সাঝের প্রণয়ডোর পর্ব-১৩+১৪

0
1

#সাঝের_প্রণয়ডোর
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_১৩

আশিয়ান ও হায়া’র সামনে অস্থির চিত্তে দাঁড়িয়ে আছে ফারাবি। সে বারবার হায়া’র কাছে আসতে চাইছে কিন্তু হায়া’র চোখে এক অজানা আতঙ্ক ও ভীতি দেখে তাকে পিছু হটতে হচ্ছে।

আশিয়ান শান্ত দৃষ্টিতে সবটা ঘটনা প্রত্যক্ষ করে। তারপর উপস্থিত স্টুডেন্টের উদ্দেশ্য হুংকার দিয়ে বলে–

— বাহির থেকে আসা আগত একজন অভদ্রলোক একটা ফিমেল স্টুডেন্টকে তারই ক্যাম্পাসে জোরজবরদস্তি করার চেষ্টা করে আর বাকি স্টুডেন্টরা বিষয়টাকে এন্টারটেইনমেন্ট হিসেবে নেয়। বাহ! এই হলো তোমাদের একতা,, বন্ধুত্ব? এই হলো জেন-জি’দের পাওয়ার। শেম অন ইউ গাইজ।

আশিয়ানের কথা শুনে এতক্ষণ মজা নিতে থাকা স্টুডেন্টরা মাথা নিচু করে নেয় লজ্জায়। হুট করে আশিয়ানের নজরে আসে ভীড়ের মাঝে কয়েকজন ভিডিও করছে। আশিয়ান তাদের উদ্দেশ্য করে বলে–

—তোমরা যে ভিডিও ধারণ করছো এটার আসল উদ্দেশ্য কি আমায় একটু বলো তো?

ভিডিও ধারণ করা স্টুডেন্টরা থতমত খেয়ে যায়। তারপর তড়িঘড়ি করে ফোনটা নিচে নামিয়ে ফেলে কিন্তু আশিয়ানের প্রশ্নের তোপ থেকে বাঁচতে পারে না। আশিয়ান পুনরায় বলে–

—আজ তোমরা যদি বিষয়টাকে নিছক এন্টারটেইমেন্ট হিসেবে না নিয়ে একজন নারীর সম্মান হিসেবে ভাবতে তাহলে আমায় এখানে এসে ওকে সেভ করতে হতো না। আরেকটা কথা, এই ঘটনার একটা ফুটেজও যদি সোশাল মিডিয়ায় যায় আমি কিন্তু তার অবস্থা খারাপ করে ছাড়বো। ভিডিওগুলো জানি সসম্মানে ডিলেট হয়ে যায় যারা ধারণ করেছে তাদের ফোন থেকে। আমার মনে হচ্ছে, তোমাদের এখানে কোন কাজ নেই। যাও নিজেদের কাজে যাও।

লাস্টের কথাটা বেশ ধমকের সুরেই বলে আশিয়ান। সবাই সুরসুর করে চলে যায় নিজেদের কাজে। সকলে চলে যেতে আশিয়ান এবার দৃষ্টি দেয় ফারাবি আর হায়া’র উপর। হায়া ফারাবি’র থেকে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য কয়েকবার চেষ্টা করে, কিন্তু একজন সুঠাম দেহের যুবকের সাথে তার মতো মেয়ে কি পারে? তারউপর হায়া অসুস্থ।

আশিয়ান হায়া’র গালে হাত দিয়ে বলে–

—ঠিক আছো তুমি?

হায়া’র পায়ে ব্যথা করছে। অজানা কারণে তার প্রচন্ড ভয় লাগছে। সে একহাত দিয়ে আশিয়ানের একটা বাহু চেপে ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে–

—হুম ঠিক আছি।

তাদের দু’জনের কথার মাঝে বা’হাত ঢুকিয়ে ফারাবি বলে–

—হায়া, আই এম সরি। আমি এমনটা করতে চাই নি, আই এম রিয়েলি ভেরি সরি। আমি একটা কারণে সেদিন আসতে পারি নি। কিন্তু আজ এসেছি না, চলো আজ এক্ষুনি আমরা বিয়ে করবো। চলো।

কথাটা বলতে বলতে ফারাবি অস্থির হয়ে পুনরায় হায়া’র হাত ধরতে আসে তখনই হায়া’র সামনে ঢাল হয়ে টসে দাড়ায় আশিয়ান। সে ফারাবির বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে–

—স্টে আওয়ে ফ্রম মাই ওয়াইফ।

ফারাবি আশিয়ানের ধাক্কা খেয়ে যতটা না আহত হয়েছে তার চেয়েও বেশি আহত হয়েছে আশিয়ানের কথা শুনে। সে কথাটা শুনে এতটাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে যে কোন রিয়েক্ট করতেই ভুলে গিয়েছে। এরই মধ্যে মেহরিমা খাবার নিয়ে এসে পরেছে। ক্যান্টিনে অন্যান্য স্টুডেন্টদের থেকে হায়া’র ব্যাপারে গুসুরগুসুর শুনে সে দৌড়ে এসেছে।

মেহরিমা তাদের সামনে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে–

—তুই ঠিক আছিস হায়া?

