#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ২১
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নেহার মুখ থেকে আহির মাস্কটা সরানোর আগেই শাহরিয়ার এসে সেখানে উপস্থিত হয়। সে এসেই আহিরের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“কি করছেন এটা আপনি?”
আহিরের হাত সাথে সাথেই থেমে যায়। সে শাহরিয়ারের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই শাহরিয়ার নেহাকে ইশারা করে বলে,
“তুমি নিজের কেবিনে যাও।”
নেহা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে এবং নিজের কেবিনের দিকে পা বাড়ায়। শাহরিয়ার এবার আহিরের দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে বলে,
“আমার স্টাফদের সাথে এমন ব্যবহার করার কোন রাইট আপনার নেই মিস্টার পাটোয়ারী। আশা করি, পরের বার থেকে এই ব্যাপারটা খেয়াল রাখবেন।”
শাহরিয়ারের এই কথায় আহির ভীষণ অপমানিত বোধ করল এবং সাথে সাথেই স্থান ত্যাগ করলো। গটগট পায়ে শাহরিয়ারের অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো আহির। বাইরে এসে বললো,
“ড্যাম ইট! এটা তুই কি করলি আহির? একটা অচেনা অজানা মেয়ের জন্য নিজেকে ছোট করে দিলি। এটা তুই ঠিক করলি না। ঐ মেয়েটা যেই হোক তোর তাতে কি? নাহ, এসব নিয়ে আমি আর ভাববো না।”
বলেই আহির নিজের গাড়িতে বসে রওনা দিলো।
এদিকে নেহা নিজের কেবিনে এসে বসে মুখ থেকে মাস্কটা খুলে বলল,
“এখনই মিস্টার আহিরের মুখোমুখি হবার সময় আসে নি আমার। একদিন না একদিন তো ওনার মুখোমুখি হবোই আমি। ওনাকে ওনার করা সব কৃতকর্মের শাস্তিও দেব। তবে সেসবের আগে আমায় নিজের পায়ের তলার মাটি আরো শক্ত করতে হবে। নিজের মেয়েকে সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। তারপরেই ওনার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেব আমি।”
বলেই নেহা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এমন সময় শাহরিয়ার নেহার কেবিনে প্রবেশ করে বলে,
“এভাবে ক্লাউন সেজে সবার সামনে প্রেজেন্টেশন দিলে কেন?”
নেহা শাহরিয়ারের দিকে ফিরে তাকায়। শাহরিয়ারের চোখে জিঘাংসা। নেহা একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“আমি মোটেই ক্লাউন সেজে প্রেজেন্টেশন দেই নি। আমার কিছু বাধ্যবাধকতা ছিল আর সেজন্যই..তবে প্রেজেন্টেশন টা তো নিশ্চয়ই ভালো হয়েছে তাই না? আশা করি এই নিয়ে আপনার মনে কোন সংশয় নেই।”
শাহরিয়ার এবার নেহার দিকে এগিয়ে এসে গম্ভীর স্বরে বলে,
“নিজেকে কি মনে করো তুমি?”
নেহা স্বাভাবিক স্বরে বলে,
“নিজেকে আমি নেহা চৌধুরী মনে করি। যা আমার পরিচয় মিস্টার কায়সার।”
“তোমার মনে হচ্ছে না, তুমি একটু বেশিই এটিটিউড দেখাচ্ছ?”
“কেন? আপনার কি ভুলের সাথে সাথে এটিটিউডও অপছন্দ?”
শাহরিয়ার অবাক হয়ে যায়। কারণ আগে আর অন্য কেউ তার সাথে এই স্বরে কথা বলে নি। শাহরিয়ার কি বলবে কিছু বুঝতে পারছিল না। এমন সময় নেহা আবারো বলে ওঠে,
“যদি আমার কথায় আপনার খারাপ লেগে থাকে তাহলে আমি দুঃখিত। কিন্তু আমি আপনার কোম্পানির একজন কর্মচারী তাই আমার কাজ কেমন হচ্ছে সেটাই আপনার কাছে মূখ্য বিষয়। আমার এটায়ার নয়। আর ধন্যবাদ, তখন মিস্টার পাটোয়ারীর সামনে আমার হয়ে কথা বলার জন্য।”
বলে যেই না নেহা চলে যেতে নেবে এমন সময় শাহরিয়ার নেহার হাত ধরে তাকে আটকে দিয়ে বলে,
“তুমি কি আহির পাটোয়ারীকে চেন?”
