#বৈরী_বসন্ত ১৯
লেখা – আয্যাহ সূচনা
নাফিয়া ভেবেই বসেছিল তাদের দিকে মানুষ অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থাকবে। বাজে কথা বলবে। নোংরা মন্তব্য ছুঁড়ে দিবে। কিন্তু নজর এদিক ওদিক ফিরিয়ে দেখতে পেল তাদের দিকে কারো নজরই নেই। যে যার কাজে মশগুল। পৃথিবীটা সময়ের গতির সাথে পাল্লা দিয়ে অনেকটা বদলে গেছে। আরিভ অপেক্ষায় নাফিয়ার দিকে চেয়ে রইল। মেয়েটি আশপাশের মানুষগুলোর দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করছে।
-“মানুষকে যেভাবে মনোযোগ দিয়ে দেখছো সেইভাবে আমাকে দেখলেও কাজে দিত।”
নাফিয়া দ্রুত হাতে আরিভের মুখে খাবার তুলে দিয়ে দ্রুত হাত নামিয়ে ফেলে। কেউ যেন না দেখে। ইলিশ মাছটা চামচ দিয়ে দুভাগ করতে করতে বলল,
-“বেশি তাকালে নজর লাগে।”
-“আপনার নজর লাগুক আমার উপর।”
নাফিয়া ত্যাড়া চোখে তাকায়। এই কথার জবাব নেই তার কাছে কোনো। সুতরাং বলে উঠল,
-“মাছের কাটা কে ছাড়াবে শুনি?”
আরিভ শার্টের হাতা গোটালো। কেন জানে না, নাফিয়ার এই দৃশ্যটুকু মনে ধরল বেশ। নিজেই মাছের কাটা ছাড়াচ্ছে। নাফিয়া বলে,
-“নিজের হাততো নষ্ট করলেনই। আমাকে খাইয়ে দিতে বাধ্য করলেন কেন তাহলে?”
-“ইচ্ছে আমার। এখন এবং পরবর্তীতে তুমিই খাইয়ে দিবে।”
-“শখ কত!”
-“অনেক শখ। আরও আছে, বলব?”
হাবভাব ভালো ঠেকছে না। চোরাই দৃষ্টি, ঘোর লাগা চাহনী। নির্ঘাত কিছু একটা বলে নাফিয়াকে লজ্জায় ফেলবে। নাফিয়া আগাম বিপদের আভাস পেয়ে জবাব দেয়,
-“জানতে চাই না।”
-“আচ্ছা বলব একদিন।”
-“জোর জবরদস্তি নাকি?”
-“হ্যাঁ।”
খাওয়া দাওয়া শেষ। নাফিয়া খুব দ্রুত হাতেই শেষ করেছে। আরিভের চেয়ে আশপাশের মানুষের চিন্তা বেশি। পেট পুড়ে খেল আরিভ। অর্ধেক খাবার বাকি আছে। আরিভ বলে উঠল,
-“বাকিগুলো তুমি খাবে।”
-“কেন?”
আরিভ সামান্য ঝুঁকে নাফিয়ার কানের কাছে এসে বলল,
-“এক থালে খেলে ভালোবাসা বাড়ে।”
সর্বাঙ্গ শিরশির করে উঠল নাফিয়ার। সংকুচিত হয়ে গেল সেখানে বসেই। লোকটার মুখে প্রথম ভালোবাসা শব্দটি শুনেছে। লজ্জা গ্রাস করতে শুরু করল। আরিভ নাফিয়ার খোলা চুল আলতো করে টেনে দিয়ে বলল,
-“লজ্জা পেলে আপনাকে বেশ লাগে।”
নাফিয়া নড়েচড়ে উঠে। বলে,
-“উফ! শুধু ফালতু কথা।”
আরিভ খাবারের বাটি নিজের হাতে তুলে নিল। চামচ তুলে ধরল নাফিয়ার মুখের কাছে। বলল,
-“আমি খাইয়ে দেই। ভালোবাসা দ্বিগুণ হবে।”
লজ্জা দিতে দিতে পিষে ফেলব যেন। নাফিয়া ঠোঁট কামড়ে অন্যদিকে চেয়ে রইল। আরিভ বলল,
-“মানুষ দেখছে কিন্তু, দ্রুত খাও।”
অনেকটা অস্বস্তি নিয়েই খেয়েছে নাফিয়া। আজকাল তার কথার অবাধ্য হওয়া যায়? শুধু হুমকি আর হুমকি। নাফিয়া প্রথমে বিরক্ত হয়, এরপর মুহূর্তগুলোর কথা ভেবে আনমনে হেসে উঠে।
-“আরেহ আরিভ যে?”
