আমার বধু পর্ব-১৭

0
3

#আমার_বধু!
#আফসানা_ইমরোজ_নুহা
#পর্ব_১৭

রাত বিরেতে তন্নী বোকার মতো বসে আছে। ঘটনাটা আশ্চর্যজনক বটে! সেই কবে, কোনদিন বলেছিল ওর রেশমী চুড়ি পছন্দ। তৃনয় কোথা খুঁজে খুঁজে ছাব্বিশ জোড়া রেশমি চুড়ি এনেছে। এতগুলো চুড়ি একসাথে দেখে তন্নী অবাক হচ্ছে বারবার। লোকটা অর্ধপাগল নাকি? এত চুড়ি দিয়ে ও করবে কি? একটা কালারও বাদ দেয় নি বোধহয়। তন্নী তো সবগুলো রঙের নামই জানে না। সাথে চুড়ি রাখার একটা আলনাও এনেছে। সে খুশির সাথে সাথে হতবাক, স্তব্ধ। তৃনয় মাঝেমধ্যে রাতে ঘুমানোর আগে গোসল করে। আজ কলেজ থেকে আর বাড়িতে আসে নি। এসেছে একদম রাতে, এই যে এখন।
ওয়াশ রুমের দরজা খোলার শব্দ হলো। তন্নী বিছানায় বসে চুড়ি গুলো দেখছে আর গুছিয়ে রাখছে‌। শব্দ পেয়ে সে ঘুরে তাকালো। তৃনয় বেরিয়েছে। সদ্য শাওয়ার নেওয়া উদোম শরীর। কালো রঙের একটা ট্রাউজার পড়নে শুধু। বুকের উপর কুচকুচে কালো কতগুলো পশম তখনো ভিজে আছে। সম্পুর্ন শরীরে ফোঁটা ফোঁটা জল। সে চুলে তোয়ালে চালাতে চালাতে এগিয়ে এলো। তারপর গলায় শব্দ করে বললো,

“ চোখ সরাও। কখনো দেখো নি এর আগে‌। ”

তন্নী সম্বিত পেয়ে লজ্জা পেল। অন্যদিকে তাকিয়ে বিরবির করলো,

“ জামাই হ্যান্ডসাম হলে যা হয়। ”

তৃনয় জিজ্ঞেস করলো,

“ কি বললে? ”

তন্নী দাঁত বের করে হাসলো, “ তোমাকে একদম শাহরুখ খানের মতো দেখা যায়। আমার সুদর্শন জামাই। ”

তৃনয় চোখ ছোট ছোট করলো। কাবার্ড থেকে টিশার্ট নিয়ে পড়তে পড়তে বললো,

“ আর তোমাকে রিনা খানের মতো। ”

“ এ্যাহ! কত সুন্দর প্রশংসা করলাম। বেটা বলে কি? ”

তারপর জিজ্ঞেস করলো, “ মার্কেট তুলে এনেছো? ”

তৃনয় সোফায় বসলো। ফোন উন্মুক্ত করতে করতে জবাব দিল,

“ মার্কেটে গেলে পাগল হয়ে যেতে। হোসেনপুর গিয়েছিলাম একটা কাজে। ওখানে পেলাম। কয়েকদিন পরপর বায়না করার চেয়ে সবগুলো একবারে এনে দিলাম। আর কিছু চাই? ”

তন্নী চুড়ি সহ আলনাটা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। ড্রেসিং টেবিলে ঠিকঠাক রাখতে রাখতে বললো,

“ চুড়ি কি আমি চেয়েছিলাম? সবগুলোর সাথে ম্যাচ করে শাড়ি এনে দেবে। এগুলো আমার খুব পছন্দ হয়েছে। ”

তন্নীর লম্বা চুলগুলো সম্পুর্ন খোলা তখন। হাঁটুর নিচ অব্দি কালো চুলগুলো তৃনয় সোফা থেকেই একধ্যানে দেখলো। কি খুঁজে পেল কে জানে? সে আর উত্তর দিল না। দীঘল কালো কেশ গুলো ওর মনোযোগ কেড়ে নিল। পুরোটা ক্ষন সে কেবল ওর চুলগুলোই দেখে গেল। পুরুষ বোধহয় তার শখের নারীর লম্বা চুল সবথেকে বেশি পছন্দ করে।

