ভাড়াটে মরশুম পর্ব-০৬

0
1

#ভাড়াটে_মরশুম – [০৬]
লাবিবা ওয়াহিদ

[কপি সম্পূর্ণ নিষেধ]

সেদিন ছিল বুধবার, আমি অফিস সেরে উঠোনের এক চেয়ারে বসেছি। বাড়ি ফিরতে ফিরতে দেখলাম এলাকাজুড়ে কারেন্ট নেই, তাই আগ বাড়িয়ে আর ঘরে যাওয়া হলো না। তীব্র গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার। এই সময়ে লম্বা গোসল দিলে মন্দ হত না, কিন্তু এই মাগরিবের সময়ে বোধ হয় গোসলে ঢোকা ঠিক হবে না। উঠোনে হালকা বাতাস বইছে বিধায় এখানেই বসা। আমি বসে বসে শরতের সাথে আমাদের মেসেজগুলো দেখছি। লাঞ্চের সময়ে মেসেজ করেছিল, কাজের চাপে নাকি বেচারা খাওয়ারও সুযোগ পায়নি আজ। খেতে সুযোগ পায়নি অথচ আমার সাথে মেসেজ করার সময় পেয়েছে, যত্তসব বাহানা। আপনমনেই হাসলাম শরৎ সাহেবের বাচ্চাটে কিছু মেসেজ পড়ে। লোকটার চাকরির প্রথম মাস প্রায় শেষের পথে, বাড়ি ফিরে সাতটা, সাড়ে সাতটার মধ্যে। কিন্তু ইদানীং তার ব্যস্ততা বেড়েছে।

আব্বা ভীষণ খুশি ওনার চাকরির খবর শুনে। এখন কথা বলার মানুষটাকে না পেয়ে সারাদিন এলাকা চষে বেড়ান আর সন্ধ্যায় ফিরেন। প্রতিবারই আব্বার সাথে শরতের দেখা হয়ে যায়। আব্বাকে দেখলেই শরতের ক্লান্ত-মুখে সুন্দর একটা হাসি ফুটে, আমি সেই হাসি রোজ লুকিয়ে দেখি। বোধ হয় আমার সবচেয়ে পছন্দের তার এই সন্ধ্যেবেলার ক্লান্তিভরা হাসিটাই। জানি না পঁচিশ বছর বয়সে কেন কিশোরী প্রেম দোলা দেয় মনে। প্রেমের অনুভূতি বুঝি সেই কিশোরীই থেকে যায়? ইদানীং একটু একটু করে শীত নামতে শুরু করেছে, রাত ছাড়া অবশ্য অনুভব হয় না। অথচ দিনের বেলায় গরমের উত্তাপ।

এমন সময়ে আমাদের উঠোনে শরতের বয়সী এক ছেলেকে ঢুকতে দেখলাম, উনি আমার দিকেই আসছে। লোকটি ইতঃস্তত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
–“শরৎ এখনো ফিরেনি?”
–“জি না, আপনি…”

পরিচয় জানতে চাইলে ভদ্রলোক হালকা হেসে বলল,
–“আমি স্বপ্নীল, শরতের বন্ধু।”

ভদ্রলোক শরতের পরিচিত শুনতেই আমি চট করে উঠে দাঁড়ালাম। তাকে চেয়ারে বসতে বললাম,
–“বসুন বসুন। শরৎ সাহেব চলে আসবেন দ্রুত। ইতিমধ্যেই সন্ধ্যা পেরোচ্ছে।”

সৌভাগ্যবশত এখনই কারেন্ট আসল, আবছা অন্ধকার গলি মুহূর্তেই সোডিয়াম আলোয় চারপাশ আলোকিত করে তুলল। স্বপ্নীল নামের ভদ্রলোক আপত্তি করলেন।
–“না, না। ফোনেই যোগাযোগ করব, থাক।”

–“ফোনে যোগাযোগ করার হলে ফোনেই করতেন। আমরা মাঝেমধ্যে কিছু কথা ফোনে না জানিয়ে সরাসরি বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, তাই হয়তো আপনি এসেছেন। বসুন, আমি চা করে আনছি।”

