#সুখান্বেষণ (পর্ব:৩)
#আরশিয়া_জান্নাত
আমাদের বাসায় সবসময় দেখেছি আব্বু নাকের ডগায় রাগ নিয়ে বসে থাকেন। আর আমরা সবাই ভয়ে তাকে এড়িয়ে পালাই। পারলে ঐসময় বাসায় না থাকাই শ্রেয়। কেননা রুমে চুপচাপ বসে থাকলেও বকা শোনা লাগে সারাদিন রুমে কী করি, আবার কাজ করলেও বলে তাকে দেখানোর জন্য কাজ করছি। এ যেন জলে কুমির ডাঙায় বাঘের মতো অবস্থা। আমি আর ভাই তাই ছুটির দিনে পড়ি মহা ঝামেলায়। মানুষ ছুটি পেলে আরাম করতে বা বাসায় ঘুমাতে পছন্দ করলেও আমাদের কাছে ছুটির দিন মানেই সিংহের গুহায় আটকা পড়ার মতো ভয়ংকর ব্যাপার। কিন্তু আমার শ্বশুরবাড়ির চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমার শ্বশুর ভীষণ ঠান্ডা মানুষ। তার সামনে ছোটবড় সবাই হৈ হুল্লোড় করে বাড়ি মাথায় তুললেও তিনি কোনো শব্দ করেন না, চুপচাপ এমনভাবে পত্রিকা পড়েন যেন ঐসব কিছুই না। আমার ননদ দেবর তো বাবার সামনেই বলতে থাকে কে লাভ ম্যারেজ করবে তো কে এরেঞ্জ। জুমাবারে তিনি ৩ছেলেকে ১০/১১টার দিকেই রান্না করতে ঢুকে যান। রান্না শেষে সব ছেলেকে নিয়ে নামাজ পড়ে এসে ওরা সবাই মিলে বাড়ির মেয়েদের খাবার পরিবেশন করেন। উনার মতে এই দিনটা হচ্ছে আমাদের তথা মেয়েদের ছুটির দিন। তাই সবাই আগ্রহভরে অপেক্ষা করে কবে শুক্রবার আসবে আর বাবার হাতের রান্না খাবে। আমার শাশুড়ি আবার একটু রাগী ভাব ধরে রাখার চেষ্টা করেন। ছেলেমেয়েদের শাসন করার লক্ষ্যে গুরুগম্ভীর থাকলেও উনার সঙ্গে মনের কথা বলতে কারোই ভয় লাগেনা। ওরা ওদের সবকথা বন্ধুর মতো করে বাবা মায়ের কাছে বলে। এই ব্যাপারটা আমার কাছে ভীষণ ভালো লাগে। আসলে বাবা-মায়ের মতো আপন কেউ হয়না। ওদের কাছে যে সুপরামর্শ আমরা পাবো অন্যদের কাছে তা নাও পেতে পারি। সবচেয়ে বড় কথা উনারা আমাদের ক্ষতি চাইবেন না। তাই আমার মনে হয় ছেলেমেয়েরা যদি তাদের আস্থাস্থল ভাবতে পারে, তবে বেপথে পা বাড়ানোর সম্ভাবনা অনেকখানি কমে যায়।
বাবা কখনো খালি হাতে বাসায় ফেরেন না। রোজ হাতে করে কিছু না কিছু নিয়ে আসবেন ই। বিশেষ করে ২মেয়ের জন্য চকোলেট চিপস আচার সহ নানারকম জিনিস। আমি আসার পর থেকে আমার জন্য ও আনেন। কিছু দিন আগেও আমি ভাবতাম এসব খাওয়ার বয়স আমার চলে গেছে, কিন্তু বাবা এমনভাবে এসব করেন মনে হয় আমরা এখনো খুকি হিহিহি…
আমার দিনগুলো অনেক ভালো কাটছিল আলহামদুলিল্লাহ!
একদিন তাশরিফ হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকে বললো, হুমায়রা দ্রুত ব্যাগপত্র গুছিয়ে নাও কিছুক্ষণের মধ্যেই বের হতে হবে।
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললাম, “এখন! কোথায় যাবো?”
