#আমার_স্নিগ্ধপরী
#পর্ব_৭
#লেখা: #নীল_মালতীলতা
কপি নিষিদ্ধ ❌❌❌
একে তো বউ রেখে এতদিন পালিয়ে বেরিয়েছিস এখন আবার বাড়িতে বউ রেখে তুই পরকীয়া করবি?? দেখ ভাই বউ মানিস বা নামানিস ঘরে বউ রেখে অন্যত্র প্রেম করাকেই কিন্তু পরকীয়া বলে।
ফাইয়াজ এবার আর সহ্য করতে পারলো না একেতো আগে থেকেই মন মেজাজ খারাপ ছিল তার উপর আবার রাহাতে উল্টাপাল্টা কথা আরো আগুনে ঘি ঢালার মত হলো, রাহাত যেহেতু ফাইয়াজের পাশেই বসে ছিল তাই আর ফাইয়াজ এক মুহূর্ত দেরি না করে পিঠের উপর লাগিয়ে দিলো এক ঘুষি,, দাঁতে দাঁত চেপে বলল,, সালা তুই আমাকে পরকিয়া শিখাস?
ওওওও মাগো,, এই তোর কোনো মায়া দয়া নেই, কোথায় আমি তোকে ভালো পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করছি আর তুই আমার পিঠটা শেষ করে দিলি মা গোোোোোো,
চুপ বেয়াদব,,
এই তুই আমাকে সালা বলিস কেনো? তোর মত একটা বিবাহিত বুড়ার কাছে আমার বোন বিয়ে দিব না জীবনেও,,
এমন কথা শুনে রাহাতের দিকে ভ্রুকুচকে চাইলো ফাইয়াজ,, আমি বিবাহিত ঠিক আছে কিন্তু বুড়া মানে কি??
বিয়ে করেছিস এখন তো বুরাই হয়ে গেছিস। অবশ্য এক সপ্তাহ আগে হলে ভেবে দেখতাম,,
ফাইয়াজ আর কিছুই না বলে সেখান থেকে চলে গেলো। রাহাত তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললো। রাহাতের বাবা মা নেই, সবচেয়ে কাছের বলতে আছে শুধু একটা বোন রাহি। ওদের যৌথ পরিবার ছিল। বাবা কাকা দুই ভাই মিলে একটা বাড়ি তৈরি করেছিল সেখানেই সবাই মিলেমিশে থাকতো। হঠাৎ আল্লাহ ওদের বাবা মা কে নিয়ে গেলেন। বাবা-মা থাকতে কাকা কাকির কাছে আদরের শেষ ছিল না । কিন্তু যখনই দুই ভাই বোন এতিম হয়ে গেল তখনই বুঝতে পারবে বাবা-মা না থাকলে দুনিয়ায় কেউ থাকেনা। যখন রাহাতের বাবা মা মারা যায়, তখন রাহাত সবেমাত্র কলেজে পা দিয়েছে। আর বোনটাতো আরো ছোট। এরপর যখন তাদের কোন কুল কিনারা নেই তখন আপন কাকা কাকিরও আসল রূপটা বেরিয়ে এলো এমনকি তাদের ছেলেমেয়েদেরও। ফাইয়াজ আর রাহাত তখন একই কলেজে পড়াশোনা করতো। সেখান থেকেই তাদের পরিচয়। এর আগেই ফাইয়াজের বন্ধু বান্ধবের অভাব তো ছিল না কিন্তু তারা কেউ সেরকম বিশ্বস্ত নয়। ওই স্কুল কলেজ পর্যন্তই ছিল বন্ধুত্বের সীমাবদ্ধতা। তবে রাহাতের সাথে পরিচয় হওয়ার পর তার জীবনের চরম দুঃখের সময় ফাইয়াজ তাকে বেশ সান্তনা দেয় বেশ সাহায্য করে। সেখান থেকেই তাদের বন্ধুত্বতা এত গভীরে গিয়ে পৌঁছায়। ফাইয়াজ রাহাতকে তার নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়, তবে রাহাতের যেহেতু বাবা-মা ছিল না আর ওর ফ্যামিলির কেউ ওদের ভালোবাসতো না তাই আর কখনো ওদের বাড়িতে গিয়ে ঝামেলা করার চেষ্টাও করেনি যদিও রাহাত অনেকবার চেয়েছিলাম ফাইয়াজকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যেতে,,
ফাইয়াজ বলতো তুই একদিন অনেক বড় হবি এরপর নিজে একটা বাড়ি তৈরি করবি আর সেই বাড়িতে আমি বুক ফুলিয়ে যাব, যাতে কেউ তোকে কিছু না বলতে পারে, আর তুই হলি আমার ভাই, আমার বাড়িতে তুই যাচ্ছিস মানে নিজের বাড়িতেই যাচ্ছিস,, তুই তো আমার মাকে মামনি বলে ডাকিস, তাহলে হলো না ওটা তোর নিজের বাড়ি?
