অপ্রিয় সেই তুমি পর্ব-০৯

0
6

#অপ্রিয়_সেই_তুমি
#প্রিয়া_আফরোজ
#পর্ব৯

মায়া কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে বলল :-
-পাশে থাকবো কিনা জানি না, কিন্তু এইটুকু কথা দিতে পারছি যে, কখনো ছেড়ে যাব না। (মায়া)

-দুটোর মধ্যে তফাৎ? (তুর্য)

-সময় হলে বুঝবেন। (মায়া)

-অপেক্ষায় রইলাম। (তুর্য)

তারপর তূর্য কিছুক্ষণ মায়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল :-
-আমাদের সম্পর্কটা কি এমনই থাকবে? (তুর্য)

-কেমন? (মায়া)

-তুমি বুঝনা কেমন? (তুর্য)

-না, বুঝিয়ে বলেন। (মায়া)

-আমি বলতে চাইছি আমাদের সম্পর্কটা কি এলোমেলোই থাকবে সারা জীবন? তুমি কি কখনো আমাকে মেনে নেবে না? (তুর্য)

-আপনার আর আমার সম্পর্কটাকে আমি চাইলেও কখনো অস্বীকার করতে পারবো না, কারণ বিয়ের কোন ছেলে খেলা না। আমি আপনাকে আমার স্বামী হিসেবে মানি, কিন্তু সেই স্বামীর অধিকারটা আপনাকে দিতে পারবো না। দেখুন আমাদের এই এলোমেলো সম্পর্কটাকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য আমার সময় চাই। (মায়া)

-দিলাম তোমাকে সময়, যত খুশি সময় নাও কিন্তু সবশেষে তুমি আমার হও।
আচ্ছা চলো, এবার আমাদের বের হতে হবে। (তুর্য)

-কোথায়? (মায়া)

-তোমাকে না তখন বললাম বিকেলে তোমাকে নিয়ে শপিংয়ে বেরোবো। (তুর্য)

-ও হ্যাঁ, দেখেছেন একদম ভুলে গিয়েছিলাম। (মায়া)

-যাও তুমি গিয়ে তৈরি হয়ে নাও। (তুর্য)

মায়া চলে যেতে নিয়েও আবার কিছু একটা মনে হতেই থেমে তু্র্যর দিকে তাকিয়ে বলল:-

-আমি তো আপনাকে জিজ্ঞেস করতে বেরিয়েছিলাম যে আপনি খাবার খেয়েছেন কিনা। কিন্তু এখানে সুইমিং-পুল দেখে এতটা আনন্দিত হয়েছিলাম যে সেই কথাটা আমার মাথা থেকেই চলে গিয়েছিল। আচ্ছা সে যাই হোক,
আপনি খেয়েছেন?(মায়া)

-না (তুর্য)

-তাহলে চলুন একসাথে খেয়ে নেই (মায়া)

-না এখন আর খেতে হবে না। এখন চলো আমার সাথে, আমরা শপিং শেষে রেস্টুরেন্টে খেয়ে তারপর ফিরবো।
Ok? (তুর্য)

-OK. (মায়া)

________________

মায়া খুব অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি হয়ে তূর্যর কাছে চলে আসলো।

তারপর তূর্য এবং মায়া দুজন মিলে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে লিফটের সামনে চলে গেল।

তূর্যর ফ্ল্যাটটা 27 ফ্লোরে হওয়ার কারণে লিফ্টে করে নামতেও একটু সময় লাগছিল,
তখনই মায়া তূর্যকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে :
-এত উপরে মানুষ থাকে? (মায়া)

-আমি তো থাকি। (তুর্য)

-আপনি কি মানুষ? (মায়া)

তূর্য চোখ রাঙিয়ে মায়ের দেখে তাকিয়ে বলল:- -আমাকে দেখে তোমার মানুষ মনে হয় না। (তুর্য)

-না (মায়া)

কথাগুলো বলতে বলতেই লিফট খুলে গেলো।
মায়েরাও তাই তূর্য আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল লিফট থেকে, মায়ার পিছু পিছু তুর্যও বেরিয়ে গেল।
তারপর মায়াকে সাথে করে তোর যে এড়িয়ে গেল পার্কিং এরিয়ার দিকে, সেখানে গিয়ে ব্ল্যাক কালার একটি Rolls Royce La Rose Noire Droptail -তে বসে পড়লো তূর্য। যার মূল্য প্রায় ৩ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা।

তূর্য নিজে গাড়িতে বসে সিটবেল লাগিয়ে মায়াকে উদ্দেশ্য করে বলল :-
-কি হলো ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
যাবে না নাকি? (তুর্য)