হায়া আশিয়ানকে ছেড়ে মেহরিমাকে জড়িয়ে ধরে। মেহরিমাও আগলে নেয় প্রিয় বান্ধবীকে। আশিয়ান শান্ত দৃষ্টিতে সবটা দেখে। তারপর মেহরিমা’কে উদ্দেশ্য করে বলে–

—আমার গাড়িতে করে তোমরা দু’জন চলে যাও। আমি ড্রাইভারকে কল করে আসতে বলছি।

মেহরিমা সম্মতি সূচক মাথা নাড়ায়। এরই মধ্যে ফারাবি যেন হুঁশে ফিরে। সে ঝট করে হায়া’কে মেহরিমার থেকে টান দিয়ে সরিয়ে তার দুই বাহু চেপে ধরে ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলে–

—এই হায়া, উনি কি বলছে? তুমি তার ওয়াইফ মানে? আমি বলছি তো একটা কারণে আমি বিয়ের দিন আসতে পারি নি। কারণটাও আমি বলবো কিন্তু তুমি তাঁকে কিভাবে বিয়ে করতে পারলে? আমি তোমাকে আর তুমি আমাকে ভালোবাসতে না? তাহলে কিভাবে করলে এমন একটা কাজ? উত্তর দাও আমায় হায়া,, আমার উত্তর চাই।

হায়া’র বাহু ধরে ফারাবি কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলে। লোকে বলে পুরুষদের চোখের কান্না অষ্টম আশ্চর্যদের একটি। তারা অসম্ভব রকমের কষ্ট না পেলে নাকি কাঁদে না। তাহলে এখন যে ফারাবি কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বললো তাতে কি বলা যায় সে হায়া’র বিয়ের কথা শুনে অসম্ভব রকমের কষ্ট পেয়েছে? এমন কান্না তো সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষটিকে হারালেই কাঁদা যায়।হায়াও ফারাবি সাথে কাঁদছে।

এদিকে এমন ঘটনা দেখে আশিয়ানের পায়ের রক্ত মাথায় উঠে যায়। সে ছোট থেকেই হিংসুটে। তার আদর, ভালোবাসায় ভাগ বসানোয় সে একটা লম্বা সময় হায়া’কে দেখতে পারতো না। তাছাড়া তার পছন্দের বা প্রিয় জিনিসে কেউ হাত দিলে সে ঐটা আর ছুঁয়েই দেখতো না, নেহাৎ বউটাকে না ছুঁয়ে থাকতে পারে না বেশি ভালোবাসে কিনা। কিন্তু তার সেই ভালোবাসার বউকে বারবার একজন পুরুষ স্পর্শ করায় আশিয়ানের রাগ না উঠে পারে?

আশিয়ান হায়া’র বাহু ধরে টেনে তাঁকে নিজের বুকে চেপে ধরে একহাত দিয়ে। আরেক হাত দিয়ে ফারাবি’র কলার খামচে ধরে রাগে হিসহিসিয়ে বলে–

—সাহস কি করে হয় আমার বউয়ের গায়ে হাত দেওয়ার বারবার? নেহাৎই জায়গাটা আমার প্রফেশনাল, বাচ্চাদের পড়াই। নাহলে এই সুন্দর মুখটা বিগড়ে দিতে আমার দুই মিনিটও লাগতো না।

ফারাবিও রেগে বলে–

—আমার ফিয়োন্সে ছিলো হায়া, আমার অধিকার… ।

—ছিলো তোর। আমার আছে আর থাকবে ইনশা আল্লাহ কারণ আমার বউ হয় হায়া। কয়েকদিন পর আমার বাচ্চার মা-ও হবে। বুঝে দেখ কার অধিকার বেশি। আর কখনো যাতে আমার বউয়ের আশেপাশে না দেখি, যদি দেখি সেদিনটা তোর শেষ দিন হবে। চাল হাট!

কথা শেষ করে আশিয়ান ধাক্কা দিয়ে ফারাবি’কে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। ফারাবি বেশ কয়েক পা পিছিয়ে যায়। আশিয়ান আশেপাশে চোখ বুলিয়ে দেখে তেমন স্টুডেন্ট নেই। ক্লাস টাইম হওয়ায় সকলে ক্লাসে চলে গিয়েছে। আশিয়ান হায়া’কে নিজের বুক থেকে সরিয়ে হায়া’কে একপাশ দিয়ে ধরে নিয়ে যায় পার্কিংলটের দিকে। মেহরিমাও তাদের পেছন পেছন যায়। ফারাবি শূণ্য দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে তাদের যাওয়ার দিকে।