রাহাতের কষ্ট হলেও বোনের নিরাপত্তার জন্য কাকা কাকির সঙ্গে বাড়িতেই থাকতো, তাছাড়া ওই বাড়িতে তাদের বাবারও অংশ আছে,, কিন্তু তা তো যাদের পাওয়ার আছে তাদের হাতে।
রাহাত এসব কথা শুনে আর কিছু বলতে পারতো না চোখ লাল হয়ে আসতো হয় তো কান্না আটকাতে গিয়ে। ফারজানা তালুকদার রাহাতের সব কথা শুনে তিনি বলেছিলেন যেন তাকে মা বলে মনে করে, তাইতো রাহাদ ফারজানা তালুকদারকে মামনি বলেই ডাকে। প্রায় বছর তিনেক ফাইয়াজ আর রাহির সঙ্গে কখনো দেখা হয়নি। তবে রাহাত সবসময় বোনের সঙ্গে ফাইয়াজের গল্প করত আবার ফাইয়াজের কাছে বোনের গল্প করত,, এরপর একদিন বলেছিল তোর বোন মানে তো আমারও বোন, আমার তো আর কোন ভাই বোন নেই তোরাই আমার ভাই বোন, বলছি বোনের সঙ্গে ভাইয়ের দেখা করাবি না?
নিশ্চয়ই কেন করাব না তুই তো কখনো বলিস না তাই আমি আর আগবাড়িয়ে কিছু বলি না,,
এরপর একদিন সময় করে বোনের সঙ্গে ফাইয়াজের দেখা করায় রাহাত। রাহাতের থেকেই ফাইয়াজের গল্প শুনতেই যেন রাহির অন্যরকম একটা অনুভূতি হতো। ফাইয়াজকে প্রথম দেখেই সেই অনুভূতিটা যেন আরো গাঢ় হয়ে গেল। তবে সেটা সে তার মনের গহীনে লুকিয়ে রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করল। এবং তাতে সে বেশ দীর্ঘ একটা সময় সফল হল। কিন্তু একসময় ভাইয়ের কাছে তার পাগলামি গুলো ধরা পড়ে গেল, রাতের কাছ থেকে ফাইয়াজের খোঁজখবর নেওয়া,, লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা ফাইয়াজের ছবি নিয়ে হাজারো পাগলামি, ডাইরি এক সময় রাহাতের দৃষ্টিসীমায় পড়ে গেল,, রাহাত তা দেখও টু শব্দও করল না । ফাইয়াজ তাকে অনেক সাপোর্ট করেছে অনেক সাহায্য করেছে এবং বন্ধু হিসেবে তাকে অনেক ভালোবাসে সেটা রাহাত খুব ভালো করেই জানে। তাইতো বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে একটু শব্দটিও করল না, যদিও সে জানে তার আদরের বোনটা খানিক কষ্ট পাবে তবুও তার বন্ধুটা কোন অংশে কম নয় সে তার বিপদের সঙ্গী । রাহাত জানে ফাইয়াজ রাহিকে একেবারে নিজের বোনের মতোই ভালোবাসে। রাহিও সেটা জানে কিন্তু তার মন মানতে চায় না। একটা সময় রাহির আচরণ ফাইয়াজের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে এবং রাহি কে ডেকে সরাসরি জানিয়ে দেয়,,
দেখো রাহি আমার কোন বোন নেই আমি তোমাকে বোন হিসেবে জানি তুমি আমার বোন, তাই ভুলেও এই সম্পর্কটাকে অসম্মান করবে না। আমি তোমাকে আগেও বলেছি এখনো বলছি তোমার ভাই দুইটা তার মধ্য থেকে একটা রাহাত আরেকটা আমি।
রাহি সেরকম কিছুই বলেনি মাথাটা নিচু করে চোখের পানি লুকিয়ে ছিল আর মাথা নাড়িয়ে সায় জানিয়েছিল। এরপরেও যখন রাহি ঠিক হলো না তখন থেকে ফাইয়াজ রাহিকে সম্পূর্ণ ইগনোর করা শুরু করলো আর এখনও সেটাই চলমান। যাকে সে বোন ভেবেছে তাকে কোনভাবেই মন দেওয়া সম্ভব নয়।
—————–
ফাইয়াজকে বিকেল টাইমে বাড়িতে দেখা মানে দিনের আকাশে তারা দেখার মত,, ফারজানা তালুকদার আশ্চর্য হয়েই জিজ্ঞেস করলেন তুমি এই সময় বাড়িতে??
কেন এ সময় কি আমার বাড়িতে থাকা নিষেধ নাকি?