***
তৃনয়ের কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বৈশাখি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠান। বৈশাখ চলে গেছে সেই কবে। এখন ওদের অনুষ্ঠান করতে মন চাইছে।
কলেজের টিচাররা নিজেদের স্ত্রী সহ যাবে। তন্নী কেও যেতে হবে। তন্নী অবশ্য যেতে চাইছে না। লোক সমাগমের মধ্যে সে গিয়ে কি করবে? তৃনয়ের কথাবার্তার গ্যাড়াকলে পড়ে রাজি হয়েছে সে। রেডি হতে হবে। তৃনয় তৈরি হয়েছে। সে নিজের চুল সেট করছে। তন্নী পেছন থেকে ডাকলো,

“ এ্যাই মাস্টার? ”

তৃনয় তাকালো ঘাড় ঘুরিয়ে। তন্নী দুই হাতের দুইটা শাড়ি দেখিয়ে জানতে চাইলো,

“ কোনটা পড়বো? ”

তৃনয় নিজের দিকে তাকালো। তার পড়নে কালো শার্ট, সাদা প্যান্ট। সে বললো,

“ কালোটা পড়ো। ”

তন্নী পুনরায় ডাক দেওয়ার আগেই আবারও বললো,

“ আর সাদা ব্লাউজ। ”

ওর মুখটা চুপসে গেল। মিনমিন করে বললো, “ কিভাবে বুঝলো এটার জন্যই ডাকবো? ”

সে শাড়িটা পড়ে তৈরি হলো। সেদিনের মতো খোঁপায় আর্টিফিশিয়াল গাজরা দিল। হাত ভর্তি সাদা চুরি। দুজনে রেডি হতে হতে দুপুর হয়ে এলো। কলেজের বড়রা থাকবে বলে অনুষ্ঠান শুরু হবে দু’টো থেকে। তন্নী দেরি করেছে বেশি। মেয়েজাত তো। সাজতে একটু সময় লাগবেই। স্বাভাবিক। তন্নী ফের ডাক দিল,

“ ও মাস্টার! ”

তৃনয়ের সম্পুর্ন শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছে। একটা মানুষ ঠিক কতক্ষন সহ্য করতে পারে? ঠিক কতক্ষন? সেই কখন থেকে কলেজ থেকে কল আসছে। ওর এক সম্বোধন শুনে নিজের মাথা ফাটিয়ে ফেলতে মন চাইছে। তৃনয় ধমকে উঠলো,

“ কি সমস্যা? ”

তন্নী কেঁপে উঠলো। সাজগোজ কমপ্লিট। সে হাতে থাকা দুলটা দেখিয়ে মিনমিন করলো,

“ পড়িয়ে দাও। ”

বউয়ের সৌন্দর্য্য দেখার সময় নেই। তৃনয় ধুপধাপ এগিয়ে গিয়ে দুলটা হাতে নিল। কানে পড়িয়ে হুকটা এতো জোরে চেপে ধরলো। তন্নী চিৎকার ছুড়লো,

“ মাগো! আস্তে! ”