___________________

আশিয়ানের গাড়ি এসে পরে দশ মিনিটের মধ্যে। হায়া চুপ হয়ে রয়েছে সেই তখন থেকে। মেহরিমা কয়েকবার তার সাথে কথা বললেও সে একটা বাক্যও ব্যবহার করে না। হাতে থাকা খাবারও মুখের সামনে ধরে কিন্তু হায়া সেটাও মুখে নেয় না। আশিয়ান হায়া’র স্তব্ধতা দেখে তাঁকে একা ছাড়ার সাহস পায় না।

গাড়ি আসলে সে-ও হায়া আর মেহরিমা’র সাথে উঠে পড়ে মেহরিম’কে তার হোস্টেলে নামিয়ে দিয়ে তারা নিজেদের বাসায় এসে পড়ে। গাড়িতে বসেই আশিয়ান একঘন্টার জন্য ছুটি নেয়। তার নেক্সট ক্লাসটা তার আরেকজন কলিগকে প্রক্সি নেওয়ার অনুরোধ করলে সে জানায় সে নিয়ে নেবে ক্লাসটা।

বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামলে আশিয়ান গাড়ি থেকে নেমে হায়া’কে নামিয়ে তাঁকে কোলে তুলে নেয়। তারপর সেই অবস্থাতেই তাকে নিয়ে হাঁটা দেয় বাড়ির ভেতরে। বাড়িতে তখন স্পর্শ,, হানিয়া, রোজি বেগম আর মি.তালুকদার ছিলেন। এই অসময়ে আশিয়ান এভাবে হায়া’কে কোলে করে নিয়ে আসায় সবাই ভাবে সে আবার অসুস্থ হয়ে পরেছে। আশিয়ান তাদের মিথ্যে বুঝ দিয়ে হায়া’কে নিয়ে উপরে নিজেদের রুমে এসে পড়ে।

রুমে এসে আশিয়ান নিজেই হায়া’র বোরকা আর হিজাব খুলে দেয়। ওয়াশরুম থেকে কাপড় ভিজিয়ে এনে তার মুখহাত মুছিয়ে দেয়। নিচ থেকে হায়া’র জন্য হালকা খাবার নিয়ে এসে তার মুখের সামনে ধরলে হায়া সেটা মুখে নেয় না। আশিয়ান কয়েকবার আদর করে খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করে। কিন্তু হায়া একটা রা’ও কাটে না।

হঠাৎই হায়া হাইপার হয়ে উঠে। আশিয়ানের হাতে থাকা খাবারের প্লেটটা ফালিয়ে দিয়ে আশিয়ানকেও ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তারপর চিৎকার করে বলে–

—বলেছি না খাবো না? এখন এত দরদ কোথা থেকে আসে? যফন ভরা বিয়ের আসরে ছেড়ে বিয়ে করতে আসেন নি,, আমায় সবাই অলক্ষী, অপয়া, চরিত্রহীন বলে অপবাদ দিচ্ছিল তখন কোথায় ছিলো আপনার এত দরদ? এখন ভালোবাসা উতলে পরছে না? একটা কথা কি জানেন, আপনার আর ফারাবি মধ্যে কোন তফাৎ নেই। আপনারা দু’জনই আমায় বাজে ভাবে অপমান করেছেন। সমাজের চোখে আমায় চরিত্রহীন বানিয়েছেন কিছু না করেও। সেদিন আপনি যেমন ছেড়ে যাওয়ার সময় দরদ দেখান নি, ফারাবিও সেম কাজটা করেছে। এখন আপনি পরিবারের চাপে বিয়ে করে যেমন আলগা দরদ দেখাচ্ছেন, ফারাবিও সেম কাজটাই করছে। আপনারা ছেলেরা পারেন শুধু প্রতিশ্রুতি দিতে, কিন্তু সেটা পূরণ করার সময় আপনাদের আর খোঁজ থাকে না।

রাগে দুঃখে হায়া’র চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যায়। সে যেমন সকলের ভালোবাসা পেয়েছে তেমনি সকলের থেকে অনেক কষ্টও পেয়েছে। আশিয়ান তাকে ধরার জন্য এগিয়ে আসলে হায়া কয়েক পা পিছিয়ে যায়। তারপর আবারও চিৎকার করে বলে–

—এত জড়াজড়ি করেন কেন সবসময়? একটা কথা বলছি না আমি? নাকি কথাটা শোনার প্রয়োজন বােধ করেন না?

আশিয়ান পুনরায় তার কাছে এগিয়ে আসতে আসতে বলে–

—আমি শুনছি তো তোমার সব কথা। তোমার যত অভিযোগ আছে করো সমস্যা নেই। কিন্তু একটু শান্ত হও, শরীর খারাপ তো তোমার। বসে কথা বলো, আমি শুনছি।

—কি বলবো আমি? বলার মতো কিছু রেখেছেন আপনারা? আমার লাইফটাকে মজা বানিয়ে রেখে দিয়েছেন আপনারা।

—আই এম সরি বউ। ফর অল মাই ডিডস। প্লিজ কাম ডাউন জান। আই প্রমিজ টু লিসেন টু অল ইউর কনসার্ন উইথ এন অপেন হার্ট।

