#সুখান্বেষণ
#আরশিয়া_জান্নাত
আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভয় কী জানেন? আমি কোনো ভুল করলে এর শাস্তি সরাসরি আমি পাবোনা, বরং আমার মা পাবে। অবশ্য এটাই আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন শাস্তি।
আমি বড় হবার পর আমার বাবা কখনো আমার গায়ে হাত তোলেননি। তবে ছোটখাটো যেকোনো ইস্যুতে আমার সামনেই আমার মা কে প্রচুর মারধর করেছেন। আমি যদি কখনো প্রতিবাদ করতে যেতাম দ্বিগুণ আঘাত করেছেন। শুধু আমার কেন যেকেউ যদি কখনো বোঝানোর চেষ্টা করতো বা কোনো কারণে কিছু বলতো তাদেরকে বলার শাস্তি স্বরূপ আম্মুকে আধমরা করা ছিল আমার বাবার খুব সাধারণ অভ্যাস। তাই আমি বা আমার মা ভাই ভয়ে কাউকে কখনো কিছু বলতাম না। আমার জীবনের এই কালো অধ্যায়ের কথা এক আল্লাহ ছাড়া কাউকে বলার সাহস হয়নি কখনো। ধীরে ধীরে যত বড় হই আমার ভয় বাড়তে থাকে। আমি খেয়াল করি আমি কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ বা চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ নিতে পারিনা। আমার বুক ধড়ফড় করে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, হাত পা কাঁপতে থাকে। মনে হয় আমার মা কে বুঝি মেরেই ফেলল… একজন সন্তানের জন্য এটা কত বড় অভিশাপ বলে প্রকাশ করা যাবেনা।
তাই আমি আমার বাবাকে প্রচুর ভয় পেতাম, অন্য পাঁচটা বাবা-মেয়ের সম্পর্কের মতো সুন্দর সম্পর্ক আমাদের ছিল না। আমি তাকে মনিব ভাবতাম, যে ৩বেলা খাওয়াচ্ছে-পড়াচ্ছে,থাকার আশ্রয় দিচ্ছে। তাই মাথা নত করে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা আমার কর্ম। এখন সেখানে বিন্দুমাত্র সম্মান বা ভালোবাসা থাকুক কি না থাকুক।
আমি যখন ইন্টারে পড়ি একটা বিয়ের প্রপোজাল আসে। লোকটা আমার চেয়ে দ্বিগুণ বয়সের অধিকারী। কিন্তু প্রচুর বড়লোক। শহরের কেন্দ্রস্থলে নিজস্ব বাড়ি, নিউমার্কেটে কয়েকটি দোকান সহ নানা রকম ব্যবসা বাণিজ্য করে এলাহী অবস্থা। আমার বাবার কাছে এই সমন্ধ সোনায় সোহাগার মতো বলা বাহুল্য। তিনি তো মহা উৎসাহে পাত্রপক্ষের সঙ্গে আলাপচারিতা করছেন। রোজ নিয়মিত কল করে খোঁজ খবর নিচ্ছে, কবে দেখতে আসবে প্রভৃতি পরিকল্পনা নিয়ে বেশ আনন্দিত তিনি। ঘটক থেকে শুনেছেন আমাকে তাদের ভীষণ পছন্দ হয়েছে তাই বলা যায় দেখতে আসলে সরাসরি আকদ হয়েই যাবে। আমার বাবাও সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সত্যি বলতে আমার এই বিয়েতে একদমই মত ছিল না। একেতো লোকটা প্রচুর বয়স্ক তার উপর যখন শুনলাম তার বাকি ছোট ভাইদের বিয়ে হয়ে গেছে, তার ছোট ভাইয়ের বৌ তখন মাস্টার্সে পড়ছে…. চিন্তা করেন বড় বৌ হিসেবে আমি কত ছোট হবো সবার??
