তোমার নামে লেখা চিঠি পর্ব-৪৫+৪৬+৪৭

0
6

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_৪৫ [ অরণ্য ইনায়ার হানিমুন ]

_____ °★ সকালের খাওয়া দাওয়া শেষ করে ইনায়া আবার রুমে ফিরে আসে। এরপর রেডি হয়ে অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে। অন্যদিকে অরণ্য নিজের রুমে বসে আছে, অসুস্থতার জন্য অফিসে যেতে পারছে না। কিন্তু এখন তার রুমে বসে থাকতে ভালো লাগছে না, সে যথেষ্ট বিরক্ত হচ্ছে। হঠাৎ অরণ্যর মাথায় সয়তানি বুদ্ধি চলে আসে, সে বিছানায় রাখা তার ফোন হাতে নেয়। এরপর অপরিচিত এক নাম্বারে কল করে, অল্প সময় অতিক্রম হয়ে গেছে যাওয়ার পর ফোন রিসিভ করে। অরণ্য বলে ___

___ “- কি ব্যাপার আমার প্রিয় শএু কেমন আছেন আপনি? সাতদিন পর বউকে নিয়ে মালদ্বীপে হানিমুনে যাব। সেখানে কি খুন করার চেষ্টা করবেন না?

____ °★ অপরিচিত মানুষটা অরণ্যর কথা শুনে হাসে। যতই সে অরণ্যর শএু হোক না কেনো, তাকে খুন করার শত চেষ্টা করুক না কেনো। অরণ্যর সাহসিকতার প্রশংসা সে সবসময় করে, যদি মালদ্বীপে হানিমুনে যাওয়ার কথা অরণ্য না বলতো তবুও সে জেনে যেতো। অপরিচিত মানুষটা বলে —–

____ “- সাতদিন পর মালদ্বীপে হানিমুনে যাবে, কিন্তু এর আগে যদি তোমার বউ এক্সিডেন্টের আসল ঘটনা জেনে যায় তখন কি হবে? ইনায়া কি স্বামীর বিশ্বাসঘাতকতা সয্য করতে পারবে? যদি সাতদিনের মধ্যেই তোমাদের ডিভোর্স হয়ে যায়?

____ °★ অপরিচিত শএু কথাটা অরণ্যকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছে। কিন্তু অরণ্য ভয় পায় না বরং সে শব্দ করে হেঁসে উঠে। যেনো তাকে কেউ হুমকি না বরং কৌতূহল শুনিয়েছে। অরণ্যর হাসির শব্দে শএুর সমস্ত শরীর রাগে জ্বলে যায়, অল্প সময় পর অরণ্য হাসি থামায় এরপর বলে ——–

______ “- দয়া করে পরের বার থেকে এমন মজার কথা বলবেন দেখা যাবে আপনার কথা শুনে আমার হাসতে হাসতে পেটে ব্যাথা হয়ে যাবে। কামন অন আই ডিয়ায় এনেমি অরণ্য এতোটা কাঁচা খেলোয়াড় নয়। যে সামান্য একটা ঘটনা নিয়ে ভয় পেয়ে যাবে, তাই আমাকো ভয় দেখানোর ভুল একদম করবেন না —–.

°★ অরণ্যর কথা শুনে অপরিচিত লোক রাগী কণ্ঠে বলে —–

_____ “- তোমার সাহসের প্রশংসা করছি অরণ্য। কিন্তু তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো রক্ত কিন্তু তোমার আর আমার একই। আর এক্সিডেন্টের ঘটনার সমস্ত প্রমাণ রয়েছে আমার কাছে, যদি এই প্রমাণ ইনায়ার কাছে যায় তখন কি হবে? তুমি কি পারবে ইনায়ার চোখে তোমার জন্য ঘৃণা সয্য করতে?

°★ অপরিচিত মানুষের কথা শুনে অরণ্য হাসি খুব কষ্ট করে থামায়। এরপর বলে ——-

_____ “- প্রিয় শএু যদি এক্সিডেন্টের ঘটনা ইনায়া যানতে পারে, তবে আপনার এসএস কোম্পানির বিষ মিশানোর কথা সমস্ত শহর যানবে। যদি ইনায়ার চোখে আমি ঘৃণা দেখি, তবে আপনার চোখে মৃত্যুর ভয় থাকবে। আর ইনায়া যদি আমায় ডিভোর্স দেয়, তবে আদালত আপনাকে ফাঁসি দিবে। আগন্তুক শএু ভুলে যাবেন একই রক্ত কিন্তু আমার শরীরে ও রয়েছে, আর আপনার সকল অপকর্মের প্রমাণ আমার কাছে আছে। সো চয়েস ইজ ইউরস মৃত্যু বরণ করবেন, না এক্সিডেন্টের ঘটনার সত্যি লুকিয়ে রাখবেন ———–.

