আমার স্নিগ্ধপরী পর্ব-১০

0
13

#আমার_স্নিগ্ধপরী
#পর্ব_১০
#লেখা: #নীল_মালতীলতা

কপি নিষিদ্ধ ❌❌❌

ফাইয়াজ বেশ অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে গাড়ির ভেতরে,, বারবার হাতের ঘড়িটা পরখ করছে, পাক্কা ৩০ মিনিট হয়ে গেছে সে এখানে অপেক্ষা করছে,, মনে মনে ভাবছে,,

আব্বুর সঙ্গে গেলে তো ঠিক একদম আব্বুর সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে আসে,, নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে দেরি করছে,, করো! তোমার যত খুশি দেরি করো আমার স্নিগ্ধ পরী!! আমার অপেক্ষারা সারা জীবন তোমার জন্যই থাকবে,,,

ফাইয়াজের গাড়ির ভেতরে অস্থির লাগছে তাই সে বাইরে বেরিয়ে এলো দেখার জন্য, তখন তার নজর পড়লো সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসছে তার স্নিগ্ধপরী,, মেয়েটা যেন সাক্ষাৎ পরি প্রতিদিন কোন না কোন ভাবে তাকে ঘায়েল করেই ছাড়ে এই মেয়ে,, নীল রঙের একটা টপস পরনে যেটা লম্বায় হাটুর নিচে অব্দি, মেয়েটাকে কখনো হাঁটুর উপরে কাপড় পড়তে দেখেনি ফাইয়াজ , সাথে সাদা চুরিদার আর সাদা হিজাব দিয়ে মাথাটা আটকানো,, যেটা ফাইয়াজের খুব সস্তির একটা কারণ,, তার স্নিগ্ধপরীর সুন্দর চুলগুলো বাইরের কেউ দেখতে পায় না। গ্রামের মেয়েদের চলাচলন যে এতটা শালীনভাবেও এতটা স্মার্ট হতে পারে সেটা ফাইয়াজ প্রথম প্রথম দেখে ভারী অবাক হতো,, যতদিন যেতে লাগলো তত মনে হচ্ছে এই মেয়েটা স্মার্ট না হয়ে যদি পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষ্যাত মেয়েও হয় তবুও তাকেই লাগবে,, এই অনুভূতি কে কি বলা হয় তা ফাইয়াজ জানে না ,, কিন্তু এই অনুভূতিটা তাকে বড্ড পোড়ায়, বড্ড ভয় পাইয়ে দেয়, আবার বড় ভালও লাগে, অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি।

ফাইয়াজ স্নিগ্ধার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে থেকে হাবিজাবি ভাবছিল,, স্নিগ্ধা গাড়ির কাছে এসে আড় চোখে একবার ফাইয়াজকে দেখে নিল, তারপর কোন কিছু না বলেই পেছনে ছিটের দরজাটা খুলে গিয়ে বসে পড়ল।

গাড়ির দরজায় বন্ধ করার শব্দে ফাইয়াজের ধ্যান ভঙ্গ হল,, সেও দ্রুত গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ল,,

স্নিগ্ধপরী তুমি পিছনে কেনো?? দ্রুত সামনে এসো নইলে তো লোকে আমাকে ড্রাইভার ভাববে,,

তো,, যে গাড়ি চালায় সে তো ড্রাইভারই এতে ভাবার কি আছে, আর আমি কোন স্নিগ্ধপরীটরি নয়, আমার নাম স্নিগ্ধা, স্নিগ্ধা তালুকদার।

সেটা তুমি সবার কাছে স্নিগ্ধা,, কিন্তু আমার স্নিগ্ধপরী। এবার বেশি কথা না বলে সামনে এসে বসো নইলে কিন্তু তোমারই দেরি হয়ে যাবে,,

ঠিক আছে আপনি আপনার মত থাকুন আমি বরং রিক্সা বা অন্য কিছুতে চলে যাচ্ছি,,,

এই না না এখনই যাচ্ছি,, বলেই গাড়ি স্টার্ট করতে গিয়েও আবার থেমে গিয়ে কিছু একটা ভেবে ফোন লাগালো কাউকে, আবার সাবধানের মার নেই বলে গাড়ির দরজা গুলো লক করে দিল।

স্নিগ্ধা আর তেমন কিছুই বলল না , তার ধ্যান জ্ঞান এই মুহূর্তে মোবাইলের ভিতরে, যেন এখানে দ্বিতীয় কোন ব্যক্তিই নেই, ফাইয়াজ স্নিগ্ধার সঙ্গে একটু কথা বলার জন্য হাঁসফাঁস করে,, কিন্তু এই মেয়ে তাকে পাত্তা দিলে তো,

হুহ দিন আমারও আসবে, তখন তোমাকে সামনে বসিয়ে কথা বলাতে বলাতে পাগল বানিয়ে ছাড়বো, এসব আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে গাড়ির দরজায় কেউ টোকা দিল।

ফাইয়াজ দ্রুত বাইরে বেরিয়ে এলো, আর ড্রাইভার এর জায়গায় ড্রাইভার রহমত বসে পড়ল, ফাইয়াজ মূলত তখন ড্রাইভারকে ফোন করেছিল, ড্রাইভার প্রথমে একটু অবাক হয়েছিল, ফাইয়াজ গাড়ি নিয়ে বের হলে কখনো তাকে সঙ্গে নোয় না, ফাইয়াজ নিজেই ড্রাইভ করে যায়।

