উত্তল তরঙ্গ পর্ব-২৪+২৫

0
3

#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ২৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি

নেহা নিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। ইনফিনিক্সে চাকরিটা ছাড়ার পর সে অনেক স্বস্তি অনুভব করছে। কেননা, এত কিছুর পরেও যদি নেহা ওখানে চাকরি করত তাহলে এটা তার আত্মসম্মানে সবথেকে বড় আঘাত হতো। তাই চাকরি ছাড়া নিয়ে নেহার মনে কোন আফসোস নেই। নেহা তো মাথা উঁচু করে নিজের মেয়েকে নিয়ে একটা সুন্দর জীবনের আশাতেই একদিন ঢাকা শহরে পাড়ি জমিয়েছিল।

তবে এখন তার চিন্তা হচ্ছে যে নতুন জব কিভাবে জোগাড় করবে। দৃঢ়তা এমনিতেই তার অনেক সাহায্য করেছে তার কাছে আর সাহায্য চাইবে না নেহা। এবার সে নিজের অতীতের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ইন্টারভিউ দিবে। নিজের যোগ্যতায় নতুন কোন জব নেবে। এমনটাই ভেবে নিলো নেহা। নেহার এই ভাবনার মাঝেই হঠাৎ করে তার ফোন বেজে উঠল। নেহা দ্রুত ফোনটা রিসিভ করে বলল,
“হ্যালো কে?”

বিপরীত দিক থেকে আহির বলল,
“আপনি কি নিয়ার মা বলছেন?”

নেহা আহিরের কন্ঠস্বর শুনে অবাক হয়। কেন জানি এই কন্ঠস্বর তার খুব চেনা লাগে। তবে যেহেতু ফোনে কারো কন্ঠস্বর একদম নিখুঁতভাবে শোনা যায় না তাই নেহাকে বেশ পেরেশানিতে পড়তে হলো। আহিরের কাছেও গলার স্বর চেনা চেনা মনে হলেও সে ঠাহর করতে পারে না যে, এই কন্ঠস্বর সে আগে কোথায় শুনেছে। তার উপর লোকটা তাকে নিয়ার মা বলে ডাকছে। নেহা কিছুটা ভেবে বলে,
“হ্যাঁ, আমি নেহার মা বলছি। আপনি কে?”

“আমি আহিরার বাবা বলছি।”

“আহিরার বাবা?”

“মানে আজকে আপনি যেই মেয়েটাকে এক্সিডেন্টের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন তার বাবা। আপনাকে ধন্যবাদ দিতেই কল করা।”

নেহা শান্ত ভাবে বলে,
“নিজের মেয়ের প্রতি যত্নশীল হন। আজ ও যেই অবস্থায় ছিল..আর একটু এদিক ওদিক হলেই..”

“আমি সবটাই শুনেছি। আপনার কাছে আমি ভীষণ কৃতজ্ঞ৷ বলুন কি করলে আপনার এই ঋণ আমি শোধ করতে পারব।”

“যদি সত্যিই এই ঋণ শোধ করতে চান তাহলে নিজের মেয়ের প্রতি একটু দায়িত্বশীল হোন। আর কিছু করতে হবে না।”

“আপনার গলার স্বরটা আমার ভীষণ চেনা লাগছে৷ আপনারও কি একইরকম লাগছে?”

নেহা অবাক হয়। কি বলবে এবার সে? কিছুটা ভেবে বলে,
“না, লাগছে না। যাইহোক, ভালো থাকবেন আর নিজের মেয়ের যত্ন নেবেন।”

বলেই নেহা ফোনটা রেখে দেয়৷ তার আর কথা বলতেও অস্বস্তি লাগছিল। অন্যদিকে আহির ভাবতে থাকে,
“কে এই মহিলা? কেন ওনার গলার স্বর আমার এত চেনা লাগছিল?”