তূর্যর কথা শুনে মায়া এগিয়ে গিয়ে তূর্যর পাশের সিটে বসে পড়লো। তারপর তূর্যকে জিজ্ঞেস করল :-
-আচ্ছা এই গাড়িটা কি আপনার? (মায়া)

তূর্য কপাল কুঁচকে মায়ার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার কি মনে হয়? (তুর্য)

-আশ্চর্য, আমার আবার কি মনে হবে? আমি বুঝতে পারছি না বলেই তো আপনাকে জিজ্ঞেস করলাম। (মায়া)

-আমার গাড়ি না হলে কি চাবিটা আমার কাছে থাকতো? (তুর্য)

-চাবি তো চুরি করেও নেয়া যায়। (মায়া)

-কি? আমাকে দেখে তোমার চোর মনে হয়? (তুর্য)

-ছি, ছি,আপনাকে চোর ভাববো কেন? (মায়া)

-তাহলে তোমার মুখটা একটু বন্ধ করো। (তুর্য)

-ওকে, এই যে মুখে আঙ্গুল দিলাম আর একটা কথাও বলবো না। (মায়া)

_________________

তুর্য মায়াকে সঙ্গে নিয়ে শপিংমলে পৌঁছে গেল। তারপর গাড়ি পার্কিং এরিয়ায় রেখে, মায়ার হাত ধরে শপিংমলের ভেতরে চলে গেলো।

তূর্য প্রথমেই মায়ার জন্য ২০-২২ টা লং ড্রেস কিনে নিলো।
যেগুলো পড়ে মায়া ভার্সিটিতে যেতে পারবে।
তারপর সব সময় ব্যবহারের জন্য, কিছু ড্রেস নিয়ে নিল। তূর্য যখন মায়ার জন্য ড্রেস পছন্দ করছিল তখন মায়া তুর্যর থেকে খানিকটা দূরে গিয়ে একজন মহিলা সেলসম্যানকে নিজের সাইজ বলে কিছু ছোট কাপড় নিয়ে নিল।

তূর্য সবগুলো ড্রেসের মূল্য ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করে, ড্রেসগুলো ওই দোকানেই রেখে আসলো, এবং ম্যানেজারকে বলে আসলো যে তার লোক এসে এগুলো নিয়ে যাবে।

ড্রেসের দোকান থেকে বেরিয়ে তারা জুতো এবং বিভিন্ন কসমেটিক কিনে নিল।

কিন্তু তুর্য যখন দোকানে মায়ার জন্য জুতো পছন্দ করছিল, তখনই তূর্যর সাথে দেখা হয় তূর্যর ভার্সিটির ফ্রেন্ড জনের।
তূর্য তার জনের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে।
মায়া অন্যদিকে জুতোর কালেকশন গুলো দেখছিল যার কারণে জন মায়াকে দেখেনি।

তূর্য সঙ্গে কথা বলা শেষ হতেই দোকান থেকে বেরিয়ে জন কাকে যেন কল করে, তারপর ফোনের ওপাশের ব্যক্তি টাকে বলতে থাকে :-

-কিরে তুই না বললি তূর্য বাংলাদেশে গেছে। (জন)

………….

-তূর্য তো আমার সামনে, আমি এইমাত্র তূর্যর সাথে কথা বলে আসলাম। (জন)

………….

-আচ্ছা তুই আয় এসে দেখা কর ওর সাথে।আমি লোকেশন পাঠিয়ে দিচ্ছি তোকে। (জন)

_________________

সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে অনেক আগেই,
পুরো চার ঘন্টা শপিং করার পরে মায়ার প্রয়োজনীয় সবকিছু কেনা শেষ হলো।
কেনাকাটা শেষ হতেই মায়া-তুর্যকে বলে উঠলো
-আমার অনেক খিদে পেয়েছে চলুন এবার ডিনার করে নেই। (মায়া)

তূর্য মায়ার কথাই সম্মতি জানিয়ে কাকে যেন কল করলো।

তুর্য কল করার সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে যেন কালো পোশাক পরা বডিগার্ড টাইপের দুইজন লোক চলে এলো, ওনারা এসে মায়া এবং তুর্য থেকে সব কটা ব্যাগ নিয়ে চলে গেল।

শপিং মলের থার্ড ফ্লোরেই রেস্টুরেন্ট আছে, তাই তূর্য মায়াকে নিয়ে সেখানেই চলে গেলো।

