#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৩৪
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
সেই রাতে রোহান প্রথমেই যে আগ্রাসী আচরণটা রাহার প্রতি দেখাল তাতে রাহার ভয় হলেও পরমুহুর্তেই একটা উষ্ণ চুম্বনে পরিবেশ শান্ত করে দিয়ে রোহান বের হয়ে গেল। রাহা নিষ্পলক চাহনিতে তাকিয়ে থাকল কেবল রোহানের চলে যাওয়ার পানে। অতঃপর রোহানকে সে রাতে আর দেখাই গেল না। রোহানের উপস্থিতিও পাওয়া গেল না পুরো বাসায়।রাহা বার কয়েক কলও দিল। লাভ হলো না বিশেষ৷ কল তোলা হলো না। রাহা যখন বুঝে উঠল না রোহান কোথায় গেছে তখন না পেরে সকালে রোহানের মাকেই জিজ্ঞেস করল তা। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে উনিও জানেন না! রাহা হতাশ! নিষ্প্রাণ হয়ে অফিসে গেল এই ভেবে যে এইবার অন্তত রেহানকে দেখতে পাবে। অথচ তাও হলো না। সে অফিসেও আসে নি। বিনিময়ে অফিসে দেখা মিলল মিস সাদিয়ার। এতক্ষন নাকি রাহার জন্যই অপেক্ষাতে ছিল। রাহা কিছুটা অবাক হলেও সাদিয়ার সাথে কথা বলল। তারপর একে একে সাদিয়া জানাতে লাগল সে যা বলে এসেছে তা মিথ্যে, রোহান আর তার মাঝে কোন ক্লোজ সম্পর্কই নেই। যা আছে তা শুধু অফিসের লেনদেনের খাতিরে৷ রাহা সবটা শুনল, চুপচাপ সাদিয়াকে দেখে হুট করেই প্রশ্ন ছুড়ল,
“ উনার শার্টে আপনার লিপস্টিকের দাগ , তা কি মিস সাদিয়া?”
মিস সাদিয়া মুখ টানটান করে তাকাল৷ সে বেধহয় এসব বলতে চাচ্ছে না, তবুও অদৃশ্য কোন চাপে পড়ে এসব যেন তাকে বলতেই হচ্ছে এমনই মনে হলো। বলল,
” আমি শুনেছিলাম ও বিয়ে করেছিল। বাইরে থেকে দেশে আসার পর হঠাৎ এই কথা শুনে কেন জানি না রাগ লাগছিল আমার। আর তাই ইচ্ছেকৃত ভাবে সেদিন ঝুঁকে পড়ে লিপস্টিকের দাগ বসালাম যাতে তার ওয়াইফ দেখে সন্দেহ করে।”
রাহা এবারে হেসে ফেলল। বলল,
“ গুড! কিন্তু অফিস স্টাফরা? ওরা কীভাবে জানল আপনার আর উনাে সম্পর্ক সম্বন্ধে?”
“ আমাদের তো আজকের দুদিনের বিজন্যাস নয় মিসেস রাহা! যখন থেকে আমি বিজন্যাস জয়েন করেছি তখন থেকে রোহানের সাথে আলাপ বলা চলে। এবং এই আসা যাওয়ার খাতিরে বিভিন্ন মিটিং, প্রোগ্রাম এই সেইতে আমিই তার প্রতি অত্যাধিক দুর্বলতা দেখিয়েছি যা স্টাফদের মনে সন্দেহ জাগানোর জন্য এনাফ! দ্বিতীয়ত আমিই একবার সবাইকে বলেছিলাম যে সে আমার উডবি, আমাদের মাঝে সম্পর্ক আছে। ”
রাহা ছোট শ্বাস টেনে উত্তরে বলল,
“ সে জানে না আপনি তাকে পছন্দ করেন? আপনাকে বিয়ে করল না কেন? ”
মিস সাদিয়া এবারে দৃঢ় নজরে তাকাল। বলল,
“ জানে, অলরেডি রিজেক্টও করেছে। তবে বিয়ে কেন করল না এর হিসেব তো ওই জানে। কোনকিছুর তো কমতি ছিল না আমার। অন্তত তোমার থেকে কোনকিছুতে কমতি নেই। ”
রাহা হাসল। বলল,
“ ঠিক বলেছেন। তবে উনি যদি দ্বিতীয়বার বিবাহ করেন আমি অবশ্যই আপনার হয়ে উনাকে বুঝাব। ”
মিস সাদিয়া ভ্রু বাকাল। বলল,
“দ্বিতীয়বার বিয়ে করার আশংকা আছে বলছো? ”
রাহা মুহুর্তেই জানাল,
“ অবশ্যই আছে!”
এইটুকু বলেই রাহা উঠল। পা চালিয়ে নিজের কেবিনে গিয়ে বসল। অতঃপর রোহানের পি এ কে জরুরী তলব দিয়ে ডাকিয়ে নিয়ে গিয়ে শুধাল,
“ আপনার স্যার কোথায়? অফিসে আসবেন না আজ? ”
ভদ্রলোক হেসে উত্তর দিল দ্রুত,
“ আমার জানামতে আসবেন না ম্যাম।
“ কেন? আজ অফিসে কোন ইম্পোর্টেন্ট মিটিং নেই?”
ভদ্রলোক আবারও উত্তর করল,
“ না, একটা মিটিং আছে যদিও। স্যার বলল, স্যারের হয়ে আপনি জয়েন করবেন তাতে।”
রাহা মুহুর্তেই বিস্ময় নিয়ে তাকাল। বিস্মিত চোখে তাকিয়েই শুধাল,
“ আমি? কিসব কি বলছে! আমি এসব কিছু বুঝি নাকি! ”
লোকটা নিরাশ হয়ে জানাল,
“ স্যার তো তাই বলেছে ম্যাম। ”
রাহা জলদি করেই বলল,
“ কল দিন তো, আমার কল তো তুলে না ঐ লোক! কত বড় ধূর্ত লোক। আমায় এভাবে ফাঁসিয়ে দিতে চাইছে। ”
অতঃপর পিয়াশ নামের লোকটি কল দিল তার স্যারকে। একবার, দুইবার, তিনবার। সে পড়েছে বেকায়দায়। স্বভাবত স্যারকে একবার কল দেওয়ার পর কল না তুললে সে বুঝে নেয় স্যার ব্যস্ত। তারপর আর কল দেয় না। কিন্তু আজ রাহার তাড়ার জন্য দিতেই হচ্ছে। ওপাশ থেকে রোহান কল তুলে শুধাল,
“ কি আশ্চর্য! এতবার কল কেন দিচ্ছো পিয়াশ? সব তো ঠিক আছে তাই না? ”
রাহা মুহুর্তেই ফোন টেনে নিল। বলল,
“ জ্বী না স্যার, ঠিক নেই৷ আমি মিটিং ফিটিং এ গিয়ে বসতেও পারব না। আপনি অফিসে আসবেন এক্ষুনি। ”
রোহান ভাবে নি রাহা যে এপাশে থাকবে। ভরাট স্বরে শুধাল,
“ নবনী? বোনের বাসায় যাওনি?”