তবে সে এই ভাবনায় বেশি সময় ব্যয় করলো না। আহিরা ঘুমন্ত চেহারা দেখে হাসিমুখে তার পাশে শুয়ে পড়ল। নাতাশা কিছুটা দূর থেকে আহিরকে পর্যবেক্ষণ করল। সে কিছু সময় আগেই এসেছে। আহির ফোনে কথা বলছিল জন্য এতোক্ষণ সে ভেতরে আসে নি৷ আহির শুয়ে পড়তেই সে বলল,
“অনেক অপেক্ষা করেছি আমি আর না। এবার আহিরকে নিজের করে পাওয়ার জন্য যা করা দরকার আমি তাই করব। আর এজন্য আমার তুরুপের তাস হবে আহিরা।”

★★
শাহরিয়ার কায়সার নিজের বেলকনিতে থাকা রকিং চেয়ারে দুলতে দুলতে নেহার কথাই ভাবছিল। মেয়েটার সাহস তাকে অবাক করেছে। আজ অব্দি কারো এত সাহস হয়নি যে শাহরিয়ারের সাথে এমন ব্যবহার করে। অথচ নেহা একটা সামান্য মেয়ে হয়ে তা করে দেখাল। শাহরিয়ার দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“এই মেয়েটার কথা এত ভাবছি কেন আমি? ও তো আমার জীবনে তেমন মূল্যবান কেউ না। তবুও কেন ওর ভাবনা আমি নিজের মাথা থেকে বের করতে পারছি না।”

শাহরিয়ারের ভাবনার মাঝেই শামিম কে বেলকনিতে এসে বলল,
“আসব?”

শাহরিয়ার নিজের বাবাকে দেখে হতবাক হয়। কারণ সচরাচর তিনি আসেন না। শাহরিয়ার গম্ভীর স্বরে বলে,
“আসুন।”

শামিম কায়সার এসেই বলেন,
“শুনলাম তুমি নাকি কোম্পানিতে এসেই বাড়াবাড়ি শুরু করে দিয়েছ। নেহা চৌধুরীকে নাকি কোম্পানি থেকে বহিষ্কার করেছ। এত বড় অডাসিটি তোমায় কে দিয়েছে? তুমি জানো নেহা আমার কত পুরাতন আর বিশ্বস্ত কর্মচারী।”

শাহরিয়ারের মেজাজটা গরম হয়ে যায়। সে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলে,
“ইনফিনিক্স এখন আমার। তাই এখানে কাকে রাখব বা রাখব না সেই ডিশিসনটাও আমিই নেব। আপনার এখন বিশ্রাম করার সময় আপনি বিশ্রাম নিন।”

“ভুলে যেও না আমার নিজের চেষ্টায় আমি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ইনফিনিক্স গড়ে তুলেছি। তাই তুমি আমায় এভাবে বলতে পারো না।”

“অতীত ঘেটে লাভ নেই। ইন প্রেজেন্ট ইনফিনিক্স আমার তাই আমি যা ডিসাইড করব তাই হবে।”

“তোমাকে যত দেখি ততই অবাক হই। মাঝে মাঝে তো আমার মনে হয়, আমার আম্মাজান যা বলেছিলেন সেটাই ঠিক। তুমি আমার ছেলে নও তুমি ঐ…”

“মিস্টার শামিম কায়সার! আর একটা ওয়ার্ডও সামনে আগাবেন না। আমার মৃত মাকে নিয়ে এত সন্দেহ কেন আপনার? আর যদি এতো সন্দেহ থেকেই থাকে তাহলে কেন আমায় নিজের ছেলে হিসেবে এত বড় করলেন? জন্মের পরই অনাথ আশ্রমে রেখে আসতে পারতেন।”

“করেছি কারণ আমি অমানুষ নই। আর ডিএনএ টেস্টের রিপোর্টও..”