°★ আজ অরণ্যর কথায় আত্মবিশ্বাস রয়েছে যা শএুর মনে ভয়ের সৃষ্টি করেছে। ফোনের অপর পাশে অবস্থান করা মানুষের বুকের ধুকপুক আওয়াজ অরণ্য শুনতে পারছে। যা শুনে অরণ্যর মুখে পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠে। যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার আগেই যদি শএু হেরে যাওয়ার ভয় পায় তবে তার চেয়ে আনন্দের বিষয় কি হতে পারে। আর যদি এক্সিডেন্টর সত্যিটা ইনায়া জেনে যায়, তবে অরণ্য খুব ভালো করে যানে তার বউকে কি করে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অভিনয় করায় অরণ্য এক নিখুঁত অভিনেতা, আর বর্তমানে ইনায়া অন্ধ বিশ্বাস করে অরণ্যকে। হাজার তথ্য প্রমাণ যদি ইনায়ার সামনে থাকে, তবুও ইনায়া অরণ্যকে চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করবে।

°★ অপরিচিত শএু মুখে রহস্যকর হাসি বজায় রেখে বলে ——

_____ “- যদি ইনায়াকে তোমার সামনে খুন করি আমি। তখন তোমার এতো জেদ, আর অহংকার কোথায় থাকবে? তুমি ভীষণ স্বার্থপর অরণ্য, শুধু মাএ নিজের খেলার গুটি হিসাবে ইনায়াকে ব্যবহার করে গেলে?

অপরিচিত কণ্ঠে ইনায়ার হত্যার কথা শুনে, অরণ্যর প্রচুর রাগ হয়। অরণ্য বলে —-

____ “- সাহস থাকলে আমার বউয়ের শরীর একটা আঁচড় কেটে দেখান।আর শুনুন ইনায়া আমার খেলার গুটি না বরং ও আমার ভালোবাসা। যদি ইনায়ার কিছু হয়, তবে ভুলে যাব আপনার সাথে আমার কোনো রক্তের সম্পর্ক রয়েছে। আমার ইনায়া যদি খুন হয়, তবে আপনার পরিবারের প্রতিটা সদস্যর কবর খুড়ঁব আমি। প্রতিটা লাশকে এমন করে খুন করব যে, রাস্তার কুত্তা অবধি ভয়ে দশ হাত দূরে চলে যাবে।

____ °★ অপরিচিত মানুষটা বলে —

____ “- এতো ভালোবাসো ইনায়াকে? তবে তো ওকে খুন করতে হয়? তোমার বিয়ের অনুষ্ঠানে কোনো গিফট দেওয়া হয় নাই, কিন্তু হানিমুনে ইনায়ার লাশ উপহার দিব তোমাকে আমি _______.

_____ “- শুনুন বউ হয় আমার ইনায়া সারাজীবন আগলে রাখব ওকে আমি। যতদিন অরণ্য রাজ চৌধুরীর নিঃশ্বাস রয়েছে, ততদিন তার বউয়ের কোনো ক্ষতি হতে দিবে না। আর শুনে রাখুন যদি ইনায়াকে খুন করার চেষ্টা করেন, তবে আপনার কাফনের কাপড় কিনার চিন্তা ভাবনা করে রাখবেন —.

°★ ফোন রেখে দেয় অরণ্য, ভীষণ রাগ হচ্ছে এখন তার। মালদ্বীপে আবার নতুন কোনো বিপদ অপেক্ষা করছে, যা অপরিচিত শএুর কথা শুনে সে বুঝতে পারে। তবে এখন সমস্ত ঝামেলা শেষ করা উচিত, এইবার সকলের সামনে আসল খুনির পরিচয় নিয়ে আসা হবে। সব রহস্য শেষ করে অরণ্য একটা সুন্দর সুস্থ জীবন কাটাতে চাই ইনায়ার সাথে। এতো চিন্তা আর ভয় নিয়ে থাকতে পারবে না, আর ইনায়াকে তার জীবন থেকে কিছুতেই হারিয়ে যেতে দিবে না অসম্ভব ——-.

°★ সময় দ্রুত গতিতে ছুটে যায়। প্রায় সাতদিন চলে যায়, অরণ্য এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। তবে ইনায়ার কাছে নয়, এই সাতদিনে একবার ও অফিসে যাওয়ার অনুমতি দেয় না অরণ্যকে ইনায়া। ঘরে বসে অফিসের কিছু কাজ সে সম্পূর্ণ করে, কারণ ইদানিং ইনায়ার উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যাচ্ছে। আজ ইনায়া আর অরণ্য মালদ্বীপে যাবে, অনেকদিন পর একসাথে কোথাও ঘুরতে যাবে—–.

°★ ইনায়া অনেক খুশি, কিন্তু অরণ্যর মনে ভয় রয়েছে। মালদ্বীপে যাওয়ার পর কি হবে, তা সে ভাবে নতুন আবার কোন ঝড় অপেক্ষা করছে তার জন্য।

#চলবে

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_৪৬ [ ইনায়ার কিডন্যাপ ]