রেস্টুরেন্টে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই কোথা থেকে যেন একটা মেয়ে এসে তুর্যকে জড়িয়ে ধরলো।
তারপর হেসে হেসে তূর্য সঙ্গে কথা বলতে থাকলো, তার ওপর মেয়েটা দেখতে মায়ার চেয়েও বেশি সুন্দরী,
এত সুন্দর একটা মেয়েকে তুর্যর সঙ্গে ওভাবে দেখে মায়ার শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছিল।

এদিকে তূর্য মেয়েটাকে বলছিল :-
-কিরে তুই এখানে কেন? (তুর্য)

-তুই এসেছিস শুনেই তো ছুটে চলে আসলাম (ইরা)

-আমি আমি শপিং-মলে আছি সেটা তুই কিভাবে জানলি? (তুর্য)

-আমি অফিসের কিছু ফাইল চেক করছিলাম তখন হঠাৎ জন আমাকে ফোন দিয়ে বলল তোর সাথে নাকি ওর দেখা হয়েছে।
আমি তো প্রথমে ওর কথা বিশ্বাসই করিনি, আমি ওকে বারে বারে বলছিলাম যে তূর্য লন্ডনে ফিরলে অবশ্যই আমি জানতাম। কিন্তু ও কিছুতেই আমার কথা মানছিল না। ও বারেবারে বলছিল ও নাকি নিজের চোখে তোকে দেখেছে, তোর সাথে ও কথা বলেছে। তাই ওকে বিশ্বাস না করে পারলাম না, শেষে ভাবলাম নিজে গিয়ে একবার দেখেই আসি। কিন্তু এখন তো দেখছি ওর কথাই সত্যি, তুই লন্ডনে ব্যাক করেছিস অথচ আমাকে বিষয়টা জানাস নি পর্যন্ত। (ইরা)

-আরে পাগলি আমি কালকে রাতে এসেছি,
ব্যস্ততার কারণে তোকে জানানো হয়নি। (তুর্য)

-কিসের এত ব্যস্ততা তোর? যে আমাকে একটা কল করার পর্যন্ত সময় পাসনি।(ইরা)

-আয় তোকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই (তুর্য)

-কার সাথে? (ইরা)

-সারপ্রাইজ (তুর্য)

-আরে আশ্চর্য কি সারপ্রাইজ বলবি তো। (ইরা)

তখনই তুর্য মায়াকে ডেকে বলে উঠলো :-

-মায়া, এটা ইরা আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। (তুর্য)

-আর ইরা ও হচ্ছে মায়া আমার ওয়াইফ। (তুর্য)

তূর্যর মুখে এই কথা শুনে হঠাৎ ইরার বুকটা কেঁপে উঠল, সে কোনো ভাবেই তূর্যর এই কথাটা বিশ্বাস করতে পারছে না। ইরা কোনভাবেই মানতে পারছে না যে, তার আট বছরের ভালোবাসা এভাবে মিথ্যে হয়ে যাবে।

ইরা নিজেকে কিছুটা সংযত করে একটু হেসে কাঁপা-কাঁপা গলায় বলে উঠলো :-

-তু তুই আমার সাথে মজা করছিস তাই না?(ইরা)

-কিরে তুই তোতলাচ্ছিস কেন? (তুর্য)

– তুই আমার সাথে মজা করছিস? এটাকে তোর মজা করার বিষয়ে মনে হয়? (ইরা)

-আরে মজা করতে যাব কেন? সত্যি বলছি।
ও আমার wife. (তুর্য)

কথাটা শুনেই ইরার চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
তা দেখে তূর্য বলে উঠলো :-
-ইরা তুই ঠিক আছিস? কি হলো তোর? তোর চোখে পানি কেন? (তুর্য)

ইরা বিষয়টাকে সামলানোর জন্য চোখ মুছতে মুছতে বলল:-
-কই না তো। তোর বিয়ে নিয়ে আমার অনেক বড় একটা আশা ছিল। কিন্তু তুই তো আমাকে জানিয়ে বিয়ে করলি না, তাই আমার সেই আশাটাও পূরণ হলো না। এইজন্যেই চোখে পানি চলে এসেছে। (ইরা)

তূর্য মায়াকে এক হাতে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বলল:-
-আমাদের বিয়ে উপলক্ষে সামাজিক ভাবে কোনো অনুষ্ঠান এখনো করা হয়নি। যখন সামাজিকভাবে সবকিছু করা হবে, তখন তোরা যত খুশি আনন্দ করিস। (তুর্য)

ইরা বুকে পাহাড় সমান কষ্ট নিয়ে,
মুখে এক চিলতে হাসি এনে কথায় সম্মতি জানাবো।

চলবে।