কোনো এক নারী কন্ঠে ধ্যান ভাঙলো দুজনের। অফিসের ফর্মাল পোশাকে লম্বা চওড়া একজন রমণী দাঁড়িয়ে। ঠোঁটে গাঢ় গোলাপী লিপস্টিক। হাসি মুখে তাদের দুজনের দিকে এগিয়ে এল। আরিভ বিনয়ী হাসে।
বলে, – “লাঞ্চ করতে এসেছিলাম, দিবা।”
দিবা? তাহলে মেয়েটির নাম দিবা। দুজনই দুজনকে চেনে। নাফিয়া তাকিয়ে রইল মেয়েটির দিকে। ভীষণ স্মার্ট সে।
দিবা নাফিয়ার দিকে চেয়ে বলল, – “ও কে? গার্লফ্রেন্ড?”
আরিভের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে। এটাই সুযোগ প্রতিশোধ নেবার। বলে উঠল,
-“আরেহ নাহ। ও আমাকে কিছুদিন আগে ভাই ডেকেছে। ওর নাকি বড় ভাইয়ের খুব শখ। ও আমার নতুন ছোটবোন, নাফিয়া।”
বিস্ফোরিত চোখে তাকালো নাফিয়া। সত্যি সত্যি ভাই বানিয়েছে নাকি? কী অবলীলায় বলে ফেলল। দিবা তাল মেলায়। বলে,
-“সত্যিই তাই। ওকে দেখে ভীষন ছোট মনে হচ্ছে। বোন হিসেবেই মানাচ্ছে।”
-“আমারও একটা বোনের শখ ছিল। এই বাচ্চা মেয়েটা সেই অপূর্ণ জায়গা পূর্ণ করলো।”
-“যাক! বিয়েশাদী নিয়ে কিছু ভেবেছো নাকি?”
আরিভ নাফিয়ার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বলে উঠল,
-“করবো, খুব শীগ্রই করব একজনকে বিয়ে।”
নাফিয়ার হৃদয় যেন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। তাহলে কী এটাই সে মেয়ে যার কথা গতকাল সাদিফ বলছিল? আরিভ হেসে হেসেই কিছুক্ষণ কথা বলল দিবার সাথে। কাকে বিয়ে করবে সে? তার জীবনে কী অন্য কেউ আছে তাহলে? আড়চোখে নাফিয়াকে দেখে নিল কয়েকবার। নাফিয়ার মুখখানা দেখবার মত। আরিভ মনে মনে বলল,
-“জ্বলো! জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাও।”
দুজনের এই হাসি ঠাট্টা সহ্য হল না নাফিয়ার। ব্যাগ গোছালো। তাদের দুজনকে বুঝতে না দিয়েই বেরিয়ে গেল। কিন্তু আরিভ দেখে ফেলে। চোখ দুটো গোলগোল হয়ে যায়। দিবাকে রেখেই পিছু ছুটলো নাফিয়ার। চেঁচিয়ে বলল,
-“নাফি দাঁড়াও!”
কে শুনে কার কথা। নাফিয়া দ্রুত কদমে হেঁটে যাচ্ছে। পেছনে বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে দিবা। কী হলো বুঝতে পারল না কিছুই।
অন্যদিকে চোখের সামনে থাকা প্রথম রিকশায় কোনো কথা না বলেই উঠে গেল নাফিয়া। রিকশাওয়ালা মামাকে বলল,
-“মামা আপনি চলুন আপনাকে ভাড়া বাড়িয়ে দিব। রিকশা থামাবেন না প্লীজ।”
পেছন থেকে দৌঁড়ে পার্ক থেকে বেরিয়েছে আরিভ। জোর গলায় বলল,
-“নাফিয়া দাঁড়াও বলছি!”
রিকশা আপন গতিতে চলেছে। চলতে চলতে মোড় ঘুরিয়ে চলে গেল। কী থেকে কী হল? সামান্য দুষ্টুমিটুকু বুঝল না এই মেয়ে? আরিভের মনে হল সে বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। নিজের চুল আলতো করে মুঠ করে ধরল। ফোন করল নাফিয়াকে। কেটে দিচ্ছে মেয়েটি।
_______
নাফিয়াকে আর পায় কে? সে বড্ড অভিমানী। অভিমান করে ফোনটা অফ করে রেখেছে। সাদিফের কাছ থেকে খোঁজ নিয়েছে সে বাড়ি ফিরেছে, এটাই স্বস্তির। কিন্তু রেগে গেল যে? অল্প বয়সী মেয়েদের সাথে প্রেম করা এতটাও সহজ নয়।
সন্ধ্যা নামার একটু আগেই আরিভ বাড়ি ফিরল। সদর দরজা থেকে একটু আগেই জমিলা বেগম নামক মহীয়সী নারী দাঁড়িয়ে।
আরিভ তাকে দেখে বিড়বিড় করে বলল,
-“এই হচ্ছে আরেক নষ্টের মূল।”
বাইক নিয়ে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। হাসি মুখে বলে,
-“আসসালামু আলাইকুম দাদী।”
জমিলা বেগম হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। এই কাজ তিনি সচরাচর করেন না। আজ প্রকৃতির হাওয়া খেতে ইচ্ছে হয়েছে। মুখ কুঁচকে সালামের উত্তর নিলেন,
-“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
আরিভ মুখের হাসি বজায় রেখে বলল, -“এই সময় আপনি বাহিরে? কিছু লাগবে?”
