আষাঢ়িয়া প্রেম পর্ব-০৪

0
1

#আষাঢ়িয়া_প্রেম 💓
লেখনিতে #মিমি_মুসকান
#পর্ব_৪

আষাঢ় মাস মানেই বৃষ্টি, বৃষ্টি ভেজা শহর। আকাশে কালো মেঘের সমারোহ, বৃষ্টি ভেজা পথের ঘ্রাণ,‌মেঘের গর্জন আর ভিজে কদম ফুল। এসব না থাকলে আর বর্ষাকাল কি? কিন্তু ভারী বর্ষণের আগে কয়েকদফা রোদে পুড়*তে হয়। রোদের তাপ তীব্র থেকে তীব্রতর না হওয়া অবধি আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়ে না। যেমনটি আজ! গতকালেও এতো গরম ছিলো যে সিদ্ধ হবার জোগাড়। সেখানে আজ ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। প্রথমে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি দিয়েই শুরু হয়েছিলো এখন পড়ছে মুষলধারে বৃষ্টি।

ফারজানা তখনো ক্লাসে বসে আপন মনে জানালার ফাঁক দিয়ে বৃষ্টি দেখছে। প্রফেসরের বকবকানি আর ভালো লাগছে না তার। ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে ভিজতে। আহ কি ভালো লাগত তখন। প্রাণটা জুড়িয়ে যেত। জানালার স্বচ্ছ গ্লাসের উপর প্রতিবার এসে পড়ছে বৃষ্টির কয়েক ফোঁটা। ঝাপসা হয়ে উঠল। বৃষ্টির ফোঁটা এসে গ্লাসের উপর পড়ে আবার গ্লাস বেয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ে যায়। কি অদ্ভুত দৃশ্য। গালে হাত রেখে সেখানে মগ্ন থাকার সময় হঠাৎ করে দেখতে পেলো গ্লাসের উপর কারো প্রতিচ্ছবি। হ্যাঁ হ্যাঁ, এটা তার কল্পনা। কিন্তু এই কল্পনা তো সে আশা করেনি। চোখ বুজে নিল। বুক ভরে শ্বাস নিল সে।

ফাহাদ সাহেব কে নিয়ে ভাবার কি আছে সে বুঝতে পারল না। কিন্তু চোখ বন্ধ করতেই ওই যুক্তি আর খাটল না।‌‌ তার শীত শীত লাগছে। মনের মধ্যে আবারো কল্পনা করছে।‌ একটা বেলকনি, এর মাঝে একটা টি টেবিল দু দিকে দুটো বেতের চেয়ার। টেবিলের উপর ধোঁয়া উঠা গরম চা। বাইরে মুষলধারে বৃষ্টি। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে সামনে ফিরতেই দেখল লোকটার অমায়িক হাসি! সাথে সাথে চোখ মেলে তাকাল। কল্পনা ভেঙে গেল কিন্তু মাথা থেকে সরতেই চাইছে না। হ্যাঁ ফাহাদ সাহেবের হাসিটা সুন্দর। একটু বেশিই যেন…

ক্লাস শেষ হতে হতেই বৃষ্টি শেষ। এখন কেবল ভেজা রাস্তার উপর হেঁটে চলে যাচ্ছে সে।‌ আজ ছুটি একটু আগেই হয়েছে। ভার্সিটি বাসের অপেক্ষা না করে রিক্সা দিয়ে গেলেই হয়। হাতের ফোনটা বেজে উঠলো। এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল মুখে। ফোন অনুসরণ করে এদিক ওদিক খুঁজছে সে!

চায়ের কাপ শেষ হলেও গল্প বলা যেন শেষ হচ্ছে না।‌ কাব্য কথা শেষ করার মানুষই না। আজ তাদের দেখা প্রায় বছর খানেক পর। কতো কথা জমা আছে তার মনে। উগড়ে দিচ্ছে একটার পর একটা। এক কাপ চা শেষ করে কাব্য বলল, আরেকটা খাবি?”

“দে খাই। এর পরেও তো মনে হয় তোর কথা বলা শেষ হবে না।

“আরে কি শেষ হবে? তুই শোন না কি হলো। মামা আরো দু কাপ চা!”

