উত্তল তরঙ্গ পর্ব-১৭+১৮

0
3

#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃদিশা_মনি

নেহা আজ আবার যথারীতি তার অফিসে পা রাখল। তবে আজ অফিসের পরিস্থিতি বেশ ভিন্ন। সবার মুখে একটা দুঃখী দুঃখী ভাব ও বিষন্নতা। নেহা এটা খেয়াল করে চমকে উঠল। তার এক কলিগকে সে জিজ্ঞেস করল,
“সবাইকে এমন লাগছে কেন?”

“তুমি জানো না? আজ শামিম কায়সার স্যারের ফেয়ারওয়েল হবে। আগামী দিন থেকে এই কোম্পানি সামলাবেন ওনার ছেলে শাহরিয়ার কায়সার।”

নেহাও কথাটা শুনে ভীষণ দুঃখ পেল। শামিম কায়সারকে সে ভীষণ শ্রদ্ধা করল। লোকটাও অনেক ভালো মনের ছিলেন। তার বদলে যিনি আসবেন তিনি কেমন হবেন সেই নিয়ে যারপরনাই সন্দেহ ছিল নেহার মনে। তবুও সে নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত রাখার চেষ্টা করলো।

কিছু সময় পর শামিম কায়সার এগিয়ে আসলেন। সবাই তার দিকে ফুলের তোড়া এগিয়ে দিয়ে ফেয়ারওয়ালের শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলেন। নেহাও একটি ফুলের তোড়া নিয়ে এগিয়ে গিয়ে বলল,
“ভালো থাকবেন স্যার, আপনার অবসর জীবন সুখের হোক।”

শামিম কায়সার স্নেহের সাথে নেহার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“তুমিও জীবনে এগিয়ে যাও মা। আর সবার উদ্দ্যেশ্যে আমার একটা কথাই বলার, আমার ছেলেটা একটু অন্যরকম। ও বিজনেস নিয়ে অনেক সিরিয়াস। কিছুটা রাগী স্বভাবেরও। তাই হয়তো ওর সাথে মানিয়ে নিতে তোমাদের প্রথম প্রথম অনেক কষ্ট হবে। তবে আমার ছেলেটা এতোটাও খারাপ না। আশা করি, সবটা ঠিকভাবে চলবে।”

★★
আহির শাহরিয়ার কায়সারের সাথে মিটিংটা ক্যান্সেল করে তড়িঘড়ি করে ফ্লাইটে করে দেশে ফিরছে। কারণ সে খবর পেয়েছে যে তার মেয়ে আহিরা হঠাৎ করে ভীতি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এই খবর শুনে আর স্থির থাকতে পারে নি আহির।

দীর্ঘ কয়েক ঘন্টার জার্নির পর আহির দেশে ফিরে এলো। দেশে এসেই সে কোন কিছু না ভেবে নিজের বাড়ির দিকে রওনা দিলো। এমন সময় বাড়িতে পা রাখতেই নজরে এলো নাতাশাকে। আহির দৌড়ে দিয়ে তীব্র উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“আমার মেয়ে..আমার আহিরা এখন কেমন আছে নাতাশা?”

নাতাশা বলে,
“আগের থেকে বেটার আছে। তুই গিয়ে একবার দেখা করে আয়।”

আহির আর সময় নষ্ট না করে নিজের মেয়ের রুমে গেল। আহিরা যখন নিজের বেডে শুয়েছিল। আহির তার পাশে গিয়ে বসে বলে,
“আহিরা, তুমি কেমন আছ প্রিন্সেস?”

আহিরা কোন জবাব দেয় না। আহির বলে,
“কোন কথা বলছ না কেন?”

“আমার জন্য তোমার কানাডা থেকে যেই গিফটগুলো আনার কথা ছিল সেগুলো কোথায়?”