“আরেহ এতো প্রশ্নের উত্তর দেবার সময় নেই। ৬/৭দিন পড়ার মতো কাপড় নাও, কুইক।”
বলেই সে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলো।
আমি কি নিবো কি নিবোনা আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, আন্দাজে কিছু কাপড়চোপড় লাগেজে ভরে দ্রুত রেডি হয়ে নিলাম। সে ফোনে কথা বলতে বলতে রুমে এসে লাগেজ নিয়ে বের হতে ইশারা দিলো। আমি তার পিছু পিছু নিচে আসতেই মা বললেন, “সাবধানে থাকবি, আর রাত বিরেতে বের হবিনা। দিনকাল ভালোনা মাথায় রাখিস।”
আমি তাদেরকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে বসলাম অথচ জানিনা গন্তব্য কোথায়। সে ড্রাইভ করতে করতেও কতজনের সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছে প্রায় ২০মিনিট পর সে ফ্রি হয়ে বললো, “তোমাকে দৌড়ের উপর নিয়ে আসার জন্য খুব স্যরি। আসলে হঠাৎ মাথায় ভুত চেপেছে ট্যুরে যাবো। বন্ধুদের বলে সব ম্যানেজ করছিলাম তাই কথা বলার ফুরসত পাইনি।”
“কোথায় যাচ্ছি?”
“সেন্টমার্টিন।”
“সিরিয়াসলি!!”
“হ্যাঁ। তুমি বললে না তোমার অনেক শখ সেন্টমার্টিনে চন্দ্রবিলাস করার। আকাশে দেখলাম একাদশীর চাঁদ। তাই ভাবলাম এটাই মোক্ষম সময় সেখানে যাওয়ার।”
আমি বিস্ময়ে চোখ বড়বড় করে তার দিকে চেয়ে রইলাম, কোনদিন এমনি কথায় কথায় এটা বলেছিলাম নিজেরো মনে নেই। তার ঠিক ই মনে আছে।
“কিন্তু আমি যে স্যান্ডেল নিলাম না! নীল-সাদা হাওয়াই শাড়িটাও নিলাম না। আগে বলবেন না ধুর…”
“আরেহ এতো টেনশনের কী আছে? ওখানে গিয়ে কিনে নিবে।”
“ট্যুরিস্ট স্পটে সবকিছুর দাম বেশি নেয়। তাছাড়া যা আছে তা আবার নতুন করে কিনে অপচয় করার মানে হয়না।”
“আচ্ছা যাও আমি তন্ময়কে বলবো পার্সেল করে পাঠিয়ে দিতে। হ্যাপি?”
“হুম..”
আমরা রাত ১০টার মধ্যেই কক্সবাজার পৌঁছে গেছি। আমাদেরকে রিসিভ করতে আনোয়ার ভাই এলেন। হেসে বললেন, “তুই শালা কখনোই মানুষ হবিনা। কত কষ্টে তোর জন্য রুম ম্যানেজ করেছি জানিস!”
“বন্ধু আছিস কোন কাজে?”
“দেখেছেন ভাবি কৃতজ্ঞতা নাই বান্দার কাছে। নেহাত ই আপনাকে নিয়ে বেড়াতে আসবে বলেছে বলে নয়তো ওকে আজ বীচে ঘুমাতে দিতাম।”
“আমার কোনো প্যারা নাই, আমি নিশ্চিন্তে ঢেউয়ের শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমাইতাম।”
ভাইয়া আমাদের কে রুমের চাবি দিয়ে বললো, ” আজকের রাতটা কষ্ট করে এই রুমটায় ম্যানেজ কর আমি চেষ্টা করবো আরো বেটার দিতে। অন সীজন তো হিউজ কাস্টমার হ্যান্ডেল করতে হচ্ছে।”
“আচ্ছা আচ্ছা বুঝছি তুই বওত বিজি। ”
আমি রুমে ঢুকে বললাম, “এতো সুন্দর রুম দিয়েও ভাইয়া এতো অস্বস্তিবোধ করছিল!”
“ছেলেটা খুব আন্তরিক বুঝলে। পারে না যে কলিজাটা খুলে দিয়ে দিতে। আমার একদম পিচ্চি কালের দোস্ত বলে কথা!”
“বাহ!”
“হুমায়রা রাতে কী খাবে বলো? অরৃডার করে দেই।”
“আপনার পছন্দমতো কিছু নিন, আমার বিশেষ খিদে নেই।”
“বললেই হলো খিদে নেই! তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি বাসায় কল করে বলছি পৌঁছানোর কথা।”
ডিনার শেষে বেলকনিতে বসে ঢেউয়ের গর্জন শুনছিলাম, উনি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “রাতে সাগর দেখেছো?”
“নাহ..”
“চলো তাহলে দেখে আসি।”
“এতো রাতে? বিপদ-আপদ হবেনা?”