রাহা মুহুর্তেই চটফট স্বরে উত্তর করল,
“ যাইনি যে সেটা আপনি খুব ভালো করেই জানেন। নয়তো আপনার পি এ কে বলতেন না আমি মিটিং জয়েন করব। ”
“ আমি তো ভেবেছি তুমি বোনের বাসায় চলে গিয়েছো রাতেই, বোধহয় ওখান থেকেই অফিস জয়েন করবে তাই ভাবলাম।”
রাহচ দাঁতে দাঁত চিবিয়ে মুহুর্তেই বলল,
“ চলে যাই এটাই তো চাচ্ছেন? ”
রোহান এবারে হাসল একটু রাহার কথা শুনে। তবে হাসিটা রাহাকে বুঝতে দিল না। বলল,
“ থাকতে চাচ্ছো? ”
রাহা নিজের কথা না শুনিয়ে প্রসঙ্গ পাল্টাতে জানাল,
“ আম্মু আপনার জন্য চিন্তা করছে। বাড়ি ফিরবেন। ”
“ আম্মুর সাথে কথা বলেছি আমি। ”
“ কি বলেছেন? বাড়ি ফিরবেন না? ”
রোহান উত্তর করল,
“ হ্যাঁ!”
“ কয়দিন? ”
“ অনেকদিন! ”
রাহার মুখ চুপসানো দেখাল। হতাশ হয়ে সে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই দেখল রোহান কল রেখে দিয়েছে। আশ্চর্য!এভাবে বাড়ি আসবে না মানে কি? তার উপর রাগ দেখিয়ে? তার উপর রাগ দেখিয়ে বাড়ি ফিরবে না এই লোক?
.
সিয়ার চোখমুখ ফুলে আছে। সারারাত কান্না করতে করতে মেয়েটার যখন চোখমুখের অবস্থা খারাপ ঠিক তখনই সে মারাত্মক একটা কান্ড করে বসল। ধারালো একটা চুরি নিয়ে হাতে বসাল। অতঃপর একবার দাগ কাঁটল হাতে। মুহুর্তেই ফর্সা হাতটা বেয়ে গড়িয়ে পড়ল লাল টকটকে তরল রক্ত! সিয়া ফুঁফিয়ে উঠে। কাঁদতর কাঁদতে কাঁটা ব্যাথার যন্ত্রনায় কাঁতরে উঠে। যখন অনেকখাণি রক্ত গড়িয়ে সিয়া প্রায় জ্ঞান হারাতে বসল ঠিক তখনই তার এক বান্ধবী তা খেয়াল করল। ঘটনার আকস্মিকতায় মেয়েটাও কেঁপে উঠল। অবিশ্বাস্য চাহনিতে বার কয়েক পরখ করে যখন বুঝল সিয়া সত্যি সত্যিই একটা ভয়ানক কান্ড ঘটিয়ে ফেলেছে ঠিক তখনই তারা সিয়ার পরিবারকে জানাল। এতরাতে স্বচ্ছ সহ সাদাফ, তার বাবা মা, সুহা ছুটে এল। সিয়াকে খুব তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। অতঃপর সিয়ার হাত যখন ব্যান্ডেজ করে কেবিনে দেওয়া হলো ঠিক তখনই খবরটা পৌঁছাল সাদের কানেও। সাদ ঘটনাটা শোনামাত্রই স্থির হয়ে বসে থাকে কিয়ৎক্ষন! একটা চড়? এই চড়টার জন্য সিয়া তার জীবন দিয়ে দিতে চাইল? একটা চড়ের জন্য? সাদের উচিত হয়নি চড়টা মারা। সেটা সে নিজেও জানে। কিন্তু এতরাতে যুবতী একটা মেয়ে বাইরেও বা কেন যাবে? এতবার বলার পরও শুনল না কেন? সাদ মনে মনে ভেবেই নিয়েছিলাম সিয়াকে একদিন ভোর হওয়ার আগের রাতের শহরটা দেখাবে।হয়তো কাল সকালেই দেখা হলে সে স্যরিটা বলে দিত। কিন্তু বলা হলো না, তার আগেই মেয়েটা এমন এক কান্ড ঘটিয়ে ফেলল। সাদ খবরটা শুনেছে নিলয়ের থেকে। নিলয় যে সাদের থেকেও এই কয়দিনে সিয়ার বেশি আপন হয়ে গেছে এটা ভেবেই সাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। কোথাও একটা চাপা রাগ হয় নিলয়ের প্রতিও। কেন উড়ে এসে ঝুড়ে বসল? সাদ আজকাল নিলয় ছেলেটাকে সহ্য করতে পারছে না। দেখলেই রাগ রাগ লাগছে। অথচ এমনটা হওয়ার কথা নয়। নিলয়কে হন্তদন্ত হয়ে তৈরি হতে দেখে সাদ গম্ভীর স্বরে বলল,
“ নিচে দাঁড়ালাম, তাড়াতাড়ি আয়। ”
নিলয় পোশাক পরে তৈরি হলেও সাদ যেমন থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আর টিশার্ট পড়া ছিল ওভাবেই নিচে নামল। অনেকটা সময় দাঁড়িয়ে এই মধ্যরাতে একটা রিক্সা পেল। অতঃপর দুইজনেই হসপিটালে পৌঁছাল। সাদের বুক ঢিপঢিপ করছে। মেয়েটার এখন কেমন অবস্থা? ভালো আছে তো? সাদ পা মাড়িয়ে সিয়ার কেবিন অব্দি যেতে যেতেই দেখা পেল সাদাফের। মুহুর্তেই শুধাল,
“ ভাইয়া? আমায় চিনতে পারছেন? সাদ। সিয়ার কি অবস্থা এখন? ”
সাদাফ চিনতে পেরেছে এমন ভাব ধরে দ্রুত বলল,
“ আরেহ তুমি তো সে যে স্বচ্ছর শালিকাকে পছন্দ করতে। অলরেডব আমাদের মা’র খেয়ে ভুত হয়ে গেছিলে দুই দুইবার তাই না? ”
সাদ শান্তভাবে উত্তর করল,
“ হ্যাঁ। সিয়া কেমন আছে জানাবেন একটু? ”
সাদাফ তৎক্ষনাৎ জানাল,
“ রক্ত দিতে হবে, এমনিকে বিপদ নেই বলল ডক্টর। কেবিনেই আছে, তবে জ্ঞান ফেরেনি। ”
“ ওহ! ”
সাদাফ চলে যেতেই নিল। আবার কি বুঝে ঘাড় ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ তুমি ওর কি হও? ”
সাদ কি উত্তর দিবে বুঝে উঠে না। কি উত্তর দেওয়া উচিত ওর? কি হয়? কিয়ৎক্ষন চুপ থেকে ও ক্লান্তগলায় শুধাল
“ কিছু নয়, আগে টিউটর ছিলাম তাই৷ ”
” আচ্ছা। ”
সাদ পা বাড়াল। সিয়ার কেবিনের কাছে এসে পা থমকে দাঁড়ায় সে। বুক ভার হয়ে আসে। দরজায় দাঁড়িয়ে দরজার দ্বার থেকেই শুঁয়ে থাকা সিয়াকে পরখ করল সে। হাতে ব্যান্ডেজ করা, চোখ বুঝে রাখা! সাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
