আমার স্নিগ্ধপরী পর্ব-০৪

0
1

#আমার_স্নিগ্ধপরী
#পর্ব_৪
#লেখা: #নীল_মালতীলতা

কপি নিষিদ্ধ ❌❌❌

সকাল আটটা বাজে তালুকদার মেনশন এর সবাই নাস্তার জন্য বসে যায়। আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এই বাড়িতে কাজ করে আসমা বেগম আর ফারজানা তালুকদার মিলে সকল নাস্তা ডাইনিং এ এনে গোছগাছ করছেন। ফজলুল তালুকদার ও ডাইনিয়ে বসে আছেন। অবশ্য তার হাতে একখানা পেপার ও আছে। নাস্তা সবকিছু গোছগাছ করলে সবাই এসে চেয়ারে বসলেই তিনিও শুরু করবেন একসাথে। হঠাৎ ফজলুল তালুকদারের মনে হল তার পরিচিত একটা পারফিউমের ঘ্রান আসছে তার এক চেয়ার পরের থেকে যেটা তার ছেলে ব্যবহার করে। তার মস্তিষ্ক সজাগ হতেই তিনি পেপারটা সরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখলেন তার ধারণাই সত্যি। সকালে তিনি নামাজ পড়ে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন যার কারণে সকালের ঘটনায় তিনি অবগত নয়। ছেলেকে এতদিন পর দেখে তিনি খুশি হবেন নাকি রাগ করবেন বুঝতে পারছেন না। স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বললেন,,

স্নিগ্ধা মা কোথায়? এখনো দেখছি না যে তাকে এখানে কোথাও? প্রতিদিন তো দুজনে যুদ্ধ করো নাস্তা বানানো নিয়ে,,
বিগত দিনগুলো স্নিগ্ধা নামাজ কোরআন পড়ে প্রকৃতির সাথে একটু সময় কাটিয়ে,, রান্নাঘরে চলে আসে নাস্তা তৈরীর উদ্দেশ্যে,, এ নিয়ে ফারজানা তালুকদার বেশ রাগারাগি করে বলেন, সে আছে আসমা বেগম আছে তাহলে স্নিগ্ধাকে কেন রান্নাঘরে আসতে হবে? আসমা বেগম যথেষ্ট ভালো মানুষ আর এই বাড়ির সবাই তাকে যথেষ্ট ভালোবাসে, তারও ভাস্যমতে আমি আছি আপনাকে আসতে হবে না

স্নিগ্ধার ও এক কথা,, সবাই মিলে একসাথে কাজ করব কাজ করতেও আনন্দ লাগবে, মনটাও ভালো থাকবে। তাই এ নিয়ে আর কেউ কোন কথা বলে না।

ফারজানা তালুকদার স্বামীর কথা শুনে জবাবে বলেন,, মেয়েটা আজকে প্রথমবার ভার্সিটিতে যাবে,, সে নিয়ে তার আগ্রহের শেষ নেই সারারাত তো ঘুমাতেই পারেনি,, তার ওপর সকালে যে একটা ঘটনা ঘটলো,, তাই আমি তাকে বললাম একটু রেস্ট নিতে।

ফজলুল তালুকদার ভ্রুকুছকে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,, সকালে আবার কি ঘটনা ঘটলো??

সেটা তোমার গুণধর ছেলেকে জিজ্ঞেস করো,,

ফাইয়াজের এসবে কোন খেয়াল নেই,, তার চোখ হাতের মোবাইলের দিকে আর অপেক্ষা করছে নাস্তার,,,

ফজলুল তালুকদার স্নিগ্ধাকে বার কয়েক উচ্চস্বরে ডাক দিলেন,,

স্নিগ্ধা বিছানায় আধ শোয়া হয়ে লেখক জাকারিয়া মাসুদের লেখা ইসলামি বই ‘তুমি ফিরবে বলে’ বইটি পড়ছিল। তখনই মনে হলো তাকে নিচ থেকে কেউ ডাকছে। দরজাটা খোলা বিধায় খানিক শোনা যাচ্ছে, দরজা বন্ধ হলে তো নিচে তুফান হয়ে গেলেও উপরে শোনা যায় না।
স্নিগ্ধা বইটা রেখে গায়ে ভালোভাবে ওড়নাটা জড়িয়ে দোতলার রেলিং এর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো,,

