উত্তল তরঙ্গ পর্ব-৪২+৪৩

0
3

#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ৪২
#লেখিকাঃদিশা_মনি

নেহা তখনো হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিল। ডাক্তাররা তার চিকিৎসা চলমান রাখলেও কোন আশা দিতে পারছিলেন না। আরাভ নিয়াকে আকড়ে বসে ছিল বাইরে।

আচমকা আহিরের আগমন ঘটলো সেখানে। সে বর্তমানে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে রিলিজ নিয়ে ফিরছিল। হঠাৎ করেই নেহার কেবিনের সামনে এসে তার পা থেমে গেল। থাই গ্লাসে চোখ যেতেই তার নজরে এলো নেহার মলিন মুখশ্রী। নেহার দিকে তাকাতেই তার নিজের বুকে কেমন জানি ব্যথা অনুভূতি হলো। আগে তো কখনোই নেহার প্রতি করা অন্যায়গুলোর জন্য তার অনুশোচনা হয় নি। বরং তার মনে হয়েছিল, নেহার সাথে সেটাই হয়েছে যা সে ডিজার্ভ করে। কিন্তু আজ কেন জানি তেমনটা হচ্ছে না। বরং আজ নেহার জন্য বুক কাপছে আহিরের। একটু করে অনুশোচনা কি জমছে তার মনে?

আচমকা একজন ডাক্তার এগিয়ে এসে নেহার কক্ষে প্রবেশ কর‍তে নিলো। আহির ডাক্তারকে থামিয়ে দিলো৷ অতঃপর তাকে জিজ্ঞেস করল,
“নেহা চৌধুরী..ওনার কি অবস্থা এখন?”

“অবস্থা ভালো না, ওনার শ্বাসনালীর অবস্থা ভীষণ বাজে। আমাদের পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব আমরা করছি। এখন দেখা যাক, ওনাকে সুস্থ করতে পারি নাকি৷ সবটাই সৃষ্টিকর্তার হাতে।”

আহির আচমকা হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়। নিজের ফোন বের করে কাউকে একটা ফোন করে। অতঃপর বলে,
“আমি একজন ভালো চিকিৎসকের ব্যবস্থা করছি৷ যত টাকা লাগে আমি দেব। তবুও যেন ওনার কিছু না হয়। আপনারা নিজের সর্বোচ্চ এফোর্ট দিয়ে ওনাকে বাঁচান।”

বলেই আহির ঘুমন্ত নেহার দিকে একপলক তাকিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায়। একটু সামনে এগোতেই সে আরাভের কোলে ক্রন্দনরত নিয়াকে দেখতে পায়। এই মাসুম বাচ্চাটাকেই তো আজ থেকে ৫ বছর আগে নেহার সাথে রাস্তায় ফেলে দিয়েছিল সে। বাচ্চাটার কি দোষ ছিল?

আহিরের মনে ধীরে ধীরে যেন অনুশোচনার বীজ দানা বাধছে। নিজের প্রতিশোধের আগুনে যতটা বেপরোয়া হয়েছিল সে এবার হয়তো ঠিক ততটাই দগ্ধ হবার পালা। আহির আর বেশি সময় দাঁড়ালো না। তার খুব ইচ্ছা করছিল ছোট্ট নিয়ার কাছে গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দেবার। কিন্তু সেই অধিকার যে সে অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছে। তাই দীর্ঘ শ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে আহির সামনে এগোতে লাগল।

একটু দূরে যেতেই নাতাশা এসে আহিরের দুই বাহু আগলে ধরল। আহির এতে খানিক বিরক্ত হলো বটে। তবে বেশি কিছু বলল না। শুধু নিজের হাতটা নীরবে সরিয়ে নিলো। নাতাশা আহিরকে বলল,
“তুই এই অবস্থায় একা একা উঠে আসতে গেলি কেন আহির? আমি তো ছিলাম তোকে আনার জন্য।”

আহির বললো,
“আমি এতটাই দূর্বল হয়ে পড়ি নি যে আমাকে সামলানোর জন্য তোর সাহায্য লাগবে।”

নাতাশা আহিরের সামনে কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেলো। মনে মনে বলল,
“যত জেদ দেখানোর এখনই দেখিয়ে নে আহির। একবার শুধু বিয়েটা হয়ে যেতে দে। তারপর দেখ, তোকে কিভাবে আমি নিজের ইশারায় নাচাই।”

