বিষবিন্দু পর্ব-০৩ এবং শেষ পর্ব

0
3

#বিষবিন্দু (শেষ)
#নুসরাত_জাহান_মিষ্টি

বেশ কিছুদিন কেটে গেল। পুলিশ তাদের মতো তদন্ত করছে। তবে এখনো আমরা জানতে পারলাম না আসল অপরাধী কে। সেই সঙ্গে রুবিরও কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে। মায়ের মৃ ত্যুর দিন রুবিকে বাস স্টেশনে একটি লোকের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। এমনটাই জানিয়েছে জাফরের কয়েকজন পরিচিত। তারা পুলিশকেও সবটা বলেছে। এই কথা শোনার পর, কোথাও গিয়ে আমারও মনে হচ্ছে রুবি হয়তো সত্যি অন্যকারো সাথে পালিয়ে গেছে। কিন্তু! নিজের মাকে শেষ দেখার চেয়েও পালিয়ে যাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো? জাফরের ধারণা, যে মা রা গিয়েছে তার কথা না ভেবে বরং নিজের কথা ভাবাটা বেশি যুক্তিযত মনে হয়েছে রুবির। সেজন্য চলে গিয়েছে। আমি আমার বোনের ভাবনা থেকে বেরিয়ে মায়ের কথা ভাবছি। যখন থেকে জানতে পেরেছি মায়ের খু ন হয়েছে। তাকে বিষ দেওয়া হয়েছে। তখন থেকে পরিবারের কারো উপর বিশ্বাস করতে পারছি না। এমনকি নিজের বাবার উপরেও নয়। আমার বাবাকেও সন্দেহ হচ্ছে। তবে মনের মাঝে এই প্রশ্নটিও জাগছে বাবা মাকে খু ন করলে তো আর পুলিশকে জানানোর জন্য সম্মতি জানাতো না। এসব নানা চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে। সেই মূহুর্তে বাবা এসে আমার পাশে বসলেন। আমার হাতটি ধরে শান্ত গলায় বললেন,“তোর মাকে তো বাঁচানো গেলো না। তুই তোর বোনটাকে একটু বাঁচা বাবা। আমার মেয়েটা ভালো নেই।”

“মানে?”
বাবার হঠাৎ করে বলা এই কথা আমার মাথায় নানা প্রশ্নের জন্ম দিলো। তবে বাবা স্পষ্ট করে কিছু বলার পূর্বেই প্রিয়া ঘরে চলে এলো। তাকে দেখে বাবা চুপ করে যায়। সে কিছুই বলে না। সে প্রসঙ্গ বদলে বলে,“তোর মায়ের মৃ ত্যু নিয়ে যে মামলাটি করেছিস সেটা তুলে নে বাবা। আমাদের এসব ঝামেলা করে লাভ নাই। আসল অপরাধী খুঁজতে হবে না। তুই বরং পুলিশদের বল, এটা আত্ম হত্যা আমরা ধারণা করছি। আমাদের কারো প্রতি অভিযোগ নেই। এই মামলাটি তারা এখানেই বন্ধ করে দিক।”

“এভাবে বললেই হলো নাকি? বাবা তুমি কী বলছো তুমি জানো?”
এখানে বাবা আমার হাত ধরে অনুরোধের গলায় বললেন, তার কথাটা আমি যেন বোঝার চেষ্টা করি। বাবার মুখের কথা এবং চোখের ভাষায় ভিন্নতা দেখা দিচ্ছিলো। তবে আমি বিষয়টি বুঝতে পারলাম না। কিন্তু বাবা যে ভয় পাচ্ছে সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারছিলাম না।

বাবার কথায় সম্মতি জানিয়ে প্রিয়াও আমাকে এই পুলিশের ঝামেলায় না জড়ানোর কথা বলে। প্রিয়ার মতে, একেই আমার চাকরি নেই। তার মাঝে এসব মামলায় এত ঘোরাঘুরি। সব মিলিয়ে প্রিয়ার মনে হয় এই ঝামেলায় আমার না জড়ানোই ভালো। প্রিয়া এবং বাবার কথা শুনে আমি মাথা নাড়ালাম। সেই মূহুর্তে আমার ফোনটি বেজে উঠলো। আমি ফোনটা কানে নিয়ে কথা বললাম। বেশ কিছুটা কথা বলার পর, বাবা এবং প্রিয়ার দিকে তাকালাম। তারা গভীর নজরে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার কথা শুনেই বুঝতে পেরেছে যে আমি পুলিশের সাথে কথা বলছে। তাই তারা দুজনেই আগ্রহ নিয়ে কথা শুনছিলো। আমি দুজনকে লক্ষ্য করে হাসি মুখে বললাম,“আপনারা আসল অপরাধীর খোঁজ পেয়ে গেছেন? তার মানে আমার মায়ের খু নি আজই ধরা পড়বে?”