—সরি বললেন আর হয়ে গেলো? আপনি আমার সেসব বিভীষিকাময় রাতগুলোর কথা ভুলিয়ে দিতে? পাপা’র পাওয়ারের কারণে কেউ হয়ত আমার সামনে কিছু বলে না কিন্তু পেছনে ঠিকই আমার চরিত্রে কাদা ছুড়তে তারা ভুলে না। পারবেন তাদের সামনে আমায় নির্দোষ প্রমাণ করতে? আমি বলছি, আপনি পারবেন না।

হায়া নিজের চোখের পানি নিজেই মুছে নেয়। তারপর আশিয়ানকে পাশ কাটিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে ওয়াশরুমের চলে যায়। আশিয়ান তার পিছু নিলে বলে সে ফ্রেশ হবে। আশিয়ান ওয়াশরুমের বাহিরেই দাড়িয়ে থাকে।

এদিকে হায়া ওয়াশরুমের ঢুকে দরজা লক করে দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে থাকে। সেভাবেই বসে মনে করতে থাকে পাঁচ বছর আগে সেই নিকৃষ্ট দিনটির কথা, যেদিন আশিয়ান তাঁকে চূড়ান্ত ভাবে কষ্ট দিয়েছিলো। তার নরম কোমল মনটাকে পিষে দিয়ে চলে গিয়েছিলো অজানায়। অপমান করেছিলো তার কিশোর কালের ভালোবাসাকে।

______________

পাঁচ বছর আগে~~

হায়া’কে বিয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে হায়া বলে তার বাবা-মা যেটা ভালো বুঝে সেটাই যেন করে। জাভিয়ান-হানিয়া মেয়েকে নিজেদের কাছে রাখার একটা সুযোগ পেয়ে হাত ছাড়া করতে চায় না। মি.মির্জা মানে হানিয়ার বাবার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।

এদিকে আশিয়ান রাজি হয় না। পরবর্তীতে আবরার অনেক বলেকয়ে ধমকিয়ে ধামকিয়ে তাঁকে রাজি করায়। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বিয়ের কথাটা আপাতত নিজেদের মধ্যেই থাকবে। বিয়েতে শুধুমাত্র আত্নীয়দের আমন্ত্রণ করা হবে। হায়া প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর অনুষ্ঠান করে সকলকে জানানো হবে। সকলে লেগে পরে বিয়ের তোড়জোড়ে।

হায়া যখন জানতে পারে আশিয়ানও বিয়েতে রাজি সে অজানা কারণেই ভীষণ খুশি হয়। কারণ অজানাও বলা চলে না। কারণ হায়া বুঝতে পারছিলো সে কেন এত খুশি। কারণটা হলো, সে আশিয়ানকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলো। এমনিতেই বয়সটা কিশোর কাল। এই বয়সে আবেগে টইটম্বুর থাকে মন। খুব কমই এই বয়সের ছেলে-মেয়েরা নিজেদের আবেগ কন্ট্রোল করতে পারে। কিন্তু হায়া আবেগ কন্ট্রোলে ব্যর্থ হয়েছিলো।

বিয়ের কথা পাকা হওয়ার পর থেকে হায়া প্রায় সময় আশিয়ানকে ফোন দিতো। আশিয়ানের মনে তখন হায়া’র জন্য কোন অনুভূতি ছিলো না, সে তখনও হায়া’কে দেখতে পারতো না। হায়া ফোন দিলেই আশিয়ান ধমকেধামকিয়ে ফোন কেটে দিতো।

তখন তার এই অনুভূতির কথা জানত আদিবা। কয়েকমাসের ছোটবড় তারা। তাই অনেকটা বেস্টফ্রেন্ডের মতোই। আদিবার পীড়াপীড়িতে তাদের বিয়ের আগের দিন হায়া নিজের মনের কথা জানিয়ে দেয় আশিয়ানকে। আশিয়ান জবাবে চুপ ছিলো। ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোন উত্তরই সে দেয়নি সেদিন।

পরের দিন হায়া যখন বধূ বেশে আশিয়ানের জন্য অপেক্ষা করছিলো তখন আশিয়ান কাউকে না জানিয়ে উড়াল দেয় লন্ডন। কাজী এসে নিজের সব কাজ শেষ করে যখন বর-বধূকে একত্রে আনার কথা বলে তখন জাভিয়ানদের টনক নড়ে। কারন আশিয়ান’রা তখনও এসে পৌছায় নি।

জাভিয়ান আবরারদের ফোন লাগালে তারা আশিয়ানের চলে যাওয়ার কথা জানায়। জাভিয়ান ভেবে পায় না কিভাবে মেয়ের সামনে কথাটা উপস্থাপন করবে। হানিয়া, জাহান-জায়িনকে একান্তে নিয়ে গিয়ে কথাটা জানায়। হানিয়া কান্নায় ভেঙে পড়ে। আশিয়ান যে তাদের এমন ভাবে কষ্ট দিবে তারা কখমো কল্পনাও করেনি। আশিয়ানকে তারা সবসময় নিজেদের সন্তানের মতো স্নেহ করেছে।

হানিয়াকে জাহান-জায়িনের কাছে রেখে জাভিয়ানও এগিয়ে যায় তাদের বাগানে করা স্টেজের দিকে, যেখানে হায়া বসে আছে। জাভিয়ান চোখভর্তি পানি নিয়ে হায়া’র কাছে গেলে হায়া অস্থির হয়ে জিজ্ঞেস করে–

—পাপা, কি হয়েছে? কাঁদছো কেনো?