★★
টানা ২৪ ঘন্টা নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে বিশেষ চিকিৎসকের চিকিৎসায় নেহা এখন অনেকটাই ঝুঁকিমুক্ত। ডাক্তার সাহেব এগিয়ে এসে আরাভকে বলল,
“পেশেন্টের অবস্থা এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। আশা করি, খুব শীঘ্রই উনি আবার সম্পূর্ণ সুস্থ হবেন।”

আরাভ ভীষণ খুশি হয়ে ডাক্তারকে ধন্যবাদ দেয়। বিপাসা চৌধুরী বলেন,
“যাক, আল্লাহ এই যাত্রায় আমাদের বাঁচিয়েছেন। বাচ্চা মেয়েটাকে অন্তত মাতৃহারা করেন নি।”

ডাক্তার তাদের কিছু ওষুধের প্রেসকিপশন আর কিছু পরামর্শ দিয়ে এগিয়ে আসেন। একটু দূর আসার পরেই ডাক্তারের ফোন বেজে ওঠে। তিনি ফোনটা রিসিভ করেন। বিপরীত দিক থেকে আহির উদ্বিগ্ন স্বরে বলে,
“নেহা চৌধুরী এখন সুস্থ হয়ে গেছেন তো? ওনার আর কোন ঝুঁকি নেই তো?”

“জ্বি, সবটাই আপনার জন্য। আপনি যদি এভাবে একজন সুদক্ষ চিকিৎসক ম্যানেজ না কর‍তেন আর ওনার চিকিৎসার জন্য এত টাকা…”

ডাক্তার নিজের কথা শেষ করার আগেই আহির বলে,
“এসব কথা যেন গোপন থাকে। এটা আমার অনুরোধ।”

“আচ্ছা।”

আহির ফোনটা রেখে দেয়। নেহা সুস্থ হচ্ছে এটা শুনে সে কিছুটা স্বাভাবিক হয়। তার মনের বোঝাটা কিছুটা কমে। এমন সময় আহিরা এসে আহিরের পাশে দাঁড়ায়। আহির আহিরার দিকে তাকিয়ে বলে,
“প্রিন্সেস তুমি..?”

আহিরা আহিরের পাশেই সোফায় বসে বলে,
“তুমি তো এখন আমায় একদম ভুলে গেছ পাপা।”

“পাপা কি তার প্রিন্সেসকে ভুলতে পারে?”

“তাহলে আমাকে এখন একটা গল্প শোনাও..আমি একটা গল্প শুনতে চাই।”

আহির তখন আহিরার পাশে বসে বলতে শুরু করে,
“অনেক বছর আগের কথা, এক দেশে ছিল এক রাজকন্যা। সে ছিল রাজার অনেক আদরের, তার জীবন ছিল অনেক আনন্দের। তারপর হঠাৎ একদিন এক রাক্ষস এলো তার জীবনে। সেই রাক্ষস রাজকন্যাকে তুলে নিয়ে গেলো রাজপ্রাসাদ থেকে। তুলে নিয়ে গিয়ে তার উপর অনেক অত্যাচার করল৷ এরপর রাজকন্যার যখন ফুলের মতো টুকটুকে দুটো বাচ্চা হলো তখন সে একটা বাচ্চাকে নিজের কাছে রেখে আরেকটা বাচ্চাকে রাজকন্যার সাথে রাস্তায় ফেলে এলো। রাজকন্যা অনেক কষ্টে তার বাচ্চাকে মানুষ করল। সবাই তাকে অনেক অপমান করল, অনেক কষ্ট দিল। তবুও সে দমে গেলো না।”

আহিরা সরল মনে বলল,
“আর রাজকন্যার আরেক বাচ্চার কি হলো?”

“সেই বাচ্চাটাকে রাক্ষস নিজের কাছে রেখে বড় করল।”

আহিরার মনটা হঠাৎ করে ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। সে বলল,
“রাক্ষস এটা ঠিক করে নি, তার উচিৎ ছিল বাচ্চাটাকে তার মার কাছে পাঠানো। মাকে ছাড়া একটা বাচ্চা কখনো ভালো থাকে না। যেমন আমি ভালো নেই।”

আহিরের বুকে চাপা ক্ষতটা যেন আরো বাড়ে। অনুশোচনার আগুনে এবার ভালোই দগ্ধ হতে থাকে সে। অনেক কষ্টে বলে,
“তোমার কি মনে হয় প্রিন্সেস? রাজকন্যার কি উচিৎ কখনো সেই রাক্ষসকে ক্ষমা করা?”

