সুখান্বেষণ পর্ব-০৪

0
2

#সুখান্বেষণ (পর্ব:৪)

#আরশিয়া_জান্নাত

তাশরিফের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে, এটাকে অনেকেই মিরাকেল মনে করে। আমার আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে পাড়াপড়শি সবাই তাকে দেখে একটা কথাই বলেছিল, তানহার ভাগ্য অনেক ভালো, এতো সুন্দর বর পেয়েছে, বড়লোক পরিবার পেয়েছে। ওর আর কী লাগে!

কেউ কেউ টিপ্পনী কেটে বলেছে, সুন্দর মানুষের চয়েজ আসলেই সুন্দর হয়না।

আমি জানি না সে আমাকে কেন পছন্দ করেছিল, বা তার পরিবার কেন দেখতে এসেই পাকা কথা দিয়ে গিয়েছিলেন। তবে এটা জানি আমি আসলেই সুশ্রী নই। হয়তো সত্যি ই ভাগ্যগুণে এমন বর আর শ্বশুরবাড়ি জুটেছে।
তবে সবসময় মানুষের সমালোচনা নিতে পারি না, মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে চেঁচিয়ে বলি আমি এতোটাও ফেলনা নই যতোটা আপনারা ভাবছেন। আমি লেখা পড়া করা শিক্ষিত মেয়ে, সংসারের সব কাজ পারি, বুকের ভেতর হাজারো কষ্ট চেপে হাসিমুখে কথা বলতে পারি, নম্র ভদ্র মেয়ে হিসেবে আমার বেশ সুখ্যাতি আছে। আমাকে নিয়ে কেউ মন্দ কথা বলতে পারবে না।
গাঁয়ের রং দিয়ে আমাকে জাজ করলে আমাকে তাশরিফের অযোগ্য মনে হলেও অন্যান্য দিকে আমি অযোগ্য নই।
কিন্তু মায়ের শিক্ষা অনুসারে আমাকে নিরবতা অবলম্বন করতে হয়।

রুমে ঢুকে দেখি তাশরিফ বসে আছে। আমাকে দেখে বলল,”কোথায় গিয়েছিলে? এতোক্ষণ কিছু না‌ খেয়ে বসে আছ। ক্ষুধা পায়নি!”

“আপনাকে খুঁজতে গিয়েছিলাম। কল রিসিভ করছিলেন না কেন?”

“কল করেছিলে? কই আসেনি তো।”

“হয়তো নেটওয়ার্ক এঙ্গেজড ছিল। ”

“হতে পারে। দেখি এসে বসো, তোমার জন্য কিছু খাবার অর্ডার করেছিলাম খেয়ে নাও।”

আমি তার পাশে গিয়ে বসলাম। উনি প্লেটে খাবার তুলতে তুলতে বললেন, “সাইকেল চালাতে পারো?”

“নাহ কখনো চালাই নি।”

“পারলে ভালো হতো, এখানে সাইকেল চালানোর মজাই আলাদা।”

“আমার বাইক সাইকেল এসবে খুব ভয় লাগে। মনে হয় পড়ে যাবো।”

“আচ্ছা।”

আমি আনমনে খুঁটে খুঁটে খাচ্ছিলাম দেখে উনি তুড়ি বাজিয়ে বললো, “মনোযোগ কোথায়?”

“আপনি লাঞ্চ করেছিলেন?”

“হুম। তোমাকে গভীর ঘুমে দেখে আর ডাকিনি। এতো সুন্দর করে ঘুমাচ্ছিলে আমার তো ইচ্ছে ই করছিল না উঠে যেতে। ওদের ফোনকলে বিরক্ত হয়ে উঠে গিয়েছিলাম।”

আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম, “একটা কথা জিজ্ঞেস করি সোজাসাপ্টা জবাব দিবেন?”

“হুম করো?”

“আমাকে বিয়ে করেছিলেন কেন?”

“মানুষ বিয়ে কেন করে?”

“উহু সোজাসাপ্টা বলুন।”

“বোকা মেয়ে পছন্দ না হলে কেউ বিয়ে করে?”

“আমাকে পছন্দ হবার মতো কিছু কী আছে?”

“নেই বলছো?”

“আছে বলছেন?”

