#আমার_স্নিগ্ধপরী
#পর্ব_১৪
#লেখা: #নীল_মালতীলতা
কপি নিষিদ্ধ ❌❌❌
আকাশটা শান্ত,, থালার মত একটি চাঁদ উঠেছে, কি নির্মল তার রূপ। ফাইয়াজ তার বিশাল বারান্দায় দাঁড়িয়ে শান্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। চাঁদটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছে। মনোযোগ দিয়ে দেখছে এই চাঁদটা বেশি স্নিগ্ধ নাকি তার ব্যক্তিগত চাঁদটা, সে ভেবে রেখেছে আগামী রাতটা সে তার ব্যক্তিগত চাঁদটাকে পাশে দাঁড় করিয়ে বিবেচনা করবে, তবে সে নিশ্চিত তার স্নিগ্ধপরী এই চাঁদের থেকেও স্নিগ্ধ । এরপর ফাইয়াজ নিজেই চাঁদকে উদ্দেশ্য করে বিড়বিড় করে বলল,, কি গো চাঁদমামা তুমি আবার আমার স্নিগ্ধপরীকে দেখে হিংসে করবে না তো? খবরদার আমার পরীকে দেখে একদম হিংসে করবে না,
কিরে বন্ধু এখানে একা একা বসে কি করছিস?
ফাইয়াজ পিছনে ফিরে দেখল রাহাত তার দিকে ভ্রুকুছকে তাকিয়ে আছে,
কিছুনা এইতো এখানে ভালো লাগছে তাই একটু খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছি,,
কালকে তোর বিয়ে, আর যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে তোর বিয়ে করা বউ, এখন তুই কোথায় তার সঙ্গে ফোনে প্রেম আলাপে ব্যস্ত থাকবি তা না,
তুই তো জানিস সব কিছু তাও কেন এমন কথা বলিস, তবে এবার আমি আমার স্নিগ্ধপরীর সব অভিমান ঠিক ভাঙ্গিয়ে নিব।
তাহলে তো মনে হয় এবার আমাকে ভুলেই যাবি,,
ফাইয়াজ একটু হাসলো তারপর রাহাতের কাছে এসে বলল, তুই বিয়ে করলে কি তোর বোনকে ভুলে যাবি?
ওমা তা কেন আমি বিয়ে করলে আমার বোনকে ভুলে যাব কেন?
তাহলে আমি তোকে কেন ভুলে যাবো তুই তো আমার ভাই বন্ধু সবই,
আরে আমি তো মজা করলাম, যাইহোক তোর সঙ্গে আমার একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল,
হ্যাঁ বল কি বলবি,
প্লিজ ভাই রাগ করিস না, আসলে ব্যাপারটা আমি তোর কাছ থেকে লুকিয়ে করেছি। তোকে জানিয়ে করলে তুই কোনভাবেই আমাকে এ ব্যাপারে আগাতে নিতিস না ।
ফাইয়াজ এবার বেস সিরিয়াস হয়ে রাহাতের দিকে চেয়ে বলল,, কি এমন ব্যাপার যে আমি তোকে দিতাম না? তোকে আমি কখনো পিছিয়ে রেখেছি কোথাও থেকে?
আরে আরে এত হাইপার হচ্ছিস কেন? তুই আমাকে এতটাই ভালোবাসি যে এই ব্যাপারে তুই আমাকে কখনোই হ্যাঁ বলতে চাইতি না, যদিও বলতি বুকে পাথর চেপে, যদিও এখনো তুই ভীষণ কষ্ট পাবি, প্লিজ ভাই তুই আমাকে মাফ করে দিস।
ফাইয়াজ এবার অস্থির হয়ে বলল, ভনিতা না করে সরাসরি বল কি এমন হয়েছে যে তুই আমার সঙ্গে এমন করছিস, আর কিবা এমন করেছিস যে আমি কষ্ট পাবো,
আমি দেশের বাহিরে চলে যাচ্ছি,
হোয়াট,
সরি দোস্ত, তোকে বললে তুই আমাকে কখনো নিজের কাজ ছাড়া করতে চাইতি না, আর তাছাড়া আমার স্বপ্ন দেশের বাইরে গিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা, এতদিন তোর বন্ধুও ভাই আমি একাই ছিলাম তাই তোকে রেখে যাওয়ার সাহস করিনি, এবার তো তোর সঙ্গী এসে গেছে তাই ভাবলাম এইবার আমি যেতে পারবো,
ফাইয়াজ অস্থির হয়ে বলল,, কি সব বলিস তুই, তুই আমার প্রিয় বন্ধু, আর আমার স্নিগ্ধপরী সেটা তো আমি নিজেই, ওর নিঃশ্বাসেই আমার প্রাণ, হয়তো শুধু দেহটা আলাদা, ওই নিশ্বাসটা যদি কখনো আমার আগে থেমে যায় তাহলে হয়তো আমার দেহটা বেঁচে থাকবে, এখানে কোন প্রাণ থাকবে না, হয়তো ভাবছিস এটা আবার কেমন কথা, ওই যে বলে না জিন্দা লাশ মানুষ মনে করবে আমি বেঁচে আছি, কিন্তু আসলে সেটা ভুল,
রাহাত এবার একটু হেসে বলল, এই যে এত আবেগ নিয়ে কথাগুলো বলছিস, সব সময় মনে থাকবে তো??