—মা, তুমি তো আমার প্রিন্সেস না?

—হ্যা পাপা। এটা তো আমি জানি।

—প্রিন্সেস কে কি প্রিন্স ছাড়া মানায় বলো?

—না পাপা। কিন্তু তুমি এসব কেন জিজ্ঞেস করছো?

—কারণ আমি আমার প্রিন্সেসের জন্য একটা প্রিন্স খুঁজে এনে দিবো।

—খুজে আনবে কেনো? পেয়ে গিয়েছি তো আমার প্রিন্সকে। আশিয়ান ভাই তে আমার প্রিন্স পাপা।

—না মা সে তোমার প্রিন্স না। হি ইজ এ ডেভিল, এ কাওয়ার্ড।

—কি বলছো বাবা তুমি এসব?

অবাক হয়ে কথাটা জিজ্ঞেস করে হায়া। জাভিয়ান উত্তরে বলে–

—হ্যা মা। সে কাওয়ার্ডের মতো পালিয়ে গিয়েছে।

—পালিয়ে গিয়েছে মানে?

—সে তোমায় বিয়ে করবে না বলে কাউকে না জানিয়ে লন্ডনে চলে গিয়েছে মা।

জাভিয়ানের কথায় হইচই শুরু হয়ে যায়। তাদের আপনজনেরাই হায়া’কে নানা ধরণের বাজে কথা বলতে শুরু করে। হায়া আশিয়ানের এমন কাজ আর আশেপাশের লোকদের বাজে কথা সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে ঢলে পরে। জাভিয়ান মেয়েকে নিজের বুকে আগলে নেয়।

হায়া আশিয়ানের কাজে যতটা না ভেঙে পরেছিলো তার চেয়েও বেশি ভেঙে পরেছিলো তার আশেপাশের মানুষদের কথায়। আত্নীয় স্বজন ছাড়াও কিভাবে কিভাবে যেন কথাটা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে, সবশেষে মিডিয়াও জানতে পেরে যায়। জাভিয়ান একজন নামকরা বিজনেসম্যান হয়ে তার মেয়ের নাবালক অবস্থায় বিয়ে দিচ্ছিলো, তারউপর বিয়ের দিন বর না আসায় সকলেই ভেবে নেয় নিশ্চয়ই হায়া এমন কিছু করেছে যার কারণে এত লুকোচুরি করে বিয়ে দেওয়া। সবার বাকা নজর,, কটুবাক্য, বাজে অপবাদ সবটাই হায়া’কে চুপচাপ মেনে নিতে হয়। একসময় সে হায়া ভয়াবহ ডিপ্রেশনে ভোগা শুরু করে। সেই থেকে চঞ্চল, দুরন্ত, বাচাল হায়া হয়ে যায় চুপচাপ, শান্ত,ইন্ট্রোভার্ট।

শব্দসংখ্যা~১৯৮৫
~চলবে?

#সাঝের_প্রণয়ডোর
#সাদিয়া_সুলতানা_মনি
#পর্ব_১৪

হানিয়া মেয়ের খবর নিতে তার রুমে এসেছিলো। কিন্তু রুমে প্রবেশের পূর্বেই সে সব কথা শুনতে পেয়ে যায়। হানিয়ার মাতৃ মন সন্তানের কান্নায় অস্থির হয়ে পড়ে। আশিয়ানের সাথে বিয়ে হওয়ার পর থেকে হায়া’র পরিবর্তন লক্ষ করেছিলো সে। মেয়েটা আগের মতো স্বাভাবিক, চঞ্চল হয়ে উঠছিলো। হঠাৎই আবার নতুন ঝড় এলো মেয়েটার জীবনে।

হায়া ওয়াশরুমের ঢুকে যাওয়ার পর হানিয়া তাদের রুমের দরজায় নক করে। আশিয়ান চকিত দৃষ্টিতে সেদিকে তাকালে তার মাম্মামকে দেখে খানিকটা ঘাবড়ে যায়। তার ভয় হয়, হায়া’র কান্না শুনে যদি তার মাম্মাম আর বাবাই তাকে ভুল বুঝে পুতুল বউটাকে নিয়ে যায় তার কাছ থেকে?