উনি আমার চিবুক তুলে বললেন, “নিজেকে কখনো মনোযোগ দিয়ে দেখেছো আয়নায়? দেখলে বুঝতে আল্লাহ কত যত্ন করে বানিয়েছেন তোমাকে।”

ব্যস এইটুকু ই যথেষ্ট ছিল আমার সব বিষন্নতা কেটে যাওয়ার। কেউ একজন ঠিক ই বলেছে মেয়েদের মনের আবহাওয়া স্বামীর উপর নির্ভরশীল।

রাতে সবাই একসঙ্গে খাওয়ার সময় রনি ভাইয়া আর নাঈম ভাইয়া তাদের কলেজ লাইফের স্মৃতিচারণ করে কত গল্প যে বললো। কিন্তু তাশরিফ নিরবদর্শকের মতো চুপচাপ সব শুনলো নিজে কিছু বললো না। খাওয়া শেষে সবাই যার যার রুমে চলে গেলেও আমি আর উনি বাইরেই রয়ে গিয়েছিলাম। সারাদিন ঘুমিয়ে আপাতত আমার চোখে ঘুম নেই।
রাতের নির্জনতায় আমি আর সে চুপচাপ বসে আছি রেজোর্টের এক বেঞ্চিতে। নিরবতা ভেঙ্গে উনি বললেন, “তুমি কী ওদের জন্য আনকমফোর্টেবল ফিল করছো?”

“না তো, এমন ভাবছেন কেন?”

“এমনি জিজ্ঞেস করছি।”

“তেমন কিছু নয়।”

“কালকে পূর্ণিমা মনে আছে?”

“হ্যাঁ…”

“আমি কিন্তু অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছি এই দিনটার।”

“কেন?”

“বলবো না.. কালকে জানতে পারবে।”

আমি উৎফুল্ল চিত্তে বললাম, “এখন তো আমার পেটে গুড়ুম গুড়ুম করতে থাকবে। বলুন না কারণ কী?”

“ভালো হয়েছে, চলতে থাকুক। আমি একা একা কেন এক্সাইটেড থাকবো, তুমিও থাকো। ”

“এটা ঠিক না।”

“ঠিক বেঠিক রাখো। চলো রুমে যাই, ঘুম পাচ্ছে।”

আমি গাল ফুলিয়ে বললাম,আপনি অনেক খারাপ। ইচ্ছে করে একটা কথা তুলে দিয়ে এখন ঘুমানোর তাড়া দেখাচ্ছেন।”

“সবুরে মেওয়া ফলে। একটু সবুর করো।”

হাতে কোনো কাজ না থাকায় বসে বসে মোবাইল স্ক্রল করছিলাম আর ভাবছিলাম ফাইজা মেয়েটাকে নিয়ে। সে কী উনার ক্লাসমেট ছিল, নাকি অন্য কেউ। রনি ভাইয়ারা কত স্মার্ট এতো ঘটনা বললো অথচ ভুলেও এই নামটা আর একবার ও উচ্চারণ করেনি। মেয়েদের মনে কিছু একটা ঢুকলে সহজে বের হতে চায়না। আমার মতো ওভারথিংকারের তো না ইইই। না পারছিলাম মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে না পারছিলাম এই বিষয়ে ভাবতে। বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে উনার পাশে শুয়ে পড়লাম। এপাশ ওপাশ করছি দেখে উনি ঘুম জড়ানো গলায় বললো, “এতো ছটফট করছো কেন কী হয়েছে?”

“ঘুম আসছে না”

উনি আমাকে নিজের কাছে টেনে চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললেন, “ব্রেইন কে রেস্ট দাও, একদম শান্ত হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করো। ”