সেটা সময়ই বলে দেবে, আমি সত্যিই ভীষণ কষ্ট পেয়েছি তোর এমন সিদ্ধান্তে,
রাহাত এবার ফাইয়াজের হাত দুটো ধরে বলল, পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস ভাই, তুই আমার জন্য জীবনে অনেক কিছু করেছিস, আমি তার প্রতিদান দিতে পারলাম না, আমি বড় স্বার্থপর। তুই আমাকে ক্ষমা না করলেও আমি স্বার্থপর হবই। জীবন আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে অনেক কিছু কেড়েও নিয়েছে, সেই সব থেকে পাওয়ার মধ্যে তুই একজন, আর হারানোর মধ্যেও সেই তুই একজন,
এসব তুই কি বলছিস আমি তো কিছু বুঝতে পারছি না? কাল আমার বিয়ে আর তুই আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু তুই,,
আমি তোর বিয়ে বউভাত শেষ করে তবেই যাব, কালকে তো বিয়ে তোকে তেমন একটা কাছে পাওয়া যাবে না, পরশুদিন তোর আর ভাবির সাথে জমিয়ে আড্ডা দিব পরের দিন বউ ভাত শেষ করে আমি রাতের ফ্লাইটে চলে যাব।
ঠিক আছে আমার তো আর কিছু বলার নেই তুই তো সবকিছু ঠিক করেই ফেলেছিস, কোন দেশে যাচ্ছি সেটাও কি জানানো যাবে না আমাকে,
অনেক তো তোর ছায়ায় থাকলাম এবার একটু আমি নিজেকে নিজে সময় দিতে চাই, সময় হলে আমি নিজেই তোর সঙ্গে যোগাযোগ করব,
ফাইয়াজের কাছে ব্যাপারটা কেমন যেন অদ্ভুত লাগলো, রাহাতের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে সে সব সময় রাহাতকে তার সঙ্গে রেখেছে প্রত্যেকটা কাজে, এতিম ছেলেটাকে নিজের ভাই বানিয়েছে। সেই ছেলেটাই আজ এত বড় একটা সিদ্ধান্ত তাকে না জানিয়ে নিয়ে নিল। সে পর্যন্ত তো ঠিক ছিল কিন্তু কোথায় থাকবে সেটাও কি তাকে জানানো গেল না? কিন্তু কেন? কালকে জীবনের এত বড় একটা দিন আজ আর অন্য কিছু ভেবে মন খারাপ করতে চাইলো না, এতো করেও আপন বানাতে পারলোনা তাহলে তো সে তার সঙ্গে পরামর্শ করেই কাজগুলো করত। ফাইয়াজ প্রচন্ড কষ্ট পেল মনে, সে কখনো কাউকে এত গভীর বন্ধু বানায়নি, শেষমেষ যাকে বানালো সে তাকে এতটা পর মনে করলো এতটা অবহেলা করলো সেটা ফাইয়াজ মানতে পারল না, ফাইয়াজের কাছে রাহাতকে কেমন জানি ভীষণ পরপর লাগতে শুরু করলো, এটা কি অভিমানে নাকি রাগে কষ্টে বুঝতে পারলো না ফাইয়াজ,
রাহাত ফাইয়াজকে শান্ত চোখে খানিকক্ষণ পরখ করল, বলল, আমি আবারও বলছি ফাইয়াজ আমি ভীষণ স্বার্থপর, তোর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার মূল্য আমি দিতে পারলাম না,,
ফাইয়াজের রাহাতের সঙ্গে কথা বলতে একটুও ইচ্ছে করলো না, তবুও বললো আব্বু আম্মুকে ব্যাপারটা জানিয়েছিস?