চায়ের কল্যাণে কথা শেষ হয়নি আসলে। এরপর তারা উঠল ভেলপুরি খেলো, ঝালমুড়ি খেতে খেতে ক্যাম্পাসে এক চক্কর দিল। কাব্য এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভাবতেই অবাক লাগে ফারজানার। কি ট্যালেন্টেড বন্ধু বান্ধব আছে তার। কাব্য খেতে খেতে বলল,‌ “একদিন টিএসসিতে এলেও তো পারিস।”

“আসব আসব!

“তুই‌ কেবল আসব আসব করিস। দেখ তোর সাথে দেখা করতে এখানেও আমার আসা লাগল তাও এক বছর পর। আমি গর্জ না করলে বোধহয় আরো দশ বছর পর লাগত আমাদের দেখা হতে।”

ফারজানা হাসল। বিকেল হয়ে আসছে। তার ভার্সিটি বাস চলে গেছে। কাব্যের জন্য এতো টুকু করাই যায়। বেচারা বন্ধুতের খাতিরেই এতো দূর এসেছে। এখন রাস্তার ওপারে কতো গুলো স্ট্রিট ফুডের দোকান বসল। কাব্য নিয়ে গেলো ওদিকে। ওর কথা বুঝি এখানও শেষ হয়নি। মেয়ে মানুষ নাকি বেশি কথা বলে অথচ কাব্যকে দেখে সে সত্যটা জানতে পারছে।

এবার মোমো খেতে খেতে দুঃখের আলাপ সারল। কাব্যর প্রেমিকা তাকে ধোঁ*কা দিয়ে আরেকজনকে বিয়ে করেছে। আহারে দু বছরের প্রেম ছিল তাদের। সেই কলেজ লাইফ থেকে। ফারজানা তো দেখেই আসছিলো। যাই হোক,‌একটু সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করল। বলল,‌ বাদ দে। তুই এখন ঢাবির স্টুডেন্ট। মেয়ে মানুষের অভাব হবে নাকি? দেখবি লাইন লেগে যাবে!”

কাব্য হাসতে হাসতে বলল, “যা বলেছিস। তবুও দেখ ও তো..

“বাদ দে। দু ঘণ্টা ওর আলাপ শুনে শুনে আমার কান ঝালাপালা হয়ে গেছে।”

“দু ঘণ্টা হয়ে গেল নাকি

“ওমা আপনার খেয়াল নেই।

কাব্য বোকার মতো হাসল। লজ্জা পেয়ে বলল,
“আসলে তুই তো আমার একমাত্র ভালো বন্ধু আছিস। তোর সাথে কথা বললে মনে হয় তুই আমার কথা শুনছিস। ভালো শ্রোতা তুই। ওদিকে অন্যরা এমন ভাব ধরে যে কথা বলতেই ইচ্ছে করে না। কতোদিন পর কথা বললাম বল তো!”

ফারজানা মুচকি হাসল। বন্ধুর মনের ভার কাটাতে পেরে তার আনন্দ লাগছে। অতঃপর তাকে বিদায় দিয়ে ফিরল ভার্সিটির গেইটের কাছে। ভার্সিটি ততোক্ষণে পুরোপুরি ছুটি। লোকজন নেই তেমন। কিন্তু একজন আছে। ওই গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে হাতে সিগারেট নিয়ে। ফারজানা এসে তার সামনে দাড়াতেই দ্রুত হাতের সিগারেট ফেলে দিল। ফারজানা ওদিকে ফিরে মুচকি হেসে বলল,‌

“আপনি যান নি এখনো?”

“হ্যাঁ, যেতাম ওই একটু কাজ ছিল।”

“কি কাজ? আমাকে ফলো করা বুঝি। কতোক্ষণ ধরে ফলো করছিলেন আমায়?”

ফাহাদ লজ্জিত হলো। অপ্রস্তুত গলায় বলল, “দু ঘণ্টা পনেরো মিনিট।”

“বাহ গুনে রাখছিলেন নাকি?

“ছেলেটা কে?”

“ও আমার কলেজ ফ্রেন্ড। বহুদিন পর দেখা তো তাই অনেক কথা বলল।”

“অনেক বেশি কথা বলে।”

“হ্যাঁ, তা একটু বলে।”

“আপনি খুব ভালো শ্রোতা। শুধু তার কথা শুনেই যাচ্ছিলেন।”

“আর কি করব বলুন। সাথে আপনাকেও দেখছিলাম। দূরে দাঁড়িয়ে আমার দিকে নজর রাখছিলেন। যেখানে আপনি দাঁড়িয়েছিলেন সেখানে কেবল কালো ধোঁয়ায় কুণ্ডলি পাকানোর দৃশ্য। এতো স্মোক করেন?”