আমি তো খুশিমনে ফোন রাখলাম। অতঃপর শান্ত গলায় বললাম,“তোমাদের আর ভয় পেতে হবে না। আমাদের এই পুলিশি ঝামেলা বেশিদিন পোহাতে হবে না। পুলিশ আসল খু নির খোঁজ পেয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই খু নিকে ধরতে তারা আসছে।”

এই কথা শুনে বাবা এবং প্রিয়া দুজনেই মুখেই ভয় ফুটে উঠলো৷ তাদের দুজনারই ভয় পাওয়ার কারণ আমি বুঝতে পারলাম না। আমার সন্দেহ মিলছে না। তবে এই বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে আমি ঘর থেকে বের হলাম।

____
পুলিশ এসে আমাদের বাড়িতে উপস্থিত হলো। পুলিশ আসতে আমার বাবা তার কাছে গিয়ে কান্নারত গলায় বললেন,“আমাকে মাফ করে দেন। আমি একটি ভুল করে ফেলেছি। আমি আমার স্ত্রীকে খু ন করতে চাইনি। কিন্তু তাও খু ন হয়ে গিয়েছে।”

এই কথা শুনে আমি বা পুলিশ কেউ অবাক হলাম না। তবে আমি অবাক হওয়ার ভান ধরে বললাম,“বাবা তুমি কী বলছো? তুমি খু ন করেছো মাকে?”

“হ্যাঁ। রাফি বাবা পারলে আমাকে ক্ষমা করে দে।”

“তা তুমি মাকে খু ন কেন করলে?”
আমার এই প্রশ্নের জবাবে বাবা তার এবং মায়ের সম্পর্কের তিক্ততার গল্প বলতে শুরু করলেন। তার গল্প বলা শেষে আমি বললাম,“তুমি মায়ের প্রতি রাগ থেকে তাকে খু ন করলে? কিন্তু বাবা আমি যতদূর জানতাম, সেদিন তো আমাকে খু ন করার জন্য খু নি পায়েসে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিলো। খু নি তো মাকে খু ন করতে চায়নি।”

”কি!”
বাবা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ম্লান হাসলাম। প্রিয়া বিষ্ময় নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,“এসব কী বলছো? তোমাকে খু ন করার চেষ্টা করা হচ্ছিলো?”
প্রিয়া ভীষণ ভয় পেয়েছে। তার কন্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছে। আমি প্রিয়ার কথার জবাব দিলাম না। বরং পুলিশ দিলো। পুলিশ বললো,“হ্যাঁ। আপনি নিজহাতে যত্ন নিয়ে যে পায়েস আপনার স্বামীর দিকে এগিয়ে দিয়েছিলেন, সেটায় বিষ ছিলো।”
এই কথা শুনে প্রিয়া ভীষণ ঘাবড়ে যায়। যে ভয়ে আমতা আমতা করছিলো। সেই মূহুর্তে আমি তার গালে একটি থাপ্পড় বসিয়ে দেই। তারপর বলি,“একটা সংসার ধ্বংস করার জন্য তোর মতো একটা কালনাগিনীই যথেষ্ট। আমার বাবা, মা আমার বোন এবং আমার জন্য জীবনসঙ্গী নির্বাচন করতে ভুল করেছে। যে ভুলের জন্য আজ আমাদের পুরো পরিবারটা শেষ হয়ে গেল।”

“তুমি এসব কী বলছো? রাফি আমি…।”
আমি প্রিয়াকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমার ফোন থেকে একটি ভিডিও বের করে দেখালাম। সেই সময়ে ঘর থেকে বের হওয়ার আগে আমি বাবার ঘরে আমার ফোনের ক্যামেরা অন করে রেখে গিয়েছিলাম। সেখানেই একটি ভিডিও রেকর্ড হয়েছে। যাতে দেখা যাচ্ছে প্রিয়া আমার বাবার গলা চেপে ধরে বলে,“কু ত্তার বাচ্চা নিজের মেয়ের জন্য একটুও চিন্তা নাই? পুলিশকে তুই কী বলেছিস? পুলিশ কিভাবে জানলো খু নি কে? তুই কী বলেছিস বল?”

