#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ১৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নেহা আগামীকাল প্রেজেন্টেশন দেয়ার জন্য একদম তৈরি হয়ে নিচ্ছে। অফিস থেকে বাসায় ফিরেই সে খেয়াল করল নিয়া ভালো বাচ্চার মতো খাওয়া দাওয়া করে পড়তে বসেছে। এটা দেখে নেহা নিশ্চিত হয়ে বললো,
“যাক, আমার মেয়েটা পরিশ্রমী আছে৷ এভাবে চলতে থাকলে ওর একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ কেউ আটকাতে পারবে না!”
বলেই সে হাসল। এমন সময় নিয়া খেয়াল করলো নেহা এসেছে এবং সে শান্ত ভঙ্গিতে নিয়ার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল,
“আম্মু, তুমি এসেছ? আমি তোমার সব কথা মেনে চলেছি। যেমনটা তুমি বলেছিলে।”
“গুড গার্ল। এখন তুমি জলদি ঘুমিয়ে পড়ো। কাল সকালে তো আবার স্কুলে যেতে হবে।”
“হ্যাঁ, তুমিও আমার সাথে ঘুমাতে চলো আম্মু। তোমায় অনেক ক্লান্ত লাগছে।”
নেহা বললো,
“তুমি ঘুমাও নিয়ামনি, আমার অফিসে কিছু জরুরি কাজ আছে তো। আমি সেসব কাজ শেষ করে তারপর ঘুমাবো।”
“তোমাকে এত কষ্ট কেন করতে হয় আম্মু?”
সরল মনে প্রশ্নটা করল নিয়া। নেহা নিজের মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“জীবনটা যে এমনই নিয়ামনি। তুমি তো এখনো অনেক ছোট আছ তাই বুঝবে না।”
“আমি যখন বড় হয়ে যাব, তখন আমি একাই সব কাজ করব আর তোমাকে কোন কাজ করতে দেব না।”
নিজের মেয়ের মুখে এমন কথা শুনে নেহা আবেগপ্রবণ হয়ে তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,
“তুমিই তো আমার সব নিয়ামনি! তোমাকে নিয়েই তো আমার জীবন। আমার মেয়েটা কত ভাবে আমাকে নিয়ে। তুমি না থাকলে হয়তো আমিও আজ থাকতাম না। এভাবেই সবসময় মায়ের পাশে থেকো। তোমার মা যে অনেক একা।”
★★
আহির ঘুমাতে যাবার আগে একবার আহিরার রুমে উঁকি মারল। আহিরা তখনো ফোনে রিলস দেখছিল৷ আহির এগিয়ে এসে আহিরাকে বলে,
“তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ো আহিরা। এত ফোন চালালে চোখের ক্ষতি হবে।”
আহিরা বিরক্ত স্বরে বলে,
“পাপা, আমায় বিরক্ত করো না। চোখের ক্ষতি হলে ডাক্তার তো আছে ঠিক করার জন্য।”
“কিন্তু কাল সকালে তো তোমার স্কুল আছে প্রিন্সেস, স্কুলে যাবে না?”
“না, আমি আর ঐ স্কুলে পড়বে না।”
“কেন? স্কুলে কেউ কি তোমায় কিছু বলেছে? বললে আমায় বলো সেটা। আমার মেয়েকে কেউ কিছু বললে আমি সেটা বরদাস্ত করবো না।”
“আমি আর গাজীপুরে পড়াশোনা করতে চাই না। আমি ঢাকার স্কুলে যাব।”
“ঢাকায়?”
“হ্যাঁ, ঢাকায়। তুমি আমায় ঢাকার স্কুলে ভর্তি করাও। এই এক স্কুলে পড়াশোনা করতে করতে আমি বোর হয়ে গেছি। আমি শুনেছি, ঢাকার স্কুলগুলো অনেক ইন্টারেস্টিং হয়।”
“কিন্তু প্রিন্সেস বছরের এই মাঝামাঝি সময়ে এসে…”
“আমি কিচ্ছু শুনতে চাই না পাপা। তোমাকে আমায় ঢাকার স্কুলে এডমিট করাতেই হবে। নাহলে আমি আর স্কুলেই যাব না।”
আহির নিজের মেয়ের জেদের কাছে হার মেনে বলে,
“ঠিক আছে। আমার প্রিন্সেস যা চাইছে তাই হবে। এবার খুশি?”