°★ মালদ্বীপে অবস্থান করছে এখন ইনায়া আর অরণ্য।সকালের ফ্লাইটে এসেছে তারা, সমুদ্রের কাছে এক হোটেলের রুম বুক করা হয়েছে। আজ এতোদিন পর অরণ্য সাথে কোথাও ঘুরতে এসে ইনায়া অনেক খুশি, কিন্তু অরণ্যর মনে হাজারো ভয়ের আশংকা সৃষ্টি হয়েছে। ইনায়ার অগোচরে রামিম সহ তার বর্ডিগাড ও এসেছে মালদ্বীপে, তারা যেই রিসোর্টে থাকবে তার ঠিকই পাশের প্রায় সব কয়টা রুম বুক করা হয়েছে। যদি ইনায়ার সন্দেহ হয়, এরজন্য খুব সাধারণ ভাবে সব লোক এসেছে। তবুও অরণ্যর মনের ভয় দূর হচ্ছে না, হৃদয়ের মাঝে এক অশান্ত ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইনায়ার খুশির জন্য, তার মুখে সবসময় হাসি বজায় রাখে।

°★ সম্পূর্ণ রিসোর্ট বুক করে অরণ্য, যার আশেপাশের রুমে তার লোক রয়েছে। রিসোর্টের রুমে যায় অরণ্য আর ইনায়া, এতোসময় জার্রি করে ভীষণ টার্য়াড সে। ভোরে মালদ্বীপে রওনা দিতো হবে বলে ঘুম ভালো করে হয় নাই, কিন্তু অরণ্য একটু ও টার্য়াড না বরং তার শরীর এখন প্রচুর এনার্জি রয়েছে রোমান্স করার জন্য। ফ্রেশ হওয়ার জন্য যখন ইনায়া ওয়াশরুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়, তখন অরণ্য তার হাত শক্ত করে ধরে। ভ্রু কুঁচকে ইনায়া তাকায় অরণ্য দিকে, কিন্তু অরণ্য ইনায়ার এমন তাকানো সম্পূর্ণ ইগনোর করে তাকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ইনায়া হয়তো বুঝতে পারে অরণ্য এখন কি চাই, যার জন্য সে বলে ———

_____ “- কি করছেন অরণ্য? এতোখন জার্নি করে এসে আমি প্রচুর টার্য়াড। এখন ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হব, এরপর ঘুমাবো ______.

°★ ইনায়ার কণ্ঠে ঘুমাবো কথাটা শুনে অরণ্যর ভীষণ রাগ হয়। হানিমুনে এসেছে কি ঘুমানোর জন্য, প্রায় দুইবছর পর বউয়ের সাথে একান্ত সময় কাটাতে এসেছে মালদ্বীপে। এখানে ও তার বউ দূরে দূরে থাকতে চাই তার থেকে, কত বড়ো সাহস। কিন্তু আজ ঝড়,তুফান,ভূমিকম্প, সুনামি যায় এসে যাক না কেনো অরণ্য বাসর করেই ছাড়বে। আর এগারো বাচ্চার মামা বানাবে ইভানকে, এরপর তার এতোদিনের প্রতিশোধ পূরণ হবে। অরণ্য বলে ______

____ “- একবার বাসর করে নেয় এরপর একসাথে ওয়াশরুমে গিয়ে গোসল করব। কিন্তু এখন শুধু রোমান্স হবে, যদি ভুলে ও তড়িৎ বিড়িং করার চেষ্টা করেন ইনায়া। তবে কিন্তু সারাজীবনের জন্য দূরো সরে যাব, একবার কোমায় চলে গিয়েছিলাম এইবার কিন্তু মরে যাবো _____.

°★ কথাটা শেষ করার আগেই ইনায়া থামিয়ে দেয় অরণ্যকে। এরপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে ——

_____ “- আর কোনোদিন দূরো যাওয়া বা মরে যাওয়ার কথা বলবেন না। আপনাকে ছাড়া বাঁচা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। বউ হয় আপনার, আমার মন, হৃদয়, শরীর আত্মা, সবকিছুর উপর অধিকার রয়েছে আপনার। ভালোবাসুন আমায় অরণ্য ____.

°★ ইনায়ার কথা শুনে অরণ্যর মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠে, তার বউ অনুমতি দিয়েছে তাকে কাছে যাওয়ার। ইনায়ার হাতের বাঁধন আলগা করে, ওকে কোলে তুলে নেয় অরণ্য। ইনায়া কাঁধ জড়িয়ে ধরে অরণ্য, বিছানায় শুয়িয়ে দেয় এরপর ওর অরণ্য ওর কাছে যায়। ইনায়ার মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায়, তার হার্টবিট ফাস্ট হয়ে যায়। অরণ্য আর দেরি করে না, এগিয়ে যায় ইনায়ার ঠোঁটের কাছে যখনই কিস করতে যাবে। তার আগেই আবার দরজায় শব্দ হয়, অতিরিক্ত বিরক্ত হয় অরণ্য। বাসায় থাকতে যখন বউকে কিস করতে যায়, তখন বোন বা মা এসো ডিসটার্ব করে। যার জন্য বাধ্য হয়ে হানিমুনে মালদ্বীপে এসেছে, এখানে ও বিরক্ত করার জন্য লোক চলে এসেছে ____।

°★ দরজায় শব্দ সম্পূর্ণ রূপে উপেক্ষা করে, আবার তার কাজ করার প্রতি মনোযোগ দেয়। কিন্তু দরজায় অনবরত শব্দ হতে থাকে, যা শুনে ইনায়া চোখ তুলে তাকায় এরপর বলে _____