কী আর করার না চাইতে চোখ বুজে পড়ে রইলাম।

পরেরদিন আমাদের পুরোটা সময় কেটেছে ছেঁড়া দ্বীপে। ঐখানে যাওয়ার পথটা এতো ডেঞ্জারাস হবে জানলে আমি সত্যিই আসতাম না। একেতো ট্রলারে করে আসতে হয়েছে, তার উপর কিনারে না নামিয়ে অনেকটা পথ ডিঙি নৌকায় করে আসতে হয়। কিনারায় বড় বড় প্রবালের জন্য ট্রলার যেতে পারেনা। অনেক সাবধানে তাশরিফ আমাকে সমতল পর্যন্ত এনেছে। তবে বাকিরা খুব এক্সপার্ট ছিল, তারা এর আগেও এখানে এসেছে বলে আমার মতো ঝাক্কি পোহাতে হয়নি।
ছেলেরা সবাই সাইকেলিং করছিল, আর আমি বসে বসে ডাব খাচ্ছিলাম আর রুমানা ভাবিদের টিকটক করার দক্ষতা দেখছিলাম‌। এদিকে আমার বাইরে সেলফি তুলতেও লজ্জা লাগে মনে হয় সবাই তাকিয়ে দেখছে। এই লজ্জার জন্য কত দৃশ্য পছন্দ হওয়া সত্ত্বেও ক্যামেরা বন্দি করতে পারিনি। অথচ মানুষ এখন রাস্তায় নাচানাচি করে ভিডিও বানায়। কত কৌশল অবলম্বন করে এডিটিং করে টিকটক সেলিব্রিটি হয়! কি করলাম জীবনে!
লাইফে মোমেন্ট ক্রিয়েট করার পরিকল্পনা আমার ছিল না তা নয়। এই সেন্টমার্টিন ঘিরে আমারও নানা কল্পনা জল্পনা ছিল। দারুচিনি দ্বীপ মুভি দেখার পর ভেবেছিলাম আমিও হাওয়াই শাড়ি পড়ে পাথরের উপর দাঁড়িয়ে আঁচল উড়িয়ে গাইবো,
“দূ্র দ্বীপবাসিনী
চিনি তোমারে চিনি
দারুচিনির ও দেশে
সুমন্দ ভাষিণী…

যদিও আমার দ্বারা এটা সম্ভব হবেনা আমি জানি।
(আজ এখানে উপস্থিত হয়ে আরো সিওর হয়েছি এটা আমার দ্বারা কখনোই সম্ভব নয়। থ্রিপিস পড়ে এসেও যেমন ভেজালে পড়েছি শাড়ি পড়লে আজ আর ইজ্জত থাকতোনা। সিনেমাতে সবকিছু যত সহজ মনে হয় রিয়েলে তা অনেক কঠিন।)
তাই পরে পরিকল্পনা বদলেছি ঠিক করলাম বিয়ের পর বরের সাথে সেন্টমার্টিনের স্বচ্ছ পানিতে পা ডুবিয়ে চন্দ্রবিলাস করবো। বিশাল বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে উঠা ছোট্ট দ্বীপে বসে ডিসাইড করবো জীবনের পরিসর যতো ক্ষুদ্র ই হোক না কেন, আমরা প্রতিটা দিন মনভরে উপভোগ করবো।
আমার রোমান্টিজম খুব সাদামাটা ধরনের। প্রিয় মানুষটার হাতে হাত রেখে পুরো জীবন পার করতে চাওয়ার মতো সাদামাটা। পড়ন্ত বিকেলে পাশাপাশি বসে জীবনানন্দ দাশের কবিতা আওড়ানো, কিংবা এক কাপ চায়ে অবসর যাপনের মতো সাধারণ কিছু। আমি সবসময় এমন একটা নীড়ের সন্ধানে ছিলাম, যেখানে বসে শান্তিতে বিশ্রাম নেওয়া যায়। সর্বক্ষণ আতঙ্ক গ্রাস করেনা, ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে খাওয়া লাগে না। অসাধারণ কিছু চাইনি আমি, চেয়েছি খুব সাধারণ একটা জীবন। যে জীবনে না অতিরিক্ত সুখ আছে না অতিরিক্ত দুঃখ।

“তানহা তুমি সিওর এরকম জায়গায় এসে কোনো ছবি তুলবেনা?”

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম। তখন তাহমিনা ভাবি বললো,”তুমি বুঝতে পারোনি ভাবি তানহার পার্সোনাল ফটোগ্রাফার ঠিকই ছবি তুলে নিচ্ছে,তাই আলাদা করে ছবি তোলার প্রয়োজন নেই।”

আমি ভাবির দৃষ্টি অনুসরণ করে বামে তাকিয়ে দেখি তাশরিফ আমার ছবি তুলছে।

রুমানা ভাবি হেসে বললেন, “এমন রোমান্টিক হাজবেন্ড থাকলে আর কী চাই! তুমি অনেক লাকি ভাই..”