আর সবচেয়ে বড় কথা আমার বাবা ছেলে সম্পর্কে কোনো খোঁজখবর নিচ্ছিলেননা, তিনি ঘটকের কথা শুনেই সব বিশ্বাস করে বসে ছিলেন। বাড়তি খোঁজ-খবর নেয়া যে জরুরি এটা যেন তিনি জানেন ই না। আমি অবশ্য বাবার এসবে অভ্যস্ত ছিলাম। এই পর্যন্ত আমার যতো বিয়ের প্রপোজাল এসেছে কোনোটাতেই তিনি না বলার মতো কিছু খুঁজে পাননি। তার মতে প্রত্যেকটা প্রপোজাল ই বেস্ট। তার মেয়েকে কেউ বিয়ে করতে চাচ্ছে এটাই যেন সৌভাগ্যের বিষয়। এখন ছেলে শিক্ষিত হোক কী না হোক, ছেলের চেহারা চরিত্র পারিবারিক অবস্থা কোনোকিছুই ম্যাটার করেনা টাকা দিয়ে ই তিনি সব মেপে ফেলেন।
আমি এসব জানি বলেই বিয়েতে আগ্রহী হতাম না। কিন্তু সরাসরি কিছু বললে আমার মায়ের উপর মানসিক ও পাশবিক অত্যাচার শুরু হবে এই ভয়ে আমি শুধু তাহাজ্জুদে সিজদায় লুটিয়ে পড়তাম। কত রাত যে কাঁদতে কাঁদতে খেই হারিয়েছি। মহান রবের নিকট অভিযোগের ঝুলি মেলে বসতেই ভেতরের সব কষ্ট চোখের পানি হয়ে ঝরতো। সেই কান্না থামানোর ক্ষমতা আমার আর থাকতোনা যতক্ষণ না তিনি রহমতের পরশ আমার অন্তরে দিতেন। এমনো গেছে আমি কান্নার চোটে মুখ ফুটে কিছু বলতে পাতাম না, শুধু আল্লাহ বলেই কাঁদতে থাকতাম। সেই মোনাজাতে আর কোনো শব্দ মুখ থেকে বের হতোনা। আমি জানি আমাকে কিছু বলতেও হবেনা, উনি অন্তর্যামী উনি ঠিক ই সব জানেন। এর ফলাফল ও আমি পেতাম। বিয়ে গুলো কিভাবে যেন পিছিয়ে যেত। আমার বলা ছাড়াই সবকিছু বাতিল হতো। যে মানুষ রবের কাছে চাওয়া শিখে যায় তাকে আর দুনিয়ার কারো কাছে চাইতে হয়না এই ধ্রুব সত্যিটার জ্বলন্ত প্রমাণ আমি বহুবার পেয়েছিলাম। আমি সবসময় আল্লাহ কে বলেছি আমার অভিভাবক যেন তিনি হন। আমার বিয়ের ফয়সালা থেকে শুরু করে আমার জীবনের সবকিছুর সিদ্ধান্ত যেন তিনি নেন অন্য কোনো মাখলুকের সিদ্ধান্ত যেন না চাপান। আমার অভিভাবক কে আমি বিশ্বাস করিনা, তিনি যেন আমাকে হেফাজত করেন সবরকম অনিষ্ট থেকে। আমি জানি না এইসব দোয়া ঠিক না ভুল। তবে ঐ সময়ে আমার মুখ থেকে এসবই বের হতো। আমি সবসময় তাহাজ্জুদে এসবই বলতাম। এই নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাইতাম।
“তানহা এই তানহা দরজা খোল। ঘুমাচ্ছিস নাকি এখনো?”
মায়ের ডাকে আমার ধ্যান ভাঙে। আমি দরজা খুলে দেখি আমার মমতাময়ী মা হাসিমুখে তাকিয়ে আছেন। আমি তার হাসিমুখ দেখে বুঝতে পারি এবারের ফাড়াও কেটে গেছে।
“কি হয়েছে ডাকছো কেন?”
“তোর পছন্দের কচুশাক রান্না করেছি, চেখে দেখ তো সব ঠিক আছে কি না?”
আমি চামচ কেটে একটু খেয়ে বললাম, হুম সেই হয়েছে। আম্মু সাথে সাথে বললো, “গরম গরম ভাতের দিয়ে খেতে বসে যা, মজা লাগবে।”
“এখনো খাওয়ার সময় হয়নি তো। আগে আগে খেয়ে ফেললে পড়ে ক্ষুধা লেগে যায়।”
“ক্ষুধা লাগলে লাগবে, প্রয়োজনে পরে আবার খাবি। সমস্যা কী? দেখি খেতে বস, আমি লেবু কুটে আনি।”
আমি টেবিলে গিয়ে ভাত বেড়ে পানির গ্লাসে পানি ঢেলে বসি। আম্মু কচু শাকের কথা বলে আনলেও টেবিলে নানা পদের তরকারি দেখে বুঝতে বাকি থাকেনা উনার মন আজকে সত্যিই অনেক ভালো। তবু খুঁচিয়ে বলি,” এতো কিছু রান্না করলে যে কেউ আসবে নাকি বাসায়?”
“নাহ কে আসবে! এমনিতে মন চাইলো একটু ভালোমন্দ খেতে তাই আর কি…”
আমি খুব আরাম করে কচুশাক মাখিয়ে ভাত খাচ্ছিলাম তখন ই হঠাৎ বাবা আসে। টেবিলে এক পলক চেয়ে নিজের রুমে গিয়ে কাপড় বদলায়। আম্মু এই আকস্মিক আগমনে একটু ভয় পেয়ে যায় বটে। তার উপর টেবিলে এতো পদের খাবার দেখে রেগে আগুন হয় কি না সেই আশঙ্কায় উনার চেহারার রং বদলে গেল। উনি মূলত সেজন্যই আমাকে আগে আগে খাওয়া তে চেয়েছিলেন। কথায় বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। আমি দ্রুত খাওয়া শেষ করে উঠে যেতে চাইছিলাম তখন ই কাঁচের গ্লাস ভাঙার শব্দ হয়। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে উনি বলেন, “মাইয়ার বিয়া ভাঙছে এই ফূর্তিতে পোলাও কোরমা করছোস না? তোর জন্য ই এই মাইয়ারে বিয়ে দিতে পারতেছিনা আমি। খা*কি মা*গী আমার সংসারের শান্তি নষ্ট করতেছোস তোরা… ”
খাওয়া পাতে চোখের পানি ফেলা আমার জন্য নতুন না। এমনকি রোজার সময় সাহরী কিংবা ইফতারেও বহুবার চোখের পানি মিশিয়ে খেয়েছি। এই লোকটা কেন জানি আমাদের খাওয়া সহ্য করতে পারেনা। বাইরে থেকে এসে যদি দেখে কেউ কিছু খাচ্ছে উনার পিত্তি জ্বলে উঠে। তাই আমরা ভাইবোনেরা উনার আসার আগে বা পরে খেতে বসি। এমন কত হয়েছে দরজার শব্দ শুনে আধ খাওয়া অবস্থায় উঠে পালিয়েছি। শুনতে আজগুবি লাগলেও এটাই সত্যি। আমাদের আয়েশ বাবার সহ্য হয়না, আমরা শান্তিতে ফ্যানের নিচে বসে কথাবার্তা বলছি এই জিনিসটা উনার চোখের বিষ। তাই আমরা কখনোই এই সময়গুলোতে একত্রে বসতাম না, খেতাম না। পারলে এই সময়টায় গর্ত খুঁড়ে নিজেকে আড়াল করতাম।
আমি দ্রুত উঠে নিজের রুমে চলে যাচ্ছিলাম তখন ই আম্মু কে মারার শব্দ পাই। ভয়ে আমার গা হিম হয়ে আসে,আমি নড়তে পারিনা। আম্মু সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন শব্দ না করতে কিন্তু আঘাতের ব্যথায় ককিয়ে উঠেন। আমি কোনোমতে দরজা আটকে বসি। মারধরের শব্দ এড়াতে কানে আঙ্গুল গুঁজে বসে থাকি। রাগে চিৎকার করতে করতে তিনি আমার দরজার সামনে এসে গালিগালাজ করতে থাকে, দরজায় দু চারটা লাথি দিয়ে বলে যায়, “তুই মাগীরে আমি এই ঘরে বেশিদিন রাখমুনা। যেমনে পারি লাত্থি মাইরা ঘর থেইকা বাইর করমু। আমার টাকায় খাইয়া খাইয়া তেল জমাস তোরা মাদারচোদেরা…..অলক্ষীর ঘরে অলক্ষী তোরে বিয়া করবো কে, যে চেহারা নিয়ে জন্মাইছোস ভালা কেউ তাকাইতো ও না। কয়দিন পর আর কিচ্ছু কইরা খাইতে পারবিনা। আমি অভিশাপ দিলাম তোরে ভাতের পানি চোখের পানি এক কইরা খাবি পরের বাড়িত…..”