আহির দীর্ঘ শ্বাস ফেলে আহিরার দিকে সেই গিফট গুলো বাড়িয়ে দেয়। আহিরা সেই গিফট গুলো নিয়ে ভীষণ খুশি হয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। এদিকে আহিরের চোখেমুখে দীর্ঘ শ্বাস। আহিরা আহিরকে বলে,
“গিফট গুলো পেয়ে ভীষণ ভালো লাগছে৷ এগুলো আনার জন্য ধন্যবাদ।”

আহির আহিরার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আহিরা গিফটগুলো পেয়ে সেগুলো নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আহিরের সাথে অতিরিক্ত আর কোন কথা বলে না।

আহিরার এমন ব্যবহারে আহির কিছুটা কষ্ট পায়। আহিরাকে সে এতোটা ভালোবাসে অথচ আহিরার কাছে যেন তার এসব ভালোবাসার কোন মূল্যই নেই। সে শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে, নিজের সুবিধার কথা চিন্তা করে সব পরিস্থিতিতে।

★★
নেহা বাসায় ফিরেই দেখতে পায় তার মেয়ে নিয়া বসে বসে তাজিবের সাথে খেয়াল ব্যস্ত ছিল৷ এই দৃশ্য দেখে সে হেসে তাদের পাশে বসে বলে,
“বাহ, দুই ভাইবোন মিলে তো খুব মজা হচ্ছে।”

নিয়াও খুশি হয়ে বলে,
“জানো, আম্মু। ভাইয়া আজ আমাকে একটা নতুন খেলা শিখিয়েছে। আমার তো খেলাটা ভীষণ ভালো লাগছে।”

“বাহ, তাই নাকি।”

এরপর সে নিয়া ও তাজিবকে বলে,
“খেলাধুলা অনেক হয়েছে। এবার তোমরা জলদি খাওয়া দাওয়া করে নাও। তাজিব, তোমার আম্মু আর দাদি কেমন আছে?”

“আম্মু আর দাদি তো অনেক ভালো আছে। কিন্তু তোমার উপর রেগে আছে কারণ তুমি অনেকদিন থেকে আমাদের বাসায় যাও না। তাই আজ তোমায় আমাদের বাসায় যেতে বলেছে।”

“আচ্ছা, তোমার আম্মু আর দাদিকে বলে দিও আজ আমি সময় করে তোমাদের বাসায় যাব।”

নেহার কথা শুনে তাজিব খুশি হয়ে বলে,
“নিয়াকেও নিয়ে যেও আন্টি, আমি অনেক নতুন টয় কিনেছি সেগুলো ওকে দেখাব।”

“আচ্ছা, আমি নিয়াকেও নিয়ে যাব।”

একথা শুনে নিয়া ও তাজিব দুজনেই ভীষণ খুশি হয়।

★★
শাহরিয়ার কায়সার পা রাখল ঢাকায়। আজ থেকে নিজের বাবার কোম্পানির দায়িত্ব সে তুলে নিলো নিজের কাঁধে। এসেই সর্বপ্রথম সিইওর চেয়ারটা দখল করে নিলো সে। তারপর বিচক্ষণ চোখে সবটা পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। তার রাগী রাগী চেহারার জন্য কেউ তার কাছে ঘেঁষতেও ভয় পাচ্ছিল।

শাহরিয়ারের অবশ্য এটা নিয়ে কোন কিছু যায় আসে না। সে তো নিজের কতৃত্ব কিভাবে স্থাপন করা যায় সেই চিন্তায় ব্যস্ত ছিল। শাহরিয়ারের ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে এই অফিসে তার নতুন ম্যানেজার খালেক ইসলাম তার সাথে দেখা করল। খালেক ইসলাম এসেই শাহরিয়ারকে সালাম দিলো। শাহরিয়ার শীতল কণ্ঠে বলল,
“এই অফিসের সবার ফাইল আমার কাছে এনে দাও। আর হ্যাঁ, জানি না এতদিন কি হয়েছে কিন্তু আমি একজন পাংচুয়াল মানুষ, তাই আমি চাই আমার অফিসের সব কর্মচারীও পাংচুয়াল হোক। এই কথা সবাইকে বলে দিও। এখন থেকে কেউ লেইট করে অফিসে আসলে শুরুর দিকে তার স্যালারি থেকে টাকা কাটা হবে আর তাতেও যদি সে না শোধরায় তাহলে চাকরি থেকেই বের করে দেয়া হবে। ”