ফাইয়াজ দ্রুত পিছনে স্নিগ্ধার পাশে গিয়ে বসে পড়ল,, স্নিগ্ধা অন্যদিকে ফিরে খিচে চোখ বন্ধ করে রাখলো,, এই লোকটা পাশে আসলে নিজেকে ঠিক রাখা বড় দায় হয়ে পড়ে,, যতটুক ইগনোর করে তা তো সেই অভিমান থেকে। লোকটা যে তার মায়ায় বেশ ভালোভাবে পড়েছে বুঝতে পেরে স্নিগ্ধার আরো এলোমেলো লাগে,, অভিমানটাও মাঝে মাঝে আরো গাড় হয়ে যায়।

আসলে আমরা যখন বুঝতে পারি আমাদের বিপরীত পাশের লোকটা আমাদের খুব ভালোবাসে তখন তার প্রতি তার ভুলের অভিমানটাও গাড়ো হয়ে যায়, স্নিগ্ধারও হচ্ছে তেমনটাই।

ফাইয়াজ ড্রাইভারকে কে উদ্দেশ্য করে বলল,,
চাচা আমরা দুজনই ভার্সিটিতে যাব,,

ঠিক আছে বাবা,,

ফাইয়াজ স্নিগ্ধার পাশে একটু একটু করে চেপে চেপে বসছে,, স্নিগ্ধাও একটু একটু করে বিপরীত পাশে চেপে যাচ্ছে,

স্নিগ্ধার হার্টবিট দ্রুত গতিতে চলছে,, স্নিগ্ধা দাতে দাত চেপে আস্তে আস্তে ফাইয়াজকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

কি হচ্ছেটা কি? আমাকে মারার সখ হয়েছে?

আস্তাগফিরুল্লাহ কি বলো এইসব, নিজের অস্তিত্বকে কেউ নিজে মারে নাকি??

একদম ফালতু কথা বলবেন না, এভাবে চেপে চেপে আসছেন কেন? আরেকটু হলেই তো আমি রাস্তায় পড়ে যাব

গাড়ির দরজা তো লক করা স্নিগ্ধপরী, আর আমি থাকতে তুমি পড়বে এও সম্ভব নাকি?

ওইদিকে চেপে বসুন আমার সমস্যা হচ্ছে,,

একটু পাশেই তো বসেছি তোমার কোলে তো আর উঠে বসিনি,,

আপনার মত হাতি আমার কোলে উঠে বসলে আমার অস্তিত্বই তো শেষ হয়ে যাবে,,

ছি ছি স্নিগ্ধপরী, এত সুন্দর একটা হ্যান্ডসাম জামাইকে কেউ হাতি বলতে পারে?? তুমি বড়ই নিষ্ঠুর। তবে তুমি চাইলে আমার কোলে উঠতে পারো আমি কিছু মনে করব না,,

স্নিগ্ধা এবার খানিকটা রেগে গিয়ে শব্দ করে বলল,,, চাচা গাড়িটা থামান আমি এখানেই নেমে যাচ্ছি,

চাচা একদম থামাবেন না,,

ড্রাইভার রহমত চাচা এদের খুনসুটি দেখে নিঃশব্দে হাসলো,, তবে গাড়ি থামালো না চলতে থাকলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে,,

ফাইয়াজ গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করলো,,

যেদিন থেকে দেখছি তোরে
বাজছে বুকে টাং..
এক জীবনে তুই যে আমার
বেঁচে থাকার গান..
মন পিঞ্জিরায় বাইন্ধাছি তোর মন
ও ও,,, যাইস নারে তুই আমায় ছাইরা
শোনরে কথা শোন

ফাইয়াজের গাওয়া গান শুনে স্নিগ্ধার হৃদয়ে কেমন যেন শীতল হাওয়া বইতে লাগলো,,

গাড়ি গন্তব্যে পৌঁছালে এরপর তারা যে যার স্থানে চলে গেল।
,
,
,

আজকে ফাইয়াজের ক্লাস আগেই শেষ হয়ে গিয়েছে, তাই সে স্নিগ্ধার ডিপার্টমেন্টের সামনে এসে একপাশে একটা গাছের নিচে বসে অপেক্ষা করছে, বেশ অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ার পর স্নিগ্ধার ক্লাস শেষ হলো এবং সেও এগিয়ে আসছিল বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে, তার ধারণা ছিল ফাইয়াজ তার জন্য অপেক্ষা করবে, হলোও তাই, কিছুটা দূরে আজকে বসে থাকতে দেখে সেদিকেই এগিয়ে আসছিল স্নিগ্ধা কয়েকটা ক্লাস করে এসে ক্লান্ত, এখন আর জেদ ধরে একা যেতে চাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না, সব সময় সব জায়গায় জেদ মানায় না।

ফাইয়াজও বারবার ঘড়ি দেখছিল আর বারবার রাস্তার দিকে তাকাচ্ছিল, স্নিগ্ধাকে এগিয়ে আসতে দেখে সেও দাড়ালো স্নিগ্ধার দিকে এগোবে বলে, দু পা এগোতেই তার পা থেমে গেলো,, রাগে তার দুই তাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গেলো। চোখ জোড়াও লাল হয়ে এলো।

স্নিগ্ধাও আকস্মিক হতভম্ব হয়ে গেলো, তার সামনে একগুচ্ছ গোলাপ হাতে হাটু মুরে বসা এক যুবককে দেখে,,,,,

চলবে,,,,

ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ।