আমার স্নিগ্ধপরী পর্ব-১২

0
9

#আমার_স্নিগ্ধপরী
#পর্ব_১২
#লেখা: #নীল_মালতীলতা

কপি নিষিদ্ধ ❌❌❌

প্রাপ্ত মনস্কদের জন্য উন্মুক্ত 🚫🚫🚫

ফাইয়াজ আর একটা কথাও বলল না, তার দৃষ্টি স্নিগ্ধার কাঁপতে থাকা ঠোঁটের দিকে,

ছাড়ুন, আ,,

ফাইয়াজ স্নিগ্ধাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে তার ঠোঁট দিয়ে স্নিগ্ধার ঠোঁট দুটো বন্ধ করে দিল,,,

স্নিগ্ধা একেবারে স্তব্ধ শান্ত হয়ে গেলো,

ফাইয়াজ যেন আস্তে আস্তে উম্মাদ হতে শুরু করল, হয়তো মিনিট পাঁচেক পেরিয়ে গেলো, এবার স্নিগ্ধার দম বন্ধ হওয়ার যোগার, নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট করে উঠলো, এতে ফাইয়াজের হাতের বাধন আরো দৃঢ় হলো,,

স্নিগ্ধার চোখ থেকে নিঃশব্দে পানি গড়াতে লাগলো,, স্নিগ্ধার চোখের পানি যখন ফাইয়াজের গাল স্পর্শ করলো তখন তার হুশ ফিরল, স্নিগ্ধাকে ছেড়ে দিয়ে তার কপালে কপাল ঠোকিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিচ্ছে দুজনে,

স্নিগ্ধা নিঃশব্দে কান্না করছে আর শ্বাস নিচ্ছে,

ফাইয়াজ স্নিগ্ধার দুই গালে আলতো করে হাত রেখে চোখের পানি মুছিয়ে নরম গলায় বলল,,
আ’ম সরি পরী, আমার মাথা ঠিক ছিল না, প্লিজ কান্না করে না, আমি অনেক অনেক সরি,

স্নিগ্ধা শুধু চোখ থেকে পানি ঝরালো একটা বাক্যও উচ্চারণ করল না,

প্লিজ পরী কথা বলো, প্লিজ, ছেলেটা তোমার হাত ধরেছে তাই আমার মাথা ঠিক ছিল না,

স্নিগ্ধা ফাইয়াজকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে রুম থেকে বেরোনোর উদ্দেশ্যে দরজার দিকে পা বাড়ায়,

ফাইয়াজ আবার স্নিগ্ধার হাত টেনে ধরে,

প্লিজ পরী একবার আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমার ভুলগুলো একবার ক্ষমা করে দাও প্লিজ,

স্নিগ্ধা এবার তাচ্ছিল্য হেসে বললো,, আনস্মার্ট গাইয়া ক্ষ্যাত মেয়েটার কাছে ক্ষমা চাইছেন এটা তো আপনার ব্যক্তিদের সাথে যায় না, আপনি তো ছোট হয়ে যাচ্ছেন,, আর তাছাড়া আমার সঙ্গে নিশ্চয়ই আপনাকে মানায় না, আর তাছাড়া আমি এই বাড়িতে একাই এসেছি মা বাবার সঙ্গে,, শ্বশুরবাড়িতে এটা নিশ্চয়ই স্বামীর সঙ্গে আসতাম। আর কাগজে কলমে ধর্মের পাতায় যতটুকু দায় বদ্ধতা আছে আপনি চাইলে এটাও মিটিয়ে নিতে পারেন আমি কিছু মনে করব না,,

শেষের কথাটা শুনে ফাইয়াজের মাথায় যেন আবারও রক্ত উঠে গেলো, রাগের মাথায় চড় মারার জন্য হাত উপরে তুলল,, স্নিগ্ধা চোখ জোড়া খিচে বন্ধ করে নিল,, স্নিগ্ধার চোখের দিকে নজর পড়তেইস ফাইয়াজের হাত থেমে গেল,,

ফাইয়াজ স্নিগ্ধার পায়ের সামনে দুই হাটু গেড়ে বসে স্নিগ্ধার দুই হাত ধরে তার তুই চোখের দিকে নরম চোখে তাকায়,,