তখনই আবার ফজলুল তালুকদার ডাক পারলেন,,

জ্বি আব্বু,,

কণ্ঠস্বরটা ফাইয়াজের কানে যাওয়ায় সে কেমন যেন থমকে গেল, এত সময় সে ফোনে একটা কিছু করছিল হঠাৎ তার হাতটা থেমে গেল,,

তাড়াতাড়ি আয় মা একসাথে নাস্তা করি,,

তোমরা শুরু করো আব্বু আমি রেডি হয়ে আসছি,, বলে স্নিগ্ধা আবার দ্রুত রুমের ভিতর ঢুকে গেল,,

ফাইয়াজ যতক্ষণে ঘাড় ঘুরিয়ে উপরের দিকে তাকালো ততক্ষণে স্নিগ্ধা রুমের ভেতরে চলে গেছে,, তার ভিতরে কেমন যেন একটা হচ্ছে, চোখটা বন্ধ করে নিজেকে একটু ধাতস্থ করে নিল, ততক্ষণে তাদের সামনে নাস্তা দেওয়া হয়ে গেছে,,

ফারজানা তালুকদার স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন,, তুমি শুরু করো ও চলে আসবে,,

ফইয়াজের মনে হল বাবা-মা দুজনেই তাকে ইগনোর করছে,, কোথাকার কোন মেয়ের জন্য তাকে তার নিজের বাবা মা ইগনোর করছে মনে হলেই তার সমস্ত ভালোলাগা নিমিষে শেষ হয়ে গেল,, পরক্ষণে আবার ওই কন্ঠের মালিকের উপর ভীষণ রাগ লাগতে শুরু করল,,, সেও আর কিছু না বলে খাওয়ায় মনোযোগ দিল,,

ফজলুল তালুকদার আবারও পেপারখানা হাতে নিলেন,, ফারজানা তালুকদারও টুকটাক ছেলের দিকে এগিয়ে দিচ্ছেন,, মূলত দুজনেই স্নিগ্ধার জন্য অপেক্ষা করছেন,,

আসমা বেগম বলল,, ওই তো আম্মা চইল্লা এইছে,, সবার চোখই তখন সিঁড়ির দিকে চলে গেল,, ফাইয়াজ পড়াটা একটা শেষ করে আরেকটা থেকে একটুকরোতে ভাজি মিশিয়ে মুখে দেওয়ার জন্য তুলতে তুলতে সিঁড়ির দিকে তাকালো,, এতে তার চোখ ওখানে আটকে গেল হাত-পা জমে গেল আর হাত থেকে রুটির টুকরো টা আবার তার প্লেটে গিয়ে পড়ল,,