তাহমিনা, “বিয়ের বছর সব ছেলেরাই রোমান্টিক সাজে। সময় গড়ালে রূপ বদলায়। নাঈমকে দেখো না আগে সারাক্ষণ পিছু পিছু ঘুরতো যেই ঘরণী হয়ে বসলাম অমনি সব আগ্রহ ঠুস..”

রুমানা, “তা যা বলেছ। পুরনো হয়ে গেলে চোখের তারা চোখের বালি হতে সময় নেয় না।”

আমি ঠোঁটের কোণে হাসি টেনে বললাম, “কাল কি হবে দুশ্চিন্তা করে বর্তমান নষ্ট করা উচিৎ নয়। পুরনো হয়ে গেলে সবকিছুর দাম কমে যায় এটা ঠিক না, দেখা যায় মশলা যতো পুরনো হয় তার সুগন্ধি ততো বাড়ে। নতুন পোলাও চালের চেয়ে পুরনো পোলাও চালের ভাত বেশি মজা হয়। তেমনি আপনাদের সম্পর্কের সুঘ্রাণ কিন্তু এখনো আমরা টের পাই।”

তাহমিনা,”তুমি খুব সুন্দর উদাহরণ দিলে তো! এভাবে ভেবে দেখিনি। আসলেই সবকিছু পুরোনো হলেই যে নষ্ট হয় তা নয়, সম্পর্কের ক্ষেত্রে সময় যত গড়ায় ভীত ততোই মজবুত হয়।”

বিকেলে রেজোর্টে ফেরার পর তাশরিফ সেই যে আসছি বলে বেরিয়েছে তার আর খবর নেই। এর মধ্যে দুই বাসায় ভিডিও কল করে সবার খোঁজখবর নেওয়া শেষ।
রনি ভাইয়া ৩০০০৳ দিয়ে একটা কোরাল মাছ কিনেছেন, আজ রাতে ওটা বারবিকিউ করে পরোটা দিয়ে খাওয়া হবে এমনটাই প্ল্যান হলো। আমি এর আগে মাছের বারবিকিউ খাইনি। তাই ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং মনে হলো। কিন্তু আমার উনি কোথায় হারালেন কে জানে। আমরা সবাই একসাথে বসে মাছ রিলেটেড খোশগল্প শুনছিলাম। রনি ভাইয়ের নাকি মাছের প্রতি অনেক আকর্ষণ। তিনি ইলিশের সীজনে সরাসরি ফিশারি ঘাট চলে যান তাজা মাছ নিতে। আর সুযোগ পেলেই পদ্মার ধারে যাওয়া তার সাধারণ ব্যাপার। যেখানেই ভালো মাছের খবর পান সেখানেই দৌড় দেন, তাহমিনা ভাবির মতে রনি ভাই মেছোভুত।
রনি ভাইয়া মজা করে বললেন, “আমরা এমন বংশের ছেলে সুযোগ পেলে হাঙরেরো কালা ভুনা করে খাই।”

আনোয়ারায় তার বাড়ি হবার সুবাদে প্রায় ই নাকি বিশাল আকৃতির মাছ তীরে দেখা যেত। তার দাদার দাপটে সেইসব বড় মাছ অন্য কেউ কেনার সাহস করতো না। তাই তিনি এরকম কথা বলে মজা নিতে পছন্দ করেন।

খাওয়া শুরুর কিছুক্ষণ আগে তাশরিফের আগমন ঘটে। আলোচনা ততক্ষণে মাছ থেকে মেছোভুতে চলে গেছে। ভুতুড়ে সব ঘটনা শুনতে শুনতে আমার কলিজা শুকিয়ে কাঠ। কিন্তু আমি ভয় পাচ্ছি এমনটা কাউকে বুঝতে দিলাম না। ওরা আমাকে ভীতু ভেবে আরো ভয় দেখাতে চায় যদি! তাশরিফ আমার পাশে বসতে বসতে বললো, “তোদের সব আড্ডার শেষ ঘুরেফিরে এই ভুতের গল্পতেই হয়। ওদের কথা কানে নিও না কেউ। ওরা তিলকে তাল বানিয়ে বলে। আমার সামনে ঘটা ঘটনাগুলো কে পরে এমন ভাবে উপস্থাপন করেছিল আমি নিজে ই তব্দা খেয়েছিলাম এতোসব কখন ঘটলো!”