___ “- দরজার বাহিরে কে এসেছে? এমন করে শব্দ করছে রিসাের্টে কি কোনো সমস্যা হয়েছে?

°★ অরণ্য বিরক্ত নিয়ে বলে ——

“- যদি আজ ভূমিকম্প, ঝড়,বৃষ্টি যায় আসুক না কেনো। তবুও বাসর করেই ছাড়ব “।

°★ অরণ্য আবার অগ্রসর হয় ইনায়ার দিকে, কিন্তু দরজার শব্দ বেড়ে যাচ্ছে। অরণ্য এইবার প্রচুর বিরক্ত হয়, মালদ্বীপে এসে তাদের ঘনিষ্ঠ সময়ে বিরক্ত করার সাহস কার। মূলত সেটা দেখতে, দরজার কাছে এগিয়ে যায় সে। রাগ নিয়ে দরজা খুলে দেয়, কিন্তু দরজার অপরপাশে যা আছে সেটা দেখে সে সম্পূর্ণ শকড খায়। অরণ্যকে এমন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, ইনায়া এগিয়ে যায় দরজার কাছে এরপর বলে ——-

______ “- ইভান ভাই আপনি? _____

°★ দরজার বাহিরে ইভান দাঁড়িয়ে রয়েছে তার সাথে প্রভা, ইনায়া এগিয়ে আসে দরজার কাছে। মালদ্বীপে হয়তো ইভান আর প্রভার আশা করে নাই ইনায়া, অন্যদিকে শকড খাওয়ার মতো মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অরণ্য। পৃথিবীর সকল মায়া, মোহ ত্যাগ করে এখন তার বনবাসে চলে যেতে ইচ্ছা করছে। ভাগ্যার উপর করুণা হচ্ছে, তার কপালে হয়তো এই জন্মে বাসর নেই। অরণ্যকে সাইড করে ইভান আর প্রভা রুমের ভিতরে প্রবেশ করে, ইনায়া তো অনেক খুশি তাদের দেখে।

°★ গত দুইবছর প্রভা আর ইভান তার বিভিন্ন কাজে অনেক সাহায্য করেছে। যার ফলে সকলের মধ্যে ভালো বন্ধুসুলভ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ইনায়া আর ইভান খুব হেঁসে হেঁসে কথা বলছে, যা দেখে অরণ্যর হিংসা হচ্ছে। তার এখন ,, পরাণ যায় জ্বলিয়া গান গাইতে ইচ্ছা করছে,,। অরণ্যকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইভান তার কাছে, এরপর বলে –

_____”- কি ব্যাপার অরণ্য। হানিমুনের সময় কেমন কাটছে?

°★ ইভান যে কথাটা অরণ্যকে টিজ করে বলেছে, সেটা অরণ্য বেশ বুঝতে পারে। অরণ্য হাসি মুখে উত্তর দেয় ——-

_____ “- খুব সুন্দর ইভান ভাই। কিন্তু একটা কথা বলুন যদি আপনি বিরিয়ানি খেতে চান, আর সেটা অনেক সময় পেয়ে যান। ঠিক তখন যদি কেউ আপনার থেকে টান দিয়ে প্যাকেট কেঁড়ে নেয়, আপনি কি করবেন?

_”- অবশ্যই রাগ করব ____.

____ “- আপনার প্রতি এখন আমার ও রাগ হচ্ছে। হানিমুনে এসেছি বউয়ের সাথে রোমান্স করার জন্য, কিন্তু আপনি এসে বিরক্ত করলেন। মাঝে মধ্যে মনে হয় আপনি আমার চাচাতো ভাই না সতিন?

°★ অরণ্যর কথা শুনে ইভান হেঁসে ফেলে। সত্যি বলতে তারা এখানে ইনায়া আর অরণ্যকে বিরক্ত করতে আসে নাই। বরং বিজনেসের কাজে এসেছে, তিনদিন তাদের থাকতে হবে মালদ্বীপে। যেহেতু প্রভা ইভানের পিএ তাই ও এসেছে, কয়েকদিন আগে যখন ইনায়ার সাথে দেখা হয় তখন ইনায়া বলে তারা মালদ্বীপে যাচ্ছে। যার ফলস্বরূপ ইভান আর প্রভা এখানে এসেছে, যদিও তারা অন্য রিসোর্টে উঠেছে। কারণ এই রিসোর্টের সমস্ত রুম আগে থেকে বুক করা হয়েছে, যার মধ্যে অরণ্যর লোক রয়েছে।

°★ প্রায় অনেক সময় ধরে প্রভা আর ইভান কথা বলে ইনায়ার সাথে, অরণ্য হাতভাগার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। কথা বলার মাঝে মধ্যে ইনায়া দেখে যাচ্ছে অরণ্যকে, ভীষণ হাসি পাচ্ছে তার অরণ্যর এমন করে তাকিয়ে থাকা দেখে। আবার খারাপ ও লাগছে, প্রায় এক ঘণ্টা পর প্রভা আর ইভার নিজের রিসোর্টে ফিরে যায়। অরণ্যর এখন রোমান্সের মুড নাই, প্রচুর খিদা লাগছে তার। যার জন্য খাবার অর্ডার দেয়, একসাথে খাওয়া দাওয়া করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। ইনায়া অনেক টার্য়াড যার জন্য অরণ্য তাকে বিরক্ত করে না, এবং ইনায়াকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে ঘুমায় ——