“ সিয়া? তুমি খুব মিষ্টি একটা মেয়ে সিয়া! সম্ভবত তোমার জন্য আজকাল আমার মনে কিছু একটা তৈরি হয়েছে। আমি বুঝে উঠতে পারছি না ঠিক। তবে এটুকু বুঝতে পারি তোমাকে অন্য কারোর সাথে মানতে আমার যন্ত্রনা হচ্ছে। রাহার বেলাতে যেভাবে আমি মেনে নিয়েছিলাম তোমার বেলাতে আমি সেটা মানতে পারছি না। অদৃশ্য এক রাগ হচ্ছে । অধিকারবোধ থেকে চিড়চিড় এক জেদ জম্মাচ্ছেে।আমার এখনও রাগ লাগছে সিয়া! নিজের জীবনটাকে এতোটা ঠুনকো ভাবলে কেন? আমি কে? আমার চড়ে তুমি জীবন দিয়ে দিবে? তুমি তো এখন আমায় চাও না সিয়া, মুভ অন করছো। তবুও এই হঠকারিতা কেন সিয়া? ”
#চলবে……
#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৩৫
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
সিয়ার জ্ঞান ফিরেছে একটু আগে। তারপরই নিজের আশপাশে চিন্তারত অবস্থায় নিজের মা বাবা ভাই ভাবী সবাইকে দেখে সে ক্লান্ত চাহনিতে তাকায় কেবল। প্রথম দফায় বুঝে না উঠলেও পরমুহুর্তর সে বুঝতে পারে কি সাংঘাতিক কান্ডটা সে ঘটিয়েছিল। সিয়ার কন্ঠ দিয়ে কথা আসে না যেন। ক্লান্ত লাগে। তবুও ক্লান্ত স্বরে সে শুধাল,
“ ভাইয়া? আম্মু আব্বু? আ’ম স্যরি। আর হবে না এমনটা। ”
কথাটা বলতে বলতেই চোখ গড়িয়ে পানি পড়ল সিয়ার। সাথে কেঁদে উঠল ওর আম্মুও৷ মেয়েকে বুকে নিয়ে বলে উঠলেন,
“ আমি তোকে আর কোথাও আলাদা থাকতে দিব না সিয়া৷ কোথাও না। আমার কাছে থাকলে তুই এমনটা করতে পারতি না আম্মু। কি করে পারলি এমনটা করতে বল? একবারও ভাবলি না আমাদের কথা?চলে যেতে চাইলি এভাবে?”
সিয়া ফুঁফিয়ে উঠে। বলে,
“ না আম্মু, আমি চলে যেতে চাইনি। আত্মহত্যা করতে চাইনি আমি আম্মু। মরতেও চাইনি। আমি, আমব তো কেবল নিজের রাগ-জেদ এসব সামলাতে পারিনি আম্মু। এতটাই রাগ হচ্ছিল যে খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার। ”
তার মায়ের চোখ ভিজে উঠে। মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কার উপর এত রাগ আমার আম্মুর? কেন এত কষ্ট? ”
সিয়া শক্ত করেই জড়িয়ে ধরল। বলল,
” জানি না, কিচ্ছু জানি না আম্মু! ”
সিয়া অনেকটা সময়ই মায়ের সাথে থাকল। এরপর সবাই যখন বের হলো তখন সুহা পাশে বসল। কিছুটা সময় নিরব থেকে সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে শুধাল,
“ সিয়া? ”
সিয়া তাকায়। উত্তর দেয়
“ হু সুহা আপু। ”
সুহা বলল,
“ তুমি কি কোনভাবে সাদের জন্য এমন করেছো? সাদ এসেছিল এত রাতেও, বাইরে থেকে দেখছিল তোমায়৷ কিছু হয়েছে ওর সাথে? ”
সিয়া মুহুর্তেই অস্বীকার করল। জানাল,
“ না, না আপু। ”
” সত্যি বলছো? ”
“ খু্ব সত্যি। ”
সুহা আবারও বলর,
“ তুমি সাদকে পছন্দ করতে না? ”
“ করতাম, এখন আর করি না। ”
“এটা মিথ্যে বলছো। ”
“ না, একদম সত্যি। ”
সুহা ফের জানতে চাইল এবারে,
“ তাহলে সাদ যে বিল্ডিং এ বাসা ভাড়া নিল তুমিও সেখানে বাসা ভাড়া কেন নিলে? ”
সিয়া হাসে৷ তাচ্ছিল্যের হাসি। উত্তর দিল,
“ কে জানে! ইচ্ছে হলো তাই।”
.
পুরো দুটো দিন গেল,রাত গেল! রোহান সত্যি সত্যিই বাসায় ফিরল না। রাহা বিস্মিত হয়। অফিসেও পা ফেলল না একবার এই লোক? রাহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সরাসরি কিছু কাউকে জিজ্ঞেসও করতে পারছে না।কিন্তু আজ সকাল সকালই রোহানের আম্মু এসে তাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছে। বুঝা যাচ্ছে ছেলের সেদিন বের হয়ে যাওয়া, দুদিন বাসায় না ফেরা নিয়ে সে চিন্তিত। এবং এসবের কারণ হিসেবে তিনি মনে মনে রাহার সাথে কিছু ঘটেছে এমনটাই ভেবে নিয়ে। রাহা ছোটশ্বাস ফেলে। সে তো বলে নি রোহানকে এভাবে চলে যেতে? তাহলে? তাছাড়া সব সত্য জানার রাহা নিজেও রোহানের অপেক্ষায় আছে। কবে দেখা হবে, সেদিন এতগুলা কথা বলে ফেলার জন্য স্যরি বলারও তো প্রয়োজনীয়তা আছে। রাহা ভেবেচিন্তে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিল পিয়াসের মাধ্যমে যোগাযোগ করবে রোহানের সাথে। সে অনুযায়ী সে রওনাও হলো, কিন্তু পথে একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে খুব বাজেভাবেই তার পায়ে আঘাত পেল। হাতেরও কিছুটা অংশ ছিলে গেছে। র’ক্ত বের হচ্ছে। রাহা তাতে বিশেষ পাত্তা না দিয়ে পিয়াসের কাছে গেল। হেসে জানাল,
“ আপনার স্যারকে একটা কল করুন তো।আমায় তে সম্ভবত ব্লকড করেছে। যোগাযোগ করতে পারছি না আমি। ”
পিয়াস ছেলেটা হেসে দ্রুত স্যারের পক্ষ নিয়ে বলে উঠল,
“ না ম্যাম, ব্লকড না। স্যার অন্য সিম ইউজ করছে। ”
রাহার রাগ লাগে। অন্য সিম ইউজ করতে হবে কেন? সে কি রোহানকে দিনরাত কল করে বিরক্ত করে ফেলবে?বলল,
“ হোয়াই? এসব নাটক কেন করছে সে?”
