আমার স্নিগ্ধপরী পর্ব-১৫

0
12

#আমার_স্নিগ্ধপরী
#পর্ব_১৫
#লেখা: #নীল_মালতীলতা

কপি নিষিদ্ধ ❌❌❌

কিছুক্ষণ আগে যেই বিয়ে বাড়িতে ছিল চারিদিকে হইহুল্লোড় আনন্দে ভরা এখন সেই বিয়ে বাড়ি নিস্তব্ধ, স্তব্ধ, আর কোনায় কোনায় ফিসফিস আওয়াজ।

বরযাত্রী আসার আগে স্নিগ্ধার এক বান্ধবী এসেছিল তার ভার্সিটি থেকে যখন স্নিগ্ধাকে সাজানো প্রায় শেষ। স্নিগ্ধাকে সাজানো শেষ হতেই তারাও রেডি হতে চলে যায়, স্নিগ্ধাকে সেই বান্ধবীর কাছে একাই রেখে যায়, যাতে করে স্নিগ্ধাও একটু রিলাক্স হতে পারে। এরপর সবাই যখন রেডি হয়ে ফিরে আসে তখন পুরো রুম ফাঁকা দেখতে পায়, সবাই বেশ অস্থির হয়ে পরে, বাড়ির প্রত্যেকটা কোনায় কোনায় খুঁজেও যখন তাকে পাওয়া গেলনা তখন চুপিচুপি স্নিগ্ধার বাবাকে খবরটা দেয়া হয়,

সিদ্দিক তালুকদার খবরটা শুনে এতটাই আশ্চর্য হয়েছেন যেনো তিনি অসময়ে অপ্রত্যাশিত কোন জোকস শুনেছেন, তিনি বাড়ির ভেতরে এলেন স্নিগ্ধার মায়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য, এগুলো কেমন জোকস? কিন্তু তিনি যখন ভিতরে এলেন ভেতরের থমথমে পরিবেশ দেখে না চাইতেও তার ভেতরে ভয় দানা বাধল। তবুও তিনি বিশ্বাস হারাতে চাইলেন না। মেয়েকে তিনি চেনেন । এরকম একটা ঘটনা ঘটানোর মতো মেয়ে তার স্নিগ্ধা নয়, তাকেতো আর জোর করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে না যে এমন একটা ঘটনা ঘটাবে। তিনি মেয়ের ঘরে গেলেন নিজে পরখ করার জন্য। সেখানে স্নিগ্ধার বান্ধবী কাজিন বোনেরা আছে অন্ধকার মুখে।

সিদ্দিক তালুকদার সেখানে গিয়ে চারিদিকে চোখ বুলালেন তবে তার কাঙ্খিত মুখটি দেখতে পেলেননা।

তখন স্নিগ্ধার এক বান্ধবী মাথা নিচু করে সিদ্দিক তালুকদারের দিকে একটি কাগজ এগিয়ে দিল,

সিদ্দিক তালুকদার সেটা নিলেন, খুলে দেখলেন তাতে লেখা,,

কোনো এক কারণে এই বিয়েটা সম্ভব নয়। তাই চলে যাচ্ছি। আমাকে খুজোনা।
তোমার আদরের মেয়ে,
স্নিগ্ধা।

লেখাটুকু পড়ে তিনি আওড়ালেন এটা আমার মেয়ে কিছুতেই করতে পারে না। কোথাও একটা ভুল আছে।
শারমিন তালুকদার নিঃশব্দে কাঁদছেন ভাবছেন এটা কিছুতেই হতে পারে না।

এককান দুকান হতে হতে পুরো বিয়েবাড়ি জানাজানি হয়েগেলো বিষয়টা।

ফাইয়াজের কানেও পৌঁছে গেলো, ফাইয়াজের মনে হচ্ছে যেনো তার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।

ফজলুল তালুকদার বিশ্বাস করতে পারলেননা যেনো, মেয়েটাকে যে কটা দিন দেখেছেন তিনি মনে হয়েছে এই ছলনার যুগে একটা খাটি সোনা।

ফারজানা তালুকদার আজ আসেননি, তিনি ঢাকাতেই থেকেগেছেন ছেলে বউ নিয়ে আসবে তিনি বরণ করবেন তাই।

চার পাশের পাড়াপ্রতিবেশির কানাঘুষায় অস্থির বিয়েবাড়ি। এমনিতেই গ্রামের মানুষজন তিলকে তাল বানানোতো এক্সপার্ট। এখনতো একটা মোক্ষম সুযোগ। তাদের তিক্ত কথায় অস্থির হয়ে উঠল স্নিগ্ধার বাবা মা ভাই বোন।

ফাইয়াজ নিজেকে সামলে ফজলুল তালুকদার আর সিদ্দিক তালুকদারের সাথে কথা বলে সারা গ্রাম তন্নতন্ন করে খুজলো।

ফারজানা তালুকদার বেশ কয়েকবার ফোন করেছিলে সবকিছু ঠিকঠাক কিনা কখন রওয়ানা দিবে জানতে, তিনি কাউকেই ফোনে পাননি তাই তিনিও অস্থির হয়ে আছেন।

তালুকদার বাড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবার। এই পরিবারের বড় মেয়ের বিয়ের বলে কথা। পুরো বিয়ে বাড়িতে ছিল মানুষের সমাগমে ভরা। এই ভরা সমাগমে এমন একটা ঘটনায় ভেঙে পড়েন সিদ্দিক তালুকদার। এখন সেই বিয়ে বাড়ি ফাঁকা।

সেই দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো গ্রাম তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি স্নিগ্ধাকে।

ফাইয়াজ তার বাবা দুই হাত ধরে আকুতি ভরা কন্ঠে বলল,, আব্বু, আব্বু প্লিজ আব্বু আমার স্নিগ্ধপরীকে খুজে দাওনা প্লিজ।

ফাইয়াজের পাগলামি দেখে আশপাশের সবাই স্নিগ্ধাকে ছিঃ ছিঃ করতে লাগলো,

শারমিন তালুকদার কান্না করতে করতে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
ছোট ভাই বোন দুটো কাঁদছে তাদের প্রিয় বোন এরকমটা করতে পারে না বলে তাদেরও ধারণা।
তবে পরিস্থিতি তাদের সবার বিরুদ্ধে।

রাহাত ফাইয়াজের পাগলামি শান্ত চোখে কিছুক্ষণ দেখে, এরপর তার কাঁধে হাত রেখে বলে,, তোর স্নিগ্ধপরী তোকে কখনো ভালবাসেনি , সে তোকে ছেড়ে চলে গেছে স্বেচ্ছায়, আমার মনে হয় এখন আর এখানে অপেক্ষা না করাই ভালো আমাদের ফিরে যাওয়া উচিত,

এমন কথা শুনে ফাইয়াজ তাৎক্ষণিক রেগে রাতের কলার ধরে টেনে হুংকার দিয়ে ওঠে বলে,, খবরদার রাহাত তুই একটা কথাও বলবি না সে আমার বিয়ে করা বউ, আমার স্নিগ্ধ কখনোই আমাকে ছেড়ে যাবে না , তার যাওয়ার হলে আরো আগেই যেতে পারতো সে সুযোগ তার ছিল আমাদের বোকা ভাবিস না, আমার নিজের ভালোবাসার উপরে আমার নিজের বিশ্বাস আছে। আমার ভালবাসা এত ঠুনকো নয়। আমি একটা ভুল করেছি হয়তো সেই ভুলের প্রতিশোধ নিচ্ছে আমার স্নিগ্ধপরী। এতে আমি কিচ্ছু মনে করব না শুধু আমার কাছে ফিরে আসলেই হবে ব্যাস, আজকে এই পরিস্থিতিগুলোর জন্য আমি তাকে কিচ্ছু বলবো না শুধু সে আমার কাছে থাকলেই হবে,

রাহাত ফের বলল, আসবেনা, কখনো আসবে না,

রাহাতের এমন কথা শুনে ফাইয়াজ এবার রাহাতকে আঘাত করে বসলো , চিৎকার করে বলল, আর একটা উল্টোপাল্টা কথা বললেই তোকে আমি শেষ করে দেব, আমার স্নিগ্ধপরী কোথাও যায়নি ও ফিরে আসবে আমার কাছে ফিরে আসবে ওকে আসতেই হবে, বলতে বলতে হঠাৎ সে তার চেতনা হারালো,

ছেলের এহেন অবস্থা দেখে ফজলুল তালুকদারের চোখে পানি এসে গেল,,

সিদ্দিক তালুকদার কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললেন,,

পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজন কানাঘুষা করছে মেয়ে একি ভুল করলো এমন ভালোবাসা কেউ পায়ে ঠেলে?

রাহাত যেন এবার একটা সাংঘাতিক সুযোগ পেয়ে বসল এর ব্যবহার তাকে করতেই হবে ভেবে ফজলুল তালুকদারের কাছে গিয়ে বলল,,,, আঙ্কেল আমার মনে হয় এবার আমাদের ফিরে যাওয়া উচিত, এখানে থাকলে ফাইয়াজ আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে,

আমার মান সম্মান সব শেষ হয়ে গেল রাহাত বাবা, আমার ছেলেটাও শেষ হয়ে যাচ্ছে,

সবঠিক হয়ে যাবে আঙ্কেল চলুন আমরা এখন ফিরে যাই,

ফজলুল তালুকদার ভাইয়ের কাছে গেলেন,, সিদ্দিক তালুকদার ভাইকে দেখে মাথা আরো নিচু করে ফেললেন, তিনি আর নিজেকে শক্ত রাখতে পারলেন না, ভাইয়ের হাত দুটো ধরে কান্না করে দিলেন, কান্না করতে করতে বললেন, ভাইজান, আপনার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোন ভাষা আমার জানা নেই, আমার মেয়েটা এমন করতে পারে না ভাইজান, এমন করার হলে তো সে প্রথমবারেই করত, আমার মেয়েটা এখন কোথায় আছে কি অবস্থায় আছে জানিনা, আমায় ক্ষমা করে দিন ভাইজান,

ফজলুল তালুকদার তার ভাইয়ের কাঁধে হাত রাখলেন, সান্তনা সুরে বললেন মেয়েটাকে আমিও খুব কাছ থেকে দেখেছি এমনটা হওয়ার কথা নয়, আমরা তো পুলিশকে জানিয়েছি, কোন না কোন একটা উপায় নিশ্চয়ই বের হবে।

তাৎক্ষণিক রাহাত আবারও এসে তারা দিতে লাগলো,, আঙ্কেল চলুন এবার আমাদের বেরোনো যাক,

ফজলুল তালুকদার এবার রাহাতের দিকে তাকিয়ে বললেন,, তুমি যেমন তোমার বন্ধুর জন্য অস্থির হয়ে যাচ্ছ তেমনি আমিও আমার বন্ধুকে এভাবে একা ছেড়ে যেতে পারি না। এখানে সত্যিটা আমরা কেউ জানিনা, মেয়েটা কোন পরিস্থিতিতে আছে তাও জানিনা, আর আমার চাচাতো ভাইতো আমার রক্তের সম্পর্ক সে আমার ছোটবেলার বন্ধু এই বিপদে একা ফেলে তো আমি যেতে পারি না বাবা।

কিছু মনে করবেন না আঙ্কেল, যেখানে এমন একটা চিঠি পাওয়া গেছে সেখানে ওই মেয়ের ব্যাপারে এখন আশা রাখাটা নেহাতি বোকামি ছাড়া আর কিছু না, তাছাড়া ফাইয়াজ এখানে থাকলে আরো অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে, আন্টি ও ঢাকাতে একা আছে,

তোমার আন্টিকে আনানোর ব্যবস্থা আমি অনেক আগেই করে দিয়েছি সে এখন পথে আছে ,

রাহাত এরপর আর বলার মত কিছুই খুঁজে পেল না, তার এখন ঢাকায় যাওয়াটা ভীষণ জরুরী,

,
,

গ্রামের পাশে যে ছোট শহর থাকে সেখান থেকে ফাইয়াজের ডাক্তারের ব্যবস্থা করেন সিদ্দিক তালুকদার, ডাক্তার এলে জানান অতিরিক্ত টেনশনের কারণে এমনটা হয়েছে, ভয়ের কিছু নেই, তবে তাকে টেনশন মুক্ত রাখার ব্যবস্থা করুন।

ফারজানা তালুকদারের পৌছাতে বেশ রাত হয়ে যায়, তাকে এখানে ডাকায় তিনি বেশ আন্দাজ করছেন কিছু একটা খারাপ হয়েছে এখানে পৌঁছে সব কিছু শুনে তিনিও বেশ ধাক্কা খেলেন, ছেলের অবস্থা দেখে তিনি আরো ভেঙে পড়লেন।

ফাইয়াজের জ্ঞান ফিরলে সে অস্থির হয়ে যায় স্নিগ্ধাকে খুঁজতে যাওয়ার জন্য, তালুকদারের লোকজন চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে স্নিগ্ধাকে খোঁজার জন্য, থানাতে ও লোক আছে এখনো পর্যন্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি ।

বাড়িতে পাড়া প্রতিবেশী আশেপাশের কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন ছিল যাদের কথার আঘাতে অস্থির হয়ে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে বিদায় দেওয়া হয়েছে। এরা পরিস্থিতি বুঝতে চায় না। কাকে কোন জায়গায় ছোট করতে হয় তাতে তারা বেশ এক্সপার্ট, তাই তাদেরকে এখানে রেখে নিজেদেরকে ছোট করার কোন মানেই হয় না।

এখন রাত প্রায় বারোটার কাছাকাছি, রাহাত সুযোগ বুঝে ফাইয়াজের বাবা-মা আর স্নিগ্ধার বাবা-মাকে বলে,, আপনাদের সঙ্গে আমার কিছু কথা ছিল আলাদা করে কথা বলতে চাই প্লিজ,

ফাইয়াজ সেখানে উপস্থিত ছিল, সেও তাকালো রাহাতের দিকে ,, বোঝার চেষ্টা করলেও রাহাত আসলে তাদের সঙ্গে কি এমন বলতে চায়, তাই তাদের সঙ্গে সেখানে ফাইয়াজ ও গেল,,

ফজলুল তালুকদার বললেন, বলো কি বলতে চাও,

রাহাত একবার ফাইয়াজের দিকে তাকায় এরপর বলে, স্নিগ্ধা যে ফিরবে না এ ব্যাপারে তো ফাইয়াজের আরো আগেই বোঝা উচিত ছিল,

ফাইয়াজের আবারো রাগ লাগছে রাহাতের উপর, কি বলতে চাইছিস তুই??

আমি আর কি বলবো এই ছবিগুলোই তো তার প্রমান,,,

চলবে???