আহিরা বলে,
“মোটেই না। ঐ মনস্টার ক্ষমার অযোগ্য। রাজকন্যার উচিৎ তাকে তার পাপের শাস্তি দিয়ে তার বাচ্চাকে নিজের কাছে নিয়ে যাওয়া। তাহলে সবাই ভালো থাকবে।”

আহির আচমকা আহিরাকে জড়িয়ে ধরে। সে নিজের মনে বলে,
“হয়তো আমি ভুল করেছি কিন্তু তার পেছনে কারণ ছিল৷ এখন নিজের অতীতের জন্য যতোই আফসোস করি না কেন, নিজের মেয়েকে আমি হারাতে পারবো না। আমার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন আমার আহিরা। সত্যটা জানতে পারলে ও কখনো আমায় ক্ষমা করবে না। এমনিতেই ওর হৃদয়ে আমার জন্য তেমন অনুভূতি নেই তার উপর যদি সব জানে তাহলে..নাহ, এটা আমি হতে দেব না। ভাগ্য কখনো আমায় সুখী হতে দেয়নি। এবার আমি আমার মেয়েকে নিজের থেকে দূরে যেতে দেব না। তার জন্য যা করা দরকার তাই করবো। যদি আরো অন্যায় করতে হয় তো করব। আজীবন নেহার থেকে ওর মেয়ের পরিচয় লুকিয়ে রাখব আমি। আহিরা শুধু আমার মেয়ে ছিল আর আমার মেয়েই থাকবে।”

★★
নেহা আধো আধো চোখ মেলে তাকায়। নিজের চোখ খুলতেই সে আরাভ ও নিয়ার কান্নারত মুখশ্রী দেখতে পায়। অক্সিজেন মাস্কটা সরিয়ে আলতো স্বরে বলে,
“তোমরা চিন্তা করো না, আমি একদম ঠিক হয়ে গেছি।”

নিয়া নেহার কপালে চুমু খেয়ে বলে,
“আম্মু তুমি ঠিক হয়ে গেছ..আমি না অনেক ভয় পেয়ে গেছিলাম।”

আরাভ বলে,
“এবার তোদের আমাকে আরো বেশি করে আগলে রাখতে হবে।”
চলবে ইনশাআল্লাহ✨

#উত্তল_তরঙ্গ
#পর্বঃ৪৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি

নেহা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছে। আরাভ বর্তমানে নেহার খেয়াল রাখছে। নিয়াও নিজের মায়ের পাশে বসে থাকছে সবসময়। তার মনের মাঝে একটা ভয় কাজ করে, নিজের মাকে ঐ অবস্থায় দেখার পর থেকেই। নিয়া নেহাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলে,
“তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না তো আম্মু? তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না।”

নেহা নিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“আম্মু তার নেহাকে ছেড়ে কোথাও যাব? আমি আমার মেয়েকে ছেড়ে কোথাও যেতে পারি?”

মায়ের কথায় কিছুটা স্বস্তি পায় নিয়া। এরমধ্যে আরাভ হঠাৎ করে তাদের রুমে এসে বলে,
“নেহা, তোকে একটা ভালো খবর দেয়ার আছে।”

নেহা আরাভকে জিজ্ঞেস করে,
“কি ভালো খবর?”

আরাভ নিজের আনন্দ প্রকাশ করে বলে,
“আসলে..আমি তো ঢাকা শহরে গিয়ে অনেক চাকরি খুঁজেছি কিন্তু এতে বিশেষ কিছু লাভ হয় নি। আমার বয়স হয়ে যাওয়ায় আর তেমন কোন অভিজ্ঞতা না থাকায় ভালো কোন চাকরি পাই নি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, নিজে যদি ছোটো-খাটো একটা কিছু করা যায়। তো আমার এক বন্ধু আছে, ও ডেকোরেশনের কাজ করে একটা বড় কমিউনিটি সেন্টারে। ওর সাথে আমি যোগাযোগ করেছিলাম। তুই তো জানিস, আগে থেকে কোথাও কোন অনুষ্ঠান হলে সেসব পরিচালনা করার আমার অভিজ্ঞতা আছে। তো আমার সেই বন্ধু আমাকে সেখানে ম্যানেজিং এর কাজ দিয়েছে। সামনেই একটা বড় এনগেজমেন্ট সেরেমনির দায়িত্ব পড়েছে আমার কাঁধে। কাজটা ভালো ভাবে করতে পারলে একটা বড় এমাউন্টের পেমেন্ট পাবো।”

নেহা খুশি হয়ে বলে,
“এটা তো অনেক ভালো খবর।”