শাহরিয়ারের চোখে ছিল প্রছন্ন হুমকি। খালেক ইসলাম ভয়ে ভয়ে বলেন,
“আচ্ছা, স্যার।”

বলেই তিনি চলে যান। শাহরিয়ার নিজের ডেস্কে বসে কফি খাচ্ছিল। এমন সময় সে থাই গ্লাসের দিকে তাকিয়ে খেয়াল করল একজন নারী কেবল মাত্র অফিসে প্রবেশ করল। অথচ অফিস শুরুর ১০ মিনিট হয়ে গেছে। শাহরিয়ারের মেজাজটা এমনিতেই চটে ছিল।

সে দ্রুত বাইরে এলো। নারীটি আর কেউ ছিল না, এটা ছিল নেহা। শাহরিয়ার সরাসরি নেহার কেবিনে গেল। নেহা তখন সবেমাত্র নিজের চেয়ারে বসেছিল এমন সময় শাহরিয়ার এসে বলল,
“এটা অফিস, কোন হাট বাজার নয় যেখানে যখন ইচ্ছা ঢুকবেন আর যখন ইচ্ছা বের হবেন।”

কথাটা শুনেই নেহা চমকে গিয়ে চোখ তুলে তাকায় শাহরিয়ারের দিকে। শাহরিয়ারকে সে আগে কখনো দেখে নি। তাই সে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। শাহরিয়ারের লম্বা-ফর্সা চেহারা, সুঠাম দেহ ও চেহারায় একটা বিদেশী ভাব। নেহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“কে আপনি?”

শাহরিয়ার ভীষণ রেগে বললো,
“আমি কে সেটা খুব শীঘ্রই জানতে পারবেন, আপাতত আমি যেটা বললাম সেটা মেনে চলার চেষ্টা করুন।”

হঠাৎ অচেনা অজানা কারো মুখে এমন কথা শুনে নেহারও মাথা গরম হয়ে গেল। তাই সেও বলল,
“কে আপনি যে আমাকে আপনার কথা শুনে চলতে হবে? আপনি কি আমার বস নাকি? নিজেকে কি মনে করেন?”

শাহরিয়ার হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করল। এমন সময় খালেক ইসলাম এসে ইশারা করে নেহাকে চুপ করতে বলল কিন্তু নেহা শুনল না। নেহা খালেক ইসলামকে জিজ্ঞেস করল,
“খালেক ভাই, দেখুন তো এই লোকটা কেন৷ চিনি না জানি না আমাকে এসে জ্ঞান দিচ্ছে।”

শাহরিয়ার খালেক ইসলামের দিকে তাকিয়ে বলে,”ওনাকে আমার পরিচয়টা দিয়ে দাও।”

খালেক ইসলাম ঢোক গিলে বলেন,
“নেহা উনি শাহরিয়ার কায়সার, শামিম স্যারের ছেলে। এই কোম্পানির নতুন সিইও।”

কথাটা শুনেই নেহার হুশ উড়ে যায়! তার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। না জেনেই এত কিছু বলে ফেলল সে। এবার কি হবে?!
চলবে ইনশাআল্লাহ✨

#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ১৮
#লেখিকাঃদিশা_মনি

নেহা ভয়ার্ত চোখে তার নতুন বস শাহরিয়ার কায়সারের দিকে তাকাচ্ছিল। শাহরিয়ার কায়সার ধীর পায়ে নেহার দিকে এগিয়ে আসছিল। নেহা বুঝতে পারছিল এখন হয়তোবা তাকে খুব কড়া কিছু কথা শুনতে হবে তাই আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে নিলো। শাহরিয়ার কায়সার একদম নেহার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি তো এটা ভেবেই অবাক হচ্ছি যে এত বড় একটা কোম্পানিতে আপনি জব পেলেন কিভাবে! আপনার মাঝে তো ম্যানারস নামে কিছু নেই দেখছি!”