“না তো, ওতো না। মাঝে মধ্যে খাই। চেইন স্মোকার না আমি।”

“তাই নাকি? আমি তো বলতে পারি।‌ আপনি ৮ টা সিগারেট শেষ করেছেন।”

“ওহ শুনছিলেন বুঝি। তার মানে আপনিও নজর রাখছিলেন আমার উপর!”

ফারজানা হাসল। ফাহাদের মুখ থেকে দুঃখী দুঃখী ভাবটা কেটে গেল। কিন্তু ফারজানার দুঃখ হচ্ছে তার জন্য। সে বলেই দিল, “আসলে দুঃখ হচ্ছে আপনার জন্য।”

“কেন?”

“আমি দেখছিলাম। গত দু ঘণ্টা ধরে আপনি কেবল হাঁসফাঁস করছিলেন। ছটফট করছিলেন। চাইছিলেন আমায় ধরে সেখান থেকে নিয়ে আসতে। কিন্তু পারেননি! কারণ সেই অধিকার আপনার ছিলো না। নাহলে..

ফাহাদ নিশ্চুপ হয়ে তার কথা শুনছিল। সে বিস্মিত হলো। মানুষকে নিয়ে ফারজানার অভিমত আসলেই চমকপ্রদ। নাকি এটা কেবল তারই জন্য। মুখের ভাব দেখে মনের কথা ধরে ফেলল একদম। ফাহাদ হাসল। মাথা নিচু করে আবার তার মুখ পানে চেয়ে বলল,

“তো অধিকার হবার সুযোগ করে দিবেন নাকি?”

ফারজানা মৃদু হেসে জবাব দিল, “ভেবে দেখছি।”

“আপনার ভাবতে কতোদিন লাগবে জানতে পারি মিস?”

“খুব তাড়া দেখছি আপনার। এতো অধৈর্য হয়ে পড়লে অন্য কোথাও ট্রাই করুন।”

“না সে কি করে হয়? আমার তো আপনাকেই চাই!”

মুখ ফসকে মনের কথা স্পষ্ট বলে দেওয়ায় খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল ফাহাদ। ফারজানা দু দণ্ড নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে থেকে অতঃপর হেসে উঠল। অতঃপর কিছু না বলেই হাঁটা ধরল। তার পাশে পাশে হাঁটা ধরল ফাহাদ।

“আপনি কিন্তু আমার সাথে অ*ন্যায় করেছেন ফাহাদ সাহেব?”

“কি করলাম আবার?”

“আপনার বাইক থাকতেও আমার রিক্সায় চড়ে যেতে বললেন।”

ফাহাদ থমকে দাঁড়াল। তার মিষ্টি মুখ পানে চেয়ে বলল, “আসছি দু মিনিট!”

যেমনি ছুটে বেরিয়ে গেলো তেমনি ছুটে এলো বাইক নিয়ে। বাইক থেকে নেমে বলল, “চলুন।”

“উহু আজ না।”

“কেন?”

“আপনার গা থেকে ভীষণ গন্ধ আসছে!”

ফাহাদ হতভম্ব হয়ে নিজের গা শুঁকতে লাগল। সিগারেটের তীব্র গন্ধে তার গা তিরতির করে উঠল। রাগে ঠোঁট কাম*ড়ে ধরল। ফারজানার মজা লাগছে। সে ফাহাদের সামনে থেকেই একটা রিক্সায় চড়ে বলল, “আসি ফাহাদ সাহেব। দেখা হবে আবার!”

সামনে ঘুরে বসল। রিক্সার হুডের আড়ালে তার মুখটাও আড়াল হয়ে গেল। ব্য*থিত হৃদয় নিয়ে ফাহাদ দাঁড়িয়ে রইল অনেকক্ষণ। যতক্ষণ রিক্সার ঝলক দেখা যায় ততোক্ষণ আর কি। অতঃপর ঈষৎ হেসে উঠল। আচ্ছা ব্যথিত হৃ*দয়ে প্রেমিকের মুখে হাসি কেমন হয়? কল্পনা করছিলো ফারজানা…

#চলবে..