°★ ইনায়া এখন অরণ্যর বুকের মধ্যে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে, তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে অরণ্য। ইনায়া হঠাৎ করে জিজ্ঞেস করে ——

____ “- অরণ্য আপনি কি ইভান ভাইকে হিংসা করেন? মানে আমি যে ইভান ভাইয়ের সাথে এতো হেঁসে হেঁসে কথা বলি, এরজন্য কি আপনি রাগ করেছেন আমার উপর?

___ °★ ইনায়ার কথা শুনে অরণ্য হাসে। এরপর বলে ——

____ “- বউ আমি তোমাকে ভালোবাসি, এরজন্য হয়তো ইভানের সাথে দেখলে আমার হিংসা হয়। কিন্তু আমি জানি কোমায় থাকা অবস্থায় ইভান তোমাকে অনেক সাহায্যে করেছে। অতীতে যা হয়েছে তা ভুলে যাও, বর্তমানে তুমি আমার আর ইভান তোমার ভাসুর। আর জীবনে যায় হয়ে যাক না কেনো, এই অরণ্য কোনোদিন তার বউয়ের উপর রাগ করে থাকবে না। ভালোবাসি তোমায় বউ “।

°★ অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া হেঁসে দেয়, এরপর একসাথে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রায় অনেকটা সময় তারা ঘুমায়, বিকাল হয়ে যায়। অরণ্যর ঘুম থেকে উঠে দেখে ইনায়া তার বুকে নেয়, হয়তো ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেছে কথাটা ভাবে। কিন্তু তার মন যেনো কেমন করে উঠে, সে উঠে গিয়ে ওয়াশরুমের কাছে। কিন্তু ওয়াশরুমের দরজা খোলা ইনায়া কোথায়, তার মনে অজানা ভয় ঝুঁকে বসে। হঠাৎ করে তার ফোন বেজে উঠে। নিশ্চয়ই ওই অজানা শএু কল করেছে। ইনায়া কোথায়?

#চলবে

#তোমার_নামে_লেখা_চিঠি
#কলমে_নওরিন_মুনতাহা_হিয়া
#পর্ব_৪৭ [ ইনায়ার মৃত্যু ]

°★ রাত প্রায় তখন নয়টা বিছানার উপর থাকা ফোন অনবরত বেজে যাচ্ছে। ভয়ে ভয়ে এগিয়ে যায় সেইদিকে অরণ্য, সারা শরী যেনো কেঁপে উঠছে। আজ নিজেকে বড্ড ভীতু পুরুষ বলে মনে হচ্ছে, যদি সে ইনায়াকে হারিয়ে ফেলে তবে কি করে বাচঁবে। ইনায়ার হারিয়ে যাওয়ার ভয় তাকে কুঁড়ে কুড়ে খাচ্ছে, আগন্তুক শএু যদি তার রাগ আর জেদের কারণে ইনায়ার কোনো ক্ষতি করে দেয় তখন কি হবে। হাজারো অজানা ভয় এখন অরণ্যর মন জুড়ে রয়েছে, বড্ড উদাসীন লাগছে নিজেকে। বিছানা থেকে তার দুরত্ব প্রায় দশ সেকেন্ডের, তবে তার পা এখন স্থির হয়ে গেছে। মনের মধ্যে সাহস বাড়িয়ে এগিয়ে যায় বিছানার কাছে, এরপর ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করে। অপর পাশ থেকে একজন মহিলার কণ্ঠ শুনে যায়, অরণ্য বিচলিত হয়ে বলে ___________

_____ “- ইনায়া কোথায় আপনি? একা একা রুম থেকে বের হয়েছেন কেনো? বিপদ হয়েছে কি কোনো? আপনি কোথায় আগে সেটা বলেন? ———–

°★ অরণ্যর এমন ভয়ার্ত কণ্ঠ শুনে ইনায়া ঘাবড়ে যায়। সে শুধু অরণ্যর জন্য সারপ্রাইজ পরিকল্পনা করার জন্য বাহিরে বের হয়েছে। অরণ্য তখন ঘুমিয়ে ছিলো, কিন্তু অরণ্য যে ঘুম থেকে উঠে সারা রুমে তাকে খুজঁবে আর এতো চিন্তা করবে দা ভাবতে পারে নাই। ইনায়া বলে ———

——- “- অরণ্য কি হয়েছে আপনার? এমন চিন্তা করছেন কেনো আমাকে নিয়ে? আর আমি এখন রিসোর্টের ছাদে অবস্থান করছি। আপনি আসুন এখানে ———-.