“তুমিও না বেশিই ভীতু। এখানে সিকিউরিটি আছে বলেই বলছি। তোমার কী মনে হয় আমি তোমাকে অনিরাপদ জায়গায় নিবো?”
“নাহ সেটা বলিনি, কখনো রাতে যাইনি তো তাই জানি না।”
“চলো তাহলে..”
রাতে সমুদ্র বিলাস সম্পর্কে সবসময় শুনেছি, সিনেমায় দেখেছি। রিয়েলে কখনো এক্সপেরিয়েন্স করার সুযোগ হয়নি। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম অনেকেই আছে। আমি একাই এতো দিনের বোকার রাজ্যে বাস করেছি রাতে সাগরপাড়ে যাওয়া যায়না। তাশরিফ আমার হাতে হাত রেখে নরম বালিতে হাঁটছে আর নানান কথা বলছে। আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তার কথা শুনছি। হঠাৎ সে দাঁড়িয়ে বললো, “হুমায়রা লেট মি ক্রিয়েট দ্য বেস্ট মেমোরি..” বলেই সে আমাকে কোলে তুলে নিলো। আকাশে চাঁদ, সামনে বিশাল জলরাশি, তার তীরে একটা নবদম্পতি। এতো সুন্দর একটা মোমেন্ট আমার জীবনে তৈরি হবে আমি কল্পনাও করিনি। মনে মনে আফসোস হচ্ছিলো এই মুহুর্তের স্মৃতি ক্যামেরা বন্দি করা হলোনা। আমি তাশরিফের গলা জড়িয়ে কানের কাছে বললাম, “আপনি আমার জীবনে আল্লাহর দেওয়া সেরা উপহার! আমি পুরো জীবনেও হয়তো আপনাকে পাওয়ার কৃতজ্ঞতা আদায় করে শেষ করতে পারবোনা…”
সে হেসে বললো, “আমি চাই আমাদের জীবনের সায়াহ্নে এসেও তুমি একই কথা রিপিট করতে পারো।”
।
পরদিন দুপুরে উনি পার্সেল নিয়ে রুমে ঢুকে বললো,”নাও তোমার হাওয়াই শাড়ি চলে এসেছে।”
“আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা সেন্টমার্টিন যাবো কখন?”
“কাল সকালে ইনশাআল্লাহ। আমাদের সঙ্গে আরো ৪জন যাবে, তাদের জন্য ওয়েট করছি।”
“আরো ৪জন?”
“হ্যাঁ আমার ফ্রেন্ড আর ওদের ওয়াইফ। আমি তোমাকে নিয়ে বেড়াতে এসেছি শুনেই ওরাও চলে এসেছে। দলবেঁধে ঘুরতে মজা বেশী তাই কেউ ই সুযোগ হারাতে চায়না। তুমি টেনশন করোনা ওরা সবাই খুব ভালো, আর প্রাইভেসি নষ্ট হবেনা। চন্দ্রবিলাস তুমি আর আমি একাই করবো….”
“আমি সেটা বলিনি।”
“বলোনি তবুও ক্লিয়ার করলাম।”
বিকেলে বীচে গিয়ে আমি ঝিনুক কুড়িয়েছি, বালিতে নাম লিখেছি, তাশরিফের কাঁধে মাথা রেখে ঢেউ গুনেছি। তারপর সী-ফুড ট্রায় করেছি। চাওমিনে বেবি অক্টোপাস দেখে আমার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। আহারে ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকেও আমরা রক্ষা দিলাম না, গোগ্রাসে সাবাড় করছি! আমার এমন কথা শুনে তাশরিফ হাসতে হাসতে শেষ।
আমি গাল ফুলিয়ে বললাম, “আপনি এভাবে হাসছেন কেন!”
“আহা রাগ করছো কেন! এরকম ভাবলে তুমি কিছু ই খেতে পারবেনা। হালাল খাবার আল্লাহ আমাদের জন্য ই সৃষ্টি করেছেন, আমরা খাবো না তো কে খাবে! মন খারাপ করোনা.”
“হুহ!”