স্নিগ্ধা নিজের গালে কোন কিছুর শক্ত স্পর্শ না পেয়ে হাতে নরম ছোঁয়া পেয়ে পিটপিট করে চোখ খুলে সামনের দিকে তাকায়, তার পায়ের কাছে ফাইয়াজকে বসে থাকতে দেখ অবাক হয়ে পিছিয়ে যেতে চায়, তার দুই হাত ফাইয়াজের হাতের মধ্যে বন্দী হওয়ায় সে ব্যর্থ হয়।

কি করছেন, এভাবে বসে আছেন কেনো? ছাড়ুন,, আর মারলেন না যে,,

স্নিগ্ধপরী মায়া, আসক্তি এমন এক জিনিস যার কখনো শেষ নেই,, তুমি হয়তো বলবে,, এত অল্প সময়ে কারো প্রতি এতটা আসক্ত হয় কিভাবে, এতটা মায়া হয় কিভাবে? হয়তো বলবে এগুলো আমার আবেগ অথবা খানিকের মোহ,, কিন্তু না আমার পরী, তুমি আর আমি পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ,, আমি ভুল করেছি, চরম অন্যায় করেছি পবিত্র বন্ধনকে ছোট করেছি, তুমি শুধু একবার বলো, আমি তোমার পায়ে ধরতেও রাজি কিন্তু তোমাকে ছাড়ার কথা কখনো বলো না, একবার সুযোগ দাও না আমার ভুলগুলো শুধরে নেওয়ার,,,

প্লিজ আপনি পাগলামি করবেন না উঠুন,,

প্লিজ ক্ষমা করে দাও,,

এমন করে করে আপনি আমার পাপের পাল্লা আরো ভারি করছেন কেন,,

বলো তুমি আমাকে ক্ষমা করেছ, আর আজ থেকে তুমি এই ঘরেই থাকবে,,

আপনি উঠুন তারপরে বলছি,,

ফাইয়াজ এবার উঠে দাঁড়ালো কিন্তু স্নিগ্ধার হাত জোড়া ছাড়লো না,,

হাত ছাড়ুন আর চলুন গিয়ে বসে কথা বলি,

এরপর দুজন গিয়ে রুমে থাকা সোফায় বসলো,,

ফাইয়াজ স্নিগ্ধার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কি বলে শোনার জন্য,,

আমার এই বাড়িতে আসা আপনার রুমে থাকা এমনকি আপনার রুম থেকে বের হয়ে যাওয়া কোনটাই আমার জন্য সম্মানজনক ছিল না,, এবার স্নিগ্ধা দাড়িয়ে গেলো,,, বলল, এই বাড়িতে আমি থাকছি বাবা মায়ের জন্য না হলে তারা ভীষণ কষ্ট পাবেন,, আমার যদি মনে হতো যে আমাকে নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই তাদের কোন কষ্ট হবে না তাহলে বিশ্বাস করুন আমি এখানে একটুও সময় ব্যয় করতাম না, এখানে আমি কখনোই পড়ে থাকতাম না,, তারা আমাকে নিজেরদের মেয়ে বানিয়েছে,, তাই মেয়ে হয়ে বাবা মাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা আমি ভাবতেও পারিনি,, বাকি রইল আপনার ঘরে আসা, আপনি এখান থেকে আমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছেন, তবে যদি কখনো সম্মান দিয়ে আবার ফিরিয়ে আনতে পারেন আমি ফিরে আসবো,,

এরপর আর একটি কথাও না বলে ফাইয়াজের রুম থেকে চলে যাওয়ার জন্য দরজাটা খুললো,, সামনেই একজন পুরুষ কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে খানিকটা অপ্রস্তুত হলো স্নিগ্ধা,

ভাবি আমি রাহাত চিনতে পারছেন না ফাইয়াজের বন্ধু সেদিন যে দেখা হল ,, তবে কথা বলার সময় হয়নি,,

ওহ হ্যা হ্যা চিনতে পেরেছি,,

ঘরের দরজায় রাহাতের কণ্ঠস্বর পেয়ে ফাইয়াজও তাৎক্ষণিক উঠে এসে দাঁড়ালো স্নিগ্ধার পেছনে,,

আরে রাহাত,, আয় ভেতরে আয়,,
স্নিগ্ধা তাদেরকে কথা বলতে দেখে সে সেখান থেকে চলে গেল,

কিরে সেই যে গেলি আর কোনো খবর নেই ভার্সিটিও যাচ্ছিস না, ফোনটা পর্যন্ত বন্ধ, হয়েছেটা কি বলতো??