“বাহ, ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট পাবার পরেও আপনার আমার পিতৃপরিচয় নিয়ে এত সন্দেহ। হ্যাঁ, অনেক বড় মনের মানুষ আপনি। কিন্তু সেটা অন্য কারো জন্য। নিজের ছেলেকে যে মাত্র ৫ বছর বয়সে নিজের থেকে বহু দূরে কানাডায় পাঠিয়ে দেয় তারপর দীর্ঘ কাল তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ রাখে সে মানুষ হিসেবে যতোই ভালো হোক একজন পিতা হিসেবে সম্পূর্ণ ব্যর্থ! আর এমন কাউকে কৈফিয়ত দিতে আমি বাধ্য নই।”

শামিম কায়সার দীর্ঘ শ্বাস ফেলেন। স্বেচ্ছায় তো তিনি শাহরিয়ারকে নিজের থেকে দূরে পাঠান নি। শাহরিয়ারের চেহারা একদম তার মা শারমিনের মতো। এই শারমিন ছিল সেই নারী যাকে শামিম কায়সার একসময় নিজের জীবন দিয়ে ভালোবেসেছেন। নিজের পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে নিম্নবিত্ত পরিবারের মিষ্টি স্বভাবের মেয়েটাকে বিয়ে করেছিলেন। তার জন্য গোটা দুনিয়ার বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্যেও প্রস্তুত ছিলেন। অথচ সেই শারমিনই তাকে ঠকালো! তাও আবার তার প্রিয় বন্ধুর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে। যখন প্রথম তাঁর মা তাকে এই ব্যাপারে বলেছিলেন তখন তিনি বিশ্বাস করেন নি। কিন্তু যখন একদিন নিজের চোখে নিজের স্ত্রী ও বন্ধুকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখেন সেদিন নিজেকে সামলাতে পারেন নি। রাগে, ক্ষোভে শারমিনকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন। শারমিন বারংবার তার কাছে অনুনয় করে বলেছিলেন তিনি নিরপরাধ তাকে ফাসানো হচ্ছে কিন্তু নিজের চোখে দেখার পর তিনি আর সত্যটাকে অস্বীকার করেন নি। এর দীর্ঘ ৯ মাস পর, শারমিন তার সাথে যোগাযোগ করে জানায় তিনি প্রেগন্যান্ট। শামিম কায়সার এই বাচ্চাটাকে অস্বীকার করে। বাচ্চাটা হবার পরই শারমিন মারা যায় কিন্তু মৃত্যুর আগে তাকে ডিএনএ টেস্ট করাতে বলেন। শামিম কায়সার ডিএনএ টেস্ট করান, তাতে পজেটিভ রিপোর্টও পান। কিন্তু স্ত্রীর প্রতি বিতৃষ্ণা বা তার ভালোবাসায় বিশ্বাসঘাতকতা যেকারণেই হোক তিনি কখনো শাহরিয়ারকে আপন করতে পারেন নি।

আর ছোট্ট শাহরিয়ারও একা একা বাবা-মায়ের ভালোবাসা ছাড়া এক কষ্টের শৈশব কাটিয়েছে। এসব ভেবেই শাহরিয়ারের শক্ত আবরণ নরম হয়। তার মনে পড়ে যায় কিভাবে নেহাও আজ তার পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলছিল সে আসলেই শামিম কায়সারের মতো এত ভালো মানুষের সন্তান কিভাবে হতে পারে। এটা ভেবেই শাহরিয়ার হুংকার দিয় বলে ওঠে,”নেহা আর কখনো ফিরবে না ইনফিনিক্সে। কখনোই না।”

★★
আরাভ আজ বেরিয়ে পড়েছে ঢাকায়। বিপাসা চৌধুরী অশ্রুসিক্ত নয়নে ছেলেকে বিদায় দিলেন। ঢাকায় যাওয়ার পেছনে আরাভের দুটো উদ্দ্যেশ্য, এক নিজের জন্য ভালো একটা চাকরি খোঁজা আর দুই, নেহার খোঁজ করা। আরাভ এতদিন অনেক যায়গায় নেহাকে খুঁজেছে। কিন্তু তার কোন খোঁজ পায় নি। কিন্তু এবার কেন জানি তার মনে হচ্ছে ঢাকায় গিয়ে নেহা সম্পর্কে কোন তথ্য পাবে।