নেহার গায়ে লাগে কথা টা। তবে এখন সে আর কিছু বলে শাহরিয়ার কে চটিয়ে দিতে চায় না এজন্য চুপ থাকে। তখন খালেক ইসলাম বলে ওঠেন,
“স্যার, উনি আমাদের কোম্পানির একজন বিশ্বস্ত ও পরিশ্রমী কর্মী। আপনার বাবার অনেক স্নেহভাজনও। হয়তো ওনার কোন কারণে ভুল হয়ে গেছে কিন্তু..”

শাহরিয়ার এবার রক্তিম চোখে খালেক ইসলামের দিকে তাকিয়ে বলে,
“ভুল? কিসের ভুল? শাহরিয়ার কায়সারের ডিকশনারিতে ভুল বলে কোন শব্দই নেই। না, আমি কোন ভুল করি না না কোন ভুল পছন্দ করি। যদি কেউ ভুল করে তাকে তার উপযুক্ত শাস্তিও আমিই দেই।”

বলেই সে নেহার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আর এই মেয়েটিকেও ওর ভুলের শাস্তি পেতে হবে। ওকে ডিমোশন করে দেয়া হোক!”

নেহা আতকে উঠল! ডিমোশন! কত কষ্ট করে সে এই কোম্পানিতে নিজের একটা অবস্থান তৈরি করেছিল আর এক নিমেষেই তাকে কিনা ডিমোশন দেয়া হবে। নেহা এবার আর চুপ থাকতে না পেরে বলে উঠল,
“স্যার, আমি প্রথমেই নিজের ব্যবহারের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কিন্তু..আপনি কি এটা ঠিক করছেন? আমার সামান্য একটা ভুলের জন্য..”

শাহরিয়ার চেচিয়ে উঠে বলল,
“সামান্য? এই ভুলটাকে তোমার সামান্য মনে হচ্ছে? তুমি যেই টোনে আমার সাথে কথা বলেছ আজ অব্দি কারো সাহস হয় নি এভাবে আমার সাথে কথা বলার। এই ব্যাপারটা আমি মেনে নেবো না। আর কি বললে আমি ঠিক করছি না? শাহরিয়ার কায়সার যা করে তা সবসময় ঠিকই করে। বললামই আমার ডিকশনারিতে ভুল বলে কোন শব্দ নেই। আর তুমি যদি এর থেকে বেশি আর একটা কথা বাড়াও তাহলে চাকরিটাও আর থাকবে না।”

নেহা এবার পুরোপুরি দমে গেল। নিজের আত্মসম্মানে আঘাত পেলেও এই মুহুর্তে তার আর অন্য কোন উপায় নেই। নিয়া বড় হচ্ছে, তার খরচ বাড়ছে। এই উচ্চমূল্যের বাজারে নিজের মেয়েকে নিয়ে টিকে থাকতে নেহার এই চাকরিটা করা প্রয়োজন। তাই আপোষ তাকে করতেই হলো নিজের সম্মানের সাথে। নেহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
“ঠিক আছে, স্যার। আপনি যা বলবেন তাই হবে।”

শাহরিয়ার হাসল। তার হাসিতে বিজয়ীসূচক একটা আভা দেখা যাচ্ছে। এই অসহায় আত্মসমর্পণই তো সে দেখতে চায় সবার চোখে। শাহরিয়ার প্রসন্ন হয়ে নিজের কেবিনের দিকে ফিরে যায়। এদিকে নেহা নিজের চেয়ারে বসে পড়ে। খালেক ইসলাম তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,
“চিন্তা করো না, নিজের কাজ করে যাও। সব ঠিক হয়ে যাবে।”