সেন্টমার্টিনে যাওয়ার পথে দেখলাম স্টিমারের চারপাশে গাংচিল উড়ছে। এতো সুন্দর পাখিগুলো দলবেঁধে উড়ছে দৃশ্যটা ভীষণ মনোরম। সবাই ভিডিও করায় ব্যস্ত থাকলেও আমি মনোযোগ দিয়ে ব্যাপারটা উপভোগ করছিলাম। আল্লাহর সৃষ্টি যত দেখি ততোই মুগ্ধ হই। এতো নিপুণভাবে তিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন প্রশংসা না করে উপায় নেই।
রুমানা ভাবি ও তাহমিনা ভাবি সেলফি প্রিয় মানুষ। তারা নানা ভঙ্গিতে সেলফি তুলতে তুলতে শেষ। আমাকে মাঝেমধ্যে তাদের দলে টেনে নেন। আমি ভদ্রতার হাসি দিয়ে দু একটা ছবি তুলে কেটে পড়ি। আসলে উনারা দেখতে খুব সুন্দর আর মডার্ন। তাদের সামনে নিজেকে বেমানান মনে হয়। যদিও উনাদের আচার আচরণে কোনো প্রভাব দেখা যায়নি, কিন্তু নিজের ই অস্বস্তি লাগে।
রেজোর্টে গিয়ে আমাকে বিছানায় শুয়ে যেতে দেখে তাশরিফ ভড়কে গেল, চিন্তিত গলায় বললো,” কি হয়েছে তোমার শরীর খারাপ লাগছে?”
“জানিনা, খুব টায়ার্ড লাগছে একটু ঘুমাবো।”
“কোনো অসুবিধা হলে বলিও। আমি আছি তো..”
“হুম”
উনি জানালার পর্দা টেনে ঘর অন্ধকার করে চলে গেলেন। আমি মন খারাপ করে শুয়ে রইলাম। এই মুহূর্তে নিজেকে পরশ্রীকাতর বলতেও বিরক্ত লাগছে। ওরা সত্যিই অনেক সুন্দর। সে তুলনায় আমি কিছুই না। তাশরিফের বন্ধুরা সবাই খুব হাই কোয়ালিফাইড, তাদের ওয়াইফরাও সেরা। তাশরিফ নিজেও দারুন। লম্বা চওড়া সুদর্শন ছেলে, ভীড়ের মাঝে যার দিকে যে কারো চোখ আগে পড়বে এমন আকর্ষণীয় চেহারা মাশাআল্লাহ। কিন্তু আমি সেরকম নই। গায়ের রং না কালো না ফর্সা, মাঝামাঝির এক স্কেল নিচে বলা যায়। কবি লেখকরা স্নেহ করে এই রংকে মায়াবতী নাম দেয়। চেহারায় আহামরি সৌন্দর্য নেই তবে কাছের মানুষরা বলে অগ্রাহ্য করার মতো নই।
আমি নিজেকে নিয়ে কখনোই আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না, এখনো নই। তবে এটা সত্যি তাশরিফ আমার জীবনে আসার পর নিজেকে নিয়ে ভাববার ফুরসত পাই নি। সে এমনভাবে ট্রিট করতো নিজের খুঁতের কথা ভুলেই বসেছিলাম। আজ ওদের মাঝে নিজেকে আবিষ্কার করার পর না চাইতেও মন খারাপেরা জেঁকে বসেছে। সেটা না দেখাতেই ঘুমানোর বাহানায় একাকিত্ব বেছে নিয়েছি।
মাথাভর্তি ওভারথিংক নিয়ে ঘুম আর জেগে থাকার মাঝামাঝি স্তরে ঝুলতে ঝুলতে কাঁধের কাছে গরম নিঃশ্বাস টের পেতেই চমকে ঘুরে ফিরি, তাকিয়ে দেখি তাশরিফ। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললাম, “আপনি?”
সে আমার গলায় নাক ডুবিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো, “বৌকে রুমে রেখে মিসকিনের মতো ওদের মাঝে বসে থাকতে বলছো?”
“তাই না!”
“হুম। তুমি যদি জানতে বৌ ছাড়া জীবন কত কঠিন, তবে বুঝতে।”
“আপনারা ছেলেরা এতো হা হুতাশ কিভাবে করেন বলুন তো, বিয়ের আগে মেয়েরা জামাই নিয়ে এতো ঢং করে না যতোটা আপনারা করেন।”
“তুমি করোনি বলছো?”
“হ্যাঁ করিনি।”
“তাহলে তো আরো ভালো। সংযমী নারী!”
“আপনি একদম বেশি। আমাকে ঘুমাতে দিন।”
“ঘুমাও না, না করেছে কে?”
“এভাবে পেঁচিয়ে রাখলে ঘুমানো যায়?”