চলবে ইনশাআল্লাহ✨

#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ২৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি

নেহা তার মেয়ে নিয়াকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে আছে। নেহার জীবনটা এখন বড্ড এলোমেলো হয়ে গেছে হঠাৎ করে। সে যা আশা করেনি তাই ঘটে গেছে তার সাথে। সামনেই নতুন মাস পড়তে চলেছে। বাসা ভাড়া, নিয়ার স্কুলের ফি সহ আরো অনেক খরচ আছে। এজন্য তার টাকার প্রয়োজন। তাই তাকে খুব জলদি একটা নতুন চাকরির বন্দোবস্ত করতে হবে যেকোন মূল্যে। নেহা চোখ বন্ধ করে দৃঢ় সংকল্প করে বলল,
“কাল সকালেই আমায় নতুন চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে।”

নেহা জলদি করে উঠে এসে কম্পিউটারে কিছু জব সার্কুলার চেক করতে লাগল। তারপর নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী সেখান থেকে কিছু জবের জন্য ইন্টারভিউ ফরম পূরণ করে। নেহা ফরম গুলো পূরণ করে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,
“আশা করি এর মধ্যে থেকে কোন একটা চাকরি আমি পেয়ে যাব। তাহলে আর এসব নিয়ে কিছু ভাবতে হবে না৷ তবে যাই হয়ে যাক, ইনফিনিক্সে আমি আর কখনো ফিরব না।”

অতঃপর নেহা আবারো গিয়ে নিয়াকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে। নিয়াকে নিজের বুকের অনেক কাছে আগলে নেয় নেহা। তার মনে পড়ে আহিরের সাথে দেখা হবার কথা। নেহা বলে ওঠে,
“অতীতের কালো ছায়া থেকেও আমার নিজের মেয়েকে দূরে থাকতে হবে। আমি জানি, সবটা এত সহজ হবে না। কিন্তু আমায় পারতেই হবে।”

★★
মুমিনুল পাটোয়ারী রাতে ডিনার করছিলেন। এমন সময় নাতাশা হাসিমুখে তার সামনে উপস্থিত হয়ে বলে,
“আঙ্কেল, আসব?”

“আরে নাতাশা, এসো বসো আমার পাশে।”

নাতাশা মুমিনুল পাটোয়ারীর পাশে বসে। মুমিনুল পাটোয়ারী বলেন,
“ডিনারটা আজ আমাদের এখানেই করে যাও।”

“আহির ও আহিরা ডিনার করে নিয়েছে?”

“হ্যাঁ, ওরা অনেক আগেই করে নিয়েছে। আমি কিছু জরুরি কাজে একটু বাইরে গেছিলাম। ফিরতে একটু রাত হলো..তাই আরকি ডিনার করতে দেরি।”

“ওহ।”

নাতাশা নিজের প্লেটে ভাত বেড়ে নিয়ে খেতে শুরু করল। মুমিনুল পাটোয়ারীও খাওয়ায় মনযোগী ছিলেন। এমন সময় নাতাশা হঠাৎ করে বলে ওঠে,
“আঙ্কেল, আপনাকে একটা কথা অনেক দিন থেকে বলব ভাবছি কিন্তু কিছুতেই বলার সাহস পাচ্ছি না।”

“কি কথা?”

“আসলে আপনি তো জানেন, আহিরের জীবনটা কত কষ্টের। ছোটবেলা থেকে ও কতোটা কষ্টে বড় হয়েছে। তারপর ওর মা, প্রিয় বন্ধু মৃদুল সবাই ওকে একা একা ছেড়ে চলে গেল। এখন ও আহিরাকে নিয়ে জীবন কাটাতে চাইছে কিন্তু আহিরা..মেয়েটা যে কেমন আপনিও জানেন। এমন কঠিন হৃদয়ের বাচ্চা আমি নিজের জীবনে দেখি নি। জানিনা, আহির বাকিটা জীবন এভাবে কিভাবে কাটাবে।”