আমি মুখ চেপে কান্নার শব্দ আটকাই। ভাগ্যিস আমার ভাইটা ঘরে নাই। বয়স কম হলেও সে আজকাল প্রতিবাদ করতে চায়, যদি ও থাকতো সেই উসিলায় আরো কয়েকদফা মারধর হতো।
আমি সুদিনের স্বপ্ন দেখি। সেই স্বপ্নে বিভোর হয়ে চাকু হাতে নিয়ে ও হাতের রগ কাটি না, ফ্যানে উড়না বেঁধেও ঝুলে পড়ি না। আমি মরে গেলে আমার মায়ের দুর্দশা আরো বাড়বে, পাড়া প্রতিবেশী কলঙ্কিত করুক না করুক আমার বাবাই আমার নামে কুৎসা রটাবে এতে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তাই মাটি কামড়ে পড়ে থাকি আর রবের কাছে চাইতে থাকি এই জাহান্নাম থেকে আমার ও আমার মা ভাইয়ের মুক্তি।
।
“তাহু আমার মনে হয় তোর আফ্রিদ ভাইয়াকে সুযোগ দেয়া উচিত। বেচারা রোজ তোর জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। অথচ তুই পাত্তা ই দেস না।”
“দেখ সোমা অযথা এসব বলিস না। এসব প্রেম ভালোবাসা আমার কর্ম না।”
“তুই বেশিই আনরোমান্টিক। এরকম হ্যান্ডসাম আশিক যদি আমার পেছনে ঘুরতো আমি ঠিকই রাজী হয়ে যেতাম। তুই তো তাকাস ও নাই, একদিন খেয়াল করে দেখিস ভাইয়া আসলেই অনেক হ্যান্ডসাম।”
“এতো যখন পছন্দ হয়েছে যা না গিয়ে বল মনের কথা পটিয়ে ফেল। আমার মনে হয়না তোকে দেখে কেউ মানা করতে পারবে। তার রুচির দূর্ভিক্ষ দেখে আমার বরং করুণা হয়।”
সোমা আমার পিঠে চড় দিয়ে বললো,”সবসময় নিজেকে এতো নিচু ভাবিস কেন? তুই কত সুন্দর আয়নায় দেখেছিস কখনো? তোর চোখে কত মায়া, হাসলে তোকে কি সুন্দর লাগে! তোর ফেইস কাটিং ও মাশাআল্লাহ দারুণ। এরকম সৌন্দর্যের অধিকারী সবাই হয়না বুঝলি!”
“আসল লাইনটাই যে মিস করে গেলি পাখি, গায়ের রং যে চাপা তা বললিনা?”
“অতো চাপাও না যে মেনশন করতে হবে।”
“সত্যি কথা হচ্ছে আমাকে তুই অনেক ভালোবাসিস, আমাকে দেখার চোখ তোর সুন্দর। তাই বলে তোর বেস্ট ফ্রেন্ড সুন্দরী এই ভ্রান্ত ধারণা প্রচার করিস না, লোকে টিটকারী করবে।”
“তুই বেশিই নেগেটিভ তাহু। নিজেকে নিজেই যদি এমন আন্ডারেস্টিমেট করিস মানুষ আর কী করবে?”