“আমি কিছুই বলিনি। বিশ্বাস করো পুলিশকে আমি কিছুই বলিনি।”
বাবা কাতর গলায় কথাটি বলে। কিন্তু প্রিয়া সেই কথা মানতে চায় না। সে রাগান্বিত গলায় বলে,“শোন যদি আমি বা জাফর পুলিশের কাছে ফাঁসি তবে তোর মেয়েকেও তোর বউয়ের মতো ম রতে হবে।”
এভাবেই রুবির কথা বলে বাবাকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলো প্রিয়া। অতঃপর পুলিশ আসলে বাবাকে এই খু নের দ্বায় নিজের কাধে তুলে নিতে বলে। আমার বাবাও নিজের মেয়ের কথা ভেবে নিজেকে খু নি বানাতে পিছু পা হয় না। এই ভিডিও দেখে প্রিয়া একদম হতভম্ব হয়ে যায়। সে আমতা আমতা করে বলে,“এটা? এটা?”

“আমরা সব জানি। তাই আপনার নাটক করার প্রয়োজন নেই।” পুলিশের মুখে এমন কথা শুনে প্রিয়া একদম নিশ্চুপ হয়ে যায়। পুলিশ অফিসার কনস্টেবলকে প্রিয়ার হাতে হাতকড়া পড়াতে বলছে। সেই মূহুর্তে বাবা চিৎকার দিয়ে বলে,“না। তোমরা বৌমাকে গ্রেফতার করো না। ও জেলে গেলে ওরা আমার মেয়েকে একদম জানে মে রে দিবে। আমার মেয়েটাকে একদম শেষ করে দিবে।”
বাবার মুখে এই কথা শুনে আমি তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম। আমার বাবা আমার কান্নার শব্দ পেয়ে পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। তার মনটা তাকে জানান দিচ্ছে, খারাপ কিছু হয়ে গেছে। হ্যাঁ তাই। আমি বললাম,“বাবা রুবি আর বেঁচে নেই। ওরা আমার রুবিকে শেষ করে দিয়েছে।”