-“কেন থাকবার পারি না বাইরে?”
-“সে তো পারেন অবশ্যই। কখনও দেখিনি যে, তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
জমিলা বেগম রাগী সুরে বলে উঠলেন,
– “আমারে দেখবা কেমনে? তোমার নজর তো অন্যদিকে।”
আরিভ বুঝল ঠিকই। কিন্তু অবুঝের মত মুখ বানিয়ে বলল,
-“কোন দিকে দাদী?”
-“না বুঝার ভং ধরতাছো নাকি? তোমগো এই রঙ্গলীলা ভালোই বুঝি। খবরদার আমগো বাড়ির মাইয়ার দিকে নজর দিবা না।”
আরিভ আনমনে হাসল। নজর দিবে না মানে? একশবার দিবে। তার চোখের সামনে দিয়েই নিয়ে যাবে তার বাড়ির মেয়েকে। আরিভ বলে উঠে,
-“ছিঃ ছিঃ দাদী কী বলেন? নাফি আমার ছোট বোনের মত। আমি ওকে বোন হিসেবেই ভীষণ স্নেহ করি।”
জমিলা বেগম সন্দিহান দৃষ্টিতে চেয়ে বললেন,
-“সত্যি কইতাছো?”
-“আপনার কসম দাদী।”
-“এই পোলা এই! আমার কসম কাটো কেন? আমারে মারবার ধান্দা?”
আরিভ অত্যন্ত নিচু স্বরে বলল,
-“তাইতো কসম কাটলাম।”
-“এই কী কইলা তুমি?”
আরিভ মাথা দোলায়। বলে উঠে,
-“না না দাদী কিছু না। বাইকে চড়বেন? আপনাকে ঘুরিয়ে আনি চলেন।”
জমিলা বেগম দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে বলল,
-“আমার পোলার লগে বহুত চড়ছি। ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া লাগে শরীরে। ওই অপয়াটা এক্সিডেন্ট করার পর আমার পোলা আর হুন্ডা চালায় না।”
আরিভের রাগ হল। কথায় কথায় নাফিয়াকে কটু কথা না শোনালেই নয়। এতো জঘন্য মানসিকতা কীভাবে হতে পারে একজন নারীর। নিজে নারী হয়ে অন্য নারীর উপর এত বিদ্বেষ কেন?
-“ব্যাপার না দাদী। আমিও আপনার নাতির মত। চলুন আপনাকে ঘুরিয়ে আনি।”
-“নাহ তোমারে বিশ্বাস করি না।”
-“একবার চড়ে দেখুন না দাদী, ধীরে চালাব। আপনার নাতি থাকলে না করতেন?”
জমিলা বেগমের বয়স হলেও মোটামুটি শখ আহ্লাদ পোষণ করেন মনে। ছেলের সাথে প্রায়ই এদিক ওদিক যেতেন বাইকে করে। কিন্তু আরিভকে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছেন না।
বলে উঠলেন, -“না না, যাইতাম না।”
-“দাদীইই! আমি ভীষন কষ্ট পাব। আসুন আপনাকে নিয়ে বাইকে ঘোরার অনেক শখ আমার। একটা চক্কর দিয়ে আসি, চলুন।”
জমিলা বেগম অনেকবার নাকচ করে রাজি হলেন শেষমেষ। আরিভকে ধরেই বাইকে উঠে বসলেন। আরিভ বাঁকা হাসল। বাইক স্টার্ট দিতে না দিতেই জমিলা বেগম চেঁচিয়ে উঠেন,
-“আল্লাহ গো! এই পোলা তোমার হুন্ডা এমন করে কেন?”
-“নতুন যুগের বাইকতো দাদী.. আপনি আমাকে ধরে বসুন।”
বাইক ঘুরিয়ে কিছুটা দূরে গেল আরিভ। আবার বাইক ঘুরিয়ে বাড়ির দিকে যেতে যেতে বলল,
-“দাদী এখন যদি বাইকটা উল্টে যায়? আপনার ডান হাত ভেঙে যায়? ব্যাথা পাবেন?”
ব্যাথা পাবেন? কথাটি শুনেই চমকে উঠল জমিলা বেগম। অনবরত চাপড় মারতে শুরু করল আরিভের পিঠে। চেঁচিয়ে বলল,
-“এই পোলা হুন্ডা থামাও! থামাও কইতাছি।”
-“আরেহ দাদী চিল।”
জমিলা বেগম দ্বিগুণ চেঁচানোর সুরে বললেন,
-“চিল! কিয়ের চিল মিল কইতাছো? হুন্ডা থামাও কইতাছি।”
-“পড়বেন না দাদী।”
-“তোমারে থামাইতে কইছি আমি!”
