আমার স্নিগ্ধপরী পর্ব-১৬

0
12

#আমার_স্নিগ্ধপরী
#পর্ব_১৬
#লেখা: #নীল_মালতীলতা

কপি নিষিদ্ধ ❌❌❌

আমি আর কি বলবো এই ছবিগুলোই তো তার প্রমান,,, এই বলে ফাইয়াজের বাবা-মার দিকে একটা খাম এগিয়ে দেয় রাহাত।

ফাইয়াজ খামটা দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়, এটা তো সেই খাম যেটা সেদিন অচেনা কেউ পার্সেল করেছিল। খামটা দেখে ফাইয়াজ ঘামতে শুরু করে। ভাবে এটা ওর হাতে কিভাবে এলো, এটা বাবা-মার সামনে কিছুতেই খোলা যাবে না,, এই ভেবে সে খামটা নেওয়ার জন্য এগিয়ে আসে,

রাহাত সেটা বুঝতে পেরে খামটা নিজ দায়িত্বে ফারজানা তালুকদারের হাতে পৌছে দেয়।

তা দেখে ফাইয়াজ অনুরোধের সুরে বলে, আম্মু প্লিজ আম্মু ওটা তুমি খুলো না ওটাতে আমার আর স্নিগ্ধার পার্সোনাল কিছু বিষয় আছে , যেটা তোমাদের কারো দেখা ঠিক হবে না তাহলে হয়তো বা আফসোস করবে কেন দেখলে সেটা ভেবে। প্লিজ আম্মু ওটা তুমি খুলো না ওটা আমাকে দিয়ে দাও।

ফারজানা তালুকদার কি করবেন বুঝতে না পারছেন না, খামটার দিকে এক নজর তাকাতেই ফাইয়াজ আবারও বলল,, প্লিজ আম্মু ওটা আমাকে দিয়ে দাও,

ফারজানা তালুকদার ছেলের এমন অনুরোধ ফেলতে পারলেন না খামটা ছেলের হাতে দিয়ে দিলেন,

তা দেখে রাহাত তাচ্ছিল্য হেসে বলল,, খামটার ভিতরে কি আছে তা দেখাতে চাইছিস না কেন? স্নিগ্ধার সত্য বেরিয়ে আসবে বলে?

এবার স্নিগ্ধার বাবা-মা আর ফাইয়াজের বাবা-মা সবাই অবাক হয়ে তাকালো রাহাতের দিকে,

স্নিগ্ধার বাবা বললেন, আমার মেয়ের কি এমন সত্য আছে যা এই খামের ভেতরে আছে?

রাহাত এবার স্নিগ্ধার বাবার দিকে তাকিয়ে বলল আপনার মেয়ে এইভাবে কোথায় উধাও হয়ে গেছে তার রহস্য।

রাহাতের এমন কথা শুনে সবাই বেশ অবাক হয়।

ফজলুল তালুকদার বলেন, ফাইয়াজ তাহলে একবার আমাদের ওই খামটার ভেতরে কি আছে সেটা দেখা দরকার,

এবার ফাইয়াজ রাহাত কে উদ্দেশ্য করে বলল, তুই কিভাবে জানলি যে এই খামের ভেতরে ঠিক কি আছে? আমি তো খামটা কাউকে দেখাইনি এমনকি তোকেও না, খামটা আমি দেখার পর ঠিক যেভাবে বন্ধ করে রেখেছিলাম সেভাবেই বন্ধ করাই আছে এটা যদি কেউ খুলে তাহলে অবশ্যই আমি বুঝতে পারতাম এটা কেউ খোলেনি তাহলে তুই কিভাবে বুঝতে পারলি যে এটার মধ্যে স্নিগ্ধার কিছু আছে?

রাহাত এবার কি বলবে খুঁজে পাচ্ছে না, ভাবছে সবকিছু এমন ভাবে এগিয়ে শেষসময়ে এসে ধরা পড়ে যাবে না তো??

ফাইয়াজের এবার রাহাতের প্রতি অদ্ভুত একটা সন্দেহ তৈরি হলো, বলল,, এই খামটা আমি যখন খুলেছি তখন আমার ঘরের সমস্ত দরজার জানালাও বন্ধ ছিল তুই তখন গভীর ঘুমে ছিলি তোর রুমে তাহলে, তুই কিভাবে বুঝতে পারলি যে এটার মধ্যে স্নিগ্ধার কিছু আছে??

আসলে,,

হ্যাঁ বল কি আসলে,,

তোর হাব ভাব দেখে আমার মনে হল,,

হাস্যকর কথাবার্তা রাহাত, আমি কি এমন বিহেভিয়ার করলাম যে তার জন্য তোর মনে হবে এইটাতে এমন কিছু আছে যা স্নিগ্ধপরীর আজকে হারিয়ে যাওয়ার সাথে সম্পর্কিত,,

এবার রাহাত আর কিছু বলার মত খুঁজেই পেল না, শেষমেষ আমতা আমতা করে বলল,, আচ্ছা সরি আমি বোধহয় ভুল ধার না করেছি তবে ঐ চিঠিটাতো সত্যি?

তুই কি চাস বলতো সেই তখন থেকে স্নিগ্ধাকে খোঁজায় তোর বাধা স্নিগ্ধার জন্য অপেক্ষা করতে বাধা সবকিছুতেই তো তোর বাধা কেন?

আমি চাই তুই ভালো থাক এরকম একটা ঘটনা ঘটায় যে মেয়ে তার কাছে তুই ভালো থাকবি বলে আমার মনে হয়নি তাই?

এবার ফজলুল তালুকদার বেশ বিরক্ত হয়ে বললেন, রাহাত তোমাকে আমি আমার নিজের ছেলের মতই মনে করি কিন্তু তার মানে এই নয় যে ফাইয়াজের ভালো-মন্দ বিবেচনা করার জন্য কেউ নেই, আমরা এখনো বেঁচে আছি আর তুমি যাকে নিয়ে কথাগুলো বলছো সে আমাদেরই মেয়ে,

রাহাত এবার মাথা নিচু করে বলো সরি আঙ্কেল, আসলে ফাইয়াজের জন্য চিন্তা থেকেই এমন বলে ফেলেছি আমি দুঃখিত, আঙ্কেল আমার এবার ঢাকায় ফেরা প্রয়োজন, একদিন পরেই তো আমার ফ্লাইট।

সিদ্দিক তালুকদার বললেন এখন যেহেতু অনেক রাত হয়ে গেছে কাল সকালে যেও বাবা, এরপর তিনি আস্তে আস্তে ঘর থেকে বের হয়ে গিয়ে বাসার ঘরে বসলেন, চোখ বন্ধ করে সবার সঙ্গে হেলান দিয়ে রইলেন, তার ভেতরের অবস্থা এখন সে ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারছে না, তিনি যতক্ষণ মেয়ের সঙ্গে দেখা না করতে পারবেন ততক্ষণ মেয়েকে এক ফোটা অবিশ্বাসও করবেন না।

ফাইয়াজ, ফজলুল তালুকদার, সিদ্দিক তালুকার সবাই চারিদিকে নিজেদের লোক লাগিয়ে খুঁজতে ব্যস্ত, কারোরই খাওয়া দাওয়া হয়নি, সেরকম পরিস্থিতিই নেই। সিদ্দিক তালুকদার তাদের বাড়ির কাজের মহিলা কে ডেকে বললেন সবাইকে থাকার ঘর ঠিক করে দিতে,

ফজলুল তালুকদার সিদ্দিক তালুকদার দুজনেই বেশ বিচক্ষণ মানুষ, সবার বর্ণনা অনুযায়ী স্নিগ্ধার সেই বান্ধবীকেও আর দেখা যায় নি, আর না কেউ কোন মুক্তিপণ চেয়েছে, মেয়েটাও যে এমন করবেনা তাতেও তাদের বিশ্বাস আছে,,

,
,

ফাইয়াজ বারবার স্নিগ্ধাকে খোঁজার জন্য বাইরে বের হতে যাচ্ছিল তবে সবাই তাকে বুঝিয়ে আটকেছে, ফাইয়াজের মনে হলো একবার স্নিগ্ধার ঘরটা ভালোভাবে তার নিজের তল্লাশি করা উচিত যদি কোনো ক্লু পাওয়া যায় এই ভেবে সে স্নিগ্ধার ঘরের দিকে এগোতে যায়, পথিমধ্যে একটা ঘর থেকে তার খুব পরিচিত একটা কন্ঠস্বর ভেসে আসে, তার পা দুটো নিজে থেকেই থেমে যায়, কন্ঠের আওয়াজটা বাইরে থেকে স্পষ্ট নয় তাই ফাইয়াজ একটু কাছাকাছি গিয়ে শোনার চেষ্টা করে,,

খবরদার ওর যেনো বিন্দু মাত্র কষ্ট না হয়, আর মাত্র একটা দিন, পালানোর কোনো রাস্তা যেনো না থাকে, আমি সকালেই রওয়ানা হবো,

ফাইয়াজ আর কিছু শোনার প্রয়োজন মনে করল না, সোজা স্নিগ্ধার ঘরে চলে গেলো, পুরো ঘর তচনচ করে তল্লাশি চালালো, মোবাইলটা খাটের তলায় এককোনে পেলো হয়তো ধস্তাধস্তিতে ছিটকে পড়েছে, মোবাইলটা উল্টে পাল্টে দেখলো ব্যাক কভার এ সুন্দর একটা ছোট্ট চাবি, এরপর আলমারিটাও তল্লাশি চালালো ফাইয়াজ, আলমারির ড্রয়ারের এককোনে সুন্দর একটা ডায়েরী লক করা,
এত সুন্দর ডাইরি দেখে ভেতরটা দেখার জন্য ভীষণ ইচ্ছে হলো, চাবি খুঁজতে গিয়ে তার মনে পরল মোবাইলের ব্যাক কভার এর ছোট্ট চাবির কথা, সেটা নিয়ে ট্রাই করতেই লকটা খুলে গেলো, ডাইরির ভেতর থেকে বেড়িয়ে এলো একটা খাম যা তার কাছেও একটা আছে। ফাইয়াজ তড়িঘড়ি খামটা খুলে দেখতেই তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল,,

চলবে,,,,,