“খুব।”
“পাপাকে একটা হামি দাও।”
আহিরা বলে,
“তোমার মুখ আগে ভালো করে ক্লিন করে এসো তারপর হামি দেবো। জানোই তো, হাইজিন মেইনটেইন করে চলা কতটা প্রয়োজনীয়।”
আহিরার কথায় আহিরের মনে আঘাত লাগে। তবুও সে হাসিমুখে বিদায় নেয়। দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলেন মুমিনুল পাটোয়ারী। আহিরকে বাইরে আসতে দেখেই তিনি বললেন,
“এভাবে মেয়েকে আর কত মাথায় তুলবি আহির? এভাবে ওর সব জেদ পূরণ করে করে তো তুই ওকে বিগড়ে দিচ্ছিস।”
“এটা তুমি কেমন কথা বলছ আব্বু? আহিরা আমার মেয়ে, ওর ইচ্ছা আমি পূরণ করবো না?”
“সেটা কর সমস্যা নেই কিন্তু এভাবে যদি তুই ওর সব কথা মেনে চলিস তাহলে তো..ও এসবে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। ও মনে করবে, ও যা চাইবে তাই পাওয়া সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতা তো ওকে বুঝতে হবে নাকি?”
“আমার মেয়ের আমি কোন অভাব রাখব না আব্বু। ওকে আমি সোনায় মুড়িয়ে রাখব।”
“যদি কোনদিন ও তোর কাছে ওর মার ব্যাপারে জানতে চায় তখন কি করবি?”
আহির হতবাক হয়ে তাকালো মুমিনুল পাটোয়ারীর দিকে৷ মুমিনুল পাটোয়ারী বললেন,
“আমি জানি, আমার এই প্রশ্নের কোন উত্তর নেই তোর কাছে। উত্তর আমি আশাও করি না। শুধু একটা কথাই বলব, এখনো সময় আছে। মেয়েকে ভালোবাসা দেয়ার পাশাপাশি একটু শাসনও কর। তোর মেয়ে যাতে কোনভাবেই হাতের নাগালের বাইরে না যায় সেটা খেয়াল রাখ। নাহলে হয়তো এমন অবস্থা হবে যে, ও এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে যে তুই চাইলেও আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবি না।”
★★
নেহা আজ ভীষণ সকাল সকাল চলে এসেছে অফিসে। প্রেজেন্টেশনের সব প্রস্তুতি সে গতরাতেই তৈরি করে নিয়েছে। সারারাত ভালো করে না ঘুমাতে পারায় এখন তার মাথায় ভীষণ যন্ত্রণা হচ্ছে। তবুও নেহা নিজেকে যথাসম্ভব সামলে রাখছে।
নেহা নিজের কেবিনে এসে বসে ছিল এমন সময় খালেক ইসলাম এসে বলেন,
“প্রেজেন্টেশনের সবকিছু ঠিকঠাক তো?”
“জ্বি।”
“আচ্ছা, সাবধানে। শাহরিয়ার স্যার কিন্তু অনেক খুতখুতে স্বভাবের মানুষ। সামান্য ভুলেই অনেক রেগে যান। তাই খেয়াল রেখো যেন কোন ভুল না হয়।”
নেহা মাথা নাড়ায়। এমন সময় শাহরিয়ার খালেক ইসলামকে ডেকে পাঠালে তিনি চলে যান।
নেহা প্রেজেন্টেশনের শেষ কাজগুলো দেখছিল। এরমধ্যে তার চোখ যায় টেবিলে রাখা একটি ফাইলের দিকে। এই ফাইলটা সম্ভবত পাটোয়ারী গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্টিজ থেকে এসেছে। নেহা ফাইলটা তুলে নিয়ে সেটা ঘাটতে লাগল। হঠাৎ করেই স্বাক্ষরের যায়গায় চোখ পড়তেই নেহা আতকে উঠল। কারণ সেখানে স্পষ্ট করে স্বাক্ষরের স্থলে আহির পাটোয়ারীর নাম লেখা। নেহা ভীত স্বরে বলল,
“আহির…এই নামটা আবার কেন ফিরলো আমার জীবনে?”