নিয়া বলে,
“মামা, ওখানে কি অনেক বড় অনুষ্ঠান হবে? তাহলে তো অনেক মানুষ আসবে আর অনেক মজাও হবে। আমিও ওখানে যেতে চাই।”

নেহাকে নিয়াকে বাধা দিয়ে বলে,
“তুমি ওখানে গিয়ে কি করবে? তোমার মামা তো ওখানে নিজের কাজে যাচ্ছে। তুমি গিয়ে শুধু শুধু ওনাকে বিরক্ত করবে।”

আরাভ নেহার কথায় প্রতিবাদ করে বলে,
“এভাবে বলছিস কেন ওকে? আমার নিয়ামনিকে ছাড়া কি আমি যেতে পারি? আর শুধু নিয়া কেন তুইও যাবি আমার সাথে।”

নেহা আমতাআমতা করে বলে,
“আমি? আমি শুধুশুধু ওখানে গিয়ে কি করবো।”

“আমি কোন কথা শুনব না। তুই এমনিতেই এত বড় একটা অসুস্থতার মধ্যে দিয়ে গেছিস, এখন আমি চাই তুই একটু স্বাভাবিক জীবন কাটা। ওখানে গেলে তোর ভালো লাগবে।”

নেহা আর আপত্তি করতে পারে না। নিয়াও খুব খুশি হয়। আরাভ নেহার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোকে আর তোর মেয়েকে একটা স্বাভাবিক জীবন আমায় দিতেই হবে। সেটা যেকোন ভাবেই হোক।”

এরমধ্যে হঠাৎ রিনা সেখানে এসে বলে,
“আরাভ ভাই, আমাকেও নিন না আপনাদের সাথে। আমিও যাই।”

আরাভ ভ্রু কুঁচকে বলে,
“তুমি ওখানে গিয়ে কি করবে?”

“কেন? আপনার কাজিন ও তার মেয়ে যদি যেতে পারে তাহলে আমি কেন পারবো না?”

আরাভ আর কিছু বলতে যাবে এমন সময় বিপাসা চৌধুরী এসে বলেন,
“মেয়েটা যখন যেতে চাইছে তখন ওকেও নিয়ে যা। হাতেহাতে তোকে সাহায্য করে দিতে পারবে।”

আরাভ নিজের মায়ের কথা আর ফেলতে পারে না। অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হয়ে যায়। এদিকে রিনা বিজয়ী হাসি হেসে বলে,
“তোমাকে আর ঐ নেহাকে আমি কিছুতেই একান্তে সময় কাটাতে দেব না। এই পাঁচ বছর ধরে তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি কতই না সাধনা করেছি। কত পাত্রপক্ষকে ফিরিয়ে দিয়েছি। বিনিময়ে তোমাকে যদি নিজের করে না পাই তাহলে আমার জীবনটাই বৃথা। তাই এবার আমাকে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতেই হবে।”

★★
নাতাশা একটা পার্লারে এসেছে নিজেকে আরো সুন্দরী ও আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য। সাজগোছ শেষে বারবার নিজেকে আয়নায় দেখছে সে। নাতাশার মা নূর বেগম নাতাশার দিকে বিরক্তির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। নাতাশা নিজের মায়ের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“আমাকে কেমন লাগছে আম্মু? আজ এনগেজমেন্ট সেরেমনিতে সবার দৃষ্টি আমার দিকেই থাকবে তো?”

নূর বেগম দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেন,
“সবার দৃষ্টি থেকে কি লাভ? যার জন্য তুই এত কষ্ট করে সাজছিস সে তো তোর দিকে ফিরেও তাকাবে না।”

“আম্মু! এসব বাজে কথা বলো না।”

“আমি যে ভুল কিছু বলছি না সেটা তুইও জানিস।”

“বাদ দাও! বিয়েটা হয়ে যাক। তারপর আহিরকে আমি হাতের মুঠোয় নিয়ে নেব।”

“কিন্তু আহিরের সামনে যদি সব সত্য চলে আসে কখনো? তাহলে কি হবে?”

“কিভাবে সব সত্য ওর সামনে আসবে?”

“তুই কি ভুলে যাচ্ছিস ঐ মেয়েটার কথা…!”