বাড়ির সামনে এসে বাইক থামালো আরিভ। জমিলা বেগম হন্তদন্ত ভঙ্গিতে নেমে যান। বুকে হাত রেখে শ্বাস নিলেন অনবরত। আরিভ হেলমেট নামিয়ে রাখল। হাসি আসছে ভীষণ, কিন্তু এই মুহূর্তে হাসলে চলবে না। জমিলা বেগম রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
-“অসভ্য পোলা! আমারে ডর দেহায় দিছে। পইড়া গেলে কী হইতো?”
-“কী আর হতো দাদী? অন্যের ভুলের কারণে নাফিয়ার মত হাত ভাঙ্গা অপয়া হয়ে যেতেন।”
-“তুমি কী ইচ্ছা কইরা আমারে ডর দেহাইলা?”
-“আপনার যেটা ভালো মনে হয়।”
-“ছিঃ ছিঃ! মুরুব্বীর কোনো সম্মান নাই।”
-“আছে দাদী। আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করি, নাফিও করে। কিন্তু আপনি? আপনি ওকে সম্মানের বিনিময়ে কষ্ট দেন। কী করেছে মেয়েটা? একটা হাতই তো নষ্ট। কী আসে যায় তাতে? আজ যদি আপনার সাথে দুর্ঘটনা ঘটতো? আপনার হাত থাকতেও আপনি পঙ্গু হতেন? তখন কী করতেন? আপনাকেও যদি এভাবে কেউ কষ্ট দিতো? মুখ বুঁজে সহ্য করতে পারতেন? অবশ্যই না। কিন্তু নাফি করছে, কারণ আপনি ওর দাদী হন। ঘরের বুজুর্গ, আপনাকে সম্মান আর ভালোবাসা সে দুটোই দেখাচ্ছে। মানুষ ততদিন অন্যের কষ্ট বুঝে না যতদিন না তার নিজের সাথে ঘটে। আজ আপনাকে আমার ভয় দেখানো উদ্দেশ্য ছিল না। উদ্দেশ্য ছিল আপনাকে বোঝানোর। হাত ভাঙার ভয় আপনাকে কীভাবে গ্রাস করেছে দেখেছেন? আপনার শুধু ভয়, আর যে এই খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে তার মনের অবস্থা একবার চিন্তা করুন।”
জমিলা বেগম আরিভের কথার কোনো জবাব দিতে পারল না। চুপচাপ এক দৃষ্টিতে চেয়ে শুনে গেল। আরিভ আবার বলল,
-“আর রইল নাফির বিয়ে নিয়ে চিন্তা? আমি করব বিয়ে ওকে। দেখেন নাত জামাই হিসেবে আমাকে কেমন লাগবে? নিশ্চয়ই দারুন?”
বলেই আরিভ বাইক ঘুরিয়ে বাড়িতে চলে গেল। জমিলা বেগমকে কথা বলার কোনো সুযোগ দেয়নি। রুচিতে বাধে তার সাথে কথা বলতে। অন্যদিকে জমিলা বেগম হা হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তার ঠিক মাথার উপরে বারান্দা। সিদ্দিক সাহেব পেছনে দুহাত বেঁধে দাঁড়িয়ে, আড়ালে। শুনেছেন সব কথা অগচরে থেকেই।
আরিভ ভেতরে চলে গেলে ডেকে উঠেন তিনি,
-“আম্মা উপরে আসুন, কথা আছে আপনার সাথে।”
চলবে…
#বৈরী_বসন্ত ২০
লেখা – আয্যাহ সূচনা
-“ঠিক এই কারণে অল্পবয়সী মেয়েদের প্রতি দূর্বল হতে নেই। বয়স কম হলেও একজন তাগড়া জোয়ান পুরুষকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরাতে সক্ষম। অস্ত্র তাদের অভিমান, ভুল বোঝা তাদের স্বভাব।”
কেঁদে কেঁদে নাক লাল বানিয়ে ফেলেছে নাফিয়া। সেদিনের বিষয়টি ভুলতে পারছে না। সাদিফের বলা কথাটি আগুনে ঘি এর কাজ করেছে। নাফিয়া দুটো ঘটনার যোগসূত্র স্থাপন করে বসে আছে। আরিভের লেখা বাক্যগুলো দেখে ভীষন রাগ হল।
রেগে জবাব দিল, -“আপনাকে ঐ দিবা আপুর সাথে ভালো মানাবে। সে দেখতে সুন্দরী, ভীষণ স্মার্ট। আমার মত অকেজো মানুষকে দিয়ে কী করবেন? দয়া করে পঙ্গু মেয়ের পিছু ছেড়ে সুস্থ সবল মেয়ের পিছু ঘুরেন। কাজে দিবে।”
আরিভ মেসেজটি পড়ে হাসল। নাফিয়ার রাগ এবার একটু বেশি বোধহয়। জবাব দিতে যাওয়ার পূর্বেই ব্লক করে দেওয়া হয়েছে তাকে। আরিভের চোখজোড়া এবার কপালে উঠে। ব্লক করে দিল? ফোন মেলায় সাথে সাথে। নাহ! ফোনেও যোগাযোগের সুযোগ রাখেনি। সেখানেও ব্লক। আরিভের ঠোঁটের হাসি মিয়ে আসে। দুষ্টু আভা সরে গিয়ে গাম্ভীর্যে ভরে গেল মুখ।
বারবার মস্তিষ্কে প্রশ্ন হানা দিচ্ছে, -“এবার কী হবে?”