প্রশ্নটার উত্তর দেওয়ার আগেই পিয়াসের চোখ গেল রাহার পায়ে। অনেকটাই কেঁটে গেছে বলা চলে থেতলে গেছে, এবং রক্তপাত হচ্ছে। হাতের দিকটায়ও রক্ত। পিয়াস দ্রুত বলল,
“ আপনার পায়ে ? অনেক ব্লিডিং হচ্ছে তো। কি করে হলো এমনটা?”
রাহা রাগে বিরক্তে বলল,
” আরেহ দূর, আপনাকে যা বললাম তা করুন। মেজাজ খারাপ হচ্ছে আপনার স্যারের প্রতি আমার। ”
পিয়াস হতাশ হয়ে তাকায়। ওদিকে এমন অবস্থার কথা শুনলে নিশ্চয় তার স্যারেরও মেজাজ খারাপ হবে৷ এই দুইদিনে সমস্ত আপডেট তো রোহান তার কাছ থেকেই নিয়েছে। বলল,
“ আমি যোগাযোগ করছি, আপনি প্লিজ হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ করান ম্যাম। ”
“ করাব। আগে কল দিন। ”
বেচারা পিয়স হতাশ হয়ে কলই দিল। কিন্তু কল রিসিভড হলো না। তখন প্রায় সকাল আটটা! রোহান ঘুমাচ্ছে তখনও। পিয়াসের কল পেয়ে নাক মুখ কুঁচকে নিয়ে সে কিছুক্ষন পরই কল তুলল। বলল,
“ কি সমস্যা পিয়াস?এভাবে কল দিয়ে যাচ্ছো কেন? ঘুমাতেও দিবে না? ”
রাহা দ্রুত ফোন নেয়। উত্তরে বলে,
” অন্যের ঘুম হারাম করে ঘুম আসে কি করে?এই রোহান ফারাবী? সাদিয়াকে দিয়ে সব আমার কাছে প্রকাশ করিয়ে এর পর এভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার কারণ কি? কি নাটক এসব? আপনার আম্মু চিন্তা করছে জানেন আপনি। ”
রাহার কন্ঠস্বরে রাগ উপছে পড়ছে।বুঝাই যাচ্ছে সকাল সকাল এই মেয়ে প্রচুর রেগে আছে। কিন্তু কি কারণে তা বুঝে আসে না। রোহান উঠে বসল। গলা খাঁকড়ি দিয়ে বলল,
“ সকাল সকাল এমন রাগলে কেন নবনী? আম্মু তো চিন্তা করবে আমি জানিই, তবে আমি চেয়েছিলাম অনেকেই চিন্তা করুক। ”
“ এই বয়সে নিজের আম্মুকে চিন্তায় রাখতে ভালো লাগছে? ”
“ একদম নয়। ”
রাহা দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলল,
“ তাহলে ফিরুন। আজকের মধ্যে যদি না ফিরছেন দেখবেন, খুঁজে বের করে কি করি আমি। ”
রোহান হাসল হঠাৎ রাহা্ রাগ দেখে। বলল,
“ তুমি কি আমায় মিস করছো নবনী? বাসা ছেড়েও গেলে না, এভাবে খোঁজখবর ও নিচ্ছো আবার? ”
“ মোটেই না। বাসায় ফিরবেন, এটুকুই বলে রাখলাম। ”
এটুকু বলেই কল রাখল রাহা। ফের কতক্ষন বসে থেকে ভাবল, সে কি আসলেই মিস করছে না এই লোকটাকে? আসলেই চিন্তা হচ্ছিল না তার এই লোকের জন্য? সে কেন এতটা অস্থিরতা নিয়ে অপেক্ষা করছিল? কেন চাইছে রোহান বাসায় ফিরুক? রাহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। বিয়েটা হওয়ার আগে রোহানের প্রতি জম্মানো সূক্ষ্ম এক অন্যরকম ভালো লাগা থাকলে ও তা যে বিয়ের পর ক্রমশ অন্যকিছুতে রূপ নিয়েছে তা বুঝতে বাকি নেই রাহারও৷ সে দীর্ঘশ্বাস ফেলর। এরইমধ্যে তার ফোনে কল এল পুণরায়। নাম্বারটা রোহানের। রাহা ভ্রু কুঁচকে নেয়।এতদিন এইনাম্বারে কলই যাচ্ছিল না। আর আজ সে নিজ থেকেই কল দিয়েছে? বাহ!এটুকু ভেবে কল তুলতেই রোহান বলল,
শুনলাম হাত পা কেঁটে অবস্থা খারাপ করে বসে আছো? ”
রাহা মুহুর্তেই বলল,
“ তো?”
“ হাঁটাচলা করো কিভাবে? ছোটবাচ্চা তুমি? ”
রাহার আবারও রাগ রাগ লাগে। বলে,
“ কি বুঝাতে চাচ্ছেন? ”
“ চিকিৎসা নেওয়া উচিত তোমার নবনী। ”
“ নিব। ”
“ এখনই। ”
” আপনার কথামতো? ”
রোহান গম্ভীর অথচ দৃঢ় স্বরে বলল,
“ হ্যাঁ। ”
“সম্ভব না এখন।”
“ সম্ভব! ”
“ আরেহ ভাই, খুব একটা আঘাত পাইনি৷ কিছুক্ষন পর বাসায় ফিরে আমি নিজেই ব্যান্ডেজ করে নিব। ”
“ এই যে এই নিজের মতে স্থির থাকার অভ্যেসটা বদলাবে নবনী। রাগ হয় আমার। আর কে ভাই? আমি? আমি তোমার বিয়ে করা হাজব্যান্ড! মাইন্ড ইট, ওকে?”
এটুকু বলেই রোহান কল রাখল। তার প্রায় পনেরে বিশ মিনিট পরই রোহানকে একদম ভিন্ন পোশাকে অফিসে দেখা গেল। ফর্মাল ড্রেস আপ নয়। বরং থ্রি কোয়ার্টার একটা প্যান্ট আর একটা সাতা রং এর টিশার্ট৷ চুলগুলো এলোমেলো হয়ে কপালে মিলেছে। চোখ দেখে বুঝা যাচ্ছে তার ঘুম ভাঙ্গার পর মুখটাও ঠিকভাবে ধোঁয়নি। রাহা বিস্ময় নিয়ে তাকাতেই রোহান ব্যস্ত হয়ে এল। রাহার পায়ের আঘাতটা দেখে তৎক্ষনাৎ একটা ধমক দিয়ে বলে উঠল,
“ এটা খুব একটা আঘাত না পাওয়ার নমুনা? রাগ উঠাবে না বারবার নবনী৷ এতোটা কেয়ারল্যাস তুমি হও কি করে? ”
.
সাদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে এই শহর ছাড়বে। এই শহর ছেড়ে চলে যাবে। সে অনুযায়ী সব বাদ দিতে লাগল একে একে। রুমম্যাটদেরও জানানো হয়ে গিয়েছে। সাদ যখন দুপুরে একা বসা তখনই সিনিয়র এক রুমম্যাট আসল। তার পাশে বসল। গলা খাঁকড়ি দিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ শুনলাম তুমি চলে যাচ্ছো এখান থেকে? বাড়িতে ফিরে যাচ্ছো? কিন্তু ওখানে গিয়ে করবে কি? ”
সাদ হাসল। বিনিময়ে বলল,
“ দেখি কি করা যায়। নিজের শহরে আশা করি কোন জব পেয়ে যাব ভাই। ”
ছেলেটা হাসল। অনেকটা সময় পর হুট করেই বলে ফেলল,
“ তুমি কি ঐ মেয়েটাকে ভালোবাসতে তাই না সাদ? আমি কিন্তু বেলকনি দিয়ে তোমাদের দুইজনকে ঐদিন রাতে দেখেছিলাম। কিছু নিয়ে বোধহয় ঝগড়া হলো তোমাদের, তুমি চড় মারলে। আর সে রাতেই মেয়েটা সুইসাইড করল! ”
” তেমন নয়, আমি ভালোবাসি না। তারও আর আমার প্রতি ভালোবাসা নেই। তবে একসময় আমার প্রতি তার আবেগ ছিল বড়ভাই। ”
ছেলেটা ফের বলল,
“ তুমি ভালোবাসো না? শিওর? তাহলে ছুটে গেলে যে?”
সাদ দীর্ঘশ্বাস ফেলে এবারে। বুক ভার হয়ে আসে তার। বলল,
“ বোধহয় দায়িত্ববোধ থেকে। ”
“ আমার কেন জানি মনে হচ্ছে তুমি ঐ মেয়েটার জন্যই শহর ছাড়ছো। ”
“ না, তেমন নয়৷ ”
ছেলেটা উঠতে উঠতে বলে গেল,
“ তেমন নাহলেই ভালো। ”
.
ছুটির হাতে ধোঁয়া উঠা কফির মগ। এর ঠিক সামনেই আবির বসা। কোলের ল্যাপটপের স্ক্রিনে দেখা যাচ্ছে সাদাফ এবং নিধিকে। সিয়া এখন মোটামুটি সুস্থ। সু্স্থ হওয়ার পরই সাদাফ আর নিধি আবারও নিজরদের বাসায় ফেরত এসেছে। এখন আবিরের সাথে কথা বলছে। বেচারা আবিরকে না খোঁচাতে পারলে সাদাফের শান্তি লাগছিল না যেন!উঁশখুশ করছিল। আবির তা দেখেই কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে উঠল,
” কি সমস্যা? তুই এমন করছিস কেন? বাপ হওয়ার খুশিতে কী পেটে কিছু আটকা পড়েছে তোর? ”
সাদাফ আর নিধি বাবা মা হতে যাচ্ছে।যখন জানতে পারল নিধি কনসিভ করেছে তখন সাদাফের কি ভীষণ আনন্দ! দুইজনই এই খবরটাতে যে কতোটা খুশি হয়েছে তা বোধহয় তারা দুইজনেই জানে না! অতঃপর সাদাফের মাথায় যেন আবিরকে খোঁচানোর বুদ্ধি চলে এল। সাদাফ তখন খুশিতেই দাঁত বের করে একটা বিজয়ী হাসি দিয়ে বলল,
“ তোর পরে বিয়ে করেও বাপ হয়ে যাচ্ছি মামা! তুই তো পিছিয়ে গেলি! বাপ হওয়ার মিশনে লেট হয়ে গেলি তো। আমায় দেখ, বিয়ে করেছি, বাচ্চার বাপ ও হয়ে যাচ্ছি। ”
এটুকু বলেই সাদাফ চোখ টিপল। পাশ থেকে ছুটি তা শুনল ঠিক। অতঃপর উদাস হয়ে একবার তাকাল আবিরের পানে৷ অথচ আবির তার দিকে তাকাল না। ছুটি বুঝে উঠে না সে এইখানে বন্ধুদের আড্ডায় বসবে কি বসবে না। পরমুহুর্তে ভেবেচিন্তে সে উঠে পড়ে। না জানি আরো কি কি নিয়ে এরা কথা বলে। যাওয়ার সময় উঁকি দিয়ে ল্যাপটপের স্ক্রিনে সাদাফ, নিধি এদের দিকে তাকাতেই আবির উত্তর করল,
“ বউকে বেশি ভালোবাসি তো তাই এখনোও বাচ্চাকে ভালোবাসা ভাগ করতে চাইছি না। যখন চাইব তখন দেখবি একসাথে হালিখানেক বাচ্চা জম্মাবে আমার। তোদের মতো একটা একটা বাচ্চা জম্ম দিয়ে কি বাবা হওয়ার সুখ মিটবে বল? আমি আবার সবকিছুতেই একটু বেশি ভালোবাসা দিই, একটু বেশি ভালোবাসা ডিজার্বও করি। তাই একসাথে হালিখানেক বাচ্চা জম্ম দিব, তারপর একসাথে বউ বাচ্চা সবাইকে ভালোবাসব! ”
ছুটি কথাটা শুনেই ফ্যালফ্যাল করে তাকাল। কেমন উষ্ণ এক অনুভব হলো। লজ্জায় গাল লাল হয়ে এল কেমন তার। ছুটি দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে চলে যেতে উদ্যত হলো কিন্তু আবির তা হতে দিলে তো? কল রেখে ঠোঁটকাঁটা বেহায়া মানুষের মতো সে ছুটিকে মুহুর্তেই জিজ্ঞেস করল,
“ তুই এভাবে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছিস কেন? পারবি না হালিখানেক বাচ্চা জম্ম দিতে?”
#চলবে..
#প্রেমের_সমর
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্ব_৩৬
লেখনীতেঃ অলকানন্দা ঐন্দ্রি
একদম হুট করে এসেই অনুমতিবিহীন রোহান রাহার হাত পায়ে ব্যান্ডেজ করল। এরপর চোখমুখ শক্ত রেখে হুট করেই কোলে তুলল রাহাকে। আকস্মিক ঘটনায় রাহা প্রথমে চমকে গেলেও পরের দফায় সে অফিসের সকলের সামনে এমন দৃশ্য ভেবে দ্রুত প্রতিবাদ করল। রোহানকে চোখ রাঙ্গিয়ে বলল,
“ এসব কি অসভ্যতা রোহান? নামান বলছি। সবাই কি ভাবছে? ছিঃ ছিঃ!”
