#সাঝের_প্রণয়ডোর
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_০৪
[পর্বটা একটু রোমান্সধর্মী। যাদের রোমান্টিক পর্ব ভালো লাগে না তারা প্লিজ স্কিপ করবেন।]
হায়া ওয়াশরুমে ঢোকার মিনিট দশেক পর ওয়াশ রুমের দরজায় নক করে আশিয়ান। হায়া তখন তার মেকআপ তুলছিলো। নক করার আওয়াজ শুনে তাড়াতাড়ি করে মুখটা ধুয়ে দরজাটা একটু খুললে আশিয়ানকে দেখতে পায়। আশিয়ান তার দিকে জামা কাপড় বাড়িয়ে দিয়ে গম্ভীর গলায় আদেশ দিয়ে বলে–
—তোমার ঠান্ডার সমস্যা আছে,,এত রাতে শাওয়ার নেওয়া লাগবে না। মুখ হাত ধুয়ে কাপড় চেঞ্জ করে আসো।
কথাগুলো একনাগারে বলে হায়া’র হাতে কাপড় গুলো ধরিয়ে দিয়ে আশিয়ান সেখান থেকে সরে আসে। হায়া’র মস্তিষ্ক কথাগুলো ক্যাচ করতে কিছুক্ষণ সময় নেয়। কিন্তু যখন সে বুঝতে পারে তখন রেগে যায়। বউ হতে না হতেই আদেশ করা শুরু করে দিয়েছে। হায়া মানবে বুঝি এই চারচোখা মাস্টারের আদেশ? বয়েই গেছে তার এই মাস্টারের আদেশ মানতে। যদিও সে ভেবেছিলো শাওয়ার নিবে না কিন্তু এখন নিবে। আশিয়ানের উপর জেদ করেই কাজটা করবে।
প্রায় এক ঘন্টা লাগিয়ে শাওয়ার নিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বের হয় হায়া। এর মধ্যে আশিয়ান কয়েকবার নকও করে গিয়েছে কিন্তু হায়া ঘাড়ত্যাড়ামি করে এতক্ষণ লাগিয়েছে। হায়া ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে আশিয়ান রাগী দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে। হায়া কিছুটা ভয় পেয়ে যায় তার এমন দৃষ্টি দেখে কিন্তু সেটা প্রকাশ করে না। মুখ ঘুরিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেলকনিতে চলে যায়।
রাত প্রায়ই তিনটা বাজতে চলেছে। প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে দেখে হায়া টাওয়ালটা লন্ড্রি স্ট্যান্ডে মেলে দিয়ে যেই না পেছন ফিরেছে তখনই শক্ত পোক্ত কিছু একটার সাথে নাকে বারি খায়। নাকে হাত বুলাতে বুলাতে চোখ তুললে দেখতে পায় তার বরমশাই দাঁড়িয়ে আছে। আগের মতো রাগী রাগী ভাবটা না থাকলেও মুখটা কেমন গম্ভীর করে রাখা।
হায়া আশিয়ানকে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে নিলে আশিয়ান খপ করে তার কোমড় চেপে ধরে নিজের বুকে নিয়ে আসে। হায়া হতভম্ব হয়ে হা করে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আশিয়ান দুইহাত দিয়ে হায়া’র কোমড় চেপে ধরে তাকে কিছুটা উঁচু করে নিজের সমান সমান করে। তারপর গম্ভীর গলায় বলে–
—বড্ড অবাধ্যতা করছো তুমি মেয়ে? এর পরিনাম যে ভালো হবে না এটা কি তুমি আন্দাজ করতে পারছো?
—(নিশ্চুপ)
—শাওয়ার নিলে কেন?
—(নিশ্চুপ)
আশিয়ান হায়া’র কোমড়ে হালকা চাপ দিয়ে বলে–
—কি হলো জবাব দিচ্ছো না কেন?
হায়া এবার মুখ খুলে। সে বলে–
—ইচ্ছে হয়েছে তাই নিয়েছি।
—কিন্তু এতে যে আমার কথা অমান্য হলো,,তার কি হবে?