আশিয়ান নিজের ঘাবড়ে যাওয়াটা লুকিয়ে স্বাভাবিক হয়ে বলে–

—মাম্মাম আসো ভেতরে।

হানিয়া গুটিগুটি পায়ে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে। রুমে প্রবেশের শুরুতেই তার নজরে আসে ফ্লোরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকা খাবারের দিকে। বুক চিঁড়ে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে তার।

আশিয়ান খাবার পড়ে যাওয়ার বিষয়টা ধামাচাপা দিতে বলে–

—আসলে মাম্মাম, আমার হাত থেকে পড়ে গিয়েছে খাবারটা এক্সিডেন্টলি। তুমি বসো, হায়া তো ওয়াশরুমের গিয়েছে আমি আরেক প্লেট খাবার নিয়ে আসছি।

কথাটা বলে আশিয়ান তড়িঘড়ি করে বের হতে নিবে তখনই হানিয়া তাকে থামিয়ে দেয়। সে আশিয়ানের হাত ধরে তাঁকে বেলকনিতে নিয়ে যায়। তারপর বলে–

—আমি বুঝতে পারছি তোমাদের মধ্যে সমস্যা হয়েছে কোন বিষয়ে।

—না মাম্মাম তেমন….

আশিয়ানকে থামিয়ে দিয়ে হানিয়া বলে–

—আমায় আগে শেষ করতে দাও। আমি জানতে চাই না তোমাদের স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যকার ঘটনা। কিন্তু বাবা তোমার কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আমার মেয়েটাকে আর কষ্ট দিও না। একবার ওর হৃদয় ভেঙেছিলো, একেবারে চূর্ণ হয়ে গিয়েছিলো… আমরা জানি, কেমন করে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া মেয়েটাকে আবার জোড়া লাগিয়েছি। আর এই সমাজ কথা তো তুমি জানোই। ওদের কাজই তো মেয়েদের দগ্ধানো, ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দেওয়া।

আমার মেয়েটা ছোটবেলা থেকে প্রাণোচ্ছল ছিল, উচ্ছল বাতাসের মতো দৌড়ে বেড়াতো। এখন? কেউ কিছু বলবে ভেবে হাসতেও ভয় পায়। দুষ্টুমি করতে ভুলে গেছে, কারণ সমাজ তাতেও দোষ খুঁজবে। ওর চোখের তারায় যে আলো ছিল, সেটা নিভে গেছে। আমার মেয়ে বাঁচতে ভুলে গেছে…।

কথাগুলো বলতে বলতে হানিয়ার চোখের কোণ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরে। আশিয়ান ভেতরে অপরাধবোধ’টা আরো প্রখর হয়ে উঠে। ছোট বেলার একটা জেদকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সে একটা হাসিখুশি ফ্যামিলিকে বিষাদের সাগরে ডুবিয়ে চলে গিয়েছিলো নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে। যে মাম্মাম-বাবাই তাকে নিজেদের সন্তানের মতো ভালোবাসতো তাদেরও অপমানিত হতে হয়েছে শুধু মাত্র তার একটি ভুল সিদ্ধান্তের জন্য। এই অপরাধবোধ জাগ্রত হয়েছে তার কয়েক বছর আগেই। সেই থেকে এই পর্যন্ত সে ভেতরে কুঁড়ে কুড়ে মরছে অপরাধবোধে।

আশিয়ান হানিয়া’র চোখের পানি মুছে দেয়। তারপর নিজের হাতের মুখে থাকা হানিয়া’র হাতটায় একটা চুম্বন করে বলে–

—আমি জানি আমার করা ভুলের ক্ষমা হয় না। কিন্তু আমি এটাও জানি আমার মাম্মাম-বাবাই আমাকে তাদের সন্তানের মতো ভালোবাসে। আর সন্তান’রা ভুল করলে বাবা-মায়েরা তো তাদের হালকা বকাঝকা করে ক্ষমা করে দেয়, সেক্ষেত্রে আমায়ও ক্ষমা করে দিও তোমরা। আর হায়া? তাকে তো আমি এ জীবনে আর ছাড়ছি না। আমি তোমায় কথা দিলাম মাম্মাম তাকে যতটা কষ্ট দিয়েছি তার চেয়েও দ্বিগুণ ভালোবাসা দিয়ে তার অতীতের সব কষ্ট ভুলিয়ে দিবো। একদিন সে নিজে তোমাদের বলবে সে আমার সাথে কতটা সুখে আছে। মিলিয়ে নিও আমার কথাটা তুমি।

হানিয়া’র মনে চলতে থাকা ঝড়টা যেন নিমিষেই শান্ত হয়ে যায়। সে আশিয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে তার অগোছালো চুলগুলো গুছিয়ে দিয়ে বলে–

—দোয়া করি বাবা তোমরা সুখী হও। সন্তানরা সুখে থাকলেই বাবা-মায়েদের কোন কষ্ট থাকে না আর। নিজেদের মাঝের ভুল বুঝাবুঝি হলে সেটা সাথে সাথে আলোচনা করে মিটিয়ে নিবে। নাহয় এই ছোট ভুল বুঝাবুঝি একসময় তোমাদের বিচ্ছেদের কারণ হয়ে উঠবে। সম্পর্কে কখনো তৃতীয় ব্যক্তিকে প্রবেশ করতে দিবে না ভুলেও, তাহলে তোমাদের সুন্দর সম্পর্কটায় জাহান্নামের আগুন লেগে যাে। দু’জনই চেষ্টা করবে পার্টনারের মনের অবস্থা বুঝার।

—আচ্ছা মাম্মাম আমি চেষ্টা করবো তোমার পরামর্শগুলো মেনে চলার।

তাদের কথাবার্তার মাঝেই হায়া ফ্রেশ হয়ে বের হয় ওয়াশরুম থেকে। হানিয়া আর আশিয়ান রুমে চলে এসে দেখে হায়া নিচে পরে থাকা খাবারগুলো উঠাচ্ছে। আশিয়ান হায়া’কে নিচ থেকে দাড় করিয়ে বেডে বসিয়ে দেয়। তারপর গম্ভীর গলায় বলে–

—সার্ভেন্ট আছে আমাদের বাড়িতে। তারা করতে পারবে কাজটা। তোমায় আধভাঙা পা নিয়ে কষ্ট করে এসব উঠাতে কেউ বলেনি।

—ফেলেছি আমি তাই আমিই উঠাবো।

আশিয়ান চোখ গরম করে বলে–

—মুখে মুখে কথা বললে আধভাঙা পা’টা পুরো ভেঙে বসিয়ে রাখবো। চুপচাপ বসে থাকবে এখানে, আমি খাবার এনে দিলে মাম্মামের হাতে ভদ্র মেয়ের মতো খেয়ে নিবে। আমার আবার ভার্সিটিতে যেতে হবে।

হায়া’র এমনিতেই ভালো লাগছিলো না তাই আশিয়ানের কথার উপর কোন কথা বলে না। হায়া’কে চুপ করে থাকতে দেখে আশিয়ান বুঝে নেয় তার জবাব কি। সেও রুম থেকে বের হয়ে নিচে এসে আরেক প্লেট খাবার নিয়ে হানিয়াকে দেয়। হায়া হানিয়া’র হাতে চুপচাপ খাচ্ছে দেখে আশিয়ান বের হয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা হয়।

গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে তার মনে পড়ে যায় কিছু অজানা অতীত যেটা কেবল সে এবং আফিফ ব্যতীত আর কেউ জানে না।

________________

অতীত~

মাস্টার্স শেষ করেই পিএইচডি করার জন্য বিদেশের এক নামকরা ভার্সিটিতে আবেদন করেছিলো সকলকে গোপন করে। সে মূলত সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো তার পরিবারকে। কিছুদিন পর তার আবেদন গ্রহণ করে তাকে সেই ভার্সিটি থেকে ডাকা হয়। সে এই কথাটা জানানোর আগেই তার দাদু অর্থাৎ মি.মির্জা তার আর হায়া’র বিয়ের কথা উঠায়। সকলে তাকে জোর করে তার অপছন্দের মেয়েটির সাথে বিয়ে দিতে চাওয়ায় আশিয়ানের জেদ চেপে বসে। সে তার বিদেশে যাওয়া সম্পর্কে কাউকে জানায় না। এবং গোপনে পাসপোর্ট, ভিসা রেডি করতে দেয়।

সবশেষে যেদিন তাদের বিয়ে ছিলো সেই একই দিনে তার লন্ডনের যাওয়ার ফ্লাইট ছিলো। সে হায়া বা তার পরিবারের কথা না ভেবেই কাউকে না জানিয়েই চলে যায় লন্ডন। তার এসব কথা জানতো আশিয়ানের বেস্টফ্রেন্ড আফিফ। সে আশিয়ানকে নানান ভাবে বুঝায় এমনটা না করতে কিন্তু আশিয়ান তার অন্ধ জেদের বশবর্তী হয়ে কোন চিন্তা ভাবনা ছাড়াই কাজটা করে ফেলে। আফিফ তার লন্ডনে যাওয়ার কথা পরিবারের সকলকে বলে দিতে চাইলেও আশিয়ান তাদের বন্ধুত্বের কসম দিয়ে কথাটা চেপে রাখে।

আশিয়ান যখন লন্ডন ফ্লাইটে রওনা হয়েছে স্বপ্ন পূরণের উদ্দেশ্য তখন মির্জা বাড়িতে তাকে খুঁজতে খুঁজতে সবার পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম। সকলে আফিফকে চেপে ধরলে আফিফ আমতা আমতা করে আশিয়ানের লন্ডনে যাওয়ার কথা বলে দেয়।

মি.মির্জা আশিয়ানের এহেন কাণ্ডে অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী পড়ে। তালুকদার বাড়িতে তখন আরেক ঝড় চলছে। পরিবারের এমন ভয়াবহ অবস্থা দেখে আবরার কঠোর মনে সিদ্ধান্ত নেয় যে সে আশিয়ানকে ত্যাজ্য করবে।