মুমিনুল পাটোয়ারী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,
“আমার মাথাতেও তো সবসময় এসব চিন্তাই ঘুরপাক খেয়ে। আমি আহিরকে নিজেদের ছেলে হিসেবে গ্রহণ করেছি। আমিও চাই ও জীবনে সুখী হোক। কিন্তু ও যে আমার কোন কথাই শুনতে চায় না।”

“আপনি একটু আহিরকে ভালো ভাবে বোঝান না আঙ্কেল যেন ও এবার নিজের জীবন নিয়ে ভাবে৷ কিসের অভাব আছে ওর? সহায়-সম্পত্তি, রূপ সব দিক দিয়ে ও পারফেক্ট।”

“হুম কিন্তু আহিরের তো একটা মেয়ে আছে..এটাই সমস্যা।”

“এটা কোন সমস্যাই না। আহিরাকে তো আমিও নিজের মেয়ে মনে করি।”

মুমিনুল পাটোয়ারী বলেন,
“আমি জানি নাতাশা, তুমি আহিরকে পছন্দ করো। আমিও চাই তোমার ও আহিরের একটা সুখের সংসার হোক। কিন্তু আহির রাজি থাকলে আমি কিভাবে কি করি?”

“আপনি চাইলেই সব করতে পারেন আঙ্কেল। আহির আপনাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করে। আপনি বললে ও যদি রাজি হয়। আমি ওকে অনেক বার বলেছি কিন্তু ও আমায় ফিরিয়ে দিয়েছে।”

“আমার মনে হয় না আহির রাজি হবে কারণ আমি ওকে অনেকবার বিয়ের ব্যাপারে বলে নেতিবাচক উত্তর শুনেছি।”

“সোজা পথে হয়তো হবে না কিন্তু..”

“কিন্তু কি নাতাশা?”

“আপনি যদি আহিরকে কোনভাবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করতে পারেন তাহলে কাজ হতে পারে।”

“মানে?”

“ধরুন আপনি অসুস্থ হওয়ার অভিনয় করলেন আর এটা নিয়ে আহিরকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করলেন।”

“কি বলছ তুমি? এটা করা কি ঠিক হবে?”

“আহিরের ভালোর জন্য যে এটা আপনাকে করতেই হবে আঙ্কেল। আমার ফ্যামিলিও আমায় বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু আপনি তো জানেন যে, আমি শুধু আহিরকে ভালোবাসি তাই ওকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

“সবটাই বুঝতে পারছি। কিন্তু এমন অভিনয় করাতে আমার মনটা সায় দিচ্ছে না।”

নাতাশা এবার কান্নার ভান করে মুমিনুল পাটোয়ারীর হাতটা আলতো করে স্পর্শ করে বলে,
“আমার দিকটা একবার ভাবুন আঙ্কেল, আহিরকে ছাড়া আমি বাঁচব না। আপনি ছাড়া আর কেউ নেই যে আমার এই ভালোবাসার পূর্ণতায় সাহায্য করবে। আহির যেমন আপনার ছেলে তেমনি আমিও তো আপনার মেয়ে। আপনি আমার জন্য এটুকু করবেন না? আর এতে তো আহিরেরও জন্য ভালো হবে।”

মুমিনুল পাটোয়ারী বলেন,
“আচ্ছা, আমি চেষ্টা করে দেখি।”

নাতাশার মুখে স্বস্তির হাসি দেখা দেয়। সে মনে মনে বলে,
“এবার আমাকে আর আহিরকে এক হওয়া থেকে আর কেউ আটকাতে পারবে না।”

★★
আরাভ কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছে ট্রেন থেকে নামল। তার হাতে সার্টিফিকেট সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী। আরাভ নিজের ফোন বের করে তার ইন্টারভিউ দেওয়া অফিসের ঠিকানা বের করল। অতঃপর বলল,
“রয়াল প্যালেস। এখন এখানেই যেতে হবে আমায়। দেখা যাক, এখানে যদি চাকরিটা পেয়ে যাই তাহলে আব্বুর চিকিৎসাসহ সংসারের অন্যান্য খরচ অনেকাংশেই মিটবে।”