°★ ইনায়ার কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই অরণ্য তার ফোন বিছানায় রেখে দৌড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। রিসোর্টের ছাদে এসে পৌঁছায় অরণ্য, এতোখন তাড়াতাড়ি করে দৌড়ে আসার কারণে সে হাঁপিয়ে উঠে। অরণ্য সামনে দিকে তাকিয়ে দেখে, সেখানে ঘুটঘুটে অন্ধকার রয়েছে। রিসোর্টের বাহির থেকে আসা নিভু নিভু আলোয় এক সুন্দরী রমনী দাঁড়িয়ে রয়েছে। অরণ্যর মনে আগ্রহ প্রকাশ পায়, সে এগিয়ে যায় সুন্দরী রমনীর কাছে। সারা অঙ্গে তার লাল শাড়ি জড়ানো, কাঁধের উপর খোলা চুলগুলো এলেমেলো হয়ে রয়েছে। অরণ্য তার কাঁধের উপর হাত রাখে, আড়ালে লুকিয়ে রাখা রহস্যময়ী মেয়েকে নিজের দিকে ঘুরায়।

°★ সুন্দরী রমণীর রুপের দিকে তাকিয়ে অরণ্য ঘায়েল হয়ে যায়। ঠিক সে সময় সমস্ত ছাদ জুড়ে কৃত্রিম আলো ছড়িয়ে পড়ে, অরণ্য চারদিকে তাকিয়ে দেখে সেখানে হাজারো মোমবাতি আর ফুলের পাপড়ি রয়েছে। অরণ্য হয়তো কিছু বুঝে যায়, যার ফলে তার মুখে হাসি ফুটে উঠে। তবে রিসোর্টের ছাদে থাকা সমস্ত সৌন্দর্যের মাঝে তার চোখ শুধু ইনায়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। অদ্ভুত সুন্দর তার বউ, যার রূপের প্রশংসা করতে হলে তার হাজার বছর সময় লাগবে। এমন নিখুঁত সৃষ্টির বর্ণনা করার জন্য, হাজার বার জন্ম নিতে হবে। অরণ্যর এমন মুগ্ধকর চাহনি ইনায়ার লজ্জার কারণ হয়, সে তার লাজুক দৃষ্টি নিচের দিকে রাখে। অরণ্য সয়তানি হাসি দিয়ে বলে –

——– “- বউ দেখি একদম বাসর রাতের আয়োজন করে ফেলেছে। কি বউ কাহিনী কি? সত্যি হানিমুন করতে চাও বউ? ——-

°★ অরণ্যর এমন লাগামহীন কথাটা শুনে অষ্টাদশী কন্যার লজ্জা যেনো দিগুণ বেড়ে যায়। অরণ্য ইনায়ার এমন লাজুর চেহারা দেখে, শব্দ করে হাসে। লাজুক ইনায়া তার লজ্জা নিবারণ করার জন্য, অরণ্যর বুকে স্থান নেয়। অরণ্য তার প্রিয়তমাকে জড়িয়ে নেয় তার বুকে, শক্ত করে দীর্ঘ সময় ধরে আলিঙ্গন করে। এরপর ইনায়া অরণ্যর বুক ছেড়ে হাঁটু নিচ করে বসে, পাশে থাকা এক টেবিল থেকে আংটি নিয়ে তাকে প্রপোজ করে। অরণ্য অবাক হয়ে দেখে যায় ইনায়ার কাজকর্ম, ইনায়া আলতো হেঁসে বলে –

_____ “- আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি অরণ্য। নতুন করে আবার আপনার সাথে জীবন শুরু করতে চাই? সুখ ও শান্তির সংসার করতে চাই? বলুন সারাজীবন কি থাকবেন আমার আশে? ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবেন আমায়? ভালোবাসি ———-.

°★ ইনায়ার বলা প্রতিটা কথা অরণ্যর কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়। তার ইনায়া সত্যি তাকে ভালোবাসে? আজ সর্বপ্রথম ইনায়ার কণ্ঠ থেকে তার নামে ভালোবাসি শব্দটা উচ্চারিত হয়েছে। জীবনে হয়তো এরচেয়ে সুখের মূহুর্ত কোনো দিন আসে নাই, আজ অরণ্যর ভালোবাসা সার্থক মনে হলো৷ অরণ্য হাঁটু নিচুঁ করে বসে যায়, এরপর ইনায়ার হাতের আংটি নিয়ে বলে ——–

——- “- ভালোবাসি আপনাকে আমি ইনায়া। শুধু এই জন্মে নয় পরের জন্ম বলে যদি কিছু থাকে, সেই জন্মে ও যেনো আবার দেখা হয় আমাদের। তখন ও শুধু আমি আপনাকে ভালোবাসব, সারাজীবন আগলে রাখব খুব ভালোবেসে। কখনো এই কাজলরেখা চোখে পানির বিন্দু পড়তে দিব না, ভালোবাসি তোমায় ইনায়া “।