________
সাদিফ প্রেমে পড়েছে। শুধু প্রেম নয় ভয়াবহ রকমের প্রেম। প্রেমে পড়তে না পড়তেই কেমন যেন বিরহ ঝেঁকে ধরল। তার প্রেম কেন পূর্ণতা পাচ্ছে না? এই প্রশ্নের জবাব নিতে এসেছে অভিজ্ঞ মানুষের কাছে। সে টোটকা দিবে, যার মাধ্যমে তার এই না হওয়া প্রেম পূর্ণতা পাবে। কিন্তু সেই অভিজ্ঞ মানুষের সাদিফের বিরহে নূন্যতম ভ্রুক্ষেপ নেই। তার দৃষ্টি সাদিফকে ডিঙিয়ে সামনের বারান্দায়। সে আঙিনায় পড়ে আছে মন, ফেরত পাওয়া যাচ্ছেনা কিছুতেই।
-“ভাই, কী করব বুঝতে পারছি না?”
আরিভ খুব বিরক্তবোধ নিয়েই সাদিফের কথায় মনোযোগ দিল। প্রশ্ন করল,
-“জীবনের কয় নম্বর প্রেম এটা?”
সাদিফ কিছুটা সংকোচ নিয়ে তাকায় আরিভের দিকে। তবে মিথ্যে বলল না। সত্য জবাবে বলল,
-“এটা দুই নম্বর। কিন্তু এটাই ফাইনাল ভাই।”
শেষ বাক্যে মাত্রাতিরিক্ত তেজ। যেন এরপর আর কিছুই নেই। আরিভ সাদিফকে বাজিয়ে দেখতে বলে উঠল,
-“যদি সে তোর ভাগ্যে না থাকে? তাহলে কী আর কারও প্রেমে পড়বি না?”
সাদিফ মাথা দুলিয়ে জবাব দিল, -“না।”
ছাদের এক কোণে সোফায় দুজন বসে। আরিভ পা জোড়া তুলে রেখেছে টেবলের উপর। ক্ষণে ক্ষণে চোখ ফেরাচ্ছে পাশের বারান্দায়। হতাশ হয়ে আবার সাদিফের দিকে তাকাচ্ছে। আরিভ বলল,
-“ধরেই নে মেয়েটি তোর ভাগ্যে নেই। এক না একদিন বিয়ে করবি? বউকে ভালোবাসবি না?”
সাদিফ বেচারা পড়ল মহাবিপদে। এবার কী জবাব দিবে? বউকেতো ভালোবাসতেই হয়। আরিভ সাদিফের বোকা মুখ দেখে হাসল। বলল,
-“মেয়েটা কে?”
-“নোহা আপুর ননদ।”
আরিভ ভ্রু কুঁচকে তাকাল। প্রশ্ন করল,
-“নোহার ননদকে কী করে পেলি তুই?”
সাদিফের মুখটা লাজুক হয়ে গেল। বিশ্রী লাগছে দেখতে। আরিভ আরও খানিকটা মুখ কুঁচকে নেয়। ছেলে মানুষের লজ্জা এমন জঘন্য কেন? সাদিফ বলল,
-“বিয়েতে দেখেছি।”
-“নাম কী?”
-“জানি না।”
-“কী আশ্চর্য! নামধাম জানিস না এসেছিস প্রেম করতে?”
-“নাম কী করে জানবো ভাই? এক পলক বিয়েতে দেখে আমার দিন দুনিয়া ঘুরে গেছে।”
আরিভ এখানে নিজের সংসারের আগুন নেভাতে অক্ষম। অন্যদিকে অন্যের প্রেমের আগুনে কেরোসিনের ঢালার কাজে তাকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।
আরিভ শুধায়, -“এখন আমার কী করতে হবে?”