রোহান শুনল না। রাহাকে নিয়ে একেবারে গাড়িতে বসল। অতঃপর গাড়ি চালিয়ে পাঁচ মিনিটের মধ্যেই বাসার সামনে আসল। তারপর কি বুঝে গাড়ি থেকে না নেমেই রাহার দিকে সরাসরি দৃষ্টি ফেলল। বলল,
“ একটা কথা বলব নবনী, রিয়েক্ট করবে না।”
“ কি? ”
রোহান গম্ভীর স্বরে জানাল,
“ হয়তো এ বাসা ছেড়ে চলে যাবে নয়তো এই বাসায় আমার বউ হয়ে থাকবে সারাজীবনের জন্য। কোনটা বেছে নিবে? ”
রাহা ফ্যলফ্যাল করে তাকায়। উত্তরে বলে,
“ আপনার বউ হয়েই তো আছি। ”
রোহান হাসল। কিছুটা ফিসফিস করে ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
“ নাটক নাটক বউ না, সত্যি সত্যিই বউ। ”
রাহা এবারেও বোকার মতো বলল,
“ সত্যি সত্যিই তো আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। ”
রোহান ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়ে। ফের বলে,
“ এই বাসা ছেড়ে যাচ্ছো না এটাই তো মতামত তোমার? ”
“ তা কখন বললাম? ”
রোহানের উরুউরু মনটা আবারও গম্ভীর হলো। বলল,
“ যাচ্ছো তাহলে? ”
রাহা মুহুর্তেই বোমা ফাটানোর ন্যায় একটা উত্তর দিল,
“ আজকে যাওয়ার কথা ছিল আপুর বাসায়।”
রোহানের মুখচোখ শক্ত হয়ে এল। সে ভাবল রাহা সত্যি সত্যিই তাকে চাইছেে।তাই বোধহয় যায় নি। কিন্তু যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাখা ছিল এটা তো সে জানত না। বলল,
“ তাই নাকি? এই বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাহলে নিয়ে নিয়েছো? ভেরি গুড! চলো, দিয়ে আসি তোমায়। ”
রাহা মুহরর্তেই রোহানের মুখ চোখ পরখ করে শুধাল,
“ রেগে গেলেন নাকি? ”
রোহান হেসে বলে,
“ রাগব কেন? তুমি চলে যেতে চাইলে তোমাকে আটকানোর অধিকার আমার নেই। যদি থাকতে তাহলে অধিকার আমি গড়ে নিতাম। যায় হোক, তোমাকে এখানে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। আমি তোমার সব জিনিসপত্র গুছিয়ে দিতে বলছি আম্মুকে। পরবর্তীতে যাতে জিনিসপত্রের জন্য তোমাকে এই বাসা আর না মাড়াতে হয় ! ”
রাহা মুহুর্তেই একটু গলা উঁচিয়ে বলল,
“ মানে? আমাকে একেবারে পাঠিয়ে দিচ্ছেন নাকি? আশ্চর্য!”
“ আমি পাঠাচ্ছি না, তুমি নিজে যাচ্ছো নবনী!”
“ মোটেই না। আমি শুধু স্নিগ্ধকে আর সিয়াকে দেখতে যাব ভাবছিলাম আজ। আপনি তো আমায় চিরজীবনের জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছেন। ”
রোহান কথাটার উত্তর বুঝে উঠে হাসল। সে তো ভাবল রাহা একেবারেই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। হেসে বলল,
“ চিরজীবনের জন্য থাকবে নাকি?ক্যারেক্টারল্যাস মানুষের সাথে তো তোমার থাকার ইচ্ছে নেই নবনী! ”
রাহা আবারও বলল,
“ অবশ্যই! একটা ক্যারেক্টারল্যাস ছেলের সাথে কেন থাকব? থাকার প্রশ্নই উঠে না। ”
” এই জন্যই বলছি চলে যাও। ”
রাহা মুখ কুঁচকাল। মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,
“ আপনাকে কি চরিত্রবান পুরুষ বলে প্রশংসা করতে হবে মিঃ রোহান ফারাবী? ঢং করছেন না? তবে ঐ সাদিয়ার সাথে কম মিশবেন। নয়তো আমি সত্যিই আপনাকে ক্যারেক্টারল্যাসই ভাবব!”
.
স্নিগ্ধ ঘুমিয়ে আছে সিয়ার পাশে। দুইজনেই ঘুমাচ্ছে। এতক্ষন দুইজনের কত কত কার্যকলাপ।সুহা ওদেরকে একবার দেখে হাসল। সিয়াটা কতটা হাসিখুশি প্রাণবন্ত! কে বলবে এই মেয়েটা সুইসাইড করতে চায়? সুহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। রুমে এসে সময় দেখে বুঝল রাত দশটা।বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। সাথে ঝড়ো হাওয়া! অথচ স্বচ্ছ ফিরেনি এখনো। কিছুটা চিন্তা হতেই সে কল করল স্বচ্ছকে। অন্যপাশ থেকে স্বচ্ছ কল তুলল না। সুহার কপালে চিন্তারেখা যখন একটু গাঢ় হলো ঠিক তখনই কলিংবেল বাঁজল। সুহা দৌড়ে গেল দরজা খুলতে। অতঃপর দরজা খুলে ভেজা শরীরে দাঁড়িয়ে থাকা স্বচ্ছকে দেখে কপাল শিথীল করল। শান্তস্বরে শুধাল,
“ কল দিলাম, ধরলেন না তো। ”
স্বচ্ছ অল্প হাসে সুহাকে দেখে। বলে,
“এসে গেছিলাম তো,তাই। ”
“ ওহ। ”
স্বচ্ছ রুমে এসে ভেজা শার্টটা খুলতে নিতে নিতেই বলল,
“ সিয়া কি করছে? সারাদিন ভালো ছিল?
সুহা উত্তর দিল,
“ হ্যাঁ, হাসিখুশিই ছিল। এখন তো ঘুমোচ্ছে। ”
“ স্নিগ্ধ কোথায়? আম্মুর কাছে? ”
“ আম্মুও ঘুমিয়েছে। স্নিগ্ধও সিয়ার সাথে ঘুমাচ্ছে। ”
স্বচ্ছ ছোটশ্বাস টানে। ফের শান্ত গলায় বলে,
“ আমি ভেবে পাই না, সিয়াটা এমন কেন করল সুহাসিনী? ওকে কি আমরা কম আদরে রেখেছিলাম? ”
সুহা অল্প হাসল। স্বচ্ছর ভেজা চুলে হাত বুলিয়ে বলল,
“ ছোটমানুষ তো ও। করে ফেলেছে। এরপর থেকে আর করবে না। ”
“ তুমি শিওর করবে না? ”
সুহা হেসে বলে,
“ শিওর! এবারে ফ্রেশ হয়ে আসুন স্বচ্ছ, খাবার বাড়তে যাচ্ছি৷”
সুহা কথাটা বলেই তোয়ালে দিল স্বচ্ছকে। পা বাড়াতে নিল কিন্তু পা বাড়ানো হলো না। স্বচ্ছ হাত আগলে ধরল। টান দিয়ে নিজের সাথে আগলে নিয়ে জড়িয়ে ধরল সুহাকে। পরমুহুর্তেই নাক ঘষল সুহার ঘাড়ে। শুধাল,
“ সুহাসিনী? আমার বোধহয় তোমাকে ভালোবাসা প্রয়োজন। ক্লান্তি মিটে যদি… ”
সুহা হাসল। স্বচ্ছর চোখে চোখ রেখে শুধাল,
“ ক্লান্তিতে মানুষের ঘুম পায় স্বচ্ছ। আপনার ভালোবাসতে ইচ্ছে হচ্ছে? ”
“ হচ্ছে, কারণ সামনে তুমি আছো। ”
“ ফ্রেশ হয়ে…”
“ সবসময়ই ফ্রেশ সুহাসিনী! ”
কথাটা বলেই হাসল স্বচ্ছ। ঠোঁট এগিয়ে আঁকড়ে ধরল সুহার পাতলা ঠোঁটজোড়া। অতঃপর কিয়ৎক্ষন সেই ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে ডুবতেই কানে এল পাশের রুম থেকে স্নিগ্ধর কান্নার আওয়াজ। সুহা মুহুর্তেই ঠেলে সরিয়ে দিল স্বচ্ছকে। দ্রুত পায়ে দৌড়ে চলে গেল রুমের বাইরে। স্বচ্ছ সেদিকে ছোটছোট চোখে তাকায়। বিড়বিড় করে,
“ কপাল আমার! ”
.