°★ রিসোর্ট থেকে দূরে দাঁড়িয়ে একজন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে ইনায়া আর অরণ্যর দিকে। যদিও তার দূরত্ব তাদের থেকে অনেক,যার জন্য স্পষ্ট হয়ে সবকিছু দেখা যাচ্ছে না। তবুও দুইজন নবদম্পতি র প্রপোজ আর সুন্দর মূহুর্তের অনেক কিছুই বোঝা যাচ্ছে। অপরিচিত লোকটা আর কেউ না ইভান, সে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দেয়। শুধু জেদ, আর অহংকারের কারণে মানুষ তার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হারিয়ে ফেলে। যখন সে তার ভুল বুঝতে পারে, তার প্রিয় মানুষ বা জিনিসকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। তখন সেটা অনেক দূরে চলে যায়, কখনো বা অন্য কারো হয়ে যায়। সময় থাকতে যদি মূল্যয়ান না করা হয়, তবে হারিয়ে গেলে আফসোস করে কোনা লাভ হয় না।

°★ সিঁড়ি দিয়ে উপরে এসে ইভানের পিছনে একজন দাঁড়ায়, যার নাম প্রভা। মূলত ইভানকে রুমে দেখতে না পেয়ে সে এখানে আসে, সামনে থাকা ইভানের দৃষ্টি অনুসরণ করে সে ওইদিকে তাকায়। দূরে রিসোর্টর ছাদে একজোড়া নবদম্পতিকে দেখা যাচ্ছে, ওই রিসোর্ট যেহেতু ইনায়া আর অরণ্য বুক করেছে হয়তো সেখানে তারা রয়েছে। ইভানের দৃষ্টি যেনো স্থির হয়ে তাদের দেখে যাচ্ছে, প্রভার বুকে ভীষণ কষ্ট অনুভব হচ্ছে তার। তবে কি ইভান এখনো ইনায়াকে ভুলতে পারে নাই, আজ ও ইনায়াকে ভালোবাসে ইভান? প্রভন তার আনমনে ভাবা কথাটা শুনে তার কষ্ট হয়, তবে কি প্রভার প্রতি ইভানের কোনো অনূভুতি নেই। শুধু কি ইভান তাকে বন্ধুর নজরে দেখেছে এতোটা বছর, কিন্তু প্রভাতো ইভানকে ভালোবাসে।

°★ গত দুইবছরে ইভানের প্রতি তার মুগ্ধতা আর ভালোবাসার পরিমাণ দিগুণ বেড়ে গিয়েছে। প্রভার কেনো যানি খুব কষ্ট হচ্ছে, কান্না করতে ইচ্ছা করছে তার। ইভানের দৃষ্টিতে সে যে ভালোবাসা দেখেছে ইনায়ার প্রতি, সেটা প্রভার জন্য কোনো দিন ছিলো না। প্রভার ভালোবাসা শুধু একতরফা হয়ে থেকে গেলো। প্রভা আর কোনো কথা বলে না, নিঃশব্দে, নীরবে চলে যায় সেখার থেকে। তার চোখ থেকে অজস্র পানির বিন্দু গড়িয়ে পড়ছে।

°★ অন্যদিকে রিসোর্টের ছাদে অনেক সময় কাটিয়ে হোটের রুমে ফিরে আসে তারা। অরণ্য ইনায়াকে কোলে তুলে নেয়, ইনায়া কোনো রকম বাধা প্রধান করে না। এবং শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইনায়াকে, রুমে গিয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দেয় ইনায়াকে। এরপর তার এলেমেলো চুল কানের পিছনে গুঁজে দেয়। আজ সারারাত ইনায়ার উপর রাজত্ব চলে অরণ্যর, ইনায়ার সমস্ত অস্বস্তি জুড়ে মিশে যায় সে। পূর্ণতা পায় তাদের ভালোবাসা।আর ইভান আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজের নামে অভিযোগ করে যায়, সব দোষ শুধু তার সে আজ সর্বহারা। [ গল্পটা রোমান্টিক কিছু দিলাম না কারণ আমার গল্পটা নানু পড়ে, যদি উল্টো পাল্টা কিছু লেখি তবে লাথি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিবে ]

°★ রাত প্রায় তিনটা ইনায়া এখন অরণ্যর বুকে শুয়ে রয়েছে, লজ্জায় ইনায়ার মুখ একদম লাল হয়ে গেছে। যা দেখে অরণ্য শব্দ করে হাসে, আর বলে ______

——- “- কি বউ হানিমুন করার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে? আজ থেকে অরণ্য রাজ চৌধুরী সম্পূর্ণ তোমার। আর শোনো বউ তুমি ও শুধু আমার। ভালোবাসি তোমায় বউ অনেক ভালোবাসি “।

___★ অরণ্যর কথা শুনে ইনায়া ওর বুকে ঘুষি দেয়, অরণ্য বলে ——-

_____ “- বাসর করতে চাইলে তুমি এখন আমায় মারছ কেনো? বউ তুমি আমার সবর্নাশ করে দিলে, এখন মানুষের সামনে মুখ দেখাব কি করে? হায়রে কি সর্বনাশ হয়ে গেলো আমার?