নেহা নিজের অতীতের দিনগুলো মনে করে। ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ ঘটে তার চোখেমুখে। তবুও সে বলে,
“নাহ, চিনি না। আর চিনতেও চাই না। শুধু ওনাকে নিজের করা কৃতকর্মের শাস্তি দিতে চাই। যা খুব শীঘ্রই দেব।”
শেষের কথাগুলো মনে মনে বলে নেহা। যার ফলে শাহরিয়ার সেসব শুনতে পায় না।
শাহরিয়ার নেহার দিকে তাকিয়ে বলে,
“চেনার দরকারও নেই। আহির পাটোয়ারী একজন বিজনেসম্যান আর তুমি আমার অফিসের একজন সাধারণ কর্মচারী। ওনাকে চিনে তুমি কি করবে? বরং আমার তো এটা ভেবে অবাক লাগছে যে এত বড় একজন বিজনেসম্যান কেন তোমার উপর আগ্রহ দেখালো।”
নেহা শাহরিয়ারের দিকে তাকালো। এই মানুষটা যে বড্ড অহংকারী সেটা তার কথাতেই প্রকাশ পাচ্ছে। নেহা এমন ব্যক্তিতে খুব একটা পছন্দ করে না। তাই সে বলে ওঠে,
“স্যার, আজকের প্রেজেন্টেশন দেয়া তো শেষ। তাহলে এখন আমায় নিজের পরবর্তী কাজগুলো করতে দিন।”
শাহরিয়ার বলে,
“ঠিক আছে৷ তুমি নিজের কাজ করো। আমি আসছি।”
বলেই শাহরিয়ার নিজের কেবিনের দিকে পা বাড়ায়। নেহা সেখানে দাঁড়িয়েই দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
★★
আহির ভীষণ সুন্দর একটা বার্বিডল কিনে নিয়ে আহিরার জন্য নিয়ে গেলো। ততক্ষণে অফিসের ব্যাপারটা সে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেছে। আহিরা তখন খুব আগ্রহী ছিল কারণ সে ঢাকায় যাওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিল৷ আহির ফিরতেই আহিরা ছুটে এসে বললো,
“পাপা, আমার ঢাকার স্কুলে পড়ার সব এরেঞ্জমেন্ট করে নিয়েছ তো?”
“হ্যাঁ, প্রিন্সেস। আগামী দিন থেকেই তুমি ঢাকায় পড়বে।”
মুমিনুল পাটোয়ারীও ততক্ষণে সেখানে এসে উপস্থিত হন। তিনি বলেন,
“তাহলে এখন কি তুই দিদিভাইকে নিয়ে ঢাকায় চলে যাবি আহির?”
আহির বললো,
“শুধু আহিরা নয় তোমাকেও আমি ঢাকায় নিয়ে যাব আব্বু। এমনিতেও আমাদের বিজনেসের বেশিরভাগ কাজ এখন ঢাকাতেই হয়। তাই গাজীপুরে থাকার তেমন প্রয়োজন নেই।”
মুমিনুল পাটোয়ারী বলেন,
“বেশ, তাহলে আমি সবকিছু গুছিয়ে নেই। তাহলে আমাদের ঢাকার বাসায় গিয়ে উঠি সবাই।”
এমন সময় নাতাশা সেখানে চলে আসে। আহিরদের ঢাকায় যাওয়ার কথা শুনে সে বড্ড খুশি। কারণ সেও ঢাকার একটি মেডিকেলে ডাক্তার হিসেবে যোগ দিয়েছে। নাতাশা এসেই আহিরাকে বলে,
“আমার আহি বেবি কি করছে।”
আহিরা বিরক্ত হয়ে বলে,
“তোমায় বলেছি না আমায় বেবি বলে ডাকবে না।”
আহির বলে,
“আমার মেয়েকে বেবি বলবে না নাতাশা।”
“আচ্ছা, আমার ভুল হয়ে গেছে।”
আহির এবার আহিরার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“তুমি এখন খুশি তো?”
“অনেক বেশিই খুশি।”
“তাহলে চলো, একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি আমরা দুজন মিলে।”
আহিরা বলে,
“আমি এখন বাইরে যেতে চাই না। তোমার যাবার হলে একা যাও।”
আহির মনে একটু কষ্ট পায়। এরমধ্যে নাতাশা বলে,
“এভাবে বলছ কেন আহি? আহির তো তোমার পাপা হয়। পাপার সাথে ঘুরে এসো অনেক আনন্দ পাবে।”
আহিরা বলে ওঠে,
“পাপা হয়েছে জন্য কি তার সাথে ঘুরতে যেতে হবে নাকি? আমার আরো জরুরি কাজ আছে।”
নাতাশা এই সুযোগ কাজে লাগাতে চায়। তাই সে বলে,
“কেন? তুমি নিজের পাপাকে ভালোবাসো না? তার সাথে ঘুরতে চাও না?”
আহিরা বলে,
“আমি শুধু নিজেকে ভালোবাসি। আর কাউকে ভালোবাসি না।”
আহিরার কথাটা আহিরের বুকে যেন একদম তীরের মতো এসে লাগে। এই কথার ধার সে সহ্য করতে পারে না। তাই দ্রুত বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। মুমিনুল পাটোয়ারী তার চলে যাবার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন।
★★
আহির খুব দ্রুত কার ড্রাইভ করে গাজীপুর থেকে ঢাকায় ফিরে আসে। ঢাকায় এসে সে রাস্তার ধারে একটা পার্কের সামনে গাড়িটা থামায়। ইদানীং কালে আহিরার ব্যবহার তার মনে অনেক খারাপ প্রভাব ফেলছে।
পার্কের মধ্যে আহির অনেক বাচ্চাকে তাদের বাবা-মায়ের সাথে আনন্দ করতে দেখে। সে বুঝতে পারে এসব বাচ্চারা তাদের বাবা-মাকে কতটা ভালোবাসে। অথচ তার মেয়ে আহিরা যাকে সে নিজের জীবন দিয়ে ভালোবাসে সেই কিনা তাকে বলে ভালোবাসে না! আহির এটা মানতে পারে না।
আহির বলে ওঠে,
“কেন? আহিরাকে কিসের কমতি দিয়েছি আমি? কেন ও আমায় ভালোবাসে না?”
আহিরের ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে একটি মেয়ে দৌড়ে এসে তার সাথে ধাক্কা খায়। আহিরের ধ্যানভঙ্গ হতেই সে দেখে মেয়েটি নিজের কপালে হাত দিয়ে আছে। আহির দ্রুত নিচে বসে পড়ে বলে,
“তুমি ঠিক আছ তো?”
নিয়া চোখ তুলে তাকায়। অতঃপর বলে,
“সরি, আঙ্কেল। আমি তোমায় ধাক্কা দিয়েছি।”
ছোট একটা মেয়ের এমন কোমল সুর আহিরের মনটা গলিয়ে দেয়। এই মেয়েটাকে কেন যেন তার ভীষণ আপন আপনও লাগে। আহির নিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“কোন ব্যাপার না। তোমার তো এটা আনন্দ করার বয়স আনন্দ করো।”
নিয়া বলে,
“তুমিও আনন্দ করো আঙ্কেল। আমার আম্মু বলে, আনন্দে থাকলে মন ভালো থাকে।”
চলবে ইনশাআল্লাহ✨
#উত্তল_তরঙ্গ
#দিশা_মনি
#বোনাস
নিজের চাচাতো ভাইয়ের থেকে পাওয়া অস্বাভাবিক বিয়ের প্রস্তাবে অবাক হয়ে গেল নেহা। সে বুঝতে পারছিল না তার চেনা সেই রাগী, গম্ভীর আহির ভাই কেন তাকে এভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে?
এদিকে নেহাকে চুপ দেখে আহির বলে,
“কি রে এভাবে চুপ হয়ে আছিস কেন? এমনি তো মুখ দিয়ে কথার ফুলঝুরি বের হয় আজ তাহলে কি হলো?”
নেহা নিজের হতবাক ভাব কাটিয়ে উঠে বলল,
“আসলে আমি বুঝতে পারছি না কেমন রিয়্যাক্ট করা উচিৎ। তুমি আমায় বিয়ে করবে এটা তো আমার কাছে কল্পনাতীত আহির ভাই!”
আহির নেহার দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো,
“আসলেই এটা কল্পনাতীত। আমি তোর থেকে অনেক ভালো মেয়ে ডিজার্ভ করি, কিসের কমতি আছে আমার? আমি দেখতে যেমন সুদর্শন তেমনি ভালো জব করি। তোর থেকে হাজার বেটার অপশন ছিল আমার কাছে। তারপরেও আমার দূর্ভাগ্য দেখ, তোর মতো একটা গেঁয়ো ভূতকেই আমার বিয়ে করতে হবে।”
কথাটা শুনে নেহার বুকে তীব্র যন্ত্রণা হতে লাগল। তবুও সে নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক রেখে বললো,
“ঠিক বলেছ তুমি আহির ভাইয়া। তোমার মতো এত সুদর্শন একটা ছেলে আমার মতো এমন একটা গেঁয়ো ভূতকে এট লিস্ট ডিজার্ভ করো না। তাহলে আমায় বিয়ের প্রস্তাবই বা দিচ্ছ কেন?”
“আমি কি আর সাধে তোকে বিয়ে করতে চাইছি নাকি? দাদির শেষ ইচ্ছা পূরণেই তো আমাকে তোর মতো একটা অযোগ্য মেয়েকে বিয়ে করতে হবে। নাহলে আমার কোন শখ ছিল না।”
আহিরের কথাটা শুনে নেহা অনেক কষ্ট পায়। তদুপরি সে নিজের মনের কষ্ট লুকিয়ে বলে,
“তোমাকে পূরণ করতে হবে না দাদির শেষ ইচ্ছা। দাদিকে আমি সবটা বুঝিয়ে বলবো। কিন্তু দাদির কথা রাখতে গিয়ে তোমায় আমার উপর কোন দয়া দেখাতে হবে না।”
“আমি কি করবো বা করবো না সেটা নিশ্চয়ই তুই ঠিক করে দিবি না। দাদির শেষ ইচ্ছা পূরণ না করে আমি কেন সবার কাছে অপরাধী হবো বলতে পারিস? যাতে দাদির কিছু হয়ে গেলে সবাই সারাজীবন আমাকে এটা নিয়ে কথা শোনাতে পারে? সেটাই চাস তুই?”
নেহা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“আমি এমন কিছু কেন চাইব ভাইয়া? আমি শুধু নিজের জীবনে একটু স্বস্তি পাই। এমনিতেই আম্মু-আব্বুর মৃত্যুর পর দাদিই আমাকে আগলে রেখেছে সেই ছোট থেকে। আমার সেই দাদিই এখন মৃত্যু পথযাত্রী। কিন্তু তার মানে তো এই না যে, দাদির ইচ্ছা পূরণে আমাকে নিজের ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিতে হবে? আমি কারো দয়ার পাত্র হতে চাই না আহির ভাই। আমি দাদিকে বুঝিয়ে বলব, উনি প্রয়োজনে একজন কানা, ল্যাংড়া, রিকশাওয়ালা যার সাথে ইচ্ছা আমার বিয়ে দিক, অন্তত এমন কারো সাথে আমার বিয়ে দিক যিনি আমায় পছন্দ করে আমায় বিয়ে করবেন। এমন কারো সাথে নয় যিনি..যিনি আমায় প্রতি মুহুর্তে অপমান করবেন, আমাকে খোটা দেবেন।”
“খুব তো কথা বলতে শিখেছিস।”
“যার হয়ে কথা বলার কেউ নেই তাকে নিজের কথা নিজেকেই বলতে হয় আহির ভাই। যাইহোক আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন, আমি এমন ব্যবস্থা করব যাতে সাপও মরে আর লাঠিও না ভাঙে। আপনাকে আমায় বিয়ে করতে হবে না আবার আপনাকে কেউ দোষও দেবে না। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।”
আহির আর কিছু বলতে যাবে এমন সময় আহিরের বাবা আজমাইন চৌধুরী ছুটে এসে বলেন,
“আহির..নেহা তোরা জলদি ভেতরে আয়। আম্মু জানি কেমন কেমন করছে।”
কথাটা শুনেই তারা দুজনে আর দেরি না করে তাদের দাদি রুকসানা বেগমের রুমের দিকে দৌড় লাগায়। নেহা তো ছুটে গিয়ে রুকসানা বেগমের শিয়রের কাছে বসে পড়ে। আহিরও আছে তার পেছন পেছন নিজের বাবার সাথে। আহিরের মা বিপাসা চৌধুরী আহিরকে দেখে তাকে আটকে ফিসফিস করে বলেন,
“এই মুহুর্তে নিজের দাদির কাছে যাস না তুই..ওনার চিন্তাভাবনা ঠিক নেই। ঐ নেহার মতো একটা অযোগ্য মেয়ের সাথে তোর বিয়ে আমি কিছুতেই হতে দেব না। আমি তোর জন্য ঢাকা শহরের সেরা মেয়ে বাছাই করে আনবো।”
ভীষণ অহংবোধ নিয়ে কথাটা বলেন বিপাসা চৌধুরী। নেহাকে তার একদম পছন্দ না। সবসময় তিনি নেহাকে এড়িয়ে চলেন। আর এই মেয়েকেই কিনা তার পুত্রবধু হিসেবে মানতে হবে! জীবিত অবস্থায় তিনি এটা কিছুতেই মানবেন না।
বিপাসা চৌধুরীর পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল তার ছোট ছেলে তথা আহিরের ছোট ভাই আরাভ। সে নিজের মায়ের মুখে এমন কথা শুনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“এসব তুমি কি বলছ আম্মু? এমন কথা বলো না। আব্বু শুনলে কি ভাববে? আর নেহা তো অনেক ভালো মেয়ে।”
বিপাসা চৌধুরী বলেন,
“তুই কি আমার থেকে বেশি বুঝিস নাকি? ভুলে যাস না, আমি তোকে জন্ম দিয়েছি, তুই আমাকে জন্ম দেস নি। তোর থেকে এই দুনিয়ার হাল চাল আমি বেশি বুঝি। আর ঐ নেহা মেয়েকে দেখেই বোঝা যায় ও কতটা সুযোগসন্ধানী। একদম গোল্ড ডিগার একটা। আমি তো শিওর যে ঐ আম্মার মাথাটা খেয়েছে। এখানে গ্রামে তো একা থাকে আম্মার সাথে। ঐ নিশ্চয়ই আম্মাকে বুঝিয়েছে যেকোন ভাবেই হোক, ওর সাথে আমার আহিরের বিয়ে দিতে। যাতে ও একটা সুন্দর জীবন পায়। আমি কিছু বুঝি না ভেবেছে নাকি ও? এই রকম মেয়েকে আমি কিছুতেই মানব না। ও আমাদের স্টেটাসের সাথে যায় না।”
আরাভ বিরক্ত স্বরে বলে,
“তোমার যে নেহাকে পছন্দ নয় আমি জানি। কিন্তু তাই বলে ওর নামে এমন মিথ্যা অভিযোগ দিও না।”
বিপাসা চৌধুরী আর কিছু বলতে যাবেন এমন সময় হঠাৎ করে রুকসানা বেগমের শ্বাসটান উঠে যায়। নেহা কাঁদতে থাকে। বলে ওঠে,
“ও দাদি? কি হয়েছে তোমার? তুমি চোখ খোলো, একবার তাকাও আমার দিকে। কিচ্ছু হবে না তোমার। তোমার নেহা তোমার পাশে আছে। আমি তোমার কিছু হতে দেব না।”
রুকসানা বেগম বলেন,
“আমায় যেতে হবে রে নেহা..তোর দাদা আর মা-বাবার কাছে..”
নেহা ভীষণ কাঁদতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে বলে,
“এমন কথা বলো না দাদি। তুমি ছাড়া যে এই দুনিয়ায় আমার কেউ নেই৷ তুমি যদি এখন আমাকে ছেড়ে চলে যাও তাহলে যে আমি একদম একা হয়ে যাব। প্লিজ তুমি আমায় ছেড়ে যেও না৷ আমাকে এভাবে একা ফেলে যেও না প্লিজ..”
কাঁদতে কাঁদতে তার হিচকি উঠে যায়।
বিপাসা চৌধুরী আহিরকে বলেন,
“দেখছিস এই মেয়ের নাটক! এসব নাটক করেই তো আম্মাকে ভুংভাং বুঝিয়েছে।”
এরমধ্যে হঠাৎ রুকসানা বেগম ক্ষীণ স্বরে বলে ওঠেন,
“আহির দাদুভাই..”
আহির হালকা পায়ে এগিয়ে আসে। আহির আসতেই তিনি বলেন,
“আমায় তুমি কথা দাও দাদুভাই, তুমি আমার নেহাকে দেখে রাখবে। ওর দায়িত্ব নেবে। আমি চলে যাবার পর ওকে বিয়ে করে নিজের স্ত্রী হিসেবে মেনে নিবে।”
নেহা তার দাদিকে আটকাতে যাবে এমন সময় আহির বলে ওঠে,
“ঠিক আছে দাদি, তুমি যা চাইছ তাই হবে। আমি নেহার দায়িত্ব নেব। ওকে বিয়ে করব আমি।”
চলবে।