আমি ভেতরে চলে আসলাম। মুখে শুধু কিছুটা পানির ঝাপটা দিয়ে হাত-পা ধুঁয়ে নিয়েছি। পরপরই রান্নাঘরে চলে যাই, চায়ের পানি আগেই চুলোয় দিয়েছিলাম। চা বানিয়ে বাইরে এসে দেখলাম ভদ্রলোক চুপ করে বসে আছে, চোখ-মুখের রং তার ভিন্ন। কেমন যেন দুঃখ লেপ্টে আছে। আমি তার সামনে চা বাড়িয়ে দিতেই ভদ্রলোক কেমন চমকে উঠে বললেন,
–“সত্যি সত্যি চা করে আনলেন?”

আমি দূরত্ব বজায় রেখে বললাম,
–“আপনি শরৎ সাহেবের অতিথি, তাই খালি মুখে রাখাটা উচিত হবে না।”

–“আপনি বাড়িওয়ালির মেয়ে তাই না?”
–“কী করে বুঝলেন?”
–“এই ঘরের আলোটা জ্বলে উঠেছিল আপনি যেতেই, শরৎ বলেছিল তার পাশের ফ্ল্যাটে বাড়িওয়ালারা থাকেন।”

স্বপ্নীল থেমে আবার বলল,
–“আপনার নাম কী নীলাঞ্জনা?”
–“জি না, প্রিয়াঞ্জনা।”
–“ওহ, হ্যাঁ। দুঃখিত ভুল হয়েছে। আসলে আম্মার সাথে শরৎ এত গল্প করত আপনার।”

খেয়াল করে দেখলাম স্বপ্নীল সাহেব মায়ের কথা ওঠাতেই মুখটা কেমন মিইয়ে গেল, সৌজন্যের হাসিটাও উবে যায়। আমি বললাম,
–“আপনার মা?”
–“জি।”

স্বপ্নীল থেমে আবার বলল,
–“আসলে আমি আপনাকে একটা সত্যি কথা বলতে চাই, যেহেতু আপনি বাড়িওয়ালি।”

–“সত্যি? কিসের?”

স্বপ্নীল সময় নিল, চায়ে তার অনিহার চুমুক পড়ল। আমি অপেক্ষা করলাম। মনটা আঁকুপাঁকু করছে সত্যি জানার জন্য। ভদ্রলোক কোন সত্যির কথা বলছে? কোন বিষয়ে? ঝি ঝি পোকার মিনমিন গানের মধ্যে নীরবতা ভাঙল স্বপ্নীল। বলল,
–“আমার মা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন অনেকদিন। আমি আমার সম্পদ, চাকরি সব মিলিয়ে মায়ের পেছনে অনেক টাকা খরচ করেছি। যখন আমার হাতে টান পড়ল, তখন থেকে শরৎ আমাকে সাহায্য করে যায়। সে তার চাকরির টাকা দিত। এরপর যখন চাকরিটা হারাল, তখন টিউশনির টাকা সব দিয়ে দিত আমাকে। এজন্য প্রায়ই ও ঘরভাড়া দিতে পারত না। এজন্য আগের বাড়ি থেকে ওকে বের করা হয়, এর পরপরই আম্মা কিছুটা সুস্থ হলেন। তবুও শরৎ বাসা ভাড়া দিয়েও কিছু আমার হাতে গুজে দেয়। বিশ্বাস করুন, কতবার বারণ করেছি এই পাগলটাকে যে এভাবে টাকা দেবার দরকার নেই। পাগলটাই শুনেই না আমার কথা, উলটো আমাকে এক ঘা দিয়ে বলবে,
“মা কী শুধু তোর একার? আমি রক্তের না হলেও আত্মার ছেলে আন্টির। আমার মায়ের জন্য কিছু করতে পারিনি বলে কী তোর মায়ের জন্য কিছু করব না? চুপ করে বসে থাক আর আন্টির যত্ন নে।”