-“আপনি নোহা আপুকে কল করবেন। সে আপনার সমবয়সী। আপনি তাকে ভুলিয়ে ফুসলিয়ে তার ননদের নাম, পরিচয় সব জেনে নিবেন।”
-“বললেই হয়ে গেল না?”
-“হতে হবে ভাই। আমি গভীর প্রেমে পড়েছি, যেমন আপনি নাফির।”
আরিভের মুখটা গম্ভীর হয়ে এল। তেরছা চোখে তাকাল সাদিফের দিকে। ছেলেটা মিটিমিটি হাসছে। এখনই কথা ঘুরাতে হবে নয়তো সাদিফ ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। আরিভ বলল,
-“কথা বলে দেখব।”
সাদিফ আশ্বস্ত হয়। আরিভের গোমড়া মুখের দিকে চেয়ে বলল,
-“আপনাদের কাহিনী বুঝি না ভাই। একদিন দেখি নাফির মন খারাপ, আরেকদিন আপনার। আপনাদের মধ্যে প্রেম চলে নাকি যুদ্ধ?”
আরিভ হতাশ গলায় বলে উঠল, – “দুটোই।”
-“আবার কী নিয়ে মান-অভিমান?”
-“কিছুই না।”
সাদিফ হাসল, – “ভীষণ ভালোবাসেন নাফিকে, তাই না?”
হুট করে আরিভ অস্থির গলায় বলতে লাগল,
-“ভীষণ! অসম্ভব রকমের ভালোবাসি। কখনও বলা হয়নি, কিন্তু ওকে ছাড়া থাকা আমার পক্ষে এই মুহূর্তে অসম্ভব। ও কী বুঝে? বুঝে না হয়তো। বুঝলে হয়তো বিশ্বাস করত। সে ব্যতীত আমার জীবনে অন্য কোনো নারী নেই। সামান্য অফিসের কলিগের সাথে কথা বলেছি তাতেই উল্টোপাল্টা ভেবে বসে আছে….”
সাদিফের গলা শুকিয়ে এল। এখানে তার অবদান অনেক বড়। যদি আরিভ জানতে পারে সেই সর্বপ্রথম আগুন ধরিয়েছে তাহলে আজ তার রেহাই নেই।
আরিভ অনুরোধের সুরে বলে উঠল, -“ওকে বুঝা! আমার কথা বুঝে না ও। কথা বলছে না, দেখা দিচ্ছে না। তোদের সাথে তো ওর বন্ডিং ভীষণ ভালো। ওকে নিয়ে আয় আমার কাছে একবার।”
সাদিফ জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মিনমিন করে বলল,
-“ইয়ে মানে… ভাই..”
আরিভ স্বাভাবিকভাবেই তাকালো সাদিফের দিকে। বলল,
-“কী?”
-“ভাই সরি।”
আরিভ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে শুধায়, – “কেন?”
-“ভাই আসলে…”
এবার সন্দেহ হতে শুরু করল আরিভের। সরু দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
-“কী ব্যাপার? আমতা আমতা করছিস কেন?”
সাদিফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল। একটু সরে দাঁড়াল আরিভের সামনে থেকে। পেছনের রাস্তা ক্লিয়ার। দূরে দাঁড়িয়েই বলল,
– “নাফিকে জ্বালানোর জন্য… না আসলে ওর পেট থেকে কথা বের করার জন্য আমি আর জোহান ওকে বাজিয়ে দেখছিলাম। পরীক্ষা করছিলাম ও আপনাকে ভালোবাসে কিনা?”
আরিভের চোখ গোলগোল হয়ে আসে। সন্দেহ প্রখর হয়, -“এরপর? এরপর?”
-“ভাই ওকে বলেছিলাম আপনার অফিসের এক সুন্দরী কলিগ আপনাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল।”
মাথায় বাজ পড়লো আরিভের। সে আগেই ভেবেছিল, নাফিয়া ছোটখাটো বিষয়ে ভয়ংকর রেগে যাওয়ার মেয়ে নয়। প্রতিক্রিয়া দিতে ভুলে গেল আরিভ। কিছুক্ষন হতবিহ্বল সাদিফের দিকে চেয়ে থেকে অগ্নিশর্মা হয়ে উঠল। পাশে থাকা ক্রিকেট ব্যাট তুলে তেড়ে এল সাদিফের দিকে। বলল,
-“শালা! তুই আমার সংসার হওয়ার আগেই ভাঙতে বসেছিস। আজ তোর একদিন কী আমার একদিন!”
সাদিফ পেছনের রাস্তা আগেই পরিষ্কার রেখেছে। ভো দৌঁড় লাগাল উল্টো ঘুরে। জানতো এমন কিছুই একটা হবে। আরিভও থেমে নেই। পেছন পেছন ছুটল। বলল,
-“আমি যদি বিয়ে না করতে পারি তোর কপালেও বিয়ে নেই, বলে রাখলাম। দাঁড়া তুই! দাঁড়া বলছি!”