এই কথা শুনে বাবা পাথরের মতো হয়ে যায়। সে সেখানেই বসে পড়ে। অতঃপর পুলিশ সব ঘটনা খুলে বলে। সেদিন পুলিশ সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাবার কাছে যখন মায়ের খু ন নিয়ে প্রশ্ন করে তখন বাবা সেসব এড়িয়ে যায়। এটা দেখে পুলিশ প্রথমে বাবাকেই খু নি ভাবে। তবে যখন বাবা বারবার কথা প্রসঙ্গে রুবির কথা বলছিলো। ছোটবেলা থেকে রুবিকে কিভাবে বড় করেছে? আমার বোন রুবি খুব মিষ্টি একটি মেয়ে। বড় সাধ করে তার বিয়ে দিয়েছিলো বাবা-মা। চেয়ারম্যানের ছেলে নিজে পছন্দ করেছিলো আমার মেয়েকে। এত ভালো সম্মন্ধ আসায় বাবা, মা বিয়েটা দিয়ে দেয়। রুবি সংসার জীবনে খুব সুখী থাকবে এই আশায়। আমার বাবা বারবার এই কথা বলায় পুলিশের মনে সন্দেহ হয়। তার মনে হয়, বাবা কৌশলে রুবি বিপদে রয়েছে। সংসার জীবনে ভালো ছিলো না, এসব বলার চেষ্টা করছে। বাস্তবেও তাই। সত্যি তাই। বাবা সেটাই বলার চেষ্টা করেছে। সেজন্য পুলিশ যারা রুবিকে সেদিন বাস স্টেশনে দেখেছে তাদের থানা ডেকে একটু কড়াভাবে জিজ্ঞেস করে। প্রথমে অবশ্য তারা একই কথা বলে যাচ্ছিলো। তবে গায়ে দুই একটা থাপ্পড় দিতেই তারা সব বলে দেয়। তারা রুবিকে দেখেনি। বরং জাফর তাদের কিছু টাকা দিয়ে এই কথা বলতে বলেছে। জাফর তাদের জানিয়েছে, তার বউ পালিয়ে গিয়েছে এটা সে নিজচোখে দেখেছে। কিন্তু স্বামী হয়ে এসব সবার কাছে বলা লজ্জার। তাই তার হয়ে তাদের বলতে বলেছে। এসব শুনে পুলিশ জাফরদের পুরো পরিবারকে ধরে। প্রথমে অবশ্য তারাও একই কথা বারবার বলছিলো। কিন্তু যখন পুলিশ তিনজনকে আলাদা আলাদা নিয়ে ভিন্ন গল্প শোনাচ্ছিলো তখন সবাই সব বলে দেয়। পুলিশ জাফরের বাবার কাছে গিয়ে বলে,“আপনার ছেলে এবং স্ত্রী বলেছে আপনার রুবির প্রতি কুনজর ছিলো। আপনি হয়তো কিছু করেছেন।”
এই কথায় জাফরের বাবা রেগে গিয়ে বলে দেয়, রুবিকে জাফর তার স্ত্রী সবাই অত্যাচার করতো। অন্যদিকে জাফরের মাকে গিয়ে বলে,“আপনি নিজের বৌমার উপর অত্যাচার করতেন। সেই অত্যাচারে সে পালিয়েছে। এটাই আপনার ছেলে এবং স্বামী বলেছে। গৃহবধূ নির্যাতনের মামলায় এখন আপনার জেল হবে।”
এই মামলায় কত বছরের জেল হতে পারে এটা বলতেই সেও সুরসুর করে সব বলে। একইভাবে তিনজনকে দিয়ে সব সত্যি বলায়। তাদের কথা অনুযায়ী, জাফরের সঙ্গে প্রিয়ার একটি অবৈধ সম্পর্ক হয়। সেই কথা জানতে পারলে রুবি তার বাবা, মাকে জানায়। যার ফলে এদিকে জাফরের সঙ্গে রুবির সম্পর্ক দিন দিন খারাপ হয়। অন্যদিকে আমার বাবা, মা প্রিয়ার বাবা মাকে ডেকে এসব জানায়। আমাকে জানাতে চায়। এবং প্রিয়াকে বাড়ি থেকে বের করতে চায়। সেই সময়ে প্রিয়া ভয় পেয়ে যায়। এসব কথা জানাজানি হলে তাদের অনেক বদনাম হবে। সেই সঙ্গে সহজে যা চায় তাও হবে না। এই জন্য তারা একটি সুক্ষ্ণ পরিকল্পনা করে। প্রথম দিকে অবশ্য রুবিকে জাফর নিজেদের বাড়ি আটকে রেখে, অত্যাচার করে বাবা মাকে ভয় দেখায়। তারা যাতে এসব কথা আমাকে এবং অন্য কাউকে না বলে। তাই বাবা, মা ভয় পেয়ে যায়। এসব কথা কাউকে বলে না। আমাকেও না। তবে আমার বাবা, মা রুবিকে শ্বশুড়বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে চাচ্ছিলো। এখানে জাফর রুবিকে ভীষণ ভয় দেখায়। আমার বাবা, মাকে মে রে ফেলার। যার কারণে ভয় পেয়ে রুবি জাফরের কথা মতো তার বাড়িতে থাকার কথা বলে। বাবা, মাকে ফিরিয়ে দেয়। এভাবে কয়েক মাস কেটে যায়। রুবিকে বাবা, মা চোখের দেখাও দেখতে পারে না। তারা জাফরদের বাড়ি গেলে তারা অনেক খারাপভাবে অপমান করে তাড়িয়ে দিতো। রুবিকে একটা ঘরে আটকে রেখে দিতো। তাদের সাথে দেখা করতে দিতো না। সেই সঙ্গে বাবা, মা এসব বিষয় নিয়ে যখন পুলিশে যাওয়ার ভয় দেখাতো তখন জাফর কঠিন গলায় বলতো,“পুলিশ আসতে আসতে আপনার মেয়ের লা শ পড়ে যাবে৷ আমরা তো জেলেই যাবো তাহলে ওকে বাঁচিয়ে রেখে কী করবো?”
এসব কথায় ভয় পেয়ে যায় বাবা, মা। তাই কোন পদক্ষেপ নেয় না। এর মাঝে আমার চাকরি চলে যায়। এটাই জাফর এবং প্রিয়ার কাছে সুযোগ মনে হয়। তারা নিজেদের সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। অর্থাৎ বিয়ে করার। কিন্তু এভাবে পালিয়ে যেতে চায় না। সেই সাথে আমি সব জানতে পারলে বাঁধা দিতে পারি। সেজন্য জাফর বাবা, মাকে ফোন দিয়ে বলে রুবিকে আমাদের বাড়ি পাঠিয়ে দিবে। যদি আমার বাবা, মা তার কথামতো আমাকে এবং প্রিয়াকে আলাদা করে দেয়। এখানে বাবা, মা তাদের জোরাজোরিতে বাধ্য হয়ে আমাকে আলাদা হওয়ার কথা বলে।

