#সাঝের_প্রণয়ডোর
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_১০
জাহানের গাড়ি এসে থামে মেহরিমার হোস্টেলের সামনে। মেহরিমা আঁড়চোখে একবার জাহানকে দেখে নিয়ে সিটবেল্ট খুলতে থাকে। তারপর আস্তে করে বলে–
—আসছি।
কথাটা বলে তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসতে চায় গাড়ি থেকে। কিন্তু বিধি বাম। গাড়ির ডোর লক করা। মেহরিমা ডোর না খুলতে পেরে জাহানের দিকে ফিরে ক্ষীণ স্বরে বলে–
—ডোর আনলক করে দিন। আমি বের হবো।
জাহান সামনে তাকিয়ে নিঃশব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেলল, চোখেমুখে কঠিন এক অভিব্যক্তি খেলা করছে। গলার স্বর গভীর করে বলে—
—আজ না গেলে হয় না?
মেহরিমার হৃদয় যেন এক লহমায় ছন্দপতন করল। বুকের ভেতর দমচাপা শূন্যতা, হাত-পা কেঁপে উঠল অজান্তেই। পেটের মধ্যে এক অজানা আশঙ্কায় মোচড় দিল, মনে হলো, শরীরের প্রতিটি কোষ থরথর করে কাঁপছে। নিজেকে স্থির রাখা যেন অসম্ভব হয়ে উঠল তার জন্য।
জাহান এবার সোজাসুজি মেহরিমার দিকে তাকায়। চোখে চোখ রেখে দৃঢ় অথচ কোমল গলায় বলে–
—মেহু, তোমাকে দূরে যেতে দেওয়াটা যেন নিজেরই একটা অংশ ছিঁড়ে ফেলার মতো লাগছে। মন কিছুতেই মানতে চাইছে না, তুমি দূরে গেলে আমার সমস্ত পৃথিবীটাই ফাঁকা ফাঁকা লাগে। কবে তুমি পার্মানেন্টলি আমার কাছে থাকবে মেহরিমা?
লাস্টের কথাটা ভীষণ আবেগীয় গলায় বলে জাহান। মেয়েটাকে সে প্রয়োজনের চেয়ে একটু বেশিই ভালোবেসে ফেলেছে। তাই তো আজ তাকে এমন আহত দেখে জাহানের বুকটা বড্ড জ্বলছে। এই জ্বলন কমাতে পারবে এই আদুরে মেয়েটার একটুখানি ভালোবাসাময় স্পর্শ। কিন্তু তা যে এখন সম্ভব না সেটা জাহান ভালো করেই জানে।
এদিকে জাহানের এত আবেগপূর্ণ কথায় মেহরিমার চোখে পানি এসে পরে। আজ পর্যন্ত কেউ তাকে এত গুরুত্ব দেয় নি। জাহান তাকে সবসময় এতটা স্পেশাল ফিল করায়। নিজের চোখের পানি জাহানকে দেখাতে চায় না বলে মেহরিমা সহসা নিজের মাথা নিচু করে নিলো।
কিছুক্ষণ সময় নিয়ে মেহরিমাকে নিজেকে স্বাভাবিক করে। তারপর ধীর স্থির কণ্ঠে বলে–
—রাত বাড়ছে। এখন না গেলে পরবর্তীতে আসমা ঘুমিয়ে গেলে হোস্টেলের দরজা খুলে দেওয়ার লোক পাবো না। আজ যাই?
জাহানের বুক চিঁড়ে আরো একবার দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। সে ঔষধের প্যাকেটটা মেহরিমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে–
—ঔষধ গুলো ঠিক করে নিবে সবগুলো। রাতে জ্বর আসতে পারে তাই নরমাল প্যারাসিটামল নিয়ে নিবে একটা। (একটু থেমে তারপর বলে) বেশি খারাপ লাগলে আমায় অবশ্যই কল দিবে। এটা ভেবে বসে থাকবে না আমি ঘুমিয়ে পরেছি। আজ সারারাত ঘুম ধরা দিবে না আমার চোখের পাতায়। যাও এখন।
কথাটা বলে জাহান প্যাকেটটা মেহরিমার কোলের উপর রেখে অন্যদিকে ফিরে গাড়ির ডোর আনলক করে দেয়। মেহরিমা তড়িঘড়ি করে বের হতে নিবে তখনই জাহান পুনরায় তাঁকে ডেকে উঠে–
—মেহরিমা?
মেহরিমা তার দিকে ফিরে জবাব দেয়–
—জ্বি।
জাহান তার মাথাটা সিটে এলিয়ে দিয়ে মেহরিমার দিকে তাকিয়ে থাকে। মেহরিমাও একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। জাহানের চোখজোড়ায় মেহরিমা নিজের জন্য সীমাহীন ভালোবাসা দেখতে পায়।
জাহান নিস্তব্ধতা ভেদ করে বলে–
—তোমার কপালে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতে মন চাচ্ছে ভীষণ করে। কিন্তু আমি এটা করবো না। আমি তোমাকে আমার প্রথম স্পর্শ হালাল করে দিতে চাই। যাও এখন। আমি ডাকলেও আর পেছন ফিরে তাকাবে না।
মেহরিমার চোখে পুনরায় পানি এসে পরেছে। সে মাথা নিচু করে সম্মতি জানিয়ে ডোর খুলে বের হয়ে আসে। কয়েক কদম হাঁটার পর মেহরিমা শুনতে পায়, জাহান বলছে–
—তোমার অনুপস্থিতি আমার জন্য সবচেয়ে নির্মম শাস্তি, যেখানে প্রতিটি মুহূর্ত তোমাকে ছুঁতে না পারার যন্ত্রণায় কাটছে। তাড়াতাড়ি আমার হয়ে যাও, এই দূরত্বের কারাগার থেকে আমায় মুক্ত করো! কারণ তোমাকে আমি প্রয়োজনের চেয়েও বেশি ভালোবেসে ফেলেছি।
মেহরিমা আর এক মুহূর্ত দেরি না করে তার হোস্টেলের বিল্ডিংটার দিকে ছুট লাগায়। সে আর শুনতে পারছে না জাহানের এসব কথা। আর কিছুক্ষণ থাকলে হয়ত সে নিজেই জাহানের বুকে ঝাঁপিয়ে পরে কাঁদতে থাকবে।
জাহান গাড়িতে বসেই মেহরিমার যাওয়া দেখতে থাকে। মনটা তার কয়েকদিন ধরে কেমন নেগেটিভ ফিলিংস দিচ্ছে। মনে হচ্ছে হারাতে চলেছে তার প্রিয় কাউকে।
__________________
–ও আমার বাবু আব্বু,, আমার ইনা, মিনা,,টিনা’র বাপ শুনেন না। কলটা ধরেন না।
—এই জায়িন ভাই,, আমি তো আপনাকে হার্ট করার উদ্দেশ্য বলি নাই। আপনি আমার কথা না বুঝে রাগ করে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন। আমার কষ্ট হয় না বুঝি আপনার সাথে কথা বলতে পেরে?
—এই জায়িন ভাইয়ের বাচ্চা বহুত তেল মারছি। তুই যদি এক্ষনি ফোন না রিসিভ করিস, তাহলে কালই আমি আম্মুর ভাইয়ের ছেলের সাথে এনগেজমেন্ট করে ফেলবো আমি লাস্ট বার কল দিচ্ছি।
গত এক সপ্তাহ ধরে জায়িন আদিবাকে ইগনোর করে আসছে। কথা বলছে না ঠিক করে। এর মধ্যে আজ তিনদিন হলো ফোনটাও রিসিভ করছে না। আদিবা এতক্ষণ জায়িনকে মিষ্টি মিষ্টি করে টেক্সট করলেও শেষে আর মেজাজ ধরে রাখতে না পেরে লাস্টের টেক্সট টা করে।
জায়িন এতক্ষণ আদিবার মেসেজ গুলো দেখে মিটমিটিয়ে হাসলেও এখন আর চুপ করে থাকতে পারে না। চুপ করে থাকা মানে তার ভবিষ্যৎ বাচ্চার মাকে অন্যের বাচ্চার মা বানিয়ে দেওয়া হবে। আদিবা নিজে ফোন করবে কি জায়িন তার লাস্ট মেসেজটা দেখে নিজেই তড়িঘড়ি করে কল করে।
আদিবা কলটা রিসিভ করতেই জায়িন ১০ কেজি ওজনের একটা ধমক দিয়ে বলে–
—এই আদিবাসী! তোর সাহস কত্ত বড় তুই আমার বাচ্চার মা হিসেবে কমিটেড হয়েও আরেক বেডার বাচ্চার মা হওয়ার হুমকি দেস? অসভ্য, ফাজিল মেয়ে। আমি কালই কাজী নিয়ে আসছি তোরে তুলে আনতে। আ…..