স্বপ্নীল থামল, আমি স্তব্ধ হয়ে বসে রইলাম। স্বপ্নীল ঠান্ডা চায়ে চুমুক দিয়ে কিছুটা গলা ভিজিয়ে আবার বলতে শুরু করলেন,
–“শরৎ ছেলেটা অদ্ভুত জানেন? ও যেন আপনদের জন্য রক্ত বিলিয়ে দেয়া মানুষ। কোথায় কী টাকা দেয়, সে নিয়েও একটা কথা বের করানো যায় না তার মুখ থেকে। আমার আম্মাও আমাদের বন্ধুত্বের সেই শুরু থেকেই ওকে ছেলের মতো দেখত। খাওয়াত, নিজের কাছেও রাখত.. এরপর থেকেই ছেলেটা এতটা মিশে গেছে।

তবে ওর মুখে আপনার গল্প অনেক শুনেছি, বিশেষ করে আম্মা বেশি শুনেছে। শরৎ প্রেম-টেমে খুব একটা বিশ্বাসী ছিল না কখনো, আমার আম্মা ওকে বিয়ে দেওয়ার অনেক চেষ্টা করেছে কিন্তু ও রাজি হয়নি। সেই ছেলের মুখেই যখন আপনার কথা শুনলাম, আপনি নিশ্চয়ই বিশেষ কেউ— যে পাগলটার নরম, সুপ্ত মনটা নিজের নামে করে নিয়েছেন। আপনার সাথে দেখা করে ভালো লাগল।”

আমি কেন যেন মিইয়ে গেলাম প্রশংসায়। শরৎ লোকটা আসলেই পাগল। কিন্তু পরমুহূর্তেই মন-মেজাজ ভালো লাগায় ছেয়ে গেল। লোকটা পাগলাটে হলেও ভীষণ ভালো মানুষ। কী করে দিনের পর দিন একজনকে সাহায্য করে গিয়েছে। আসলেই আমরা মানুষকে এত সহনে চিনতে পারি না। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই অজানা গল্প থাকে। পরপর আমার মনে পড়ল শরতকে দেওয়া খোঁটাগুলো। আমি যখনই জিজ্ঞেস করতাম কেন বাড়ি ভাড়া দিচ্ছে না, লোকটা কেমন চুপসে থাকত আর নয়তো সূক্ষ্ম ভাবে প্রসঙ্গ এড়িয়ে চলত। মিথ্যাও বলত না। বেশ মায়া হলো লোকটার প্রতি। সেই লোকটাই এখন ফুল টাইম চাকরি করছে, ভাবলেই কেমন প্রজাপতি উড়ে যায় আমার মনে।

আমি জিজ্ঞেস করলাম,
–“আপনার মা এখন কেমন আছেন?”

স্বপ্নীল বিষাদ মাখা হাসি দিল। আমি এই হাসির কারণ বুঝলাম না। মুহূর্তেই যেন সোডিয়াম আলোয় তার চোখ ছলছল করতে দেখলাম। ভদ্রলোক সহসা নিজেকে সামলে নিল, অথচ আমার বুকে কী যেন নেতিবাচক সুর তুলল।

স্বপ্নীল বললেন,
–“আছেন ভালো। তাঁকে ভালো রাখার জন্যেই তো আল্লাহ তাঁর কাছে নিয়ে গেলেন।”

আমি থমকে গেলাম, ঠিক সেই মুহূর্তেই শরৎ এসে কথাটুকু শুনে ফেলল। আমি শরতের দিকে তাকাতেই দেখলাম শরৎ শূন্য চোখে স্বপ্নীলের দিকে তাকিয়ে আছে। স্বপ্নীল সাহেব বন্ধুকে গিয়ে জড়িয়ে ধরতেই শরৎ ভাঙা গলায় বলল,
–“কবে?”

–“পাঁচদিন হয়েছে।”

–“এজন্য এই কয়দিন কল ধরিসনি?”

স্বপ্নীল নাক টেনে কিছুটা সামলে নেয় নিজেকে। মুখে হাসি ছড়িয়ে বলল,
–“একদিন সবাইকেই যেতে হয় শরৎ!”