না তোকেই আগে জানালাম,
ওহ,
তুই এখন রেস্ট নে, আমিও যাচ্ছি আঙ্কেল মামনিকে ব্যাপারটা জানিয়ে আমিও একটু ঘুমিয়ে নিব কালকে তো কত আয়োজন আমারও তো কিছু দায়িত্ব রয়েছে,
রাহাতের এই কথাটা ফাইয়াজের কাছে কেমন যেন ভীষণ বিরক্ত লাগতে শুরু করলো ,
রাহাত বোধহয় কিছু একটা অনুমান করল, মনে মনে হেসে জায়গা ত্যাগ করল,
ফাইয়াজের বাবা মাকে রাহাতের ব্যাপারটা বলার পর তারাও বেশ আফসোস করল।
,
,
,
আজ ফাইয়াজ আর স্নিগ্ধার বিয়ে। চারিদিকে হইচই আর আনন্দে ভরা, বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে, আবার অন্যদিকে বাড়ির একমাত্র ছেলের বিয়ে। কোথাও আনন্দের কোন কমতি নেই।
শুধু হলুদের আয়োজনে একে অপরের বাড়িতে যেতে পারেনি দূরত্বটা অনেক বলে। তবে সেটা তারা নিজেরাই মানিয়ে নিয়েছে নিজেদের মত আনন্দ করেছে।
স্নিগ্ধার চোখে আবারও সেই পুরনো স্বপ্ন, তবে এবার তার প্রিয় পুরুষও তাকে চায়, এ ব্যাপারে স্নিগ্ধার কোনো দ্বিমত নেই, সম্পর্কের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বাস। স্নিগ্ধা মনে প্রাণে চায় তার প্রিয় পুরুষকে বিশ্বাস করতে। তাইতো সে মনে আবারো স্বপ্ন বুনতে শুরু করল।
স্নিগ্ধাকে তার বান্ধবীরা আর কাজিনরা মিলে সাজিয়ে দিয়েছে। সে গ্রামের মেয়ে হয়ে পার্লারের অত আধুনিক সাজ দেওয়ার কোন ইচ্ছাই তার নেই। বান্ধবী বোনেরা মিলে সাজিয়ে দেওয়ার মজাটাই আলাদা এতে ওদেরও ভালো লাগবে আর স্নিগ্ধারও বেশ ভালো লাগবে ভেবেই এই সিদ্ধান্ত।
,
,
ফাইয়াজরা সকাল সকালে রওনা দিয়েছে। নইলে এত দূরের পথ যেতে যেতে অনেকটা দেরি হয়ে যাবে। তাই তারা সময় নির্ধারণ করেই রওনা দিয়েছে আল্লাহর নাম নিয়ে যাতে তারা দুপুরের মধ্যে পৌঁছে যায়।
ফাইয়াজের গাড়িটা যখন গ্রামের ভিতরে স্নিগ্ধার বাড়ির কাছাকাছি এলো তাদের গাড়ির ঠিক পাশ থেকেই একটা কালো গাড়ি চলে গেল, ফাইয়াজের কেন জানি বারবার মনে হচ্ছে এই গাড়িটায় কিছু একটা আছে তাই সে বারবার গাড়িটার দিকে তাকাচ্ছিল যতক্ষণ দেখা যায়,
রাহাত সেটা খেয়াল করে বলল,, কিরে বারবার ওদিকে কি দেখছিস, তুই সামনে তাকাবি তোর গন্তব্য তো এখন সামনে,
ফাইয়াজ আনমনে বলল, ওই গাড়িটায় কি আছে?
অদ্ভুত ভাই ফাইয়াজ, তুই এখন যাচ্ছিস বিয়ে করতে কোথায় তুই ভাবির কথা ভাববি তা নয় অচেনা গাড়ি নিয়ে পড়ে আছিস, যেন এরকম গাড়ি তুই নতুন দেখছিস?
ফাইয়াজের তবুও অস্থির লাগতে শুরু করল,
অবশেষে তারা তাদের গন্তব্যে পৌঁছে গেল,,
বাচ্চারা বর এসেছে বর এসেছে বলে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠলো,
অতিথিদের সবাইকে সম্মানের সহিত আপ্যায়ন করা হলো,,
অন্যদিকে বাড়ির মহিলারা মেয়েরা অস্থির হয়ে পড়ল, স্নিগ্ধাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না,,,
চলবে????