—জায়িন।
আদিবার মিষ্টি কণ্ঠে নিজের নাম শুনে জায়িন কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায়। জায়িন অনুভব করে তার হার্টবিট অনেক বেশি ফাস্ট দৌড়াচ্ছে। কপালের পাশ দিয়ে সরু ঘাম বেয়ে পরছে। এমনটা হচ্ছে কেন? কেমন অস্থির অস্থির লাগছে তার। নিজের অস্থিরতা কমাতে জায়িন দ্রুত পায়ে হেঁটে বেলকনিতে চলে আসে। শীতল বাতাসে নিজের উত্তপ্ত দেহ মন শান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা করে।
আদিবা মৃদু গলায় আবার বলে–
—জায়িন শুনছেন?
—হু।
–এমন করছেন কেন আপনি আমার সাথে? আমি কি সেদিন আপনাকে হার্ট করতে ঐ প্রশ্নটা করেছিলাম? আপনি আমায় বুঝেন না কেন? আমি জাস্ট এমনিই প্রশ্নটা জিজ্ঞেস করেছিলাম, আর আপনি বরাবরের মতো উল্টা পাল্টা একটা বুঝে আমায় কষ্ট দিচ্ছেন। আমার এখন লাগছে আপনি আমায় ভালোই বাসেন না। আপনার এককালের আবেগ আমি। আবেগের দুনিয়া থেকে বের হয়ে বাস্তবতা চিনতে শিখেছেন বলে আমায় এখন আর ভালো লাগছে না আপনার। আপনি যদি আমায় ভালোই বাসতেন তাহলে এতদিন আমার সাথে কথা না বলে আমায় কষ্ট দিতে পারতেন না।
কথাগুলো বলতে বলতে আদিবা কেঁদে দেয়। তার কান্নায় শব্দ না হলেও তার নাক টানার আওয়াজে জায়িন বুঝতে পারে আদিবা কাঁদছে।
আদিবার তার ভালোবাসাকে আবেগ বলায় জায়িন রাগ করলেও আদিবার কান্নায় রাগটা গিলে নেয়। পরে এর সোধ তুলবে। এখন যদি রাগ দেখায় তাহলে সবকিছু আরো ঘেটে যাবে। এমনিতেই সে একটু বেশিই রিয়েক্ট দেখিয়ে ফেলেছে সেদিনের ঘটনাটা নিয়ে।
জায়িন বেলকনিতে রাখা কাউচে বসে গা এলিয়ে দেয়। সেখানে রাখা টি-টেবিলের উপর আদিবার বাচ্চাকালের একটা ছবির ফ্রেম তুলে নিয়ে সেটার দিকে তাকিয়ে বলে–
—আমি কি করলে তুই বুঝবি, তুই আমার আবেগ না বরং আমার সখের নারী?
আদিবা টিস্যু বক্স থেকে একটা টিস্যু উঠিয়ে নিয়ে সেটা দিয়ে নাক মুছে বলে–
—আমায় এতদিন কষ্ট দেওয়ার জন্য সরি বলেন।
—সরি।
—এখন সারা রাত ধরে কথা বলবেন। আমি যদি কথা বলতে বলতে ঘুমিয়েও পড়ি তাও আপনি কথা বলে যাবেন।
আদিবার এই কথাটা শুনে জায়িনের কপালে ভাজ পড়ে। আদিবা ঘুমিয়ে গেলে সে কথা বলবে কার সাথে? প্রশ্নটা সে আদিবাকেই করে ফেলে–
—তুই ঘুমিয়ে গেলে আমি কার সাথে কথা বলবো? তোর ভুতের সাথে?
—দরকার পরলে তাই করবেন। এতদিন আপনার জন্য যে আমি রাত জেগে আমার অশ্রু ঝরিয়েছি। আর আপনি একদিন না ঘুমিয়ে থাকতে পারবেন না?
–ঘুমাসনি কেন? আমি কি ধরে রেখেছিল নাকি নিষেধ করেছিলাম ঘুমাতে? হ্যাঁ যদি তুই আমার কাছে থাকতি তাহলে এক কথা ছিলো। তখন না আমি ঘুমাতাম আর না তোকে ঘুমাতে দিতাম। কিন্তু আমার কাছে না থেকেও তোর ঘুম হয়নি বলে তুই আমাকে দোষারোপ করতে পারিস না।
জায়িনের এমন লজিক বিহীন কথা শুনে আদিবার এবারও মাথা ঘুরে যায়। আদিবাকে চুপ থাকতে দেখে জায়িনের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে। বরাবরের মতো এবারও সে আদিবাকে ঘোল খাওয়াতে পেরে নিজের প্রতি নিজেই খুশি হয়।
জায়িন গলা খাঁকারি দিয়ে বলে–
—শুন, তুই বললেই তোর প্রতি আমার ভালোবাসা আবেগ নামে কনভার্ট হয়ে যাবে না। আল্লাহ চাইলে এই দুনিয়ায় ও পরকালে তোকে জায়িন তালুকদার হায়াতেরই হতে হবে। ভাইয়ের বিয়েটা হলে আমি একমাসও অপেক্ষা করবো না তোকে আমার রাণী করে নিয়ে আসবো। তারপর আমি প্রমাণ করবো আমার অনুভূতি গুলোর নাম আবেগ নাকি ভালোবাসা। ট্রাস্ট মি জান,, বিয়ের দশমাসের মাথায় তোর কোলে আমার বাচ্চা না রাখতে পারলে আমি নিজের নাম পাল্টে ফেলবো। এখন ফোন রাখ বেদ্দপ মহিলা। ঘুম পাচ্ছে আমার আর তুইও ঘুমা। কাল আসছি দেখা করতে ভার্সিটিতে আর তোকে চটকনা মারতে।
কথাটা বলে জায়িন খট করে ফোনটা কেটে দেয়। আদিবা উল্লুকের মতো হা করে ফোনটা কানে ধরে বসে আছে তখনও।
___________________
নিস্তব্ধ রাতের নিস্তেজ আলিঙ্গনে ঢাকা পড়ে গেছে গোটা শহর। নিদ্রার মায়াজালে জড়িয়ে আছে ধূলিমলিন পথঘাট, অলস বাতাস, আর ক্লান্ত আলোকবিন্দুগুলো, যা এখন নিভে আসতে চায়। মানুষের কোলাহল থেমেছে বহু আগেই—শহরের বুক জুড়ে কেবল নিঃশব্দতার গভীর সুর বাজছে।
রাত এখন তার শেষ প্রহরে। দূর আকাশের গহীনে মিলিয়ে গেছে চাঁদের আবেশ, তারাগুলোও যেন একে একে চোখের পাতা ভারী করে ফেলছে। সময়ের পাখা কাঁপিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে নতুন দিনের আভাস। আর মাত্র তিন প্রহরের অপেক্ষা—তারপর পূর্ব দিগন্তে ছড়িয়ে পড়বে সূর্যের সোনালি পরশ, আর ঘুমভাঙা পৃথিবী আবারও নেমে পড়বে তার চিরচেনা ছন্দে।
নিদ্রার স্নিগ্ধ শাসনে সবকিছু স্তব্ধ—শুধু ব্যতিক্রম কয়েকটি আত্মা, যারা সময়ের নিয়ম উপেক্ষা করে অন্য এক যাত্রায় নিমগ্ন। তাদেরই একজন আশিয়ান। রাতের গাঢ় অন্ধকার যখন স্বপ্নের দেশে সবাইকে নিয়ে গেছে, তখন সে জেগে আছে, নিদ্রাহীন এক প্রহরীর মতো, পাহারা দিচ্ছে তার হৃদয়ের রাজপ্রাসাদে শায়িত এক রাণীকে—হায়াকে।