-“ভাই মাফ করে দেন!”
সিঁড়ি দিয়ে দৌঁড়ে নামতে নামতে বলল সাদিফ। নিজের কপাল নিজেই চাপড়াচ্ছে। কেন বলতে গেল? কিন্তু না বললে তাদের মধ্যে সমস্যা আরও বেড়ে যেত। আরিভ দরজা অব্দি গিয়ে থেমে যায়। কোমরে হাত রেখে বাহিরে উঁকি দিয়ে বলল,
-“প্রেম করবি না তুই? করাচ্ছি তোকে প্রেম। শালা আমার ঘরে আগুন দিয়ে নিজের সংসার পাততে এসেছে!”
ছেলের চেঁচামেচি শুনে দৌঁড়ে নিচে এসেছেন শিরীন বেগম। হাতে ক্রিকেট ব্যাট আর ছেলেকে পাগলা ষাঁড়ের মত ফুঁসতে দেখে এগিয়ে গেলেন। টিশার্টের কলার চেপে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
-“চেঁচাচ্ছিস কেন তুই? আমি কতটা ভয় পেয়েছি জানিস?”
আরিভ অসহায়ের মত মুখ বানিয়ে বলল,- “তুমি ভয়ের কথা বলছো, মা? এদিকে আমার সংসারে আয়োজন করে আগুন দেওয়া হয়েছে।”
শিরীন বেগমের মুখে বিস্ময়। কীসব পাগলের প্রলাপ জপছে ছেলে? তিনি প্রশ্ন করলেন,
-“কীসের সংসার? তোর আবার কীসের সংসার? এই তুই কী পালিয়ে বিয়ে টিয়ে করে ফেলেছিস?”
-“এবাড়ি থেকে ওবাড়ি পালানো যায়?”
-“কী!”
-“আরেহ আম্মা কীসব আজেবাজে বকছো? বিয়ে করব ঠিক আছে, কিন্তু পালিয়ে? এই বিশ্বাস তোমার?”
শিরীন বেগম কোমরে হাত রেখে প্রশ্ন করলেন, -“আমি তোকে বিশ্বাস করি এটা তোকে কে বলেছে?”
মায়ের অপমানটা অদৃশ্য থাপ্পড়ের মত পড়ল। ভেবেছিল বলবে, হ্যাঁ আমার ছেলে এমন করতেই পারেনা। অগাধ বিশ্বাস আছে আমার ছেলের প্রতি। তার বিপরীতে হতাশ করলেন শিরীন বেগম। আরিভ লম্বাটে নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
-“আম্মাজান আপনার পায়ে পড়ি আমার বিয়ের ব্যবস্থা করেন, প্লীজ। আমি আর দেরি করতে চাচ্ছি না।”
ঝড়ের বেগে এসে থাপ্পড় পড়ল ডান গালে। আরিভ গালে হাত রেখেছে সাথেসাথে। মায়ের দিকে তাকাল। শিরীন বেগম বললেন,
-“লজ্জা নেই, না? কীরকম নির্লজ্জের মত মায়ের কাছে বিয়ের কথা বলছিস?”
-“তাহলে না জানিয়ে যদি পালিয়ে বিয়ে করি তুমি খুশি হবে?”
আরেক গালে থাপ্পড় পড়ার আগে গালে হাত রাখল আরিভ। শিরীন বেগম রাগান্বিত চোখে চেয়ে চলে গেলেন উপরে। আরিভ পিছু ছুটল। এসে দাঁড়াল রান্নাঘরে। শিরীন বেগম খুন্তি নাড়তে নাড়তে বললেন,
-“চোখের সামনে থেকে দূর হ।”
-“আম্মা…”
শিরীন বেগম ঘুরে তাকালেন। নিজেকে দমিয়ে বলেন,
-“কী? কী চাই তোর?”
-“নাফি..”
শান্ত কন্ঠে সোজা জবাব দিল আরিভ। ছেলের চোখটা কেমন যেন জ্বলজ্বল করছে। দুষ্টু চেহারায় সারাক্ষণ শিরীন বেগমকে জ্বালাতন করা আরিভের মুখভঙ্গি এখন ভিন্ন।
আরিভ শিরীন বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে আবদার রাখল,
-“মা, ওর দাদী ওকে যেকোনো সময়, যে কারো হাতে তুলে দিবে। ও মুখ ফুটে প্রতিবাদও করতে পারবে না। আমি বিয়ে করতে চাই, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।”
শিরীন বেগম নিজের কাজে মনোযোগ দিলেন ফের। কী যেন ভাবলেন আনমনে। আরিভ সময় দিল তাকে। কিছুই বলল না সেই সময়টুকুর মাঝে। শিরীন বেগম হুট করেই আরিভের দিকে তাকান। মৃদু হেসে বললেন,
-“যদিও তোর বাবাকে আগেই জানিয়েছি। তারপরও আজ একবার জিজ্ঞেস করি। তারপর নাহয়…”
কথা পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই আরিভ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো শিরীন বেগমকে। শিরীন বেগম আলগোছে হাসলেন। সারাদিন যতই বকাঝকা করুক, মারধর করুক। একমাত্র ছেলের প্রতি তার স্নেহ অত্যাধিক।
___________
-“অসম্ভব! আমি এই বিয়া মানমু না। তোরা যদি দিতে চাস আমারে ছাড়াই দে বিয়া। আমি এই বাড়ির কে?”
সিদ্দিক সাহেব সাবলীলভাবেই জবাব দিলেন,
-“আপনি এই ঘরের মুরুব্বী। আপনার সিদ্ধান্তকে প্রাধান্য দেওয়া হবে।”
সিদ্দিক সাহেব আর রেশমা বেগম বসে আছেন বসার ঘরে। মধ্যের সোফায় জমিলা বেগম। নাফিয়া ঘরে বিছানার ঠিক মধ্যিখানে বসে। তার মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ খালি হয়ে আছে। এইতো কিছুক্ষণ পূর্বে যা ঘটেছে সেটা তার কল্পনাতীত ছিল। শিরীন বেগম এসেছিলেন। বেশ হাসি মুখেই বলে গেছেন একটি বাক্য,
-“আমি নাফিকে আমার আরিভের বউ করতে চাই।”
ঠিক এরপর থেকেই নাফিয়ার মস্তিষ্ক সম্পূর্ণটাই অচল। এমন অস্থির লাগছে কেন তার? হৃদপিণ্ডের গতির কী হল? এমনভাবে লাফাচ্ছে কেন বেরিয়ে আসবে। গলা শুকিয়ে আসছে, কিন্তু পানির গ্লাস হাতে তোলার সাহস নেই।
হালকা কথার আওয়াজ বসার ঘর থেকে ভেসে এল। রেশমা বেগম বলছেন,
-“আপনি চেয়েছেন নাফির যেন বিয়ে হয়। আপনার ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে। এখন আপনি কেন বেঁকে বসছেন?”
সিদ্দিক সাহেব সায় দিলেন। তাল মিলিয়ে বললেন,
-“রেশমা ঠিক বলেছে। আপনি নাফির বিয়ে চেয়েছিলেন আমরাও আরিভের সাথে বিয়ে দিতে রাজি। এতে আপনার কোনো আপত্তি থাকার কথা না। আরিভের সাথে বিয়ে হলে আমার মেয়ে আমার চোখের সামনে থাকবে। এর চেয়ে ভালো সম্বন্ধ হয়না।”
নিজের পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন জমিলা বেগম। সত্যিকার অর্থে সে নাফিকে সুখী দেখতে চান না। আরিভের প্রতি তার বিতৃষ্ণা জেগেছে সেদিন, যেদিন মুখের সামনে আয়না তুলে ধরেছিল সে। কিন্তু লাভ হল না। জমিলা বেগম শুধরাননি। জবাবে বললেন,
-“আমার ওই পোলারে পছন্দ না। আমার লগে বেয়াদবি করছে।”
সিদ্দিক সাহেব প্রথমবার হাসলেন মায়ের কথায়। বুঝেন সে সবকিছুই কিন্তু কখনও মুখের উপর জবাব দেননি। আজ বলেই বসলেন,
-“বেয়াদবি না, মা। আপনাকে সত্যিটা বলেছে।”
-“তুই শুনসোস?”
-“জি।”
-“তারপরও এই পোলার লগে মাইয়া বিয়া দিতে চাস?”
-“আপনিই তো বলেন, আমার এই পঙ্গু মেয়েকে কে নিবে? যে নিতে চায় আল্লাহর ওয়াস্তে যেন দিয়ে দেই। দিতে চাইছি।”
ছেলের এমন বিরূপ আচরণ সহ্য করতে পারলেন না জমিলা বেগম। তার একমাত্র হাতিয়ার কান্না। মিথ্যে অশ্রু বিসর্জন দিতে শুরু করলেন। বলেন,
-“ঠিক আছে। তোরা যা করার কর, আমি এই বিয়াতে শরিক হমু না।”
-“এমন করবেন না আম্মা, এবার ক্ষ্যান্ত দেন। অনেক করেছেন।”
জমিলা বেগম উঠে চলে গেলেন। সিদ্দিক সাহেবও উঠে দাঁড়ান। পেছন থেকেই বলেন,
-“নাফি রাজি থাকলে বিয়েটা হচ্ছে মা। এই শুক্রবারই হচ্ছে। মেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন। আমি একজন লোভী লোক হয়ে উঠেছি, মেয়েকে কাছে রাখার সুযোগ আমি হাতছাড়া করব না।”
চলবে….