আরে না তেমন কিছুনা,,

ফাইয়াজ এবার ভ্রুকুচকে বললো,, মানে কি, একটা মানুষ একটা সপ্তাহ ধরে পুরো লাপাত্তা আর তুই বলছিস তেমন কিছু না?? এমন তো কখনো হয়নি রাহাত, কি হয়েছে বলবি না?

বললামতো তেমন কিছু না একটু ব্যস্ত ছিলাম আর সবকিছু থেকে একটু নিজেকে আলাদা করে রাখার ট্রাই করছিলাম এই আর কি তুই কিছু মনে করিস না প্লিজ,, কষ্ট পাস না ভাই আমার,,

ফাইয়াজের তবুও কেমন জানি মনে হল রাহাত তার কাছ থেকে কিছু একটা লুকাচ্ছে, বলতে চাচ্ছে না তাই আর সেও জোর করল না, ঠিক আছে তুই বরং যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে,,

ভাবির সঙ্গে মনোমালিন্যতা ঠিক হয়েছে?

ফাইয়াজ এবার উদাস ভঙ্গিতে সোফায় হেলান দিয়ে বন্ধ করে বসে বলল,, তাহলে নিশ্চয়ই সে এখন আমার ঘরেই থাকতো!

চিন্তা করিস না ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু,,

ঠিক তো হতেই হবে, ঠিক না হয়ে যাবে কোথায় আর তা খুব শীঘ্রই হতে চলেছে,, তুই যা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে,,

রাহাত আর কিছুই বলল না শান্ত চোখে ফাইয়াজের দিকে খানিক্ষণ চেয়ে চলে গেল তার জন্য বরাদ্ধ করা রুমে,,,

,
,

রাতের খাবারের সবাই আছে তালুকদার মেনশন এর ডাইনিংয়ে, কেটে গেছে দুটো দিন, ফজলুল তালুকদার আজকে সকালেই বাড়ি ফিরেছেন, রাহাতকেও তাই আজ ফাইয়াজ ডেকে নিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে বলে। সেও বিকেলে হাজির হয়েছে রাতে থাকবে। ডাইনিং টেবিলে রাহাত আছে বলে স্নিগ্ধা এখানে আসতে চায়নি, ফাইয়াজ গিয়ে নিয়ে এসেছে বলেছে, গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে যেতেই হবে, আর রাহাত এই বাড়ির একজন সদস্য এই বাড়িতে থাকলে প্রায়শই দেখা হবে, তাই আগে থেকেই সহজ হয়ে নেওয়া ভালো আর তাছাড়া আমি তো আছি,,

আমি তো আছি এই কথাটা স্নিগ্ধার পছন্দ হলো বেশ, শেষমেষ তাকে যেতেই হল,,

খাওয়ার সময় স্নিগ্ধার বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল,, এতদিনও তো সবাই একসঙ্গে খেয়েছে ফাইয়াজও ছিল সেখানে, কই তখন তো কোনো অস্বস্তি হয়নি তাহলে কি রাহাতের জন্যই অস্বস্তি ভেবে পেল না স্নিগ্ধা,, মনে হচ্ছে বারবার কেউ তার দিকে তাকাচ্ছে,, কিন্তু এতদিনও ফাইয়াজ তার দিকে তাকিয়েছে কই তখন তো তার এমন লাগেনি?? তাহলে আজ কি হল বুঝতে পারছে না স্নিগ্ধা,,

খাওয়া দাওয়ার পরে ফাইয়াজ সবাইকে ড্রয়িং রুমে ডাকলো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য,,

ফজলুল তালুকদার এবার বললেন,, কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো, রাত তো অনেক হল,,

ফাইয়াজ সবার মুখের দিকে একবার করে তাকালো, বললো,,

আমি বিয়ে করতে চাই আব্বু,,,,

চলবে???
ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ।