ে নিয়ে বাঁকা হেসে বলল,
“ অথচ তোর মন বলছে তোর আমাকে চাই। উল্টোপাল্টা বলে মাথা খারাপ করবি না বোকাপাখি। ”
ছুটি ফের এই পুরুষটাকে ছাড়াতে ধাক্কা দিল। দূরে সরে বলল,
“ দূরে সরুন! যেখানে যাওয়ার দ্রুত যান।আমি কোথাও চলে যাচ্ছি না, আছি। ”
আবিরের কেন জানি এই ধাক্কাটা ভালো লাগল না। ছুটি কি তার প্রতি প্রেম হারিয়ে ফেলছে? তার ছোঁয়াতে বিরক্ত হচ্ছে? পুরুষালি ইগোতে বড্ড লাগল যেন এই প্রত্যাখাস। তবুও শুধাল,
“ তুই কোথাও চলে না গেলেও আমার এখন তোকে লাগবে। বাঁধা দেওয়ার চেষ্টাও করবি না। আমি জানি তোর মন ও চায় এইমুহুর্তে তোর আমার কিছু একটা ঘটুক। একশো ভাগ সম্মতি তোর আছে।রাইট তো? ”
ছুটি অন্যদিক ফিরল।মিহিস্বরে শুধাল,
“ ইভেন্টে পার্টিসিপেন্ট করে আসুন। এরপর আমাকে লাগলে আমি ভেবে দেখব কিছু একটা ঘটুক তা চাই কিনা। ”
আবির এবারও ভ্রু কুঁচকে নিল। ভেবে দেখবে মানে? যে মেয়ে সে বলতে আজীবন পাগল সে মেয়ে তার কাছে ঘেষতে হবে কিনা এটা ভেবে দেখে? বাহ! আবিরের ইগোতে এবার পুরোপুরি লাগল যেন। শুধাল,
“ ভেবে দেখবি মানে? তুই আমার কাছে আসতে ভেবে চিন্তে আসিস? আমি কি তোর অসুবিধা হলে কাছে ঘেষি? আমি তোর মন বুঝি না? কি বুঝালি তুই কথাটা দ্বারা? জোরজবরদস্তি করি আমি?তুই দয়া করে আমার কাছে আসিস? ”
ছুটি ছোটছোট চোখে তাকায়৷ কি বলল,কি হয়ে গেল। আসলেই তো খারাপ লাগার কথা পুরুষটার। সে ওভাবে না বলে বুঝিয়ে বললেই বোধহয় হতো। ওভাবে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে না দিলেও তো পারত৷ বুঝানোর ন্যায় বলল,
“ তেমন কিছু না। প্লিজ বুঝুন, আপনার দেরি হচ্ছে।এমন করলে তো জব আর থাকবে না আপনার। ”
“ না থাকলে নেই। লাগবে না জব! বাংলাদেশ ফিরব আমি। কিচ্ছু লাগবে না আমার।”
ছুটি ফ্যালফ্যাল করে তাকায়৷বলল,
“ মানে? ”
“ নাথিং! ”
“ তার মানে যাবেন না ইভেন্টে? তাই তো? ”
আবির দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
“ আমার লাইফে তার চেয়েও বড় ইভেন্ট আয়োজিত হয়ে গেল এই মুহুর্তে। আমার বউ নাকি আমার কাছে আসতে হলে ভেবে চিন্তে দেখে আমায় সিদ্ধান্ত জানাবে? হাও চমৎকার বাক্য!আমি কাছে ঘেষলে সে বিরক্তবোধ করছে! ওয়াও! এর চাইতে বড় ইভেন্ট আর আছে? ”
.
বাইরে বর্ষণ হচ্ছে ক্রমশ।বাসায় আজ সিয়া একা। বাকি মেয়েরা বাইরে গেছে। সিয়া জানালার ধারে তাকিয়ে নির্নিমেষ তা তাকিয়ে দেখল। নিরব থাকা এক বালিকার দুঃখ কি কখনো কেউ বুঝে উঠেছে এই পর্যন্ত? কেন সে সাদের প্রেমের পড়ল? কেন সে সাদকেই মন দিতে গেল? সিয়া ছোটশ্বাস টানে। হুট করেই মন খারাপ ভুলতে সে ব্যাগ থেকে বের করল একটা লাল পেড়ে কালো শাড়ি । সেটা গায়ে জড়িয়েই কপালে একটা টিপ গুঁজল,চোখে কাজল আর পায়ে আলতা। এই মন খারাপের বর্ষনেও সে এই সাঁজ নিয়ে আয়না দেখল। হাসল মৃদু। অতঃপর পা বাড়িয়ে রান্নাঘরটায় গেল। একবার সাদ বলেছিল তার বর্ষার মাঝে খিঁচুড়ি খেতে দারুণ লাগে। তারপর কত কষ্ট করে যে সিয়া খিঁচুড়ি রান্নাটা শিখল।সিয়া হাসে। আজও ইচ্ছে হলো সাদের জন্য খিঁচুড়ি করতে।যেই ভাবা সেই কাজ। গেল রান্নাঘরে। যেহেতু দুই তিনজন মেয়ে একসাথে থাকে এই তাই তেমন জিনিসপত্র তাদের নেই। কয়েকটা হাড়িপাতিল এই যা। সিয়া ছোটপাতিলটায় খিঁচুড়ি চাপাল। রান্নার সব উপকরণ না মিললেও যা যা পাওয়া গেল তা দিয়েই রান্না করল সে। শেষে পাতিল নামাতে গিয়ে তার হাতে গরম পাতিলটা লেগে অল্প পুড়েও গেল হাতে। সিয়ার বোধহয় ব্যাথাটা বোধগম্যও হলো না। ছোট্টশ্বাস ফেলে সে বক্সে বুনা খিচুড়ি নিল। তারপর কি বুঝেই পা বেয়ে নিচে গেল। সিঁড়ি বেয়ে সাদদের বাসাটায় গিয়েই কলিংবেল বাঁজাল। এবং পরমুহুর্তে দরজাটা খুললও সাদ। সিয়াকে এই অবস্থায় দেখে কিঞ্চিৎ চোখ নামিয়ে তাকায় সে৷মেয়েটার প্রতি তার সদ্য মায়া জম্মাচ্ছিল। আদুরে এক অনুভূতি বোধহয় জমাট বাঁধছিল হৃদয়ে।হয়তো ভালোবাসা না তা, তবে একপাক্ষিক ভালোবাসার যন্ত্রনা যেহেতু সে জানে সেহেতু এই মেয়েটার একপাক্ষিক ভালোবাসার যন্ত্রনা দেখেও তার অপরাধবোধ হতো। যন্ত্রনা হতো। কত বুঝাল মেয়েটাকে। যাক অবশেষে ভাগ্যিস মেয়েটা বুঝতে শিখেছে। সাদ ছোটশ্বাস টানে। তাকিয়ে দেখে সিয়া শাড়ি পরেছে। পরনের শাড়িটায় খুব ভালো মানাল তাকে নাকি সিয়াকে সবসময়ই শাড়িতে অপরূপ বোধ হয় তা সাদ বুঝে উঠল না। সেদিনও সিয়াকে শাড়িতে দেখে সে এইটুকু স্বীকার করেছে এই মেয়েটা সত্যিই সুন্দরী এক রমণী। সেই প্রথমই সে অনুভব করেছে সেই এই পৃথিবীতে কত সুন্দর এক রমণীকে অবহেলায় রেখেছে। সাদ চায়নি অবহেলায় রাখতে তবুও অবহেলিত হতে হয়েছে। এইজন্য তো সে কত বুঝাল মেয়েটাকে। সাদ কিয়ৎক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল,
“ কিছু বলবে সিয়া? কিংবা কিছুর দরকার?”
সিয়া হাসল। মিষ্টি করে জানাল,
“ খিঁচুড়ি রান্না করেছিলাম সাদ ভাই। বাইরে বর্ষা। বর্ষা আর খিঁচুড়ি কম্বিনেশন টা ভালো তাই না?”