নাতাশা হালকা ঢোক গিলে বলে,
“অতীতের কথা বাদ দাও৷ ঐ মেয়ে এখন অনেক দূরে। ও আর কখনো বাংলাদেশে ফিরবে না।”

“অতীতকে চাইলেই বাদ দেয়া যায় না, নাতাশা। বিশেষ করে সেই অতীত যদি বর্তমানে প্রভাব ফেলার ক্ষমতা রাখে। ঐ মেয়েকে তো তুই সেই সময় টাকা দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছিলি। তবুও ও কিন্তু তোর সব পাপের সাক্ষী। মৃদুলের মৃত্যু থেকে কিভাবে তুই নেহার বিরুদ্ধে আহিরকে উস্কে দিয়েছিস সবটাই জানে সে। ও যদি কখনো ফিরে আসে তাহলে..”

“তাহলে ওকেও আমি নিজের পথ থেকে সরিয়ে দেব।”

নাতাশার চোখে আগুন জ্বলে ওঠে। পরক্ষণে সে আবার মৃদু হেসে বলে,
“আমার পথের কাঁটা ওপড়াতে যে আমি কতোটা সিদ্ধহস্ত সেটা তুমি খুব ভালো করেই জানো আম্মু। তাই এখন এসব বাজে বকা বন্ধ করো আর চলো আমার সাথে। এনগেজমেন্টের সময় হয়ে যাচ্ছে।”

★★
আরাভ সকাল থেকে কর্মব্যস্ত সময় পার করছে। কমিউনিটি সেন্টারে আজ গাজীপুর শহরের অন্যতম এক বিজনেস টাইকুনের এনগেজমেন্টের আয়োজন চলছে। সেখানেই মনযোগ দিয়ে কাজ করে চলেছে আরাভ। রিনা মাঝেমধ্যে তাকে হাতেনাতে সাহায্য করছে। নেহাও তাকে বারকয়েক সাহায্য করতে চেয়েছিল তবে তার অসুস্থতার জন্য আরাভ তাকে কোন কাজ করতে দেয় নি। অগত্যা নেহা ও নিয়া চুপচাপ বসে আছে। রিনা আরাভের দিকে একটা ফুলের তোড়া বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“আপনার কাজিন আর তার মেয়ে কি এখানে বসে বসে খেতে এসেছে? একটুও কি বিবেক নেই ওদের? আপনি একা একা এত কাজ করছেন আর ওরা..”

রিনা নিজের কথা শেষ করতে পারে না। তার আগেই আরাভ চেচিয়ে বলে,
“তোমাকে এসব বাজে কথা বলার জন্য নিয়ে আসিনি আমি। তোমাকেও কিছু করতে বলি নি আমি। আমার কাজ আমি করে নেব। তোমার যদি ওদের দেখে হিংসা হয় তাহলে নিজেও বসে বসে খাও। নাও লিভ।”

বলেই আরাভ ফুলের তোড়াটা কেড়ে নিয়ে নিজের কাজে মন দেয়। রিনা অপমানিত বোধ করে দূরে গিয়ে চোখের জল মুছতে থাকে।

এদিকে নিয়া বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হচ্ছিল। তাই সিদ্ধান্ত নিলো চারপাশটা একটু ঘুরে দেখবে। তাই সে নেহাকে বলল,
“আম্মু, আমি একটু চারপাশটা ঘুরে দেখব?”

নেহা বলে,
“আচ্ছা দেখো, তবে বেশি দূরে যেও না।”

মায়ের অনুমতি পেয়ে নিয়া খুশিতে আপ্লুত হয়ে চারপাশটা ঘুরে দেখতে থাকে। এভাবে আনমনে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ করে দৌড়ে আসতে থাকা একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে সে পড়ে যায়। দুজনেই ব্যথা পায়। আহিরা দ্রুত উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“এই মেয়ে দেখে চলতে পারো না।”

নিয়াও উঠে দাঁড়িয়ে বলে,
“আমি তো দেখেই চলছিলাম৷ তুমিই দৌড়ে এসে..”

নিয়া আর কিছু বলবে এমন সময় আহিরা তাকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
“তুমি এখানে..মানে আন্টিও..”

তখনই আহির সেখানে উপস্থিত হয়ে বলে,
“কি হয়েছে এখানে?”

নিয়াকে দেখে আহির থেমে যায়। ততক্ষণে নেহাও নিয়াকে দেখতে এদিকে আসে। নেহা ও আহির আবারো মুখোমুখি। নেহার চোখে ঘৃণা আর আহিরের চোখে কিছুটা অপরাধবোধ। নিয়া ও আহিরাও অবাক চোখে সবটা পর্যবেক্ষণ করে। ভাগ্য এই চারজনকে আবারো আজ এক যায়গায় এনে দাঁড় করালো!
চলবে ইনশাআল্লাহ✨