এমন ভাবনা থেকেই আরাভ এগিয়ে যেতে থাকে। তার চোখে অনেক আশা। এই ইন্টারভিউ শেষ করেই সে যতটা পারবে নেহাকে খুঁজবে এই ঢাকা শহরে। তার কেন জানি আজ বারবার মনে হচ্ছে, নেহাকে পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক। ঢাকা থেকে আসার সময় সে জোড়া শালিক দেখেছিল গাজীপুর রেলওয়ে স্টেশনে। আরাভ শুনেছিল তার দাদির কাছে যে, জোড়া শালিক দেখলে নাকি হারিয়ে যাওয়া কারো সন্ধান পাওয়া যায়। যদিও সবসময় সে এসবকে কুসংস্কার ভেবে এড়িয়ে গেছে কিন্তু আজ কেন জানি তার খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করছে এই কথাটা।

নেহা রয়াল প্যালেসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখানেই আজ তার জব ইন্টারভিউ। নেহাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়েই নেহা সেখানে যাবে। নিয়া স্কুলড্রেস পড়ে নেহার সামনে এসে বলল,
“আমাকে কেমন লাগছে আম্মু?”

নেহা হাস্যজ্বল চেহারায় নিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“আমার নিয়ামনিকে তো সবসময় ভালো লাগে৷ আজকেও বরাবরের ভীষণ ভালো লাগছে।”

“জানো আম্মু, আগামী সপ্তাহে আমাদের স্কুলে একটা ড্রামা হবে। তার জন্য আজ অডিশন নেয়া হবে। আমি কি স্নো হোয়াইট চরিত্রের জন্য চান্স পাবো।”

“তুমি নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করো৷ তবে যদি চান্স না পাও তবুও নিরাশ হয়ো না।কারণ মনে রাখবে, যে সত্যিকারের যোগ্য সেই সুযোগটা পাবে। তাই তোমাকে অবশ্যই তাকে এপ্রিশিয়েট কর‍তে হবে।”

“আচ্ছা।”

★★
“আমিই স্নো হোয়াইট হবো, তাই না পাপা?”

আহিরার প্রশ্নের জবাবে আহির হেসে বলে,
“অবশ্যই। আমার প্রিন্সেস হলো সবথেকে বেস্ট। তাই এই ড্রামায় সবথেকে বেস্ট পার্টটা আমার মেয়েই করবে।”

“ঠিক বলেছ। এই স্কুলে কি আমার থেকে বেস্ট আর কেউ নেই।”

“ঠিক, আমার প্রিন্সেসের কাছে বাকিরা কিছুই না। আমি তো ১০০% শিওর যে আমার মেয়েই হবে স্নো হোয়াইট।”

আহিরার বুকটা গর্ভে ফুলে ওঠে নিজের বাবার প্রশংসা শুনে।

★★
নেহা নিয়াকে তার স্কুলের সামনে নামিয়ে দিয়ে রয়্যাল প্যালেসের দিকে রওনা দেয়। রয়্যাল প্যালেসে পৌঁছে সে দেখে তার কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। তাই নেহা দ্রুত ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করে। এমন সময় হঠাৎ করে একজনের সাথে ধাক্কা খায়। নেহা তার চেহারাটা ভালোভাবে খেয়াল না করেই বলে ওঠে,
“সরি!”

তারপর চলে যেতে নেয়। এমন সময় আরাভ একইসাথে বিস্ময় ও খুশির অনুভূতি নিয়ে তাকায় নেহার দিকে। তার সাথেই নেহা ধাক্কা খেয়েছে। নেহা একটু এগিয়ে যেতেই আরাভ পেছন থেকে তার নাম ধরে ডেকে বলে ওঠে,
“নেহা!”

চলবে ইনশাআল্লাহ✨