“কেন যাবে না? তোমার অভ্যাস করা উচিৎ। আমি এভাবে সবসময় আষ্টেপৃষ্ঠে থাকবো।”
অগত্যা কিছু না বলে চোখ বুজে থাকাই শ্রেয় মনে হলো।
কতক্ষন ঘুমিয়েছি হিসেব নেই। কানের কাছে অনবরত রিংটোন বাজতে থাকায় বাধ্য হয়ে কল রিসিভ করতে উঠাই লাগলো। ওপাশ থেকে আম্মু চেঁচিয়ে বললেন,”কতক্ষন ধরে কল করছি ধরিস না কেন? টেনশনে আমার জান চলে যাচ্ছিলো।”
“ঘুমে ছিলাম তাই বলতে পারি না।”
“এই অসময়ে ঘুম? কাজকর্ম না করে এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস কেউ কিছু বলেনা? তুই দেখি আমার নাম খারাপ করছিস।”
“আমি বাসায় নেই তো, তোমার জামাইয়ের সাথে বেড়াতে এসেছি সেন্টমার্টিন।”
আম্মু দ্রুত টপিক পাল্টে বললো,” কবে গেছিস?”
“২দিন হলো। কেন কল করছো?”
“তোর মামা মামীরা বেড়াতে আসছে, বলতেছিল তোর কথা। তাই ভাবছি বলবো জামাইকে নিয়ে আয়।”
“উনাদের থাকতে বলো ক’টা দিন। আমরা ৪/৫ দিনের মধ্যেই চলে আসবো ইনশাআল্লাহ।”
“তাড়াহুড়োর দরকার নেই। গেছিস যখন ভালোমতো ঘুরে নে। ওরা থাকবে কিছুদিন সমস্যা নেই.”
“আচ্ছা উনাদের কে আমার সালাম দিও। আমি ফিরলেই দেখা করবো।”
“আচ্ছা।”
তাশরিফকে পাশে না দেখে আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে খুঁজতে বের হলাম। ক্ষুধায় পেটের ভেতর বোম ফুটছে যেন। কিন্তু জনাবের কোনো হদিস নেই। অগত্যা ফোন কানে তুলে চারদিকে তাকাচ্ছি দেখি দূরে সবাই বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমি তাদের দিকে এগিয়ে গেলাম। খানিকটা কাছে এগোতেই শুনি রুমানা ভাবি বলছেন, “সত্যি বলতে আমি ভেবেছিলাম তাশরিফ ভাইয়া ফাইজা কে বিয়ে করবে। ও দেখতে কী দারুণ ছিল! ওদের দুজনকে একসঙ্গে যা মানাতো।”
রনি–“শুধু তুমি কেন এটা আমাদের সার্কেলের সবাই ই ভাবতো।”
নাঈম–“আরেহ ধুরর তোমরা অযথাই এসব বলতেছো। ফাইজা ওকে পছন্দ করলেও তাশরিফের ওর প্রতি কখনোই ইন্টারেস্ট ছিল না।”
তাহমিনা — “বিয়ের আগের কাহিনী বাদ দাও তো। অতীত নিয়ে সমালোচনা না করাই ভালো। বর্তমানে ওরা হ্যাপি হলেই হলো।”
রুমানা– “সেটা ঠিক। তবে ভাইয়া অনুযায়ী ভাবি একটু নিরস পড়ে গেলো না। উনি আরো বেটার ডিজার্ব করেন।”
রনি– “পাগল তুমি। মানুষকে বাহ্যিকভাবে জাজ করা বন্ধ করো। তাশরিফ শুনলে প্রচুর ক্ষেপবে। ”
রুমানা –আমি কী ওদেরকে বলতে যাচ্ছি নাকি। তোমাদের কে কথার কথা বললাম আর কি।
আমি ওদের কথা শুনে আর এগোতে পারিনি। উল্টোপথে রুমে চলে আসি। সারাদিন এমনিতেই মন উসখুস করছিল, তার উপর তাদের কথোপকথন শুনে ওভারথিংক কেই বাস্তবসম্মত মনে হলো। আমি সেজন্যই মানুষের ভীড়ে যাই না। উনি যখন বলেছিলেন উনার বন্ধুরাও ওয়াইফসহ আসবেন আমার মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তাকে বুঝতে দিতে চাইনি। আমি জানি আমি সুন্দর না, আমি নিরস। আমার গাঁয়ের রং ময়লা। তবুও কেউ যখন বলে আমার সহ্য হয়না। ভীষণ কষ্ট হয়। নিজেকে তুচ্ছ লাগে। আমার মন খারাপের রেশ পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। আমি ভুলে যাই আমার পেটে খুব ক্ষুধা ছিল…
চলবে…