“মানুষের যা করার সে করবেই, এখন আমি নিজেকে ভালোবাসি কি না বাসি। বাদ দে তো চল ক্লাসে যাই। ”
সোমা মুখ ভার করে আমার হাত ধরে বললো,”নিজেকে ভালোবাসতে শিখ। আর কেউ বাসবে এই আশা করিস না তো করিস না। নিজেকে নিজেই বেস্ট ট্রিট দে, লাইফ তো একটাই…”
আমি সোমাকে বোঝাতে চাই না আমার আত্মবিশ্বাস কেউ একজন রোজ কি জঘন্য ভাবে গুড়ো করে। আমার চেহারা নেই, আমাকে ফকিন্নির ছেলেও নেওয়ার রুচি করবে এমন সব কথাও আমার জন্মদাতা কত অনায়াসে বলে। মেয়েরা নাকি জীবনসঙ্গীর মাঝে বাবার প্রতিচ্ছবি কল্পনা করে। বাবার মতো কেয়ারিং হবে, আগলে রাখবে এমন ভাবনায় নাকি থাকে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। আমিও ভয় পাই আমার জীবনসঙ্গী যদি বাবার মতো হয়? তার মধ্যে যদি আমার বাবার প্রতিচ্ছবি থাকে? সে যদি আমাকে প্রচুর মারধর করে, আমার জীবন নরক করে তোলে? বাপ-মা তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে? আমি কিভাবে সহ্য করবো সেসব? আমি আম্মুর মতো ধৈর্যশীলা নই। এতো সহনশক্তি আমার নেই। তাই কোনো পুরুষ নিয়ে আমার ফ্যান্টাসির বদলে ভয়টাই বেশি কাজ করে। আমি আমার জীবনে এমন কোনো কিছু জড়াতে চাই না যা আমার মায়ের যন্ত্রণা আরো কষ্টকর করে তোলে। আফ্রিদ কেন পৃথিবীর কোনো সুদর্শন পুরুষ ই আমার এই কঠিন তপস্যা ভাঙতে পারবেনা। আমার জীবনের একটাই লক্ষ্য নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে এই নরক থেকে বেরিয়ে আসা। বাবা নামক মানুষটার ছায়া কখনো না মারানো। হ্যাঁ আমি তাকে ঘৃণা করি, প্রচুর ঘৃণা করি। তার প্রতি আমার কোনো মায়া মমতা নেই, টান নেই। এই পৃথিবীর বুকে আমি কারো কাছে তার নামে কিছু বলার সাহস রাখিনা। নিজের বাবার নামে কি বলবো? মানুষজন খুব জাজমেন্টাল। তাদের কাছে বাবা-মা মানেই ফেরেশতা। ওদের বিরুদ্ধাচরণ করা মানে কুলাঙ্গার সন্তান, অবাধ্য বেয়াদব সন্তান। ছোটবেলায় মাইর দিয়ে সোজা করেনাই দেখে এই অবস্থা সহ নানারকম কথা শোনা।
তাই আমার সব অভিযোগ উপরওয়ালার কাছে তোলা। আমি যা বলার তাকেই বলে রেখেছি। আমার বিশ্বাস আর কেউ না বুঝুক উনি আমাকে বোঝেন, আমার অনুভূতি আমার যন্ত্রনা সব তার জানা। তিনি নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করবেন, বিচার দিবসে সবকিছুর বিচার করবেন।
এই প্রত্যাশায় আমি দিনের পর দিন বেঁচে থাকি। একটা সুদিনের আশায় দুর্দিন গুলো মুখ বুজে সহ্য করি।
তারপর হঠাৎ আমার জীবনে একজন আসে। যে আমার জীবন টা সম্পূর্ণরূপে বদলে দেয়। আমার যন্ত্রনার প্রশমনকারী হয়ে এসে প্রতিটি ক্ষতে প্রলেপ লাগিয়ে দেয়। আমার মনে হয় আমার রব আমাকে নিরাশ করেন নি। তিনি আমাকে আমার চাহিদার চেয়ে বেশি দিয়েছেন। অনেক অনেক বেশি দিয়েছেন। কৃতজ্ঞতায় আমার মাথা নুইয়ে আসে চোখ ভিজে যায় আনন্দে। মনে হয় আসলেই কষ্টের পরে স্বস্তি আসে….
চলবে…