°★ অরণ্যর এমন নাটক দেখে ইনায়া মারার গতি বাড়িয়ে দেয়। এরপর একে অপরকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল প্রায় নয়টার দিকে ঘুম ভেঙে যায় ইনায়ার, অরণ্য এখনো ঘুমিয়ে পড়েছে। কালকে রাতের ঘটনার কথা মনে পড়ে ইনায়ার লজ্জা লাগছে। ইনায়ার হাটঁতে একটু অসুবিধা হচ্ছে, তবুও কোনো রকম হেঁটে ওয়াশরুমে যায়। অরণ্যকে ঘুম থেকে ডাকে না, ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসে। প্রচুর খুদা লাগছে তার, যার কারণে রুম থেকে বের হয়ে রিসোর্টে যায়।

°°★ রুমের বাহিরে অনেক মানুষ, প্রতৈকে পুরুষ। সকলে ইনায়ার দিকে কেমন করে যেনো তাকিয়ে রয়েছে, যা দেখে ইনায়া ভয় পেয়ে যায়। আসলে এরা প্রতৈকে অরণ্যর লোক, যাদের ইনায়ার উপর নজর রাখার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইনায়া ধীর গতিতে ছুটে যায় রিসাের্টের পাশে এক রেস্টুরেন্টে, প্রায় অনেক মানুষের ভীড় সেখানে। ইনায়া তার আর অরণ্যর জন্য খাবার অর্ডার দেয়, রিসোর্ট থেকে সামান্য দূরে সমুদ্র রয়েছে। দেখতে ভীষণ সুন্দর, সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ মনোরোম পরিবেশ সবকিছু মিলিয়ে অসাধারণ। ইনায়া সেখানে ছুটে যায়, সমুদ্রের স্রোতে পা ডুবিয়ে অল্প সময় বসে থাকে।

°★ মূলত ইভান ও সেখানে এসেছে খাবার অর্ডার করতে, তবে আসার সময় ইনায়াকে দেখে থেমে যায়। তার কাছে যায়, পিছন থেকে বলে উঠে ——-

______ “- ইনায়া তুমি এখানে? অরণ্য কোথায়? —–

°★ হঠাৎ করে পিছন থেকে ইভানের কণ্ঠ শুনে ইনায়া হাসি মুখে পিছনে ফিরে তাকায়। এরপর বলে ——-

_____”- ইভান ভাই আপনি এখানে?—–

—— “- রেস্টুরেন্টে খেতে খাবার অর্ডার করতে এসেছি। কিন্তু তুমি এখানে কেনো? অরণ্য কোথায়? —

_____ “- অরণ্য ঘুমিয়ে রয়েছে। আমি ও রেস্টুরেন্ট খেতে খাবার অর্ডার করতে এসেছি। কিন্তু এতো সুন্দর সমুদ্র দেখে এখানে ছুটে এসেছি ——-.

°★ ইনায়ার কথার মাঝে ইভানের চোখ যায় তার শরীরের দিকে। ইনায়ার শরীরের কিছু অংশে লাল দাগ দেখা যাচ্ছে, যা দেখে ইভান মৃদ্যু হাসে। তবে সেই হাসির মধ্যে খুশি না, বরং কষ্ট লুকিয়ে রয়েছে। নিজের প্রিয় মানুষকে সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলার আপসোস রয়েছে। ইভান আর এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না, সে বলে –

——” ইনায়া তুমি থাকো? আমি তাহলে রেস্টুরেন্টে যায়। সকাল নয়টা বেজে গেছে খাবার অর্ডার করে আসি “।

°★ রিসোর্টের একটা নিয়ম রয়েছে এখানে আপনার নিজের খাবার নিজেকে অর্ডার করে খেতে হবে। রেস্টুরেন্টে থেকে খাবার অর্ডার করবেন, এরপর সেটা হোটেলে নিয়ে খাবেন। ইভান চলে যায়, ইনায়া অল্প সময় সমুদ্র বিলাস করে। এরপর অর্ডার করা খাবার কথা মনে পড়ে, আর তাছাড়া যদি অরণ্য ঘুম থেকে উঠে ইনায়াকে না দেখে তবে টেনশন করবে। যার জন্য ইনায়া সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। কিন্তু হঠাৎ একজন তার সামনে এসে দাঁড়ায়, ইনায়া তার দিকে ভ্রু কুচঁকে তাকিয়ে দেখে। সে হাত দিয়ে দূরে থাকা গাড়িকে উদ্দেশ্য করে বলে আসতে।

°★ সকাল প্রায় নয়টা ১৫ মিনিট অরণ্য এখনো ঘুমিয়ে রয়েছে। হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠে, অরণ্য বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করে। তার চোখ এখনো বন্ধ, কোনোরকম ফোন রিসিভ করে ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলে —–

_____ “- হ্যালো কে?

অরণ্যর কণ্ঠ শুনে ফোনের অপর পাশে থাকা লোক হাসে এরপর বলে ———

____ “- ঘুম থেকে উঠে বউয়ের লাশ দেখার জন্য রেডি হয়ে যাও অরণ্য। ইনায়ার মৃত্যু নিশ্চিত, আজ রাতের মধ্যে লাশ পৌঁছে যাবে তোমার কাছে। কবর দেওয়ার জন্য রেডি থেকো “।

°★ হঠাৎ এমন কথা শুনে চোখ খুলে যায় অরণ্যর। বিছানা থেকে উঠে তাড়াহুড়ো করে বলে —–

____ হোয়াট? ইনায়া কোথায়? ইনায়া?

#চলবে