তৃনয় মুখ চেপে ধরলো। কিসব অশ্লীল শব্দ! ওকে আর একটা কথাও বলতে দেওয়া হলো না। তৃনয় নিজের সাথে তাকে চিপকে ধরে বের হলো। তন্নীর শরীরের হাড়গোড় গুলো বোধহয় জায়গা থেকে নড়ে গেল। উফফ! বাবা। গন্ডার একটা!
সেখানে গিয়ে ওরা পৌঁছাল ঠিক একটা পঁচিশ মিনিটে।
গানবাজনা শুরু হয়েছে। স্টেজে কয়েকজন রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইছে। বেশ সুন্দর সুর। টিচারদের মধ্যে কাপলদের মধ্যমনি হলো তৃনয়, তন্নী। বর পড়েছে কালো শার্ট, সাদা প্যান্ট। বউ পড়েছে কালো শাড়ি, সাদা ব্লাউজ। তৃনয়ের বা হাতের কব্জি তে ঘড়ি। হাতটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখা। তন্নীকে সবাই বেশ প্রসংশা করলো। অন্যান্য স্যারের বউদের সাথে তাকে বসিয়ে তৃনয় সবার সাথে গিয়ে দাঁড়াল। কথাবার্তা বলতে শুরু করলো। তন্নীর দিকে কয়েকবার তাকিয়েছে আড়চোখে। বেশ বড় কলেজ মাঠ। তন্নী সবার সাথে কথা বলার ফাঁকে এদিক ওদিক তাকালো। রাত পর্যন্ত চলবে এসব। সে এর আগে কখনো এতো বড় কলেজ দেখে নি। জুঁই বোধহয় এখানে পড়ে না। জুঁইয়ের কলেজে ছেলেরা নেই। তন্নী শুনেছে। সে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। কাউকে কিছু না বলে এদিক ওদিক দেখতে লাগলো। বিকেল শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রায়। আকাশটা কমলা রঙ ধারন করেছে। মেয়েটা ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো। হাঁটতে হাঁটতে এলো খুবই নির্জন একটা জায়গায়। এখানে লোক সমাগম নেই। সে সম্বিত ফিরে পেল প্রায় আধঘন্টা পর।
তারপর চমকে উঠলো। কোথায় এসেছে এটা? এখান থেকে স্টেজটা দেখা যাচ্ছে। সে যেতে পারবে অবশ্য। সময়ের তো খেয়াল নেই। রাত হয়ে গেছে বোধহয়। কয়েকটা গাছের পাতার নড়ে উঠলো তখন। তন্নী ভয় পেয়ে গুটিয়ে যায়। সে যেতে পারবে জেনেও সেখান থেকে গেল না। এতক্ষণে নিশ্চয়ই তৃনয় ওকে খুঁজতে শুরু করেছে। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা ভালো। দেখা যাবে, দুজন দুজনকে খুঁজতে গিয়ে কাউকেই পেল না। তন্নীর হাতে ফোন নেই। নিস্তব্ধতা বাড়তেই ওর শ্বাস আটকে এলো। ভয়ে মেয়েটা জমে গেল প্রায়। পড়েছে আরো কালো শাড়ি। অন্ধকারের জন্য তো দেখাই যাবে না। ধ্যাত!
সময় কাটলো আর কতক্ষন। পুরোপুরি রাত হয় নি এখনো। একটা ধুপধাপ পায়ের শব্দ হলো তখন। তন্নী সেকেন্ডের ব্যবধানে পিছু ফিরলো। টের পেল, একটা সুঠামদেহী, লম্বা পুরুষ ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। ভীষণ মজবুত করে। তন্নীর পা দুটো মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি উপরে উঠে গেল। দম আটকে এলো। সে বুঝতে পারছে না এতো পাগল হওয়ার কি আছে? তৃনয় ওর ঘাড়ে মুখ গুঁজে রেখেছ‌ে। তন্নী পিঠে হাত রাখলো। তৃনয় জিজ্ঞেস করলো ব্যস্ত গলায়,

“ ঠিক আছো তুমি? আফরোজা? হয় নি তো কিছু তোমার? কোথায় ছিলে বলো? কত জায়গায় খুঁজেছি। একবার বলবে তো। ভয় পেয়েছিলে? ”

এমা! তন্নীর কান্না পাচ্ছে কেনো? এতক্ষণ তো দিব্যি দাঁড়িয়ে ছিল। ওর চোখগুলো পিটপিট করছে। তৃনয় তাকে কিছু বলতে দিল না। ছেড়ে দিয়ে ওর হাত আঁকড়ে ধরলো শক্ত করে। কল বাজছে‌। সে তন্নীকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রিসিভ করলো সেটা,

“ ইয়েস স্যার? ”

“ কোথায় আছো? ”

“ আমি বাড়িতে যাচ্ছি, স্যার? ”

“ হোয়াট? কলেজের জুনিয়র শিক্ষক হওয়ার সুবাদে তোমাকে আলাদাভাবে প্রেজেন্ট করা হতো‌। তোমার ব্যবহার, শিক্ষা কৌশলে অভিভুত হয়ে শিক্ষার্থীরা তোমার জন্য ছোটখাটো এওয়ার্ড রেখেছে‌। তুমি চলে যাচ্ছো কেনো হুট করে? ”