গম্ভীর স্বরে উত্তর এল,
“ হু ভালো। ”
সিয়া হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে বলল,
“ আপনার বন্ধু কোথায়? উনি বলেছিলেন খিঁচুড়ি খেতে উনি বেশ পছন্দ করেন। ”
সাদের হুট করেই মাথা খারাপ লাগল। এই মেয়েটাকে এত বলার পরও সে নিলয়ের সাথেই ঘুরঘুর করছে। তার সামনেই। আজকাল তার মেজাজ খারাপ খারাপ লাগে। কানের কাছে নিলয়ও সারাক্ষণ বলে বেড়ায় সিয়ার এইসেই সম্পর্কে৷ সিয়াও নিলয়কে খুঁজে। কেন খুঁজে? সাদের তখন কেমন যেন ইর্ষা হয়৷ কেন হয় সে নিজেও জানে না। বলে,
“ এই জন্যই রান্না করেছো? ”
“ হ্যাঁ, হ্যাঁ। এইজন্যই। উনাকে একটু ডেকে দিবেন? উনার জন্য খিঁচুড়ি আনলাম। ”
সাদ হুট করেই একটা মিথ্যে বলল,
“ ওর পেট খারাপ করছে। খিঁচুড়ি খেতে পারবে না। ”
“ পারবে, আপনি একটু তাকে ডেকে দিন না।”
সাদ ডাকল না। যদিও নিলয় বাসাতেই আছে। পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে কারণ আজ শুক্রবার! সাদ একবার পিছু ফিরে জানাল,
“ বাসায় নেই। বাইরে গেছে ও।আমার কাছে দিয়ে যেতে পারো। দিয়ে দিব পরে। ”
সিয়া এগিয়ে ধরে বলল,
“ আচ্ছা, মনে করে দিবেন কিন্তু। ”
“ হু। ”
সাদ নিল। সে মুখে বললেও সে মোটেও এই বাক্সটা নিলয়কে দিবে না। মুখ গম্ভীর রাখল। পরমুহুর্তেই খেয়াল করল সিয়ার হাতের দিকে একটু লালচে পোড়ার মতো হয়ে আছে। বলল,
“ হাত পুড়ল কিভাবে? ”
সিয়া তাকাল। একটা হাসি দিয়ে বলে,
“ পাতিল নামাতে বোধহয়। ”
সাদ শক্তস্বরে বলল,
“ কেউ খিঁচুড়ি পছন্দ করে বললেই তার জন্য রান্না করতে হবে এমন কোন কথা নেই। দাঁড়াও। ”
এটুকু বলেই সে রুমে গেল। একটা মলম আনল। তা থেকে একটু খানি নিয়ে সিয়ার হাতটা টেনে লাগাতে লাগল। এবং বলল,
“ এরপর থেকে সাবধানে কাজ করবে। একা একা কিছুই তো ঠিকভাবে করতে পারো না, তবুও এসেছো একা থাকতে। ”
অতঃপর যখন লাগানো শেষ তখন সিয়া এক টুকরো ভালো লাগার অনুভূতি নিয়ে পিছু ঘুরল। তার সত্যিই ভালো লাগছে। মন খুশি লাগছে। এই খুশিটা প্রকাশ করে ফেললে যে হেরে যাবে। সে চলে যেতে নিতেই সাদ ফের বলে,
“ শোনো? এরপর থেকে আর ব্যাচেলর বাসার সামনে ঘুরফির করবে না। এভাবে সেঁজেগুজে তো একদমই নয়। ”
সিয়া ঘাগ বাঁকিয়ে তাকায়। বলে,
“ কেন? ”
সাদ শুধায়,
“ লোকে খারাপ বলবে। আমি চাই না তোমার নামে কেউ খারাপ বলুক সিয়া। ”
“মনে রাখলাম। ”
.
রাহা টিপটিপ পায়ে রোহানদের অফিসে গেল। যেহেতু বিজন্যাস পার্টনার তার দাদাজানও সেহেতু আসার অধিকার তার আছেই তো।সে পরিচয়েই সে আসল। সে যে রোহানের স্ত্রী তা বলল না। মুখে মাস্কও লাগাল এই কারণে।পরনে একটা ফতুয়া আর স্কার্ট পরেই এল। গলায় জর্জেট ওড়না জড়ানো। অতঃপর পা বাড়িয়ে একে একে অফিসটা দেখতে লাগল সে। রোহানের কেবিনটা কোনদিকে তাও খুঁজল। অতঃপর খুঁজেও পেল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো কেবিনটা কাঁচের, আর বাইরে থেকেই সবটা দেখা যায়। যার দরুণ দেখা গেল রোহান কোন একটা মেয়ের সাথে কিছু আলোচনা করছে। রাহা বাইরে বসেই তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। কিসের মিটিং চলছে ভেতরে?এক পর্যায়ে মেয়েটা রোহানের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েই কিছু একটা দেখাতে নিতেই চুলগুলো খুলে গেল। এ তো রীতিমতো মেয়েটা তাড়াহুড়ো করে চুল গুঁছিয়ে নিতে গিয়েই রোহানের দিকে ঝুঁকে পড়তে নিল। মুহুর্তেই রোহান চেয়ার পিছিয়ে পিছু হটে গেল। আর সঙ্গে সঙ্গেই মেয়েটা উষ্ঠা খেয়ে পড়তে নিল। রোহান হেসে হাত এগোল। উঠতে বলল বোধহয়। আবার পরমুহুর্তেই দেখা গেল হাত সরিয়ে নিল। রাহা এতক্ষন মনোযোগ দিয়ে এসব দেখে যাচ্ছে। কিসের মিটিং? এতো রীতিমতো প্রেম চলছে। রাহার মাথা খারাপ লাগে। রোহানের পি এ টাকে খোঁজ করে ডেকে নিয়ে এসে জিজ্ঞেসও করল,