শরৎ সাহেব চুপসেই রইল। স্বপ্নীল আবার বলল,
–“ঘুমাতে গেল সুন্দর করেই, কিন্তু সকালে আর উঠেনি।”

স্বপ্নীল সাহেবের এহেম কথায় আমার চোখের বাঁধ যেন ভেঙে গেল। আমার স্মৃতির পাতাতেও আম্মাকে খুঁজে পেলাম আমি, সেই অন্ধকার রাত! যেদিন আমার আম্মাও ঘুমের মধ্যে চলে গিয়েছিলেন। শরৎ সাহেব যেন পাথর বনে রইল, দুই বন্ধুরই নিজেদের সামলে নিতে সময় লাগল। এমন সময় আব্বা এলেন, আব্বা সব শুনে দুই ছেলেকেই শান্ত করলেন। কত কথা বললেন, এরপর ধীরে ধীরে পরিবেশ ঠান্ডা হলো। বুকে বিষাদ চেপে দুই বন্ধু মিলে আব্বার সাথে আলাপে বসল। মানুষ মরণশীল, কেউ চলে গেলে আমাদের জীবনটাও আর থমকে থাকে না। আমাদের জীবনের গতি কখনোই থামে না, সব মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হয়।

স্বপ্নীল ভাইয়া সেদিন চলে গেল আমাদের থেকে বিদায় নিয়ে। তিনি আর এই শহরে থাকবেন না, অন্য শহরে চাকরি পেয়ে সেখানেই চলে যাচ্ছে। ভাইয়া জানাল, ধীরে ধীরে সবকিছু সামলে উঠলে বিয়ে করে নিবেন। তার মায়ের শেষ ইচ্ছে ছিল স্বপ্নীল যেন বিয়ে করে, সেই ইচ্ছের পথেই হাঁটছে সে।

স্বপ্নীল ভাইয়ার থেকে কবরস্থানের ঠিকানা নিয়ে শরৎ আমাকে নিয়ে গেছিল আন্টির কবর জিয়ারত করতে। যেহেতু মেয়েদের কবরের পাশে যাওয়া নিষেধ তাই আমি দূরেই দাঁড়িয়েছিলাম।

শরৎ সাহেবের স্বাভাবিক হতে বেশ সময় লাগল, এর মাঝে সে তার চাকরির প্রথম বেতনও পেল। যেদিন বেতন পেল সেদিন আমাকে শরৎ ছাদে ডাকল। রাত তখন সাড়ে ন’টা। আমিও চুপিচুপি ছাদে পৌঁছাই। তিনি একপাশে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরাতে গিয়ে আমাকে দেখে সঙ্গে সঙ্গে ফেলে দিল। আমি চোখ পাকিয়ে বললাম,
–“এই ধোঁয়ার নেশাও আছে আপনার?”

–“ধোঁয়ার নেশা নেই, কারণ নেশার পয়সা ছিল না আগে। আজ বেতন দিয়ে সর্বপ্রথম এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে নিলাম।”

আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
–“মানুষ বেতন পেলে প্রথমে কতকিছু করে কিন্তু সিগারেট কিনে সেটা প্রথম শুনলাম।”

–“কেন, অন্যায় হলো?”
–“নিশ্চয়ই! আমার আঙুলের ফাঁকে সিগারেট ধরা ছেলে পছন্দ না। সিগারেটে আমার এলার্জি আছে, রক্তবমি হয়।”

আবছা আলোয় শরতের মুখটা করুণ দেখাল। পকেট থেকে ভরা বেন্সনের প্যাকেট বের করে আমার সামনে ধরল। হতাশ গলায় বলল,
–“এই প্যাকেটে কুড়িটা বেন্সন থাকে। প্রতিটার দাম ১৫-২০ এর মধ্যে আপ-ডাউন করে। এবার আমি পেয়েছি বিশ টাকায়। একটা বেন্সন ইতিমধ্যেই আপনার জন্য পায়ে পিষেছি। চারশো টাকা এখন আমি ফেলে দিব?”