মাঝখানে প্রায় তিনমাস সময় গিয়েছে! তিনমাস! সিয়া এই তিনমাস কোন যোগাযোগ করেনি সাদের সঙ্গে। একটা কল অব্দি দেয়নি সে, একটা ম্যাসেজও না। আজ কি বুঝে সে আগের বাসাটায় গেল বান্ধবীদের সঙ্গে দেখা করার বাহানা দিয়ে। যদিও তার জিনিসপত্র আগেই তার আব্বু আম্মু নিয়ে এসেছিল। সিয়া বারবার চাইল একবার যদি এখানে সাদের সাথে দেখা হয়ে যায়? একবার যদি সাদের দেখা পায়? অথচ পেল না। মাঝপথে দেখা মিলল নিলয়ের সাথে। যে নিলয় সিয়ার পিছুপিছু ঘুরত, সে নিলয় এমন একটা ভাব দেখাল যেন সে চিনেই না সিয়াকে। সিয়া ভ্রু কুঁচকায়।সাদের খোঁজ নেওয়ার উদ্দেশ্যে নিজে থেকেই কথা বলল,
“ কেমন আছেন? ”
নিলয় উত্তর করল,
“ খুব ভালো ছোট আপু। ”
ছোট আপু? সিয়া কপাল কুঁচকায় এবারে। পা বাড়িয়ে হাঁটে। অপরদিকে নিলয় যেতে যেতেই বিড়বিড় করে,
“ যাওয়ার সময় সাদ যে ঝগড়াঝামেলা করে গেল এই মেয়ের সাথে না মেশার জন্য। আরেহ আমি কি সিরিয়াসলি এই মেয়ের সাথে রিলেশনে যেতাম নাকি?জাস্ট পটাতেই তো চেয়েছিলাম। সাদ তো এই নিয়ে ঝগড়া করে চলেই গেল। বন্ধুত্বটা নষ্ট হলো মাঝখান দিয়ে। আমি কি জানতাম এই মেয়ের সাথে সাদের কিছু চলছে? জানলে আমি সাদের গার্লফ্রেন্ডের দিকর তাকাতাম? কক্ষনো না! আর যায় হোক বন্ধুর প্রেমিকা নিয়ে টানাটানি করার মতো ছ্যাঁচ’ড়া আমি নই। ”
কথাগুলো বিড়বিড় করতে করতেই নিলয় এগিয়ে যেতে নিল। পেছন থেকে সিয়া ফের বলল,
“ শুনুন? ”
নিলয় তাকায়। বলে,
“ হ্যাঁ।”
সিয়া নিজেকে না দমিয়ে এবারে বলেই ফেলল,
“ সাদ ভাই কেমন আছে? ”
সেদিনের পর সাদের সাথে মোটামুটি একটা ছোটখাটো ঝামেলা নিলয়ের হয়েছিল। সাদ বারবার সিয়ার সাথে তাকর মিশতে বারণ করছিল। মেস ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়েও৷ অতঃপর এক পর্যায়ে ঝামেলা গুরুতর হলে সাদ বলে বসে সিয়ার সাথে তার কিছু আছে। তাই নিলয়কে এতবার নিষেধ করছে। সে থেকে নিলয় ধরেই নিয়েছে যে এরা প্রেমিক প্রেমিকা। অথচ সাদ কেমন আছে সেটা তাকে জিজ্ঞেস করছে কেন সিয়া? নিলয় ভ্রু কুঁচকে বলে,
“ সাদ তো এখানে থাকে না আর। চলে গেছে মাস তিনেক আগে। কেন? তুমি জানো না? ”
সিয়ার মুখটা মুহুর্তেই নিভে এল। বলল,
” না তো। কোথায় গেছে?”
নিলয় উত্তরে বলল,
” এই শহর ছেড়ে ওর নিজের শহরে চলে গিয়েছে।”
.
এই তিনমাসে রোহান আর রাহার সম্পর্কটা সুন্দর হয়েছে আগের চেয়েও অনেকটাই। কখনো সূক্ষ্ম অপ্রকাশিত প্রেম,কখনো টুকরো টুকরো অনুভূতি, কখনো হুটহাট বেসামাল স্পর্শ! রাহার মাঝেমাঝে মনে হয় এই রোহান পুরুষটা চমৎকার! মাঝেমাঝেই মনে হয় সে এই পুরুষটার প্রেমে ডুবুডুবু হয়ে মরে যাচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতেই তার আপসোস হয়। কেন রোহান তার প্রতি প্রেম প্রকাশ করে না? মাঝেমাঝে তার মনে হয় রোহান তার খুব যত্ন করে, খুব ভালোবাসে। তার প্রতি রোহানের অনুভূতি খুবই গাঢ়! অথচ এসবের কিছুই তো রোহান প্রকাশ করে না মুখে। যদি তার প্রতি অনুভূতি থাকেও তবে কেন প্রকাশ করল না এখনো? বিয়ের আগে অতোশতো শর্তর জন্য কি? কি প্রয়োজন ছিল দুইজনের অতগুলো শর্ত রাখার? এই শর্ত গুলোর জন্য কি তারা স্বাভাবিক বিবাহিত জীবন কাঁটাবে কখনো? রোহান সে শর্তগুলো ভাঙ্গবে বলেও কোন সাড়াশব্দ আর করেনি সেসব সম্বন্ধে। রাহা এসবে ভাবতে ভাবতেই গোসল সেরে ভেজা চুলগুলো মেলে দিল পিঠময়। বিছানার এককোণে রোহানকে ল্যাপটপে মনোযোগী হয়ে কিছু দেখতে দেখে ভ্রু কুঁচকায় সে । তারপর আশপাশে ঘুরঘুর করল কিয়ৎক্ষন। কিন্তু রোহান একবারও চোখ তুলে চাইল না৷চাইল না বললে ভুল, রোহান তাকিয়েছে অনেকবারই তবে রাহার আড়ালে। অন্যদিকে রাহার কৌতুহল বাড়ে। কি এমন দেখছে এই ছেলে ল্যাপটপে ? পাশে গিয়ে দুয়েকবার উঁকি দিয়ে দেখার প্রেচেষ্টা চালায় সে। রোহান তা বুঝে নিজে নিজেই আড়ালে হাসে। মেয়েটাকে সদ্য গোসল করে বের হলে তার কাছে আস্ত আদর আদর একটা বাচ্চা লাগে। মুখটা কি তুলতুলে পুতুলের ন্যায়। ইচ্ছে হয় টুপ করে টেনে এনে দুয়েকটা চুমু বসিয়ে দিতে। এই তিনমাসে অলেরেডি দশ-এগারো দিন যে সে এই কান্ডটা ঘটিয়ে ফেলেছে তা ভেবেই রোহান প্রতিবার নিজেকে সংযত করে। তাকায় না অব্দি, তাকালেই যেন সর্বনাশ। অথচ এই মেয়েটা যেন তা মানতে নারাজ। একদম তার সামনে এসেই ঝুঁকে দেখল ল্যাপটপের স্ক্রিন। মুহুর্তেই মিষ্টি এক সুভাস নাকে এসে লাগল রোহানের। ভেজা চুলের ভাজে উম্মাদনা ভেসে বেড়াচ্ছে যেন। রোহান চোখ বুঝল। ততক্ষনে রাহা দূরে গিয়েছে। জানালার ধারে গিয়ে ভেজা চুলগুলো সামনে এনে বাইরে তাকাল। রোহান তখনই চোখ বুঝে শুকনো ঢোক গিলে। মসৃন পিঠ আর কাঁধের কিছুটা দৃশ্যমান হতেই সে সংযত হওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে ছিটকে সরে গেল। রোহান এগোল ঠোঁটে ক্রুর হাসি নিয়ে। দৃষ্টি মারাত্মক নেশালো যেন।অতঃপর সদ্য গোসল সেরে আসা রমণীটির কোঁমড় আঁকড়ে ধরে দুইজনের দূরত্ব গুঁছাল। নিজের দিকে ঘুরিয়ে অপর হাতে প্রিয় নারীর আদুরে মুখে হাত বুলাতে বুলাতে ঠোঁট বাঁকিয়ে শুধাল,
“ আর ইউ ট্রাইয়িং টু সিডিউস মি ডিয়ার?