“ আপনাদের স্যারের সাথে মেয়েটা কে? কিসের মিটিং করছে ভেতরে? কাইন্ডলি জানাবেন।”
ছেলেটা ভদ্রভাবে উত্তর করল,
“ একটা ডিল নিয়েই মিটিং হচ্ছে। আর উনি সাদিয়া ম্যাম। আমাদের কোম্পানির না তবে উনি স্যারকে পছন্দ করেন। সবাই ভাবে উনাদের মাঝে কিছু একটা আছেও বোধহয়! ”
রাহা দাঁতে দাঁতে চাপে। বিড়বিড় করে বলতে লাগে,
”বাহ! শ্লা বেই’মান! আমারে ব্যবহার করল! এতবড় সাহস। আমি কি নিষেধ করছিলাম তোর প্রেমিকা রাখতে? বেয়াদব লোক। প্রেমিকাও রাখলি আবার আমাকেও ইউজ করল! ”
মুখে বলল,
” আমি একটু দেখা করতে চাই আপনাদের স্যারের সাথে। বলুন না একটু জলদি মিটিং শেষ করতে। ”
ছেলেটা হেসে বলল,
” এভাবে তো বলা যায় না। আপনি একটু অপেক্ষা করুন প্লিজ। ”
রাহা নিরস স্বরে জানাল,
“ ওকে! ”
অতঃপর অনেকটা সময় পর সে রোহানের সাথে দেখা করার সুযোগ পেল। সুযোগ পেয়েই ভেতরে ডুকল। চেয়ার টেনে বসে শুধাল,
“ কি সমস্যা? কল তুলছিলেন না কেন? ”
রোহান ভ্রু বাঁকিয়ে তাকায়। এই মেয়ে অফিসে কেন এসেছে তা বুঝার চেষ্টা করে। বলল,
“ হঠাৎ এখানে? আর তুমি কল দিয়েছো? এমনি সময তো দাও না? ”
“হ্যাঁ। প্রয়োজন ছিল তাই। অন্যথায় দিতাম না। ”
রোহান হাসে। বলে,
“ প্রয়োজন ব্যাতীত ও এবার থেকে ঘন্টায় একবার করে কল দিবে। ওকে? ”
রাহা ফুঁসে উঠে বলে,
“ জীবনেও না। ”
“ দিবে। না দিলে আমি লোক রাখব কল দেওয়ানোর জন্য। ”
রাহা এমনিতেই রাগে ফুলছে।জানায়,
“ আপনার কথা মতো নাকি? বেশি নাক গলাচ্ছেন আমার লাইফে। কথা ছিল আপনি আপনার লাইফ নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন, আমি আমার লাইফ নিয়ে। ”
রোহান বাঁকা হেসে জানাল,
“আছি তো। আমার লাইফ নিয়েই ব্যস্ত আছি। ”
“ কোথায়? ক্রমশ আমার লাইফে ডুকে পড়ছেন। ”
“ তুমিও আমার লাইফ নবনী। অস্বীকার করলে চলবে?
রাহা মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,
“ ফ্লার্টিং এর মহারাজা রে! একদম ভালো করেছে আপু আপনাকে পাত্তা দেয় নি।ক্যারেক্টারল্যাস পার্সন। ”
লাস্টের শব্দটা রোহানের পছন্দ হলো না যেন। শুধাল,
“ রাগিও না। খারাপ হবে তাহলে। ”
“ হতে কি বাকি আছে? শুনুন? আমি বিজন্যাস জয়েন করব। দাদাজানকে বলব আজই। ”
” গুড ডিসিসন। কিন্তু বিজন্যাসের কি বুঝো তুমি? থাকো তো গান আর পড়ালেখা নিয়ে।”
রাহা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“ কে বলল বিজন্যাস করার জন্য আমি বিজন্যাস জয়েন করব? ”
“ তাহলে? ”
উত্তর এল,
“ অন্যকিছু করতে জয়েন করব। সিক্রেট! ”
#চলবে….
[ সকাল থেকে এফ বি লাইটে আইডিতে আসতে পারলেও মেইন এফ বি এ্যাপে লগ ইন হচ্ছিল না কেন জানি। অনেকে হয়তো ভাববেন কথা দিয়ে কথা রাখি নি।মাত্রই লগইন করতে পারছি। কেন হইছে এমন তাও জানি না।🙂আমি তো ভাবছি আর পোস্ট করতে পারুম না।
আর হ্যাঁ, ২৩০০ শব্দ হয়ে গেছে। স্বচ্ছ সুহার পার্টটা সহ ৩০০০ শব্দের বেশি হয়ে যাচ্ছে। বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে।ওটা পরের পর্বে দিচ্ছি, বেশি অপেক্ষা করতে হবে না। আর, একটু রিয়্যাক্ট ফিয়্যাক্ট করিয়েন, আমিও তাড়াতাড়ি দিয়ে শেষ করে দিব শীঘ্রই! ]