হায়া বিছানায় শুয়ে আছে জ্বরে নিস্তেজ হয়ে। মুখটা ফ্যাকাশে, ঠোঁটের রং ম্লান, কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। আশিয়ান হাত বাড়িয়ে হায়ার ললাটে রাখে, হায়া’র শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক দেখে তার এতক্ষণ ধরে আটকে রাখা শ্বাসটা ছেড়ে দেয়।
আশিয়ান হায়া’কে খাবার খাইয়ে দিয়ে তার মেডিসিনগুলো দিয়ে ঘুমাতে বলে নিজে ফ্রেশ হতে চলে যায়। আশিয়ান ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে হায়া ঘুমিয়ে পরেছে। সে নিজেও কিছু খেয়ো নিয়ে সোফায় বসে স্টুডেন্টদের ক্লাস টেস্টের খাতা কাটতে থাকে। দুই ঘন্টা কাজ করার পর আশিয়ান অনুভব করে তার শরীর আর চলতে চাইছে না,, একটু রেস্ট চাচ্ছে। তখন সে খাতা গুলো গুছিয়ে রেখে বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে।
অভ্যাস অনুযায়ী সে শুয়ে পড়ে হায়া’র উপর একহাত রেখে তাঁকে জড়িয়ে ধরলে হায়া’র গায়ের অস্বাভাবিক তাপমাত্রা টের পায়। জ্বরের ঔষধ খাওয়ানোর পরও জ্বর এসে পরেছে। আশিয়ান কি তার অসুস্থ বউকে বিনা সেবায় ফেলো রেখে ঘুমাতে পারে? একদমই না। পুনরায় শোয়া থেকে উঠে মগে পানি নিয়ে এসে হায়া’র মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে।
একঘন্টা জলপট্টি দেওয়ার পর হায়া’র জ্বর ছেড়ে দেয় শরীর ঘাম দিয়ে। আশিয়ান ভেজা তোয়ালে দিয়ে হায়া’র হাত-পা মুছিয়ে দিয়ে তার পাশে এসে শুয়ে পড়ে। কপালে হাত রেখে ঘুমানোর চেষ্টারত আশিয়ানের পিলে তখন চমকে যায় যখন একটা নরম তুলতুলে উষ্ণ হাত তার বুক স্পর্শ করে।
আশিয়ান ঠাশ করে চোখ খুলে দেখে হায়া ঘুমের ঘোরে তার বুক হাতাচ্ছে। একটু পর হায়া নিজেই আস্তে ধীরে আশিয়ানের বুকে এসে নিজের মাথা রেখে একহাত দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে। নিমিষেই আশিয়ানের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে স্নিগ্ধ হাসি ফুটে। আশিয়ানও দুইহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্রাণপ্রিয় স্ত্রীকে। তারপর হায়া’র চুলের ভাজে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয়।
আশিয়ান হায়া’র কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলে–
—আমার অবাধ্য পুতুলবউ, তোমার অসভ্য বর তোমায় ভীষণ ভালোবাসে। সে তার অতীতের কৃতকর্মের জন্য মন থেকে অনুতপ্ত। সে তোমায় এত তাড়াতাড়ি ক্ষমা করে দিতে বলছে না, কিন্তু তোমাকে ভালোবাসার অধিকার চাইছে। আমি জানি, আমার ভুলগুলো তোমার মনে অভিমানের কালো মেঘ তৈরি করেছে, কিন্তু আমি সে মেঘ সরিয়ে সেখানে ভালোবাসার উজ্জ্বল আলো ছড়িয়ে দেবো। এবং এটা খুব শীঘ্রই হতে চলেছে জান।
–চলবে?
ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং মাই লাভিং রিডার্স 🤍]