“ সরি স্যার। আপনাকে ইনফর্ম করতে পারি নি। আমার সাথের জন কিছুটা অসুস্থ। ”

উনি শুধালেন, “ সাথের জন কে? ”

তৃনয় তন্নী কে নিয়ে এগোতে এগোতে উত্তর দিল,

“ বেটার হাফ। সি ইজ মাই বেটার হাফ। ”

তন্নী শুনতে পেয়ে বিরবির করলো, “ বেটার হাফটা আবার কি? ”

***
ঘরটা নিরব, নিস্তব্ধ হয়ে আছে। ঝড় আসার পুর্বাভাস। তন্নী বুঝতে পারছে না কিছু। গাড়িতে যখন সে বললো, সে একাই ওখানে গিয়েছে তারপর থেকে তৃনয়ের মাথা খারাপ হয়ে আছে। রাগে তার কপালের পাশের রগগুলো নীল হয়ে যাচ্ছে। ঘরে এসেই এক ঝটকায় ওর হাত ছেড়েছে তৃনয়। সে একটু দুরে দাঁড়িয়ে। মাথার গাজরা গাড়িতেই খুলে রেখেছে‌। খোঁপার অবস্থা নাজেহাল। শরীর কুটকুট করছে। তৃনয় রাগে চেঁচিয়ে উঠলো,

“ তোমাকে ওখানে একা একা যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে কে? আমি দিয়েছি? আমি বলি নি এখান থেকে উঠবে না? ”

তন্নী মাথা নামিয়ে নিল, “ বলেছো। ”

“ শুনলে না কেনো? আন্সার মি, ইডিয়ট! ”

তন্নীর মনে হচ্ছে ঘরের দেয়াল গুলো পর্যন্ত কাঁপছে। সে চোখ তুললো। নিষ্পাপ কন্ঠে আওড়ালো,

“ তুমি এতো রেগে যাচ্ছো কেনো? ওখানে কি বাঘ ভাল্লুক ছিল? ”

তৃনয়ের রাগ আরেকটু বাড়লো, “ বাঘ ভাল্লুক? বাঘ ভাল্লুক থাকলেও তো আমি ভয় পেতাম না। তোমার কোনো আইডিয়া আছে? আছে কোনো আইডিয়া? চল্লিশটা মিনিট, আই রিপিট চল্লিশটা মিনিট আমি পাগলের মতো ঘুরেছি এমাথা, ওমাথা। অবশ্য তুমি কি বুঝবে? পাগল একটা! ”

তন্নী তখনো কিছু বুঝতে পারল না। আস্তে করে বললো,

“ আমি বুঝি নি। কিন্তু ওখানে বিপদ হওয়ার মতো কিছু ছিল না… ”

তৃনয় ফের ধমকে উঠলো,

“ চুপ! একদম চুপ! অনার্সে পড়ুয়া ছেলেরা তোমার থেকে বড় না? কলেজে কি হয় সে সম্পর্কে তোমার ধারনা আছে কোনো? কোনো বখাটের হাতে পড়লে? চিন্তায় মরে যাচ্ছিলাম আমি। উফফো! ”

তৃনয় পেছনে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে দিল। তখন কেমন লাগছিল সেটা কেবল সে জানে। লাস্ট ইয়ারের কয়েকটা ছেলে একদম ভালো না। আজ ওদিকটা নিরব। যেকোনো সময় দুর্ঘটনা হওয়ার চান্স ছিল। তৃনয় তেমন কিছুই ভেবেছিল। তন্নী কি করবে ভেবে পেল না। চুপচাপ এগিয়ে গিয়ে তৃনয়কে জড়িয়ে ধরলো সে। তৃনয় চমকে উঠলো। কিন্তু ওকে ধরলো না। একইরকম সটান দাড়িয়ে রইলো। তন্নী বুকে নাকমুখ ঘষলো বিড়ালছানার মতো। বা পাশে আঙ্গুল দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে করতে বললো,

“ আমি বুঝতে পারি নি। সলি… ”