সহসা ৫ বছর আগেকার সেই বিভৎস স্মৃতিগুলো উঠে এলো নেহার মানসপটে। মনে পড়ে গেল ৯ মাস বন্দিদশার সেই যন্ত্রণাময় অধ্যায় গুলো। নেহা নিজেকে ঠিক রাখতে পারছিল না। তার ঘাম তীব্র হচ্ছিল। এমন সময় সে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো। আহিরের স্মৃতি ভোলার চেষ্টা করে নিজেই নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,
“তুই একটু বেশিই ভাবছিস নেহা। এই আহির হয়তো অন্য কেউ। একই নামে পৃথিবীতে তো অনেক মানুষ থাকতে পারে। তাছাড়া আহির পাটোয়ারী একজন স্বনামধন্য ব্যবসায়ী। তোর জীবনে যেই জঘন্য লোকটা এসেছিল সে কিছুতেই এই লোকটা হবে না। তার পদবীও তো তুই জানতি না। যাইহোক, এসব নিয়ে আর ভাবব না। এখন আমি নিজের কাজে ফোকাস করব।”
বলেই সে সব ফাইল গুলো আবারো ভালো করে চেক করে দেখতে থাকে কোন ভুলত্রুটি আছে কিনা।
কিছু সময় ফাইলগুলো চেক করার পর সে যখন বুঝল কোন ভুল হয়নি তখন শান্তি পেল।
★★
আহিরের গাড়ি এসে থামলো ইনফিনিক্স কোম্পানির সামনে। আহির গাড়ি থেকে নেমে নিজের সানগ্লাস খুলে বলল,
“এই তাহলে সেই ইনফিনিক্স।”
বলেই সে ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। অফিসে প্রবেশ করা মাত্রই অফিসের কিছু লোক ফুল দিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানায়। আহির সোজা গিয়ে কনফারেন্স কক্ষের দিকে পা বাড়ায়।
এদিকে নেহাও সমস্ত ফাইল হাতে নিয়ে কনফারেন্স রুমের দিকে যাচ্ছিল। এমন সময় পেছন থেকে হঠাৎ কেউ তার নাম ধরে ডাক দেয়,
“নেহা!”
নেহা সাথে সাথেই পেছন ফিরে তাকায়। এদিকে এত বছর পর নেহার নামটা শুনে আহিরও সেদিকে তাকায়। কিন্তু নেহা অন্যদিকে তাকানোয় সে তার চেহারা দেখতে পায়না। আহির বলে ওঠে,
“নেহা?”
এমন সময় তার কোম্পানির এক কর্মচারী বলে,
“স্যার, চলুন।”
“হ্যাঁ, যাচ্ছি।”
আহির ভাবে এটা তার মনের ভুল। নেহা এখানে কিভাবে আসবে। ৫ বছর থেকে তো তার কোন খোঁজই পায়নি সে। তাছাড়া নেহাকে যেই অবস্থায় সে ফেলে রেখেছিল তাতে এত বড় কোম্পানিতে আসা তার পক্ষে অসম্ভব। আহির কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করে। এদিকে নেহা ফাইল ঘাটতে ঘাটতে কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করছিল। সে ফাইলে এতো মগ্ন ছিল যে কোনদিকে কোন খেয়ালই ছিল না।
চলবে ইনশাআল্লাহ✨
#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ২০
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নেহা কেবিনের সামনে এসে ফাইলটা আবার ভালো করে দেখে নিয়ে কেবিনে প্রবেশ করতে যাবে এমন সময় তার দুই চোখ থমকে গেল ডান দিকের টেবিলে বসা ব্যক্তিটিকে দিকে। নেহা যেন নিজের দুই চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। সে কি ঠিক দেখছে? নেহা বলে উঠল,
“নাহ, এটা হতে পারে না। এই ভয়ানক অতীত আমার জীবনে ফিরতে পারে না।”
আহির তখনো নেহাকে দেখে নি। সে নিজের হাতে থাকা ফাইলটা একবার ভালো করে চেক করে নিচ্ছে। এরমধ্যে হঠাৎ করে খালেক ইসলাম নেহার পাশে এসে দাঁড়িয়ে বললেন,
“কি হলো নেহা? এভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন? যাও প্রেজেন্টেশনটা দাও।”
নেহা দ্রুত কেবিনের দরজা থেকে সরে এসে খালেক ইসলামকে বলল,
“আমি এই প্রেজেন্টেশনটা দিতে পারবো না। আপনি দয়া করে কিছু একটা করে ম্যানেজ করুন।”
খালেক ইসলাম অবাক স্বরে বললেন,
“এসব কি বলছ তুমি নেহা? এমনিতেই শাহরিয়ার স্যার তোমার উপর রেগে আছে তার মধ্যে যদি এই প্রেজেন্টেশনটা না করতে চাও তাহলে কোম্পানির অনেক বড় লস হয়ে যাবে। এত অল্প সময়ে তো অন্য কাউকে পাওয়াও যাবে না। এমন হলে তোমার চাকরিটা হয়তো আর থাকবে না।”
নেহা এবার উভয় সংকটে পড়ে। আহিরের মুখোমুখি সে হতে পারবে না কিন্তু এই চাকরিটাও যে তার দরকার। অনেক ভেবে নেহা খালেক ইসলামকে বলে,
“আমি প্রেজেন্টেশনটা দেব কিন্তু তার জন্য আপনায় আমার একটা সাহায্য করতে হবে।”
“কি সাহায্য?”
নেহা কিছু একটা বলে৷ তার কথা শুনে খালেক ইসলাম বলেন,
“কোন ব্যাপার না, আমি দেখছি কি করা যায়।”
“ধন্যবাদ।”
★★
আহির বারবার ঘড়িতে সময় দেখছে। এসে থেকে ১০ মিনিটের মতো তারা বসে আছে। কিন্তু প্রেজেন্টেশনের কোন প্রস্তুতি এখনো দেখতে পাচ্ছে না। শাহরিয়ারকেও কিছুটা বিরক্ত লাগছ। আহির হঠাৎ করে শাহরিয়ারকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে ওঠে,
“আমি তো শুনেছিলাম আপনি সময়ের ব্যাপারে অনেক পাংচুয়াল মিস্টার আহির। কিন্তু বাস্তবে তো ভিন্ন কিছু দেখছি।”
শাহরিয়ার অবাক ও কিছুটা রাগী স্বরে বলে ওঠে,
“মানে কি বলছেন আপনি?”
“প্রেজেন্টেশন দিতে আর কত টাইম লাগবে?”
শাহরিয়ারের ইগো হার্ট হয় কথাটা শুনে। যেই শাহরিয়ার সবসময় অন্যকে কথা শোনায় সে আজ নিজেই অন্যের কটু কথায় বিরক্ত। শাহরিয়ারের সব রাগ গিয়ে জমা হলো নেহার উপর। শাহরিয়ার চোখ বন্ধ করে বলল,
“আমি এক থেকে তিন গুনব। এরমধ্যে যদি ঐ মেয়েটা না আসে তাহলে ওকে আমি চাকরি থেকে বের করে দেব।”
“এক,,,দুই,,,,তি..”
শাহরিয়ার নিজের গণনা শেষই করতে পারে না এরইমধ্যে তার কানে আসে একটি নারীকন্ঠের শব্দ,
“উহুম..”
শাহরিয়ার চোখ খুলে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় নেহা সমস্ত ফাইল নিয়ে এসেছে। তবে তার সাজসজ্জা অদ্ভুত। মাথায় একটা উইগ বা পরচুলা লাগিয়েছে সে! চুলটা ভীষণ অদ্ভুত। চোখেও একটা মোটা ফ্রেমের চশমা আবার ভুরুর উপর একটা নকল আঁচুল! সবথেকে বড় কথা মুখটাও সে মাক্স দিয়ে ঢেকে রেখেছে।
নেহাকে দেখেই শাহরিয়ার অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
“এসবের মানে কি?”
এদিকে নেহা একবার আড়চোখে আহিরের দিকে তাকিয়ে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। ঘৃণায় তার পুরো শরীর জ্বলে উঠল। মনে পড়ে গেল ৫ বছর আগের সেই হিংস্র দিনগুলোর কথা। নেহা নিজেকে সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। তাই স্বাভাবিক ভাবে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা শুরু করে। গলার স্বরটাও যথাসম্ভব বদলানোর চেষ্টা করল।
নেহা যখন প্রেজেন্টেশন দিচ্ছিল তখন সকলের মনযোগ ছিল নেহার দিকে। তার প্রেজেন্টেশন ছিল একদম নিখুঁত। শাহরিয়ার শুরুতে নেহার উপর রেগে থাকলেও নেহার প্রেজেন্টেশন দেখে তার চাপা রাগটা কিছুটা লোপ পেল। তার বদল চোখে একপ্রকার খুশির আমেজ দেখা গেল। নেহা আহিরের দিকে আর না তাকিয়েই প্রেজেন্টেশন দিচ্ছিল। আহির শুরুর দিকে প্রেজেন্টেশন স্বাভাবিক ভাবে নিলেও ধীরে ধীরে গলার স্বরটা কেন জানি তার কাছে ভীষণ চেনা ঠেকছিল। আহির আনমনে বলে ওঠে,
“এই গলার স্বর কি আমি আগেও কখনো শুনেছি? এত চেনা কেন লাগছে? কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? আজই তো আমি এখানে প্রথম এলাম আর এই মহিলাকেও তো আমি চিনি না।”
আহিরের ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে তার সহকারী বলে ওঠে,
“স্যার, প্রেজেন্টেশন তো ভালোই লাগল৷ আপনার সিদ্ধান্ত কি? ইনফিনিক্সের সাথে কি ডিল করবেন?”
তত্মধ্যে নেহার প্রেজেন্টেশন শেষ হলো। সবাই তার প্রেজেন্টেশন দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়ে গেল যে কড়োতালির শব্দে পুরো অফিস-রুম মেতে উঠল।
শাহরিয়ারও নিদ্বিধায় হাততালি দিলো। সবার চোখেমুখে প্রসন্নতা থাকলেও আহিরের চোখে ছিল সংশয়। নেহার দিকে অবাক চোখেই তাকিয়ে ছিল সে। এমন সময় শাহরিয়ার কায়সার বেশ ভাব নিয়ে বললেন,
“তো বলুন মিস্টার আহির পাটোয়ারী, প্রেজেন্টেশন কেমন লাগল?”
আহির নেহার থেকে চোখ সরিয়ে নিয়ে বলল,
“জ্বি, সুন্দর ছিল।”
“তাহলে বলুন এবার আপনাদের নেক্সট প্ল্যান কি?”
“আমরা আপনাদের কোম্পানির সাথে কোলাবরেট করতে চাই। আমরা আশাবাদী ইনফিনিক্স ও পাটোয়ারী যদি একত্রিত হয় তাহলে আমরা সাউথ এশিয়ার একটা শীর্ষস্থানীয় কর্পোরেট কোম্পানিতে পরিণত হবো।”
শাহরিয়ার কায়সার গম্ভীর স্বরে বলেন,
“প্রস্তাবটা ভালো। তবে আমাদের আগে একটা সুন্দর ডিলে পৌঁছাতে হবে।”
এরপর তাদের মধ্যে আরো অনেক ব্যবসায়িক কথাবার্তা চলতে থাকে। এদিকে নেহা মনে মনে ভাবে,
“হায় আল্লাহ! আমায় এ কোন পরীক্ষার মধ্যে ফেললে তুমি? এখন যদি এই আহির ইনফিনিক্সের সাথে কোলাবরেট করেন তাহলে তো এখানে ওনার আসা যাওয়া লেগেই থাকবে। কোনভাবে যদি উনি আমায় দেখতে পেয়ে যান তাহলে কি হবে? তারপর যদি উনি নিয়ার ব্যাপারে জেনে ওর কোন ক্ষতি করতে চায়….নাহ, আমি এটা হতে দিতে পারি না। প্রয়োজনে ৫ বছর আগে যেভাবে নিজের মেয়েকে নিয়ে দূরে চলে এসেছিলাম সেভাবে আরো দূরে কোথাও চলে যাব। তবুও এই শয়তানটার কোন ছায়া আমি পড়তে দেব না নিজের মেয়ের উপর।”
★★
মিটিং শেষ করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় হুট করেই আহিরের নজর পড়ে নেহার উপর। নিজের কৌতুহল আর দমন করতে না পেরে আহির তার সামনে এসে দাঁড়ায়। আহিরকে নিজের সামনে রেগে রাগে, ঘৃণায় নেহা ফেটে পড়ে। কিন্তু কোন অনুভূতিও সে বর্তমানে ব্যক্ত করতে পারছিল না। আহিরকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিতেই হঠাৎ করে আহির বলে ওঠে,
“এক্সকিউজ মি!”
নেহা থেমে যায়। আহির নেহার পাশে এসে বলে,
“আমি কি কোনভাবে আপনাকে চিনি?”
কথাটা শুনেই নেহার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেলো৷ তাহলে কি আহির তাকে চিনতে পেরে গেল? ভয়ের মাঝেও নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে সে বলল,
“নাহ, আমি আপনাকে এই প্রথমবার দেখলাম।”
“কিন্তু আপনার গলার স্বর আর চেহারা আমার খুব চেনা চেনা লাগছে। যদি কিছু মনে না করেন তাহলে..আমি কি আপনার মুখটা একটু দেখতে পারি?”
নেহা ভয়ে গুটিয়ে যায়। বলে,
“কেন?”
“আমার মনে হচ্ছে, আমি হয়তো আগেও আপনাকে কোথাও দেখেছি আর সেটা নিশ্চিত হতেই..”
“বললাম তো, আমি আপনাকে চিনি না। আপনিও আমায় চেনেন না। তাহলে কেন শুধু শুধু আমার চেহারা দেখতে চাচ্ছেন?”
“মাফ করবেন। আমি আপনায় বিব্রত করতে চাই নি। আমি শুধু নিজের সংশয়টা..”
“দেখুন, আমি পরপুরুষের সামনে নিজের মুখ দেখাই না। তাই এই ব্যাপারে আর কথা না বাড়ানোই ভালো।”
“এগেইন সরি, যদি আপনাকে হার্ট করে থাকি। কিন্তু আমাকে নিজের মনের সংশয় দূর করতে হবে। আর সেজন্য আমি আগে থেকেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কারণ আমি এখন যা করতে যাচ্ছি সেটা আপনার ভালো নাও লাগতে পারে।”
“মানে? কি করতে চান আপনি?”
আহির ধীরে ধীরে নেহার দিকে এগিয়ে গেলো। নেহা ভয়ে জমে গেল। নেহা কিছু বুঝে ওঠার আগেই আহির তার মাস্কের দিকে হাত বাড়ালো। নেহা দুচোখ বন্ধ করে নিলো। এই বুঝি তার সব সত্যি সামনে চলে আসে!
চলবে ইনশাআল্লাহ✨