—আমি কি জানি।
কথাটা বলে হায়া তার মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েই চলেছে,,নিঃশ্বাস কেমন ঘন হয়ে আসছে। চোখ বুঁজে আসতে চাইছে। নিজেকে নরমাল করার জন্যই এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
হঠাৎই হায়া’র সমস্ত কায়া থরথরিয়ে কেঁপে উঠে। সে চোখ খিঁচে বন্ধ করে আশিয়ানের টি-শার্ট খামচে ধরে দুইহাত দিয়ে। হায়া এতটা জোরে খামচে ধরেছে যে আশিয়ানের পাতলা টি-শার্ট ভেদ করে তার শরীরে তার নখ বিঁধে যায়।
ব্যথা অনুভূত হলেও আশিয়ান থামে না। সে একের পর এক উষ্ণ পরশ দিয়ে হায়া’র কাঁধ,, গলদেশ ভরিয়ে দিচ্ছে। রাতের নিস্তব্ধতা,, মৃদুমন্দ বাতাস আর প্রেয়সীর গায়ের মাতাল করা স্পর্শ এসবই যেন আশিয়ানকে উসকে দিচ্ছে কিছু একটা করার জন্য। আশিয়ান ধীরেধীরে বেসামাল হতে থাকে। উষ্ণ স্পর্শগুলো ক্রমেই যন্ত্রণাদায়ক হতে শুরু করে যখন কিনা আশিয়ান তাঁর দাঁতের ব্যবহার শুরু করে হায়া’র কাঁধে।
হায়া দাঁতে দাঁত চেপে দাড়িয়ে আছে। মস্তিস্ক বলছে–
— দূরে সরিয়ে দে এই স্বার্থপর লোকটাকে যে কিনা নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য তোকে ভরা সমাজে অপমান করেছে। অলক্ষী,,অপয়া,,চরিত্রহীনের তকমা পেতে হয়েছে যেই লোকের জন্য,, তার থেকে কিসের ভালোবাসা আশা করিস তুই? লোকটা তো নিজের ইচ্ছেতে বিয়ে করে নি বরং আগের বারের মতো এবারও পরিবারের চাপে পড়ে বিয়েটা করে করেছে। এমন মানুষ যেকোন দিন নিজের স্বার্থের কথা ভেবে তোকে ছেড়ে আবারও চলে যেতে পারে। মায়ায় পরিস না এই ছলনাময় নরের।
কিন্তু মন বলছে অন্য কথা। মন বলছে–
—সে না হয় তোকে নিজের ইচ্ছেতে বিয়ে করেনি। কিন্তু তুই কি পারবি না তাঁকে নিজের মায়ায় বাঁধতে? আগে যা হওয়ার হয়েছে কিন্তু এখন তোরা স্বামী-স্ত্রী। এই বাঁধন স্বয়ং উপর ওয়ালার নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর বাঁধন ভঙ্গ করা বহু কঠিন রে হায়া। তুই বেঁধে নে তোর স্বামীকে নিজের আঁচলে। এমনভাবে বাঁধ যাতে তোকে ছেড়ে যাওয়ার কথা কল্পনাতেও না আনে।
হায়া’র মন আর মস্তিষ্ক এই দ্বন্দ্বের মাঝেই আশিয়ান তাকে কোলে তুলে নেয়। চঞ্চল পায়ে এগিয়ে যায় ঘরের দিকে। হায়া তখন একহাত দিয়ে আশিয়ানের কাঁধ চেপে ধরে একধ্যানে তাকিয়ে আছে তার বরের দিকে। তার চোখেও ঘোর লেগে আছে। আশিয়ান রুমে এসে অতি সাবধানে হায়া’কে বেডে শুইয়ে দেয়।
হায়া নিভু নিভু চোখে আশিয়ানের কর্মকান্ড প্রত্যক্ষ করতে থাকে। আশিয়ান হায়া’কে বেডে শুইয়ে দিয়ে বেলকনির থাই লাগিয়ে দিয়ে পর্দা টেনে দিতে দিতে নিজের চোখের চশমা খুলে হাতে নেয়। তারপর ঘরের বেশি পাওয়ারের এলইডি লাইট অফ করে একটা হালকা আলোর ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে বেডে উঠে আসে। হায়া’র উপর আধশোয়া হয়ে তার চোখে চোখ রাখে। বরকে মানে না,, বিয়েটাকে মানে কিন্তু তাও কেন জানি হায়া আশিয়ানের বাঁধা দিতে পারছে না। কিশোর কালে প্রথম ভালোলাগা এই কারণে বুঝি?
হায়া’র কপালে দ্বিতীয় বারের মতো ঠোঁট ছুইয়ে দেয়। পরপর তার চোখে,, চিবুকে,, থুতনিতে মুখ ডুবিয়ে আদর দেয়।হায়া’র পুরো মুখশ্রীতে ঠোঁট বুলানো হয়ে গেলে তার নজরে আসে তিরতির করে কাঁপতে থাকা হায়া’র ওষ্ঠ জোড়ায়।বিয়ের সময় দেওয়া লিপস্টিক ঘষেঘষে উঠানোর জন্য গোলাপের পাপড়ির ন্যায় ওষ্ঠজোড়া আরো লাল হয়ে ফুলে আছে। মনে হচ্ছে সামান্য পরিমাণ টোকা দিলেও রক্ত বের হবে সেখান থেকে।
আশিয়ান হায়া’র ওষ্ঠের কাছে নিজের ওষ্ঠ এগিয়ে নিয়ে যায় কিন্তু ছুইয়ে দেয় না। নিজের ঘন হয়ে আসা শ্বাস ফুস করে ছেড়ে দেয়। এতে যেন হায়া আরো প্রবলভাবে কেঁপে উঠে।
আশিয়ান হায়া’র ওষ্ঠ থেকে চোখ সরিয়ে তার চোখের দিকে তাকালে দেখতে পায় হায়া চোখ বন্ধ করে রেখেছে। কি মনে করে আশিয়ান হায়া’র ওষ্ঠে নিজের ওষ্ঠের পরশ দেয় না। সে হায়া’র দু’হাতের আঙ্গুলের ভাজে নিজের আঙ্গুল ডুবিয়ে দিয়ে তাকে বেডের সাথে চেপে ধরে। তারপর নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে এসে হায়া’র গলার ভাঁজে লুকিয়ে নেয়।
আবারও ছোট্ট ছোট্ট আদরে ভরিয়ে দিতে থাকে তার আদুরে পুতুলটাকে। হায়া’র পুরো মস্তিষ্ক আপাতত খালি হয়ে আছে। না চাইতেও সে তার মনের কথাকে প্রাধান্য দিয়ে আশিয়ানকে আপন করে নিতে চাইছে। চোখ বন্ধ করে সে অনুভব করতে ব্যস্ত হয়ে পরে তার স্বামীর দেওয়া গভীর ভালোবাসাগুলো।
কয়েক মুহূর্তের জন্য ভুলে গিয়েছে একটু আগে নিজেকে শাসানো সেই কথাগুলো। কিন্তু সে ভুলে গেলেও তার তিক্ত অতীত মনে করিয়ে দেয় তাকে কিছু কথা। হায়া’র বন্ধ চোখের পাতায় ভেসে উঠে তার জীবনের সবচেয়ে নিকৃষ্ট দিনগুলোর একটি দিনের প্রতিচ্ছবি।
________________
ক্যান্ডেলের মৃদু আলোয় আচ্ছন্ন থাকা রুমটায় এক রমণী বসে আছে। হাতে তার বর্তমান যুগের সবচেয়ে দামী ফোন গুলোর মধ্যে একটি। ফোনের স্ক্রিনে ভেসে আছে এক সুদর্শন যুবকের ছবি।
রমণীটি যুবকটির ছবিতে একবার নিজের ঠোঁটে ছুঁইয়ে অদ্ভুত ভাবে হাসতে হাসতে বলে–
—আপনাকে আমার হতে হবে। আপনার লাইফে কে আসলো, কে গেলো সেটা নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই কিন্তু আপনার শেষ ঠিকানা হবো আমি। শুধু মাত্র আমি। তার জন্য আমাকে যদি নিজের হাত রক্তিম লাল পদার্থ দিয়ে রাঙাতেও হয় আমি পিছ পা হবো না।
কথাটা বলে রমণীটি ঘরে কাঁপিয়ে হাসতে থাকে। তার এই নিষ্ঠুর বক্তব্য আর উন্মাদের মতো হাসি বলে দিচ্ছে খুব শীঘ্রই এক বিশাল ঝড় আসতে চলেছে। যেই ঝড় নিঃশ্ব করে সক্ষম কয়েকটি জীবনকে।
~চলবে?
[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং মাই লাভিং রিডার্স 🤍🖤]