–“জানি না।”

শরৎ সাহেব হতাশ ভরা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আবার প্যাকেটটা পকেটে ঢুকিয়ে বলল,
–“থাক, কাল থেকে অফিস বাদ দিয়ে কাশু কাকার সাথে বিড়ি বেচতে বসে যাব।”

–“আশ্চর্য আমি তো আপনাকে খেতে বারণ করিনি।”

–“না করুন, আপনি আমার বউ হতে চলেছেন। বউয়ের শরীর খারাপের কারণ হতে চাই না।”

–“আপনার সবেতেই বাড়াবাড়ি। কেন ডেকেছেন বলুন।”

ঠান্ডা, শীতল হাওয়া ছুঁয়ে গেল আমাদের। কেমন শিরশিরে অনুভূতি হলো। এই অনুভূতিটা আদৌ বাতাসের কারণে নাকি একজনের মুগ্ধ চোখের চাহনি তা বোঝা দায় হয়ে পড়ল যেন। শরৎ আমার চোখে চোখ রেখে বলল,
–“চাকরির প্রথম বেতন পেলাম, অভিনন্দন জানাবেন না? আপনার জন্যই তো চাকরিটা পাওয়া।”

–“অভিনন্দন, তবে আমার জন্য কিছুই না। চাকরি আমি পাইয়ে দিইনি, সবটাই আপনার চেষ্টা এবং পরিশ্রমের ফল।”

–“হুঁ, তবে একজন নারীও ছিলেন যিনি আমার চেষ্টার শক্তি ছিলেন। তাকে ছাড়া আমি হয়তো এখনো ভবঘুরে থাকতাম। ভাগ্যিস, প্রেমে পড়েছিলাম।”

আমার কেমন যেন লজ্জায় দূর্বল দূর্বল লাগছে। আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম। অন্যদিকে চেয়ে বললাম,
–“আর কোনো প্রয়োজন না থাকলে আমি যাই?”

–“উহু, শুনুন।”
–“বলুন।”
–“চলুন আগামীকাল পান খেয়ে আসি?”
–“পান?” চমকে উঠলাম।

–“হ্যাঁ, এদিকে একটা পানের দোকান দেখলাম। শুধু মশলা ভরা পানই বিক্রি করে ওই স্টলে। ইচ্ছে হলো আপনার সাথে পান খেয়ে দাঁত লাল করি।”

–“আপনি যেমন অদ্ভুত তেমন আপনার আবদারও। আমি কখনো পান খাইনি।”

–“বিয়েও তো কখনো করেননি।”

আমি বহু কষ্টে হাসি আটকালাম। উনি থেমে গলা ঝাড়ল। মুহূর্তেই অন্য প্রসঙ্গে ছুটে বলল,
–“আচ্ছা চলুন, একটা গান শোনাই।”

–“গান?”
–“হুঁ।”

এমন মুহূর্তেই কারেন্ট চলে গেল। উনি পরোয়া করলেন না। শূন্য আকাশে একপলক চেয়ে আমার দিকে তাকালেন, সম্ভবত আমাকে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। উনি তবুও গান ধরলেন,

“লাল বাজারে গলির মোড়ে
পান দোকানের খরিদ্দার
বাকের আলীর আদুরে মেয়ে
নাম ছিল তার গুলবাহার
লাল বাজারে গলির মোড়ে
পান দোকানের খরিদ্দার
বাকের আলীর আদুরে মেয়ে
নাম ছিল তার গুলবাহার

নাম ছিল তার গুলবাহার
দেখতে ভারী চমৎকার
নাম ছিল তার গুলবাহার
দেখতে ভারী চমৎকার
তুলনা যে হয় না তার
হোসনে আরা গুলবাহার।”

ওনার গলায় গানটা দারুণ মানিয়েছে। কিন্তু প্রশংসা করলাম না। আমি হাসি চেপে বললাম, “পান খাওয়ার বুদ্ধিটা বুঝি গান থেকে পেয়েছেন?”

শরৎ সাহেব বোধ হয় হাসলেন। বললেন,
–“কেন নয়? আসলেই পান ইউনিক কিছু হতে চলেছে, প্রিয়াঞ্জনা। একদম নতুন অভিজ্ঞতা।”

চলবে—