নেহা চুপচাপ সেখানে বসে থাকে। এই সান্ত্বনাও আজ তার জন্য যথেষ্ট নয়। নেহা ভাবে,
“কেন এমন হলো আমার সাথে? শামিম স্যারের মতো এতো ভালো একজন লোকের ছেলে এত নির্দয়, এত পাষাণ কিভাবে হতে পারে? ওনাকে দেখে আজ যেন আমার অতীতের কারো কথা মনে পড়ে যাচ্ছে..”

অতীতের কিছু স্মৃতি মানসপাটে ভেসে আসতেই নেহা নিজেই নিজেকে তিরস্কার করে বলে,
“না, নেহা। এই অতীত নিয়ে তুই আর ভাববি না। তোর অতীত যাই হোক, তোর মেয়ের ভবিষ্যৎ অনেক সুন্দর হবে। আর এজন্য তোকে চেষ্টা করে যেতে হবে যেন অতীতের কোন ছায়া তোর মেয়ের উপর না পড়ে।”

★★
আহির অফিসে এসে নিজের কেবিনে বসেছিল। আজকাল তার দিনগুলো বড্ড খারাপ যাচ্ছে। আহিরার অসুস্থতার জন্য কানাডায় অন্তত গুরুত্বপূর্ণ একটা মিটিং ছেড়ে আসতে হয়েছে। এদিকে বাড়িতে ফিরে আহিরার শীতল ব্যবহার তাকে ভীষণ কষ্ট দিয়েছে। এমন সময় হঠাৎ করে মুমিনুল পাটোয়ারী আহিরের কেবিনে এসে বলল,
“কি ভাবছ আহির?”

আহির দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,
“কিছু না, আব্বু। কানাডায় একটা গুরুত্বপূর্ণ মিটিং স্থগিত করে আসতে হয়েছে সেটা নিয়েই ভাবছি। কানাডার অন্যতম বড় কোম্পানি ইনফিনিক্স যা মূলত একটি বাংলাদেশী ব্যান্ড তার নতুন সিইও শাহরিয়ার কায়সারের সাথে একটা মিটিং করার কথা ছিল আমার। কোন একটা বিজনেস ডিল করতে পারলে কোম্পানির অনেক উপকার কত। এমনিতেই শেয়ারবাজারে কিছুটা ধ্বস নেমেছে তার উপর..”

আহিরকে মাঝপথেই থামিয়ে দিয়ে মুমিনুল পাটোয়ারী বললেন,
“এসব ব্যবসার কথা পড়ে থাকে। তোমার নিজের জীবনে যে ধ্বস নেমেছে সেটা তুমি দেখছ না?”

“মানে?”

“আর কতকাল তুমি এভাবে কাটাবে? ৫ বছর আগে একটা বাচ্চা মেয়েকে কোলে নিয়ে এসে বললে, ও তোমার মেয়ে। আমি বিনাবাক্যে সব মেনে নিলাম। কিন্তু এবার তো তোমার নিজের জীবন নিয়েও ভাবতে হবে। নিজের বিয়েশাদি..”

“আব্বু প্লিজ..এই বিষয় নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না।”

“কেন তুমি নিজেকে একাকীত্বের মাঝে এভাবে কষ্ট দিচ্ছ আহির? আমি হয়তো তোমার নিজের বাবা নই কিন্তু আমি এটা স্পষ্ট বুঝতে পারছি যে, তুমি বিগত ৫ টা বছর ধরে এক মুহুর্তও শান্তিতে ছিলে না। সবসময় তোমার চোখে কোন একটা ভয়, একটা গভীর অপরাধবোধ দেখতে পাই আমি। এর কারণ কি আহির?”

আহির কিছুই বলে না। কিছু সময় নিশ্চুপ থেকে বলে,
“অনেক সময় তো অনেকের দীর্ঘ শ্বাসও মানুষের শাস্তির কারণ হয় আব্বু।”

“ঠিক বুঝলাম না।”

আহির কিছু বলতে যাবে এমন সময় তার কোম্পানির একজন কর্মচারী এসে বলে,
“স্যার, একটা ভালো খবর আছে। আমি ইনফিনিক্স কোম্পানিতে যোগাযোগ করেছিলাম। ওখান থেকে ওরা জানিয়েছে ওনাদের সিইও শাহরিয়ার কায়সার আপনার সাথে একটা মিটিং করতে চান ঢাকায়। বর্তমানে উনি বাংলাদেশেই আছেন।”

আহির স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
“বাহ, এটা তো অনেক ভালো খবর। তুমি সব আপডেট আমাকে জানাতে থাকো।”

“আচ্ছা, স্যার।”

আহির প্রসন্ন হয়। মুমিনুল পাটোয়ারীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“যাক, নিশ্চিত হলাম। এবার একটা ইতিবাচক কিছু আশা করছি।”

“বিজনেসে নাহয় ইতিবাচক আশা করছ কিন্তু তোমার জীবনে কি কোন ইতিবাচক কিছু আসবে?”

★★
নেহা নিজের কেবিনে বসে বসে অনেক গুলো ফাইল ঘাটছিল। শাহরিয়ার কায়সারের মতো প্রতিশোধপরায়ণ লোক শুধু তাকে ডিমোশন করেই ক্ষান্ত হন নি বরং নেহার কাজের চাপ আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন এমনকি অতিরিক্ত কয়েক ঘন্টা কাজ করতে হচ্ছে তাকে। শাহরিয়ারের নামে মনে মনে হাজারটা খারাপ কথা বলে নেহা নিজের কাজগুলো করে যাচ্ছে।

এমন সময় খালেক ইসলাম এসে নেহাকে বলে,
“তোমাকে একটা কথা জানানোর ছিল।”

নেহা ফাইল ঘাটতে ঘাটতেই বলে,
“জ্বি, বলুন।”

“আগামীকাল শাহরিয়ার স্যার পাটোয়ারী গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্টিজের সাথে একটা মিটিং করবেন আর সেখানে প্রেজেন্টেশনের দায়িত্ব তোমায় দিয়েছেন উনি।”

নেহা আৎকে উঠে বলল,
“আমাকেই কেন? এমনিতেই এত গুলো ফাইলের কাজ করতে হচ্ছে। তার উপর এখন আবার সারা রাত জেগে প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে হবে। কোন জন্মের বদলা নিচ্ছেন উনি আমার উপর?”

“আস্তে বলো। উনি শুনলে আবার রেগে যাবেন। এতদিন তো শামিম কায়সার স্যার ছিলেন তখন আমাদের জীবন অনেক সুন্দর ছিল। তবে এবার মনে হচ্ছে, শাহরিয়ার স্যার আমাদের জীবন একদম ওষ্ঠাগত করে দেবেন।”

এরমধ্যে শাহরিয়ার কায়সার নিজের কেবিন থেকে খালেক ইসলামকে ডাক দেয়। যার ফলে তাকে চলে যেতে হয়। এদিকে নেহা ভাবতে থাকে,
“পাটোয়ারী গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্টিজ! নাম তো শুনেছি। কিন্তু এই কোম্পানির ওনারকে তো কখনো দেখি নি। যাইহোক, আমার কি তাতে? আপাতত দ্রুত বাসায় ফিরে নেহার জন্য রাতের খাবার বানাতে হবে তারপর আবার প্রেজেন্টেশনও তৈরি করতে হবে। আমি কাজে লেগে পড়ি।”
চলবে ইনশাআল্লাহ✨