এইখানে প্রিয়া এবং জাফরের পরিকল্পনা ছিলো তারা আমাকে বিষ খাইয়ে মে রে দিবে এবং সবার কাছে রটিয়ে দিবে চাকরি নেই, সেই সঙ্গে বাবা-মা আলাদা হয়ে যেতে বলেছে। সব মিলিয়ে আমি বেশ হতাশায় ছিলাম। তাই না পেরে আত্ম হত্যা করেছি। আর অন্যদিকে রুবিকে অত্যাচার করতে করতে তারা মে রেই ফেলেছে। সেখানে রটিয়ে দিবে রুবি পালিয়ে গেছে। অতঃপর প্রিয়া এবং জাফরের পথ পরিস্কার। কিন্তু তাদের পরিকল্পনার মাঝে মা চলে আসে। সেদিন প্রিয়া আমার জন্য বাটিতে আলাদা করে পায়েস তুলে নেওয়া দেখে মায়ের সন্দেহ হয়। তাই আমাকে সেটা খেতে না দিয়ে নিজে খেয়ে নেয়। অন্যদিকে আমার জন্য তুলে রাখা পায়েসে বিষ মেশানোর পর বাকি পায়েসে প্রিয়া ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দেয়। সেজন্য সেদিন সবাই এত গভীর ঘুমে মগ্ন ছিলো।

পুলিশের মুখে সব কথা শুনে প্রিয়াও সব সত্যি স্বীকার করে নেয়। জাফরের মাধ্যমেই পুলিশ জানতে পারে তারা রুবির মৃত দেহ তাদের বাড়ির পিছনের বাগানে মাটিচাপা দিয়েছে। সেখান থেকে মৃত দেহ তুলে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রুবির মৃ ত্যুর কথা শুনে শোকে বাবা পাথর হয়ে যান। যার জন্য এতকিছু করলেন সেই শেষ হয়ে গেলো। প্রিয়াকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। আমি এবং বাবা তার দিকে ঘৃণার নজরে তাকাই। ছিহ। মানুষ এত খারাপ হতে পারে। নিজেদের স্বার্থের জন্য এত নিচে নামতে পারে? আমার ভাবতেও খারাপ লাগছে। কথায় বলে এক বালতি দুধকে নষ্ট করার জন্য এক চিমটি লেবুর রসও যথেষ্ট। সেরকম ভাবে একটি পরিবারকে পুরোপুরি ধ্বংস করার জন্য একজন খারাপ মানুষই যথেষ্ট। তার জন্য অধিক মানুষের প্রয়োজন পড়ে না। যেভাবে আমাদের পরিবারটা শেষ হয়ে গেল। আমার মা, আমার বোন। সব শেষ। দিনশেষে মায়ের ভালোবাসার গভীরতা অনুভব করতে পেরে আমি আরও ভেঙে পড়লাম। সেদিন রাতে আমার মায়ের আমার হাত থেকে পায়েস কেড়ে নেওয়ায় কতই না কষ্ট পেয়েছিলাম। অথচ সেই কেড়ে নেওয়াটা ছিলো আমার ভালোর জন্যই। সন্তানের বিপদ যাতে না হয় সেজন্য একজন মা সেই বিপদের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এজন্যই তিনি মা। আমার মা।
(সমাপ্ত)