সাদা একটা আনারকলি গায়ে জড়ানো, চুরিদারটাও সাদা,, আনারকলি টা হাঁটুর নিচ অব্দি, নিচের বর্ডারে আবার সোনালী স্টোনের কাজ, মাথায় একটা সোনালী সুতো দিয়ে হালকা কাজ করা হিজাব পড়নে এক রমনী একপা একপা করে নেমে আসছে, আর এক হাত দিয়ে আরেক হাতে ঘড়ি আটকাতে ব্যস্ত, অন্য হাতেও রয়েছে একটা সাদা পাথরের ব্রেসলেট। যখন রমণী তার ওই টানা টানা চোখ দিয়ে তাদের দিকে তাকালো তখন একজনের হাত আপনাআপনি বুকের বা পাশে চলে গেল,, মুখ থেকে অস্ফুটসরে আওয়াজ এল ‘মাশাআল্লাহ ‘ শুভ্র স্নিগ্ধপরী,,,, টানা টানা দুইটা চোখ গোলগাল মুখটায় কি সুন্দর না মানিয়েছে। গায়ের রংটা শ্যামলা নয় আবার অতিরিক্ত ফর্সাও নয়,,, আচ্ছা এটাকে কি নাম দেওয়া যায়?? ফাইয়াজ বার কয়েক ভাবতে ভাবতে একটা নামই মাথায় আসলো স্নিগ্ধপরী, খাড়া নাকটায় একটা পাথরের নাকফুল যেন তার চেহারাটাকে আরো উজ্জ্বল করে দিচ্ছে। গোলাপি ঠোঁট জোড়ায় হালকা লিপবাম দেওয়ার ফলে চিক চিক করছে। স্নিগ্ধা ডাইনিং এর কাছে এসে একবার চোখ ঘুড়িয়ে সবাইকে দেখে নিল,, তার চোখ দিয়ে আটকালো ফজলুল তালুকদারের এক চেয়ার পরে বসা সুদর্শন এক যুবকের দিকে, এ যুবককে সে ছবিতে বহুবার দেখেছে এবং বহুবার তার সঙ্গে কথা বলেছে,, এখনো যে চোখ আটকাইনি তা নয়,, তবে এসে নিজেকে তাৎক্ষণিক সামলে নিয়েছে,, তার বুঝতে একটুও বাকি নেই যে এই লোক তার দিকেই নির্লজ্জের মত তাকিয়ে আছে। অবশ্য সে যখন দোতলার রেলিং এর কাছে এসেছিল তখনই এই পুরুষকে দেখে নিয়েছে খুব ভালোভাবে । ছয় ফুট লম্বা সুন্দর এই পুরুষটির দিকে তাকালে চোখ আটকাতে বাধ্য। তখনই সে তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে নিয়েছে,, গায়ে এস কালারের একটা টি শার্ট, পরনে কালো গ্যাবাডিং হাতে একটা দামি ঘড়ি ওটার রংও কালো টি-শার্টের গলার কাছে ঝুলানো আছে একটা সানগ্লাস,, সামনের চুলগুলো খানিক লম্বা লম্বা যার দু একটা চুল মাঝেমধ্যে কপালে এসে ঠেকছে আর দুই হাতের সাহায্যে সেটা পিছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, স্নিগ্ধার কাছে মনে হল এটা খুব সুন্দর একটা দৃশ্য ছিল ,, তবে নিজেকে সংযত করে মনে মনে আওড়ালো,, মিস্টার ফাইয়াজ বিয়ে যখন একবার হয়ে গেছে আপনাকে এত সহজে ছাড়ছি না এত সুন্দর বরকে কেউ এত সহজে ছাড়ে? তবে এত সহজে আমি ধরাও দিচ্ছি না,, আপনি নিজে থেকে আমাকে চাইবেন, আমার জন্য কাতড়াবেন, তবেই না আমাকে পাবেন!! বলে মনে মনে একটু বাঁকা হেসে নিল,,

ডাইনিং এর গিয়ে স্নিগ্ধা ফাইয়াজকে মোটেও পাত্তা দিল না যেন ওখানে কেউ নেই, বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে,, সবার দিকে তাকিয়ে বলল,, শুভ সকাল আব্বু,, রাতে ঘুম কেমন হলো আজ সকালটা কেমন কাটছে,,

শুভ সকাল মা সবকিছু খুব ভালোভাবে হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ,, আমাদের ঘর আলো করে আমার মা আছে আমরা কেউই কি খারাপ থাকতে পারি নাকি??

তুমি কে??

হঠাৎ ফাইজের এমন প্রশ্নে যেন সবাই অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল,,, আছমা বেগম তাৎক্ষণিক বলে উঠলো কি কন আব্বা আমনে আম্মারে চিনেননা??

আসলে খালা এর আগে তো আমি তাকে কখনোই আমাদের বাড়িতে দেখিনি,, এটা বলেই হাতে পানির গ্লাস নিয়ে চুমুক দিল,, মেয়েটাকে দেখার পর তার ভেতরে যেন অস্থিরতা বেড়েই চলছে গলাটা শুকিয়ে আসছে,

হে তো আমনেরই বিয়া করা বউ আব্বা,, ফাইয়াজ কেবল পানিটা মুখে নিয়েছিল গিলবে বলে, এর মধ্যেই আসমা বেগমের কথায় তার কাশি উঠে গেল, আর তার মুখের সমস্ত পানি গিয়ে পড়ল স্নিগ্ধার চোখে মুখে,,,,

চলবে????