লিসেন, এভাবে ভদ্র রোহান ফারাবীর যৌবনের চাহিদা বাড়াতে থাকলে কিন্তু বিপদ তোমারই।বুঝে নিও! ”
রাহা দৃষ্টি স্থির করল রোহানের চাহনিতে। রোহানের অদ্ভুত বাঁকা হাসিটা কোথাও যেন ছুঁয়ে গেল তাকে। অদ্ভুত এক অনুভূতি হলো। হৃদস্পন্দন বাড়ে। রোহান হাসল। এই পর্যন্ত হয়ে যাওয়া বার কয়েক ভুলের মতো এবারও সে মুখ নামিয়ে ঠোঁট ছোঁয়াল রাহার মুখে চোখে। বার কয়েক চুম্বন এঁকে হালকা হেসে শুধাল,
“ আমার কি উচিত তোমাকে বিপদে ঠেলে দেওয়া নবনী?”
রাহা কেঁপে উঠে যেন। অস্পষ্ট স্বরে বলে,
“ হ্ হ্ হু?”
রোহান ঠোঁটে সে বাঁকা হাসিটা রেখে শুধাল,
“ তোমার একটা ছোট্ট স্নিগ্ধ চাই, তাই তো? ”
রাহা উত্তর করতে পারে না। লজ্জায় কান গরম হয়ে উঠে যেন তার। অথচ এই বাচ্চার বিষয়টা সে একদিন লজ্জা না পেয়েই বলেছিল। রোহান হেসে ফের বলে,
“ তোমার ইচ্ছেটা আমার পূরণ করা উচিত বলো? ”
” মানে? ”
রোহান ফের বলল,
“মানে হলো, বিয়ের সমস্ত শর্ত মুঁছে নিতে চাইছি মিসেস রোহান ফারাবী। সম্পূর্ণ রূপে আমার মিসেস হতে আপনার কোন প্রবলেম নেই নিশ্চয়? আরো ক্লিয়ার করে বলছি, আপনাকে দেখে আজকাল আমার খুবই সংযতহীন হতে ইচ্ছে হয়। আপনার সামনে এক উম্মাদ প্রেমিক হিসেবে ধরা দিতে ইচ্ছে হয়। আমার কি উচিত নয় আপনাকে নিজের করে চাওয়া?”
রাহা উত্তর করতে পারে না। টের পায় তার গাল উষ্ণ হয়ে উঠেছে। কান দিয়ে গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে যেন। রোহান রাহাকে চুপ থাকতে দেখে থুতনিতে আঙ্গল ঠেকায়। বলে,
” নবনী? তোমার অনুমতি ব্যাতীত এগোব না আমি। যদি তুমি চাও তবেই এগোব। উত্তর দাও। ”
রাহা বেশ কিছুটা সময়ই চুপ থাকল। সামনের অস্থির পুরুষটার অস্থিরতা সম্বন্ধে একবারও চিন্তা না করে চুপ থাকল। অতঃপর বলল,
“ ভালোবাসেন আমায়?অনুভূতি আছে আমার প্রতি? ”
রোহান গাঢ় স্বরে জানায়,
“ তুমি এর উত্তরটা জানো।”
রাহা আসলেই জানে? হ্যাঁ। জানে তো। তবুও সে চায় রোহান বলুক। মুখে বলুক।
বলল,
“ জানি না। ”
রোহান হাসে ঠোঁট বাঁকিয়ে। বলে,
“ জানো ডিয়ার! নাও আন্সার মি।”
রাহা শুকনো ঢোক গিলে। বলে,
“ যদি আমার প্রতি আপনার অনুভূতি থাকে তবেই এগোবেন…. ”
রোহান হাতের বাঁধন শক্ত করল। কিছুটা ঝুঁকে কানের কাছে ফিশফিশিয়ে বলল,
“ বেশ! এগোলাম। ”
রাহা ফের বলতে নিল,
“ যদি আমাকে ভালোবাসেন ত…..”
রোহান মুহুর্তেই নিজের ওষ্ঠদ্বয় ছোঁয়াল রাহার গলার কাছে। দাঁতের ছাপ বসিয়ে কাঁমড় বসিয়েই উত্তর দিল,
“ ভালোবাসা মুখে না বলে কাজে বুঝাতে হয় নবনী। এতগুলো দিনেও তুমি তা বুঝে উঠোনি তা বললে ভুল। সুতারাং, আমি উত্তরটা হ্যাঁ’ই পেলাম তাই তো? ”
রাহা উত্তর করতে পারল না। শুধু চোখমুখ খিচে ব্যাথা সহ্য করে নিল। অপরদিকে রোহান উত্তরটা হ্যা পেয়ে হাসল। নিজের বিয়ে করা বউটিকে সত্যি সত্যিই নিজের করে নিতে মরিয়া হলো। ফিসফিসিয়ে রাহার কানের কাছে বলল,
“ শেষমেষ তাহলে রোহান ফারাবীর জীবন যৌবনের চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব তোমায় নিতেই হচ্ছে? ”
#চলবে….