ঠোঁট উল্টে বললো সে। তৃনয় আর থাকতে পারল না। পুনরায় ওকে জড়িয়ে ধরলো। মাথার মধ্য সিঁথিতে ঠোঁট চেপে ধরলো। সরালো না। তন্নী হেঁসে জিজ্ঞেস করলো,

“ কিসের ভয় পাচ্ছিলে? কিছু হয়ে গেলে মইনুল ইসলামকে কৈফিয়ত দিতে হবে, এটার ভয়? ”

তৃনয় ঠোঁট সরালো, “ আরেকটা তুমি পাওয়ার ভয়। ”

“ আরেকটা আমি? ” তন্নী বুক থেকে সরে এলো। বিস্ময় নিয়ে বললো, “ আমি না থাকলে তুমি আরেকটা বিয়ে করবে? ”

তৃনয় দায়সারাভাবে বললো,

“ হ্যাঁ। বউ ছাড়া থাকবো কেনো? ”

তন্নী কষ্ট পেয়ে বললো, “ আমার থেকে কত সুন্দর সুন্দর মেয়ে আছে…. ”

তার কথা শেষ হলো না। তৃনয় আটকে দিল,

“ কিন্তু তুমি নেই। ”

“ আমার মতোই কেনো? আমি কেমন? ”

“ পাগল, ঘাড়ত্যরা। ”

তন্নী চোখ কুঁচকে নিল, “ অ্যাঁ। আমি ঘাড়ত্যরা না। ”

তৃনয় ওকে টেনে নিজের কাছে আনলো। বললো,

“ সেটাই তো। তুমি আমার বাধ্য বউ বটে! এরকম বাধ্য বউ কোথায় পাবো? ”

হ্যাঁ। তন্নী অবশ্যই তৃনয়ের বাধ্য বউ। সে কখনো তৃনয়ের অবাধ্য হয় নি। ভালো খারাপ সবকিছু নিশ্চুপে মেনেছে। তন্নী তাই খুশি হয়ে গেল, “ আমার মতো বউ পাবেই না। বিয়ে করার চান্সও নেই। ”

তৃনয় ওকে ঘুরিয়ে মাথার খোঁপাটা খুলে ফেললো। লম্বা চুলগুলো সেদিনের মতো গলায় পেঁচিয়ে ধরলো। জিজ্ঞেস করলো,

“ মেরে ফেলি? ”

তন্নী বিরক্ত হলো, “ চুলে কি পেয়েছো? চুল কেটে ফেলবো। ”

“ তাহলে নিশ্চিত মেরে ফেলবো। ”

“ কেনো? চুল তো আমার। ”

“ তোমার না। আমার। ”

তন্নী ফের জিজ্ঞেস করলো,

“ কারন? ”

তৃনয় চুলের ভাঁজে নিজের মুখ গুঁজে দিল। বড় করে শ্বাস টানলো। মাদক মেশানো, নেশালো কন্ঠে বললো,

“ তোমার চুল আমার পছন্দ ভীষণ। তোমার খোঁপা আমার দেখা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফুলদানি! ”

তন্নী চুপচাপ মুগ্ধ হয়। তারপর অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,

“ এ্যাই? তুমি নেশা করেছো? মদ খেয়েছো? ”

তৃনয় ওকে নিয়ে ধুপ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। চোখদুটো ঘোলা, লাল। তন্নী ভয় পেল,

“ তোমার চোখ লাল কেনো? ভালোভাবে তাকাও! ”

তৃনয় আধো চোখেই তাকিয়ে থেকে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিল। তৃনয়কে ভয়ে ফেলার শাস্তিস্বরূপ তন্নী সেদিন কতগুলো আদুরে চিহ্ন পেল শরীরে। ফের প্রথম রাতের মতো সারারাত নির্ঘুম কাটলো তাঁর। উন্মাদ বরকে সামলাতে গিয়ে ভীষণ হিমশিম খেলেও সে মানিয়ে নিল। জোৎস্নার আলোয় একটা সুখী পরিবার এসে ওর দেড় গোড়ায় দাঁড়াল। তন্নী স্বামীর মাথা বুকে নিয়ে চোখ বুজলো।

চলবে…!