না না নিষেধ হবে কেন? বরং এ সময় তোমাকে বাড়িতে আশা করাটা আমাদের জন্য নিষেধ,,
আহ মা,, বাইরে ভালোলাগছিল না তাই,,
ওওওওওওওও আচ্ছা, ঠিক আছে থাকো, এরপর তিনি মুচকি হেসে নিজের কাজে চলে গেলে,, তবে তিনি ঢের বুঝতে পারলেন ছেলের বাড়িতে থাকার কারণ,
,
,
ফাইয়াজ বার কয়েক উকি দিয়েছে স্নিগ্ধার দরজার দিকে, স্নিগ্ধার রুম ফাইয়াজের রুমের এক রুম পরে, এরপর ওপর থেকে নিচেও বেশ কয়েকবার উঁকি দিয়ে দেখেছে, বারান্দা দিয়ে বাগানো পর্যবেক্ষণ করেছে, তবে কাঙ্ক্ষিত মুখখানা একবারও তার নজরে পড়েনি,, হঠাৎ ছাদের কথা মনে আসতেই সেদিকে পা বাড়ালো ফাইয়াজ। ছাদের দরজাটা পার হয়ে এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে তার চোখ আটকে গেল কর্নারের রেলিং ধরে ঝুলে থাকা এক রমণীর দিকে, তবে তার মুখ দেখার সৌভাগ্য এখনো হয়নি কারণ সে উল্টো ফিরে রয়েছে,, কিন্তু তবুও তার চোখে ধরা দিল এক অপরূপ সৌন্দর্য, সারা পিঠময় ছড়িয়ে আছে কালো কুচকুচে চুল। যা সাদা টপ্সটার উপরে একেবারে অপূর্ব ফুটে রয়েছে, এই মেয়েটাকি শুধু সাদাই পড়ে নাকি আর সাদা পড়ে পড়ে তার হার্ট অ্যাটাক করে দেওয়ার ধান্দায় আছে নাকি? স্নিগ্ধার চুলগুলো কোমর পর্যন্ত, মেয়েটার হাইট কত হবে?? হ্যাঁ হয়তো ৫. ২অথবা ৩ হবে বলে আন্দাজ করলো ফাইয়াজ। ফাইয়াজ মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় ধীরে ধীরে আগাতে আগাতে একেবারে স্নিগ্ধার পেছনে গিয়ে পৌঁছালো,, হাস্কিসুরে বলল,, স্নিগ্ধপরী,,
অন্যমনস্ক থাকার স্নিগ্ধা হঠাৎ চমকে উঠলো,, পেছনে ফিরেই নিজের এত কাছাকাছি ফাইয়াজকে দেখে আরো চমকে উঠলো,
চমকানো মুখটা দেখেও যেন ফাইয়াজের ভীষণ ভালো লাগলো, তবে কি বলবে কিছু খুঁজে পেল না, একে তো ভোরে তার সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেছে তার ওপর সকালে এই মেয়েটা তাকে যে পরিমাণ হেনস্তা করেছে,,
ফাইয়াজ ভাবছে এক দেখায় কিভাবে এতটা আসক্ত হওয়া যায়, এটা কি পবিত্র বন্ধন এর টান? হয়তো হতেও পারে,,,,
স্নিগ্ধা কিছুক্ষণ ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে থাকে,তার হুস ফিরতেই সে নিজেকে সামলে নিয়ে ভাবে,,
কি ব্যাপার এই খারুসটা এখন এখানে কেন? আর এভাবে এদিকে তাকিয়ে থাকার কি আছে আজব!
দুজনের কেউই কোন কথা খুঁজে পাচ্ছে না,,
স্নিগ্ধার কেমন যেন অস্বস্তি হতে শুরু করলো, ফাইয়াজের পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো, তবে ফাইয়াজ তাকে সফল হতে দিল না তার আগেই ফাইয়াজের হাতের মধ্যে আটকা পড়ল স্নিগ্ধার হাত,,
স্নিগ্ধার পা সেখানেই জমে গেলো,, বাবা ভাই ছাড়া এই প্রথম কোনো পুরুষের ছোঁয়া,,
নিজেকে ঠিক করতে খানিক সময় লাগলো, যখনই মনে পড়ল সেই বিয়ের দিন থেকে ঘটা ঘটনা গুলো, তখন সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো ফাইয়াজের দিকে, ফাইয়াজ কেমন মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় তাকিয়ে আছে তার দিকে, স্নিগ্ধা একবার হাতের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার ফাইয়াজের চোখের দিকে, এরপর আচমকাই একটা ঝাড়া দিল হাতটা ছাড়ানোর জন্য, তবে সফল হলো না, ফাইয়াজের আগে থেকেই ধারণা ছিল এই মেয়ের হাত ধরলে সহজে সে মেনে নেবে না, তাইতো বেশ শক্ত করেই হাতটা ধরল, তারপরেও ঘটলো আরেক বিপত্তি,,
স্নিগ্ধা হাত ছাড়াতে ব্যর্থ হয়ে রাগে আচমকাই ফাইয়াজের বুকে হাত দিয়ে দিল একটা ধাক্কা যার জন্য ফাইয়াজ মোটেও প্রস্তুত ছিল না, যার জন্য সে ব্যালেন্স হারিয়ে পড়লো ছাদের মেঝেতে, আর স্নিগ্ধার হাত শক্ত করে ধরে থাকার কারণে সেও তার সাথে গিয়ে পড়লো তার বুকের উপরে, এ পর্যন্ত তো ঠিক ছিল কিন্তু হাতে জোরে টান লাগায় মাথাটা ঝুঁকে গিয়ে ঠোঁটটা লাগল সোজা ফাইয়াজের ঠোঁটে,,,,,,
চলবে???
ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ।