#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ২২
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নিয়ার কথা শুনে আহির অবাক চোখে তার দিকে তাকায় ছোট্ট একটা মেয়ে তার মুখে কি সুন্দর কথা। অথচ তার মেয়ে আহিরার ব্যবহার কতটা বাজে। নিয়া এরপর আহিরের দিকে একটা চকলেট বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“যদি তোমার মন খারাপ থাকে তাহলে এই চকলেট টা খেয়ে নিও আঙ্কেল। মনটা একদম ভালো হয়ে যাবে।”
আহির জিজ্ঞেস করে,
“তুমি কিভাবে বুঝলে আমার মন খারাপ?”
“জানি না কিন্তু তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে কেন জানি না আমার বারবার মনে হচ্ছে তুমি কোন কারণ নিয়ে মন খারাপ করে আছ।”
আহিরের নিয়ার প্রতি টানটা আরো গভীর হয়৷ সে বুঝতে পারে না কেন এভাবে একটা অচেনা মেয়ের প্রতি তার এতোটা টান অনুভব হচ্ছে। আহিরের ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে নিয়ার পাশে এসে দাঁড়ায় তাজিব। সে এসেই নিয়াকে বলে,
“এখানে কি করছ নিয়া? চলো আমার সাথে বাসায় যাবার সময় হয়ে গেছে।”
“আচ্ছা, ভাইয়া। আঙ্কেল, আপনি ভালো থাকবেন।”
বলেই নিয়া তাজিবের সাথে চলে যায়। আহির নিয়ার যাওয়ার পানেই তাকিয়ে থাকে।
★★
আহিরা, মুমিনুল পাটোয়ারী সহ আহির চলে এসেছে ঢাকায়। এখন থেকে তারা এখানেই থাকবে। নাতাশাও তাদের সাথে দেখা করতে এসেছে। আহির আহিরাকে জিজ্ঞেস করে,
“আমাদের নতুন বাসা তোমার পছন্দ হয়েছে তো প্রিন্সেস?”
“হুম, নট ব্যাড। বাট, আমি আরো ভালো কিছু আশা করেছিলাম।”
নাতাশা বিড়বিড় করে বলে,
“উম..তেজ দেখে বাঁচি না। তোকেও যদি আহির তোর মা আর অন্য একটা বোনের সাথে ঘাড়ধাক্কা করে জন্মের পরই বের করে দিত তাহলে এসব ঢং বেরিয়ে যেত।”
মুমিনুল পাটোয়ারী বলেন,
“বেশ, এখন তাহলে আমরা একটু বিশ্রাম নেই। এত ধকল করে এলাম।”
“জ্বি।”
বলেই আহির আহিরাকে কোলে নিয়ে বলে,
“চলো আমি আমার প্রিন্সেসকে তার রুমে নিয়ে যাই।”
আহিরা সেরকম কোন আগ্রহ দেখায় না। আহির চুপচাপ আহিরাকে তার রুমে নিয়ে যায়৷ আহির রুমে পৌঁছে দিয়ে আহিরাকে বলে,
“এখন একটু ঘুমিয়ে নাও।”
“নো, আমাকে ফোনটা দাও তো পাপা। আমি একটু কার্টুন দেখব।”
“ঠিক আছে, এই নাও তোমার ফোন। কাল সকাল সকাল নতুন স্কুলে যাবে। তাই বেশি রাত অব্দি ফোন চালিও না, কেমন?”
“হুম, জানি জানি। আমাকে এত জ্ঞান দিতে হবে না। আমি তো আর নাদান বাচ্চা নই। আমি সব জানি। আমি হলাম স্মার্ট বাচ্চা।”
আহির নিজের মেয়ের মুখে এমন কড়া শব্দ শুনে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। না চাইতেও তার মনে পড়ে নিয়ার কথা, তার মিষ্টি ব্যবহারের কথা।
★★
নিয়া স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। নেহা তাকে তৈরি করে দিচ্ছে। সে নিজেই নিয়াকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসবে। নিয়াকে রেডি করিয়ে দিয়ে নেহা বলে,
“শোনো, স্কুলে একদম ভালো মেয়ে থাকবে যেমন সব সময় থাকবে। আর টিফিন টাইমে কিন্তু বাইরের কোন খাবার খাবে না। তোমাকে আমি যেই খাবার প্যাকিং করে দিয়েছি, সেটাই খাবে। বুঝতে পারলে?”
নিয়া মাথা নাড়ায়। নেহা নিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“গুড গার্ল। এখন প্রস্তুত হও স্কুলে যাওয়ার জন্য।”
নেহা এরপর নিয়াকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে স্কুলে যাওয়ার জন্য।
নিয়াকে সিএনজি করে স্কুলের সামনে নামিয়ে দিয়ে নেহা আবার চলে যায় তার অফিসের দিকে। নিয়া আপন মনে ক্লাসের দিকে চলে যায়। কিছু সময় পর একটা বড় মার্সিডিজ গাড়ি এসে থামে স্কুলের সামনে। সেই গাড়ি থেকে নামে আহির। অতঃপর আহিরাকেও কোলে করে গাড়ি থেকে নামায়। আহিরা সামনে দিকে তাকিয়ে ছিল। আহির আহিরাকে বলে,
“এই হলো তোমার নিউ স্কুল।”
আহিরা বলে,
“বাহ, স্কুলটা ভালোই আছে। ৮ আউট অফ ১০।”
“চলো তোমাকে আমি তোমার ক্লাসে পৌঁছে দিয়ে আছি।”
“ওকে কুইক।”
“ক্লাসে কেউ যদি তোমায় বিরক্ত করে আমায় বলবে।”
“কার এমন সাহস আছে যে আহিরা পাটোয়ারীকে বিরক্ত করবে? যদি কেউ করেও তাকে সামলানোর জন্য আমি একাই যথেষ্ট।”
বলেই আহিরা ভাব নিয়ে তাকায়। অতঃপর আহির তাকে ক্লাসে পৌঁছে দেয়। আহিরা একদম সামনে একটা ফাকা সিট দেখে বসে পড়ে।
★★
নেহা অফিসের সব কাজ শেষে বের হতে নেবে এমন সময় হঠাৎ করে শাহরিয়ার কায়সার তার পথ আটকে দাঁড়ায়। নেহা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে স্যার?”
“কোথায় যাচ্ছ তুমি?”
“আমার সব কাজ কমপ্লিট, এখন তো লাঞ্চ ব্রেক তাই একটু বাইরে যাচ্ছি।”
“যদি লাঞ্চ করতেই হয় তাহলে এখানে বসেই করো কারণ এখন অফিসে লাঞ্চ ব্রেক এক ঘন্টা থেকে কমিয়ে ৩০ মিনিট করা হয়েছে।”
“মানে? কি বলছেন এসব।”
“যা সত্য তাই বলছি।”
“এটা তো একদম ঠিক না। আমাকে এখন আমার মেয়েকে স্কুল থেকে আনতে যেতে হবে।”
“দেখো, এই অফিস আমার। তাই এখানে শুধু আমার নিয়ম চলবে। তুমি আমাকে প্রশ্ন করার কেউ নও। এখানে জব করতে হলে অফিসের নিয়ম মেনে করতে হবে। তোমার একার জন্য তো নিয়ম বদলাবে না।”
নেহা বলে,
“আমাকে নিজের মেয়েকে নিতে যেতেই হবে।”
“বেশ, যেখানে খুশি যাও। কিন্তু ৩০ মিনিটের মধ্যে যদি না ফেরো দেন..বুঝতেই পারছ কি হবে।”
নেহা আর বেশি কিছু না ভেবে বেরিয়ে যায়।
★★
আহিরা স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আহির এখনো তাকে নিতে আসেনি। এতে আহিরার ভীষণ বিরক্ত ফিল হচ্ছে। নিয়া ঠিক তার পাশেই দাঁড়িয়ে। আহিরা তার অহংকারী স্বভাবের জন্য প্রথম দিন কারো সাথেই বন্ধুত্ব বানায় নি। চুপচাপই ছিল। আহিরা নিজের স্মার্টওয়াচের দিকে তাকিয়ে বলে,
“পাপা কখন আসবে,,,ধুর ভালো লাগে না।”
এমন সময় আহিরা দেখতে পায় তাদের স্কুলের সামনেই একটা বড় ফাস্টফুডের দোকান আছে। তবে সেটা রাস্তার বিপরীত পাশে। আহিরার হাতে অলটাইম কিছু টাকা থাকেই। তাই সে ভাবে রাস্তা পার হয়ে ওদিকে গিয়ে ফাস্টফুড কিনবে। আহিরা রাস্তার দিকে পা বাড়াতে নেবে এমন সময় নিয়া এসে তাকে আটকে বলে,
“তুমি নতুন মেয়েটা না? কোথায় যাচ্ছ? আমার আম্মু বলে এভাবে রাস্তা পার হওয়া ঠিক নয়।”
আহিরা নিয়ার পা থেকে মাথা সম্পূর্ণ ভালো ভাবে দেখে নেয়। আজ প্রথমবার দুই বোন একে অপরের মুখোমুখি হলো। অথচ কেউই একে অপরের পরিচয় জানে না। আহিরা একটা ঝটকা দিয়ে নিয়ার হাতটা নিজের থেকে সরিয়ে নিয়ে বলে,
“ডোন্ট ডেয়ার টু গিভ মি এডভাইস। আমি আহিরা, আমার কাছে এসব রাস্তা পার হওয়া কোন ব্যাপার না।”
বলেই আহিরা এগিয়ে যেতে থাকে। অর্ধেক রাস্তা সে বেশ ভালো ভাবেই পার হয়ে নেয়। নিয়া দুশ্চিন্তার সাথে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আহিরা একবার নিয়ার দিকে তাকায় অবজ্ঞার চোখে। যেন বুঝিয়ে দেয়, দেখো আমি পারি।
এমন সময় হঠাৎ সামনে তাকাতেই সে খেয়াল করে তার দিকে একটা গাড়ি এগিয়ে আসছে। আহিরা এবার ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। সে ভয়ে নিজের দুই চোখ বন্ধ করে ন্য। গাড়িটা তাকে ধাক্কা দিতেই যাবে এমন সময় হঠাৎ করে নেহা এসে আহিরাকে গাড়ির সামনে থেকে সরিয়ে আনে।
আহিরা ধীরে ধীরে নিজের দুই চোখ খুলে নেহাকে দেখতে পায়। নেহা ভীষণ দুশ্চিন্তার সাথে আহিরার গায়ে হাত বুলিয়ে বলে,
“তুমি ঠিক আছো তো বাচ্চা? তোমার কিছু হয় নি তো? কোথাও লাগে নি তো?”
আহিরা অবাক চোখে নেহার দিকে তাকিয়ে থাকে। নেহাও আহিরার দিকে তাকিয়ে যেন অদ্ভুত এক টান অনুভব করে!
চলবে ইনশাআল্লাহ✨
#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ২৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি
নেহা আহিরাকে একদম বুকের সাথে আগলে নেয়। আহিরাও এই ঘটনায় হঠাৎ এত ঘাবড়ে যায় যে সে নেহাকে জড়িয়ে ধরে। নেহা দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে আহিরাকে কোলে নিয়ে রাস্তা পার হয়। এরমাঝে আহিরা আচমকা অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
“মাম্মা..”
নেহা ফুটপাতের ধারে এসে একদম থেমে যায়। এই অচেনা অজানা মেয়েটির মুখে মা ডাক শুনে তার বুকে হঠাৎ করে এত উথাল-পাতাল তরঙ্গের সৃষ্টি হয়৷ নেহা বুঝতে পারে না, তার এই অনুভূতির কারণ কি। তত্মধ্যে নিয়া ছুটে এসে বলে,
“আম্মু তুমি ঠিক আছো তো? আমি ওকে বলেছিলাম এভাবে রাস্তা পার না হতে কিন্তু ও…”
নেহা আহিরাকে কোল থেকে নামায়। আহিরা তখনো ঘোরের মাঝে ছিল। নেহা আহিরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“তুমি এভাবে রাস্তা পার হচ্ছিলে কেন? তোমার মা-বাবা কোথায়?”
আহিরা নেহার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার পাপা তো কোম্পানিতে আর মাম্মা..”
আহিরা আর কিছু বলতে পারে না। নেহা তাকে শাসনের ভঙ্গিতে বলে,
“আর কখনো এভাবে রাস্তা পার হবে না। এটা তোমার জন্য বিপদজনক। আজ যদি আমি সঠিক সময় না আসতাম তাহলে কি হতো বলো তো?”
আহিরার অহংকারী মন হঠাৎ যেন কেমন থমকে যায়। নেহার সামনে সে কিছু বলতেও পারছিল না। এরইমাঝে নিয়া বলে ওঠে,
“আম্মু ও আজ আমাদের স্কুলে নতুন এসেছে। ওর বাসা ঢাকার বাইরে তো তাই কিছু বুঝতে পারে নি।”
ততক্ষণে রাস্তায় আরো অনেক মানুষ জড়ো হয়ে গেছে। তারা সবটা প্রত্যক্ষ করছে। এরমধ্যে নেহা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় কোম্পানিেফ টিফিন ব্রেক শেষ হবার পথে। তাকে আবার নিয়াকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে কোম্পানিে ফিরতে হবে। তত্মধ্যে স্কুল কতৃপক্ষের কিছু লোকও জটলার কাছে এসেছে। নেহা তাদেরকে দেখে আহিরাকে তাদের কাছে শপে দিয়ে বলে,
“এই নিন, মেয়েটার পরিবারের কেউ আসলে ওকে ওর পরিবারের সাথে পাঠিয়ে দেবেন। আর বলবেন, ওর খেয়াল রাখতে।”
বলেই নেহা চলে যেতে নেয় এমন সময় হঠাৎ করে আহিরা পেছন থেকে নেহার জামা ধরে টান দেয়। নেহা আহিরার দিকে তাকায়। আহিরার চোখে এক গভীর বিস্ময়, ছোট্ট এই মেয়েটার প্রতি নেহা কেন জানি আজ বড্ড বেশি টান অনুভব করছে। তার মনে হচ্ছে, যেন এই মেয়েটা তার অনেক কাছের।
নেহা আহিরার সামনে হাটু গেড়ে বসে। নিয়ার জন্য কেনা একটা চকলেট আহিরার হাতে দিয়ে বলে,
“এটা খাও ভালো লাগবে। তোমার পরিবারের লোক চলে এলে ভালো মেয়ের মতো তাদের সাথে চলে যাবে। আর কখনো এভাবে রাস্তা পার হতে যেও না, কেমন?”
আহিরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো নেহার বলা কথাগুলো শুনতে থাকে। নেহা এরপর নিয়াকে নিয়ে চলে যায়। আহিরা নেহার দেয়া চকলেটটার দিকে তাকিয়ে থাকে। ভীষণ সাধারণ একটা চকলেট। সাধারণত এত কমদামী চকলেট সে খায় না। তবে আজ তার মনে চাইল না চকলেট ছুড়ে ফেলতে।
কিছু সময় পর আহির নিজের গাড়ি নিয়ে উপস্থিত হলো সেখানে। স্কুল কতৃপক্ষের কাছে সব শুনে আহিরাকে জড়িয়ে ধরে সে বলল,
“থ্যাংকস গড যে তোমার কিছু হয় নি, প্রিন্সেস। এভাবে আর কখনো রাস্তা পার হয়ো না।”
আহিরা বলে,
“ঐ আন্টিটাও এই কথা বলছিল।”
“কোন আন্টি?”
স্কুলের একজন শিক্ষিকা বলে ওঠে,
“আমাদের স্কুলেরই আরেকজন স্টুডেন্টদের মা আজ আপনার মেয়েকে বাঁচিয়েছে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। আহিরা তারই কথা বলছে।”
আহির বলে,
“কোথায় উনি? উনি জানেনও না যে, উনি আমার কত বড় উপকার করেছেন। ওনাকে যতই ধন্যবাদ জানাই সেটা কম হয়ে যাবে। আমাকে ওনার সাথে যোগাযোগের ঠিকানা দিন প্লিজ। আমি ওনার এই ঋণের প্রতিদান দিতে চাই।”
ঐ শিক্ষিকা তখন আহিরকে নেহার নম্বর দেয়। আহির জিজ্ঞেস করে,
“ওনার নাম কি?”
শিক্ষিকা বলেন,
“ওনার নামটা তো ঠিক আমার মনে নেই..তবে ওনার মেয়ের নাম নিয়া।”
“ওহ আচ্ছা, আপনাকে ধন্যবাদ।”
আহির এরপর আহিরাকে নিয়ে রওনা দেয়। গাড়িতে বসেও আহিরা নেহার কথা ভাবছিল এবং তার দেয়া চকলেটটা শক্ত করে ধরেছিল। আহির আহিরার শরীরে সিটবেল্ট বেধে দেয়ার সময় তার হাতে চকলেটটা দেখে বলে,
“এটা কি প্রিন্সেস? এটা তো খুব কমদামী একটা চকলেট মনে হচ্ছে। এটা ফেলে দাও, আমি তোমাকে অনেক দামী চকলেট কিনে দেব।”
আহিরা রাগী স্বরে বলে,
“নাহ, আমি এই চকলেটটাই খাব। এটা আমাকে ঐ আন্টি দিয়েছে। আমার অন্য চকলেট চাই না।”
আহির আহিরার এমন ব্যবহার দেখে অবাক হয়। কারণ সে সাধারণত এত কমদামী চকলেট খায় না।
★★
নেহা নিয়াকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব আবার কোম্পানির দিকে রওনা দেয়। কিন্তু তার পৌঁছাতে ৩০ মিনিট দেরি হয়ে যায়। কোম্পানিতে পৌঁছে নেহা নিজের কেবিনের দিকে যাচ্ছিল এমন সময় হঠাৎ করে শাহরিয়ার তার পথ আটকে দাঁড়ায়। নেহা অবাক চোখে শাহরিয়ারের দিকে তাকায়। তার চোখে হাজারো প্রশ্ন। শাহরিয়ার নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অতঃপর নেহার চোখের সামনে ঘড়িটা নিয়ে এসে বলে,
“লাঞ্চ টাইম ২ টায় শেষ হওয়ার কথা ছিল এখন বাজে ২ঃ৩২। এর মানে কি দাঁড়ায় মিস নেহা?'”
নেহা সমস্ত ঘটনা শাহরিয়ারকে খুলে বলতে যাবে এমন সময় শাহরিয়ার রাগী স্বরে বলে,
“আমি কোন এক্সকিউজ শুনতে চাই না।”
“আমি ইচ্ছা করে দেরি করি নি আমি তো..”
“ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত দেরি তো আপনি করেছেন। আর এই ভুলের শাস্তি আপনাকে পেতে হবে। শাহরিয়ার কায়সারের ডিকশনারিতে ভুল বলে কোন শব্দ নেই আর না আছে ভুলের ক্ষমা।”
নেহা বুঝতে পারে আজ আর কোন কিছু বলেই লাভ হবে না। শাহরিয়ার বলে ওঠে,
“আপনাকে আমি ফায়ার করছি। আজ থেকে আপনি আর ইনফিনিক্সের কর্মচারী নন।”
নেহার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে যায়। সে অনুনয় করে বলে,
“স্যার, প্লিজ..আমার কথাটা শুনুন..আমার এই জবটার…”
শাহরিয়ার ধাক্কা মেরে নেহাকে দূরে সরিয়ে বলে,
“নাও গেইট আউট ফ্রম মাই কোম্পানি। আমি আমার কোম্পানিতে আপনার ছায়াও আর দেখতে চাই না।”
নেহা হঠাৎ এই ধাক্কা সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায়। তার কনুই ছিলে যায়। নেহা অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ায়। শাহরিয়ার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চলে যেতে নেয়। এমন সময় নেহা পেছন থেকে বলে ওঠে,
“আপনার মতো অমানুষের কোম্পানিতে জব করার কোন ইচ্ছাও নেই৷ কি ভেবেছেন আপনি? টাকা আছে জন্য মানুষকে মানুষই ভাববেন না, তাদের সাথে জানোয়ারের মতো ব্যবহার করবেন?”
শাহরিয়ার রাগী ভঙ্গিতে এগিয়ে এসে বলল,
“কি বললে তুমি..হাউ ডেয়ার ইউ?”
“এতদিন সাহস দেখাতে পারি নি। কিন্তু আজ জবটাই নেই তখন আরেকটু সাহস দেখাই..”
বলেই সে শাহরিয়ারের মুখের উপর পাশে থাকা একটি পানির বোতল থেকে পানি ছুড়ে মারে। শাহরিয়ার রক্তিম রোখে তাকায়। নেহা বলে,
“আপনার এই চাহনিতে আমার আর কোন ভয় নেই মিস্টার শাহরিয়ার। আপনি, আপনার এই অহংকার, এই অহেতুক রাগ এসব আমি আর বরদাস্ত করতে চাই না। হতে পারে আপনার অনেক টাকা আছে কিন্তু মনুষ্যত্ব বলে কিছু আপনার মাঝে নেই। আর আপনার মতো অমানুষকে বস হিসেবে মেনে নেওয়াও আমার জন্য কষ্টকর ছিল। আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না যে শামিম স্যারের মতো এত ভালো একজন মানুষের আপনার মতো এত জঘন্য একটা সন্তান হলো কিভাবে? আপনি সত্যিই শামিম স্যারের ছেলে তো নাকি..”
শাহরিয়ারের ধৈর্যের বাধ ভেঙে যায়। সে নেহার গায়ে হাত তুলতে যাবে এমন সময় নেহা তার হাত ধরে থামিয়ে দিয়ে বলে,
“এই ভুল দ্বিতীয়বার করবেন না। আমি কোন অবলা নারী নই যে আপনার এইসব কিছু মেনে নেব। আমি নিজের অধিকারের জন্য লড়তে পারি।”
বলেই নেহা শাহরিয়ারের হাতটা ছিটকে ফেলে মাথা উঁচু করে অফিস থেকে বেরিয়ে আসে।।
চলবে ইনশাআল্লাহ✨