আশিয়ান বিদেশে গিয়ে প্রথম কয়েকদিন পরিবারের উপর জেদ করে ভালো থাকার চেষ্টা করে ঠিকই কিন্তু কয়েকদিন পর সে বুঝতে পেরে যায় পরিবার ছাড়া কেউ কখনো ভালো থাকতে পারে না।

সে আফিফের মাধ্যমে পরিবারের খবর জানতে পারলে সে আরো বিচলিত হয়ে পড়ে। সেখানে যাওয়ার ছয়মাস পর সে বাড়িতে ফোন করে। স্পর্শ মা হয়েও প্রথম প্রথম কথা বলে নি, আশিয়ানের কণ্ঠ শুনলেই ফোন কেটে দিতো। তারপর একটা সময় আর মুখ ফিরিয়ে রাখতে পারে না সন্তানের থেকে। একটা মাত্র সন্তান হওয়ায় সে তার মায়ের বেশিই প্রিয় ছিলো। কিন্তু আবরার তার জেদে অটল ছিলো। সে প্রায় দুই বছর আশিয়ানের সাথে কোন কথা বলেনি।

আশিয়ান জাভিয়ান-হানিয়াকেও ফোন করে তাদের থেকে মাফ চায় এমন কাজ করার জন্য। হায়া’র সাথে কথা বলতে চাইলে জাভিয়ান তাকে নিষেধ করে এবিষয়ে তার সাথে কথা বলার জন্য। আশিয়ান আফিফের মাধ্যমে ইতিমধ্যে জানতে পেরেছিলো হায়া’র কথা।

কেটে যায় দু’টো বছর। একদিন একটা ফ্যামিলি গেট-টুগেদারের ছবিতে সকলের সাথে হাস্যোজ্জ্বল হায়া’কে দেখে আশিয়ান প্রথমবারের মতো থমকে যায়। হায়া’র মলিন মুখে জোড়া তালির হাসিটা আশিয়ানের মন কেড়ে নেয়। এর আগে সে হায়া’র জন্য কিছু ফিল না করলেও সেদিন থেকে ফিল করা শুরু করে।

সেই পোস্টটা ছিলো আদিবার। সে আদিবার কাছ থেকে হায়া’র আইডিটা নেয়। দোনামোনা করতে করতে একসময় রিকুয়েষ্ট পাঠালেও হায়া তার রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করে না। মেসেজ দিলে রিপ্লাই তো করেই না বরংচ আশিয়ানকে ব্লক করে দেয়। আশিয়ানের জেদ চেপে বসে হায়া’র সাথে কথা বলার। সে একটা ফেইক আইডি খুলে মেয়ের নাম দিয়ে। সেই আইডি দিয়ে রিকুয়েষ্ট পাঠালে হায়া এক্সেপ্ট করে।

এরপর থেকে সেই আগ বাড়িয়ে হায়া’র সাথে প্রায়ই কথা বলতো। হায়া তাকে মেয়ে ভেবে কথা বলতো। অনেক কিছুই শেয়ার করতো। একদিন আশিয়ান সাহস করে হায়া’কে জিজ্ঞেস করে–

—তুমি কি কাউকে ভালোবাসো বা পছন্দ করো হায়া?

প্রশ্ন শুনে হায়া কিছু সময়ের জন্য থমকে গিয়েছিলো। ভালো তো বেসে ছিলো একজনকে, নিজের কিশোরী বয়সের আবেগকে ভালোবাসা ভেবে বলেও দিয়েছিলে মনের কথা। তারপর কি হলো? সে তাকে বিশ্রী ভাবে প্রত্যাখ্যান করে, ভরা বিয়ের আসরে ফেলে চলে গিয়েছিলো তাকে ছেড়ে।

হায়া একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে –

—না আমি কাউকে ভালোবাসি না আর না-ই বা পছন্দ করি। আমার সকল ভালোবাসা, ভালোলাগা আমার স্বামীর জন্য হবে। যে আমাকে আমার পাপার পর আমার সব সখ, আহ্লাদ, রাগ, জেদ সহ্য করবে।

কথাটা শুনে আশিয়ানের মিশ্র অনুভূতি হয়। সে কথাটা আরেকটু বাড়াতে চাইলে হায়া কথা কাটিয়ে দিয়ে অন্য কথায় চলে যায়।

এভাবে আরো একটা বছর চলে যায়। ইতিমধ্যে আশিয়ান হায়া’র প্রেমে পড়ে গিয়েছে। সে তার পরিবারকে জানাতে চায় সে হায়া’কে বিয়ে করতে চায়। কিন্তু তার আগেই উপরওয়ালা তার ভুলের শাস্তি দিয়ে দেয়।

একদিন ল্যাব থেকে বাসায় ফিরে এসে ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলে হায়া’র একটা স্ট্যাটাস দেখতে পায়। যেটা দেখে আশিয়ান হতভম্ব হয়ে যায়। হায়া তার ফেসবুকের রিলেশনশিপ স্ট্যাটাসে এনগেজড দিয়েছে আর তার ও ফারাবির এনগেজমেন্টের ছবি আপলোড করেছে।

~চলবে?