নাঈম, “ধুরর ও মিথ্যা বলতেছে। আমাদের সাথে যা ঘটছে ও নিজেও টের পায়নাই।”

রনি, “ও তো এমন বলবেই ওর সাহস বেশি ছিল কি না। মনে নেই হোস্টেলের ঐ সাদা শাড়ি পড়া পেত্নীটার কথা। রাতে কেউ ভয়ে দখিন দিকে যেতো না, অথচ তাশরিফ ঐখানে বসে সিগারেট টানতো..”

আমি বিস্মিত গলায় বললাম, “উনি সিগারেট খেতো!”

“খেতো মানে! এক বসায় এক প্যাকেট শেষ করার মতো ছেলে ছিল ও। মেয়েরা ওকে সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে কনফেস করতো হাহাহা কী দিন ছিল সেসব…”

তাশরিফ তার পিঠে কিল বসিয়ে বলল, “আমাকে ফাসাচ্ছিস কেন? আমার নাম করে তোরা কত গিফট হাতিয়েছিস বলবো?”

নাঈম,”শুধু গিফট এক মেয়ে তো মাঝেমধ্যে রান্না করেও পাঠাতো। ”

রুমানা,” তোমরা তো অনেক শেয়ানা বিয়ের আগের কত কীর্তি বের হয়..”

রনি ভাইয়া আমতা আমতা করে বললো, “আরেহ না আমি একদম ভালো ছিলাম। কোনো মেয়েকে চান্স ই দেই নাই। আমার তো তোমাকে ছাড়া কারো দিকে চোখ ই যায় নি।”

নাঈম ভাই মুখ চেপে হাসি আটকালো।
আমি বিড়বিড় করে বললাম, “কালে কালে আরো কত কী বের হবে!”

উনি শুনতে পেয়ে বললো, “ওসব বহু আগের ঘটনা। নতুন নতুন ছাড়া পেয়ে পাখনা গজিয়েছিল তো তাই আর কি। আমি সিগারেট খাই না এখন সত্যি..”

আমি মাথা নেড়ে বললাম, “এ বিষয়ে পরে আলাপ হবে”

উনি ফোঁস করে শ্বাস ফেলে বললেন, “শালা রনি তোরে আমি কি করমু দেখিস..”

ডিনার শেষে আমি রুমে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলে উনি আমার হাত ধরে ইশারা দিলেন বসতে। সবাই উঠে যাওয়ার পর বললেন, “গতকাল কী বলেছিলাম ভুলে গেছো?”

“না ভুলি নি। আমি কোনোকিছু সহজে ভুলি না..”

“তুমি ওদের কথায় আমার উপর রাগ করছো? যৌবনের শুরুতে ছেলেরা কত কী করে, আমার ও সিগারেট এর নেশা ধরেছিল। কিন্তু বিশ্বাস করো ওটা ছেড়েছি আরো অনেক আগে।”

“এতো কনফেশন আসতো সেই সম্পর্কে কী বলবেন?”

“কনফেশনে কী এসে যায়? আমার কেউ ছিল না এটা ধ্রুব সত্যি। আমার জীবনের ১ম ও শেষ নারী তুমিই।”

আমার মনে যাই চলুক না কেন তার সামনে আর কিছুই প্রকাশ করলাম না। আমি হিংসুটে প্রচুর হিংসুটে। আমার প্রিয় কিছু তে কারো অংশীদারিত্ব মেনে নেওয়া কঠিন আমার জন্য। সেখানে সে তো আমার একান্ত মানুষ। যদি কখনো জানি ও তার কেউ ছিল আমার সহ্য হবে না। আমি তার মনে অন্য কারো অস্তিত্ব কল্পনা করতেও সাহস পাচ্ছি না। তবে এটাও সত্যি মানুষের মন বড়ই অদ্ভুত। সেখানে কী চলে সেটা আল্লাহ ছাড়া কেউ বলতে পারেনা। ভালোবাসা রং বদলায়, ধারণার চেয়ে দ্রুত বদলায়। তাই আমি নিশ্চিত বলতে পারিনা এখন সে যেমন আছে আজীবন তেমনি থাকবে। তারচেয়ে বরং বর্তমানে যেমন আছে সেটাই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, উপভোগ করি এই রঙিন দিনগুলো। আর মনে মনে প্রার্থনা করি আমার বিশ্বাস না ভাঙুক, সে আমাতে বিভোর থাকুক…

চলবে…